Islamic Speech

Islamic Speech বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম ❤️
"পড় তোমার রবের নামে,যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন"= সূরা আলাক,

23/04/2024

জর্দা খাওয়া হারাম।।।

প্রথমত: শুধু পান সুপারি খাওয়া সরাসরি নিষিদ্ধ না হলেও এগুলো খাওয়া উচিত নয় ডাক্তারি পরামর্শ মতে পানের আনুষঙ্গিক উপাদানগুলো মুখে ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে আর চুনে রয়েছে প্যারা অ্যালোন ফেনল, যা মুখে ঘা (আলসার) সৃষ্টি করতে পারে এবং এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর।আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে ক্ষতির মধ্যে ফেলতে নিষেধ করেছেন [সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৯৫]। তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে সাদা পাতা, গুল-জর্দা, মিষ্টি জর্দা ইত্যাদি ছাড়া শুধু পান সুপারি খাওয়া হারাম নয়। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ যেসব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন সেগুলোকে হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘন কারীদের পছন্দ করেন না [সূরা আল-মায়েদা: ৮৭]। যেহেতু শুধু পান সুপারি হারাম হওয়ার দলিল নেই তাই আমরাও সরাসরি হারাম বলবোনা।
◽দ্বিতীয়তম: সাদা পাতা, গুল-জর্দা মিষ্টি জর্দা কোন অবস্থাতেই খাওয়া যাবেনা এগুলো সুস্পষ্ট হারাম যারা গুল-জর্দা খাওয়াকে মাখরুহ বলেন তাদের কোন দলিল নেই তারা বিনা দলিলে উক্ত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। বরং বিশুদ্ধ মত হল গুল-জর্দা, সাদাপাতা সরাসরি তামাক থেকে তৈরী। আর তামাক বা তামাকজাত যে কোন নেশাদার দ্রব্য খাওয়া সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মাদকতা আনয়নকারী প্রত্যেক বস্ত্তই মদ এবং প্রতিটি মাদকদ্রব্য হারাম’ [সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৩৮]।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ কিছু নয়। অতএব এগুলো থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহ্র স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা কি এখনো নিবৃত হবে না’ [সূরা আল-মায়িদাহ: ৯০-৯১]।
অপর আয়াতে বলেন: তোমরা নিজেদেরকে
হত্যা করো না [সূরা বাকারা:১৯৫, সূরা নিসা:২৯]।
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃমুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বহু বাণী দ্বারা সূর্যালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, মাদকদ্রব্য সেবন করা হারাম। এ মর্মে তাঁর একাধিক বাণী বিধৃত হয়েছে। যেমন: জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে বস্তুর অধিক পরিমাণ ব্যবহারে নেশা আনয়ন করে, ঐ বস্তুর অল্প পরিমাণ ব্যবহার করাও হারাম’। [মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৫৮; আবু দাঊদ, হা/৩৬৮১; তিরমিযী, হা/১৮৬৫; নাসাঈ, হা/৫৬০৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩৩৯৩ ও ৩৩৯৪, সনদ হাসান ছহীহ]।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘সব ধরনের নেশাদার দ্রব্য হারাম’ [ইবনু মাজাহ হা/৩৩৮৮]।
অপর এক হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে জিনিস এক ফারাক্ব পরিমাণ ব্যবহার করলে নেশা সৃষ্টি হয়, উহা হাতের অঞ্জলি পরিমাণ ব্যবহারও হারাম’। [মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৬৮; আবু দাঊদ, হা/৩৬৮৭; তিরমিযী, হা/১৮৬৬; মিশকাত, হা/৩৬৪৬, সনদ ছহীহ]।
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ঐ বস্তু যা বিবেকের ক্ষতি করে সেসবই মদ। আর সব ধরনের মদই হারাম’ [ইবনু মাজাহ হা/৩৩৯০]।
আর শুধু পান সুপারি খাওয়াও অনর্থক এতে কোন উপকার নেই এবং শুধু শুধু অর্থেরও অপচয়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ’ [সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭]। অন্যত্র বলেন, ‘এবং খাও, পান কর ও অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না’ [সূরা আল-‘আরাফ: ৩১]।
তাছাড়া অনর্থক জিনিস বর্জন করা ইসলামের সৌন্দর্য : নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হল অনর্থক জিনিস ত্যাগ করা’ [তিরমিযী, হা/২৩১৭; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৭৬; মিশকাত, হা/৪৮৩৯, সনদ সহীহ]।

উল্লেখ্য যে, তামাক শুধু মানুষের জন্য নয়, বরং সকল প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৫০-৬০ লক্ষ লোক তামাকজনিত রোগে মারা যায়। তন্মধ্যে ৬ লাখের অধিক হ’ল পরোক্ষভাবে ধূমপায়ী। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ো না এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না’ [ইবনু মাজাহ হা/২৩৪০ সহীহাহ হা/২৫০]। সেজন্য স্বাস্থ্যগত দিক দিয়েও তামাকজাত দ্রব্য অর্থাৎ সাদা পাতা, গুল-জর্দা মিষ্টি জর্দা ইত্যাদি খাওয়া থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন। আল্লাহু আলাম।
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

22/04/2024
21/04/2024

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۱۸۵﴾

সমস্ত জীবই মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করবে; এবং নিশ্চয়ই উত্থান দিনে তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে; অতএব যে কেহ জাহান্নাম হতে বিমুক্ত হয় এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হয় - ফলতঃ নিশ্চয়ই সে সফলকাম; আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত আর কিছুই নয়। ( আল-ইমরান- ১৮৫)

#প্রতিদিন_একটি_আয়াত

19/04/2024

মসজিদ একটি পবিত্র স্থান। মহান আল্লাহর ইবাদত করার জায়গা। মসজিদে প্রবেশ এবং বের হওয়ার অনেক সুন্নত ও আদব রয়েছে। মসজিদের ভেতরে অবস্থান করলেও বিশেষ বিশেষ আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়। নিম্নে মসজিদের সুন্নত ও আদবসমূহ তুলে ধরা হলো।

মসজিদে প্রবেশের সুন্নতসমূহ

১. বিসমিল্লাহ পড়া, ২. দরুদ শরিফ পড়া, ৩. অতঃপর এই দোয়া পড়া ‘আল্লাহুম মাফতাহলি আবওয়াবারাহ মাতিক’, ৪. মসজিদে ডান পা আগে রাখা, ৫. ইতেকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা। (ইবনে মাজাহ : ১/৫৬; মেশকাত : ১/৪৬; শামী : ২/৪৪৩)
মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুন্নতসমূহ
১. বিসমিল্লাহ পড়া, ২. দরুদ শরিফ পড়া, ৩. অতঃপর এই দোয়া পড়া ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্আলুকা মিন্ফাদলিক’, ৪. মসজিদের বাইরে বাম পা আগে রাখা, ৫. অতঃপর প্রথমে ডান পায়ে জুতা পরা। তারপর বাম পায়ে পরা। (ইবনে মাজাহ : ১/৫৬; তিরমিজি : ১/৭১; ই’লাউস সুনান : ১/৩২৩; মেশকাত : ১/৪৬)

মসজিদে যেসব কাজ নিষিদ্ধ
মসজিদ মুসলমানদের কাছে ইবাদতের স্থান হিসেবে পরিচিত। এর পরও মসজিদে এমন কিছু কাজ হতে দেখা যায়, যা মসজিদের পবিত্রতাকে নষ্ট করে। ইবাদতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মসজিদের পবিত্রতার জন্য নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে মসজিদকে রক্ষা করতে হবে। মসজিদে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম

১. মসজিদে দ্বীনের কথা বা কাজ ব্যতীত অন্য কথা বা কাজ করা নিষেধ। (মুসলিম : ১২৮৮)
২. মসজিদে দুর্গন্ধময় কোনো জিনিস নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। (মুসলিম : ১২৮০)
৩. মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। (তিরমিজি : ৩২৩)
৪. মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলা যাবে না। (মেশকাত : ৬৮৯)
৫. মসজিদে অপরাধীর শাস্তি ও শাসন করা যাবে না (আবু দাউদ : ৪৪৯২)
৬. মসজিদে রাজনৈতিক মিটিং করা মসজিদের আদবের খেলাপ। (ফাতাওয়া রহিমিয়া : ৬/১০৫)
৭. মসজিদের ভেতরে প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজ একই স্থানে আদায় করার জন্য কেউ স্থান নির্দিষ্ট রাখতে পারবে না। যে যেখানে এসে প্রথমে স্থান নেবে, সে সেখানে নামাজ আদায় করবে। একে অন্যকে উঠিয়ে বসা যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ১/৬৩০)
সংগৃহীত

12/04/2024

বহু বছর থেকে চলমান ইখতিলাফ। এই প্রথম মুখোমুখি আলোচনা, হযরত উমর (রা.) কত রাকাআত তারাবিহের আদেশ দিয়েছেন? ৮ রাকাআত না ২.....

31/03/2024

একটা ভুল ব্যবহার৷

আমরা অনেকেই শুকরিয়া জ্ঞাপন স্বরূপ শুধুমাত্র জাযাকাল্লাহ ( جزاك الله) বলে থাকি।

এটা ঠিক নয়,এতে দুয়া অপরিপূর্ণ থেকে যায়।

শুধু জাযাকাল্লাহ বললে অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহ আপনাকে দান করুক, কিন্তু কী দিবেন? ভাল নাকি মন্দ?

দুয়ার যে অংশটা বাদ দেয়া হয়েছে তাতেই সেটা বিদ্যমান ছিল। তাই পুরোটা বলা উচিত এবং এতেই সুন্নাহ আদায় হবে। আমাদের বলতে হবে জাযাকাল্লাহু খাইরান (جزاك الله خيرا)

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ فَقَالَ لِفَاعِلِهِ : جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا، فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ

কারো জন্য অনুগ্রহ করা হলে সে যদি অনুগ্রহকারীকে جزاك الله خيرا ( আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন) বলে, তাহলে সে প্রশংসাকে পূর্ণ করল। [১]

উমর বিন খাত্তাব রা. বলেন,

لو يعلم أحدكم ما له في قوله لأخيه : جزاك الله خيرا ، لأَكثَرَ منها بعضكم لبعض

তোমাদের কেউ যদি জানত অন্য ভাইকে جزاك الله خيرا বলায় তার জন্য কী (নেকি) আছে, তবে তোমরা একে অপরকে অত্যধিক তা বলতে৷ [২]

আল্লাহ তাউফিক দান করুন।

তথ্যসূত্রঃ

[১] তিরমিজিঃ ১৯৫৮, সুনানুল কুবরা লিল ইমাম নাসায়িঃ ৬/৫৩
[২] মুসান্নাফ ইবনু আবি শায়বাঃ ৫/৩২২

© আব্দুর রহমান মুয়াজ

আমরা কদর খুজি শুধু বদর নয়
28/03/2024

আমরা কদর খুজি শুধু বদর নয়

25/03/2024

মার্চ মাসের সংগ্রহ মূল্যবান কিতাব গুলো
জাযাকাল্লাহ #দারুল_কিতাব

যেকোনো দেশীয় বিকল্প পণ্য এর লিস্ট আপনার জানা থাকলে কমেন্ট করতে পারেন..নিচে এগুলো দেশি পণ্য।সাবান - মেরিল, কেয়া, সেপনিল, ...
25/03/2024

যেকোনো দেশীয় বিকল্প পণ্য এর লিস্ট আপনার জানা থাকলে কমেন্ট করতে পারেন..

নিচে এগুলো দেশি পণ্য।
সাবান - মেরিল, কেয়া, সেপনিল, তিব্বত, তিব্বত ৭৭৭, Lifeguard, Cute
বাথরুম পরিষ্কার – Shakti, Clean Master, Finis, Amana, Xtreme
টুথপেষ্ট - Magic Harbal, White Plus, Cute, Active Toothpaste
চুলের তৈল - জুঁই, মায়া, কলম্বো, মেরিল অলিভ অয়েল, Cute
গুড়োদুধ – Pusti, ACI, Pure Milk, AMA, Mars, Starship
ডিটারজেন্ট - কেয়া, তিব্বত, White Plus, Chaka, Jet
চা-ইস্পাহানি, Bengal, Kazi, Cylon (আবুল খায়ের)
শ্যাম্পু-কেয়া, Cute, Revive, Meril, Select Plus
সয়াবিন তৈল – পুষ্টি, বসুন্ধরা, সেনা, Teer, Fresh
Petrolium Jelly - Meril, Tibet, Cute, SMC,
মশা নিরোধ সামগ্রী – Xpel, Sepnil, Xtreme -
Room Freshner - Spring, Basundhara
ময়দা, আটা – Teer, Basundhara, Fresh
নুডলস - কোকোলা, বসুন্ধরা, Foodi
চাল - পুষ্টি, চাষী, চিনিগুড়া, Teer
চিনি - Teer, Fresh, আখের চিনি
সরিষার তৈল - রাধুনি, পুষ্টি, Teer
বিস্কুট - Radisho, Olympic
লবণ- Teer, ACI, Fresh
পানি - Jibon, MUM
টিস্যু - বসুন্ধরা, Fresh
সচেতন নাগরিক হিসেবে পণ্য ক্রয় করার পূর্বে ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে কিনুন ও নিজের জ্ঞান কাজে লাগান।
আসুন পবিত্র রমজান মাসে নিজ দেশের সম্পদ ব্যয় করি, ভিনদেশের সম্পদ প্রত্যাখ্যান করি। দেশকে স্বনির্ভর করতে বিদেশী পণ্য বাদ দিয়ে স্বদেশী পণ্য কিনলেই মান বাড়বে, কোম্পানী বাড়বে, প্রতিযোগীতা বাড়বে। দেশি পণ্য কিনুন দেশের উৎপাদনশীলতা ও সচ্ছলতার জন্য ভূমিকা রাখুন।
জনসচেতনতায় - দারুল ইলম

24/03/2024

ঈমান : গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- বিশ্বাস করা, স্বীকার করা ও আস্থা স্থাপন করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় ঈমান হলো, মহানবী সা: আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দ্বীন হিসেবে অপরিহার্য যেসব বিষয় নিয়ে এসেছেন সেগুলোকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা ও মেনে নেয়ার সাথে সাথে দৃঢ়বিশ্বাস ও প্রত্যয় ব্যক্ত করার নাম। ঈমান আনার কারণে ঈমানদার ব্যক্তি চিরকালের জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। পক্ষান্তরে ঈমান বর্জনকারী কাফের ও বেঈমান লোক অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে!

ঈমান আনার উপায় : ঈমান আনার উপায় হলো- শতভাগ বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সাথে কালিমায়ে তায়্যিবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পাঠ করা বা এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই এবং হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। যখন কোনো ব্যক্তি আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে কালিমায়ে তায়্যিবার মর্ম উপলব্ধি করে উল্লিখিত সাক্ষ্য দেবে তখন সে ঈমানদার ও মুসলমান বলে গণ্য হবে। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো উপাস্য নেই এবং হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর রাসূল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস-১)

ঈমান অনন্য নিয়ামত : ঈমান আল্লাহ প্রদত্ত এক অনন্য নিয়ামত! এই নিয়ামত প্রদানের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতিকে ধন্য ও সম্মানিত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা মুসলমান হয়ে আপনাকে ধন্য করেছে মনে করে। বলুন, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না, বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন।’ (সূরা হুজুরাত : ১৭) ঈমানের দৌলত প্রদান করার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর মহা অনুগ্রহ করেছেন! চিরকালীন জাহান্নাম থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন! কেননা, বেঈমান কাফেররা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে! তারা চিরকাল দোজখের শাস্তি ভোগ করবে! আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি! পক্ষান্তরে তাদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯১)

শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড ঈমান : শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হওয়ার ইসলাম-সমর্থিত একমাত্র মানদণ্ড হলো বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন ও মহানবী সা:-এর নবুয়ত ও রিসালাতের ওপর বিশ্বাস স্থাপন। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অবিশ্বাসী বেঈমান কাফেরদের সৃষ্টির নিকৃষ্ট ও বিশ্বাসী মুমিন মুসলমানদের সৃষ্টির উৎকৃষ্ট আখ্যায়িত করে আল্লাহ বলেছেন, ‘আহলে-কিতাব ও পৌত্তলিকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির উত্তম!’(সূরা বাইয়িনাহ : ৬-৭)

ঈমানের স্তম্ভসমূহ : ঘর ও ভবনের যেমন স্তম্ভ ও খুঁটি রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে ঈমানেরও স্তম্ভ ও খুঁটি রয়েছে। যে ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের স্তম্ভগুলো যত বেশি শক্তিশালী রূপে পাওয়া যাবে সেই ব্যক্তি তত বেশি পাক্কা ঈমানদার ও খাঁটি মুমিন বলে গণ্য হবে। তাই ঈমানের স্তম্ভগুলোকে শক্তিশালী ও মজবুত করা প্রত্যেক ঈমানদারের অবশ্য কর্তব্য। ঈমানের সাতটি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলো হলো- ১. একক উপাস্য হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা; ২. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা; ৩. সব আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস পোষণ করা; ৪. সব নবী ও রাসূূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা; ৫. তাকদির বা ভাগ্যের ভালো-মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা; ৬. পরকালের প্রতি বিশ্বাস লালন করা ও ৭. মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ঈমান হলো, তুমি আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, তার কিতাবসমূহ, তার প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের ওপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদির ও এর ভালো-মন্দের প্রতিও ঈমান আনয়ন করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১)

ঈমানদারদের আপ্যায়ন : জান্নাত হলো চির-শান্তির স্থান। সেখানকার সব কিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বস্তুরাজি দিয়ে সজ্জিত। জান্নাতের ঘরবাড়ি, আসন ও আসবাবপত্রের সব কিছু স্বর্ণ-রৌপ্য ও মণিমুক্তা দিয়ে নির্মিত। জান্নাতে থাকবে রেশমের গালিচা, দুধ ও মধুর নহর এবং মিষ্টিপানির স্রোতধারা। বস্তুত আনন্দ উপভোগের সব উপকরণই জান্নাতে বিদ্যমান থাকবে। জান্নাতের আটটি স্তর রয়েছে। এই স্তরগুলোর মধ্য থেকে সর্বোচ্চ স্তর জান্নাতুল ফিরদাউসে বিশ্বাসী ঈমানদার ও সৎকর্মশীল মুসলমানদের আপ্যায়ন করা হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনয়ন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ১০৭-১০৮)

ঈমান সফল হওয়ার মাধ্যম : ইসলামের অনুসারী মুমিন মুসলমান ছাড়া অন্য সব মানুষ অনন্তকাল দোজখের আগুনে দগ্ধিভূত হবে। কুরআন শরিফে এসেছে, ‘যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে সফল হয়ে যাবে।’ (সূরা আল ইমরান : ১৮৫) অপর দিকে, ঈমানদার মুমিন মুসলমানদের সফল হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মুমিনগণ সফল হয়ে গেছে’। (সূরা মুমিনুন:১) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেন, ‘যারা ঈমান আনয়ন করেছে সেসব বিষয়ের ওপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের ওপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর পরকালকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।’ (সূরা বাকারা : ৪-৫)

কাফেররা চির-জাহান্নামি : যারা বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: আনীত ধর্মমতের ওপর ঈমান আনয়ন ও বিশ্বাস স্থাপন না করে কাফের বা বেঈমান থাকবে তারা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে প্রজ্বলিত হবে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয় যারা কাফের হয়, তাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর সামনে কখনো কোনো কাজে আসবে না। আর তারাই হলো জাহান্নামের আগুনের অধিবাসী। তারা সে আগুনে চিরকাল থাকবে।’ (সূরা আলে ইমরান: ১১৬) চিরকাল জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর রিসালতের ওপর ঈমান আনয়ন ও বিশ্বাস স্থাপন করার বিকল্প নেই।

সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম : ইসলাম ও ঈমান সমান্তরালে অবস্থান করে। ঈমান অন্তরের মাধ্যমে বিশ্বাস করার বিষয় এবং ইসলাম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে আমল করার বিষয়। এই ঈমান ও ইসলাম একটি অপরটির পরিপূরক। এতদুভয়ের একটি ছাড়া অপরটি অপূর্ণাঙ্গ রয়ে যায়। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাই ঈমানদার বলে গণ্য। আজকের পৃথিবীতে ইহুদিবাদ, খ্রিষ্টবাদ, নাস্তিক্যবাদ, ব্রাহ্মণ্যবাদ, হিন্দুত্ববাদ ও বিবর্তনবাদসহ বহু বাদ-মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর নিকট থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: আনীত ইবরাহিমি ধর্মবিশ্বাসপ্রসূত একত্ববাদী ইসলাম ছাড়া অন্য সব ধর্ম ও মতবাদ অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, কখনো তা গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আলে ইমরান: ৯১) ইসলামকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম আখ্যায়িত করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যে আল্লাহর নির্দেশের সামনে মস্তক অবনত করে সৎকাজে নিয়োজিত থাকে এবং ইবরাহিমের ধর্ম অনুসরণ করে, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন, তার চাইতে উত্তম ধর্ম আর কার?’ (সূরা নিসা: ১২৫)

লেখক :আবদুল কাইয়ুম শেখ ।
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

24/03/2024

ইমান কি জানেন???
একজন মানুষ ঈমান গ্রহণ করার মাধ্যমে মুসলমান হয়। মানুষের উচিত ঈমান সম্পর্কে আমাদের জানা। ঈমান কী? এখানে ঈমানের পরিচয় তুলে ধরা হলো-ঈমান (اِيْمَان) শব্দটির সাধারণ অর্থ হলো- বিশ্বাস। এছাড়াও আনুগত্য করা, অবনত হওয়া, নির্ভর করা, স্বীকৃতি দেয়া অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ছয়টি বিশ্বাসের উপর ঈমান প্রতিষ্ঠিত-১. আল্লাহ, ২. ফেরেশতাগণ, ৩. আসমানী কিতাবসমূহ, ৪. রসূলগণ, ৫. শেষ দিবস এবং ৬. ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা।ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায় ঈমান-ক. ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকৃতি হলো ঈমান।খ. ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত সকল বিধি-বিধানসহ তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাই হচ্ছে ঈমান।গ. ইমাম শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহিমের মতে, অন্তরের বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি এবং আরকানসমূহ (ইসলামের বিধি-বিধান) কার্যে পরিণত করার নাম ঈমান।পরিশেষে…যেহেতু ঈমান শব্দটির অর্থ বিশ্বাস করা। আর ইসলামের পরিভাষায় অন্তরে বিশ্বাস করা, জবান দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া এবং সে মোতাবেক কাজে বাস্তবায়ন করা। তাহলে বুঝা গেল যে, কথা ও কাজের নামই হলো ঈমান।সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত ছয়টি বিষয়ের উপর অন্তরের বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে জবানের স্বীকৃতি এবং সে মোতাবেক কার্যে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে প্রকৃত ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

23/03/2024

মানব জীবনে তাওহিদের প্রভাব ও গুরুত্ব

তাওহিদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ। মহান আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় হিসেবে বিশ্বাস করার নামই হলো তাওহিদ। তাওহিদের কেন্দ্রীয় বিষয় হলো আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি অনাদি ও অনন্ত। তাঁর সমকক্ষ বা সমতুল্য কিছুই নেই। তিনিই একমাত্র মাবুদ। সব প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তারই প্রাপ্য। তিনি সব গুণের আধার। তিনি চিরস্থায়ী, চিরঞ্জীব, শাশ্বতও সত্য। তিনি সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রক্ষাকর্তা, পুরস্কারদাতা, শাস্তিদাতা। তাঁর গুণাবলির সাথে কোনো কিছুরই তুলনা করা যায় না। তাঁর তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই। ইমানের সর্ব প্রথম ও সর্ব প্রধান বিষয় হলো তাওহিদ। ইসলামের সব শিক্ষা ও আদর্শই তাওহিদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাওহিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠার জন্যই সব নবী আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এমন কোনো নবী ছিলেন না, যিনি তাওহিদের কথা বলেননি। বরং সব নবী রাসূলই তাওহিদের শিক্ষা প্রচার করেছেন। তাওহিদের পরিপন্থী কোনো বিধান ইসলামে নেই। তাওহিদের জন্যই হজরত ইবরাহিম আ: অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন, ইউনূস আ: মাছের পেটে গেছেন, মূসা আ: ফেরাউনের সাথে লড়েছেন, আমাদের প্রিয় নবী সা: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছেন। এককথায় মানব জীবনে তাওহিদের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক।
তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা এনে দেয়। কেননা, তাওহিদ মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দান করে। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা ও গুণাবলি জানতে পারে। দুনিয়ার কাজকর্মেরর জন্য মানুষকে পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবেÑ এ শিক্ষা তাওহিদের মাধ্যমে লাভ করা যায়। এ শিক্ষার দ্বারা মানুষ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে, এর ফলে সে আখিরাতে সফলতা লাভ করবে।

তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে আত্মসচেতন ও আত্মমর্যাদাবান করে। মানুষ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সামনে মাথা নত করে না। পক্ষান্তরে, তাওহিদে বিশ্বাস না করলে মানুষ বিপথগামী হয়ে যায়। সে গাছপালা, পশু-পাখি, চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদির কাছে মাথা নত করে। নানা রকমের মূর্তিপূজা করতে থাকে। ফলে মানুষের আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ ও আত্মসচেতনতা জাগিয়ে তোলে। তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস মানুষকে এক জাতিত্ব বোধ এনে দেয়। ফলে মানুষ একে অপরের ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতায় উদ্বুদ্ধ হয়। পক্ষান্তরে শিরক বা বহু উপ্যাসের বিশ্বাস মানুষকে বহুদল ও গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে দেয়। এতে মানব জাতির বিভাজন পরিণতিতে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও হানাহানির কারণ হয়। এতে শান্তি ও মানবতা বিপর্যস্ত হয়। তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে এক আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল করে। ফলে যাবতীয় বিপদ- আপদে, দুঃখ-কষ্টে মানুষ হতাশ বা নিরাশ হয় না। বরং মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পূূর্ণোদ্দমে কাজ করতে থাকে এবং সাফল্য লাভ করে। এভাবে তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়ার জীবনে সুখ শান্তি ও সফলতার সবকটি দরজা খুলে দেয়।

তাওহিদে বিশ্বাস মানুষকে ইবাদত ও সৎকর্মে উৎসাহিত করে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানুষ সৎকর্মে অগ্রসর হয়। অসৎ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে। ফলে মানব সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাওহিদে বিশ্বাস পরকালীন জীবনে মানুষকে সফলতা দান করে। তাওহিদে বিশ্বাস ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। বস্তুত মানব জীবনের সব ক্ষেত্রেই তাওহিদে বিশ্বাস মুক্তি ও সফলতার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। সুতরাং আসুন, আমরা দৃঢ়ভাবে তাওহিদে বিশ্বাস করি।

23/03/2024

তাওহিদের পরিচয় ও গুরুত্ব

তাওহিদের পরিচয় ও গুরুত্ব
তাওহিদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ একত্ববাদ, একীকরণ অথবা দৃঢ়ভাবে একত্ব ঘোষণা করা। পারিভাষিক অর্থ হলো, আল্লাহতায়ালাকে সত্তাগত ও গুণগত দিক দিয়ে একক জেনে তারই ইবাদত করা। এ ছাড়া আল্লাহতায়ালার লেশমাত্র দোষহীন পরিপূর্ণ গুণরাজিতে আল্লাহর একত্বের হৃদয়গত ইলম ও বিশ্বাস, মৌখিক স্বীকৃতি ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তার একত্ব প্রতিষ্ঠা করার নামই তাওহিদ।

জীবনের প্রকৃত সফলতা তাওহিদের বিশ্বাসের ওপরই নির্ভর করে। তাওহিদের বিশ্বাস না থাকলে সফলতার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই তো পবিত্র কোরআনে তাওহিদের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্নভাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য, যিনি সব সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।’ (সুরা ফাতিহা, আয়াত : ২)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি জিজ্ঞেস করো, কে তোমাদের আসমান ও জমিন থেকে রিজিক দান করেন? কিংবা কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? তা ছাড়া কে জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করেন এবং কেইবা মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তখন তারা বলে উঠবে, আল্লাহ। তখন তুমি বলো তার পরও ভয় করছো না।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৩১)

পবিত্র এ দুটি আয়াতে সমগ্র বিশ্বের মালিক আল্লাহতায়ালা নিজ কুদরত ও শক্তির প্রমাণ পেশ করেছেন যে, তিনি প্রাণহীন থেকে প্রাণ তৈরি করেন। যেমন : মানুষ প্রাণী জীবিত, আল্লাহ তার থেকে বীর্য বের করেন আর বীর্য প্রাণহীন। এমনিভাবে পাখি প্রাণওয়ালা জীবিত, এর থেকে ডিম বের করেন আর ডিমে কোনো প্রাণ নেই। এই প্রাণহীন বীর্য ও ডিম থেকেই আল্লাহতায়ালা জানদার বা প্রাণওয়ালা বাচ্চা সৃষ্টি করেন।

এত স্পষ্ট বাস্তব কথা যে, প্রত্যেক বস্তুকে আল্লাহতায়ালাই সৃষ্টি করেছেন। আর সবকিছুই আল্লাহতায়ালা কুদরতি হাতের কবজায়। কোনো বস্তুই আল্লাহতায়ালার হুকুম ছাড়া নড়াচড়া করতে পারে না। এ প্রসঙ্গটিই আল্লামা রুমি তার কাসিদায় তুলে ধরেছেন ‘হিছ বুরগে বুয নাইয়াফতা আযদরখত/বেকাযা অহুকমে আছুলতানে বখত।’ অর্থ : আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে হুকুম না আসা পর্যন্ত গাছ থেকে কোনো পাতাও আলাদা হয় না।

আল্লাহতায়ালার তাওহিদ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআানে এত স্পষ্ট আলোচনা করেছেন, একজন বিবেকবান মানুষের কাছে আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব ও তাওহিদের প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আসমান ও জমিনে যদি আল্লাহ ছাড়া একাধিক ইলাহ থাকত, তাহলে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেত।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ২২)

এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা তার তাওহিদ এভাবে প্রমাণ করেছেন, হে মানুষ! একটু চিন্তা করো, এ বিশ্বের স্রষ্টা ও পরিচালক যদি দুজন হতেন তাহলে আজ তোমরা এর যে শৃঙ্খলা দেখছো যে যথাসময়ে চাঁদ-সূর্য উদিত হচ্ছে, অস্ত যাচ্ছে, দিন-রাতের আগমন ও প্রস্থান চলছে, এ ছাড়া জগতের সব নিজাম অতি সুন্দরভাবে চলছে, তা এমন থাকত না। বরং এতে ত্রুটি আসত এবং ইলাহদের পরস্পরের ঝগড়া-ফ্যাসাদের কারণে সৃষ্টিজগতের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়ে যেত। দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ, শাসকবর্গের দিকে তাকালেই তো এর সত্যতা বোঝা যায়। যদি এক রাষ্ট্রে দুজন রাষ্ট্রপতি রাজ সিংহাসনে বসেন তাহলে সে রাষ্ট্র কিছুতেই স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্দর চলতে পারবে না। এ রাষ্ট্রের ধ্বংস অনিবার্য।

সৃষ্টির শুরু থেকেই দুনিয়ার নেজাম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে চলে আসছে, ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই চলতে থাকবে। এতে কোনো ধরনেরর ত্রুটি বা ফ্যাসাদ সৃষ্টি হবে না।

তাওহিদের প্রকারভেদ : ইসলামি স্কলাররা তাওহিদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা :

তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ : আল্লাহকে তার কর্মসমূহে একক হিসেবে মেনে নেওয়া। যেমন সৃষ্টি করা, রিজিক দেওয়া, জীবন-মৃত্যু দান করা ইত্যাদি। নবী করিম (সা.)-এর আগমনের আগে কাফেররাও তাওহিদের এই প্রকারের স্বীকৃতি দিয়েছিল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন, নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সব প্রশংসাই আল্লাহর। বরং তাদের অধিকাংশইই জ্ঞান রাখে না।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ২৫)

তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ : ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে একক নির্ধারণ করা। যেমন : সালাত, সওম, নজর, মানত, দান-সদকা ইত্যাদি। যাবতীয় ইবাদত এককভাবে আল্লাহর উদ্দেশে করার জন্যই সব নবী-রাসুলকে পাঠানো হয়েছে। আসমানি কিতাবসমূহ নাজিল করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ইবাদত করো আল্লাহর, শরিক করো না তার সঙ্গে অপর কাউকে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩৬)

আসমা ও সিফাত : যেসব সুন্দর নাম ও গুণাবলি আল্লাহ ও তার রাসুল (সা) আল্লাহতায়ালার জন্য সাব্যস্ত করেছেন, সেগুলোকে কোনো ধরনের পরিবর্তন, অস্বীকৃতি ও ধরন-গঠন নির্ধারণ ছাড়াই সাব্যস্ত করা ও মেনে নেওয়া। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, তোমরা সেই নামেই তাকে ডাকো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮০)

কেউ কেউ বলেন, ‘আল্লাহর নাম এবং গুণাবলির ক্ষেত্রে তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ব বজায় রাখা।’ পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে উল্লিখিত তাওহিদের তিনটি শাখা তথাÑ রুবুবিয়্যাহ, উলুহিয়্যাহ এবং আসমা ও সিফাতের মধ্যে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কাউকে শরিক করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এটাকে সবচেয়ে মারাত্মক অন্যায় ও চরম গর্হিত কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের ইলাহ হচ্ছেন এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৩)

তাওহিদের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য দারুণ একটি ঘটনা রয়েছে। ঘটনাটি এক মাওলানা সাহেব ও এক বুড়িকে নিয়ে। এক বুড়ি বারান্দায় বসে বসে সারা দিন চরকা ঘুরিয়ে সুতো কাটত। মাওলানা সাহেব প্রতিদিনই তাকে এ অবস্থায় দেখতেন। এক দিন মাওলানা সাহেব দাওয়াত ও তাবলিগের খাতিরে তাকে দীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য কাছে গিয়ে বললেন, হে বুড়ি! সারা দিন চরকা ঘুরিয়ে শুধু সুতোই কাটো, আল্লাহতায়ালার কোনো খবর কি রাখো? বুড়ি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমার আল্লাহ ওই সত্তা, যিনি সারা বিশে^র শৃঙ্খলা বজায় রাখছেন। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। স্বীয় অস্তিত্বে তিনি একক, তার সমকক্ষ কেউ নেই।

এবার মাওলানা সাহেব বললেন, হে বুড়ি তুমি যে দাবি করেছো আল্লাহ আছেন, তোমার কাছে এর কোনো প্রমাণ আছে কি? নাকি এমনিতেই শুনে শুনে বলে দিয়েছো?

বুড়ি উত্তর দিলেন, বেটা! এমনিতেই বলিনি, আমার কাছেই এর প্রমাণ আছে। এই বলে বুড়ি হাত দিয়ে চরকা ঘুরিয়ে হঠাৎ হাত সরিয়ে নিলে চরকা বন্ধ হয়ে যায়। বুড়ি এ দৃশ্য দেখিয়ে মাওলনা সাহেবকে বললেন, সামান্য একটা চরকা যদি আমি না চালালে চলা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এত বিশাল সৃষ্টি কেউ না কেউ তো অবশ্যই চালাচ্ছেন। না হলে কি এই সৃষ্টিজগৎ চলত? যে সৃষ্টিজগতে অগণিত নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য অসংখ্য সৃষ্টি বস্তু যার যার কাজে সদা ব্যস্ত, এতে পরিষ্কার প্রমাণ হয় যে, এ জগতের পরিচালনাকরী একজন আছেন। তিনিই আমার খোদা, তিনিই আমার মাবুদ।

পবিত্র কোরআনও তাই বলে। আল্লাহতায়ালা এক ও একক। তার কোনো শরিক নেই। তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র উপাসক। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা, তিনি ছাড়া যা কিছু আছে, সবকিছু তারই সৃষ্টি। তাই সমগ্র সৃষ্টি তারই দাসত্ব করবে। পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট ঘোষণা, ‘আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহতায়ালাই। তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই; তিনিই পরম দয়াময়; অনন্ত অসীম করুণাময়।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৩)

অতএব, ইবাদত করতে হবে শুধু এক আল্লাহর। তবেই পরকালে চিরস্থায়ী জীবনের নাজাত লাভ সম্ভব। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহতায়ালার একত্ববাদের ওপর অটল ও অবিচল থেকে তার পরিচয় ও গুণাবলি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালীন জীবনের সফলতা লাভ করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট আমিনুল ইসলাম হুসাইনী

খতিব, কসবা মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

23/03/2024

Asian University Bangladesh #এশিয়ান_ইউনিভার্সিটি_বাংলাদেশ

23/03/2024

ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি বা স্তম্ভ পাঁচটি। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এই পাঁচটি বিষয় জানা এবং এর ওপর বিশ্বাস রাখা আবশ্যক। একজন মুসলমানের জন্য এই পঞ্চস্তম্ভের কোনও একটিও অস্বীকারের সুযোগ নেই। অনথ্যায় তাকে মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হবে না।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা, হজ পালন করা এবং রমজান মাসের রোজা পালন করা। -(সহীহ: বুখারী ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিজি ২৬০৯, নাসায়ী ৫০০১, আহমাদ ৬০১৫, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৮০)

আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক, যে ব্যাক্তিই আমার এ আহবান শুনেছে, অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে। -(সহীহ মুসলিম – ২৮৩)

ইসলামের এই পঞ্চস্তম্ভের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো-

কালিমা
কালিমার মর্মকথা হলো, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই—এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মুখে উচ্চারণ করা এবং এর দাবি অনুযায়ী আমল করা। পাশাপাশি রাসুল (সা.)-এর নিয়ে আসা শরিয়ত মোতাবেক আমল করা। এবং তিনি যেসব বিষয় সম্পর্কে সতর্ক করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকা।

এক হাদিসে এসেছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) একবার ছদ্মবেশে এসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঈমান কাকে বলে?’ জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘ঈমান হচ্ছে- আপনি বিশ্বাস স্থাপন করবেন আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তকদিরের ভালো ও মন্দের প্রতি। এই হলো ঈমান।’ (বুখারি: ৫০)। ঈমানের এই ছয়টি বিষয়কে ইসলামের পরিভাষায় ‘ঈমানে মুফাসসাল’ অর্থাৎ ‘ঈমানের বিস্তারিত পরিচয়’ বলা হয়।

নামাজ
ইবাদতসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। এটি এমন এক ইবাদত, যা বিশেষ কিছু কথা ও কর্মকে শামিল করে, ‘আল্লাহু আকবার’ দিয়ে সালাত শুরু হয় এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে শেষ হয়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সবার জন্য ফরজ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুল (সা.) বললেন, ‘নামাজ’। (বুখারি ও মুসলিম)। আরও বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, আল্লাহ তার থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে নেন।’ (বুখারি : ১৮)। নবুয়তের দশম বছর পবিত্র মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গুনাহ। অস্বীকার করা কুফুরি।

জাকাত
জাকাত, শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, বেশি হওয়া। নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত সম্পদ ব্যয় করার নাম জাকাত। কোরআনে বহু স্থানে নামাজের সঙ্গে জাকাতের আলোচনা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

অতএব জাকাত ফরজ এমন প্রত্যেক মুমিনের উচিত সময়মতো তা আদায় করা।

রোজা
রোজার আরবি হলো সিয়াম। সিয়ামের শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। পুরো রমজান মাস সিয়াম পালন করা ফরজ। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা রয়েছে।

রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস (রমজান) পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় সে সমান সংখ্যা পূরণ করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)

হজ
হজ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। নির্ধারিত শর্তসহ নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষ পদ্ধতিতে ইবাদত করার জন্য মক্কায় গমনের ইচ্ছা করাকে হজ বলে। সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর গোটা জীবনে একবার হজ করা ফরজ।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত, ২৭)

21/03/2024

ইলম শিক্ষার গুরুত্ব পড়ুন
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ قَال أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ{رواه الترمذي
আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন। (তিরমিযী হা/২৬৪৬; ইখনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৮, সনদ সহিহ।)
রাবির পরিচয় : আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবা। যাঁর প্রকৃত নাম আবদুর রহমান ইবনে সা’খর অথবা উমায়র ইবনে আমির। (তিনি তিন বছর নবী মুহাম্মদ (সা:)-এর সান্নিধ্যে ছিলেন এবং বহুসংখ্যক হাদিস আত্মস্থ করেন এবং বর্ণনা করেন। হিসাব অনুযায়ী ৫,৩৭৫টি হাদিস তাঁর কাছ থেকে লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে আটশত তাবেঈ হাদিস শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

আলোচ্য বিষয় : আলোচ্য হাদিসে ‘ইলম তথা জ্ঞান অর্জনের ফজিলত ও মর্যাদার কথা আলোচনা করা হয়েছে।

হাদিসের ব্যাখ্যা : ইলম অর্জনের মর্যাদা অত্যধিক। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহ যাদেরকে জ্ঞান দান করেছেন তাদেরকে উচ্চমর্যাদায় উন্নীত করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।’ (মুজাদালাহ ৫৮/১১)। ইলম অর্জনের মর্যাদা সম্পর্কে অত্র হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেবেন।
অন্য হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِى عَلَى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِى جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ.
আবু উমামা আল-বাহিলি (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হলো। যাদের একজন আলিম অপরজন আবিদ। তখন তিনি বলেন, আলিমের মর্যাদা আবিদের ওপর। যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের ওপর। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, নিশ্চয়ই তার প্রতি আল্লাহ রহমত করেন এবং তার ফেরেশতামন্ডলী, আসমান-জমিনের অধিবাসী, পিপীলিকা তার গর্তে থেকে এবং এমনকি মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দোয়া করেন। ( তিরমিজি হা/২৬৮৫; মিশকাত হা/২১৩, সনদ হাসান।)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন,
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا سَلَكَ اللَّهُ بِهِ طَرِيقًا مِنْ طُرُقِ الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْمَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ وَإِنَّ الْعَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِى السَّمَوَاتِ وَمَنْ فِى الأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِى جَوْفِ الْمَاءِ .
‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করার উদ্দেশ্যে কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তাকে জান্নাতের কোন একটি পথে পৌঁছে দেন এবং ফেরেশতাগণ ইলম অন্বেষণকরীর ওপর খুশি হয়ে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। এ ছাড়া আলেমদের জন্য আসমান ও জমিনের সকল অধিবাসী আল্লাহর নিকট দোয়া ও প্রার্থনা করে। এমনকি পানির মধ্যে বসবাসকারী মাছও (তাদের জন্য দোয়া করে)। ( আবুদাউদ হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/২১২; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ।)
ইলম অর্জনের গুরুত্ব : রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর ওপর সর্বপ্রথম প্রত্যাদেশকৃত শব্দ হল, اِقْرَأْ ‘আপনি পড়ুন!। রাসূলুল্লাহ (সা:) তখন বলেছিলেন, أَنَا بِقَارِئٍ
‘আমি পড়তে জানি না’। তখন জিবরিল (আ:) তাকে জাপটে ধরেছিলেন। এই একই দৃশ্য তিনবার হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর নিকট সূরা ‘আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে অহির জ্ঞান শিক্ষা দেন। সুতরাং আমাদের সমাজ ও দেশ থেকে অন্যায়, অপকর্ম দূর করতে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। ইলম অর্জনের নির্দেশনাস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ। (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮, সনদ হাসান।)
দ্বীনি ইলম অর্জনের প্রতি আল্লাহর উৎসাহ প্রদান :
আল্লাহ জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহিত মানুষকে উৎসাহিত করেছেন, কেননা মানুষ ইলম অর্জন করবে, সে অনুযায়ী আমল করবে এবং নিজেদের মাঝে ইলম প্রচার করবে এটাই আল্লাহর দাবি। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
‘সুতরাং এমন কেন হয় না যে, তাদের প্রত্যেকটি বড় দল হতে এক একটি ছোট দল বের হবে, যাতে তারা দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আর যাতে তারা নিজ কওমকে ভয় প্রদর্শন করতে পারে যখন তারা ওদের নিকট প্রত্যাবর্তন করে, যেন তারা সতর্ক হয়।’ (সূরা তওবা ৯/১২২)
মানুষ অজ্ঞ-মূর্খ হয়ে পৃথিবীতে আসে। আল্লাহ বলেন,
عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
‘আমি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি, যা সে জানত না।’ (সূরা আলাক ৯৬/৫) ইলম বা জ্ঞান দ্বারা ভাল-মন্দ নির্ণয় করা যায়। এর দ্বারা অন্যায়ের প্রতিরোধ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব। সুতরাং আল্লাহ যার মঙ্গল চান এবং যার দ্বারা হকের বাস্তবায়ন সম্ভব তাকেই মহামূল্যবান জ্ঞান দান করে থাকেন। যেহেতু জ্ঞানের মালিক আল্লাহ, তাই এই জ্ঞান আল্লাহ যাকে চান তাকে দান করেন। তিনি বলেন,
يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
‘তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে।’ (সূরা বাকারাহ ২/২৬৯) এ সম্পর্কে রাসূল (সা:) বলেন,
خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّين مَنْ يُرِدِ اللَّهُ بِهِ
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন’। (ইবনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ)

‘আলিমগণই নবীদের প্রকৃত উত্তরাধিকারী : রক্ত সম্পর্ক কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে কোন ব্যক্তির ওয়ারিশ হওয়া যায়। কিন্তু ইলম এমন একটি মূল্যবান সম্পদ, যে ব্যক্তি তা অর্জন করবে আল্লাহ তাকে নবীদের ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী বানাবেন। সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণাসম্পন্ন ব্যক্তিরা মূলত নবীদের উত্তরাধিকারী। আর উত্তরাধিকার জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে অর্জন করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,
إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.
‘আলেমরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। ফলে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল। (সহিহুল বুখারী হা/৭১)
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।’ (ইবনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ।) অতএব দ্বীনি ইলম অর্জন করলে নবীদের উত্তরাধিকারী হওয়া যায়।

আল্লাহর নিকট উপকারী ইলমের প্রার্থনা করা : আল্লাহর নিকট ইলমসহ যাবতীয় কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহর নিকট চাওয়ার মাধ্যমে ইলম অর্জিত হলে তা দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই অর্জন করা সম্ভব। আর যদি না চাওয়াতেই ইলম আসে, তা দিয়ে দুনিয়া সম্ভব আখিরাত কখনই অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন,
مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا
وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ
‘অনেকে বলে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে দান কর। অথচ তার জন্য পরকালের কোন অংশ নেই।’ (সূরা বাকারাহ ২/২০০)
আর এজ্যই নবী-রাসূলগণ একমাত্র আল্লাহর নিকটেই চাইতেন। যেমন ইবরাহিম (আ:) প্রার্থনা করে বলেন,
رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর।’ (শু‘আরা ২৬/৮৩) অনুরূপ মুসা (আ:) আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي- وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي- وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِنْ لِسَانِي- يَفْقَهُوا قَوْلِي
‘হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও, আমার কাজকে সহজ করে দাও এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (ত্বহা ২০/২৫-২৮) আর এরই ধারাবাহিকতায় রাসূল (সা:) আল্লাহর নিকট উপকারী ইলমের প্রার্থনা করতেন। হাদিসের ভাষায় রাসূল (সা:) প্রতি ফজর সালাতের পর প্রার্থনা করতেন এই বলে যে,
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً
‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রুজি প্রার্থনা করছি।’ (আহমাদ ইবনে মাজাহ, তাবারানি, মিশকাত হা/২৪৯৮) সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত একমাত্র আল্লাহর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করা।

‘আলিম তথা জ্ঞানীদের করণীয় : জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই করণীয় হলো জানা বিষয়গুলো মানুষের নিকট প্রচার করা। যেমন আল্লাহ তাঁর নবীদের নিকট অহি প্রেরণের পর তা মানুষের নিকট প্রচারের নির্দেশ দেন। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ
‘হে রাসূল! পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন তবে আপনি তাঁর পয়গাম পৌঁছালেন না।’ (সূরা মায়েদা ৫/৬৭)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,
بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً

‘আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকটে পৌঁছে দাও, যদি একটি আয়াতও হয়’। (বুখারী হা/৩৪৬১; তিরমিজি হা/২৬৬৯)
পক্ষান্তরে আলিমগণ দ্বীন প্রচারে অবহেলা করলে কিংবা বিরত থাকলে তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। হাদিসে এসেছে,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمِ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ فَتَنْدَلِقُ بِهِ أَقْتَابُهُ فَيَدُورُ بِهَا فِى النَّارِ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيُطِيفُ بِهِ أَهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلاَنُ مَا لَكَ مَا أَصَابَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَانَا عَنِ الْمُنْكَرِ فَقَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ.
ওসামা ইবনু যায়েদ (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামিরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম। (সহিহুল বুখারী হা/৩২৬৭; মিশকাত হা/৫১৩৯)
অতএব আমলবিহীন ইলম কিয়ামতের দিন বড় শাস্তির কারণ হবে। আরবি প্রবাদে রয়েছে,
رجل بلا عمل كشجرة بلا ثمر
‘আমলবিহীন ব্যক্তি ফলবিহীন বৃক্ষের ন্যায়’। জনৈক আরব কবি বলেন,
لو كان للعلم شرف من دون التقي* لكان أشرف خلق الله إبليس
‘যদি তাক্বওয়াবিহীন ইলমের কোন মর্যাদা থাকত, তবে ইবলিস আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সেরা বলে গণ্য হতো। (নবীদের কাহিনী, ১/১৩ পৃ:)

প্রকৃত ‘ইলম তথা জ্ঞানের সফলতা : গোটা বিশ্ব আজ অশান্তিতে ভরপুর। এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার হলো প্রকৃত ইলম অর্জন তথা সুশিক্ষা। কেননা সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়াতে যেমন মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে ও সমাজে শান্তি আসবে, তেমনি আখেরাতের পাথেয় অর্জনের পথ সুগম হবে। মৃত্যুর পর মানুষের আমল বন্ধ হয়ে যায় অথচ দ্বীনি ইলম অর্জন করে শিক্ষা দিলে তা কবরে পৌঁছানোর অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল ব্যতীত। এই তিনটি আমল হলো, প্রবহমান ছাদাকা, এমন ইলম যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং এমন সুসন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (মুসলিম হা/১৬৩১)

হাদিসের শিক্ষা :
১. ‘ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার সম্মান ও মর্যাদা অত্যধিক।
২. ‘ইলম (জ্ঞান) অর্জনের উদ্দেশ্যে যে পথ চলবে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সুগম ও সহজ করে দেবেন।
৩. ‘ইলম অনুযায়ী আমল তথা কাজ হতে হবে।
৪. ‘ইলম প্রচার করতে হবে।

লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ( collected)

Address

Hironpur
Mymensingh Challisa

Telephone

+8801645892749

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Islamic Speech posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Islamic Speech:

Videos

Share

Category


Other Video Creators in Mymensingh Challisa

Show All

You may also like