NFSC - Mirpur 1 BookZone

NFSC - Mirpur 1 BookZone 'নট ফর সেল ক্লাব' অনুমোদিত এই বুকজোনটি?

লিখেছেনঃ Iqramul Hoque" পারফিউম;একজন খুনির গল্প🌼আউট অফ দ্যা ডার্ক।_একটি কনজয়েন্ট ________________________🌺পারফিউম;একজন খ...
16/08/2022

লিখেছেনঃ Iqramul Hoque

" পারফিউম;একজন খুনির গল্প🌼আউট অফ দ্যা ডার্ক।
_একটি কনজয়েন্ট
________________________

🌺
পারফিউম;
একজন খুনির গল্প।
লেখক- প্যাট্রিক সাসকিন্ড
ভাবানুবাদ- পায়েল মন্ডল
এনএফএসসি পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
নট ফর সেল ক্লাব।
ক্লাব প্রকাশ- ০৪
____________________________

পৃথিবী এবঙ এর বাহিরের প্রতিটি বস্তুকণা অজস্র ওয়েভ ফাংশনের সমষ্টি। আর পুরো মহাবিশ্ব এইসব ওয়েভ ফাংশনের অনবদ্য এক অর্খেস্ট্রা।

একজন ব্যাক্তি এই মহান অর্খ্রেস্ট্রার খুব মৃদু একটি ফাইন টিউন। ব্যাক্তির চিন্তা, দৃষ্টি নিক্ষেপ, যৌনতা, ভালোবাসা, ভয়, বন্ধুত্ব, রঙ, মৌলতা সবই এক একটি পৃথক ইউনিক তরঙ্গ।

ওয়েভ ফাংশন। মানবের খুব প্রাচীন একটি ভাষা, যা আজ বিস্মৃত।

বিস্মৃত এই ভাষা আমাদের অসম্পূর্ণ শারিরীক কাঠামোতে, কাঠামোর অভ্যন্তরের শিরা-ধমনীতে প্রবহমান রক্ত, ফুসফুসের বাতাস, ত্বক, নাক আর জানা-অজানা গ্রন্থিগুলির নিঃসরণের মাধ্যমে
অনুদিত হয়ে ধরা দেয়।

গন্ধ এমনই এক প্রাচীন বিস্মৃত ভাষা।

যে ভাষাটা গ্রেনোয়ে জানে; এবঙ খুব সুনিপুনভাবেই জানে। বস্তুসমূহের গহনে ঘটে চলা আন্তঃআনবিক শক্তির সুক্ষ্ম হ্রাস-বৃদ্ধি, মানুষের অন্তর্দেয়াল হতে
উৎসারিত কামতাড়না, ভালোবাসা, রাগ, ভয়, ঘৃণার তরঙ্গ তার স্পর্শকাতর রিসেপ্টরে ধরা দেয় গন্ধের ভাষায়!
মহাবিশ্বের ইউনিফায়েড সিম্ফনির একটা স্বরলিপি যেটা মানুষ ভুলে গেছে,
কোনো এক অজানা কারণে গ্রেনোয়ে সেটা বুঝতে পারে। আঠারো শতকের ফ্রান্সে সে লক্ষ বছর আগের এক এলিয়েন!

প্যাট্রিক সাসকিন্ড একজন জার্মান লেখক। জার্মান হয়েও আঠারো শতকের ফ্রান্স, সুগন্ধীর তীর্থস্থান গ্রাস আর অন্যান্য শহর, শহরগুলোর মধ্যকার ফাঁকা স্থান, এখানকার মানুষের ফুল আর সুগন্ধি কেন্দ্রিক জীবনকে তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। সেইসাথে এই গল্পটিকে একটি ভালো বিজ্ঞাপনও বলা যায়। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট, গন্ধপ্রেমী, ব্যবসায়ী আর জার্মান-ফরাসি কূটনীতিকদের জন্য।

পারফিউমের শুরুটা এরকম একটা ঘোষনা দিয়ে_____
"___,,,,,,,,,,,,,,, গ্রেনোয়ের সেই অপচেষ্টার গল্প বলা হবে।"
গল্পের আরো কয়েক স্থানে আছে______
",,,,,এই গল্পে মাদাম গিলার্ডের কথা আর আসবে না।"
",,,,,মাদাম গিলার্ডের গল্প এখানেই শেষ হয়।"
",,,,, আর তার বেঁচে থাকায় যে কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে পাঠক জানতে পারবেন ক্রমান্বয়ে।"____
_____ গল্প বলার এই ভঙ্গিটা নতুন আর অভিনব মনে হয়েছে। এর মাধ্যমে লেখক পাঠককে খুব বেশি দৌড় করান নি, কিন্তু অনুন্মোচিত দৃশ্যকল্পের ঝাঁপি দেখার কৌতুহল অক্ষুন্ন রেখেছেন।
সেই সাথে পাঠকের কান আর মস্তিষ্ককে সজাগ রাখার চেষ্টা করেছেন।

সারা গায়ে ক্লেদ আর নোঙরা লেগে থাকা ঘিঞ্জি প্যারিস শহরে রু-অক্সের গ্রেনোয়েকে জন্ম দেয়া আর দেহ ব্যবসা করে বেঁচে থাকা মহৎ কিছু বলে মনে হয়না। জীবন আর দেহ এখানে খুব ঠুনকো ও মূল্যহীন একটা ধারণা!

জন্মের পরপরই গ্রেনোয়েকে আবর্জনার স্তুপে ফেলে যাওয়ার অপরাধে
বিচারক যখন রু-অক্সকে মৃত্যুদন্ড দিলেন তখন মনে পড়ছিলো কিছু শব্দ!
জন্মের অধিকার, মৃত্যুর অধিকার, অধিকার! রুশোরা কেন এসব শব্দ নিয়ে ভাবিত ছিলেন তা আঁচ করা যায়।

গ্রেনোয়ে আসলে কার সন্তান!
কোন কামুক পুরুষের নাকি রু-অক্সের? সমাজের, নাকি রাষ্ট্রের? নাকি পিতা সম্পর্কিত ধারণাটাই অর্থহীন এক প্রলাপ!

এতো অর্থহীনতার জঞ্জালেও একজন মানবশিশুকে সিন্ডিকেটের কাছে মাথা নত করে আসতে হয়! তাকে ব্যাপ্টাইজ হতে হয়, সীল-ছাপ্পড় খেতে হয়!

লেখকের হাত ধরে এখানে এবঙ গল্পের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আমরা আঠারো শতকের ইউরোপের মানুষের জীবনঘনিষ্ঠতার একটা ভিন্ন রুপ দেখি। প্যারিসের পরিচয়হীন শিশুরা, যৌনতা ও যৌনকর্ম, ব্যবসা ও জীবন, কর্মঘন্টা, বিত্তের তারতম্যের সমান্তরালে পরিবর্তিত হওয়া স্নেহ-ভালোবাসার স্বরুপ__ এরা বিভিন্ন চরিত্রের ছায়াসঙ্গী হয়ে পাঠককে একের পর এক যাদু দেখিয়ে যায়।

গল্পের প্রয়োজনে মাদাম গিলার্ডের মতো ভাবলেশহীন, আবেগহীন একটি চরিত্র নিয়ে আসাটা লেখকের পরিকল্পিত কাজ বলে মনে হয়েছে। গ্রেনোয়েকে বাঁচিয়ে রাখার লেখকের এক কৌশলী প্রয়াস!
পরিকল্পনাটাকে জায়েজ করার জন্য পরবর্তীতে তিনি কিছু যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে মজার যুক্তি হল__",,,,,,,, মৃত্যু তাকে কি সহজে নিতে পারে?"

"কাঠ"।
গন্ধ'কে রক্তের সাথে দ্রবীভূত করার গ্রেনোয়ের প্রচেষ্টা আমাকে নস্টালজিক করে তুলেছিলো।

আমার অভিজ্ঞতাটা ছিলো কেরোসিন নিয়ে। ছোটবেলায় দোকান থেকে কেরোসিন কিনতে গেলে_ দোকানি টিন থেকে কেরোসিন ঢেলে দিতো। আমি সেই প্রবহমান কেরোসিনের গন্ধকে খুব ভালোবাসতাম। মনে হতো এক বুক পিপাসা জমে আছে আমার বুক থেকে কন্ঠা পর্যন্ত।

আর ভালো লাগতো রোদের ঘ্রাণ। পুরো শৈশব রোদের পরোক্ষ ঘ্রাণ শুঁকেই কেটেছে আমার।

গন্ধের সৌন্দর্যের সাথে গ্রেনোয়ের প্রথম পরিচয়। এই ঘটনাটিও নস্টালজিক ছিলো। হাস্যকর মনে হতে পারে শুনতে, কিন্তু বলার লোভ সামলাতে পারছি না। আসলে পারফিউম পড়ার আগে আমার এই অনুভূতির কোন স্বীকৃতি ছিলো না।

বিয়ের আগে আমার স্ত্রীর ছবি দেখানো হয়েছিলো আমাকে। তার আগে আরো গোটা পাঁচেক ছবি দেখেছি। সবগুলো ছবিই ছিলো আপাদমস্তক।
কিন্তু স্ত্রীর ছবিটা দেখার পর এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো; ছবিটা দেখার পর মনে হয়েছিলো, এই সেই নারী যার দেহজ সুধায় আমি বিলীন হতে চাই! তার দেহের প্রতিটি কণা থেকে নির্গত তরঙ্গ বন্ধী হয়ে ছিলো ওই ছবিটায়। ছবিটা যখন দেখছিলাম মনে হচ্ছিলো, তরঙ্গগুলো তাদের উপযুক্ত রিসেপ্টর পেয়ে গেছে, আর তারা প্রবল বেগে বানের জলের মতো আমার চোখ দিয়ে মগজের কোনো এক অজানা কোণে হারাচ্ছে!

মিলকরণটা হয়তো হাস্যকর কিন্তু এমনই মনে হয়েছিলো। আমি এখন এই নারীরই জীবনসঙ্গী।

লেখক বিস্তর পড়াশোনা করেছেন পারফিউম নিয়ে। এটা তৈরির পদ্ধতি, এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্তকিছুর আত্মিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতা ইত্যাদি বেশ স্পষ্ট তার কাছে।

বলদিনি বুড়ো হয়ে গেছে। সে এখন নিঃস্ব-রিক্ত। তার এই সবকিছু হারানোটা মনে করিয়ে দেয় বাঙলার আঠারো শতকের শেষ দশকগুলোকে। যখন পুরোনো ভূস্বামীরা হারাচ্ছে তাদের গৌরব, বনেদিপনা; আর মার খাচ্ছে নব্য গজিয়ে ওঠা ধনীদের হাতে, যারা ব্যবসাটা ভালো বোঝে। আর বদলে যাওয়া সেই অগনিত মানুষগুলো। যাদের বদলে গেছে মনন-মানসিকতা, শিল্প ও জীবনবোধ!
বলদিনির ভেতরে দৃশ্যমান হতে দেখা যায় বাঙলার কোনো একজন জমিদারকে! যার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিলো দুরে, অনেক দুরে কিন্তু শুন্যতায় ভরা!

গ্রেনোয়ে; দ্য জার্নিম্যান। হাঁটছে তো হাঁটছে। চারপাশে কোন মানুষজন নেই; রাস্তা, আর স্থবির জীবনের সমারোহ চারপাশে। এমন একটা জীবন পেলে বোধ হয় ভালোই হতো।

ছোটবেলায়, যখন একটু একটু সাহস হয়েছে, অনেক দুরে চলে যাওয়ার মতো সাহস। চলে যেতাম ফুপুদের বাড়িতে; একা। মাইলের পর মাইল, হেঁটে হেঁটে। পথে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মানুষ আর দোকানপাটের অস্তিত্ব ছিলো, বাদবাকি সব শুনশান। ভিন্ন জীবনের দেখা মিলতো তখন। সাদা মাটির রাস্তা, রাস্তার পাশের নানা জাতের জঙ্গল, বুনো ফুল, আকাশ-মেঘের ছদ্মবেশি বয়ে চলা খাল, আর কিছুদুর পরপর গাছেদের শরীর। যতোগুলো গাছ দেখতাম, সবার দিকে একবার করে তাকাতাম, ভয়ে অথবা ওরা কথা বলে কিনা জানতে! কিন্তু এই পথপাড়ি সবসময়ই থাকতো শব্দহীন। একটা ঘোরের মতন। আমার মগজেও নৈঃশব্দের প্রতিবিম্ব জটা পাকিয়ে থাকতো গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত।

এমন একটা জীবন পেলে বোধ হয় ভালোই হতো।

গ্রেনোয়ে যেমন বুঝতে পেরেছিলো সে কি চায়।
সম্ভবত আমিও জানি আমি কি চাই।

আমি এক অপার নৈঃশব্দের প্রান্তর পাড়ি দিতে চাই; একা।

মাদাম গিলার্ড, বলদিনি আর তার স্ত্রীর মৃত্যুর সাথে গ্রেনোয়ের সুক্ষ্ম একটা যোগসূত্র তৈরি করেছেন লেখক। সেইনের ঢেউয়ে হারিয়ে যেতে দিয়েছেন হাজার গন্ধের রেসিপি; সেই নোটবুক। এসব ঘটনার সাথে গ্রাসের দিকে অপসৃয়মান গ্রেনোয়ের যদিও কোন যোগসূত্র নেই কিন্তু লেখক যোগসূত্রটার স্বরুপ ভাবতে পাঠককে নিষেধও করেন নি।

গ্রাসের কাছাকাছি এক পাহাড়ি গুহায় লেখক গ্রেনোয়েকে সাত বছর হাইবারনেশনে রেখেছিলেন। কেন এই গুহাবাস। নিজেকে চিনতে পারার বা আবিষ্কার করার অন্য কোন পথ নয় কেন? আঠারো উনিশ শতকে আধ্যাত্মিকতা আর আধুনিকতার যে দ্বন্দ্ব চলছিলো লেখক সম্ভবত তার শকওয়েভ কাটাতে পারেন নি।

গল্পে গ্রেনোয়ে চরিত্র, বেশকিছু ঘটনাপ্রবাহ এবঙ গল্পের সমান্তরাল চরিত্রগুলোর যোগসূত্রের মধ্যে যাদুবাস্তবতার চাদর পরালেও প্রচলিত সমাজ বাস্তবতাকে লেখক আলগোছে মেনে নিয়েছেন। গ্রেনোয়ে এবঙ লেখক দুজনেই
যাদুবাস্তবতায়
বুঁদ হয়ে ধাকলেও সৃষ্টি ও স্রষ্টা উভয়ই রসদ দেয়া-নেয়া করেছেন প্রচলিত বাস্তবতার কুসুম উষ্ণ জল থেকে।

গ্রেনোয়ের ফাঁসির মঞ্চের সামনে হাজার মানুষ অলৌকিক সেই সুগন্ধির আবেশে যখন আদিম ও অকৃত্তিম হয়ে ওঠে কিঙবা ত্রিশ টুকরা গ্রেনোয়েকে যখন কয়েকজন মানুষ ঝলসে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, তখন যাদুবাস্তবতা আর বাস্তবতার ঐন্দ্রজালিক বর্ণালী সার্থক রুপ লাভ করে।

1985 সালে জার্মান ভাষায় বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। লেখক তারো একশত বছর আগের ফ্রান্সের আবহ, জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ আর মানুষের মনস্তত্বকে খুব দক্ষতার সাথে তুলে এনেছেন। যেন গ্রেনোয়ের ভেতর দিয়ে তিনি নিজেই সেই সময়টাতে চলে গিয়েছেন।

কিন্তু, লেখক কেন গ্রেনোয়েকে একজন খুনি বললেন তা আমার বোধগম্য হয়নি। এটা হয়তো আমার সীমাবদ্ধতা। নায়ক একে একে পঁচিশটি ফাইন টিউনকে হত্যা করে; তার প্রথম খুনকে কোনভাবেই হত্যা বলার উপায় নেই, এটা ছিলো অপ্রত্যাশিত একটা দুর্ঘটনা। পরবর্তী চব্বিশটি ফাইন টিউন খুনই ছিলো। কিন্তু লেখক গ্রেনোয়েকে যেখানে ঈশ্বরের আসনে নিয়ে গেছেন, তাকে দিয়েছেন এক অকল্পনীয় শিল্পী সত্ত্বা, যার জন্মই হয়েছে অমোঘ ওই পারফিউমটি সৃষ্টির জন্য, যার গন্ধ কোনো মানুষ কখনও পায়নি, সেখানে তার খুনি নামকরণ নেহাতই অনায্য। এখানেই লেখক তার প্রবল পরাক্রমশালী চলতি সময়ের কাছে নতজানু হয়েছেন!

পুরো গল্পে একবারও গ্রেনোয়েকে নায়ক বা মূল চরিত্র বলে মনে হয়নি। দৃশ্যেগুলোতে স্ট্রাইকার হিসেবে গ্রেনোয়ে বল এগিয়ে নিয়ে গেলেও মূল চরিত্র ছিলো আসলে গন্ধ!
মগজের কুঠুরিতে গন্ধ আর তার দৌরাত্মকে অনুভব করেছি প্রতিটি মুহুর্তে!

খুনি যদি বলতেই হয় তা গ্রেনোয়েকে নয়, গন্ধকেই বলা উচিত!
♦️♦️♦️

🌺
আউট অফ দ্যা ডার্ক
লেখক- প্যাট্রিক মোদিয়ানো।
ভাবানুবাদ- পায়েল মন্ডল।
এনএফএসসি পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
নট ফর সেল ক্লাব।
ক্লাব প্রকাশ-৪
______________________________

একটি ডায়েরির কিছু পাতা; সেখানে লিখা আছে অনেকগুলো অসমাপ্ত গল্প!

গল্পে কয়েকজন কথা বলে যায়; দ্বিধান্বিত আর অগভীর!
জ্যাকুলিন, ভ্যান বিভার, কার্টুড, পিটার রেচম্যান, ডোরিয়েস, জর্জ, লিন্ডা এবঙ আরো অনেকে।
সবাই একটা দীর্ঘ পথে হেঁটে চলেছে!

পথটা দীর্ঘ নাকি সংক্ষিপ্ত সেটা বোঝা যায় না।
চারপাশে ঘন কুয়াশা; দুইহাত সামনে অব্দিও দৃষ্টি পরিষ্কার হয়না; যেন বুড়ো নিয়তি মাথা নিচু করে বসে আছে !

ওদের সাথে পথ চলছে প্যারিস, লন্ডন, সিন নদী, ক্যাফে, বুলেভার্ড আর ফুটপাথেরা! সবাই জেগে আছে; এখানে সবাই জেগে থাকে!

জীবনের এই অনিশ্চিত আর অর্থহীন পথ কাউকে ঘুমোতে দেয় না!

পথ চলাতেই বোধ হয় সকল সুখ!

এখানে প্রেম হয়, কথা হয়, সঙ্গম হয়। কিন্তু সেই ঘন সঙ্গমের নিঃসরিত শীৎকারে কোনো স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় না! হঠাৎ করেই ঘটে যাওয়া সবকিছুকে মরীচিকা বলে মনে হয়!

এখানে সবকিছুই গৌন, অপ্রধান; এমনকি ডায়েরি লেখকও!

ডায়েরি লেখকও জানেন না, কী ঘটছে! ঘটনার স্বরুপ ও পরিণতি কী! ঘটনার সাথে চরিত্রগুলোর মূলসূত্র কোথায়!

তিনি শুধু লিখে যান। লিখে যান বস্তুর দেহ থেকে নির্গত আলোর অবয়ব! আর লিখে যান স্মৃতির দেয়াল ঘষে আসা আওয়াজের ভাষা!

ডায়েরির পাতায় ঝরে পড়ে প্রাত্যহিক আলোর রেণু। স্মৃতি আর চিরবর্তমানের ছায়া আঁধার করে রাখে সফেদ পৃষ্ঠাগুলো! পৃষ্ঠার কোথাও ভবিষ্যত নামক কোন চর্বির ছিটেফোঁটা নেই; কিঙবা দেখা যায় না দৃষ্টির অন্তরালের দৃষ্টি অথবা কুয়াশার পেছনের অদ্ভুত কোনো শহর!

শুধু বোঝা যায়, পেঁয়াজের খোসার মতন থরে থরে সাজানো অগোছালো জীবনের আলাপ!

সেখানে সবাই সবারে আঁকে!

সেইসব সাধারন আলাপের অবসরে মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটে ওঠে, কয়েক বছর নাকি কয়েক মাস আগের একেকটা দিন_কেন চলে গিয়েছিলে হঠাৎ করে!

কেউ কেউ এখানে স্মৃতির শহরে বুঁদ হয়ে থাকে! এ শহর চির যৌবন! এখানে প্রিয়ার চুলের গন্ধ পলায়নপর সময়ের কাছে বিক্রি হয় না!
♦️♦️♦️

🍁
পাশাপাশি ওরা দুজন_______________________
দুটি বই একসাথে; এটা প্রথমবার! তাই আগ্রহও ছিলো খুব। সাধারণত বই পড়তে পড়তে কোথাও রাখার দরকার হলে আলগোছে রেখে দিতাম; প্রচ্ছদ মলাটের বিপরীত মলাটের যত্নের ব্যাপারে সবাইই আনাড়ি। কিন্তু এই কনজয়েন্টের বেলায় বিপত্তি বাধে! একে কোথাও রাখা যায়না, কারণ এর উভয় দিকই মূল দিক! কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট!

দুটো বইয়ের বিষয়বস্তু, চরিত্রের বিন্যাস, ফোকাল পয়েন্ট, লিখার স্টাইল সম্পূর্ণ আলাদা। কিছু মিলও আছে।

পারফিউম আর এর চরিত্রগুলো চলমান সময়কে ছাড়িয়ে যায়; বর্তমানের বাহিরে ওদের বাস! ওরা আলোকবর্ষ দুরের একটি বিন্দুর ক্রমশ বড় হওয়া দেখে!
আউট অফ দ্যা ডার্কে সময়ের কোন ভবিষ্যত নেই, কখনো কখনো আলোর মতো স্থির!

পারফিউম থ্রিলার, আর আউট অফ দ্যা ডার্ক একটা পাজল, একটা ইলিউশন!

গ্রেনোয়ে এবঙ ডায়েরি লেখক দুজনেই অন্তর্মুখী। তবে এদের একজন অসাধারণ ফোকাসড আর অপরজন বিক্ষিপ্ত, খুব সাধারণ।

দুজন লেখকই অদ্ভুত রকমের অতীতমুখী!
যেন ভবিষ্যৎ বলে সময়ের কোনো দিকের অস্তিত্বই নেই! তাঁরা গল্পের প্লট, চরিত্র আর আশেপাশের এলিমেন্টগুলোকে উল্টো হাঁটিয়েছেন বা পেছনে নিয়ে বর্তমানের দিকে ছেড়ে দিয়েছেন!

সাসকিন্ডকে স্বেচ্ছাচারী মনে হয়েছে, অনেকটা ঈশ্বরের মতো; আর মোদিয়ানো যেন আমাদের মতোই সাধারণ একজন, যে বেঁচে বর্তে আছে।
🍁🍁

💖
ঝরঝরে সুন্দর ভাবানুবাদের জন্য পায়েল মন্ডলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।💖
___________

💘
আন্তরিক ধন্যবাদ শিরিন শবনম আপুকে। দুটি সুন্দর মুখবন্ধের জন্য, যারা ফিস ফিস করে আমাকে আগেই গল্পগুলো বলে দিয়েছে!
💘

🌷🌷
পারফিউম বইটি নানা ভাষায় অনুদিত হয়েছে; মূল জার্মান এবঙ ইঙরেজি ভাষার বইটি সম্পর্কে জানা নেই, তাই এটার প্রকৃত এসেন্স এই ভাবানুবাদে উপস্থিত কিনা তা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বইটি একটানা বিরক্তিহীনভাবে পড়ে যেতে কোন সমস্যা হয়নি। একই কথা আউট অফ দ্যা ডার্কের জন্যও।
_____পারফিউমে হাতে গোনা অল্প কয়েকটি জায়গায় বানানগত সমস্যা আর অগোছালো বাক্য নজরে এসেছে। কিন্তু এতো সুন্দর একটা গল্পের প্লটের কারণে এই সামান্য ত্রুটিকে আমলে নেয়াটা বোকামি।
আউট অফ দ্যা ডার্কে প্রথম কিছু অধ্যায়ের লিখায় অযত্নের ছাপ দেখা যায়। হয়তো এটা লেখকের লিখার স্টাইলের কারণেই, মনে হচ্ছিলো একটা গাড়ি স্টার্ট নিতে কষ্ট হচ্ছে।
____পারফিউমের প্রচ্ছদ ভালো লাগেনি। আরো সৃষ্টিশীল প্রচ্ছদ হতে পারতো বইটির। আউট অফ দ্যা ডার্কের প্রচ্ছদ মোটামুটি ভালোই।
_______বইয়ের বাঁধাই, কাগজের মান, লিখার ব্রাইটনেস সত্যিই খুব আরামদায়ক ছিলো!

🥂 "

=================

পারফিউম এবং আউট অফ দ্যা ডার্ক বইয়ের অংশীদারত্ব 220 টাকা যোগ কুরিয়ার খরচ।

এবং চার রঙের ডাবল সাইজের প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সেপিয়েন্স গ্রাফিকস নভেল অংশীদারত্ব মূল্য 500 টাকা যোগ কুরিয়ার খরচ।

পেমেন্ট করে নিচের গুগল ফর্ম পুরন করে রাখুন বই হাতে পৌঁছে যাবে দু এক দিনের মধ্যেই।

https://forms.gle/d8gQZ8HT3K1FQwMV8

  পারফিউম;একজন খুনির গল্প🌼আউট অফ দ্যা ডার্ক।_একটি কনজয়েন্ট ________________________🌺পারফিউম;একজন খুনির গল্প। লেখক- প্যাট...
07/08/2022




পারফিউম;একজন খুনির গল্প🌼আউট অফ দ্যা ডার্ক।
_একটি কনজয়েন্ট
________________________

🌺
পারফিউম;
একজন খুনির গল্প।
লেখক- প্যাট্রিক সাসকিন্ড
ভাবানুবাদ- পায়েল মন্ডল
এনএফএসসি পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
নট ফর সেল ক্লাব।
ক্লাব প্রকাশ- ০৪
____________________________

পৃথিবী এবঙ এর বাহিরের প্রতিটি বস্তুকণা অজস্র ওয়েভ ফাংশনের সমষ্টি। আর পুরো মহাবিশ্ব এইসব ওয়েভ ফাংশনের অনবদ্য এক অর্খেস্ট্রা।

একজন ব্যাক্তি এই মহান অর্খ্রেস্ট্রার খুব মৃদু একটি ফাইন টিউন। ব্যাক্তির চিন্তা, দৃষ্টি নিক্ষেপ, যৌনতা, ভালোবাসা, ভয়, বন্ধুত্ব, রঙ, মৌলতা সবই এক একটি পৃথক ইউনিক তরঙ্গ।

ওয়েভ ফাংশন। মানবের খুব প্রাচীন একটি ভাষা, যা আজ বিস্মৃত।

বিস্মৃত এই ভাষা আমাদের অসম্পূর্ণ শারিরীক কাঠামোতে, কাঠামোর অভ্যন্তরের শিরা-ধমনীতে প্রবহমান রক্ত, ফুসফুসের বাতাস, ত্বক, নাক আর জানা-অজানা গ্রন্থিগুলির নিঃসরণের মাধ্যমে
অনুদিত হয়ে ধরা দেয়।

গন্ধ এমনই এক প্রাচীন বিস্মৃত ভাষা।

যে ভাষাটা গ্রেনোয়ে জানে; এবঙ খুব সুনিপুনভাবেই জানে। বস্তুসমূহের গহনে ঘটে চলা আন্তঃআনবিক শক্তির সুক্ষ্ম হ্রাস-বৃদ্ধি, মানুষের অন্তর্দেয়াল হতে
উৎসারিত কামতাড়না, ভালোবাসা, রাগ, ভয়, ঘৃণার তরঙ্গ তার স্পর্শকাতর রিসেপ্টরে ধরা দেয় গন্ধের ভাষায়!
মহাবিশ্বের ইউনিফায়েড সিম্ফনির একটা স্বরলিপি যেটা মানুষ ভুলে গেছে,
কোনো এক অজানা কারণে গ্রেনোয়ে সেটা বুঝতে পারে। আঠারো শতকের ফ্রান্সে সে লক্ষ বছর আগের এক এলিয়েন!

প্যাট্রিক সাসকিন্ড একজন জার্মান লেখক। জার্মান হয়েও আঠারো শতকের ফ্রান্স, সুগন্ধীর তীর্থস্থান গ্রাস আর অন্যান্য শহর, শহরগুলোর মধ্যকার ফাঁকা স্থান, এখানকার মানুষের ফুল আর সুগন্ধি কেন্দ্রিক জীবনকে তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। সেইসাথে এই গল্পটিকে একটি ভালো বিজ্ঞাপনও বলা যায়। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট, গন্ধপ্রেমী, ব্যবসায়ী আর জার্মান-ফরাসি কূটনীতিকদের জন্য।

পারফিউমের শুরুটা এরকম একটা ঘোষনা দিয়ে_____
"___,,,,,,,,,,,,,,, গ্রেনোয়ের সেই অপচেষ্টার গল্প বলা হবে।"
গল্পের আরো কয়েক স্থানে আছে______
",,,,,এই গল্পে মাদাম গিলার্ডের কথা আর আসবে না।"
",,,,,মাদাম গিলার্ডের গল্প এখানেই শেষ হয়।"
",,,,, আর তার বেঁচে থাকায় যে কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে পাঠক জানতে পারবেন ক্রমান্বয়ে।"____
_____ গল্প বলার এই ভঙ্গিটা নতুন আর অভিনব মনে হয়েছে। এর মাধ্যমে লেখক পাঠককে খুব বেশি দৌড় করান নি, কিন্তু অনুন্মোচিত দৃশ্যকল্পের ঝাঁপি দেখার কৌতুহল অক্ষুন্ন রেখেছেন।
সেই সাথে পাঠকের কান আর মস্তিষ্ককে সজাগ রাখার চেষ্টা করেছেন।

সারা গায়ে ক্লেদ আর নোঙরা লেগে থাকা ঘিঞ্জি প্যারিস শহরে রু-অক্সের গ্রেনোয়েকে জন্ম দেয়া আর দেহ ব্যবসা করে বেঁচে থাকা মহৎ কিছু বলে মনে হয়না। জীবন আর দেহ এখানে খুব ঠুনকো ও মূল্যহীন একটা ধারণা!

জন্মের পরপরই গ্রেনোয়েকে আবর্জনার স্তুপে ফেলে যাওয়ার অপরাধে
বিচারক যখন রু-অক্সকে মৃত্যুদন্ড দিলেন তখন মনে পড়ছিলো কিছু শব্দ!
জন্মের অধিকার, মৃত্যুর অধিকার, অধিকার! রুশোরা কেন এসব শব্দ নিয়ে ভাবিত ছিলেন তা আঁচ করা যায়।

গ্রেনোয়ে আসলে কার সন্তান!
কোন কামুক পুরুষের নাকি রু-অক্সের? সমাজের, নাকি রাষ্ট্রের? নাকি পিতা সম্পর্কিত ধারণাটাই অর্থহীন এক প্রলাপ!

এতো অর্থহীনতার জঞ্জালেও একজন মানবশিশুকে সিন্ডিকেটের কাছে মাথা নত করে আসতে হয়! তাকে ব্যাপ্টাইজ হতে হয়, সীল-ছাপ্পড় খেতে হয়!

লেখকের হাত ধরে এখানে এবঙ গল্পের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে আমরা আঠারো শতকের ইউরোপের মানুষের জীবনঘনিষ্ঠতার একটা ভিন্ন রুপ দেখি। প্যারিসের পরিচয়হীন শিশুরা, যৌনতা ও যৌনকর্ম, ব্যবসা ও জীবন, কর্মঘন্টা, বিত্তের তারতম্যের সমান্তরালে পরিবর্তিত হওয়া স্নেহ-ভালোবাসার স্বরুপ__ এরা বিভিন্ন চরিত্রের ছায়াসঙ্গী হয়ে পাঠককে একের পর এক যাদু দেখিয়ে যায়।

গল্পের প্রয়োজনে মাদাম গিলার্ডের মতো ভাবলেশহীন, আবেগহীন একটি চরিত্র নিয়ে আসাটা লেখকের পরিকল্পিত কাজ বলে মনে হয়েছে। গ্রেনোয়েকে বাঁচিয়ে রাখার লেখকের এক কৌশলী প্রয়াস!
পরিকল্পনাটাকে জায়েজ করার জন্য পরবর্তীতে তিনি কিছু যুক্তিও দাঁড় করিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে মজার যুক্তি হল__",,,,,,,, মৃত্যু তাকে কি সহজে নিতে পারে?"

"কাঠ"।
গন্ধ'কে রক্তের সাথে দ্রবীভূত করার গ্রেনোয়ের প্রচেষ্টা আমাকে নস্টালজিক করে তুলেছিলো।

আমার অভিজ্ঞতাটা ছিলো কেরোসিন নিয়ে। ছোটবেলায় দোকান থেকে কেরোসিন কিনতে গেলে_ দোকানি টিন থেকে কেরোসিন ঢেলে দিতো। আমি সেই প্রবহমান কেরোসিনের গন্ধকে খুব ভালোবাসতাম। মনে হতো এক বুক পিপাসা জমে আছে আমার বুক থেকে কন্ঠা পর্যন্ত।

আর ভালো লাগতো রোদের ঘ্রাণ। পুরো শৈশব রোদের পরোক্ষ ঘ্রাণ শুঁকেই কেটেছে আমার।

গন্ধের সৌন্দর্যের সাথে গ্রেনোয়ের প্রথম পরিচয়। এই ঘটনাটিও নস্টালজিক ছিলো। হাস্যকর মনে হতে পারে শুনতে, কিন্তু বলার লোভ সামলাতে পারছি না। আসলে পারফিউম পড়ার আগে আমার এই অনুভূতির কোন স্বীকৃতি ছিলো না।

বিয়ের আগে আমার স্ত্রীর ছবি দেখানো হয়েছিলো আমাকে। তার আগে আরো গোটা পাঁচেক ছবি দেখেছি। সবগুলো ছবিই ছিলো আপাদমস্তক।
কিন্তু স্ত্রীর ছবিটা দেখার পর এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো; ছবিটা দেখার পর মনে হয়েছিলো, এই সেই নারী যার দেহজ সুধায় আমি বিলীন হতে চাই! তার দেহের প্রতিটি কণা থেকে নির্গত তরঙ্গ বন্ধী হয়ে ছিলো ওই ছবিটায়। ছবিটা যখন দেখছিলাম মনে হচ্ছিলো, তরঙ্গগুলো তাদের উপযুক্ত রিসেপ্টর পেয়ে গেছে, আর তারা প্রবল বেগে বানের জলের মতো আমার চোখ দিয়ে মগজের কোনো এক অজানা কোণে হারাচ্ছে!

মিলকরণটা হয়তো হাস্যকর কিন্তু এমনই মনে হয়েছিলো। আমি এখন এই নারীরই জীবনসঙ্গী।

লেখক বিস্তর পড়াশোনা করেছেন পারফিউম নিয়ে। এটা তৈরির পদ্ধতি, এটার সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্তকিছুর আত্মিক যোগাযোগের ধারাবাহিকতা ইত্যাদি বেশ স্পষ্ট তার কাছে।

বলদিনি বুড়ো হয়ে গেছে। সে এখন নিঃস্ব-রিক্ত। তার এই সবকিছু হারানোটা মনে করিয়ে দেয় বাঙলার আঠারো শতকের শেষ দশকগুলোকে। যখন পুরোনো ভূস্বামীরা হারাচ্ছে তাদের গৌরব, বনেদিপনা; আর মার খাচ্ছে নব্য গজিয়ে ওঠা ধনীদের হাতে, যারা ব্যবসাটা ভালো বোঝে। আর বদলে যাওয়া সেই অগনিত মানুষগুলো। যাদের বদলে গেছে মনন-মানসিকতা, শিল্প ও জীবনবোধ!
বলদিনির ভেতরে দৃশ্যমান হতে দেখা যায় বাঙলার কোনো একজন জমিদারকে! যার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিলো দুরে, অনেক দুরে কিন্তু শুন্যতায় ভরা!

গ্রেনোয়ে; দ্য জার্নিম্যান। হাঁটছে তো হাঁটছে। চারপাশে কোন মানুষজন নেই; রাস্তা, আর স্থবির জীবনের সমারোহ চারপাশে। এমন একটা জীবন পেলে বোধ হয় ভালোই হতো।

ছোটবেলায়, যখন একটু একটু সাহস হয়েছে, অনেক দুরে চলে যাওয়ার মতো সাহস। চলে যেতাম ফুপুদের বাড়িতে; একা। মাইলের পর মাইল, হেঁটে হেঁটে। পথে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মানুষ আর দোকানপাটের অস্তিত্ব ছিলো, বাদবাকি সব শুনশান। ভিন্ন জীবনের দেখা মিলতো তখন। সাদা মাটির রাস্তা, রাস্তার পাশের নানা জাতের জঙ্গল, বুনো ফুল, আকাশ-মেঘের ছদ্মবেশি বয়ে চলা খাল, আর কিছুদুর পরপর গাছেদের শরীর। যতোগুলো গাছ দেখতাম, সবার দিকে একবার করে তাকাতাম, ভয়ে অথবা ওরা কথা বলে কিনা জানতে! কিন্তু এই পথপাড়ি সবসময়ই থাকতো শব্দহীন। একটা ঘোরের মতন। আমার মগজেও নৈঃশব্দের প্রতিবিম্ব জটা পাকিয়ে থাকতো গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত।

এমন একটা জীবন পেলে বোধ হয় ভালোই হতো।

গ্রেনোয়ে যেমন বুঝতে পেরেছিলো সে কি চায়।
সম্ভবত আমিও জানি আমি কি চাই।

আমি এক অপার নৈঃশব্দের প্রান্তর পাড়ি দিতে চাই; একা।

মাদাম গিলার্ড, বলদিনি আর তার স্ত্রীর মৃত্যুর সাথে গ্রেনোয়ের সুক্ষ্ম একটা যোগসূত্র তৈরি করেছেন লেখক। সেইনের ঢেউয়ে হারিয়ে যেতে দিয়েছেন হাজার গন্ধের রেসিপি; সেই নোটবুক। এসব ঘটনার সাথে গ্রাসের দিকে অপসৃয়মান গ্রেনোয়ের যদিও কোন যোগসূত্র নেই কিন্তু লেখক যোগসূত্রটার স্বরুপ ভাবতে পাঠককে নিষেধও করেন নি।

গ্রাসের কাছাকাছি এক পাহাড়ি গুহায় লেখক গ্রেনোয়েকে সাত বছর হাইবারনেশনে রেখেছিলেন। কেন এই গুহাবাস। নিজেকে চিনতে পারার বা আবিষ্কার করার অন্য কোন পথ নয় কেন? আঠারো উনিশ শতকে আধ্যাত্মিকতা আর আধুনিকতার যে দ্বন্দ্ব চলছিলো লেখক সম্ভবত তার শকওয়েভ কাটাতে পারেন নি।

গল্পে গ্রেনোয়ে চরিত্র, বেশকিছু ঘটনাপ্রবাহ এবঙ গল্পের সমান্তরাল চরিত্রগুলোর যোগসূত্রের মধ্যে যাদুবাস্তবতার চাদর পরালেও প্রচলিত সমাজ বাস্তবতাকে লেখক আলগোছে মেনে নিয়েছেন। গ্রেনোয়ে এবঙ লেখক দুজনেই
যাদুবাস্তবতায়
বুঁদ হয়ে ধাকলেও সৃষ্টি ও স্রষ্টা উভয়ই রসদ দেয়া-নেয়া করেছেন প্রচলিত বাস্তবতার কুসুম উষ্ণ জল থেকে।

গ্রেনোয়ের ফাঁসির মঞ্চের সামনে হাজার মানুষ অলৌকিক সেই সুগন্ধির আবেশে যখন আদিম ও অকৃত্তিম হয়ে ওঠে কিঙবা ত্রিশ টুকরা গ্রেনোয়েকে যখন কয়েকজন মানুষ ঝলসে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, তখন যাদুবাস্তবতা আর বাস্তবতার ঐন্দ্রজালিক বর্ণালী সার্থক রুপ লাভ করে।

1985 সালে জার্মান ভাষায় বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। লেখক তারো একশত বছর আগের ফ্রান্সের আবহ, জীবনযাত্রা, প্রাকৃতিক পরিবেশ আর মানুষের মনস্তত্বকে খুব দক্ষতার সাথে তুলে এনেছেন। যেন গ্রেনোয়ের ভেতর দিয়ে তিনি নিজেই সেই সময়টাতে চলে গিয়েছেন।

কিন্তু, লেখক কেন গ্রেনোয়েকে একজন খুনি বললেন তা আমার বোধগম্য হয়নি। এটা হয়তো আমার সীমাবদ্ধতা। নায়ক একে একে পঁচিশটি ফাইন টিউনকে হত্যা করে; তার প্রথম খুনকে কোনভাবেই হত্যা বলার উপায় নেই, এটা ছিলো অপ্রত্যাশিত একটা দুর্ঘটনা। পরবর্তী চব্বিশটি ফাইন টিউন খুনই ছিলো। কিন্তু লেখক গ্রেনোয়েকে যেখানে ঈশ্বরের আসনে নিয়ে গেছেন, তাকে দিয়েছেন এক অকল্পনীয় শিল্পী সত্ত্বা, যার জন্মই হয়েছে অমোঘ ওই পারফিউমটি সৃষ্টির জন্য, যার গন্ধ কোনো মানুষ কখনও পায়নি, সেখানে তার খুনি নামকরণ নেহাতই অনায্য। এখানেই লেখক তার প্রবল পরাক্রমশালী চলতি সময়ের কাছে নতজানু হয়েছেন!

পুরো গল্পে একবারও গ্রেনোয়েকে নায়ক বা মূল চরিত্র বলে মনে হয়নি। দৃশ্যেগুলোতে স্ট্রাইকার হিসেবে গ্রেনোয়ে বল এগিয়ে নিয়ে গেলেও মূল চরিত্র ছিলো আসলে গন্ধ!
মগজের কুঠুরিতে গন্ধ আর তার দৌরাত্মকে অনুভব করেছি প্রতিটি মুহুর্তে!

খুনি যদি বলতেই হয় তা গ্রেনোয়েকে নয়, গন্ধকেই বলা উচিত!
♦️♦️♦️

🌺
আউট অফ দ্যা ডার্ক
লেখক- প্যাট্রিক মোদিয়ানো।
ভাবানুবাদ- পায়েল মন্ডল।
এনএফএসসি পাবলিকেশন্স লিমিটেড।
নট ফর সেল ক্লাব।
ক্লাব প্রকাশ-৪
______________________________

একটি ডায়েরির কিছু পাতা; সেখানে লিখা আছে অনেকগুলো অসমাপ্ত গল্প!

গল্পে কয়েকজন কথা বলে যায়; দ্বিধান্বিত আর অগভীর!
জ্যাকুলিন, ভ্যান বিভার, কার্টুড, পিটার রেচম্যান, ডোরিয়েস, জর্জ, লিন্ডা এবঙ আরো অনেকে।
সবাই একটা দীর্ঘ পথে হেঁটে চলেছে!

পথটা দীর্ঘ নাকি সংক্ষিপ্ত সেটা বোঝা যায় না।
চারপাশে ঘন কুয়াশা; দুইহাত সামনে অব্দিও দৃষ্টি পরিষ্কার হয়না; যেন বুড়ো নিয়তি মাথা নিচু করে বসে আছে !

ওদের সাথে পথ চলছে প্যারিস, লন্ডন, সিন নদী, ক্যাফে, বুলেভার্ড আর ফুটপাথেরা! সবাই জেগে আছে; এখানে সবাই জেগে থাকে!

জীবনের এই অনিশ্চিত আর অর্থহীন পথ কাউকে ঘুমোতে দেয় না!

পথ চলাতেই বোধ হয় সকল সুখ!

এখানে প্রেম হয়, কথা হয়, সঙ্গম হয়। কিন্তু সেই ঘন সঙ্গমের নিঃসরিত শীৎকারে কোনো স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় না! হঠাৎ করেই ঘটে যাওয়া সবকিছুকে মরীচিকা বলে মনে হয়!

এখানে সবকিছুই গৌন, অপ্রধান; এমনকি ডায়েরি লেখকও!

ডায়েরি লেখকও জানেন না, কী ঘটছে! ঘটনার স্বরুপ ও পরিণতি কী! ঘটনার সাথে চরিত্রগুলোর মূলসূত্র কোথায়!

তিনি শুধু লিখে যান। লিখে যান বস্তুর দেহ থেকে নির্গত আলোর অবয়ব! আর লিখে যান স্মৃতির দেয়াল ঘষে আসা আওয়াজের ভাষা!

ডায়েরির পাতায় ঝরে পড়ে প্রাত্যহিক আলোর রেণু। স্মৃতি আর চিরবর্তমানের ছায়া আঁধার করে রাখে সফেদ পৃষ্ঠাগুলো! পৃষ্ঠার কোথাও ভবিষ্যত নামক কোন চর্বির ছিটেফোঁটা নেই; কিঙবা দেখা যায় না দৃষ্টির অন্তরালের দৃষ্টি অথবা কুয়াশার পেছনের অদ্ভুত কোনো শহর!

শুধু বোঝা যায়, পেঁয়াজের খোসার মতন থরে থরে সাজানো অগোছালো জীবনের আলাপ!

সেখানে সবাই সবারে আঁকে!

সেইসব সাধারন আলাপের অবসরে মাঝে মাঝে ডানা ঝাপটে ওঠে, কয়েক বছর নাকি কয়েক মাস আগের একেকটা দিন_কেন চলে গিয়েছিলে হঠাৎ করে!

কেউ কেউ এখানে স্মৃতির শহরে বুঁদ হয়ে থাকে! এ শহর চির যৌবন! এখানে প্রিয়ার চুলের গন্ধ পলায়নপর সময়ের কাছে বিক্রি হয় না!
♦️♦️♦️

🍁
পাশাপাশি ওরা দুজন_______________________
দুটি বই একসাথে; এটা প্রথমবার! তাই আগ্রহও ছিলো খুব। সাধারণত বই পড়তে পড়তে কোথাও রাখার দরকার হলে আলগোছে রেখে দিতাম; প্রচ্ছদ মলাটের বিপরীত মলাটের যত্নের ব্যাপারে সবাইই আনাড়ি। কিন্তু এই কনজয়েন্টের বেলায় বিপত্তি বাধে! একে কোথাও রাখা যায়না, কারণ এর উভয় দিকই মূল দিক! কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট!

দুটো বইয়ের বিষয়বস্তু, চরিত্রের বিন্যাস, ফোকাল পয়েন্ট, লিখার স্টাইল সম্পূর্ণ আলাদা। কিছু মিলও আছে।

পারফিউম আর এর চরিত্রগুলো চলমান সময়কে ছাড়িয়ে যায়; বর্তমানের বাহিরে ওদের বাস! ওরা আলোকবর্ষ দুরের একটি বিন্দুর ক্রমশ বড় হওয়া দেখে!
আউট অফ দ্যা ডার্কে সময়ের কোন ভবিষ্যত নেই, কখনো কখনো আলোর মতো স্থির!

পারফিউম থ্রিলার, আর আউট অফ দ্যা ডার্ক একটা পাজল, একটা ইলিউশন!

গ্রেনোয়ে এবঙ ডায়েরি লেখক দুজনেই অন্তর্মুখী। তবে এদের একজন অসাধারণ ফোকাসড আর অপরজন বিক্ষিপ্ত, খুব সাধারণ।

দুজন লেখকই অদ্ভুত রকমের অতীতমুখী!
যেন ভবিষ্যৎ বলে সময়ের কোনো দিকের অস্তিত্বই নেই! তাঁরা গল্পের প্লট, চরিত্র আর আশেপাশের এলিমেন্টগুলোকে উল্টো হাঁটিয়েছেন বা পেছনে নিয়ে বর্তমানের দিকে ছেড়ে দিয়েছেন!

সাসকিন্ডকে স্বেচ্ছাচারী মনে হয়েছে, অনেকটা ঈশ্বরের মতো; আর মোদিয়ানো যেন আমাদের মতোই সাধারণ একজন, যে বেঁচে বর্তে আছে।
🍁🍁

💖
ঝরঝরে সুন্দর ভাবানুবাদের জন্য পায়েল মন্ডলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।💖
___________

💘
আন্তরিক ধন্যবাদ শিরিন শবনম আপুকে। দুটি সুন্দর মুখবন্ধের জন্য, যারা ফিস ফিস করে আমাকে আগেই গল্পগুলো বলে দিয়েছে!
💘

🌷🌷
পারফিউম বইটি নানা ভাষায় অনুদিত হয়েছে; মূল জার্মান এবঙ ইঙরেজি ভাষার বইটি সম্পর্কে জানা নেই, তাই এটার প্রকৃত এসেন্স এই ভাবানুবাদে উপস্থিত কিনা তা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বইটি একটানা বিরক্তিহীনভাবে পড়ে যেতে কোন সমস্যা হয়নি। একই কথা আউট অফ দ্যা ডার্কের জন্যও।
_____পারফিউমে হাতে গোনা অল্প কয়েকটি জায়গায় বানানগত সমস্যা আর অগোছালো বাক্য নজরে এসেছে। কিন্তু এতো সুন্দর একটা গল্পের প্লটের কারণে এই সামান্য ত্রুটিকে আমলে নেয়াটা বোকামি।
আউট অফ দ্যা ডার্কে প্রথম কিছু অধ্যায়ের লিখায় অযত্নের ছাপ দেখা যায়। হয়তো এটা লেখকের লিখার স্টাইলের কারণেই, মনে হচ্ছিলো একটা গাড়ি স্টার্ট নিতে কষ্ট হচ্ছে।
____পারফিউমের প্রচ্ছদ ভালো লাগেনি। আরো সৃষ্টিশীল প্রচ্ছদ হতে পারতো বইটির। আউট অফ দ্যা ডার্কের প্রচ্ছদ মোটামুটি ভালোই।
_______বইয়ের বাঁধাই, কাগজের মান, লিখার ব্রাইটনেস সত্যিই খুব আরামদায়ক ছিলো!

🥂

©Iqramul Hoque

বিঃদ্রঃ
পারফিউম এবং আউট অফ দ্যা ডার্ক বইয়ের অংশীদারত্ব মূল্য 220 টাকা যোগ কুরিয়ার খরচ।

পেমেন্ট করে নিচের গুগল ফর্ম পুরন করে রাখুন বই হাতে পৌঁছে যাবে দু এক দিনের মধ্যেই।

https://forms.gle/d8gQZ8HT3K1FQwMV8

এছাড়াও সংগ্রহ করতে পারবেন আমাদের পূর্বের বই।
সেপিয়েন্স গ্রাফিকস নভেল প্রথম খন্ড

    -----পারফিউম -----ফরাসী সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো ( ১৮০২-১৮৮৫) এর উপন্যাস গুলাতে বেশ কিছু সুপারম্যান দেখা যায়। এরা জন্মগ...
05/08/2022




-----
পারফিউম
-----

ফরাসী সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো ( ১৮০২-১৮৮৫) এর উপন্যাস গুলাতে বেশ কিছু সুপারম্যান দেখা যায়। এরা জন্মগতভাবে রক্ত মাংসের মানুষই, কিন্তু তাদের স্পেশাল কোনো একটা স্কিল থাকে কিংবা তাদের কাজকর্মে তারা একদম সুপারম্যান এর মত হয়ে যায়। যেসব কাজ নরমাল মানুষ করতে পারে না, এরা সেইসব কাজ করে ফেলে।

দ্য হাঞ্চব্যাক অফ নটরডেম এর পঙ্গু ঘন্টাবাদক কাসিমোডো, কিংবা লা মিজারেবল এর জা ভালজা কে দেখে আমরা বিস্মিত হই। ভাবি, মানুষের পক্ষে কত কি করা সম্ভব!

প্যাট্রিক সাসকিন্ড এর পারফিউম বইতেও প্রায় একই ধরনের একজন সুপারম্যান কে দেখা যায়। গ্রেনয়, জন্মগতভাবে যার নাক্কটা বেশি সেন্সেটিভ। কুকুর বেড়াল বা অন্যান্য পশুদের মত, সে অনেক দূর থেকে গন্ধ শুকতে পারে। বিভিন্ন গন্ধের পার্থক্য ধরতে পারে। এই বিশেষ নাককে কাজে লাগিয়ে সে বিভিন্ন সুগন্ধী বস্তু মিশিয়ে নতুন পারফিউম তৈরিও করতে পারে।

এই সেন্সেটিভ অঙ্গ কাজে লাগিয়েই সে জীবনে শাইন করছিল। তার জন্ম হয়েছিল বেশ নিচু সমাজে, কিন্তু কাজের মাধ্যমেই সমাজের বেশ উচু জায়গায় পৌছে যাচ্ছিল। তবে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সেইরকম কিছু ছিল না। ( এইখানেই এসে পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য আসলে কি?)

গল্পের নায়ক, গ্রেনয় যা করে, তা হলে, জীবনের সব সম্পদ, সব অপরচুনিটি, সব ঝুকি দিয়ে সে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পারফিউম তৈরি করে। এই পারফিউম বানানোর জন্য সে আইনের ভেতরের এবং বাইরের ও অনেক কাজ করে ফেলে। সবশেষে, সেই পারফিউম টা ইউজ করে একটা নির্দিষ্ট মব কে কয়েক ঘন্টার জন্য স্বর্গের অনুভূতি দেয়। স্বর্গে গিয়ে মানুষের যা যা করার কথা, ওই নির্দিষ্ট পারফিউমের গন্ধ পেয়ে কয়েক ঘন্টা ওই মানুষরা সকল দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে সেই স্বর্গীয় আনন্দে-উতসবে মেতে উঠেছিল।

কিন্তু এরপর গ্রেনয় কি করবে? ( আবার ও সেই দার্শনিক চিন্তা মাথায় আসে, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি!)

খৃষ্ট ধর্মের যীশুর মত, গ্রেনয় এরপর স্বেচ্ছায় নিজেকে তার ভক্তদের মাঝে বিলীন করে দেয়। নিজের আলাদা অস্তিত্ত্ব না রেখে সে অন্যদের মাঝেই কোনো একপ্রকারে নিজে টিকে থাকতে চায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত বই এটা। সায়েন্স ফিকশন ঘরানার বই বলা যেতে পারে। বাংলায় এই প্রথম অনুবাদ হল। নিঃসন্দেহে পাঠককে অনেক কিছু ভাবাতে বাধ্য করবে বইটা।

------
আউট অফ দ্য ডার্ক
-----

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে একটা নতুন হতাশাগ্রস্থ জেনারেশন দেখা যায়। তাদের ফ্যামিলি মেম্বর,পরিচিত বন্ধুবান্ধব অনেকেই দেখা যায়, যুদ্ধে মারা গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন কি করবে? লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি দিয়ে কি করবে?

হতাশ হয়ে তারা লেখাপড়া বা ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। Hippy নামে পরিচিত এই জেনারেশন। অপ্রচলিত পোষাক আশাক, অপ্রচলিত মিউজিক, অদ্ভূত লাইফ স্টাইল তারা বেছে নেয়। ড্রাগ কিংবা যৌনতার ব্যাপারেও তাদের কোনো বাছবিচার ছিল না। তারা বলত, এগুলা অশ্লীলতা নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দুক দিয়ে মানুষ খুন করা হল অশ্লীলতা। তারা বলত, no war,make love. শিল্প সাহিত্যে বিভিন্ন সময়েই এদের উল্লেখ পাওয়া যায় ( যেমন - ফরেস্ট গাম্প সিনেমার নায়িকা ছিল হিপি)

লেখক প্যাট্রিক মোদিয়ানো, যার জন্ম একটা ফ্রেঞ্চ ইহুদি পরিবারে, যুদ্ধের কারনে অনেক প্যারা খাইতে হইছে। তার জীবনের সেই সকল কাহিনীই ফুটিয়ে তুলেছেন তার সাহিত্যে৷ তার সাহিত্যগুলাকে বলা হয় Autofiction , মানে Autobiography ( আত্মজীবনী) এবং Historical Fiction ( ইতিহাস নির্ভর কল্পকাহিনী) এর মিশেল।

Out of the dark বইটাও তেমন। ১৯৬৫ সালের কাছাকাছি সময়ের কাহিনী এটা। লেখক এখানে হিপি সুলভ জীবন কাটাচ্ছে। লেখাপড়া বাদ দিয়ে বই বিক্রি করছে, নাটক লেখার চেষ্টা করছে। এই সময় ফ্রান্সে তার সাথে পরিচয় হয় আরেক হিপি কাপল - বিভার এবং জ্যাকলিন এর। গল্পের ধারাবাহিকতায় ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের আরো কয়েকজনের দেখা পাওয়া যায় কাহিনীর মধ্যে , যাদের প্রায় সবার মেন্টালিটিই তাদের মত।

কাহিনীর এক পর্যায়ে নায়ক ( মোদিয়ানো?) এবং জ্যাকলিন এর প্রেম হয়। তারা প্রায় শূন্য পকেট নিয়ে ঘুরে বেড়ায় প্যারিসে, লন্ডনে, আরো বিভিন্ন জায়গায়।

সুনীল গগঙ্গোপাধ্যায় তার 'ছবির দেশে কবিতার দেশে' এবং 'মার্গারিট,ফুল হয়ে ফুটে আছো' বইয়ের মধ্যে এক ফরাসী তরুণীর বর্ননা দিয়েছেন। প্যারিসে মার্গারিট আর সুনীল প্রায় শূন্য পকেট নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন, নিজেদেরকে আবিষ্কার করতেন, আবিষ্কার করতেন প্যারিস শহরকে। এটাই ছিল সুনীলের জীবনের বেস্ট কয়েক মাস।

কিন্তু এরপর মার্গারিট এর সাথে সুনীলের বিচ্ছেদ ঘটে। তাকে আর খুজে পান নি লেখক।

প্যাট্রিক মোদিয়ানো এই দিক দিয়ে লাকি। জ্যাকলিন এর সাথে কয়েক মাস প্রেমের পরে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে৷ ৩০ বছর পরে তার সাথে আবার একবার দেখা হয় বটে, কিন্তু পুরনো আবেগ উচ্ছাস তখন আর কিছুই ছিল না। এক ধরনের স্বপ্নভঙ্গ বলা যায় মনে হয়। এর চেয়ে সুনীল এর মার্গারিটের স্টাইলে দেখা না হওয়াই কি ভাল ছিল না?

দুইটা বই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। পারফিউম এ গ্রেনয় এর সাইকোলজি অনেক সময় নিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সংলাপ এর বদলে এখানে চিন্তামূলক প্যারাগ্রাফ অনেক বেশি। আউট অফ দ্য ডার্ক এ সাইকোলজি প্রায় কিছুই দেখানো হয়নি। জাস্ট ঘটনাগুলো বর্ননা করা হয়েছে বেশ দ্রুত স্পিডে। পাঠকের নিজের দায়িত্ব, চরিত্রগুলোর মনোজগত বিশ্লেষণ করার।

দুইটা আলাদা ধরনের অনুবাদেই অনুবাদক পায়েল মন্ডল বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন বলতে হবে।

( নট ফর সেল ক্লাবের সদস্য আমি নই। নিয়ম অনুযায়ী এই রিভিউ তে অংশ নেওয়ার কথা নয় আমার। কিন্তু এক সদস্যের কাছ থেকে বইটা সংগ্রহ করে পড়ার পরে অনেক ভাল লেগেছে। নিজের অনুভূতি শেয়ার করতে চেয়েছিলাম আপনাদের সাথে। তাই লিখলাম এখানে। অনেক ধন্যবাদ ক্লাবকে এই বই দুইটা অনুবাদ করার জন্য)

©সা দিক

এবং পারফিউম এবং আউট অফ দ্যা ডার্ক বইয়ের অংশীদারত্ব 220 টাকা যোগ কুরিয়ার খরচ।

পেমেন্ট করে নিচের গুগল ফর্ম পুরন করে রাখুন বই হাতে পৌঁছে যাবে দু এক দিনের মধ্যেই।

https://forms.gle/d8gQZ8HT3K1FQwMV8

এছাড়াও সংগ্রহ করতে পারবেন আমাদের পূর্বের বই।
সেপিয়েন্স গ্রাফিকস নভেল প্রথম খন্ড

    পারফিউমঃউপন্যাসের প্রধান চরিত্র জিন-ব্যাপিস্ট গ্রেনোইল।গ্রেনোইলের নিজস্ব কোনো ঘ্রাণ ছিল না। না একেবারেই কোনো গন্ধ ছি...
03/08/2022




পারফিউমঃ

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জিন-ব্যাপিস্ট গ্রেনোইল।গ্রেনোইলের নিজস্ব কোনো ঘ্রাণ ছিল না। না একেবারেই কোনো গন্ধ ছিল না। এটি একটি ভয়ানক প্রতিবন্ধকতা ছিল যার কারণে সবাই তাকে শৈশব থেকে এড়িয়ে চলেছিল। কেন তারা তাকে এড়িয়ে চলেছিল তা বুঝতে পারে না সে। যাইহোক, এই বিকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার একটি উদ্ভট প্রয়াসে, প্রকৃতি জিন-ব্যাপটিস্টকে এতদিন বেঁচে থাকা যেকোনো মানুষের গন্ধের সবচেয়ে তীব্র অনুভূতি দিয়েছিল। অল্প বয়সে, তিনি চোখ বন্ধ করে লোকেদের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি জানতেন কাঠের বিভিন্ন ঘ্রাণ, যা তাকে প্রতিদিন কাটতে হয়, এমনকি কোন জাতের গরুর দুধ তিনি প্রতিদিন সকালে পান করেন। তিনি তার প্রতিটি জাগ্রত সময় কাটিয়েছেন ঘ্রাণ সনাক্তকরণ, অর্ডার এবং শ্রেণিবদ্ধকরণে। এই অসাধারণ ঘ্রাণময় উপহার, এবং সমস্ত ঘ্রাণকে অনুসরণ করার, ক্যাপচার করার এবং পাতন করার তার আবেগ, সমাজে তার অপ্রত্যাশিত উচ্চতার কারণ ছিল, যা খুব কমই তার নিম্ন শ্রেণীর একজনকে স্বীকৃতি দেয় এবং তার চূড়ান্ত পতনও ছিল। মিস্টার সুসকিন্ড এখানে গ্রেনোইলের জীবন বর্ণনা করেছেন - ম্যাডাম গেইলার্ডের বাড়িতে তাঁর কর্মকাল থেকে শুরু করে, যিনি জিন-ব্যাপটিস্টের মতো অনাথদের নিয়েছিলেন, ট্যানার গ্রিমালের সাথে তাঁর কঠিন শিক্ষানবিশ পর্যন্ত, বিখ্যাত সুগন্ধি নির্মাতা বাল্ডিনির সাথে তাঁর কাজ, যেখানে তিনি একজন ট্রাভেলম্যান পারফিউমার হয়েছিলেন। , এবং শহরের প্রতিটি গন্ধ শেখার জন্য পুরো প্যারিস জুড়ে তার বিচরণ। তিনি ঘ্রাণের সর্বশক্তিমান দেবতা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। তিনি জানতেন যে "যে ব্যক্তি সুগন্ধি শাসন করে সে মানুষের হৃদয়েও রাজত্ব করে," কারণ "গন্ধ ছিল নিঃশ্বাসের ভাই।" তারপরে সেই দিনটি এসে গেল যেদিন তিনি আবিষ্কার করলেন একক সবচেয়ে সূক্ষ্ম ঘ্রাণ, যা তিনি নিজের জন্য ধারণ করার জন্য আবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন।
গ্রেনোইল কখনও প্রেম বা সামান্যতম স্নেহ জানত না, এমনকি একটি কোমল স্পর্শও নয়। কেউ তাকে সঠিক এবং অন্যায় সম্পর্কে শিক্ষিত করেনি এবং তার ভাল এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার কোন সহজাত ক্ষমতা ছিল না। ছোটবেলা থেকেই বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন ছিল তাই করেছেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই বিবেকহীন একজন মানুষ ছিলেন - সম্পূর্ণ নার্সিসিস্টিক। নৈতিকতা তার জীবনে কোন ভূমিকা পালন করেনি - গন্ধের সাধনাই তাকে আনন্দ দিয়েছে। এটা প্যাট্রিক সুসকিন্ডের কৃতিত্ব যে আমি এই প্রাণীটির জন্য এমন সহানুভূতি অনুভব করেছি। আমি তার আচরণকে অজুহাত দিচ্ছি না, তবে তার পটভূমি এবং জীবন বিবেচনা করে, তার থেকে কীভাবে পরিণত হওয়ার আশা করা যেতে পারে?

"পারফিউমের" বিভিন্ন সেটিংস চিত্রিত করা হয়েছে, এবং চরিত্রগুলিকে চিত্রিত করা হয়েছে, যেমন জিন-ব্যাপটিস্ট গন্ধের মাধ্যমে তাদের উপলব্ধি করবেন। বর্ণনাগুলি এতই প্রাণবন্ত, এবং ভাষার ব্যবহার এতটাই প্রশংসনীয় যে আমি নিজেকে শব্দগুলি উপভোগ করার জন্য মাঝে মাঝে উচ্চস্বরে পড়তে দেখেছি। ঐতিহাসিক বিশদটি সূক্ষ্ম এবং আকর্ষণীয়, যেমন সুগন্ধি তৈরির প্রক্রিয়া, যার বেশিরভাগই এখানে বর্ণিত হয়েছে। এটি একটি আকর্ষক গল্প, এটি পরাবাস্তব, প্রায় অন্য জগতের। এটি একটি মিশনের সাথে একটি সাইকোপ্যাথের একটি শীতল প্রতিকৃতিও। উপসংহার উজ্জ্বল, অপ্রত্যাশিত একটি বিস্ময়কর উপন্যাস।

আউট অফ দ্যা ডার্কঃ

আমি আজ যেন অসম্ভব সুন্দর একটা বই পড়লাম। আমি বুঝতে পারছি না যে কেন এই বইটি আমাকে এত অনুপ্রাণিত করেছে। হৃদয়বিদারক এই বইটি যেন আমার অনুপ্রেরণা। আসলে উদ্বিগ্ন, বিষণ্ন এবং গভীর প্রেম এবং আকাঙ্ক্ষায় আঁটকে রাখার মতো একটা বই ছিলো।

আমি প্যারিস যেতে পারিনি কিন্তু যখন আমি বইটি পড়ি তখন যেন আমি প্যারিসে শীতকাল উদযাপন করছিলাম যেখানে পড়াশোনা ছেড়ে এবং তার শিল্প বই বিক্রি করে এবং জ্যাকুলিন নামে এক মহিলার প্রেমে পড়ে। জ্যাকুলিন যিনি ওষুধ ব্যবহার করেন,অসম্ভব সুন্দরী রমনী। খুব কম খান এবং আত্মার মতো শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়ান, তার যে রুপ আছে যা পুরুষদেরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে। প্রতিটি পুরুষ তাকে ভালোবেসতে যেন বাধ্য। বইটি একজন পাঠকের প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা,স্মৃতির শহরকে সামনে আনতে বাধ্য।

বইটাতে লেখক তার সকল অনুভূতিকে যেন পাঠকের সামনে উৎসর্গ করেছে।বইটা পড়তে পড়তে কয়েকবার কেঁদেছি।মনে হয়েছে নিজের জীবনকে যেন আবার নতুন করে দেখছি।

বইটি পড়ার পরে মনে হয়েছে কেন বইটির লেখক নোবেলজয়ী লেখক হয়েছেন।হৃদয়বিদারক এইসব বই প্রতিটি পাঠকের অন্তরকে নাড়া দিবে অনয়াসে।

©Md Mahfuz

382 পৃষ্ঠার এই বইটির সংগ্রহ দায় মাত্র 220 টাকা যোগ কুরিয়ার খরচ।

বইটি পেতে আপনারা যোগাযোগ করুন মেসেজে এবং পেমেন্ট করে নিচের গুগল ফর্ম পুরন করে রাখুন বই পৌঁছে যাবে আপনার হাতে।

এছাড়াও আমাদের পূর্বের প্রকাশিত বইয়ে পেপারব্যাকও সংগ্রহ করতে যোগাযোগ করতে পারেন।

https://forms.gle/d8gQZ8HT3K1FQwMV8

Address

Mirpur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when NFSC - Mirpur 1 BookZone posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share