15/12/2024
প্রেমরোগ সিরিজ ( পর্ব ১০ )
প্রেম-ভালোবাসার স্মৃতিকে পুরোপুরি নষ্ট করা যায় না, দমিয়ে রাখতে হয়। দমিয়ে রাখতে হয় অতীতের টুকরো টুকরো গল্পগুলো। যে গল্পগুলো এখন মনে পড়লে আতংক আর প্রশান্তির এক অদ্ভুত অনুভুতি যোগায়। আতংক এই অর্থে যে, তার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো, শিহরণ জাগানো স্পর্শ, আহ্লাদভরা কণ্ঠ, চোখের ভাষায় পড়ে ফেলা অভিমান–সবকিছুই স্রেফ রবের আক্রোশ আর অসন্তুষ্টিই এনেছে। কী করেছি আমি? ছিঃ! ভয় ঘিরে ধরে যখন মনে পড়ে, আমিও তো ওই যিনাকারীদের একজন হতে পারতাম যাদেরকে কবরে আগুনের খনিতে পুড়ানো হচ্ছে শাস্তিস্বরূপ। ঠিক এরপরই আসে প্রশান্তি। আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা করেছেন! আমি তাওবা করে ফিরে এসেছি, ফিরে এসেছি এমন এক বাহুডোর থেকে যেখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব মনে হচ্ছিল। এই অনুভূতির পর আসে শুকরিয়া। আসতাগফিরুল্লাহ…আলহামদুলিল্লাহ…
তো যা বলছিলাম, ফেলে আসা প্রেমের মুহূর্তগুলোকে এত সহজে ভুলা যায় না, কিন্তু দমিয়ে রাখা যায়। রাখা যায় বললে হবে না, আসলে দমিয়ে রাখতেই হবে, কবরচাপা দিতে হবে। শয়তান যেন সে কবর খুড়তে না পারে। সে যদি এক মুঠ মাটি সরায়, তোমাকে আরও দশ মুঠ ঠেসে দিতে হবে। আমি এখানে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরার চেষ্টা করব, কিছু সিনারিও বা শয়তানের ফাঁদ এবং নিজেকে সে ফাঁদ থেকে ডিফেন্ড করার কিছু কৌশল। হয়তো কিছু ফাঁদ বাদ পড়ে যেতে পারে, তুমি ফিরতি চিঠিতে আমাকে জানিয়ো ইনশাআল্লাহ।
ভাই, আমি শুরুতে ধরে নিচ্ছি তুমি সবরকম গুনাহ থেকে আল্লাহ্র কাছে তাওবা করে নিয়েছ। তার মানে প্রেমকে বিদায় বলেছ ঠিকই, পাশাপাশি তুমি আর গান শুনো না, দিনকে রাত বানিয়ে আর মুভি-সিরিজ দেখো না, ফ্রি-মিক্সিং থেকে দূরে থাকো, চোখের পর্দা করে চলো। যদি এগুলো না করে থাকো, তাহলে তুমি অনেক বড় বিপদে আছ। তোমাকে সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
ভোগবাদীদের ব্যবসার মূল কেন্দ্রই হচ্ছে ফাহেশাত, অশ্লীলতা, হারাম প্রেম। তুমি কখনোই ভেবো না শুধু ভালোবাসার মায়া ত্যাগ করা মানেই ফিরে আসা। তোমাকে সবরকম মেয়েঘটিত মায়া (যা হারাম) ত্যাগ করতে হবে। তা না হলে হলিউড-বলিউড-ঢালিউড, আইটেম সং, সিরিজ হাতছানি তোমাকে পাগল করে দিবে। বন্ধু বেশে সান্ত্বনা দিতে আসা জাস্ট ফ্রেন্ডদের সাথে মেলামেশায় তুমি হয়ে পড়বে স্মৃতিকাতর, তোমার প্রেমিকার কথা মনে করিয়ে দিবে। নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে হিজাবি-নিকাবিদের সাথে কমিউনিকেট করাকে ‘তেমন কিছু না’ মনে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে তুমি আবার শয়তানের আঙ্গুল নাচানো পুতুলে পরিণত হবে। তুমি হয়ে পড়বে দুর্বল। অপরাধকে জাস্টিফাই করে বসবে। এভাবে আবার হারিয়ে যাবে! হারিয়ে যাবে সেই অন্ধকার গলিতে যা থেকে তোমায় বের করে এনেছিলেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।
এখন মুল আলোচনা শুরু করা যাক। প্রেমিকার স্মৃতিগুলো ভুলে থাকার জন্য তোমাকে আগে চৌকশ গোয়েন্দার মতো আইডেন্টিফাই করতে হবে, কেন স্মৃতিগুলো বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো কী কী তোমাকে ট্রিগার করছে, হারাম মুহূর্তগুলোকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিবে। আমি তেমনই শয়তানের কিছু কৌশলের কথা উল্লেখ করছি যা কম-বেশি সবাইকেই পীড়া দেয়।
তাহারেই পড়ে মনে…
প্রেমিকার দেওয়া গিফট, চিঠি, খুদে বার্তা–আল্লাহ্র নামে চিঠিগুলা পুড়িয়ে বা বাথরুমে নিয়ে ফ্লাশ করে দাও। প্রেমিকার নাম্বার, তার বাপ-মা-ভাই-বোনের নাম্বার সব ব্লক করে দিতে হবে, দরকার হলে সিম বদলে ফেলো। গিফটগুলা নষ্ট করে ফেলো বা কাউকে দান করে দাও। যত দামিই হোক না কেন। টি-শার্ট/ঘড়ি/মানিব্যাগ/নোটবুক যাই হোক না কেন, কোনোটাই আর নিজের কাছে রাখবে না, ব্যবহার করবে না। আইডিয়া বুঝলে তো? তাতেই হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায়- তাকে ব্লক করে দিতে হবে, ম্যাসেজগুলা ডিলিট করে দিতে হবে। নিজের পুরোনো পোস্টগুলা ডিলিট দিয়ে দিয়ো। দরকার হলে আইডিই ডিলিট দিয়ে নতুন করে খুলো। পুরোনো আইডিতে প্রেমিকার সাথে কত কথা, কত ছবি, কত স্মৃতি! এখন তো তাওবা করেছ, কী দরকার পুরোনো পাপগুলাকে ওপেন প্লেসে ছড়িয়ে রাখার?
স্মৃতিময় জায়গাগুলো- যতটুকু সম্ভব ওই গলি, রাস্তা, ফাস্ট ফুড বা কফিশপের দোকানগুলা এভয়েড করতে হবে যা তোমাকে পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিবে। একান্তই এভয়েড করতে না পারলে তাওবা করো, আল্লাহ্র নিয়ামাতের কথা স্মরণ করে শুকরিয়া আদায় করো। আর ভুলেও ভালেন্টাইন্স ডে, নববর্ষ, নিউ ইয়ার বা হাবিজাবি যত দিন আছে এসব দিনে কাজ না থাকলে বাহিরে বের হবে না, কাপলদের আড্ডাখানায় যাবে না, স্কুল বা কলেজের ক্লাস শেষেই চলে আসবে। হারামকে ঘৃণা করতে শেখো। আফসোস নিজের জন্য না, তাদের জন্য করো যারা এখনো আল্লাহ্কে চিনতে পারল না, উনাকে ভালোবেসে ফিরে আসতে পারল না।
চলবে ইনশাআল্লাহ...
Credit: Tasawuf ✅️
Join Ya Ummati