25/02/2024
বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্যে কারা?
সেনা অফিসার #হত্যার মিশনে কার লাভ কার ক্ষতি?
তথ্য, সূত্র সহ প্রমাণ দেখুন..
-----------
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে যে নির্ভরযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রমাণ রয়েছে তার সন্তোষজনক জবাব কখনোই তারা দিতে পারবে না।
রহস্যাবৃত কিছু প্রশ্ন:
১. বিডিআর বিদ্রোহের দিন থেকে পরবর্তী দু’দিন খালেদা জিয়া কোথায় ছিলেন? ঘটনার আগের দিন তারেক রহমান লন্ডন থেকে রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ বার খালেদা জিয়াকে কল করেন এবং সকাল ৬টার মধ্যে বাসভবন ত্যাগ করতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এ তথ্যগুলো তুলে ধরেছিলেন। শেখ হাসিনা নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া এ জাতীয় ইস্যুতে কখনোই বায়বীয় তথ্য প্রদান করেন না।
বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ তুলেছিলেন সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ও কল-রেকর্ডের সূত্র ধরে। এছাড়া সংসদে মিথ্যা বা অযাচিত তথ্য দেয়া হলে তার বিপরীতে প্রতিবাদের ভিত্তিতে বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হয়। তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএনপি উকিল নোটিশ প্রেরণ করেছিল। তাদের উকিল নোটিশ পাঠানোর আরও নজির আছে। কিন্তু সংসদে উপস্থিত থেকেও বিএনপি প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত অভিযোগের কোনো জবাব দেয় নি। কেন?
২. বিডিআর হত্যাকাণ্ডের আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দূত হিসেবে জিয়া ইস্পাহানী বাংলাদেশে আসেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার না করার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল। ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের প্রস্তাব দিলে জিয়া ইস্পাহানীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন শেখ হাসিনা।
যে ব্যক্তি ৩০ লাখ শহীদের রক্তের প্রতি উপহাস করার লক্ষ্য নিয়ে পাকিস্তান থেকে এসেছিল এবং প্রধানমন্ত্রী যার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বৈঠক করার উদ্দেশ্য কি ছিল? জিয়া ইস্পাহানীর কার বা কাদের আহবানে বাংলাদেশে এসেছিল? আইএসআই ও বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য ও স্বার্থ যে অভিন্ন এমন মনে না করার কোনো কারণ কি আছে?
৩. নির্বাচনে পরাজিত দলের সাধারণত প্রথমদিকে তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থাকে না। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারি অতীতের সকল ধারা ভঙ্গ করে বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সারাদেশ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার নির্দেশ দেয় বিএনপি। পরাজয়ের গ্লানি ও হতাশা দূর করে মনোবল ফিরিয়ে আনা যদি উদ্দেশ্য হয়, সেক্ষেত্রে একমাত্র প্রভাবিত করতে পারেন দলের প্রধান তথা খালেদা জিয়া। অথচ ২৪ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত সভায় খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন না। বিকেলে বিএনপির সভা শেষ হয়, রাত থেকে শুরু হয় বিডিআর সদস্যদের ক্ষুব্ধ করার অপতৎপরতা। এ ঘটনাকে কাকতালীয় বলার কোনো সুযোগ কি আছে?
৪. পাকিস্তানের আবেদন প্রত্যাখ্যানের পর ও বিডিআর বিদ্রোহের চারদিন আগে জামায়াত নেতা মুজাহিদ দেশত্যাগ করতে চেয়েছিল। তাকে এয়ারপোর্ট থেকে ফিরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি কেন দেশের বাইরে যেতে চেয়েছিলেন?
৫. হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এমন সদস্যদের মধ্যে সিপাহী মাঈন, সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিক সহ অভিযুক্তদের বেশিরভাগ বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়া ২২ জনকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এদের মধ্যে ১৪ জনের চাকুরীর সুপারিশ করে ডিও লেটার ইস্যু করেছিলেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলার আসামী ও বিএনপির উপমন্ত্রী সালাম পিন্টু। পিন্টুর সঙ্গেপাকিস্তানী জঙ্গি বাহিনীর সম্পর্ক, আইএসআই এর ঘনিষ্ঠতা ও অস্ত্র পাচারে সংশ্লিষ্টতা ভারত ও বাংলাদেশ, উভয় দেশের তদন্তে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনাগুলোও কি কাকতালীয়?
৬. বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পাঁচ বছর নৈরাজ্য, অরাজকতা, স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকে ২০০৬ সালে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর কারণে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। মইন ইউ আহমেদ, মে. জে. সাদিক হাসান রুমী সহ অনেক সেনা কর্মকর্তা জোট সরকারের অপকর্ম তুলে ধরেছিলেন। একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে ও দেশকে নেতৃত্বশূন্য করতে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। আর এ ঘটনায় ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করতে সাজানো হয়েছিল জজ মিয়া নাটক।
খালেদা জিয়া ও যুদ্ধাপরাধী নিজামী ক্ষমতায় থাকাকালে জেএমবি ও জঙ্গিদের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করে জঙ্গিবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেশে জঙ্গি না থাকার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে যারা মুফতি হান্নান, বাংলা ভাই, শায়খ রহমান, আতাউর রহমান সানিসহ শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেফতার করেছিলেন, যারা জাতির সামনে জজ মিয়া নাটকের পর্দা উন্মোচন করেছিলেন, তাদের অন্যতম হলেন তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কর্নেল গুলজার। এ ঘটনাগুলো বিএনপির জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর ছিল।
এছাড়া নিহতদের বেশিরভাগ ২০০৮ এর নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বিডিআর প্রধানসহ নিহতদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে অত্যন্ত নৃশংসভাবে। বিশেষ নির্দেশ ছাড়া এভাবে হত্যা মোটেই স্বাভাবিক নয়। তাই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সমীকরণে বিএনপি-জামায়াতের ক্ষোভ, প্রতিহিংসা ও স্বার্থ কি উপেক্ষা করার মতো?
৭. আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের অল্প দিনের মাথায় সংগঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার পরিজনসহ ৭৮ জন নিহত হন। মেজর জেনারেল শাকিল, কর্নেল গুলজারসহ নিহতদের প্রায় সকলেই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সমর্থক। এইচ এম এরশাদের ভাগ্নে ছাড়াও এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদের জামাতা ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার। এই সূর্যসন্তানদের হত্যার ফলে শুধু সেনাবাহিনী নয়, অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে সমগ্র জাতির। কিন্তু রাজনীতির পাল্লায় এ ক্ষতি কি আওয়ামী লীগের হয়নি?
৮. বিডিআর হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামীদের পক্ষে যারা আইনি লড়াই করেছেন তাদের প্রায় সকলেই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামীদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী আইনজীবীগণের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও মোঃ জয়নুল আবেদীন প্রমুখ বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা।
যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর অন্যতম কৌঁসুলি এস এম শাহজাহান ও ফারুক আহমেদ সাবেক শিবির ও জামায়াত শিবিরের গ্রেফতারকৃতদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী আইনজীবী। অন্যান্যদের মধ্যে টি এম আকবর, জামাল, জহিরুল আমিন, শফিকুল ইসলাম, সুলতানা আক্তার রুবি, শেখ রাশেদুল হক, মাজেদুর রহমান মামুন, এস এম রেফাজ উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, খন্দকার জামাল, রমজান খান, আব্দুল মান্নান, হুমায়ুন কবির, এমদাদুল হক লাল, সুফিয়া আক্তার হেলেন, আমিনুর রহমান – এরা সকলেই বিএনপিপন্থী বার এসোসিয়েশনের নেতা বা জোট সরকার আমলের পিপি বা বিএনপির আইনজীবী প্যানেলের সক্রিয় নেতা। দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মত স্পর্শকাতর ইস্যুতে অভিযুক্ত খুনিদের পক্ষাবলম্বন করা কি স্বাভাবিক কোনো বিষয়? রাজনৈতিক স্বার্থ না থাকলে কি কেউ এমন হঠকারী পদক্ষেপ নিতে পারে?
#পিলখানা #বিডিআর #বিদ্রোহ #ষড়যন্ত্র #তারেক #খালেদা