28/11/2023
💖💝পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো💖💝
সাইমা জামান। শিবচরের পদ্মা নদীর ভাঙ্গন আক্রান্ত এক পরিবারের সন্তান। তবে অন্যদের মতো নদী ভাঙ্গনকেই মোকাবেলা করেনি ও বা ওর পরিবার। জীবনের নিষ্ঠুরতম সব বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সাইমা ৩ বছর বয়স থেকেই। ৩ বছর বয়সে প্রবাসী বাবার মৃত্যুর পর একমাত্র চাচাও মারা যায় তার দুই মাস পরই। এর ২ বছর পর মাও চয়ে যায় অন্যের ঘরে। ভাগ্য যার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সেই ছোট্ট সাইমা ও তার ভাইকে নিজের ২ সন্তানের সাথে দারিদ্রতা সাথী করেই বড় করেন বিধবা চাচী মিরজান বেগম। তার অনুপ্রেরনাতেই চলতি বছর শিবচর ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ থেকে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে অর্জন করে জিপিএ -৫। এমন অর্জনেও অর্থ সংকটের কারনে সাইমাসহ তার পরিবারের কপালে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া চিন্তার ভাজ।
সরেজমিনে জানা যায়, শিবচর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্ত্তী বন্দরখোলার ইউনিয়নের মল্লিক কান্দি গ্রামের মরহুম পান্নু মল্লিকের জমজ সন্তানের সাইমা জামান চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ অর্জন করে। সৌদি প্রবাসী বাবা পান্নু মল্লিক প্রবাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২০০৯ সালে তখন সাইমা ও তার ভাই জাবেদের বয়স ৩ বছর। মধ্যবিত্ত পরিবারটি হঠাৎ ভাগ্যের চাকা উল্টো ঘুরতে শুরু করে। বাবার মৃত্যুর ২ মাস পরই একমাত্র চাচা মিনু মল্লিকও মারা যায়। সাইমার বয়স যখন ৫ বছর তখন মা চলে যায় অন্যের ঘরে। দাদা জহের মল্লিক ও বিধবা চাচী মিরজান বেগম তার ছোট্ট দুই সন্তান ও সাইমাদের ২ ভাই বোনকে নিয়ে শুরু করে নতুন জীবন সংগ্রাম। ৪ বছর আগে মারা যায় বৃদ্ধ দাদাও। তবু থেমে থাকে নি মিরজান বেগম। নিজের সন্তানের মতোই বড় করতে থাকেন সাইমাদেরও। সাইমা রাজারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে পায় জিপিএ ৪.৮৯। এরপর ভর্তি হন উপজেলার দত্তপাড়ার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজে। চাচাতো ভাই মনজু মল্লিক ও চাচীর সহায়তা ছাড়া কলেজে ভর্তি ছিল কল্পনা মেয়েটির জন্য। সাইমা গ্রামের ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মাসিক ৩ শ টাকা করে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ ও কলেজে যাতায়াত ব্যবস্থা করতো। অর্থের অভাবে নিয়মিত কলেজেও যাওয়া হতো না এই অদম্যর।১০ বছর আগে দাদার রেখে যাওয়া ইটের গাথুনির বাড়ির দেয়ালে এখনো দিতে পারেনি পলেস্তারাও। কলেজ কত্তৃপক্ষ বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত। তবে জিপিএ ৫ পেয়েও দুশ্চিন্তার ভাজ এখন সাইমা ও পরিবারের কপালে। কোচিং করবে কিভাবে ভাল বিশ^বিদ্যালয়ে কিভাবে ভর্তি হবে। টাকার জোগান আসবে কোথা থেকে। এমন নানান প্রশ্ন ও শংকা সাইমার পরিবারে।
অদম্য সাইমা কথার এক পর্যায়ে বাস্পরুদ্ধ কন্ঠে বলেন, আমার চাচীই আমার মা বাবা। তিনি ও বড় ভাইয়ার জন্যই এ পর্যন্ত পড়তে পেড়েছি। ভাল জায়গা পড়তে ইচ্ছা থাকলেও তাদের ওতো সামর্থ্য নেই।
চাচী মিরজান বেগম বলেন, ও ভাল কোথাও পড়তে চায়। সরকার সহযোগিতা করলে ওর পড়ালেখা করা সম্ভব।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুল্লাহ বলেন, সাইমা একজন অদম্য মেধাবী। আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর পরিবার বৃত্তির মাধ্যমে এরকম অনেক দরদ্রি মেধাবীদের সহায়তা করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছেন। আশাকরি সাইমার জন্য তারা ব্যবস্থা নেবেন।