28/11/2023
🔴যারা সম্পূর্ণ সরকারিভাবে ইপিএস এর আওতায় বোয়েসেল এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে, উচ্চ বেতনের দেশ কোরিয়ায় যেতে চান পোস্টটি শুধুমাত্র তাদের জন্য।
EPS(Employment Permit System) যা একটি সম্পূর্ণ সরকারি প্রসেস, এবং লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া। এর অনেকগুলো ধাপ রয়েছে;প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। যারা ধৈর্য ধরে লেগে থাকবে তারাই সফল হবে এই প্রক্রিয়ায় ইনশাআল্লাহ । সকল ধাপগুলো আমি আমার জানার মধ্য থেকে যথাসম্ভব বর্ণনা করার চেষ্টা করছি।⏬
✅১ম ধাপঃ
EPS(Employment Permit system)মাধ্যমে কোরিয়া যাওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল; কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন করা। এই ভাষা যে কোন ভাবেই শিখতে পারেন। সরকারি স্বীকৃত TTC প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি বিভিন্ন কোচিং সেন্টার কিংবা নিজে নিজে, মোট কথা ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
✅২য় ধাপঃ
ভাষা শিক্ষার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সার্কুলারের জন্য। সার্কুলার কখন! কিভাবে হবে? তা BOESL তাদের ওয়েবসাইট ও পেইজে প্রচার করবে।
☑️বর্তমানে দুইভাবে সার্কুলার হয়ে থাকে।
১.লটারি সার্কুলার, লটারি সার্কুলার নিধারিত সময়ের মধ্যে, যে কেউই আবেদন পারবে যত ইচ্ছা তত;কোন লিমিট নেই।
২.ভাষা পারদর্শী সার্কুলার। এটি ২০২২ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে ভাষা পারদর্শী সার্কুলার দিয়ে থাকে। এটি শুধু যারা আগে থেকে ভাষার জানে তাদের জন্য লটারি ছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে সরাসরি রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে; যা ২০২২ ও ২০২৩ সালে দিয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে(২০,০০০ মানুষকে চুড়ান্তভাবে সুযোগ দিয়েছিলো,যারা আগে আবেদন করতে পারবেন তারাই পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ পাবে এই পদ্ধতিতে। সামনে থেকে হয়তো এর নিধারিত লিমিট সংখ্যা আরো বাড়তে পারে তা নির্ভর করবে এইচ আরডি কোরিয়া ও বোয়েসেলের উপর। সার্কুলার BOESL (Bangladesh Overseas Employment & Services Ltd) এর মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকা ও বোয়েসেলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজে পাবলিশ হয়ে থাকে।
📌লটারি সার্কুলার এর ক্ষেত্রে আপনাকে প্রাইমারী ভাবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইনে রেজিস্ট্রাশন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে তা স্পষ্ট করে সার্কুলারে লিখা থাকবে। তবে আপাতত জানার জন্যে সেটা হলো ⬇
🔴১.বয়সসীমা ১৮-৩৯ বছরের মধ্যে হতে হবে।
🔴২.এস.এস.সি /সমমান সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
🔴৩. মেয়াদযুক্ত পাসপোর্ট থাকতে হবে।
প্রশ্ন? লটারি রেজিস্ট্রেশন কোথায় করবো:- কম্পিউটার হলে নিজেই করা যায় অথবা অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়েও করা যায়। না পারলে যেকোনো কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ন করতে হবে।রেজিস্ট্রেশন এর জন্যে বোয়েসেল নির্ধারিত ফি..বিকাশের মাধ্যমে জমা করে ট্রানজেকশন আইডি সংরক্ষন করতে হবে,এরপর নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ডুকে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করতে হবে, এবং আবেদন করা হলে আপনাকে কনফার্মেশন একটা প্রিন্ট কপি দেওয়া হবে,যা আপনি ডাউনলোড করে নিজের কাছেই সংরক্ষণ করে রাখবেন।(এটা লটারি সার্কুলারে)আবেদন করার পদ্ধতি.
📌বি:দ্র: ভাষা পারদর্শী সার্কুলার আবেদনে একটু ভিন্নতা রয়েছে,ভাষা পারদর্শী সার্কুলার আগে নির্ধারিত ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হয় এবং একটি সাবমিশন আইডি দেওয়া হয়,সেটা দিয়ে তারপর বিকাশ এর মাধ্যমে নির্ধারিত ফি জমা করতে হয়। তারপর কিছু সময় পর সরাসরি নিজেই নিজের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে নিতে হয়।
✅৩য় ধাপঃ
লটারিতে যদি চাহিদার চেয়ে অনেক বেশী রেজিস্ট্রেশন হয়। তখন ড্র এর মাধ্যমে কোটা সমপরিমান লোক লটারিতে টিকানো হয়ে থাকে। এই লটারিতে অনেকে ভাষা না জানা ব্যাক্তিরা চান্স পেয়ে যায়, আবার ঠিক তেমনি ভাষার উপর ভালোভাবে পড়াশুনা করা দক্ষ ব্যাক্তিরাও বাদ পড়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড সিলেকশন,যা HRD Korea=(Human Resources Development Service of Korea) করে থাকে সুতরাং আপনার বা অন্য কারো ক্ষমতা থাকে না, এক কথায় ভাগ্য।
✅৪র্থ ধাপঃ
আপনি লটারির মাধ্যমে সিলেকশনের পর নোটিশে উল্লেখিত তারিখে তাদের চাহিত সকল ধরণের কাগজপত্র একত্রিত করে আপনাকে স্বশরীরে বোয়েসেল গিয়ে মূল রেজিস্ট্রেশন করে আপনাকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর যে যার মত করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবে।নোটিশে উল্লেখিত নির্ধারিত তারিখে,নির্ধারিত ওয়েবসাইটে ব্যক্তিভিত্তিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে,সেটা দেখে তারিখ ও সময় অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে পরীক্ষা দিতে যেতে হবে।
✅৫ম ধাপঃ
UBT (Ubiquitous Based Test) ১০০ পয়েন্ট এর পরীক্ষা হবে। অত্যাধুনিক ট্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা দুই ভাবে বিভক্ত হয়ে থাকে,রিডিং(২০টি প্রশ্ন) ও লিসেনিং(২০টি প্রশ্ন)দুইটা একসাথে পরীক্ষা দিতে হবে; সময়=৫০ মিনিট দুই পরীক্ষার মাঝে কোন বিরতি নেই।পরিক্ষার শেষে যেই ট্যাবের মাধ্যমে পরিক্ষা দিবেন সেই ট্যাবের স্কিনে নিজের প্রাপ্ত স্কোর দেখা যাবে(একদম পরিক্ষা শেষে)তাই একটু বসে থাকতে হবে। সকলের পরীক্ষা শেষে নির্ধারিত তারিখে প্রাথমিক রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে, যাদের নাম আসবে তারা স্কিল টেস্ট দেওয়ার সুযোগ পাবে।
✅৬ষ্ঠ ধাপঃ
ভাষা পরীক্ষার পর স্কীল টেস্ট নামে আরও একটি পরীক্ষা হবে। স্কিল টেস্ট কেমন ও কিভাবে হবে তা নিজ কোচিং সেন্টার থেকে প্রস্তুতি নিয়ে নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা দিতে হবে।
★★স্কিল টেস্ট ১০০ পয়েন্ট এর হয়ে থাকে।
✅৭ম ধাপঃ
ভাষা পরিক্ষার রেজাল্ট ও স্কিল টেস্ট এর রেজাল্ট মিলিয়ে, PRS=(Point Recruiting System) তাদের কোটা সমপরিমান লোক নিয়ে চূড়ান্ত রেজাল্ট ঘোষণা করা হবে। অর্থাৎ যারা পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে মানে যারা বেশি নাম্বার পাবে তারা কোটাতে চান্স পাবে এবং বাকিরা বাদ পড়ে যাবে। সুতরাং ২০০ তে ১২০/১৩০ পেয়েও বাদ পরার আশাংকা রয়েছে(2023 এ সর্বশেষ টিকানো হয়েছে 150 মার্কে](তাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে,এবং ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
✅৮ম ধাপঃ
চূড়ান্ত রেজাল্টে যাদের নাম আসবে তাদের লিস্ট নোটিশের মাধ্যমে প্রকাশ হবে। তারপর আপনাকে আপনার পাসপোর্টে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানায় সিভিল সার্জন কর্তৃক মেডিক্যাল চেকআপ করে মেডিক্যাল ফিট সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে এবং জব এপ্লিকেশন ফরম পূরন করে বোয়েসেল গিয়ে জমা দিতে হবে। সাথে কি! কি! নিয়ে যেতে হবে? কবে যেতে হবে তা বোয়েসেল সব নোটিশে বলে দিবে। [জব ফর্ম, মেডিক্যাল চেক-আপ লিষ্ট, মেডিক্যাল চেক আপ ফর্ম বোয়েসেল প্রদান করবে]
✅৯ম ধাপঃ
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে রোস্টারভুক্ত করা হবে। যার মেয়াদ থাকবে মোট ২ বছর। ১ম ধাপে ১ বছর;২য় ধাপে ১ বছর। এবং আপনি www.eps.go.kr এ ওয়েবসাইটে গিয়ে এখানে একটা আইডি খোলার পর আপনার সব ইনফরমেশন আপনার এই আইডিতে দেখা যাবে। আপনার কাজ হবে কিছুদিন পর পর HRD কোরিয়া কর্তৃক নির্ধারিত ভিসা ইস্যুর তারিখে আইডি তে ঢুকে খোজ খবর নেওয়া। এরপর কোরিয়ান কোম্পানির মালিকের উপর নির্ভর করবে আপনার ভিসা হবে,কি হবেনা। আপনার ছবি, বয়স, বায়োডাটা দেখে মালিক পছন্দ করার পর আপনার ভিসা ইস্যু হবে এবং HRD KOREA এর মাধ্যমে BOESL কে জানিয়ে দিবে। বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ মোবাইলে ম্যসেজ বা ই-মেইলের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দিবে এবং আপনিও আপনার আইডিতে সকল আপডেট পাবেন প্রতিনিয়ত। সব ঠিক-ঠাক থাকলেও যদি রিজিকে না থাকে এবং কোরিয়ান কোম্পানির কোন মালিক যদি আপনাকে সিলেক্টেড না করে তাহলে আপনার কোরিয়া যাওয়া হবেনা।(এজন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে,মুল কথা পাশ করে রোস্টার হওয়ার পর রিজিকে থাকলে আপনি কোরিয়া যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ)।
✅১০ম ধাপঃ
যদি নিধারিত পারমিট ডেটে আপনার পারমিট ইস্যু(ভিসা ইস্যু) হওয়ার পর কোরিয়ান কোম্পানি প্রদত্ত লেবার কন্ট্রাক্ট সম্পাদিত হবে(যা বোয়েসেল ও এইচ আরডি কোরিয়া আমাদের হয়ে করে থাকেন সাধারণত) এরপর লেবার কন্ট্রাক্ট প্রাপ্ত/সিসিভিআই প্রাপ্তদের বোয়েসেল নোটিশ দিয়ে এক বা দুই সপ্তাহব্যাপী একটা ট্রেনিং দেওয়া হবে। (কারো সিসিভিআই হওয়ার আগেও ট্রেনিং হবে কারো পরেও হতে পারে সেটা ডিপেন্ড করবে সেন্ডিং এজেন্সির উপর) এরপর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট করতে হবে;ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে,যক্ষা টেস্ট করতে হবে।
✅১১ তম ধাপঃ এরপর কোরিয়ান ইমিগ্রেশন কতৃক CCVI (Certificate of Confirmation of Visa Issuance) কনফার্ম হওয়ার পর আপনাকে বোয়েসেল মেইন পাসপোর্ট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বোয়েসেলের নিধারিত চার্জ জমা দেওয়া পে-অর্ডার
জমা নিবে পাসপোর্ট এ ভিসা লাগানোর জন্য।
✅১২ তম ধাপঃ
ভিসা হয়ে গেলে বোয়েসেল এইচ আরডি কোরিয়া কে জানাবে, এবং এইচ আরডি কোরিয়া মালিক'কে অবগত করবে যে, আপনার কর্মী'র ভিসা কম্পিলিট সে ফ্লাইট এর জন্য প্রস্তুত, তখন মালিক আপনার ফ্লাইট ডেট নিধারন করবে এবং আল্লাহ চাহেতো সেই ডেটে আপনি কোরিয়া ফ্লাই করবেন ইনশাআল্লাহ । কোরিয়া আসার পূর্বে বোয়েসেল অফিসে একটা ব্রিফিং দেওয়া হবে। ক্যাপ ও টুপি বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ আপনাকে প্রদান করবে এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সাক্ষর করতে হবে।(বর্তমানে কার্যক্রমটি করোনার পর থেকে হোটেলে কোয়ারেইন্টাইনে থাকা অবস্থায় জুম মিটিং এবং স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পন্ন করে থাকে)
✅১৩ তম ধাপঃ
কোরিয়ায় প্রবেশ করার পর কোরিয়ান একটি ট্রেনিং সেন্টারে ২/ ৩ দিন আরেক দফা ট্রেনিং করতে হবে। ট্রেনিং এর পৃর্বে আপনার মেডিকেল চেক-আপ হবে, এতে যদি আপনি আনফিট হন, তাহলে ভাগ্য খারাপ হলে দেশে ফিরে যেতে হবে, বিশেষ করে:- মাদকাসক্ত (যারা দেশে ইয়াবা, বিভিন্ন প্রকার নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করেন। যারা করেন না তাদের কোনো প্রব্লেম নেই।
এইচ আই বি ভাইরাস,হেপাটাইটিস প্রব্লেম, করোনা সহ বিভিন্ন প্রকার ফ্লু বা ভাইরাস। সব ঠিক থাকলে এরপর মালিক এসে আপনাকে নিয়ে যাবে। ব্যাস আপনি এখন EPS এর গর্বিত একজন সদস্য🥰।
🔴আমার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ
১.এই EPS এর প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে আপনার পড়াশুনা, ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী যাই করেন না কেন,তা নিয়মিত করতে থাকবেন। কারণ EPS এর প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। কেননা পাশ করার পর,সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর ও আপনার ভিসা নাও আসতে পারে।(কোরিয়ান মালিক সিলেক্টেড না করলে)এটি অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে;তাই পাশ করে কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর যেকোনো কাজের সাথে লেগে থাকা উত্তম এবং ভিসা আসলে ওই কাজ ছেড়ে দিয়ে কোরিয়া চলে যাবেন।
২.EPS এর প্রক্রিয়ার কোন ধাপেই নগদ অর্থের কোন প্রয়োজন হয়না। সিসিভিআই ইস্যূর পরে সমস্ত খরচ পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। তাই কারো সাথে নগদ টাকা লেনদেন থেকে বিরত থাকবেন।
৩. EPS এর সমস্ত প্রক্রিয়ার নিয়মাবলী পরিবর্তনযোগ্য। সুতরাং সময়ের সাথে সাথে সবসময় আপডেট বা পরিবর্তন হতে পারে।
🔔নোট: সম্পূর্ণ প্রসেসের বিস্তারিত বলার কারনে পোস্টটি অনেক বড় হয়েছে এবং আমি আমার জানার মধ্য থেকে সম্পুর্ণ প্রসেস টা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র ;তাই কোন ভুল-ত্রটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, ধন্যবাদ।
✍