FeeL OKay?

FeeL OKay? �পেজ টি ফলো দিন��

06/06/2024

জিবন থেজে নক্ষত্র হারিয়ে গেছে💔🥹

19/10/2022

আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আরিশার এমন অ"শ্লীল অবস্থা দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না। আমার অবেলায় পর পরুষকে ঘরে ঢুকিয়ে কি আ"জেবাজে কাহিনী করে বেড়াচ্ছে। সেটা আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি না আসলে বুঝতেই পারতাম।
আরিশা প্রায়ই কল দিয়ে জিজ্ঞাস করত কখন বাসায় ফিরবো। সত্যিটা বলতাম আর ঠিক ওই একই সময়ে বাসায় ফিরতাম। ফিরার পথে প্রতিদিন আরিশার জন্য একেকদিন একেক জিনিস নিয়ে বাসায় ফিরতাম কখনো চটপটি কখনো ফোসকা যেদিন যা পাই তা নিয়ে বাসায় ফিরি। অবশ্য ফোসকাটা ওর বেশি প্রিয়।
আজ দুপুরে আরিশা আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করল, কখন বাসায় ফিরব ??
বলেছিলাম প্রতিদিনের মতো আজকেও বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হবে । কিন্তু আচমকা দুপুরের পর অফিসের কাজে মন বসছে না শুধু বাসায় যেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো এজন্য বিকালে বাসার দিকে রওনা হলাম। যাওয়ার সময় আরিশা আর আমার জন্য দুই প্লেট ফোসকা নিলাম। ভেবেছি দুজনে আয়েশ করে এক সাথে বেলকানিতে বসে সন্ধ্যাটা পার করব এই মানসিকতা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
দরজার সামনে দাঁড়াতেই রুম থেকে আরিশা আর অন্য একটা মানুষের নোং"রা নোং"রা কথার শুনা যাচ্ছে।খুব স্পষ্ট ভাবে শুনা যাচ্ছে ওদের কথা।
ছিঃ আরিশা এতো নি"কৃষ্ট একটা মেয়ে কখনো টেরি পাইনি। চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা হয়েও এই মেয়ে এতো বড় জ"ঘন্য কাজ করছে। ভাবতেও ঘে"ন্না হয় আমার।
কি করব মাথায় কাজ করছে না ।কি হচ্ছে এসব ....!!!
এতো ভালবাসি মেয়েটাকে অথচ সে কিনা আমার সাথে এতো বড় বিশ্বাস ঘা/তকতা করছে।
শেষমেশ দরজা নক না করেই নিচে নেমে পড়লাম। বাসার সামনে রাস্তার ওপাশে টং দোকানে গিয়ে একটা সিগেরেট ধরালাম। এমন ঘটনা দেখে পুরো শরীর শিহরণ দিয়ে হাত পা কাঁপছে। সিগেরেটা একটু শেষ করেই পায়ের নিচে পেলে চাপা দিয়ে একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম।
আমার এমন হাল দেখে দোকান মামা বলল।
কিও মিয়া এতো হতাশা লাগছে কেনো ?? কিছু হল নাকি
আমি বললাম,না কিছু হয়নি ।
উনি আবার বললেন চা দিব ??
মন চাচ্ছে না। আরেকটা সিগেরেট দেন !!!!
এটাও পেলে দিলাম। শরীর ঘামাচ্ছে আর টিস্যু দিয়ে সেটা মুছছি।
ছয়তালা ভবনের মধ্য আমরা তৃতীয় তালায় থাকি। এই বাড়ি থেকে কেউ বাহির হলে আমার সামনে দিয়েই যেতে হবে। তাই ওখানে বসে অপেক্ষা করছি লোকটার জন্য কখন বাহির হবে।ভাবছি কে হতে পারে এই লোকটা।
বাবা মায়ের সম্মতিতে বছর দু'য়েক আগে আরিশাকে বিয়ে করেছি । তাহলে হয়তো ওর আগে কারো সাথে রিলেশন ছিল, তার সাথে এইসব অপকর্ম চালাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ হলো কাউকে নামতে দেখছি না। মাথা খাটিয়ে আরিশাকে একটা করলাম। দেখি কি করে। কিন্তু কল ধরছে না। কয়েকবার ট্রাই করার পর মোবাইল কানের ধারেই থাকতে, হঠাৎ বাড়ির দিক থেকে ডিসের টাকা কারসিট করার ছেলেটা নিচে নামল। তারমানে এই ছেলে। ওতো ভাল একটা ছেলে। ভাল হলেই ভিতরের কর্ম চিনা যায় না।
মনে করছে চেমরাটারে রাস্তার উপর রেখেই একটা দোলাই দিই। সম্মানের কথা চিন্তা করে রাগটা চেপে রাখি। লোকে জানাজানি হলে আমারই মান স"ম্মানে আঘাত হানবে। কা"পুরুষ বলে ডাকাডাকি করাও আজকালার স/মাজের একটা স্বভাব। তারপরেও আরো সিউর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম। নাহ...! আর কেউ বাহির হয়নি।
বাসায় ফিরে দরজা নক করলাম। আরিশা এসে দরজা খুলল। কপালে টিপ, রঙিন শাড়ি পরে একদম পরিপাটি। ওই ডিসওয়ালা ছেলেটার জন্য এতো সাজুগুজু করে এখন আমার মন বোলানোর চেষ্টা করছে। প্রচন্ড জেদে আমার শরীর গিল গিল করছে। কয়েকটা তানি দিয়ে এখনই ডিবর্স নামায় সই করে হাতে ধরিয়ে দিতে মন চাচ্ছে। এটা ভাবতে না ভাবতেই আরিশা আমার গলা জড়িত ধরে বলল।
আয়ন আমাকে কেমন লাগছে ? আজ কয় তারিখ, তোমার মনে আছে।
আমি জেদ ঠেকাতে না পেরে বলেই পেললাম,
লজ্জা করে না তোমার, এখন আমার মন বোলানোর চেষ্টা করো। ছিঃ আরিশা।
এই বলে জোরে একটা চ,ড় মারলাম।আরিশা টেবিলের উপর গিয়ে পড়া সাথে সাথে একটা চি"ৎকার করল। পিছনে না তাকিয়ে ফ্রেশ হতে চলে আসলাম। ফ্রেশ হওয়ার সময় একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম আজ আরিশা আমার জেদ ভাঙ্গার জন্য আসছে না । অন্যদিন কোন কারণে জেদ করলে আমার পিছনে এসে জড়িয়ে ধরে রাগ থামানো চেষ্ট করত। কিন্ত আজ আসছে না কেনো। ততক্ষনে মনে হলো আরিশা তো টেবিলের উপর পড়ে চি,ৎকার করল। তাহলে....
তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি আরিশা অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। র/ক্তে পুরো রুম ছোপ ছোপ করছে। টেবিলের উপর রাখা চুরি দিয়ে ডান হাতের শি/রাটা চরম ভাবে কে/টে যায়। এমন দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। এ আমি কি করলাম। নিঃশ্বাস নিচ্ছে.... পাশের বাসার চাচীকে ডাকলাম। চাচী এসে ওর মাত্রায় পানি দিচ্ছে । তবুও জ্ঞান না ফিরায় তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।
ডাক্তার এসে বলল,
রোগীর র,ক্তের প্রয়োজন অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে তাছাড়া রোগী পেটে অনেক ব্যাথা অনুভব করছে,আপনি তাড়াতাড়ি একটা চেক-আপ করান।
আমি বললা, যা যা প্রয়োজন আপনারা করান।আমি রক্তের ব্যবস্থা করছি।
বন্ধুদের কল করে রক্ত মেনেজ করলাম। রাত দশটার নাগাত আরিশার জ্ঞান ফিরল।
আমি ওর পাশেই বসেছিল। এখনো কপালের টিপটা জায়গা মতো আছে। আরিশা জ্ঞান ফেরা মাত্রই আমার হাত চেপে ধরে বলল,তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন ?
কিছুই বলিনি। চুপ করে বসে রইলাম।
এই মুহূর্তে এমন প্রশ্নের উওর আমি দিতে যাব না।
নিজের কানে যা শুনলাম তা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। এখন আমার সামনে ভাল হওয়ার চেষ্টা করে কোন লাভ নেই।
আরিশা আবার বলল, আয়ন...কি ভাবছো। তুমি বলবে না আমার সাথে এমন করলে কেনো ??
আমি বললাম,
আসলে ওই সময় একটু চিন্তিত ছিলাম তাই ভুল বসত করে ফেললাম।
মিথ্যা বলে আরিশার কাছে বিষয়টা চাপা দিয়ে রাখলাম । এখন থাক হাতে নাতে ধরে এর একটা বিহিত করব। এটা সেটা বলে কথাটা ঘুরিয়ে নিলাম।
-- আচ্ছা এখন ঘুমাও। তোমার অনেক র"ক্ত ক্ষরণ হয়েছে। একটু বিশ্রাম নাও।
আরিশা ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ওর পাশে চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আরিশাকে নাস্তা করিয়ে দেওয়ার পর। ডাক্তার আমাকে উনার চেম্বারে ডাকল। আমি গেলাম। ডাক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল। আরিশার এমন অবস্থা হলো কি করে ?
বললাম রান্নাঘরে পড়ে এমন হয়েছে। ডাক্তার আবার বললেন একটা সেড নিউজ আছে।আমতা আমতা করে বললাম,
-- স্যার বেশি কিছু।
ডাক্তার সাহেব বললেন ,তার আগে বলুন আরিশা কতদিনের অন্তঃসত্ত্বা।
-- স্যার চার মাস হবে।
-- দেখুন রোগীর পেটা প্রচন্ড আঘাতের ফলে বাচ্চাটা মা"রা যায়।
-- কি বলছেন, স্যার।
-- হুম বাচ্চাটা ন"ষ্ট হয়ে গেছে।
এটা আমি কি করলাম। আরিশাকে এটা শুনানো যাবে না। ওর অনেক আশা ছিল বাচ্ছাটাকে নিয়ে। ডাক্তারের রুম থেকে গিয়ে আরিশার কাছে গেলাম।
বড্ড মায়া লাগছে ওর প্রতি। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ নামিয়ে ওর কাছ থেকে চলে আসলাম।
আরিশাকে হাসপিটালে রেখে বাসায় এসে রুমে ঢুকার আগে চাচীর ফ্লাটে গিয়ে আরিশার ব্যাপারটা সব কিছু খুলে বললাম। ইবেন বাচ্চা ন"ষ্ট হওয়ার কথাটাও বললাম যাতে আরিশাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলতে পারে।
কিন্তু চাচী আরিশার এই ব্যাপারটা একটুও বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। উনি বলে আরিশা একটা ভাল মেয়ে এটা করতেই পারে না। তারপর উনাকে বুঝিয়ে বললাম যে আমি নিজ কানে শুনেছি।
চাচী বলল আমি হয়তো ভুল শুনেছি।
এখন ভয় শুধু একটা আরিশা বাচ্চা ন"ষ্ট হওয়ার কথা শুনলেই কি করবে কিছুতেই সেরে উঠতে পারছি না।
এটা ভাবতে ভাবতে চাচীর প্লাট থেকে এসে রুমে ঢুকতে যাব। ঠিক তখনই ভিতর থেকে আরিশার হাসির শব্দ শুনা যাচ্ছে। কিন্তু আরিশাতো হসপিটালে, রুমের চাবিও আমার কাছ। তাহলে ভিতরে কে....

( চলবে)
পর্ব-- ০১
গল্প-- #সংশয়_

14/10/2022

বৃষ্টিময়_প্রেম
পর্বঃ১৩

রাত পেরিয়ে শুরু হলো সকাল। সেই সাথে শুরু হলো বাড়িভর্তি সমগ্র মানুষের ব্যস্ততা! আন্টি সকাল থেকে রান্নাঘরে রান্না করছেন আর একটু পর পর একটা করে আইটেম বানিয়ে আংকেল বা রায়হান ভাইয়াকে খাইয়ে টেস্ট করে নিচ্ছেন যে কেমন হয়েছে! আমিও টুকটাক সাহায্য করছিলাম আন্টিকে। আর দাদি বরাবরের মতোই বসে বসে তদারকি করছিলেন সবকিছুর। সবাই মিলে ঘর গুছিয়ে সবকিছু রেডি করে নিজেরা গোসল করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
এখন আর তেমন কাজ বাকি নেই, শুধু রাইসার শশশুড়বাড়ির লোকজনদের আসার অপেক্ষা!

দুপুর হতেই আমাদের বাসায় পৌঁছে গেলেন প্রান্ত ভাইয়ার পরিবার। গেইট খুলে সবাইকে হাসিমুখে বরণ করলেন আংকেল-আন্টি। ছোট বড় সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা হলো। তারপর খাবার খেতে বসলেন সবাই। খাওয়া শেষে রেস্ট নিয়ে আরও কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে গলা ঝেড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন পূর্ণ ভাইয়ার বাবা। হাসিখুশি পরিবেশ হঠাৎ করেই গম্ভীর হয়ে গেলো। সবাই মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকলেন উনার দিকে।

---দেখুন বেয়াইন, এখন যে কথাটা বলতে যাচ্ছি এটা একটু গুরুত্বপূর্ণ।

"গুরুত্বপূর্ণ" শুনে সবাই একটু নড়েচড়ে বসলো। আমিও কান পেতে রইলাম আংকেল কি বলেন শুনার জন্য। জানার আগ্রহ তো আমার কাল থেকেই হচ্ছিলো! শুনলাম আংকেল বলছেন,

---আপনাদের সাথে তো এখন আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। এখানে তো লুকোনোর কিছু নেই তাইনা?

---জি ভাই। কি হয়েছে বলেন।

---আপনাদের সম্পর্কে সব জেনেশুনেই আমরা বিয়ের ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছি। আপনারা ফ্যামিলি ভালো, কালচার আমাদের সাথে মিলে। তবে আপনাদের একটা বিষয়ে আমরা এখনও স্পষ্টভাবে কিছু জানিনা।

আংকেল এর কথায় ভ্রু কুচকে গেলো সবার। কি এমন কথা তাদের বলা হয়নি? রাইসার বাবা একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন,

---বলছেন কি ভাই? কি এমন বিষয় আছে যেটা আপনারা জানেন না? আমাদের বলুন। আশা করছি কিছু গোপন রাখবো নাহ।

---আপনাদের বাসার সবার সম্পর্কেই আমরা জানি কিন্তু তুরফা মামনির ব্যাপারে তো কিছু জানিনা। সেদিন ইংগেজমেন্ট এর দিন ভাবীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু কথা শেষ হওয়ার আগেই থেমে যেতে হয়েছিলো তাই শুনতে পারিনি আর!

হঠাৎ করে আলোচনার মধ্যে আমার নাম আসায় চমকে উঠে তাকাই আমি। খেয়াল করি ইতোমধ্যে সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে! বেশ অসস্তি হচ্ছে আমার এমন পরিস্থিতিতে। মনে মনে ভাবলাম আংকেল এর আবার কি দরকার পড়লো আমার কথা শুনার। আমাকে আলোচনা থেকে দূরে রাখলেই কি নয়? তবুও জানার আগ্রহ আমার পিছু ছাড়ছিলো না তাই চুপচাপ শ্বাস আটকে পরবর্তী কথাগুলো শুনার অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি।

---তুরফা আমাদের সাথে ছোট থেকেই থাকে। ও আমার নিজের রক্তসম্পর্কের কেউ না হলেও আমার কাছে কোন অংশেই সে রাইসার থেকে কম নয়। তুরফা আমার মেয়ের মতোই বলতে পারেন।

আস্তেধীরে বললেন আন্টি। তার কথায় যেন কৌতুহল বেড়ে গেলো পূর্ণ ভাইয়ার পরিবারের। পূর্ণ ভাইয়ার মা জিজ্ঞেস করলেন,

---আচ্ছা বেয়াইন, তুরফার পরিবার কোথায়? আর বললেন যে ও ছোট থেকেই আপনাদের সাথে থাকে। এর মানে? ওর পরিবারে কি কেউ নেই??

নিজের পরিবারের কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। না জানি আর কতবার এই কথাটা শুনতে হবে? যারাই শুনে আমি আন্টির নিজের মেয়ে না তারা সবাই এসব প্রশ্ন করে আমাকে ও আমার পরিবারকে নিয়ে! পূর্ণ ভাইয়ার মায়ের কথায় আন্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব বলতে লাগলেন। আর যতই হোক মেয়ের শশুড়বাড়ীর লোকজন বলে কথা! তাদের থেকে এই মুহুর্তে কিছু লুকানো ঠিক হবেনা।

---তুরফা আমার বান্ধবীর মেয়ে। অবশ্য শুধু বান্ধবী বললে ভুল হবে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষদের মধ্যে একজন ছিলো ওর মা। ওর বাবাও ছিলেন অমায়িক একজন মানুষ। রাইসার বাবার ব্যবসা দাড় করাতে খুব সাহায্য করেছিলেন ভাই। দিনকাল ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তুরফা আমাদের বাসায় রাইসার সাথে খেলতে এসেছিলো। ওকে নিতে এখানে আসছিলো ওর মা-বাবা। পথিমধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন উনারা। রাস্তার মানুষ ওর মায়ের ফোন থেকে আমাদের ফোন দিলে আমরা তৎক্ষণাৎ ছুটে যাই। কিন্তু আমরা যতক্ষণে হসপিটালে পৌঁছাই তুরফার বাবা ইতিমধ্যেই পরলোক গমন করেছিলেন। ওর মায়ের অবস্থাও ছিলো খুব খারাপ। ওটিতে নিয়ে যাওয়ার আগে বারবার আমার হাত ধরে বলছিলো ওর কিছু হলে যেন আমি তুরফাকে দেখে রাখি, ওকে আমার সাথে করে নিয়ে যাই। কারণ তুরফার দাদারবাড়ির লোকজনদের সাথে ওর মা-বাবার সম্পর্ক তেমন ভালো ছিলোনা। তাছাড়া আমরাও ওর পরিবারের কারও কথা জানতাম না এজন্য ওর মা-বাবার মৃতুর পর তুরফাকে আমাদের সাথেই নিয়ে আসি। রাইসা আর তুরফা প্রায় সমবয়সী হওয়ায় ওকেও রাইসার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেই। এভাবেই চলছে সবকিছু তখন থেকে।

এতদিন পর আমার অতীত সম্পর্কে সবকিছু শুনে আমি আর ধরে রাখতে পারলাম না আজ নিজেকে। ঠোঁট উল্টিয়ে বিনাশব্দে কাদতে লাগলাম চুপচাপ। এদিকে কথা বলতে বলতে চোখ দিয়ে পানি পড়েছে আন্টিরও। পূর্ণ ভাইয়ার মায়ের চোখেও এসেছে জল। আন্টি নিজের চোখের পানি মুছে বললেন,

---মেয়েটা অনেক ভালো, বেয়াইন। কিন্তু ওর কপালটা বড্ড খারাপ। এইটুকুন একটা মেয়ের সাথে ভাগ্য এত নিষ্ঠুর না হলেও পারতো। ওর ভবিষ্যত নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়। যতদিন না ওকে যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিয়েছি ততদিন ওর মায়ের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবোনা আমি।

এতক্ষণ ধরে আন্টির কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন পূর্ণ ভাইয়ার বাবা। উনি হঠাৎ বললেন,

---আচ্ছা ভাবী, ওর মা-বাবার নাম কি আপনি বলতে পারবেন? এমন যদি হয় যে ওর পরিবারকে কোনভাবে খুজে বের করা যায়?

---ওর পরিবারকে খুজে বের করার চেস্টা করেছিলাম, বেয়াইন সাহেব। কিন্তু শুনেছিলাম তারা নাকি আর দেশে থাকেন না৷ তাই এরপর আর তাদের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

---ওর বাবার নামটা আমাকে বলেন। দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ব্যবসার সূত্রে বহু ব্যবসায়ীকেই চিনি আমি। আপনি যেহেতু বললেন ওর বাবার ব্যবসা ছিলো তাই হতেও পারে আমি উনাকে চিনতাম।

---হ্যাঁ, তাই তো। এটা এতক্ষণ মাথায় আসেনি আমার! অবশ্য আপনি আরেকটা কারণেও চিনতে পারেন কারণ তুরফার বাবাও চৌধুরী বংশের ছিলেন৷ কে জানে আপনাদের দূরের কোন আত্মীয়ও হতে পারেন তারা। ওর বাবার নাম ছিলো ...

---ইরফান চৌধুরী?

আন্টির বলার আগেই পূর্ণ ভাইয়ার বাবা বলে উঠলেন কথাটা। নিজের বাবার নাম উনার মুখে শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমি। একিসাথে অবাক হলেন রাইসার মা-বাবা সহ পুরো পরিবার! আন্টি কোনরকম নিজেকে সামলিয়ে বললেন,

---হ্যাঁ, ভাই। কিন্তু আপনি কি চিনতেন উনাকে?

আন্টির মুখে "হ্যাঁ" শুনে মুহুর্তেই চকচক করে উঠলো পূর্ণ ভাইয়ার বাবার চোখ। একটু পর আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাদতে লাগলেন পূর্ণ ভাইয়ার বাবা। একের পর অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতে দেখে আমার মনের মধ্যে উশখুশ করতে লাগলো! আংকেল কিভাবে জানেন আমার বাবার কথা? তাহলে উনি নিশ্চয়ই চিনবেন আমার পরিবারকে? আর না চিনলে কাদবেনই বা কেন?? আজ কি তবে এতদিনের খোজ পূরণ হবে আমার?!
দুরুদুরু বুকে আংকেলের দিকে চেয়ে রইলাম আমি।

হঠাৎ দেখি চোখের পানি পূর্ণ ভাইয়ার বাবা এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। সবার উৎসুক দৃষ্টি এখন আংকেল আর আমার দিকে। আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে আলতোভাবে উনি হাত রাখলেন আমার গালে। অশ্রুমিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলেন,

---তুমিই আমাদের তুরফা?

"আমাদের তুরফা" শব্দটা বিদ্যুৎ এর মতো খেলে গেলো আমার মাথায়। হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে লাগলো! তবে কি উনারা আমার পরিবারের মানুষ? চোখ বড় বড় করেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম আংকেলের দিকে। আমার চোখের ভাষা হয়তো বুঝতে পেলেন উনি, তাইতো বলে উঠলেন,

---মা রে,সম্পর্কে আমি তোর বড় চাচা হই। তোর বাবার একমাত্র বড় ভাই। তোর বড়আব্বু।

পূর্ণ ভাইয়ার বাবার কথা শুনে যেন বাজ পড়লো রুমের মধ্যে! হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছেন সবাই যেন কেউই ভাবেননি তিনি এমন কথা বলবেন! আংকেল এর কথা কানে আসতেই মুহুর্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো আমার। টলমলে পানিগুলো টাল সামলাতে না পেরে বেয়েই পড়লো দুচোখ গড়িয়ে। কিছু বলার জন্য মুখ খুললেও কথাগুলো যেন দলা পাকিয়ে রয়েছে ভেতরে। এ অঅনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়! কোনরকম অস্পষ্ট গলায় বললাম,

---আ-আপনারা আমার পরিবার?

বড়াব্বু হালকা হেসে মাথা নাড়লেন। এতক্ষণ ধরে বুকের ভেতর চেপে রাখা শ্বাস ছাড়লাম আমি! সত্যকে অনুধাবন করে অনুভুতি প্রখর হয়ে উঠলো আমার! এদিকে আমার চোখ দিয়ে বইছে হাজার প্রশ্নের জোয়ার। কোথায় ছিলেন উনারা এতদিন? কেন নিতে আসেননি আমায়? আর অপরদিকে, বড়াব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিচ্ছেন আমায়। যেন এত বছর পর মন ভরে দেখছেন!
প্রায় সাথে সাথেই পূর্ণ ভাইয়ার মা অর্থাৎ বড়মা এলেন আমার কাছে। দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেলেন আমার। এতক্ষণে হুহু করে কান্না শুরু করে দিয়েছি আমি! নিজের আবেগকে কোনভাবেই আর কন্ট্রোলে রাখতে পাচ্ছিনা আজ!! এতদিনের পরিবারের প্রতি জমানো সব মান-অভিমান, আক্ষেপ, ভালোবাসা সব যেন তাদের ফিরে পেয়ে একসাথে ভীড় জমিয়েছে আমার কাছে।

বড়মাকে জড়িয়ে ধরেই কাদতে কাদতেই মাথা ঘুরে উঠলো আমার। হঠাৎ করেই এত আবেগের ধাক্কা সইতে পারলো না আমার ছোট্ট মন। আর কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারালাম আমি...

চলবে

14/10/2022

বৃষ্টিময়_প্রেম
পর্বঃ১২


শ্রাবণের মেঘগুলো কয়েকদিনের বর্ষণে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে। পুরো আকাশেজুড়ে আজ রোদকন্যার বিচরণ। পর্দার আড়াল থেকে রোদের আলো এসে পড়তেই কুচকে গেলো আমার চোখ। হাত আওড়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন চালু করতেই নিমিষেই ঘুম কেটে গেলো আমার! সকাল ৯.৩০ টা বাজে। কাল রাতে বিদায়ের পর বেশ তাড়াতাড়িই ঘুমিয়েছিলাম। সারাদিনের ধকলে বিছানায় গা এলিয়েই রাজ্যের ঘুম চোখ এসেছিলো। ফোন রেখে আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নামলাম আমি। ফ্রেশ হয়ে আস্তেধীরে নিজের রুম থেকে বের হলাম।

বাহিরে এসে দেখলাম আন্টি ডাইনিং টেবিলে খাবার রাখছিলেন। তাকে এসময় খাবার রাখতে দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি। কেউ কি খায়নি এখনও? সবাই কি আমার মতোই দেরি করে উঠেছে আজ? ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলাম ডাইনিং এর দিকে। আমাকে আসতে দেখে আন্টি বললেন,

---আরে তুরফা, তুই উঠে গেছিস মা? আমি তোকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম এখনি।

---তোমরা কেউ এখনও খাওনি, আন্টি? সবাই কি আজকে লেট করে উঠেছে আমার মতো?

---না রে। সবাই আগেই উঠেছে। খাওয়া-দাওয়াও শেষ। তুই বাকি আছিস এখন। আমি ইচ্ছা করেই ডাকিনি তোকে। তোর জন্য নাস্তা রেখেই ডাকতে যাচ্ছিলাম আমি তোকে। আয় এখন খেতে বস। অনেক লেট হয়ে গেছে।

মাথা নেড়ে চুপচাপ খেতে বসলাম আমি। খাওয়ার মাঝখানে আন্টির থেকে জানলাম আংকেল আর রায়হান ভাইয়া কোন একটা কাজে বাহিরে গেছেন। তারা রাতে বাসায় আসবেন। দাদি বাজার করতে গেছেন, কালকে রাইসার শশুরবাড়ির লোকজনকে বিয়ের পর প্রথম দাওয়াত দেওয়া হবে এ বাসা থেকে। এজন্য দাদি নিজ হাতে বাজার করতে গেছেন সব। খেতে খেতে এসব শুনছিলাম ঠিক তখনি আন্টি বলে উঠলেন,

---একটু পর রাইসার শশুড়বাড়ি যাবো আমি। সাথে কিন্তু তোকেও যেতে হবে।

রাইসার শশুড়বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে আমার গলায় খাবার আটকে গেলো। আন্টি আমাকে পানি এগিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

---আস্তে খা। এখনি যেতে বলছি না তোকে। ধীরে সুস্থে খেয়েই যাবি। চিন্তা করিস না।
আন্টির কথা শুনে আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম। না জানি কি ভাবলেন উনি। ছিঃ!!

---আন্টি আমি যাবোনা প্লিজ। তুমিই যাও। আমার ওখানে গিয়ে কোন কাজ নেই আর আমার ভালোও লাগছেনা। আমি আমার রুমেই থাকতে চাই।

ইতস্ততভাবে অন্যদিক তাকিয়ে বললাম আমি। আমার কথা শুনে আন্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

---দেখ মা, আমি জানি কালকের ঘটনার জন্য মনে অনেক কস্ট পেয়েছিস তুই। এজন্যই একা থাকতে চাচ্ছিস। জানি এটা স্বাভাবিক কিন্তু বিশ্বাস কর আমরা কেউ তোকে অবিশ্বাস করিনি। রায়হানের কথা শুনেই আমি বুঝেছি এটা একটা দূর্ঘটনা ছিলো মাত্র, কারণ তোকে ছোট থেকেই চোখের সামনে মানুষ হতে দেখেছি আমি। তুই কখনোই এমনটা করতে পারিস না। আর তুই তো জানিসই আমার শাশুড়ি কিরকম, উনি মানুষের কথায় তোকে ভালোমন্দ বললেও আমরা কেউ তার কথা গায়ে মাখিনি কারণ সবাই জানে উনার স্বভাবটাই এইরকম। তাই এটা নিয়ে আর মন খারাপ করিস না প্লিজ। বিশ্বাস কর তোকে এভাবে দেখতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।

আন্টির কথা শুনে আমি তার দিকে তাকালাম। তার কথার সত্যতা তার চোখের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। অবিশ্বাস করার কোন উপায় নেই। মনে হয় যেন এখনি কেদে দিবেন। তাই হালকা হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,

---খারাপ আমার অবশ্যই লেগেছে আন্টি কিন্তু আমি মানুষের উপর রাগ করলেও তোমাদের উপর করতে পারবোনা। আমি বিশ্বাদ করলাম তোমরা আমার পক্ষেই ছিলে।

আমার কথায় আন্টির মুখে হাসি ফুটলো। পরম মমতায় মাথা বুলিয়ে দিলেন উনি আমার। তারপর রাইসার শশুড়বাড়ি যাওয়ার জন্য জোর করতে লাগলেন। মেয়ের শশুড়বাড়ি একা একা যেতে উনার ভালো লাগবেনা, দাওয়াতটা নিজ মুখে দিতে চান বলেই তার যাওয়া নয়তো উনারও যাওয়ার ইচ্ছা ছিলোনা শুনলাম। বড়মানুষ এতক্ষণ ধরে সামান্য একটা বিষয়ে অনুরোধ করছেন দেখে সেটা আর ফেলতে পারলাম না আমি। অবশেষে রাজি হলাম তার সাথে প্রান্ত ভাইয়াদের বাসায় যেতে।

__________

চৌধুরী ভিলা। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি আন্টির সাথে। দাড়োয়ান আমাদের দেখে সালাম দিয়ে হাসিমুখে খুলে দিলেন গেইট। আস্তেধীরেই আন্টির সাথে ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি। ভেতরে ঢুকে গ্যারেজ পার হয়ে সামনে এগোতেই এক পাশে ছোট্ট একটা বাগান দেখলাম। রং-বেরঙের সুন্দর সুন্দর ফুল ও মানিপ্ল্যান্ট গাছ লাগানো। পাশে একটি বেঞ্চের মতো আছে বসার জন্য। হয়তো বাগানে এলে এখানে বসে গল্প করে সবাই, ভাবলাম আমি। বাগান পেরিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতেই তাদের ডু-প্লেক্স বাড়িতে ঢুকলাম আমরা। সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে চারদিক দেখছিলাম। পুরো বাসাতেই রুচিশীলতার ছাপ স্পষ্ট। বেশ ভালো পরিবারেই বিয়ে হয়েছে রাইসার, খুশিমনে ভাবলাম আমি।

আন্টি কলিংবেল চাপতেই আমাদের জন্য গেইট খুলে দিলেন প্রান্ত ভাইয়ার মা। হাসিমুখে আমাদের ভেতরে আসার আমন্ত্রণ জানালেন উনি। আমরাও সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। ড্রয়িংরুমে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসতে বললেন আমাদের। সাথে তিনিও বসলেন। কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করতেই রাইসা এলো আমাদের কাছে। মেরুন রঙের শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ওকে পুরো নতুন বউ নতুন বউ লাগছে। লাজুক হেসে আমাদের সাথে বসলো ও। আন্টির থেকে শুনলাম আংকেল অফিসে গেছেন, তাহলে অবশ্যই পূর্ণ ভাইয়াও গেছেন মনে মনে ভাবলাম আমি।

প্রান্ত ভাইয়াও এলেন একটু পরে। সালাম দিলেন আন্টিকে। কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা-বার্তা বলে কালকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে আন্টি চলে যেতে চাইলেন কিন্তু প্রান্ত ভাইয়ার মা কিছুতেই যেতে দিবেন না আমাদের। তার কথা, বেয়াইনরা প্রথমদিন বিয়ের পর বাড়ি এসেছে না খেয়ে তিনি যেতে দিতে পারবেন না। অবশেষে তার জেদের কাছে হেরে রাজি হলেন আন্টি, থাকতে হলো আমাকেও।

আন্টিরা গল্প করছিলেন নিজেদের মধ্যে, প্রান্ত ভাইয়াও রুমে চলে গেলেন তখন রাইসা আমাকে বললো ওর শশুড়বাড়ি ঘুরে দেখাবে। বসে বসে এমনিতেও বোর হচ্ছিলাম তাই ওর কথায় রাজি হলাম আমি। যদিও রাইসা নিজেও ঠিকমতো চেনেনা কারণ ও মাত্র নতুন বউ তাও দুইজন মিলে ঘুরে ঘুরেই দেখছিলাম সব। ডু-প্লেক্স এর সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে ঘুরছিলাম আমরা। তখনি প্রান্ত ভাইয়ার কল এলো রাইসার ফোনে, ভাইয়া ওকে নিচে ওদের রুমে ডাকছে। কোন একটা কাজ আছে তার। রাইসা আমাকে উপরে ঘুরতে বলে বললো ও দুই মিনিটেই আসবে। আমিও চুপচাপ মাথা নাড়লাম।

রাইসা চলে যাওয়ার পর একাই দোতলায় ঘুরতে লাগলাম আমি। দেয়ালে বিভিন্ন পেইন্টিং, দেয়ালের পাশে ফুলদানি দেখতে দেখতে হেটে যাচ্ছিলাম। কোণার একটা রুমের সামনে দিয়ে যেতেই রুম খোলার আওয়াজে ভড়কে গেলাম আমি। সবাই তো নিচে, তাহলে এখানে কে? আমার ভাবনা-চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন পূর্ণ ভাইয়া। উনাকে এই মুহুর্তে এখানে আশা করিনি আমি তাই চমকে উঠে বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকলাম তার দিকে। উনাকে দেখে মনে হলো যেন সদ্য ঘুম থেকে উঠেছেন! তার মানে অফিস যান নি উনি আজকে!

গাঢ় ধূসর রং এর গেঞ্জির সাথে কালো ট্রাউজার পড়নে উনার, সাথে ফোলা ফোলা চোখ। দেখে মনে হলো এখনও যেন ঘুমের রেশটুকু ঠিকমতো কাটেনি তার। আমাকে তার সামনে দেখে কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে ঘুমু ঘুমু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন উনি। তারপর আবার স্বাভাবিকভাবেই আমাকে ইগ্নোর করে অন্যদিকে চলে গেলেন। উনার চলে যাওয়ার দিকে বোকার মতো গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকলাম আমি! আজব তো! জলজ্যান্ত একটা মানুষ প্রথমবার তার বাসায় এসেছে, মানুষ তো মুখের কথাও কিছু একটা বলে নাকি?? আমাকে নিজের সামনে দেখেও এরকম করে চলে গেলো কেন উনি?
গাল ফুলিয়ে ভাবতে থাকলাম আমি।

আমার ভাবনার মধ্যেই রাইসা চলে এলো। পূর্ণ ভাইয়াকে যেতে দেখে বললো এদিকে মনে হয় উনার রুম। আমি কিছু না বলে মাথা নাড়লাম শুধু। আরও কিছুক্ষণ উপরে ঘুরে নিচে নেমে গেলাম আমরা দুজন। নিচে নেমে ড্রয়িংরুমে আসতেই সবাইকে বসা দেখলাম। পূর্ণ ভাইয়াও বসে ছিলেন ওখানে। আমাকে দেখে এমনভাবে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছেন যেন এইমাত্র বাসায় দেখলেন আমাকে! এই লোকটার কোন রিয়েকশনের আগা-মাথা সত্যিই কিছু বুঝিনা আমি!!

উনার তাকিয়ে থাকা দেখে আমার অদ্ভুত লাগছিলো তাই আমি পানি খাওয়ার বাহানায় উঠে এলাম ড্রয়িংরুম থেকে। একগ্লাস পানি খেতেই আমার পিছনে এসে দাড়ালেন পূর্ণ ভাইয়া। তাকে হঠাৎ এভাবে নিজের পেছনে দেখে গলায় পানি আটকে গেলো আমার। আজকে বুঝি গলায় খাবার আটকানোর দিবস আমার! সকাল থেকে তাই হচ্ছে!! কোনরকম কাশতেই উনি অবাক চোখ মাথায় হাত দিয়ে থামানোর চেস্টা করলেন আমায়। আড়চোখে উনাকে পর্যবেক্ষণ করলাম আমি। আমি স্বাভাবিক হতেই দূরে সরে গেলেন তিনি। তারপর বরাবরের মতোই গম্ভীর আওয়াজে বললেন,

---একটু আগে কি তুমি দোতলায় গিয়েছিলে?

উনার প্রশ্ন শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি লোকটা? আমি যাবো না তো কি আমার ভুত যাবে? বিরক্ত হয়ে উনাকে বললাম,

---তো আপনার কি মনে হয় আপনি আমাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন তখন? (চোখ পাকিয়ে)

তবে আমার কথায় উনার ভাবমূর্তির তেমন পরিবর্তন হলোনা। শুধু এক ভ্রু তুলে তাকিয়ে থাকলেন একদৃষ্টিতে আমার দিকে। এরপর বরাবরের মতোই কিছু না বলে হনহন করে হেটে গেলেন দোতলায়। আমিও উনার আচরণকে আর পাত্তা না দিয়ে চলে এলাম ড্রয়িংরুমে। এতদিনে উনার এসব অদ্ভুত ব্যবহারের অভ্যাস হয়ে গেছে আমার, তাই এখন আর বেশি অবাকও হইনা!

_________

প্রান্ত ভাইয়ার বাবা এসেছিলেন বাসায় দুপুরে। তারপর সকলে মিলে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে উনাদের বাসার সবাইকে দাওয়াত দিয়ে আন্টির সাথে চলে আসছিলাম আমি। যাওয়ার আগ মুহুর্তে প্রান্ত ভাইয়ার বাবা আন্টিকে বললেন,

---কাল দাওয়াত হওয়ায় এক হিসেবে ভালোই হয়েছে, ভাবী। কালকে আমরা এমনিতেও একবার যেতে চেয়েছিলাম আপনাদের বাসায়।

---অবশ্যই আসবেন, ভাই। শুনে খুশি হলাম। তবে কোন কাজ ছিলো কি?
জিজ্ঞেস করলেন আন্টি।

---কাজ তো না তবে একটা কথা ছিলো যেটা না হয় কালকেই আলোচনা হবে।

আংকেল এর কথায় মাথা নেড়ে সায় দিলেন রাইসার মা। তারপর সেখান থেকে চলে এলাম আমরা। বাসায় যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম আমি যে কি এমন আলোচনা করার জন্য কাল বাসায় আসতে চাইছিলেন তারা!

চলবে

14/10/2022

বৃষ্টিময়_প্রেম
পর্বঃ১১

রাইসার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে আসছিলাম আমি। বিদায়ের বেশি সময় নেই। এর মধ্যেই পূর্ণ ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাতে হবে। যদিও কিভাবে উনার সাথে কথা শুরু করবো তা এখনো ভাবিনি কিন্তু এটা নিশ্চিত যে আজকে উনার সাথে কথা বলতেই হবে আমার! কারণ এতকিছুর পরেও আজ উনাকে একটা ধন্যবাদ না দিলে এটা ভীষণ রকমের অনুচিত একটা কাজ হবে!!

পথিমধ্যে এক পাশে রাখা আমার কাপড়ের ব্যাগ দেখে ভাবনাচ্ছেদ হলো আমার! হঠাৎ মনে পড়লো আমি তো এই বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আবেগের বশে তখন ডিসিশন নিলেও ঠিক কোথায় যেয়ে কার বাসায় উঠতাম বিষয়টা ভাবিনি আমি। উঠবোই বা কোথায়? এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় আমার আছেই বা কে? যদিও এই বাসায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার মধ্যে এখন আর অবশিষ্ট নেই, তাই কিছুক্ষণ ভেবে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিলাম যে উচ্চ-মাধ্যমিক রেজাল্টের পর ভার্সিটির কোচিং করার বাহানায় একবারে চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে। এটা ছাড়া আপাতত হাতে উপায়ও নেই! দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম আমি। আজ যদি আমার নিজের পরিবার থাকতো তবে এতটা অসহায়ভাবে দিন কাটাতে হতোনা আমার! এত অপমান-লাঞ্চনার পরেও পড়ে থাকতো হতো না এখানে।

আজকের ঘটনা আমায় হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিলো এই সমাজে একা টিকে থাকা কতটা কঠিন! পাশে যদি ফ্যামিলি সাপোর্ট না থাকে তবে মানুষ যতই ভালো হয়ে থাকুক না কেন, তাকে আঘাত করতে দুইবার ভাববে না মানুষ! ছোটবেলায় পরিবারের সাথের স্মৃতি তেমন একটা মনেও নেই আমার। আবছা আবছা মনে পড়ে আমার আব্বুর সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক তেমন ভালো ছিলোনা। বাকি পরিবার যৌথভাবে অন্য জায়গায় থাকতেন আর আমি,আব্বু, আম্মু আলাদাভাবে থাকতাম ঢাকায়। শুধুমাত্র ঈদেই আমাদের দেখা হতো। সেই ঈদের এক-দুই দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হতো আমাদের কাছে! সকল ছোট-বড় কাজিনরা মিলে বেশ মজা করতাম আমরা। অথচ আফসোস, সময়ের পরিক্রমায় জীবনের কঠোর বাস্তবতায় এখন সেইসব কাজিনদের চেহারা তো দুরের কথা বেশিরভাগের নামও ভুলে গেছি আমি। অবশ্য অস্পষ্টভাবে মনে আছে একজনের নাম, যিনি প্রত্যেকবার আমার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে চকলেট নিয়ে আসতেন। তাজওয়ার ভাইয়া! সবগুলো কাজিনদের মধ্যে তার সাথেই আমার বেশি খাতির ছিলো। ছোটবেলায় সবাইকে বোকার মতো বলতাম উনাকে বিয়ে করবো আমি। হাহাহা! ছোটবেলার আবছা কিছু স্মৃতি তাও কত মজার ছিলো!

আর এখন ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে তো তার কথা ভুলেই গিয়েছি আমি! এতবছর পর আজ হঠাৎ উনার কথা মনে পড়ায় উদাসীন হয়ে গেলাম আমি! না জানি এখন তিনি কই আছেন, কেমন আছেন? হয়তো বা বিয়েশাদিও করে ফেলেছেন এতদিনে! হতেই পারে, অসম্ভব কিছুই নয়। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কোনদিন কি আমার আর দেখা হবে নিজের পরিবারের সাথে? হলেও তারা কি আমাকে মনে রাখবে?

পরিবারের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। নাহ, এখন এসব ভেবে লাভ নেই! তাই এগুলো চিন্তা-ভাবনা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলে মাটি থেকে ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমে রেখে আসতে যাচ্ছিলাম। তারপর পূর্ণ ভাইয়ার কাছে যাবো। রুমের ঠিক কাছে পৌঁছাতেই দেখি পূর্ণ ভাইয়া ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছেন। উনাকে দেখেই তড়িঘড়ি করে হাত থেকে ব্যাগ রেখে উনার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। উনি ফোন কানে নিয়েই ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন। উনার এভাবে তাকানো দেখে কি বলতে এসেছিলাম তা ভুলে গেলাম আমি।

জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে উনাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিলাম৷ এদিকে আমার কাছে থেকে কোন কথা না শুনে উনি আমাকে সাইড দিয়ে চলে যেতে লাগলেন। তার চলে যাওয়া দেখে বোকা বনে গেলাম আমি। এত কিসের তাড়া উনার? ১ মিনিট দেরি করা যায়না? আজব তো!! তাই উনার পিছে পিছে গিয়ে আর অপেক্ষা না করে বলেই ফেললাম শেষমেষ,

---থ্যাংক ইউ, পূর্ণ ভাইয়া।

আমার কণ্ঠ শুনে উনি এবার পিছনে ফিরে তাকালেন। কান থেকে ফোন পকেটে রেখে ঘুরে দাড়ালেন আমার দিকে। দু হাত বুকের সাথে ভাজ করে ভ্রু তুলে যেন ইশারা করলেন কি জন্য ধন্যবাদ দিলাম উনাকে। আমি ইতস্ততভাবে বললাম,

---ওই যে আমার আর রায়হান ভাইয়ার ব্যাপারটা সবার সামনে আনতে সাহায্য করেছেন এইজন্য...

---তোমাকে কে বলেছে এটা?

আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে উনি গম্ভীর গলায় বললেন। তার মুখ দেখে মনে হলো তিনি যেন চাচ্ছিলেন না আমি জানি এই সম্পর্কে।

---প্রিয়া বলেছে। (ধীর গলায় জবাব দিলাম আমি)

আমার কথা শুনে পূর্ণ ভাইয়া এমনভাবে বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে ফেললেন যেন প্রিয়া আমাকে কথাটা বলে মহা অপরাধ করে ফেলেছে। উনার রিয়েকশন দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলাম আমি। লোকটার আচরণ এত অদ্ভুত কেন? তিনি উপকার করেছেন এটা প্রিয়া আমাকে জানাতেই পারে। এই ছোট একটি বিষয়ে এত অস্বস্তিতে পড়ার কি আছে?
নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,

---তো যা বলছিলাম। আপনি উপকার করেছেন তাই আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

হালকা হেসে বললাম আমি। উনি শুধু একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। এবারো তার উওর না পেয়ে হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছিলাম আমি। পাশে থেকে ব্যাগ তুলে নিতেই উনার আওয়াজে থেমে গেলাম আমি,

---এই ব্যাগটা কার?

---আ-আমার।
পিছন ফিরে আস্তে করে বললাম আমি। আমার কথা শুনে উনি এগিয়ে আসতে লাগলেন আমার দিকে। তার এগিয়ে আসা দেখে অবাক হয়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলাম আমি। কিন্তু তিনি থামলেন না। উনার সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে গেলাম আমি, হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলো ব্যাগ। ঠিক তখন উনি থামলেন। ব্যাগটা এক হাতে তুলে আবার মাটিতে রেখে দিলেন উনি। তার কাজকর্ম বোকার মতো চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগলাম আমি। এই লোকের মতিগতি আমার দ্বারা কখনোই বুঝা সম্ভব নাহ!

---ব্যাগের ওজন দেখে তো মনে হচ্ছে পুরো আলমারি তুলে নিয়ে যাচ্ছো। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিলে বুঝি?
এক ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করলেন উনি। তার প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেলাম আমি! বাপরে, লোকটা তো ভীষণ চালাক! তবে উনার প্রশ্নের কোন উত্তর দিলাম না আমি, মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম! উনি আমার কথার কোন জবাব দেন না তাহলে আমি কেন দিবো? আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি শক্ত গলায় বললেন,

---নিজের উপর এত বড় অপবাদ নিয়ে পালিয়ে যেতে লজ্জা লাগলোনা তোমার?

এবার উনার কথা শুনে মাথা তুলে তাকালাম আমি। এভাবে বলতে পারলেন উনি আমায়? আমি কি খুব শখ করে পালাচ্ছিলাম? মুহুর্তেই মনের ভেতরের অভিমানগুলো যেন চাঙা হয়ে উঠলো আমার! তাই উনার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,

---আমি কি শখের বশে পালাচ্ছিলাম নাকি বলুন? যাদের বাসায় এতদিন থাকলাম, যারা আমাকে এত ভালো করে চিনে তারাও আমাকে ভুল বুঝলো, একটাবার আমার পক্ষে কোন কথা বললোনা তাদের সাথে আমি কিভাবে থাকবো? আমার কি চলে যাওয়া উচিত না?

প্রচন্ড অভিমানে কথাগুলো বলতে বলতে এক পর্যায়ে কাদতে শুরু করলাম আমি। আমার কান্না দেখে শান্তচোখে চেয়ে আছেন উনি। কিছুক্ষণ পর ইষৎ নরম সুরে বললেন,

---দেখো, আমি বুঝতে পারছি এইরকম পরিস্থিতিতে পড়লে যে কারোই কস্ট লাগবে। হয়তো তোমার অভিমানটা খুব বেশি কিন্তু শুধুমাত্র দাদির কথা শুনে বাকি সবার প্রতি একি ধারণা রাখা তোমার উচিত হয়নি।

উনার কথায় কিছু না বুঝে পিটপিট করে চেয়ে রইলাম আমি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম,

---মানে?

উনি ছোট একটি শ্বাস ফেলে বললেন,

---সবাই তোমাকে অবিশ্বাস করেনি। তুমি রুমে চলে যাওয়ার পর রাইসা এসে ওই মহিলাগুলোর সাথে ঝগড়া করেছে, ওর সাথে সায় দিয়েছেন আন্টিও। দাদি বাদে তোমার পরিবারের সবাই তোমার পক্ষে কথা বলছিলো কিন্তু তুমি এসব না জেনেই চোরের মতো পালিয়ে যেতে চাইছিলে? একবার ভেবেছো রাইসা যদি সঠিক সময়ে এসে তোমাকে ডেকে না নিয়ে যেত তবে কি হতো? আমাদের এত প্ল্যান সব নস্ট হয়ে যেতো। তখন মানুষ তোমাকে নিয়ে কথা বলার আরও সুযোগ পেতো যে নিশ্চয়ই তুমি অপরাধী যার কারণে তুমি এভাবে পালিয়ে গেছো।

পূর্ণ ভাইয়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলাম আমি। তাই তো! এভাবে তো ভেবে দেখিনি আমি!! পুরো বিষয় সম্পর্কে না জেনে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়তো ঠিক ছিলো না আমার। কিন্তু আমার কাছে তো কোন প্রমাণও ছিলো না যে আমি নিজের নির্দোষিতা সবার সামনে তুলে ধরবো। তাই ধরা গলায় করুণ চোখে উনাকে বললাম,

---কিন্তু আমার কাছে তো কোন প্রমান ছিলো না আর আমি কি করবো বুঝতে পাচ্ছিলাম না। এজন্যই নিজের আত্মসম্মান রক্ষার্থে বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছিলাম।

উনি আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন চুপচাপ। তারপর বললেন,

---নিজের জন্য স্ট্যান্ড নিতে শেখো, স্টুপিড। আর কি বললে তুমি? আত্মসম্মান? যে ব্যক্তির আত্মসম্মান এত প্রখর সে নিজের পক্ষে একাই কথা বলতে পারে অন্যের সামনে। তুমি বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছিলে ভালো কথা তবে চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? সবার সামনে যেয়ে নিজের জন্য স্ট্যান্ড নিয়ে তোমার শক্ত ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেখিয়ে দিয়ে যেতে পারতে? তবে কেউ তোমার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পেতোনা। তুমি এমন ভয়ে ভয়ে থাকো আর বোকার মতো কাজ করো বলেই মানুষ তোমার বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে, বুঝেছো?

এক নিশ্বাসে এত্তগুলো কথা বলে চুপ হয়ে গেলেন উনি। এদিকে তার কথা শুনে, তার কথার পেছনের লজিক দেখে অবাক হয়ে গেলাম আমি। আসলেই নিজের জন্য স্ট্যান্ড নেওয়া উচিত ছিলো আমার। লুকিয়ে লুকিয়ে পালানো ঠিক হয়নি। তাতে সবাই আরও দোষ দিতো আমায়! বাড়ি ছেড়ে যদি যেতেই হয় তবে সবার সামনে দিয়ে সবাইকে বলেই যাবো মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাকে সঠিকভাবে বুঝানোর জন্য পূর্ণ ভাইয়ার প্রতি আরেকবার কৃতজ্ঞ হয়ে উঠলো মন।

তবে এবার আর ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগ হলো না কারণ আমি কিছু বলার আগেই প্রিয়া দৌড়ে এসে বলতে লাগলো বিদায়ের সময় এসে গেছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

__________

অশ্রুসিক্ত নয়নে রাইসাকে বিদায় দিলাম সবাই। কেদেকেটে সবার খারাপ অবস্থা৷ রাইসার জন্য মন খারাপ হলেও অদ্ভুতভাবে আমার তেমন মন খারাপ হচ্ছেনা। একটু আগ পর্যন্ত মনের মধ্যে যত অশান্তি ছিলো সব যেন মিলিয়ে হালকা হয়ে গেছে মন। আকাশে তাকিয়ে দেখি পূর্নিমার চাদ উঠেছে। তার আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো আকাশ। ঠিক যেমনি পূর্ণ ভাইয়ার কথায় আজ আলোকিত হয়েছে আমার সমগ্র মন!

চলবে

14/10/2022

বৃষ্টিময়_প্রেম
পর্বঃ১০

আত্মসম্মান। শব্দটা ছোট হলেও তার গুরুত্ব ব্যাপক। একজন মানুষ সবকিছু হারালেও দিনশেষে আত্মসম্মানের জোরেই মাথা উচু করে দাড়াতে পারে। ঠিক তেমনি একজন সব পেয়েও যদি আত্মসম্মানকে বিসর্জন দেয় তবে নিজের চোখে নিজেই সে ছোট হয়ে যায়! একিভাবে আজকের ঘটনায় শুধু আমার চরিত্রেই নয় বরং প্রশ্ন উঠেছে আমার আত্মসম্মানের উপরেও। এতটা বছর যাদের বাসায় থাকলাম, যাদের সাথে মিলেমিশে আপন করে নিলাম আমি দিনশেষে একটা সামান্য দূর্ঘটনায় আমাকে দোষ দিতে একবারও খারাপ লাগলোনা তাদের?

কত সহজেই না বলে দিলেন দাদি যে পরের মেয়ে কখনও আপন হয়না! তবে এতদিন তাদের সাথে আমার যে এত ভালো সম্পর্ক সেটা কি নিছক অভিনয়? ঘটনার গম্ভীরতায় আমায় সর্বদা সাপোর্টকারি আন্টিও চুপ হয়ে গেছেন আজকে। একদিকে তার ছেলে অন্যদিকে আমি। বুঝলাম উনি দ্বিধায় আছেন৷ তবে আমি কোন দ্বিধায় নেই।

আজকে দাদির বলা কথাগুলো আমার আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে। এই ঘটনার পরেও যদি আমি এই বাসায় থাকি তবে নিজের চোখে আমি নিজেই ছোট হয়ে যাবো। আত্মগ্লানি আমায় কুড়ে কুড়ে খাবে রোজ। তাই এত বছরেও যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস পাইনি আজ কিছু মুহুর্তের মাঝেই এমন শক্তপোক্ত ডিসিশন নিয়ে ফেললাম আমি। দুই হাতে চোখের পানি মুছে আলমারি থেকে ব্যাগ বের করে গুছাতে লাগলাম। এতদিন বিভিন্ন কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা থেকে যে কয় টাকা জমা করেছি সব বের করলাম। উদ্দেশ্য এখন একটাই। এই বাড়ি ছেড়ে বের হওয়া। কাউকে কোন জবাবদিহি করবোনা আমি, কাউকে প্রমান দিবোনা। যার যা মনে করার করুক।

আলতো হাতে রুমের দরজা খুলে বাইরে উকি দিলাম কেউ আছে নাকি দেখার জন্য। তবে সবাই বসারঘরে জটলা পেকে থাকায় রুমের এদিকে কাউকে দেখা গেলোনা। বুঝলাম এখনি সময় চলে যাওয়ার। তাড়াতাড়ি ভেতর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই রাইসাকে আমার দিকে আসতে দেখলাম। ওকে এই সময় আশা করিনি আমি! ভেবেছিলাম এতক্ষণে ওর বিদায় হয়ে চলে যাওয়ার কথা। তবে বেশিকিছু ভাবার আগেই ও এসে বললো,

---তুরফা, ড্রয়িংরুমে চল। তোকে ডাকছে।

---কে ডাকছে আমায়? আর কেনই বা ডাকছে? কারো কাছেই কোন জবাবদিহিতা করতে পারবোনা আমি আগেই বলে দিচ্ছি। তোরা যা ভাবার ভাব।

রাইসা আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে আমার হাত চেপে ধরলো শক্ত করে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ওর থেকে নিজের হাত সরানোর চেস্টা করতেই ও মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললো,

---দেখ তুরফা, অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে। এতক্ষণ শশুড়বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিলো আমার কিন্তু এখনও যাইনি। তারপরেও তুই যাবিনা?

এবার ওর কথা শুনে অপরাধবোধ জাগলো আমার ভেতর। ইশ রে বেচারি। কোথায় এই সময় বাসরঘরে বসে থাকার কথা ছিলো ওর আর এইসময় বাসায় বসে তামাশা দেখতে হচ্ছে ওকে! আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত ব্যাগ নিচে রেখে রাইসার সাথে চললাম ড্রয়িংরুমের দিকে।

__________

বিয়েবাড়িতে আসা বেশিরভাগ মানুষ জড়ো হয়েছে এই বিশাল ড্রয়িংরুমে। এত আলো থাকার পরেও গুমোট, থমথমে পরিবেশ। রায়হান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন এক কোণায়, উনার পাশে গোমড়া মুখে দাদি বসে আছেন। অপরপাশে প্রান্ত ভাইয়াসহ তার ফ্যামিলি। প্রান্ত ভাইয়ার পাশে তাকাতেই পূর্ণ ভাইয়ার দিকে চোখ গেলো আমার। উনি সরাসরি তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে, তার চাহনি দেখে বুকের মাঝে ধক করে উঠলো আমার! মুখ অন্যদিকে করলাম আমি। ভাবতে লাগলাম কেনই বা ডাকা হয়েছে আমায় এখানে? চারদিকে হালকা গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। তার মানে আসলে কেউই জানেনা কেন সবাইকে একত্রিত করা হয়েছে এক জায়গায়!

আমার ভাবনার মাঝেই ইষৎ কেশে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো প্রিয়া৷ সবার মনোযোগ ওর দিকে যেতেই কয়েক ধাপ এগিয়ে রুমের মাঝখানে এলো সে। সবাই আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকাতেই বলে উঠলো,

---আমি প্রিয়া। আশা করি সকলে চিনেছেন। জামাইয়ের একমাত্র ছোট বোন। ফটোগ্রাফি করার বহু পুরোনো শখ আমার। নিজের ভালো লাগার জন্যই বিভিন্ন ছোটখাটো মুহূর্তের ছবি তুলে রাখি..

প্রিয়ার কথার মাঝখানেই দাদি বিরক্তির সুরে বলে উঠলেন,

---তোমার ছবি তুলতে ভাল্লাগে ভালো কথা। তে সেটা এতগুলা মানুষরে ডাকে কওয়া লাগবে? বাইরে যেয়ে ছবি তুলো, ভিডিও করো। কে মানা করসে!

---ও যখন কিছু বলতে চাইছে ওকে কথাটা পুরোপুরি বলতে দিন দাদি। নিশ্চয়ই টাইমপাস করার জন্য এই সময় সবাইকে ডাকা হয়নি।

প্রান্ত ভাইয়ার কড়া আওয়াজে বেলুনের মতো চুপসে গেলেন দাদি। যতই হোক নতুন জামাই বলে কথা, তার কথার উপর দিয়ে যাওয়া দাদি ঠিক মনে করলেন না তাই চুপ হয়ে গেলেন৷ দাদিকে চুপ হতে দেখে প্রিয়া আবার বলতে শুরু করলো,

---তো যা বলছিলাম। আমার ভিডিওগুলো নেহাৎ স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই করে থাকি আমি। সাধারণত কাউকে দেখাইনা। তবে আমার কোন কাজ যদি কারও উপকারে আসে তবে সেটা সবাইকে দেখাতে আমার কোন আপত্তি নেই।

বলেই ও রাইসার দিকে তাকাতেই দেখি সে একটি প্রজেক্টর নিয়ে আসলো। ব্যাপারটা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে দুরুদুরু বুকে চেয়ে দেখতে লাগলাম ওদের কাজকর্ম। পুরো ঘরজুড়ে পিনপতন নীরবতা।

প্রিয়ার ফোনের সাথে কানেক্ট করতেই ভিডিও চালু হলো। বিয়েবাড়ির বিভিন্ন ছোটখাট মুহুর্ত ভিডিও দেখা গেলো। বর-বউয়ের কবুল বলা, সাইন করা, পর্যায়ক্রমে মেহমানদের খেতে চলে যাওয়া৷ ভিডিওর শেষ পর্যায়ে দেখা গেলো আমাকে। নিজেকে স্ক্রিনে দেখতেই চোখ বড় হয়ে গেলো আমার, শুকনো ঢোক গিললাম আমি। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছি আমি কেউ আছে কি না তারপর নিরিবিলি পেয়ে নিজের শাড়ির কুচি ধরে হেটে চলছি। সামনে এগিয়ে যেতেই রায়হান ভাইয়াকে দেখে চোখ বড় করে তাকিয়ে সরে যেতে ধরলাম আমি। এরপরের ঘটনা তো সবার জানা। ঘটনাটি মনে হতেই লজ্জায় অসস্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। আর দেখতে পারবোনা আমি! ওই বাজে ঘটনা মনে করতে চাইনা আর!!

কিছুক্ষণ কোন আওয়াজ না পেয়ে আস্তে করে এক চোখ খুললাম আমি। ভিডিওটা বন্ধ হয়ে গেছে! বন্ধ স্ক্রিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পূর্ণ ভাইয়া। তার হাতে প্রিয়ার ফোন। মনে মনে ভাবলাম তবে কি তিনিই বন্ধ করে দিয়েছেন ভিডিওটা?

এতক্ষণে চারপাশে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। যেই আন্টিরা আমার নামে বাজে কথা বলেছিলেন উনারা নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। হয়তো এখন কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না! দাদিও থম মেরে বসে আছেন। প্রিয়া যে এমন ভিডিও দেখাবে তিনি আশা করেন নি তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। সবার রিয়েকশন দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম আমি। কেননা তাদের ভেতরের কুৎসিত মন তো ঠিকই দেখে ফেলেছি আমি।

আন্টি হঠাৎ এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন,

---আমি জানতাম তোর কোন দোষ নেই এখানে। তুই কখনোই এরকম হতেই পারিস না।

আন্টির কথা শুনে চুপচাপ চেয়ে রইলাম আমি। তাদের সবার প্রতি আমার চাপা অভিমান যেন আমাকে তাদের সাথে পুনরায় সহজ হতে দিচ্ছেনা। একটু পরেই কুৎসা রটনাকারী দুই আন্টির একজন নিজেদের পক্ষে বলে উঠলেন,

---মানছি ওটা একটা দূর্ঘটনা ছিলো। তবে এই ক্ষেত্রে আমাদেরকেও দোষ দেওয়া যাবেনা। চোখের সামনে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েকে এমন আপত্তিকর পরিস্থিতিতে দেখলে যেকেউই অন্যকিছু ভাববে...

---তাই বলে না জেনে শুনে একজনের নামে এইরকম মিথ্যা অপবাদ দিতে আপনাদের বিবেকে বাধলো না? লাইক সিরিয়াসলি? আপনার নিজের মেয়ে হলে এমনটা করতে পারতেন?

আন্টির কথা শেষ না হতেই পূর্ণ ভাইয়ার গম্ভীর পুরুষালি আওয়াজে আমি সহ থমকে উঠলো পুরো ঘর। ভয়ে চুপ মেরে গেলেন সেই আন্টিটা। কিছু বলার সাহস পেলেননা নাকি ভাষা পেলেন না, সেটা ঠিক বুঝলাম না আমি। তবে তাকে চুপ করতে দেখে পাশের আন্টিটা বলে উঠলেন,

---একি বাসায় একসাথে সম্পর্কহীন দুই ছেলেমেয়ে বড় হলে তাদের মধ্যে যে কিছু থাকবেনা এটা ভাবাও কি অস্বাভাবিক বলো? তাই আমরা এমন কিছু ভাবলে ভুল কোথায় এখানে?

আন্টির কথা শুনে রাগে-ঘিন্নায় কুচকে গেলো আমার মুখ। মানুষের চিন্তাভাবনা এতটা নিচে কিভাবে হয়? একটু পরেই আবার পূর্ণ ভাইয়ার আওয়াজে মুখ তুলে তাকালাম আমি।

---তাহলে আপনার কথামতে তো তাহলে এক ছাদের নিচে ছেলেমেয়ে থাকাই যাবেনা। থাকলেই তাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যাবে নাকি? একটু পর উনি থেমে বললেন, তবে সেটা বড় কথা না। আসল কথা হচ্ছে যে একটা মানুষ ধাক্কা লেগে আরেকজনের উপর পড়তেই পারে। এটা নিয়ে এমন কাহিনি করার কোন মানে হয়? হাউ রিডিকিউলাস!

---ঠিকই বলেছো ভাইয়া। আমার তো ভাবতেও অদ্ভুত লাগছে। কতটা লজিকবিহীন অপবাদ!
পূর্ণ ভাইয়ার কথায় সায় দিয়ে উঠলেন প্রান্ত ভাইয়া।

এদিকে তাদের দুই ভাইয়ের কথা শুনে দুই নাম্বার আন্টিটাও আর কিছু বলতে পারলেন না। মুখ কালো করে চেয়ে রইলেন। অন্যদিকে দাদি চারদিক চেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠলেন,

---হয়েছে এখন, থামো সবাই। এসব হইচই-ঝগড়াঝাটি বিয়েবাড়িতে হইতেই থাকবো। এগুলা কোন ব্যাপার নাহ। কেউ কিচ্ছু মনে করেনি। তাইনা রায়হান,তুরফা?

দাদি আমাদের দিক চেয়ে থাকলেও আমি কোন জবাব দিলাম না। একিভাবে রায়হান ভাইয়াও দেখি চুপ হয়ে আছেন, তার মুখ দিয়েও কোন কথা বের হচ্ছেনা। হয়তো ঘটনার গাম্ভীর্যে আমার মতোই হতভম্ব হয়ে গেছেন তিনিও! যাই হোক, আমার ও রায়হান ভাইয়ার কাছে থেকে কোন জবাব না পেয়েও দাদি গায়ে মাখলেন না ব্যাপারটা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সবাইকে বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে তাড়া দিতে লাগলেন যেন এতক্ষণ কিছুই ঘটেনি বাসায়! একজন মানুষ এতটা স্বার্থপর কিভাবে হয় আমি বুঝলাম নাহ!

___________

ড্রয়িংরুম থেকে আস্তেধীরে বের হয়ে রাইসার রুমে চলে গেলাম আমি। কারণ ওখানে রাইসার সাথে প্রিয়াও আছে। আমার উদ্দেশ্য ওকে থ্যাংকস বলা। রুমে ঢুকতেই দেখি রাইসা ও প্রিয়া কথা বলছে। আমাকে ঢুকতে দেখে চুপ হয়ে গেলো ওরা। আমি মলিন হেসে বিছানায় গিয়ে বসলাম ওদের পাশে।

---থ্যাংক ইউ, প্রিয়া। আজ তোমার জন্য মানুষের সামনে আমার নির্দোষিতা প্রমাণ হয়েছে।
আস্তে করে বললাম। আমার কথায় প্রিয়া মুচকি হেসে ওয়েলকাম বললো। কিছুক্ষণ পর নিরবতা কাটিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,

---ভিডিও ক্রেডিট আমার হলেও ধন্যবাদটা কিন্তু বড় ভাইয়ার প্রাপ্য আপু। আমি তাকে ভিডিওটা দেখানোর পর আমাকে সবার সামনে কথা বলার সাহস ও-ই দিয়েছে আর এসব প্ল্যান-সেটাপ বড় ভাইয়াই করেছে আমাদের তিনজনকে নিয়ে!

প্রিয়ার কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি! দেখলাম ওর কথায় মাথা নাড়লো রাইসা। অর্থাৎ ও আর প্রান্ত ভাইয়াও এর মাঝে শামিল ছিলো?

মুহুর্তের মধ্যেই যেন চোখ অস্পষ্ট হয়ে আসলো আমার। পূর্ণ ভাইয়া আমার জন্য এতকিছু করলেন আর আমি জানলামও না? ওই রাগী-গম্ভীর লোকটার প্রতি হঠাৎ করেই শ্রদ্ধা ও সম্মানে ভরে উঠলো মন। যেখানে আমার এতদিনের সম্পর্কের মানুষগুলোই আমার উপর বিশ্বাস করলো না, আমার পক্ষে একটা কথা বলার সাহস পেলোনা সেখানে উনি মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে আমার জন্য এই কাজটি করলেন! সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত। কখন কোন মানুষ এসে জীবনে কোন ভূমিকা রাখে কেউ ভাবতেও পারেনা!!

মনে মনে কৃতজ্ঞ হয়ে ভাবলাম উনাকে ভদ্রতার খাতিরে হলেও সরাসরি একবার ধন্যবাদ জানানো উচিত আমার। পরক্ষনে মনে হলো, উনার সামনে গেলেই যেখানে আমার মনের মধ্যে ভয়ের উথাল-পাতাল ঢেউ সৃষ্টি হয়, সেখানে তাকে নিজ থেকে ধন্যবাদ কিভাবে দিবো? ভ্রু কুচকে বসে বসে ভাবতে লাগলাম আমি।

চলবে

কেমন লেগেছে লেখিকাকে জানাতে ভুলবেন না।

Address


Telephone

+8801733017639

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when FeeL OKay? posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to FeeL OKay?:

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Telephone
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share