সাহিত্যজগতের কাল পরিক্রমার সাথে ‘বিবর্তন’ শব্দটি যথেষ্টই মানানসই। কারণ, সাহিত্য কখনোই কাল নিরপেক্ষ নয়। এক এক সময়ের ভিন্ন ভিন্ন প্রক্ষোপট সাহিত্যচেতনার সাথে সাথে পরিবর্তন এনে দেয় সাহিত্য-আঙ্গিকেরও। এক অর্থে বলা যেতে পারে, কালিক প্রক্ষোপটই সাহিত্যের চলার পথ নির্দিষ্ট করে দেয়। আর এ কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ সাহিত্যিকের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির পাঠক তৈরি হয
়। অত্যন্ত মননশীল পাঠক রবীন্দ্র-সাহিত্য, অপেক্ষাকৃত আস্বাদপ্রিয় পাঠক শরৎ-সাহিত্য, আধুনিকমনা চিন্তাশীল পাঠক জীবনানন্দ পড়তে বেশি পছন্দ করেন। কালিক সীমার মধ্যে আবর্তিত সাহিত্য-পরিমণ্ডল তার দিক পরিবর্তন করেছে নানা ভাবে। সময়ের বির্বতনের সাথে সাথে সাহিত্যধারায় যে প্রত্যাশিত বা অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, সেক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই, বিশেষত বিগত শতকে বিভিন্ন সাহিত্য-পত্রিকা অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’, দীনেশরঞ্জন দাশ সম্পাদিত ‘কল্লোল’, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কালি-কলম’, বুদ্ধদেব বসু ও অজিত কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘প্রগতি’, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’, বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’এ রকম আরো বেশকিছু সাহিত্য পত্রিকা এ সময়ে বাংলা সাহিত্যধারায় আঙ্গিক ও গুণগত পরিবর্তন আনয়নে এবং নতুন লেখক সৃষ্টিতে বেশ প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। বলা বাহুল্য, বাংলা সাহিত্যের আদি-অন্তকালের শ্রেষ্ঠ পুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে, রবীন্দ্র-নজরুল বলয় ভেদ করে, আধুনিক ধারার বিশুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশ পর্যন্ত সকল লেখকই কোন না কোন ভাবে সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমেই তাঁদের সাহিত্যসত্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে চলিত গদ্য রীতির প্রবর্তন থেকে শুরু করে আধুনিক ধারার উদ্ভাবন ইত্যাদি নানান সময়োপযোগী সংযোজন এবং অত্যাবশ্যকীয় বিয়োজনে সাহিত্য পত্রিকার প্রচলন একটি সার্থক সাহিত্য-কার্যক্রম হিসেবে প্রমাণিত।
বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে, বিশেষত পূর্ব বাংলা ভূখন্ডের সাহিত্যক্ষেেত্র প্রচুর নতুন লেখক এবং অসংখ্য নতুন লেখা অত্যন্ত সহজলভ্য হলেও, উৎকৃষ্ট নবীন লেখকের অভাব সকল সাহিত্য-পাঠকের নিকটই স্পষ্ট এবং পীড়াদায়কও বটে। বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সংযোজন তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেেত্র পুরোনো ধারার সাহিত্যের প্রতিও অনেক নবীন সাহিত্যিকযশোপ্রার্থী যথাযথ সুবিচার করতে পারছেন না বলেই বোধ হয়। আর তাই, একটি উৎকৃষ্ট মানের সর্বজন-সৃজতি সাহিত্য পত্রিকার প্রয়োজনীয়তা এদেশের সাহিত্যক্ষেত্রে আজ অত্যন্ত ব্যাপক। এহেন পরিস্থিতিতে নতুন এবং উৎকৃষ্ট লেখক তৈরির পাশাপাশি উৎকৃষ্ট পাঠক তৈরিতেও সাহিত্যমনা সম্পাদনা পর্ষদ এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রকাশিত ‘মাসিক সুহৃদ’ পত্রিকাটি অনন্য ভুমিকা নিয়ে এদেশের সাহিত্যক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা রাখি।