29/06/2024
হাকালুকির চারিদিকে পানির থৈ থৈ-
বর্ষায় একমাত্র নৌকাই তাদের ভরসা
হাসান আল মাহমুদ রাজু: মৌলভীবাজার জেলার কুরাউড়া উপজেলায় হাকালুকি হাওরের চারিদিকে এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। বর্ষা আসলেই হাকালুকি হাওর পানিতে ভরে যায়। যা হাকালুকি পাড়ের মানুষের জন্য এক চরম দুর্ভোগ বয়ে আনে। হাকালুকি হাওরে বোরো মৌসুমের শেষের দিকে ধান ঘরে তোলার সময় টানা বৃষ্টি শুরু হয়। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানি এসে হাকালুকি হাওরে পতিত হয়। যার কারণে কৃষকরা সময়মতো ধান ঘরে তুলতে পারেন না যার জন্য তারা চরম বিপাকে পড়ে।
গত পবিত্র ঈদুল আজহার দিন থেকে টানা বৃষ্টির কারণে ও বিভিন্ন নদী ভাঙনের ফলে আজও হাকালুকি হাওরের চারিদিকে পানি রয়েছে। দুর্ভোগে এখনও স্থানীয় এলাকার মানুষগুলো। হাওরের সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নেয়, শিক্ষা প্রতিষ্টান এখনও পানির নিচে রয়েছে, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘিœত হচ্ছে। কোন রকমে এসকল রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। যার কারণে ওই হাওর পাড়ের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত তাদেরকে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। মনে হয়, নৌকাই তাদের একমাত্র শেষ ভরসা। হাকালুকি পাড়ের মানুষের জন্য বিশেষ করে এখন স্যানেটারি ল্যাট্রিন, বিশুদ্ধ খাবার পানীয়, রাস্তাঘাট মেরামত ও গো-খাদ্য অতীব প্রয়োজন। এখন বর্তমানে কুলাউড়ায় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। উপজেলার প্রায় ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি ও সামাজিক সংগঠন ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রান সহায়তা প্রদান করে আসছে। হাকালুকি হাওরে পানি থাকার কারণে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা এলকায় এখনও পানির নিচে রয়েছে। বিভিন্ন বাড়িতে ঘর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। এমনকি কুলাউড়া উপজেলা হাসপাতাল পানির নিচে রয়েছে। হাসপাতারে যাওয়ার জন্য সেখানে ভাসমান সেতু তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদে যাতায়াত করতে মানুষের বিঘœ ঘটছে। সেখানে ভ্যান ও নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
হাকালুকি হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা কোষা রানী, সাবিত্রী রানী, হাছনা বেগম, নজির মিয়া, বকুল মিয়া, তবুর মিয়া, কাজল আহমদ, ছাবুল আহমদ, শফিক আলী, নাইম মিয়া জানান, বর্ষার শুরুতেই আমাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো বোরো ধানের ফলন আমরা ঘরে তুলতে পারিনি। এমনকি এবার পবিত্র ঈদুল আজহাও আমরা ঠিকমতো উদযাপন করতে পারিনি। পানির জন্য আমাদের হাহাকারে পড়তে হয়েছে। আমাদের ঘরবাড়ি, গরু, ছাগল, মহিষ, ফসল সবকিছু পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা হাওরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছি। বিশুদ্ধ পানীয় অভাবের আমাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের দাবি এ হাকালুকি হাওরের পানি দ্রæত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে আমরা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মো. মাহবুবুল হাসান জসিম বলেন, বোরো ধান ঘরে তোলার সময়ে শুরু হয় বৃষ্টি। যার কারণে হাকালুকি হাওড়ের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেন নি। ২০২২ সালের বন্যার পরে এবার ২০২৪ সালের কুলাউড়ায় আগাম বন্যার কারণে আজ হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। এখন পর্যন্ত হাওরের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি রেখে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে গো-খাদ্য ও রাস্তাঘাট, কালভার্ট অতি দ্রæত সংস্কার করা এবং বিভিন্ন খাল খনন করা অতীব জরুরী বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাকালুকি হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। হাকালুকি হাওর ভরে যাওয়ার কারণে ও ফেঞ্চুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত বুড়িকেয়ারি বাঁধের কারণে পানি উপচে এর আশপাশের এলাকায় ঢুকে যায়। যার কারণে হাকালুকি হাওরের মানুষ দুর্ভোগে পড়তে হয়। হাকালুকি হাওরে খাল খনন করলে পানি নিষ্কাশন দ্রæত হবে যার ফলে হাওরের উপচে পড়া পানি দ্বারা এলাকার কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। হাকালুকি হাওরের বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়ে গেছে ফলে হাকালুকি হাওরের ধারণক্ষমতা কমে গেছে অর্ধেকের বেশি। পানি কমলে রাস্তাঘাট, কালভার্ট, স্যানিটেশন এর ব্যবস্থা করা হবে এবং ইতিমধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও পানিবন্দি এলাকায় ঘরে ঘরে ত্রান পৌঁছে দিচ্ছি।