10/02/2024
সত্য ও ন্যায়ের কলম সৈনিক
শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দীন
সৈয়দ আলী হাকিম
জন্ম ও বংশ পরিচয় : শেখ বেলাল উদ্দীন খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সুগন্ধি নামক গ্রামে নানা বাড়িতে ১৯৫৭ সালের ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম আলহাজ¦ শেখ মোদাচ্ছের আলী, মাতা আলহাজ্ব মনুজান নেছা। চার ভাই-পাঁচ বোনের মধ্যে শেখ বেলাল উদ্দীন ছিলেন সবার বড়। শিক্ষাজীবন : খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানাধীন রায়ের মহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৭২ সালে সেখান থেকে এস এস সি পাস করেন। ১৯৭৪ সালে দৌলতপুর দিবানৈশ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। খুলনা বি এল কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করেন।
কর্ম জীবন : অনার্স পাস করে তিনি খুলনা ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার খুলনা ব্যুরো প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সমাজ কর্ম : মানুষের সেবা করাই ছিল শেখ বেলাল উদ্দীন এর ব্রত। নানা ভাবে নানা উপায়ে মানুষের কল্যাণে তিনি কাজ করতেন। সাংবাদিক হিসেবে কলম কালি কাগজ দিয়ে যেমন মানুষের সুখ দুঃখের সাথে ছিলেন তেমনি ব্যক্তিগত সময়, অর্থ ও কর্ম দিয়েও তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন। জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুড়ি আসর’ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ছিলেন। আমৃত্যু খুলনা সংস্কৃতি কেন্দ্রের সভাপতি ছিলেন। একাধিকবার খুলনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক ও দুই সেশন সভাপতি ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবন : ১৯৮৩-৮৪ ও ১৯৮৬-৮৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় বায়তুলমাল সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।
বৈবাহিক ও পারিবারিক জীবন : স্ত্রী অধ্যাপিকা তানজিলা খাতুন। তার কোন সন্তান ছিলো না।
শাহাদাৎবরণ : ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখ রাত ৯টার দিকে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে তার মোটর সাইকেলে দুষ্কৃতকারীদের রেখে দেয়া রিমোট কন্ট্রোল বোমা বিস্ফোরণে সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দীন এর ডান হাতের কবজি উড়ে যায় এবং সমস্ত শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। পাঁচদিন চিকিৎসার পর ২০০৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি (১ মহররম) শুক্রবার রাত ১০টায় সি এম এইচ-এ শাহাদাৎ বরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সাংবাদিক বেলাল উদ্দীনকে হত্যার দায় স্বীকার করে একটি হাতচিঠিতে বিবৃতি দেয় মাওবাদী পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি। (সূত্র :-দৈনিক নয়াদিগন্ত ১২/০২/২০০৫) তবে এই সংবাদ এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
দাফন : ঢাকা সি এম এইচ-এ শাহাদাতের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শেখ বেলাল উদ্দীন-এর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে তাঁর কফিন খুলনা সার্কিট হাউজে নিয়ে আসা হয়। খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে তাঁর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হঢ। জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। সার্কিট হাউজ ময়দানে জানাজা শেষে খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানার অন্তর্গত রায়ের মহল হাফেজিয়া মাদরাসা ও মসজিদে নেয়া হয়। সেখানে আসর নামাজের পর তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর পৈতৃক বাড়ি ‘আল্লাহর দান মঞ্জিল’ এর নিকটবর্তী স্থানে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
বিভিন্ন মহলের শোক ও প্রতিবাদ : সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দীন বোমা হামলায় আগত ও নিহত হওয়ার পর দেশব্যাপী সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ ও শোক প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, স্পিকার ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার, ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, শিল্প মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ মন্ত্রীপরিষদ এর সদস্যবর্গ, বিএনপি, আওওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, আল ফারুক সোসাইটি, সিডিপি, রূপান্তর, খুলনা ে জিলা স্কুল, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, খুলনা সংস্কৃতি কেন্দ্র, রিকশা মালিক সমিতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ, আলীজ একাডেমী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গবেষণা পরিষদ, খুলনা সাহিত্য পরিষদসহ দেশের সকল কবি সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ, রায়ের মহলের প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়, খুলনা প্রেসক্লাব, মেট্রোপলিন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনা, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনসহ বাংলাদেশের সকল প্রেসক্লাব।
শহীদ শেখ বেলাল উদ্দীন এর শাহাদাতের পর জি এম হায়দার আলীকে সভাপতি ও অধ্যাপক শামসুদ্দিন দোহাকে সাধারণ সম্পাদক করে শহীদ শেখ বেলাল উদ্দীন ফাউন্ডেশন নামে খুলনায় একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।
আরো কিছু কথা : শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দীন মানুষের সাথে প্রাণখুলে মিশতেন, আড্ডা দিতেন ।
সখ : ইসলামী বই পুস্তক পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, আজান দেয়া, ইসলামী সাহিত্য ও সংগীত চর্চা। তাঁর প্রিয় ইসলামী সংগীত ছিল,‘ঝড় যদি ওঠে মাঝ দরিয়ায় ভয় করি না তাতে, রক্তে মশালও জ্বেলে’। শিশু-কিশোর বয়সে ঘুড়ি উড়ানো, ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ ছিলো। ক্যারাম, দাবা, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টনও খেলতেন। তিনি নিয়মিত দেশি- বিদেশী সংবাদ শুনতেন এবং দেখতেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে আমার দোয়া তিনি যেন শহীদ শেখ বেলাল উদ্দীন এর জীবনের সকল প্রকার কবীরা ও ছগীরা গোনাহ্ মাফ করে দিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস এর মেহমান হিসাবে কবুল করেন। আমীন।। #