Dhamma Media

Dhamma Media জগতে সকল প্রানী সুখী হোক!!।

নিন্দা-সমালোচনা সহ্য করতে না পারলে কোন মহৎ কাজে সফল হওয়া যায় না। মানুষ ফলবান বৃক্ষকেই বেশী ঢিলছুড়ে, আঘাত করে, চাষ করে ফস...
25/09/2023

নিন্দা-সমালোচনা সহ্য করতে না পারলে কোন মহৎ কাজে সফল হওয়া যায় না। মানুষ ফলবান বৃক্ষকেই বেশী ঢিলছুড়ে, আঘাত করে, চাষ করে ফসল ফলাতেই মাটি কাটা, মাটি খুঁড়া প্রয়োজন। তাই বলে গাছ আর পৃথিবীর কি ক্ষতি হয়? জগতে নিন্দা-প্রশংসা, যশ-অযশ, লাভ-অলাভ, সুখ-দুঃখ এই অষ্টলোকধর্ম বিদ্যমান। একমাত্র নিন্দিত বা প্রশংসিত অতীতেও ছিলোনা, বর্তমানেও নেই ভবিষ্যতেও থাকবেনা। বুদ্ধ বলেছেন-"ফুট্ঠস্স লোক ধম্মেহি চিত্তং যস্সনা কম্পতি, অসোকং বিরজং খেমং এতং মঙ্গলমুত্তমং"। প্রকৃত বৌদ্ধ বা বুদ্ধের অনুসারী হলে জ্ঞানী হলে বুঝবে, অজ্ঞান মুর্খদের জন্য বুদ্ধধর্ম প্রযোজ্য নয়। বুদ্ধের ধর্ম জ্ঞানের ধর্ম, জ্ঞানীর ধর্ম। এ ধর্মের মর্মার্থ সাধারনের বোধগম্য নহে। বুদ্ধের ধর্ম জানতে হলে, বুঝতে হলে অসাধারন হও। ধর্ম শ্রবন কর, আচরন কর, প্রতিপালন কর, এস, দেখ, জান বুঝ। তারপরই সম্ভব হলে অপরের নিকট প্রচার কর। জ্ঞানী হও, জ্ঞান প্রাপ্তিতেই সুখ, জ্ঞান প্রাপ্তিতেই মুক্তি লাভ।

▪︎ বৌদ্ধরত্ন নন্দপাল মহাস্থবির

বৌদ্ধরা কেন সকল প্রাণীর উদ্দেশ্যে পুণ্য বিতরণ করেন এবং কখন থেকে এটি শুরু হয়েছিল? এক সময় ভগবান বুদ্ধ যখন শ্রাবস্তী নগরে ...
13/09/2023

বৌদ্ধরা কেন সকল প্রাণীর উদ্দেশ্যে পুণ্য বিতরণ করেন এবং কখন থেকে এটি শুরু হয়েছিল?

এক সময় ভগবান বুদ্ধ যখন শ্রাবস্তী নগরে জেতবন বিহারে অবস্থান করিতেছেন তখন তাবতিংস স্বর্গে চারটি প্রশ্ন নিয়ে দেবগণের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয় এবং এই চারটি প্রশ্ন নিয়ে দেবরাজ চক্ক( ইন্দ্র) তথাগত সমীপে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করে বললেন।
ভগবান: .....
১.দানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দান কি?
2.রসের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ রস কি?
৩.আনন্দের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ কি?
৪.এবং তৃষ্ণা নিরোধকে কেন সবচেয়ে উত্তম এবং পরম সুখ বলা হয়?

দেবরাজ চক্ক: ........
১. দানের মধ্যে যতগুলো দান আছে ধর্ম দান হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ দান.
২.রসের মধ্যে যতগুলো রস আছে ধর্ম রস হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ রস.
৩.আনন্দের মধ্যে যতগুলো আনন্দ আছে ধর্মানন্দ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ.
৪.উওম এবং সূখের মধ্যে তৃষ্ণা নিরোধই ( সর্ব পাপ বিনাস অরহও ফল) সর্বোত্তম এবং পরম সুখ(নির্বাণ).

(পালি)
ধম্ম দনাং সব্বাই দনাং জিনাতী
সব্ব রসং ধম্ম রসং জিনাতী
সব্বরাতিম্ ধম্মররাতি জিনিতী
তন্হাকায়ো সব্ব দূক্কাম্ জিনাতী

ধর্ম দেশনা শেষান্তে দেবরাজ ইন্দ্র তথাগত ভগবানকে কহিলেন যদি ধর্ম দান ,রস, আনন্দ, তৃষ্ণা ক্ষয় এত সর্বশ্রেষ্ঠ তাহলে আমরা এই পূণ্য ফলকে সকল প্রাণীকে বিতরণ করি না কেন?
দেবরাজ ইন্দ্র ভগবানের কাছে প্রার্থনা করিলেন!
হে ভগবান আজকে থেকে যতগুলো কুশল কর্ম সম্পাদন করা হয় সেই কুশল ধর্ম আমাদেরকে এবং সকল প্রাণীর উদ্দেশ্যে পূণ্য বিতরণ করুন।
ভগবান বুদ্ধ শিষ্য সংঘকে ডেকে বললেন হে ভিক্ষুগন আজ থেকে তোমরা যতগুলো পূণ্য সঞ্চয় করেছ এবং করবে সেই সকল পূণ্য ৩১ লোকভূমিতে যত প্রাণী আছেন সকল প্রাণীর উদ্দেশ্যে পুণ্য দান করুন ..
দেবরাজ ইন্দ্র পূণ্য অনুমোদন করে সাধুবাদ প্রদান করিলেন
তখন থেকেই শুরু হয় সকল প্রাণীর উদ্দেশ্য পুণ্য দান (ধর্ম দান)
সাধু সাধু সাধু

""জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক""
সবাই সাধুবাদ দিয়ে পুণ্য অনুমোদন করুন।

পূণ্যকর্মে হিংসা নিন্দা বা অন্তরায় সৃষ্টিকারী এজন্মসহ জন্ম জন্মান্তর পূণ্যলাভ হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে। তাই ঐ ধরণের পাপীকে মৌ...
07/09/2023

পূণ্যকর্মে হিংসা নিন্দা বা অন্তরায় সৃষ্টিকারী এজন্মসহ জন্ম জন্মান্তর পূণ্যলাভ হতে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
তাই ঐ ধরণের পাপীকে মৌখিক সমর্থনও দিবে না।
কারণ কর্মফল সমর্থনকারীকেও ক্ষমা করবে না।

বুদ্ধ অনুশাসন বুদ্ধকে  বন্দনা বা উপাসনাঃত্রিপিটক পালি সাহিত্যে আছে যদি কোনও বুদ্ধ কল্পকাল পর্যন্ত উনার বুদ্ধ গুণের কথা ব...
24/09/2022

বুদ্ধ অনুশাসন বুদ্ধকে বন্দনা বা উপাসনাঃ

ত্রিপিটক পালি সাহিত্যে আছে যদি কোনও বুদ্ধ কল্পকাল পর্যন্ত উনার বুদ্ধ গুণের কথা ব্যাখ্যা করেন, সুদীর্ঘ কাল পরে সেই কল্পকাল বিনাশ হবে, তথাপি সেই বুদ্ধ গুণের কথা শেষ হবে না। আমরা সেই বুদ্ধকে বন্দনা বা উপাসনা করার অর্থ এই যে এই মহাকারুণিকের অনন্ত অনন্ত গুণাবলী নিজের মধ্যে আনয়ন করিবার জন্য এই মহীয়ান মহামানবের আদর্শকে নিজের চিত্তের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বুদ্ধকে বন্দনা বা উপাসনা করে থাকি।

আমরা বুদ্ধকে বন্দনা করিবার সময় নিজের মনোবৃত্তিকে এমনভাবে ডিমের কুসুমের মতো গঠন করতে হয়, বন্দনাটির শব্দের সহিত নিজের মনের সংযোগ থাকতে হয়। যেন প্রতিটি শব্দের অর্থ নিজে গ্রহণ করিবার জন্য চেষ্টা করিতে হয় । বন্দনাটির শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ বুঝিতে না পারিলে নিজের মন দিয়া তাহা পূর্ণ করিয়া লইতে হয়। আমরা বুদ্ধকে বন্দনা করি বা নাই বা করি তাতে বুদ্ধের কিছু যায় আসে না। তবে এই কথা মনে রাখতে হবে যে আমরা যারা রীতিমতো বুদ্ধকে বন্দনা বা উপাসনা করি, ইহাতে বুদ্ধের কিছু লাভ নেই।

তবে এই কথা সত্য যে ইহাতে যারা বন্দনা করে একমাত্র উপাসকের লাভ। যদি এইরূপ চেতনা সহকারে না করে, মর্মে মর্মে উপলব্ধি না করে বা বন্দনার প্রতিটি শব্দ হৃদয়ঙ্গম না করে বুদ্ধকে বন্দনা করে থাকে তার এই জাগতিক জীবনের বন্দনাটি নিরর্থক। এটাই বুদ্ধমতে সত্য বাণী। কাজেই আপনারা সকলেই বন্দনা করিবার সময় উপরের উল্লেখিত কথাগুলো স্মরণ করে, অতীব যত্ন সহকারে বুদ্ধকে বন্দনা করে যার যার জীবনকে সার্থক করে তোলুন।

লিখেছেনঃ প্রদীপ বড়ুয়া

মানবতার জয় হউক🙏চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নি দগ্ধ ও বিস্ফোরণে হতাহতদের সহযোগিতায় ঔষুধসহ নানা প্রয়োজনীয়...
08/06/2022

মানবতার জয় হউক🙏

চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নি দগ্ধ ও বিস্ফোরণে হতাহতদের সহযোগিতায় ঔষুধসহ নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক ভাবে এগিয়ে এসেছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

চার নিমিত্ত দর্শনরম্য, সুরম্য ও শুভ—এই তিনটি প্রাসাদে ঋতুভেদে পালাক্রমে অবস্থান করে চল্লিশ হাজার নর্তকী-পরিবৃতা হয়ে ভদ্র...
08/06/2022

চার নিমিত্ত দর্শন

রম্য, সুরম্য ও শুভ—এই তিনটি প্রাসাদে ঋতুভেদে পালাক্রমে অবস্থান করে চল্লিশ হাজার নর্তকী-পরিবৃতা হয়ে ভদ্রকাঞ্চনা যশোধরা বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে সিদ্ধার্থের মনোরঞ্জন করতে লাগলেন। এভাবে ক্রমে উনত্রিশ বছরে পদার্পণ করলে সিদ্ধার্থ একদিন নগর ভ্রমণে অভিলাষী হলেন।
তাই তিনি সারথি ছন্দককে ডেকে বললেন, ‘বন্ধু ছন্দক, উত্তম উত্তম যান প্রস্তুত করো, উদ্যানভূমি দেখতে যাব।’
‘দেব, ঠিক আছে’ বলে সারথি সিদ্ধার্থকে প্রত্যুত্তর দিয়ে উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট যানগুলো প্রস্তুত করে সিদ্ধার্থের কাছে জানাল, ‘দেব, আপনার জন্য যান প্রস্তুত, এখন আপনার যেরূপ অভিরুচি।’
তারপর সিদ্ধার্থ উৎকৃষ্ট যানে উঠে রাজবাড়ি হতে বের হলেন।

১. জরা : সিদ্ধার্থ উদ্যানভূমিতে যাবার সময় দাঁতভাঙা, চুল পাকা, ভাঙা শরীরবিশিষ্ট একজন মানুষকে যেতে দেখলেন। মানুষটি ছিল বুড়ো, তার যৌবন চলে গেছে, পিঠ বাঁকা হয়ে গেছে, হাতে একটি লাঠি নিয়ে কম্পমান অবস্থায় চলছে। এটা দেখে তিনি ছন্দককে বললেন, ‘হে ছন্দক, এটা কীরকম মানুষ? তার চুল অন্যের মতো নয়, শরীরটাও অন্যের মতো নয়।’
‘দেব, এটা বুড়ো মানুষ।’
‘ছন্দক, বুড়ো মানুষ কীরকম?’
‘দেব, এই হচ্ছে বুড়ো মানুষ। সে আর বেশি দিন বাঁচবে না।’
‘ছন্দক, আমিও কি বুড়ো হবো? এটা কি আমারও অনিবার্য নিয়তি?’
‘দেব, আপনি, আমি এবং সবাই বুড়ো হবো, এটা আমাদের অনিবার্য নিয়তি।’
ছন্দক, তা হলে আজ আর উদ্যানে যাবার প্রয়োজন নেই, এখান হতেই রাজবাড়িতে ফিরে যাও।’
‘দেব, ঠিক আছে’ এ কথা বলে সিদ্ধার্থকে রাজবাড়িতে নিয়ে গেলেন। সিদ্ধার্থ রাজবাড়িতে গিয়ে দুঃখগ্রস্ত হয়ে ও মন খারাপ করে চিন্তা করতে লাগলেন, ‘জন্মকে ধিক্কার দিই, যেহেতু যে জন্মেছে সে বুড়ো হবে।’
তারপর রাজা শুদ্ধোদন ছন্দককে ডেকে বললেন, ‘ছন্দক, কুমার উদ্যানভ্রমণ উপভোগ করেছেন তো? উদ্যানভূমি কুমারের প্রীতিকর হয়েছে তো?’
‘দেব, কুমার উদ্যানভ্রমণ উপভোগ করেননি, উদ্যানভূমি তাঁর প্রীতিকর হয়নি।’
‘ছন্দক, কুমার উদ্যানে যাবার সময় কী দেখেছিলেন?’
দেব, কুমার উদ্যানে যাবার সময় দাঁতভাঙা, চুল পাকা, ভাঙা শরীরবিশিষ্ট এক বুড়ো, পিঠ বাঁকা, নত, হাতে লাঠি, কম্পমান, রুগ্‌ণ, যৌবন চলে যাওয়া এমন মানুষ দেখেছিলেন। সেটা দেখে তিনি আমাকে এরূপ বলেছিলেন, “ছন্দক, এটা কীরূপ মানুষ? এর চুল অন্যের মতো নয়, দেহও অন্যের মতো নয়।” “দেব, এটা বুড়ো মানুষ।” “ছন্দক, বুড়ো মানুষ কীরকম?” “দেব, এটাই বুড়ো মানুষ-মানুষটি আর বেশি দিন বাঁচবে না।” “ছন্দক, আমিও কী বুড়ো হবো? এটা কি আমার অনিবার্য নিয়তি?” “দেব আপনি, আমি এবং সবাই বুড়ো হবো, এটা আমাদের অনিবার্য নিয়তি।” “ছন্দক, তা হলে আজ আর উদ্যানে যাবার প্রয়োজন নেই, এখান হতেই রাজবাড়িতে ফিরে যাও।” “দেব, ঠিক আছে” এই কথা বলে আমি কুমারকে রাজবাড়িতে নিয়ে গেলাম।’ কুমার রাজবাড়িতে গিয়ে দুঃখগ্রস্ত হয়ে ও মন খারাপ করে চিন্তা করতে লাগলেন, ‘জন্মকে ধিক্কার দিই, যেহেতু যে জন্মগ্রহণ করেছে সে বুড়ো হবে।’
তখন রাজা শুদ্ধোদন এরূপ চিন্তা করলেন, ‘সিদ্ধার্থ রাজত্ব করবেন না এরূপ যেন না হয়, তিনি গৃহত্যাগ করে গৃহহীন প্রব্রজ্যা-আশ্রয় করবেন এরূপ যেন না হয়, জ্যোতিষী ব্রাহ্মণদের কথা যেন সত্য না হয়।’
এরপর রাজা শুদ্ধোদন সিদ্ধার্থকে বেশি করে সব ভোগের ব্যবস্থা করলেন, যাতে কুমার রাজ্যভোগ করেন, গৃহত্যাগ করে গৃহহীন প্রব্রজ্যা-আশ্রয় না করেন, যাতে জ্যোতিষী ব্রাহ্মণদের কথা মিথ্যে হয়। এভাবে সিদ্ধার্থ সর্বভোগের আনন্দে ব্যাপৃত রইলেন।
এর পর, সিদ্ধার্থ আবার একদিন ছন্দককে বললেন, ‘বন্ধু ছন্দক, উত্তম উত্তম যান প্রস্তুত করো, উদ্যানভূমি দেখতে যাব।
‘দেব, ঠিক আছে’ এই বলে ছন্দক সিদ্ধার্থকে প্রত্যুত্তর দিয়ে উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট যান প্রস্তুত করে সিদ্ধার্থকে জানাল, ‘দেব, আপনার জন্য যান প্রস্তুত, এখন আপনার যেরূপ অভিরুচি।’
তারপর সিদ্ধার্থ উৎকৃষ্ট যানে উঠে রাজবাড়ি হতে বের হলেন।

২. ব্যাধিগ্রস্ত : ‘এর পর, সিদ্ধার্থ উদ্যানভূমিতে যাওয়ার সময় একজন মানুষকে দেখলেন, মানুষটি পীড়িত, আর্ত, কঠিন রোগগ্রস্ত, নিজের মলমূত্রের মধ্যে শায়িত, উঠতে-শুতে অপরের সাহায্যাপেক্ষী। এই দৃশ্য দেখে কুমার ছন্দককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বন্ধু ছন্দক, এই মানুষটি কী করেছে? এর চোখও অন্যের চোখের মতো নয়, স্বরও অন্যের স্বরের মতো নয়।’
‘দেব, মানুষটি ব্যাধিগ্রস্ত।’
‘ছন্দক, ব্যাধিগ্রস্ত কাকে বলে?’
‘দেব, যে রোগে সে আক্রান্ত, ওই রোগ হতে তার অব্যাহতির সম্ভাবনা অতি সামান্য।’
ছন্দক, আমিও কি ব্যাধির অধীন? আমিও কি ব্যাধির অতীত নই?’
‘দেব, আপনি, আমি এবং আমরা সবাই ব্যাধির অধীন, আমরা ব্যাধির অতীত নই।’
‘তা হলে, বন্ধু ছন্দক, আজ আর উদ্যানে যাবার প্রয়োজন নেই, এখান হতেই রাজবাড়িতে ফিরে যাও।’
‘দেব, ঠিক আছে’—এ কথা বলে ছন্দক ফিরে গেল। সিদ্ধার্থ রাজবাড়িতে গিয়ে দুঃখগ্রস্ত হয়ে ও মন খারাপ করে চিন্তা করতে লাগলেন, ‘এই জন্মকে ধিক্কার দিই, যেহেতু যে জন্মগ্রহণ করেছে সে রোগগ্রস্ত হবে।’
তারপর রাজা শুদ্ধোদন ছন্দককে ডেকে বললেন, ‘ছন্দক, কুমার উদ্যানভ্রমণ উপভোগ করেছেন তো? উদ্যানভূমি কুমারের প্রীতিকর হয়েছে তো?’
‘দেব, কুমার উদ্যানভ্রমণ উপভোগ করেননি, উদ্যানভূমি তাঁর প্রীতিকর হয়নি।’
‘ছন্দক, কুমার উদ্যানে যাবার পথে কী দেখেছিলেন?’
‘দেব, কুমার উদ্যানে যাবার সময় একজন মানুষকে দেখেছিলেন, মানুষটি পীড়িত, আর্ত, কঠিন রোগগ্রস্ত, নিজের মলমূত্রের মধ্যে শায়িত, উঠতে-শুতে অপরের সাহায্যাপেক্ষী। এই দৃশ্য দেখে কুমার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ছন্দক, এ মানুষটি কী করেছে? এর চোখও অন্যের চোখের মতো নয়।” “দেব, মানুষটি ব্যাধিগ্রস্ত।” “ছন্দক, ব্যাধিগ্রস্ত কাকে বলে?” “দেব, যে-রোগে সে আক্রান্ত, সেই রোগ থেকে তার অব্যাহতির সম্ভাবনা অতি সামান্য।” “ছন্দক, আমিও কি ব্যাধির অধীন? আমিও কি ব্যাধির অতীত নই?” “দেব, আপনি, আমি এবং আমরা সবাই ব্যাধির অধীন, আমরা ব্যাধির অতীত নই।” “তা হলে, বন্ধু ছন্দক, আজ আর উদ্যানে যাবার প্রয়োজন নেই। এখান হতেই রাজবাড়িতে ফিরে যাও।” আমি সম্মত হয়ে ফিরে আসলাম।’ কুমার রাজবাড়িতে গিয়ে দুঃখগ্রস্ত হয়ে ও মন খারাপ করে চিন্তা করতে লাগলেন, ‘এই জন্মকে ধিক্কার দিই, যেহেতু যে জন্মগ্রহণ করেছে সে রোগগ্রস্ত হবে।’
তখন রাজা শুদ্ধোদন এরূপ চিন্তা করলেন, ‘সিদ্ধার্থ রাজত্ব করবেন না এরূপ যেন না হয়, তিনি গৃহত্যাগ করে গৃহহীন প্রব্রজ্যা-আশ্রয় করবেন এরূপ যেন না হয়, জ্যোতিষী ব্রাহ্মণদের কথা যেন সত্য না হয়।’
এরপর রাজা শুদ্ধোদন সিদ্ধার্থকে আরও বেশি করে সমস্ত ভোগের ব্যবস্থা করলেন, যাতে কুমার রাজ্যভোগ করেন, গৃহত্যাগ করে গৃহহীন প্রব্রজ্যা-আশ্রয় না করেন, যাতে জ্যোতিষী ব্রাহ্মণদের কথা মিথ্যে হয়। এভাবে সিদ্ধার্থ সর্বভোগের আনন্দে ব্যাপৃত রইলেন।
‘এর পর সিদ্ধার্থ আরও একদিন ছন্দককে বললেন, ‘বন্ধু ছন্দক, উত্তম উত্তম যান প্রস্তুত করো, উদ্যানভূমি দেখতে যাব।’
‘দেব, ঠিক আছে’—এ কথা বলে ছন্দক সিদ্ধার্থকে প্রত্যুত্তর দিয়ে উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট যান প্রস্তুত করে সিদ্ধার্থকে জানাল, ‘দেব, আপনার জন্য যান প্রস্তুত, এখন আপনার যেরূপ অভিরুচি।’
তারপর সিদ্ধার্থ উৎকৃষ্ট যানে উঠে রাজবাড়ি হতে বের হলেন।

৩. মৃত ব্যক্তি : সিদ্ধার্থ উদ্যানভূমিতে যাবার সময় দেখলেন, সম্মিলিত বড়ো জনসমাবেশ রং-বেরঙের কাপড়ের দ্বারা চিতা নির্মাণ করছে। সেটা দেখে তিনি ছন্দককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছন্দক, সম্মিলিত এই জনসমাবেশ রং-বেরঙের কাপড়ের দ্বারা কী নির্মাণ করছে?’
‘দেব, চিতা নির্মাণ করছে।
কীজন্য চিতা নির্মাণ করছে?
‘দেব, যেহেতু এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।’
‘তা হলে, ছন্দক, ওই মৃতের দিকে রথ চালাও।’
‘ঠিক আছে’—এ কথা বলে ছন্দক মৃতের দিকে রথ চালাল। সিদ্ধার্থ মৃতদেহ দেখলেন এবং ছন্দককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছন্দক, মৃত কাকে বলে?’
দেব, মৃতের মাতাপিতা অথবা অন্যান্য জ্ঞাতি কেউই আর তাকে দেখতে পাবে না। সে-ও মাতাপিতা অথবা অন্যান্য জ্ঞাতিকে আর দেখতে পাবে না।’
‘ছন্দক, আমিও কি মরণধর্মবিশিষ্ট? আমিও কি মরণের অতীত নই? আমাকেও কি রাজা, রানি অথবা অপরাপর জ্ঞাতিগণ আর দেখতে পাবে না? আমিও কি তাঁদের আর দেখতে পাব না?’
‘দেব, আপনি ও আমি এবং আমরা সবাই মরণধর্মযুক্ত, মরণের অতীত নই। আপনাকেও রাজা, রানি অথবা অপরাপর জ্ঞাতিগণ দেখতে পাবেন না, আপনিও তাঁদের দেখতে পাবেন না।’
‘তা হলে, ছন্দক, আজ আর উদ্যানে যাবার প্রয়োজন নেই, এখান হতেই রাজবাড়িতে ফিরে যাও।’
‘ঠিক আছে’ বলে ছন্দক সেখান থেকেই ফিরে আসল। সিদ্ধার্থ রাজবাড়িতে গিয়ে দুঃখগ্রস্ত হয়ে ও মন খারাপ করে চিন্তা করতে লাগলেন, ‘জন্মকে ধিক্কার দিই, যেহেতু যার জন্ম হয়েছে সে বুড়ো, রোগ ও মরণগ্রস্ত হবে।’
এর পর রাজা শুদ্ধোদন ছন্দককে আগের মতো প্রশ্ন করলেন এবং আগের মতো সিদ্ধার্থকে বেশি বেশি করে সমস্ত ভোগের ব্যবস্থা করলেন। এভাবে সিদ্ধার্থ সর্বভোগের আনন্দে ব্যাপৃত রইলেন।
এর পর, সিদ্ধার্থ আবার একদিন ছন্দককে বললেন, ‘বন্ধু ছন্দক, উত্তম উত্তম যান প্রস্তুত করো, উদ্যানভূমি দেখতে যাব।’
‘দেব, ঠিক আছে’—এই বলে ছন্দক সিদ্ধার্থকে প্রত্যুত্তর দিয়ে উৎকৃষ্ট উৎকৃষ্ট যান প্রস্তুত করে সিদ্ধার্থকে জানাল, ‘দেব, আপনার জন্য যান প্রস্তুত, এখন আপনার যেরূপ অভিরুচি।’
তারপর সিদ্ধার্থ উৎকৃষ্ট যানে উঠে রাজবাড়ি হতে বের হলেন।

৪. সন্ন্যাসী : সিদ্ধার্থ উদ্যানভূমিতে যাবার সময় এক ন্যাড়া মাথা, কাষায় বস্ত্র পরিহিত প্রব্রজিত মানুষকে দেখে ছন্দককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছন্দক, এই মানুষটি কী করেছে, যার জন্য তার মাথা অন্যের মাথার মতো নয়, বস্ত্রও অন্যের মতো নয়?’
‘দেব, মানুষটি প্রব্রজিত।’
‘ছন্দক, প্রব্রজিত কাকে বলে?’
‘দেব, যিনি প্রব্রজিত তিনি ধর্মচর্যা, শমচর্যা কুশলক্রিয়া পুণ্যকর্ম অহিংসা এবং সব প্রাণীর প্রতি অনুকম্পায় পূর্ণতা প্রাপ্ত।’
‘ছন্দক, যিনি প্রব্রজিত তিনি সাধু, সাধু ধর্মচর্যা, সাধু শমচর্যা, সাধু কুশলধর্ম, সাধু পুণ্যকর্ম, সাধু অহিংসা, সাধু সকল প্রাণীর প্রতি অনুকম্পা। ছন্দক, এবার ওই প্রব্রজিতের কাছে রথ চালাও।’
‘ঠিক আছে’ বলে ছন্দক প্রব্রজিতের কাছে রথ চালাল।
তারপর সিদ্ধার্থ সেই প্রব্রজিতকে এরূপ বললেন, ‘সৌম্য, কীজন্য আপনার মাথা অন্যের মাথার মতো নয়, বস্ত্রও অন্যের মতো নয়?’
‘দেব, আমি প্রব্রজিত।’
‘সৌম্য, এর অর্থ কী?’
‘দেব, যিনি প্রব্রজিত তিনি ধর্মচর্যা, শমচর্যা, কুশলকর্ম, পুণ্যকর্ম, অহিংসা এবং সর্বপ্রাণীর প্রতি অনুকম্পায় পূর্ণতাপ্রাপ্ত।’
‘সৌম্য, সাধু আপনার মতো প্রব্রজিত, সাধু ধর্মচর্যা, সাধু শমচর্যা, সাধু কুশলকর্ম, সাধু পুণ্যকর্ম, সাধু অহিংসা, সাধু সকল প্রাণীর প্রতি অনুকম্পা।’—মহাপদান-সূত্র, মহাবর্গ, দীর্ঘনিকায়।

প্রশ্ন : ত্রিশরণ কী?উত্তর : শরণ হলো আশ্রয়স্থল যেখানে বিপদগ্রস্ত মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় গ্রহণ করেন। আশ্রয়স্থল নানা প্রকার...
03/06/2022

প্রশ্ন : ত্রিশরণ কী?

উত্তর : শরণ হলো আশ্রয়স্থল যেখানে বিপদগ্রস্ত মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় গ্রহণ করেন। আশ্রয়স্থল নানা প্রকারের - অসুখী হলে মানুষ আশ্রয় নেয় বন্ধুবান্ধবের। মৃত্যপথযাত্রী মানুষ আপন বিশ্বাস অনুযায়ী স্বর্গে আশ্রয় কামনা করেন। বুদ্ধের মতে ওই ধরনের কোনো আশ্রয়স্থল নয়। কারণ ওইসব আশ্রয়স্থল প্রকৃত স্বস্তি ও শান্তির নিরাপত্তা দিতে পারে না। এই প্রসঙ্গে বুদ্ধের উক্তি :
“চতুরার্যসত্যে অর্থাৎ দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখ রোধ এবং দুঃখ রোধের উপায়, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘের আশ্রয় গ্রহণ করলে মানুষ সকল প্রকার দুঃখ থেকে অব্যহতি পান। কার্যকারণ ভিত্তিক নয়, এইরূপ আশ্রয় স্থলে আশ্রয় নিতে আপাতদৃষ্টিতে নিরাপত্তাবোধ হয় বটে, সেই আশ্রয়স্থল প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ আশ্রয় নয়। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ এই তিন আশ্রয়স্থল সবোর্ত্তম আশ্রয়স্থল। কেননা, এটি মঙ্গলামঙ্গল কার্যকারণ প্রক্রিয়াজাত। বুদ্ধের আশ্রয় গ্রহণের অর্থ, বুদ্ধের মতো অজ্ঞতার অন্ধকার মুক্ত হয়ে জ্ঞানালোকে আলোকিত হতে উদ্বুদ্ধ হবার আশ্রয়স্থলে গমনোদ্যোগ। ধর্মে আশ্রয় গ্রহণের অর্থ, প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষিত, সুব্যখ্যাত, সর্বকালীন, সর্বজনীন প্রকৃত সুখ-শান্তিপ্রদ বুদ্ধের দেশিত জীবনাচরণে উদ্বুদ্ধ হবার গমনোদ্যোগ। সংঘে আশ্রয় গ্রহণের অর্থ হলো, যাঁরা শ্রদ্ধার পাত্র এবং বুদ্ধ ও ধর্ম বিষয়ে সুপণ্ডিত, সদাচারী, যাঁরা শ্রদ্ধার পাত্র এবং বুদ্ধ ও ধর্মের ব্যাখ্যা সহজভাবে ও বোধগম্য করে প্রচার করেন, তাঁদের উপদেশাদি ও জীবনাচারণে অনুশীলনোদ্যোগ গ্রহণ”। [ধম্মপদ - পৃ. ১৮৯-১৯২]

চৌদ্দ প্রকার বুদ্ধজ্ঞান১. দুঃখে জ্ঞান, ২. দুঃখসমুদয়ে জ্ঞান, ৩. দুঃখনিরোধে জ্ঞান, ৪. দুঃখনিরোধগামিনী প্রতিপদায় জ্ঞান, ৫. ...
02/06/2022

চৌদ্দ প্রকার বুদ্ধজ্ঞান

১. দুঃখে জ্ঞান, ২. দুঃখসমুদয়ে জ্ঞান, ৩. দুঃখনিরোধে জ্ঞান, ৪. দুঃখনিরোধগামিনী প্রতিপদায় জ্ঞান, ৫. অর্থপ্রতিসম্ভিদা জ্ঞান, ৬. ধর্মপ্রতিসম্ভিদা জ্ঞান, ৭. নিরুক্তিপ্রতিসম্ভিদা জ্ঞান, ৮. প্রতিভানপ্রতিসম্ভিদা জ্ঞান, ৯. পরচিত্তবিজানন জ্ঞান, ১০. সত্ত্বদের আশানুশয়ে জ্ঞান, ১১. যমক প্রাতিহার্য জ্ঞান, ১২. মহাকরুণাসমাপত্তি জ্ঞান, ১৩. সর্বজ্ঞতা জ্ঞান, ১৪. অনাবরণ জ্ঞান।
এই চৌদ্দ প্রকার জ্ঞানের মধ্যে প্রথম আট প্রকার জ্ঞান সাধারণ অর্থাৎ শ্রাবকদের লব্ধ, আর শেষের ছয় প্রকার জ্ঞান অসাধারণ অর্থাৎ কেবল বুদ্ধগণের লভ্য।—প্রতিসম্ভিদামার্গ

জ্যোতিষিদের ভবিষ্যদ্‌বাণী ও নামকরণবোধিসত্ত্বের জন্মগ্রহণের পঞ্চম দিনে রাজা শুদ্ধোদন পুরো রাজপ্রাসাদ মেঘরাজ, গন্ধরাজ, কর্...
02/06/2022

জ্যোতিষিদের ভবিষ্যদ্‌বাণী ও নামকরণ

বোধিসত্ত্বের জন্মগ্রহণের পঞ্চম দিনে রাজা শুদ্ধোদন পুরো রাজপ্রাসাদ মেঘরাজ, গন্ধরাজ, কর্পূররাজ ও কস্তুরী চন্দন গন্ধের সুবাসিত পানিতে ধোয়ালেন। মহাসত্ত্বকে সেই দিন সুবাসিত (সুগন্ধিযুক্ত) পানিতে সাতবার স্নান করিয়ে গন্ধরাজ, মালতি প্রভৃতি সর্বোত্তম সুগন্ধিমালার দ্বারা ফুলের বিছানা বিছিয়ে নবরত্নের স্তূপে রাখা হলো। আটজন চতুর্বেদবিশারদ ব্রাহ্মণকে নিমন্ত্রণ করে রাজপ্রাসাদে তাঁদের বসিয়ে মহাপূজাসৎকারের সঙ্গে সুস্বাদু, মধুর ও সর্বোত্তম খাদ্যভোজ্যে আপ্যায়ন করা হলো। এরপর রাজা শুদ্ধোদন এই আটজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে তাঁর পুত্রের ভবিষ্যৎ কী হবে বলে জিজ্ঞেস করলেন।
লক্ষণবিচারে এই আটজন ব্রাহ্মণ বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। বোধিসত্ত্বের প্রতিসন্ধি গ্রহণ দিনে মায়াদেবীর স্বপ্নবৃত্তান্তও তাঁদের দ্বারাই বিচার করা হয়েছিল। তাঁরা শিশুর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে দুই প্রকার ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন ব্রাহ্মণ প্রত্যেকেই দুটো করে আঙুল তুলে কুমারের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বললেন, ‘দেব, আনন্দিত হোন। আপনার মহাপরাক্রমশালী পুত্র জন্মেছে। দেব, এই কুমার বত্রিশ প্রকার মহাপুরুষ লক্ষণযুক্ত। এরূপ লক্ষণযুক্ত মহাপুরুষের মাত্র দুই গতি, অন্য গতি নেই। যদি তিনি গৃহবাসী হন তা হলে তিনি চক্রবর্তী রাজা হন, ধার্মিক, ধর্মরাজ, চতুরন্তবিজেতা হন, তাঁর রাজ্য শান্তিতে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হয়, তিনি সপ্ত রত্নের অধিকারী হন। সেই সপ্ত রত্ন হচ্ছে : চক্ররত্ন, হাতিরত্ন, অশ্বরত্ন, মণিরত্ন, স্ত্রীরত্ন, গৃহপতিরত্ন, মন্ত্রীরত্ন। তিনি সূর, বীর শত্রুসেনাকে পরাজিত করতে সক্ষম এমন হাজারো পুত্র লাভ করেন। তিনি এই সসাগরা পৃথিবীকে দণ্ড ও অস্ত্র ছাড়াই ধর্মানুসারে জয় করে বাস করেন। আর যদি তিনি গৃহত্যাগ করে প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন তা হলে জগতে আবরণহীন অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ হন।’
এই বলে তাঁরা চক্রবর্তীরাজার সব ধরনের সম্পদের ব্যাপারে সুন্দরভাবে ব্যক্ত করলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ও গোত্র হিসেবে কৌণ্ডিন্য নামে পরিচিত একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি বোধিসত্ত্বের লক্ষণগুলো দেখে একটিমাত্র আঙুল তুলে দৃঢ়তাসহকারে একটি কথাই বলতে লাগলেন, ‘এই কুমারের সংসারধর্মে আবদ্ধ থাকার কোনো হেতুই আমি দেখছি না, তিনি নিঃসংশয়ে আসক্তিশূন্য বুদ্ধ হবেন।’
আটজন জ্যোতিষী ব্রাহ্মণের ভবিষ্যদ্‌বাণী শুনে রাজা ব্রাহ্মণদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী দেখে আমার পুত্র প্রব্রজ্যা অবলম্বন করবে?’
‘চারটি পূর্বনিমিত্ত।’
রাজা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘সেই পূর্বনিমিত্তগুলো কী কী?’
‘বৃদ্ধ লোক, ব্যাধিগ্রস্ত লোক, মৃত লোক ও প্রব্রজিত ব্যক্তি।’
তা শুনে রাজা তাঁর মন্ত্রী ও কর্মচারী সবার উদ্দেশে বললেন, ‘আজ থেকে এমন নিমিত্ত যেন আমার পুত্রের সামনে না পড়ে। আমার পুত্রের বুদ্ধ হয়ে লাভ নেই। আমি আমার পুত্রকে দুই হাজার দ্বীপমালায় পরিবেষ্টিত চার মহাদ্বীপের পরম অধিপতিরূপে এবং ছত্রিশ যোজন বিস্তৃত আকাশের নিচে অসংখ্য অনুচরের দ্বারা পরিবৃত হয়ে বিচরণশীল অবস্থায় দেখতে চাই।’ তখন থেকে রাজা কুমারের দৃষ্টিপথে উপরি-উক্ত চার প্রকার মানুষের আগমন নিবারণের জন্য প্রাসাদের চারদিকে এক ক্রোশ পরিমিত স্থানে প্রহরী নিযুক্ত করলেন।
সেদিন কুমারের নামকরণের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে মহারাজ শুদ্ধোদনের আশি হাজার জ্ঞাতি সম্মিলিত হয়েছিলেন। দেবমানবের ইচ্ছা পূরণ এবং পুত্রহীন শুদ্ধোদন রাজার পুত্রকামনা সিদ্ধি হবার কারণে সর্বসম্মতিক্রমে কুমারের নাম ‘সিদ্ধার্থ’ নামকরণ করা হলো। বোধিসত্ত্বকে লক্ষ করে সেই জ্ঞাতিগণ প্রত্যেকেই এক একটি পুত্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, ‘ইনি বুদ্ধ হন বা চক্রবর্তী রাজাই হন, আমরা তাঁকে একটি করে পুত্রদান করব। যদি তিনি বুদ্ধ হন তা হলে ক্ষত্রিয়-শ্রমণে পরিবৃত হয়ে বিচরণ করবেন। আর যদি চক্রবর্তী রাজা হন ক্ষত্রিয়-কুমারে পরিবৃত হয়ে বিচরণ করবেন।’
অনুষ্ঠানের পরে সেই আটজন ব্রাহ্মণ তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেলেন। বাড়িতে তাঁদের পুত্রগণকে বললেন, ‘বাবারা, আমরা বুড়ো হয়েছি, মহারাজ শুদ্ধোদনপুত্রের সর্বজ্ঞতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত ইহলোকে জীবিত থাকব কি না সন্দেহ। অতএব যাহোক, সেই কুমার সর্বজ্ঞতা প্রাপ্ত হলে তোমরা তাঁর ধর্মে প্রব্রজ্যা অবলম্বন করো।’ এভাবে সেই সাতজন জ্যোতিষী ব্রাহ্মণ নিজ নিজ আয়ুষ্কাল অতিবাহিত করে মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কৌণ্ডিন্য ব্রাহ্মণ সম্পূর্ণ নীরোগ ছিলেন। তিনি মহাসত্ত্বের গৃহত্যাগের অপেক্ষায় ঘরেই অবস্থান করতে লাগলেন।—অপদান অর্থকথা

বুদ্ধপ্রশংসিত চার বৌদ্ধ পরিষদ #ভিক্ষু-পরিষদ : শ্রাবক ভিক্ষুদের মাঝে অঞ্ঞাত কৌণ্ডিন্য প্রাচীনদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, মহাপ্রজ্ঞা...
01/06/2022

বুদ্ধপ্রশংসিত চার বৌদ্ধ পরিষদ

#ভিক্ষু-পরিষদ : শ্রাবক ভিক্ষুদের মাঝে অঞ্ঞাত কৌণ্ডিন্য প্রাচীনদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, মহাপ্রজ্ঞাবানদের মাঝে সারিপুত্র শ্রেষ্ঠ, ঋদ্ধিমানদের মাঝে মৌদ্‌গল্যায়ন শ্রেষ্ঠ, ধুতাঙ্গজীবীদের মাঝে মহাকাশ্যপ শ্রেষ্ঠ, দিব্যচক্ষুসম্পন্নদের মাঝে অনুরুদ্ধ শ্রেষ্ঠ, উচ্চকুল জাতদের মাঝে কালিগোধার পুত্র ভদ্রিয় শ্রেষ্ঠ, মিষ্টকণ্ঠীদের মাঝে লকুণ্টক ভদ্রিয় শ্রেষ্ঠ, সিংহনাদকারীদের মাঝে পিণ্ডোলভারদ্বাজ শ্রেষ্ঠ, ধর্মকথিকদের মাঝে মন্তানিপুত্র পুণ্ণ শ্রেষ্ঠ, সংক্ষিপ্ত ভাষিত বিষয়ের বিস্তৃত অর্থ বিভাজনকারীদের মাঝে মহাকচ্চায়ন শ্রেষ্ঠ।

শ্রাবকভিক্ষুদের মাঝে চুলপন্থক্‌ মনোরম কায়নির্মাতাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, চুলপন্থক চিত্তবির্বতন-কুশলীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, মহাপন্থক সংজ্ঞাবিবর্তন-কুশলীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সুভূতি শান্তিতে বসবাকারীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সুভূতি দক্ষিণাযোগ্যদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, রেবত খদিরবিনয় আরণ্যকদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, কংখারেবত ধ্যানীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সোণ কোলিবীস আরব্ধবীর্যদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সোণ কোটিকণ্ণ স্পষ্ট ভাষণকারীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সীবলী লাভীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ, বক্কলি শ্রদ্ধাধিমুক্তদের মাঝে শ্রেষ্ঠ।

শিক্ষাকামী শ্রাবক ভিক্ষুদের মাঝে রাহুল শ্রেষ্ঠ, শ্রদ্ধায় প্রব্রজিতদের মাঝে রাষ্ট্রপাল, প্রথম শলাকা গ্রহণকারীদের মাঝে কুণ্ডধান শ্রেষ্ঠ, প্রত্যুৎপন্নমতিদের মাঝে বঙ্গীশ শ্রেষ্ঠ, সার্বিক অমায়িকদের মাঝে বঙ্গান্ত পুত্র শ্রেষ্ঠ, শয্যাসন প্রজ্ঞাপনকারীদের মাঝে মলপুত্র দব্ব শ্রেষ্ঠ, দেবতাগণের প্রিয় ও মনোজ্ঞদের মাঝে পিলিন্দবচ্চ শ্রেষ্ঠ, ক্ষিপ্র অভিজ্ঞান (অস্বাভাবিক শক্তি) লাভীদের মাঝে বাহিয় দারুচিরিয় শ্রেষ্ঠ, বিচিত্র কথিকদের মাঝে কুমারকাশ্যপ শ্রেষ্ঠ. প্রতিসম্ভিদাপ্রাপ্তদের (বিশ্লেষণাত্মক প্রজ্ঞা প্রাপ্তদের) মাঝে মহাকোট্ঠিত শ্রেষ্ঠ।

ভিক্ষুশ্রাবক বহুশ্রুতদের মাঝে আনন্দ শ্রেষ্ঠ, স্মৃতিমানদের মাঝে আনন্দ শ্রেষ্ঠ, গতিমানদের (সদাচারীদের) মাঝে আনন্দ শ্রেষ্ঠ, ধৃতিমানদের (উদ্যমশীলদের) মাঝে আনন্দ শ্রেষ্ঠ, উপস্থাপকদের (তথাগতের ব্যক্তিগত সেবকদের) মাঝে আনন্দ শ্রেষ্ঠ, মহা পরিষদ লাভীদের মাঝে উরুবেলা-কাশ্যপ শ্রেষ্ঠ, কুলপ্রসাদকদের মাঝে কালুদায়ী শ্রেষ্ঠ, স্বাস্থ্যবানদের মাঝে বক্কুল শ্রেষ্ঠ, পূর্বনিবাস অনুস্মরণকারীদের মাঝে শোভিত শ্রেষ্ঠ, বিনয়ধরদের মাঝে উপালি শ্রেষ্ঠ, ভিক্ষুণীদের উপদেশকারীদের মাঝে নন্দক শ্রেষ্ঠ, ইন্দ্রিয়দ্বার রক্ষাকারীদের মাঝে নন্দ শ্রেষ্ঠ, ভিক্ষুদের উপদেশ দানকারীদের মাঝে মহাকপ্পিন শ্রেষ্ঠ, তেজোধাতু কুশলীদের মাঝে সাগত শ্রেষ্ঠ, উপস্থিত ক্ষেত্রে ভাষণকারীদের মাঝে রাধ শ্রেষ্ঠ, রুক্ষ চীবর পরিধানকারীদের মাঝে মোঘরাজা শ্রেষ্ঠ।

#ভিক্ষুণী-পরিষদ : শ্রাবিকাভিক্ষুণী প্রাচীনদের মাঝে মহাপ্রজাপতি গৌতমী অগ্রগণ্যা, মহাপ্রজ্ঞাবতীদের মাঝে ক্ষেমা অগ্রগণ্যা, ঋদ্ধিমতীদের মাঝে উৎপলবর্ণা অগ্রগণ্যা, বিনয়ধারিণীদের মাঝে পটাচারা অগ্রগণ্যা, ধর্মকথিকাদের মাঝে ধর্মদিন্না অগ্রগণ্যা, ধ্যানশালীদের মাঝে নন্দা অগ্রগণ্যা, আরব্ধবীর্যাদের মাঝে সোনা অগ্রগণ্যা, দিব্যচক্ষুসম্পন্নাদের মাঝে সকুলা অগ্রগণ্যা, ক্ষিপ্র অভিজ্ঞান (অতি প্রাকৃত বিষয়ে জ্ঞান) সম্পন্নাদের মাঝে ভদ্রা কুণ্ডলকেশা অগ্রগণ্যা, পূর্বনিবাস অনুস্মরণকারীদের মাঝে ভদ্রা কপিলানী অগ্রগণ্যা, মহা-অভিজ্ঞা (অতি প্রাকৃত বিষয়ে জ্ঞান) লাভীদের মাঝে ভদ্রা কচ্চায়না অগ্রগণ্যা, রুক্ষ চীবর পরিধানকারিণীদের মাঝে কিসা গৌতমী অগ্রগণ্যা, শ্রদ্ধাধিমুক্তাদের মাঝে সিগাল মাতা অগ্রগণ্যা।

#উপাসক-পরিষদ : শ্রাবক উপাসকদের মাঝে-প্রথম শরণ গ্রহণকারীদের মাঝে বণিক তপস্‌সু ও ভল্লিক অন্যতম, দায়কদের মাঝে সুদত্ত গৃহপতি অনাথপিণ্ডিক অগ্রগণ্য, ধর্মকথিক (ভাষক)-দের মাঝে চিত্র গৃহপতি মচ্ছিকসণ্ডিক অগ্রগণ্য, চার সংগ্রহবস্তু দ্বারা পারিষদ সংগ্রহকারীদের মাঝে হত্থক আলবক অগ্রগণ্য, প্রণীত (উত্তম) বস্তু দায়কদের মাঝে মহানাম শাক্য অগ্রগণ্য, মনোজ্ঞ বস্তু দায়কদের মাঝে উগ্‌গ গৃহপতি অগ্রগণ্য, সংঘসেবকদের মাঝে উগ্‌গত গৃহপতি অগ্রগণ্য, অবিচল আনুগত্য-পরায়ণদের মাঝে সূর অম্বট্ঠ অগ্রগণ্য, পুদ্‌গল প্রসন্নদের (জন নন্দিতদের) মাঝে জীবক কুমারভচ্চ অগ্রগণ্য, বিশ্বস্তদের মাঝে নকুলপিতা গৃহপতি অগ্রগণ্য।

#উপাসিকা-পরিষদ : শ্রাবিকা উপাসিকাদের মাঝে-প্রথম শরণ গ্রহণকারিণীদের মাঝে সেনানিকন্যা সুজাতা অন্যতমা, দায়িকাদের মাঝে বিশাখা মিগারমাতা অন্যতমা, বহুশ্রুতাদের মাঝে খুজ্জুত্তরা অন্যতমা, মৈত্রী বিহারিণীদের মাঝে শ্যামাবতী অন্যতমা, ধ্যানশীলাদের মাঝে নন্দমাতা উত্তরা অন্যতমা, প্রণীত (উত্তম) বস্তু দায়িকাদের মাঝে কোলিয় কন্যা সুপ্রবাসা অন্যতমা, রোগী সেবাকারিণীদের মাঝে উপাসিকা সুপ্রিয়া অন্যতমা, অবিচল আনুগত্য-পরায়ণাদের মাঝে কাত্যায়নী অন্যতমা, বিশ্বাসিনীদের মাঝে গৃহপত্নী নকুলমাতা অন্যতমা, গতানুগতিক প্রসন্নাদের মাঝে কুররঘরের উপাসিকা কালী অন্যতমা।—প্রসিদ্ধ-বর্গ, অঙ্গুত্তরনিকায়

গৌতম বুদ্ধের ৮০ জন মহাশ্রাবক১. কৌণ্ডিন্য, ২. বপ্প, ৩. ভদ্রিয়, ৪. মহানাম, ৫. অশ্বজিৎ, ৬. নালক, ৭. যশ, ৮. বিমল, ৯. সুবাহু,...
01/06/2022

গৌতম বুদ্ধের ৮০ জন মহাশ্রাবক

১. কৌণ্ডিন্য, ২. বপ্প, ৩. ভদ্রিয়, ৪. মহানাম, ৫. অশ্বজিৎ, ৬. নালক, ৭. যশ, ৮. বিমল, ৯. সুবাহু, ১০. পুন্নজি, ১১. গবম্পতি, ১২. উরুবেলাকাশ্যপ, ১৩. নদী কাশ্যপ, ১৪. গয়া কাশ্যপ, ১৫. সারিপুত্র, ১৬. মৌদ্‌গল্যায়ন, ১৭. মহাকাশ্যপ, ১৮. মহাকচ্চায়ন, ১৯. মহাকোট্ঠিত, ২০. মহাকপ্পিন, ২১. মহাচুন্দ, ২২. অনুরুদ্ধ, ২৩. কঙ্খা রেবত, ২৪. আনন্দ, ২৫. নন্দক, ২৬. ভৃগু, ২৭. নন্দ, ২৮. কিম্বিল, ২৯. ভদ্দিয়, ৩০. রাহুল, ৩১. সীবলি, ৩২. দব্ব, ৩৩. উপসেন, ৩৪. খদিরবিনয় রেবত, ৩৫. পুন্ন মন্তানিপুত্র, ৩৬. পুন্ন সুনাপরন্তক, ৩৭. সোণ কোটিকর্ণ, ৩৮. সোণ কোলিবীস, ৩৯. রাধ, ৪০. সুভূতি, ৪১. অঙ্গুলিমাল, ৪২. বক্কলি, ৪৩. কালুদায়ী, ৪৪. মহা-উদায়ী, ৪৫. পিলিন্দবচ্ছ, ৪৬. শোভিত, ৪৭. কুমারকাশ্যপ, ৪৮. রাষ্ট্রপাল, ৪৯. বঙ্গীস, ৫০. সভিয়ো, ৫১. সেল, ৫২. উপবান, ৫৩. মেঘিয়, ৫৪. স্বাগত, ৫৫. নাগিত, ৫৬. লকুণ্টক, ৫৭. ভদ্রিয়, ৫৮. পিণ্ডোল ভারদ্বাজ, ৫৯. মহাপন্থক, ৬০. চুলপন্থক, ৬১. বক্কুল, ৬২. কোণ্ডধান, ৬৩. দারুচীরিয়, ৬৪. যশোজ, ৬৫. অজিত, ৬৬. তিস্যমেত্তেয়, ৬৭. পুন্নকো, ৬৮. মেত্তগু, ৬৯. ধোতক, ৭০. উপসিব, ৭১. নন্দো, ৭২. হেমক, ৭৩. তোদেয়, ৭৪. কপ্প, ৭৫. চতুকপ্পি, ৭৬. ভদ্রবুধ, ৭৭. উদয়, ৭৮. পসাল, ৭৯. মোঘরাজ, ৮০. পিঙ্গিয়।—থেরগাথা

বুদ্ধের দশ বল১. স্থানকে স্থানরূপে, অস্থানকে অস্থানরূপে যথার্থজ্ঞান : জগতের যে-কোনো কাজ এর কারণ হতে উদ্ভূত। কারণ ছাড়া কাজ...
01/06/2022

বুদ্ধের দশ বল

১. স্থানকে স্থানরূপে, অস্থানকে অস্থানরূপে যথার্থজ্ঞান : জগতের যে-কোনো কাজ এর কারণ হতে উদ্ভূত। কারণ ছাড়া কাজ হয় না। প্রত্যেক কর্মের কারণকে কারণরূপে এবং অকারণকে অকারণরূপে দর্শন বা জ্ঞানই তথাগতের প্রথম জ্ঞানবল। যেমন : এমন কোনো হেতুপ্রত্যয় বিদ্যমান নেই, যার দ্বারা পৃথগ্‌জন ব্যক্তি সংস্কারসমূহকে নিত্য-সুখ-আত্মা বশে গ্রহণ না করে অনিত্য-দুঃখ-অনাত্ম বলে গ্রহণ করতে পারে না। আবার এমন কোনো হেতুপ্রত্যয় বিদ্যমান নেই যার দ্বারা আর্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি সংস্কারধর্মকে অনিত্য-দুঃখ-অনাত্ম বশে গ্রহণ না করে নিত্য-সুখ-আত্ম বশে গ্রহণ করতে পারেন। এরূপ কারণ-অকারণ সম্পর্কে অবিচলিত জ্ঞানই তথাগতের প্রথম বল।

২. অতীত, অনাগত ও বর্তমান সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান : এই তিন কালের মাঝে কৃত-অকৃত কর্মের বিপাকের উৎপত্তি নিরপেক্ষ নয়। এটা কারণ ও হেতু-সাপেক্ষ। যেই কারণ ও হেতু বলে কর্মের বিপাক ফলে ওঠে কিংবা যে কারণ ও হেতুপ্রভাবে কর্মবিপাক দান করতে পারে না অথবা যেসব কারণ ও হেতুর অনুকূল-প্রতিকূল শক্তিতে সব সময় কর্মান্তর ও বিপাকান্তর প্রাপ্ত হয়-সে সম্পর্কে যথাভূত ও পরিপূর্ণ জ্ঞানই তথাগতের দ্বিতীয় বল।

৩. সর্বত্র গামিনী প্রতিপদা বা মার্গ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান : প্রাণীরা কর্মবিপাকে যেখানেই গমন করুক, যেখানেই জন্মপরিগ্রহ করুক, মনুষলোক, দেবলোক, ব্রহ্মলোক, নরক কিংবা পশুপাখি, কীটপতঙ্গ প্রভৃতি কুলের যেখানেই গমন করুক না কেন, যখন যে মার্গ অবলম্বন করে যেই কর্মবিপাকে গিয়ে, সেই সমুদয় প্রতিপদা বা মার্গ সম্পর্কে সুনিশ্চিত জ্ঞানই তথাগতের তৃতীয় বল।

৪. অনেক ধাতু নানা ধাতুর লোকোৎপত্তি সম্পর্কে যথার্থজ্ঞান : স্কন্ধ, আয়তন ও ধাতুর নানাপ্রকার বৈষম্যে এই বিশাল বিশ্বের জড়-চেতনময় অবস্থান বহুধা। তাই, এই বিশ্বসংসার অসংখ্য ধাতুর অসংখ্য গঠন, অসদৃশ তার প্রণালি। এরূপ অনেক ধাতু নানা ধাতুর লোকোৎপত্তি সম্পর্কে দশবলের সুনিশ্চিত জ্ঞানই চতুর্থ বল।

৫. জীবগণের নানা অধিমুক্তি (মুক্তিপ্রবণতা) যথার্থভাবে প্রকৃতভাবে জ্ঞান : সাধারণত সত্ত্বগণ নানা অভিপ্রায়-প্রণোদিত। অসংখ্য জীবের মাঝে স্বরূপের কোনোরূপ সৌসাদৃশ্য দেখা যায় না। সত্ত্বদের মাঝে কীরূপ অভিপ্রায় বা স্বভাবের সামঞ্জস্যহেতু একের সঙ্গে অন্যের সম্মিলন ঘটে, বন্ধুত্ব জন্মে এবং কীরূপে অসামঞ্জস্যহেতু বিরহবিচ্ছেদ ঘটে, তার মূলীভূত স্বরূপ সম্পর্কে দশবলের যেই প্রকৃষ্ট জ্ঞান, তা-ই পঞ্চম বল।

৬. অপরাপর সত্ত্বদের ইন্দ্রিয়বৈষম্য সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান : অপরাপর সত্ত্বদের ইন্দ্রিয়বৈষম্য সম্বন্ধে যথার্থজ্ঞান। অর্থাৎ শ্রদ্ধা, স্মৃতি, বীর্য, সমাধি ও প্রজ্ঞা, এ পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সবলতা-দুর্বলতা, জ্ঞানলাভে ক্ষমতা-অক্ষমতা, এদের সাম্য-অসাম্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানই দশবলের ষষ্ঠ বল।

৭. ধ্যানবিমোক্ষ-সমাধিসমাপন্ন ব্যক্তির সংক্লেশ (মালিন্য) ব্যবদান (পবিত্রতা) এবং উত্থান (অব্যাহতি) যথার্থভাবে জ্ঞান : ধ্যান, বিমোক্ষ, সমাধি, সমাপত্তির বিঘ্ন কী? অন্তরায় কী? পক্ষান্তরে এর শুদ্ধি, পবিত্রতা, সহায়ক ও উপকারক ধর্মই-বা কীরূপ? কীরূপে ইচ্ছামতো ধ্যানারূঢ় হওয়া বা ধ্যানাসন হতে উঠা যায়, ইত্যাদি সম্পর্কে দশবলের সুনিশ্চিত জ্ঞানই সপ্তম বল।

৮. পূর্বনিবাসানুস্মৃতি জ্ঞান : তিনি বহুপ্রকার বহু পূর্বজন্ম অনুস্মরণ করেন : এক জন্ম, দুই জন্ম, তিন জন্ম, চার জন্ম, পাঁচ জন্ম, দশ জন্ম, বিশ জন্ম, ত্রিশ জন্ম, পঞ্চাশ জন্ম, শত জন্ম, হাজার জন্ম-বহু প্রলয়কল্পে, বহু সৃষ্টিকল্পে, এমনকি বহু প্রলয়-সৃষ্টিকল্পে, সেখানে আমি ছিলাম, এই ছিল আমার নাম, এই আমার গোত্র, এই আমার জাতিবর্ণ, এই আমার আহার, এমন আমার সুখদুঃখ-অনুভব, এই আমার পরমায়ু, তা হতে চ্যুত হয়ে আমি এখানে (এই যোনিতে) উৎপন্ন হই, সেখানে ছিল আমার এই নাম, এই গোত্র, এই জাতিবর্ণ, এই আহার, এমন সুখদুঃখ-অনুভব, এই পরমায়ু; সেখান থেকে চ্যুত হয়ে আমি এখানে (এই যোনিতে) উৎপন্ন হয়েছি। এমন আকার ও উদ্দেশ, স্বরূপ ও গতিসহ নানাপ্রকারে বহু পূর্বজন্ম স্মরণ করেন।

৯. সত্ত্বদের চ্যুতি-উৎপত্তি জ্ঞান : তিনি বিশুদ্ধ লোকাতীত দিব্যচোখ দিয়ে দেখতে পান-জীবগণ চ্যুত হচ্ছে; উৎপন্ন হচ্ছে, প্রকৃষ্টরূপে জানেন-কীরূপে জীবগণ নিজ নিজ কর্মানুসারে হীন ও উৎকৃষ্ট যোনি, সুশ্রী-বিশ্রী, সুগতি-দুর্গতি প্রাপ্ত হচ্ছে তা জানতে পারেন।

১০. আস্রবক্ষয় জ্ঞান : তিনি আস্রবক্ষয়ে অনাস্রব চিত্তবিমুক্তি এবং প্রজ্ঞাবিমুক্তি প্রত্যক্ষজীবনে নিজ অভিজ্ঞার দ্বারা সাক্ষাৎ করে এতে অবস্থান করেন।

এই দশটি বলের মধ্যে কোনো কোনোটি সম্যকসম্বুদ্ধ, প্রত্যেকবুদ্ধ, অগ্রশ্রাবকের মাঝে সমতুল্য। কোনোটি শুধু সম্যকসম্বুদ্ধেরই বৈশিষ্ট্য, তাতে অন্যের অনধিকার। কোনো কোনো বলের মধ্যে আংশিক অধিকার সবারই থাকে। আস্রবক্ষয়-জ্ঞানে সবার অধিকার সমতুল্য, চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে সর্বজ্ঞ সম্যকসম্বুদ্ধের জ্ঞানই অসাধারণ ও অদ্বিতীয়। অপর আট প্রকার বলে প্রত্যেকবুদ্ধ ও অগ্রশ্রাবকের জ্ঞান সসীম, কিন্তু সর্বজ্ঞ বুদ্ধের জ্ঞান অসীম।—সিংহনাদ সূত্র, মধ্যমনিকায়

নির্বাণই স্বাধীন, নির্বাণ বাদে সবকিছুই অধীনএকসময় দেব-মানবের পূজ্য শ্রাবকবুদ্ধ বনভন্তে নিজ আবাসিক ভবনে ভিক্ষুসঙ্ঘকে ধর্মদ...
29/05/2022

নির্বাণই স্বাধীন, নির্বাণ বাদে সবকিছুই অধীন
একসময় দেব-মানবের পূজ্য শ্রাবকবুদ্ধ বনভন্তে নিজ আবাসিক ভবনে ভিক্ষুসঙ্ঘকে ধর্মদেশনা প্রদানকালে বলেন, আমি কী করব? আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় অবস্থান করব? এসব হীন চিন্তা করবে না তোমরা। কেউ যদি এই হীন চিন্তা করে তাহলে জানবে সে অজ্ঞানী। মনে রাখবে, আমি কী করব-এটা অজ্ঞান বা অজ্ঞানের চিন্তা। আমি কোথায় যাব, এটা অজ্ঞানের চিন্তা। আমি কোথায় অবস্থান করব? এটা অজ্ঞানের চিন্তা। যারা নির্বাণ লাভের প্রত্যাশী তাদের পক্ষে এসব হীন চিন্তা করা অশোভনীয়। তাই বলছি, তোমরা আমি কী করব? আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় অবস্থান করব? এসব চিন্তা করবে না। আমি কী করব, এ চিন্তা করলে দুঃখ পাবে। আমি কোথায় যাব এ চিন্তা করলে দুঃখ পাবে। আমি কোথায় অবস্থান করব? এ চিন্তা করলে দুঃখ পাবে। যারা জ্ঞানী তারা আমি কী করব এরূপ বলে না। আর যারা সেসব চিন্তা করে না, তারা নির্বাণ লাভে সমর্থ হয়। বুঝতে পারছ তো? “হ্যাঁ ভন্তে, বুঝতে পারছি।” বল তো দেখি, সেসব চিন্তা না করে থাকতে পারবে কি? সেসব চিন্তা বর্জন করা সহজ নয়। আমি বলছি, তোমরা আমি কী করব? আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় অবস্থান করব? এসব বলবে না। আমি আমেরিকাতে যাবও বলবে না, ভারতে যাবও বলবে না, লন্ডনে যাবও বলবে না, কোরিয়াতে যাবও বলবে না। জ্ঞানীরা সেসব বলে না। অজ্ঞানীরা সেসব বলে থাকে মাত্র। যার চিত্তে চারি আর্যসত্য জ্ঞান, প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতি জ্ঞান উদয় হয়, সে কখনো আমি কী করব, আমি কোথায় যাব, আমি কোথায় অবস্থান করব বলে না। তোমরা যদি চারি আর্যসত্যে ও প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতিতে অজ্ঞানী হও তাহলে আমি কী করব? আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় অবস্থান করব-এসব চিন্তা করবে না। সেসব চিন্তা না করলে শীঘ্রই চারি আর্যসত্য জ্ঞান, প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতি জ্ঞান আয়ত করতে পারবে। তোমরা প্রত্যেকে উচ্চতর সাধনার অনুশীলন কর। জ্ঞান বলে উচ্চতা লাভে সচেষ্ট থাক, সর্ব ভবকে অভিভব করে ভবমুক্ত হও, তাহলে যাবতীয় দুঃখ পেতে মুক্ত হবে। কোনো ভবের মধ্যে অবস্থান করবে না। ভবের মধ্যে অবস্থান করলে দুঃখ পেতে হয়। কামভব, রূপভব, অরূপভব-যেকোনো ভব অনিত্য। সেই অনিত্য ভবের মধ্যে অবস্থান করবে না। অবস্থান করলে বর্ণনাতীত দুঃখভোগ করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকবে না। আমি বলছি, তোমরা কোনো ভবের মধ্যে অবস্থান করবে না। ভবের মধ্যে অবস্থান না করলে পরম সুখের ভাগী হবে। আমার সাথে বলো, “আমরা কোনো ভবের মধ্যে অবস্থান করবো না। ভবের মধ্যে অবস্থান করলে দুঃখ পেতে হয়।” কেন সাধারণ নরনারীরা ভবে অবস্থান করতে চায় জান? সুখভোগ করার জন্যে। কিন্তু তারা জানে না যে, ভবে সুখভোগ করতে গিয়ে তারা দুঃখকেই আলিঙ্গন করে নেয় মাত্র। কাঙ্ক্ষিত সুখ সোনার হরিণের ন্যায় অধরাই থেকে যায়। মনে রাখা উচিত, ভবের মধ্যে সুখভোগ করতে চাইলে দুঃখ যাতনার শিকার হতে হয় চরমভাবে। তোমরা যদি ভবের মধ্যে সুখভোগ করতে চাও তাহলে শুধু যে অশেষ দুঃখ, যাতনার ভাগী হবে তাই নয়, মুক্তির পথ থেকেও বহু দূরে সরে আসবে। ফলে নিজের সর্বনাশটুকু নিজেই ডেকে আনা হবে মাত্র। আর সেই সুখভোগের জন্য লিপ্সাচিত্তে অবস্থানের হেতুতে মৃত্যুর পর অপায় দুর্গতি দুঃখ অবশ্যম্ভাবী। অন্যদিকে, কোনো ভবের মধ্যে সুখভোগ না করলে, ভবের মধ্যে অবস্থান না করলে নির্বাণ লাভে সক্ষম হবে। তোমরা যদি ভবের মধ্যে অবস্থান কর, তাহলে পুনর্জন্মগ্রহণ করবে। পুনর্জন্মগ্রহণ করলে কখনো দেবতা, কখনো মনুষ্য, কখনো পশুপাখি, কখনো প্রেত, কখনো নরকগামী হয়ে অনন্তকাল পর্যন্ত দুর্বিসহ দুঃখ যাতনা পোহাতে হবে। তাই আমি তোমাদের সাবধান করে দিচ্ছি, তোমরা কেউই ভবের মধ্যে অবস্থান করবে না। ভবের মধ্যে অবস্থান করলে বর্ণনাতীত দুঃখ-যাতনা ভোগ করতে হবে বাধ্য হয়েই। আর কোনো ভবের মধ্যে অবস্থান না করলে নির্বাণ লাভের অধিকারী হতে পারবে।
পূজ্য ভন্তে, আরও বলেন, স্বাধীন হলে সুখ, আর অধীন হলে দুঃখ। স্বাধীন কী? অবিদ্যা থেকে স্বাধীন, তৃষ্ণা থেকে স্বাধীন। এক কথায় নির্বাণই স্বাধীন। নির্বাণ বাদে সবকিছুই অধীন। ভগবান বুদ্ধের উপদেশ কী, জান? বুদ্ধের উপদেশ হলো কারো অধীন না থেকে স্বাধীন হওয়া। অধীন হয়ে থাকাটা বড়ো দুঃখের, কষ্টের হয়। মনে থাকবে তো? ভিক্ষুসঙ্ঘ : হ্যাঁ ভন্তে, মনে থাকবে। তোমরা অবিদ্যার অধীন, তৃষ্ণার অধীন হয়ে থাকবে না। সবাই বলো, “আমরা অধীন হয়ে থাকব না, স্বাধীন হবো।” নির্বাণকে বলা হয় স্বাধীন। বাংলাদেশ স্বাধীন নয়, ভারত স্বাধীন নয়, আমেরিকা স্বাধীন নয়, রাশিয়া স্বাধীন নয়, চীন স্বাধীন নয়। প্রকৃত স্বাধীন হলো নির্বাণ। প্রকৃত স্বাধীন কাকে বলে? নির্বাণকে প্রকৃত স্বাধীন বলে। তোমরা প্রত্যেকে অতিসত্ত্বর নির্বাণ লাভে সচেষ্ট থাকো। পূজ্য ভন্তে ভিক্ষুসঙ্ঘের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, তোমরা নির্বাণলাভী হবে নাকি অনির্বাণলাভী হয়ে পড়ে থাকবে? ভিক্ষুসঙ্ঘ : ভন্তে, আমরা নির্বাণলাভী হবো। আমি সাবধান করে দিয়ে বলছি, যদি অনির্বাণলাভী হয়ে পড়ে থাকো, তাহলে ভীষণ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে কালাতিপাত করতে হবে। সেই দুঃখ-কষ্ট কিছুতেই শেষ হতে চাইবে না যেন। এতটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেলার সময় পাবে না। মনে রাখবে, তোমরা যদি নির্বাণলাভী হও, তাহলে (তোমরা) স্বাধীন, আর নির্বাণলাভী না হলে অধীন। এখন তোমরা ঠিক কর, তোমরা স্বাধীন হবে নাকি অধীন হয়ে পড়ে থাকবে? তবে যদি অনির্বাণলাভী হও, তাহলে দুঃখের আর সীমা থাকবে না তোমাদের জীবনে। পুনঃপুন জন্মগ্রহণ করে সেই দুঃখের পরিমাণকে আরও তীব্র, দীর্ঘায়িত করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। অনির্বাণলাভীরা বারবার জন্মগ্রহণ করে বারবার মরে যায়। তারা কিছুতেই জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত হতে বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই তাদের জীবন বিবিধ দুঃখ, যাতনায় পরিপূর্ণ থাকে। নির্বাণলাভীরা জন্ম-মৃত্যুর অতীত হয়ে যান। তারা আর জন্মগ্রহণও করেন না, মরেও যান না। তারা জন্ম-মৃত্যুর আবর্তকে সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন, পদদলিত করে পরম সুখে অবস্থান করেন। পূজ্য বনভন্তে আবারও ভিক্ষুসঙ্ঘকে প্রশ্ন করেন, তোমরা নির্বাণলাভী বা নির্বাণ হবে? নাকি অনির্বাণ হবে? যদি অনির্বাণ হও, বর্ণনাতীত দুঃখ পাবে, বার বার; মরে যাবে, কিছুতেই দুঃখ থেকে মুক্ত হবে না। তাই নির্বাণকে স্বাধীন বলা হয়ে থাকে। মনে রাখবে সব চাইতে সুখ হচ্ছে স্বাধীন হওয়া, আর সব চাইতে দুঃখ হচ্ছে অধীন থাকা। সব চাইতে দুঃখ কী? অধীন থাকা। কে অধীন থাকে? তোমাদের মনচিত্ত। কীসের অধীন থাকে? অবিদ্যার অধীন, তৃষ্ণার অধীন থাকে। বুঝতে পারছ তো? তোমাদের মন-চিত্ত যদি অধীন থাকে, তাহলে তোমরা দুঃখ পাবে। আর তোমাদের মন-চিত্ত যদি স্বাধীন থাকে, তাহলে তোমরা সুখে অবস্থান করবে। মন-চিত্তে নির্বাণের জ্ঞান আয়ত্ত হলে সেটাকে বলো স্বাধীন। মন-চিত্তে নির্বাণের জ্ঞান আয়ত্ত না হলে সেটাকে বলো অধীন। পারবে কি, মন-চিত্তকে স্বাধীন করতে? কীভাবে মন-চিত্তকে সাধীন করাবে? নির্বাণের জ্ঞান আয়ত্ত করে। আর কীভাবেই-বা নির্বাণে জ্ঞান আয়ত্ত হয়? সর্বদা নির্বাণের মন, নির্বাণের চিত্ত হয়ে অবস্থান করলে। নির্বাণের জ্ঞান আয়ত্ত হলে মন-চিত্ত স্বাধীন হয়, সেটা সুখ। নির্বাণের জ্ঞান আয়ত্ত না হলে মন-চিত্ত অধীন হয়, সেটা দুঃখ আর দুঃখ। ভগবান বুদ্ধ এভাবে সবাইকে স্বাধীন হতে উপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু মার কী বলে জান? আমি কাউকে স্বাধীন হতে দেবো না, মুক্ত হতে দেবো না। যে-জন স্বাধীন হতে চায়, মুক্ত হতে চায় আমি তাকে গ্রেপ্তার করব। আর যে বড়ো হতে চাই তাকে আমি খতম করব। মার কীভাবে গ্রেপ্তার করে জান? রাগ, দ্বেষ, মোহ চিত্ত জাগিয়ে দিয়ে গ্রেপ্তার করে। তোমরা যদি রাগ, দ্বেষ, মোহ চিত্ত উদয় কর, তাহলে মার তোমাদের গ্রেপ্তার করে ফেলবে। তোমাদের চিত্তে যদি রাগ, দ্বেষ, মোহ না থাকে, তাহলে মার গ্রেপ্তার করতে পারবে না। মার তোমাদের কীভাবে গ্রেপ্তার করবে? চিত্তের মধ্যে রাগ, দ্বেষ, মোহ চেতনা জাগিয়ে দিয়ে। কি, মনে থাকবে তো? “হ্যাঁ ভন্তে, মনে থাকবে।” তোমাদের চিত্তে যদি রাগ, দ্বেষ, মোহ উদয় হয়, তাহলে মার তোমাদের গ্রেপ্তার করে ফেলবে বলে জানবে। সে অবস্থায় তোমরা দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভে সক্ষম হবে কি? না ভন্তে, সক্ষম হবো না। কাজেই সাবধানে থেকো, যাতে মার গ্রেপ্তার করতে না পারে। মার দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেয়, বাধাবিপত্তি ঘটায়। মার কী বলে? মার বলে কাউকে মুক্ত হতে দেবো না। আমার রাজ্য অতিক্রম করে দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভ করা আমি কিছুতেই সহ্য করব না। কেউ যদি নির্বাণ লাভের দিকে অগ্রসর হয় মার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তার সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পৃথিবীতে যতগুলো যক্ষ, ভূত, প্রেত রয়েছে সবই মারের সৈন্য। সিদ্ধার্থ গৌতম যখন গয়ার বোধিদ্রুমতলে সর্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভের জন্য দৃঢ়সংকল্প নিয়ে বজ্রাসনে বসে ধ্যাননিমগ্ন ছিলেন তখন মার কী চিন্তা করেছিল জান? দেখছি কুমার সিদ্ধার্থ আমার শাসন অতিক্রম করতে ইচ্ছুক, তা আমি কিছুতেই সহ্য করব না। এই বলে মার ১৫০ যোজন উচ্চ গিরিমেখলা নামক হাতির পিঠে চড়ে দেহ হতে সহস্র হাত বের করে তাতে নানারকম অস্ত্রধারণ করত সসৈন্যে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু সিদ্ধার্থকে একচুলও টলাতে পারেনি মার। বরং সসৈন্যে পরাজিত হয়ে অতি বিষন্নমুখে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। মার কী করে জান? দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভে বাধা দেয়, বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করায়। মার হলো পাপী লোকের রাজা। মন-চিত্তে অকুশল মনোবৃত্তি জাগায়ে দিয়ে ও নানা প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে দুঃখমুক্তিকামীদের চিত্তকে বিচলিত করে দেয়া মারের কাজ।
তোমরা সবসময় চারি আর্যসত্য জ্ঞান, প্রতীত্যসমুৎপাদ-নীতি জ্ঞানের সাথে অবস্থান করবে। এসব জ্ঞানের সাথে অবস্থান করলে তবেই তোমাদের সুখ লাভ হবে। কিছুতেই অজ্ঞানতার সাথে অবস্থান করবে না। যত দুঃখ হলো অজ্ঞানতার সাথে অবস্থান করা। আমি বলছি, তোমরা সত্যধর্ম আচরণ কর। মিথ্যাধর্ম আচরণ করবে না। সত্যধর্ম কাকে বলে? যে ধর্ম আচরণ করলে দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া যায় সেটা সত্যধর্ম। আর যে ধর্ম আচরণ করলে দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না সেটা মিথ্যাধর্ম। তোমরা যদি সত্যধর্ম আচরণ কর, তাহলে পাপকর্ম সম্পাদন করবে না। যারা মিথ্যাধর্ম আচরণ করে, তারাই কেবল পাপকর্ম সম্পাদন করে থাকে। বুদ্ধের শিক্ষা হলো সত্যধর্ম জেনে সত্যধর্ম আচরণ করা। সত্যধর্ম আচরণ করা হলে পাপকর্ম সম্পাদন বন্ধ হয়ে যায়, দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব হয়। সবাই বলো, “আমরা সত্যধর্ম আচরণ করব, জ্ঞানের সাথে অবস্থান করব।” বেশ, তাহলে দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে। তোমরা অজ্ঞানতা অন্ধকারে নিমজ্জিত না থেকে জ্ঞানের আলোতে বেরিয়ে এসো। সূর্য উঠলে যেমন চারপাশের সবকিছু পরিষ্কারভাবে দেখা যায় ঠিক তদ্রূপ জ্ঞানের আলোতে বেরিয়ে আসলে কোনোটা সত্যধর্ম, আর কোনোটা মিথ্যাধর্ম তা জানা যায়, বুঝা যায়। তখন মিথ্যাধর্ম ত্যাগ করে সত্যধর্ম আচরণ করা সহজ হয়। মনে রাখবে অজ্ঞানতার সাথে অবস্থান করলে, তোমরা যেখানেই যাও না কেন দুঃখই পাবে মাত্র; কিছুতেই দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাই আমি আবারও বলছি, তোমরা সর্বদা জ্ঞানের সাথে অবস্থান কর।
পরিশেষে তিনি বলেন, তোমরা বর্তমান গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানো ও বিশ্বাস কর। যেই ভিক্ষু বা শ্রামণ গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানবে, বিশ্বাস করবে তার চিত্তে জ্ঞান বিদ্যমান থাকবে। কিন্তু যেই ভিক্ষু বা শ্রামণ গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানবে না, বিশ্বাস করবে না তার চিত্তে জ্ঞান থাকবে না। সবাই বলো, “আমরা গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানবো, বিশ্বাস করব। যেই ভিক্ষু বা শ্রামণ গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানবে না, বিশ্বাস করবে না তাকে দিয়ে ভালো কিছু হবে না। মনে থাকবে তো? “হ্যাঁ ভন্তে, মনে থাকবে।” প্রব্রজিত হয়েও যেই ভিক্ষু বা শ্রামণ বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানে না, বিশ্বাস করে না, সে অজ্ঞানী। তোমাদের এরূপ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে “আমরা বর্তমান গৌতম বুদ্ধের শাসনকালে দুঃখ থেকে মুক্ত হবো, নির্বাণপ্রাপ্ত হবো।” বুদ্ধের শাসনে প্রব্রজিত হয়ে তোমরা হেলায়-ফেলায় অর্থাৎ (অবহেলায়) দিন কাটাবে না, দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভে অবহেলা করবে না। হেলায়-ফেলায় দিন কাটালে, নির্বাণ লাভে অবহেলা করলে কিছুতেই প্রব্রজিত জীবন সার্থক করতে পারবে না, নির্বাণ লাভে সক্ষম হবে না। আমি বলছি, তোমরা সত্ত্বর নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় ঝাঁপিয়ে পড়। যদি অবহেলা কর অর্থাৎ কালকে করবো, পরশু করবো বলে বলে দিন কাটিয়ে ফেল, তাহলে একসময় দেখা যাবে সময়ই আর পাওয়া গেল না। জীবন প্রদীপ নিভে গেল অথচ নির্বাণ লাভের কাজ পুরোটাই বাকী রইল। সে-রকম অবহেলা করলে ইহজীবনে নির্বাণ লাভ করা সম্ভব হবে না। কাজেই তোমরা নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় অবহেলা করবে না। নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টা যত শীঘ্রই করা যায় ততই মঙ্গল। দেরিতে কার্য সম্পাদনে মন-চিত্ত মারের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ে। আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় অবহেলা করবে না। অবহেলা করলে নির্বাণ লাভে সমর্থ হবে না। সবাই বলো, “আমরা নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় অবহেলা করব না, নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করব না।” পূজ্য ভন্তে ভিক্ষুসঙ্ঘকে প্রশ্ন করেন, আগামীকাল করব, আগামীপরশু করব বলে কোনো কাজ ফেলে রাখলে সেটা করা হবে কি? “না ভন্তে, হবে না।” ঠিক তদ্রূপ নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায়ও আগামীকাল করব, আগামী পরশু করবো বললে শেষমেশ প্রচেষ্টা করাই হবে না। আর নির্বাণ লাভ করার কথা তো বহুদূরে। আকাশ কুসুম কল্পনা করার সামিল হবে মাত্র। কাজেই তোমরা অতিসত্ত্বর নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টা আরম্ভ করে দাও। এতটুকু সময়ও দেরি করো না। কিছুতেই আগামীকাল করব, আগামী পরশু করব বলে বিলম্ব করো না। যে ভিক্ষু বা শ্রামণ গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানবে, বিশ্বাস করবে তার পক্ষে নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টা শুরু করা সহজ হবে; এবং সে নির্বাণ লাভেও সমর্থ হবে। কারণ গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানলে, বিশ্বাস করলে মন-চিত্তের মধ্যে জ্ঞান বিদ্যমান থাকে। সেই জ্ঞান তাকে সর্বদা দুঃখমুক্তি নির্বাণ লাভের জন্য উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করায়, তাগিদ দেয়। তাই বলছি, তোমরা গৌতম বুদ্ধের শাসনকে গভীরভাবে মানো, বিশ্বাস করো এবং নির্বাণ লাভের প্রচেষ্টায় অবহেলা করো না। যদি এগুলো মেনে চলতে পার, তাহলে নির্বাণপ্রাপ্ত হতে পারবে।
সাধু, সাধু, সাধু।

Address

Dhamma Media
Khagrachhari
4420

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dhamma Media posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Dhamma Media:

Videos

Share

Category