18/05/2022
পদ্মা নদীর মাঝির কুবের-গণেশ-মালা, প্রাগৈতিহাসিকের ভিখু-পাঁচীর মতো দারিদ্র্যপীড়িত অসাধারণ চরিত্রগুলো নিয়ে জীবনঘনিষ্ঠ গল্পে পাঠক হৃদয় জুড়িয়েছেন #মানিক_বন্দ্যোপাধ্যায়। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক তিনি।
আজ এ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিকের জন্মদিন। ১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে।
তার রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডীয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসীয় শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তার রচনায় ফুটে উঠেছে।
তার নাটক, গল্প, সাহিত্যের সব বিখ্যাত চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজের ওপর পড়া দারিদ্র্যের কষাঘাত ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি পাঠকের কাছে।
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বাবা ছিলেন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাবরেজিস্ট্রার। বাবার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব-কৈশোর ও ছাত্রজীবন কেটেছে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার বিভিন্ন জেলা শহরে।
তার মায়ের আদি নিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এ গ্রামের পটভূমিতেই তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা।
১৯২৬ সালে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯২৮ সালে বাঁকুড়ার ওয়েসলিয়ান মিশন থেকে আইএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু সাহিত্যের পোকা মাথায় ঢোকার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।
সাহিত্যের পথে যাত্রাটা ছিল তার বেশ আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ছাপা গল্প ‘অতসী মামি’ এ আত্মবিশ্বাসেরই ফসল।
মানিক বন্দোপাধ্যায় জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশ ছোটগল্প রচনা করেছেন। পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোট বকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। ইংরেজি ছাড়াও তার রচনাগুলো বহু বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ক্ষুধা, দারিদ্রে পিষ্ট হয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ক্লান্ত-শ্রান্ত এ সাহিত্যযোদ্ধা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, ‘দেখো, দুটি ডাল-ভাতের সংস্থান না রেখে বাংলাদেশে কেউ যেন সাহিত্য করতে না যায়।’
বেঁচে থাকতে দিনের পর দিন ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করেছিলেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর পর রাশি রাশি ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে তার মরদেহ।
১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এ কথাসাহিত্যিক না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।