28/03/2024
জীবনের_গল্প:– আমার নাম ইসরাত জাহান সাথী। সবাই সাথী নামেই ডাকে। ২০০৯সালে পারিবারিক ভাবেই আমার বিয়ে হয়। তখন আমি অনার্সে ভর্তি হয়েছি মাত্র।
__বিয়ের পরে ভালোই ছিলো সব, শ্বশুর বাড়ির সবাই খুব ভালোবাসতো আমাকে। আমার বর ছিলো হাই স্কুলের ইংলিস টিচার!!
–
–আমাদের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির দূরত্ব ছিলো ১০কিলোর মতো। আমাদের বাড়ি(বাপের বাড়ি) থেকে আমার হাসবেন্ডের স্কুল কাছে ছিলো।।
__তাই বেশির ভাগ টাইম ই আমি আমাদের বাড়িতে থাকতাম, আর বর স্কুল+টিউশনি করে রাত ১০টার দিকে আমাদের বাড়িতে আসতো। ও ইংলিসে খুব ভালো শিক্ষক ছিল। আমাদের বাড়ি একদম গ্রামে। এখানে ওর থেকে আর ভালো কোন শিক্ষক ছিলো না..
বেশিরভাগ টাইম ও স্কুলে থাকতো!!. সব ঠিকঠাক ছিলো, দুই বছর খুব ভালোই সংসার কাটলো।
।
।
__২০১১তে আমি প্রেগন্যান্ট হই, শ্বশুর বাড়ি, বাপের বাড়ির সবাই খুব খুশি। আমার হাসবেন্ড ও খুব খুশি হন!!
চারমাসে আমার প্রচুর ব্লাড যেতে শুরু করলো, ডঃ এর কাছে গেলাম সে বেড রেস্ট দিলো। চলে এলাম বাপের বাড়ি একেবারের জন্য,,, বেবি হওয়ার পরে যাবো এই প্লান করেই চলে গেলাম।
।
।
_আমাদের বাড়িতে আমি, আমার মা, ছোট ভাই।
আর ছোট ভাই ক্লাস টেন এ পড়তো তখন।আর বড় ভাবি, এই নিয়ে আমাদের সংসার। আমার বাবা নাই। ছোট ভাই হওয়ার তিন বছর পরেই বাবা মারা যায়। সেই থেকে বড় ভাই আর মা অনেক কস্ট করে আমাদের মানুষ করেন।
বড় ভাইয়া নো বাহিনী জব পায়, সেই থেকে আমার মায়ের কস্ট ঘুচালো..
_ মা বয়স্ক ছিলো তাই ভাবি বাড়িতেই থাকতো.. ভাবি খুবই মিশুক ছিলো, যেকোনো মানুষের সাথে খুব তারাতারি মিশতে পারতো।
——আমি বেডরেস্ট যাওয়ার পরে স্বামীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া নিষেধ ছিলো , একে বারেই কাছে যাওয়া যাবেনা।।
বর এই নিয়ে প্রথম প্রথম একটা ঝামেলা করেছে, বাট তারপর লক্ষ্য করলাম সে ভালোই আছে।। পাশে শুয়ে থাকলেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না, আমার গায়ে হাত ও লাগাচ্ছে না এমন..
-আমি ভাবলাম হয়তো ডঃ নিষেধ করেছে তাই দূরে দূরে থাকছে, বাট এটা ব্যাপার না!!
–
–
দিন যতো যাচ্ছে বরের অবহেলা ততোই বাড়ছে, আগে রাতে বাসায় আসতো আর এখন আসরের আজানের পর পরই বাসায় আসে।। আর আমার ভাবির সাথে খুব একটা অন্য রকম সম্পর্ক..
আগেও ভালো সম্পর্ক ছিলো, যেহেতু ভাবি অনেক মিশুক ছিলো তাই। বাট এখন কার রিলেশন টা চোখে পড়ার মতো। সন্দেহ করিনি কখনো, কারন ভাবি অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলো। এবং এতো দিনে তার কোনো খারাপ কিছু চোখে পড়েনি…
।
।
__ একদিন ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যায়, উঠে দেখি বর পাশে নেই!!
__আমিও ধীরে ধীরে উঠলাম, উঠে দেখি সিড়ির উপর বসে বসে ফোন টিপছে।
বললো ঘুম আসছিলো না, তাই উঠে আসলাম।।
,
,
একদিন ওর গেঞ্জি খুজছিলাম, কোথাও পাচ্ছিলাম না। পরে ভাবি এনে দিলো তার রুম থেকে, আমিও ভাবলাম হয়তো ভাবি কাপড় আনার সময় সব একসাথে এনেছে তাই তার রুমেই ছিলো…
__ তারপর স্কুল থেকে বিভিন্ন সময় কিছু প্রয়োজন হলে ভাবির নাম্বারে কল দিতো, ভাবি এসে আমাকে বলতো।।
……. আরেকদিন ভাবির নাম্বারে কল দিছে আমি সামনে তাই ভাবি আমাকে ফোন টা দিলো। আমি কথা বলতেছি, আর ভাবি উঠে অন্য রুমে গেলো…
কি যেনো মনে করেই হঠাৎ ভাবির ফোনের ইনবক্সে গেলাম, এটাই হয়তো আমার জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল ছিলো….
__ ইনবক্সে দেখি বরের মেসেজ, একটা মেসেজ এমন ছিলো ‘ কি দরকার ছিলো আমার রাতের ঘুম টা কেড়ে নেয়ার? এখন না পারছি তোমাকে বুকে নিতে না পারছি ঘুমাতে’
এই মেসেজ দেখে আমি মাটির নিচে ঢুকে যাবো, নাকি পানিতে ঝাপ দিবো বুজতে পারছি না। হাত পা থরথর করে কাপছে… নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছিলো মিনিটের মধ্যে আমি পাথর হয়ে গেছি।।
ভাবতেছি এটা কিভাবে সম্ভব?
আবার মেসেজ টা পড়ছি। বার বার নাম্বার টা মিলাচ্ছি, বাট একি জিনিস চোখের সামনে। কিন্তু সত্যিটা আমি মেনে নিতে পারছি না। এটা কোনো ভাবেই যে মেনে নেয়া যায় না…
_ প্রেশার বেড়ে গেলো, শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। মা চিৎকার দিয়ে বলছে আমার মেয়েটা কেমন জানি করতেছে। তোমরা কে কোথায় আছো, সবাই এসো।।
।
।
মায়ের প্রতিটি কথা কানে যাচ্ছে, কিছু যে বলবো সেই শক্তি নেই আমার। ভাবি, আশেপাশের সবাই আসলো,, কিছুক্ষন পরে কথা বলতে পারলাম…
___বর ও শুনে তারাতাড়ি বাসায় আসলো, ততোক্ষনে আমি কাউকে কিছু বললাম না। শুধু চোখের পানি পড়ছে, আর হাত পা কাপছে…
ভাই অনেক কস্ট করে বিয়ে দিয়েছে, একা ইনকাম করে। আর বিয়েতেও অনেক খরচ হয়েছে,,, এরপর এমন কছু শুনলে ভাই, আমার মা সবাই মরে যাবে। আমি খুব আদরের,,, এই ব্যাপার গুলো কেউ মেনে নিতেই পারবে না।
রাতে বর বললো, কি ব্যাপার হঠাৎ করে কি হলো তোমার। সকালেও তো সব ঠিক ছিলো? আমি কথা না বলেই অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছি…
আমার মাথায় হাত দিচ্ছে, তখন আরো বেশি ঘৃনা হচ্ছিলো!!
—কাদতে কাদতেই ঘুমিয়ে গেলাম!! রাত ২/৩টা হবে। তখন দেখি বর পাশে নাই!!
আমি উঠে টর্চ নিয়ে বাহিরে গেলাম…
চলবে…. সত্য ঘটনা অবলম্বনে
বি:দ্র: এই কাহিনি টা একজন আপুর, তার সাথে ঘটে যাওয়া তার জিবনের গল্প।