17/12/2024
আপনার স্বামী যদি আলেম হন, সারাক্ষণ দীন নিয়ে ভাবেন, দাওয়াতের কাজ করেন, তাহলে তার প্রতি আপনার আলাদা সম্মান থাকা উচিত। আলেম হওয়া যেমন সহজ নয়, আলেমের স্ত্রী হওয়াও সহজ ব্যাপার নয়। অনেকেই বলেন, অমুক সমাজে যত বড় ব্যক্তিই হোন, বাসায় হোমমিনিস্টারের সামনে বিলাই। কথাটা হয়তো ফান হিসেবে বলা হয়, কিন্তু বাস্তবতা এমন হলে, সেটা কি ফান হিসেবে উড়িয়ে দেয়ার মতো?
সারাক্ষণ দীনের মেহনতে লেগে থাকা লোকগুলো ঈর্ষাযোগ্য। তাদেরকে যদি স্ত্রীরা পেটের জন্য খাটা পুরুষদের মতো কেবল বেতনের নোট দিয়ে হিসেব করে, তাহলে ব্যাপারটা দুঃখজনক। মাদারিসে কওমিয়্যা কেবল উপার্জনের জন্য আলেম তৈরি করে না; তারা সমাজের দীনি চাহিদা পূরণ, দীনি শিক্ষার প্রচার এবং দাওয়াতের মেহনত এগিয়ে নেয়ার জন্যই নায়েবে-নবি হিসেবে তৈরি হন। সুতরাং তাদেরকে টাকা দিয়ে মাপা অন্যায়। যদি এটুকু বুঝ না থাকে, তাহলে আপনি আলেমের স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। এখানে ক্যালকুলেশন সম্পূর্ণ আলাদা।
তিনি প্রথমত আপনার স্বামী, দ্বিতীয়ত আলেম এবং তৃতীয়ত দীনের একনিষ্ঠ দায়ী। পিঠ সোজা রাখার মতো ইনকাম করার পর তিনি দিনরাত দীনি দাওয়াতে কাটিয়ে দেন। তাই, তাকে স্বামী হিসেবে সম্মান করুন, আলেম হিসেবে শ্রদ্ধা করুন, দায়ী হিসেবেও মর্যাদা দিন। কেবল স্বামীর সন্তুষ্টিই স্ত্রীর জান্নাতে যাওয়ার কারণ হলে তাকে আলিম ও দায়ী হিসেবে সম্মান করা, স্ত্রীর মর্যাদা বহুগুণ বাড়াবে। আলেম হিসেবে তিনি যত ভালো কাজ করবেন, সবগুলোর সওয়াব স্ত্রীও পুঙ্খানুপুঙ্খ নিজের আমলনামায় পাবেন।
অতএব, আপনার আলেম বাসায় ফিরলে তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন। জামাটা জায়গামতো রাখুন, রুমালটা ভাঁজ করে নিন। পারলে একগ্লাস পানি দিন। আগেই কত টাকা ইনকাম করে এসেছে না জিগ্যেস করে, তার দাওয়াতি মেহনতের খোঁজ নিন। সে কোথাও জনকল্যাণে যেতে চাইলে তাকে ‘গিয়ে কী লাভ’ বলে আটকে দেবেন না, আলেম মানে সে সমাজের বিশেষ ও নির্বাচিত ব্যক্তি— লাভ ছাড়াও নিস্বার্থে সমাজকে তার বহুকিছু দেয়ার আছে। সেগুলো বুঝুন। নতুবা আপনার স্বামী ও অন্যদের ভেতর পার্থক্য খুঁজে পাবেন না। অন্যায় তুলনা শুরু করবেন।
আলেমের স্ত্রী হতে হলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন, তারা আপনাকে টাকার বিছানায় রাখতে পারবে না। দীনের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়ে, তারা হয়তো নিতান্ত পেটবাঁচানো জীবন বেছে নিবে। আপনাকেও সঙ্গ দিতে হবে। দরকারে মাটিতে শোয়া লাগবে, ডাল-আলু ভর্তা খেয়ে বাঁচা লাগবে। গাড়ি-বাড়ি তার হয়তো হবে না, মেনে নিতে হবে। এইটুকু মানসিক প্রস্তুতি কোনো স্ত্রীর থাকলে, তার স্বামী দায়িত্বসচেতন না হলেও সে তার পাওয়ারহাউজ হিসেবে কাজ করবে। এভাবে সমাজে না গিয়েও, স্বামীর যাবতীয় সামাজিক ও দাওয়াতি কাজের সওয়াব স্ত্রী নিজের করে নিতে পারবে।
আর যদি মাকসাদ থাকে জাগতিক আরাম-আয়েশ, তাহলে আগেভাগে সিদ্ধান্ত নিন। সমাজে দাড়িওয়ালা দুনিয়াদারের সংখ্যা বেড়েছে; ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি চাকুরিজীবী। তাদের কারো জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। অযথাই ‘মা লি ওয়া লিদ-দুনইয়া’ চেতনা লালন করা লোককে স্বামী করে, তাকে আলেম থেকে দুনিয়াদার বানানোর মেহনতে যুক্ত হয়ে লাভ কী? তার ভেতরের দায়িসত্তাকে মাটি দিয়ে, তাকে টাকার মেশিন বানাতে পাওয়ারহাউজ হিসেবে আপনি যে ভূমিকা নেবেন, পরকালে সেটার দায় এড়াতে পারবেন?