26/08/2022
নাম তার ভূবন, বাড়ি বাংলাদেশ এর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, মা বিদায় হয়েছে অনেক আগে ওপারে, ভ্যান চালক বাবার তৃতীয় সন্তান সে, বাবার বয়স ৬০ পার হয়েছে তবে পরিবার এর জীবন জীবিকার অন্বেষনে তাঁকে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়।বড় মেয়ে নাম জবা, ডিভোর্স হয়ে গেছে তার, যশোরের একটা পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করে, মেজো বোন বাক প্রতিবন্ধী, কোন রকম এ জীবন পার করছে সে, বাবার সপ্ন ভূবন কে নিয়ে, বড় কিছু বানিয়ে, তার জীবন সংগ্রাম এর পথ সমাপ্ত ঘোষণা করবে। চলুন দেখি কতটুকু বাবার সপ্ন পূরণ এ কাজ করবে ভূবন,,,
এ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় ভূবন ভালো ফল করেছে, চান্স পেয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বিভাগ এ, বাবার সপ্ন পূরণ এ জজ হওয়ার এক বুক আশা জাগিয়ে রংপুর থেকে খুলনা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে এক অচেনা শহর এ প্রবেশ তার, এটা তার চির চেনা গ্রাম নয় তার শহর থেকে বহু দূরত্বের পথ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ভালো ই চলছিল তার, ভালো ছাত্র হওয়ার দরুন টিউশন পেতে কোন সমস্যা হয় নাই তার, ভরপুর আয়োজন এ এই জীবন তার পূর্বের জরাজীর্ণ তা থেকে বের করে এনে সামনে উদ্যমতায় নতুন দিনের আশা জাগিয়ে তাকে সপ্ন পূরণ করতে সাহস জুগিয়ে চলছিল। টানা দুই বছর পার হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন তার, তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এখন ভূবন, এর ভিতর অনেক কিছু ই ঘটছে তার জীবন এ, অনেক মেয়ে এসেছে তার জীবন এ আত্মতৃপ্তির রসদ জুগিয়েছে তাদের থেকে সে , ভূবন এখন রোমান্টিক বয় হয়ে গেছে, পড়াশোনা চলছে ঠিকই কিন্তু কন্যা জুগলের শিহরন তার চায় ই চায়, নিত্যনতুন চায়ের স্বাদ নিতে যেমন আমরা অনেকই ভালোবাসি তেমনি ভূবন নারীর নেশায় মত্ত হয়ে গেছে, না করে রাজনীতি, না করে মাস্তানি, রংবাজি, চেচড়ামি, বেয়াদবি, নিপাট নম্র ভদ্র সে, খালি সমস্যা ওই জায়গায়, দিশেহারা এক নারী নয় বহু নারীর খোঁজে সে,, এই যেমন টিউশন করতে গিয়ে, ছাত্রের মায়ের সাথে সম্পর্কে জড়ানো, সেখান থেকে টাকা আত্মসাৎ, বাসায় রান্নার কাজের মেয়ের সাথে প্রেম, বন্ধুর বোন ও বাদ য়ায় নি তার থেকে, দেখতে নিপাট ভদ্র হওয়ায়, কেহই তাকে খারাপ ভাবতে পারে না,, বাসার কেহই জানে না ভূবণ এমন হয়ে গেছে, বিশ্বিবদ্যালয়ের ছোট ভাই হাসিব তার খুবই প্রিয় ব্যাক্তিত্ব । এখন আর আগের মত পড়াশোনা ভালো লাগে না তার, অনলাইন এর জগৎ এ কাজ করছে সে , আবার জমির দালালদের সাথে ও কাজ করছে সে, বিভিন্ন জায়গায় টাকা ছড়িয়ে সুদ এর ব্যাবসাও করছে ভূবন, নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্ষা, ক্লাস,কিছুই করছে না সে, এখন সে অনেক বড় ব্যাবসায়ী হতে চায়, অনেক টাকা কামাতে চায়, হাসিব কিংবা স্যার জিগাসা করলে ভূবন তার মত উত্তর শুনিয়ে দিয়ে তেজ দেখিয়ে চলে য়ায়, বলে পড়াশোনা করে কেহ বড়লোক হইছে, হইছে চাকর সব, জীবন এ কোন স্বাধীনতা নাই চাকরিতে বা অন্য কিছু তে, তাই সব কিছু বাদ দিয়ে সে এই সব ব্যাবসা করতে চায়, লাখ টাকা আয় করতে চায়, হাজার টাকা তার জীবন এ পোষাবে নয়, হাজার কোটি টাকা চায় তার জীবন এ , তাই এখন সব কিছু বাদ শুধু ব্যাবসাই চলবে, নিত্যনতুন মেয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাবসা এবং মাদকে মোড়ানো শরীর টুকরো নিয়ে এখন তার জীবন চলমান, বাড়িতে বাবা কিংবা বোন কেহই জানে না এসব কিছু তাদের কে বুঝতে ও দেয় না চালাক ভূবন, যত টাকা মাসে আয় করে তার থেকে বেশি খরচ হয় তার, মাস শেষে বাবা কিংবা বোন এর কষ্টে অর্জিত টাকাতেও ভাগ বসায় সে, এতটা নির্দয় হয়ে গেছে সে এখন আর তার কিছু মনে হয় না। বাবা, বোন তো তাদের সর্বোত্রো উজার করে টাকা দিচ্ছে, টাকা না জমিয়ে, ভালো পোশাক, রসদ কিংবা ভালো খাবার না খেয়ে, তারা তো ভাবছে তাদের ভাই জজ হবে, তাদের মনের আশা পূরণ হবে, তাদের সব কষ্টের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল তার ভালো লাগে না তার, কিন্তু ক্যাম্পাস খুবই তার প্রিয়,,
এই তো কিছু দিন আগে ক্যাম্পাস মাঠে মাদক গ্রহন কালে, চোখের সামনে পড়ে য়ায় রাহী ম্যাডামের, আপমান করার ফল সরূপ সে ম্যাডামের শ্লীলতাহানি করে ছেড়ে দিয়েছিল, জুরিনিয়র পোলাপান পেলে কঠোর থেকে কঠোরতার আচরণ করে তাদের সাথে। তবে একটা ভালো দিক ইউনিভার্সিটি মেয়ে তার পছন্দ নয়, সে একদমই তাদের সাথে আচরণ তো দূরেই থাক কথাও বলে না,,
ভূবন এর বন্ধুরা এখন শেষ বর্ষে কদিন বাদেই শেষ করবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন, কিন্তু ভূবন এখন ও পড়ে আছে দ্বিতীয় বর্ষে, বাড়ি থেকে জিগাসা করলে বলে চতুর্থ বর্ষে আছি, এসব দেখে সে তার বন্ধু দের গালাগাল করে বলে এরপর কি করবি, চাকর হবি, হরকি টেনে গাধার মত খাটবি, কচ্ছপের মত বেতন পাবি নিয়ম করে বউ বাচ্চার ঝাঁটা লাথি খাবি, যা দূর হ সব!
এই বেপরোয়া জীবন যাপন এর ফল সরূপ রাস্তায় একদিন গুরুতর দূর্ঘটনার ঘটে যায় তার জীবন এর, আবুনাসের হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ডাক্তার তাঁকে তিন মাস এর বেড রেস্ট দেয়, এবং সে আবার তার গ্রাম এর বাড়িতে চলে যায়, জীবন সম্পর্কে বুঝতে থাকে সে আবার, তার বাক প্রতি বন্দি বোনের সেবা তাকে আবার ভাবতে শুরু করায়, তার বড় বোন এর জমানো টাকা প্রায় শেষ, সব তার ভাই এর পেছনে ব্যায় করছে, সর্বশেষ নামমাত্র দেনমোহর এর টাকা যেটুকু ছিল তাও প্রায় শেষ এর দিকে, এসব আবার ভূবনকে ভাবাতে শুরু করে, ভাবে এইবার সব কিছু ছেড়ে নতুন উদ্যমে তার জীবন শুরু করবে।
ভূবণ এর বাবা এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়র সাথে হঠাৎ এর ই মধ্যে তার বিবাহ ঠিক হয়ে যায় , নাম তার মিন্নী সহজ সরল সাদামাঠা গ্রাম্য, মেয়েটা বেশ সুন্দরী, চাষি পরিবার, মোটামুটি ধনী পরিবার, ভূবণ তার বোন এর কথা শোনে ছোট থেকে, তার বোন এর ও পছন্দ হইছে মেয়ে কে,অবশেষে বিবাহ হল মিন্নীর সাথেই, ভূবন শপথ নিল পূর্বে যা হইছে হইছে, এখন থেকে সে মিন্নী কেই শুধু চাইবে,,,,,,
আসলেই কি ভূবন ঠিক হয়ে যাবে?, নাকি আবার আগের মত বেপরোয়া জীবন শুরু করবে??? পড়তে থাকুন।
মিন্নীর সাথে ভালোই সময় কাটছে তার, ছোট বোন এর সাথে তাল মিলিয়ে ভূবন এর সেবায় ব্যাস্ত সময় পার করছে সে ও , ভূবন ও খুশি মিন্নী কে পেয়ে, নতুন করে জীবন শুরু কারর প্রত্যয়ে, সুস্থ হয়ে আবার গ্রাম ছেড়ে খুলনার পথে রওনা হচ্ছে সে,, শশুর বাড়ি থেকে গাড়ি পাইছে, কিছু টাকা ও পাইছে, মিন্নী রা দুইভাই বোন, মিন্নীর ভাই ট্রাক ড্রাইভার, খুব বেশি দূর পড়াশোনা করেনি, তাদের ও ইচ্ছে, তাদের জামাই জজ হোউক।
মাস ছয়েক খুব ভালো ভাবেই চলল, পরিবার, মিন্নী কে নিয়েই তার সপ্ন আবার আগের মত এলোমেলো হয়ে গেল, বস্তিতে বসবাস সবজি বিক্রেতা সুলতানা আপার মেয়েকে, তার বাসায় মোটরবাইক এ নামিয়ে দিয়ে আসার কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে কৌশলে ভুবন তার বাসায় এনে জোরপূর্বক ধর্ষন করে।
সুলতানা আপা থানায় মেয়েকে এনে, অভিযোগ দায়ের করে ভূবন এর বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলার, এবার এক অন্য খেলা শুরু হয়ে গেল ভূবন এর জীবন এ পুলিশ তাকে ধরে জেলে ডুকিয়ে, তার বাবাকে ফোন করল, তার বাবা হতভম্ব এর মত অবাকবস্তুু হয়ে, মিন্নীর ভাই বিল্টুকে নিয়ে খুলনা আসল, ভূবন এর পরিচিত সাংবাদিক কাকা মিজান আসল হাসিব আসল থানায়, সব অভিযোগ শুনল, পুলিশের কিছু তালবাহনা মিটিয়ে, মোটর গাড়ি ছাড়িয়ে বিল্টু রংপুর এর পথে রওনা দিল, আবার কাল আসবে বলে। মিজান কাকার মাধ্যমে উকিল ধরা হল, হাসিব, আব্বা সহ কোট এ তার সব হিসেব নিকাশ এর ফলাফল কতদূর এগোবে জানার চেষ্টা করল,।
জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হল ভূবন কে, শুরু হল তার নতুন জীবন, সে সপ্ন নিয়ে তার পথচলা শুরু হয়েছিল বেপরোয়া জীবন যাপন এর ফলে তার জীবন এখন নর্দমার আলোতে আলোকিত বা উজ্জীবিত, বৃদ্ধ বাবার চাওনির আত্মনাদ কতদূর প্রবমান হবে,,, ভুবন এর যে নারী শিশু নির্যাতন আইনের ৯ ক অনুযায়ী মৃত্যু দন্ড ও হতে পারে,,
পড়তে থাকুন দেখুন শেষ পর্যন্ত কি হয়,আহারে জীবন !!!!!!
লেখা ফারদীন জামান স্বাধীন ☺️
#জীবন_কোন্দলে_ভূবন ১ম