Mita Parvez Blog

Mita Parvez Blog আসসালামু আলাইকুম "মিতা পারভেজ ব্লগ" সবাইকে স্বাগত। জীবন ছোট,হিংসা নয়, বরং ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও আর গরিব দুঃখী পাশে থাকো।
(21)

ছাইড়া দিছি তারে পেরেশান করা,যার নিজের ইচ্ছা নাই কথা কওনের, কি দরকার তারে জবরদস্তি করা?তার লাইগ্যা আমি সব ছাইড়া দিছি, তয় ...
08/10/2024

ছাইড়া দিছি তারে পেরেশান করা,যার নিজের ইচ্ছা নাই কথা কওনের, কি দরকার তারে জবরদস্তি করা?তার লাইগ্যা আমি সব ছাইড়া দিছি, তয় হেই অন্য কারোর লাইগ্যা আমারে জীন্দা লা/শ বানাইয়া দিলো।

হেই তো আমারে ভুইল্যা রইছে ঠিকই।তয় আমি কেন তারে ভুলবার পারি না?ক্ষণে ক্ষণে ক্যান তার কথা মনে পড়ে?তার কাছে ভালোবাসা ফুটপাতের সস্তা কোনো পূণ্য, তাইলে আমার কাছে এত দামী ক্যান?

স্বার্থে আঘাত লাগলে হেই কত্ত সহজেই নিজের রঙ রুপ বদলাইবার পারে।আমি ক্যান পারি না?
মাইনষ্যে কয় কাজ কামের মধ্য থাকলে নাকি ভুইল্যা থাহন যায়।কই আমি তো এক মূহুর্তের লাইগ্যা ভুইল্যা থাকবার পারি না!চোহের সামনে প্রতিক্ষণে তার মায়ামুখ খানি ছবির লাহান ভাইস্যা ওঠে।

খাইতে গেলে আমার খাওন অয় না।কষ্টগুলা দলা পাইক্কা গলায় আইসা আটকায় যায়।গলা দিয়া ভাত নামে না।কত রাইত অয় শুইবার গেলে চোহে নিদ্রাদেবী হাত বুলাইয়া দেয় না। এপাশ ওপাশ কইরা গলা কাটামুরগী লাহান ছটফট করি।না চাইতেও চোখ দিয়া পানি গড়গড় কইরা পড়ে।

ভাগ্যিস চোহের পানির কোনো রঙ নাই।নইলে সকালে ওইঠা আম্মার কত প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া লাগত! অথচ আমার কাছে কোনো উত্তর নাই।

আমি তোমারে ভুইল্যা যাবার চাই।তোমার স্মৃতির সাথে তোমার নামটাও মনে রাখবার চাই না।কারণ তুমি মধু রুপি সেই বিষ; যেই বিষ তুমি তোমার বিশ্বাসের হাত দিয়া আমারে খাওয়াইছো যতন কইরা।আমি বাঁচবার চাই।
তোমারে কেমনে ভুইল্যা যামু?যেই জায়গায় রাখছি, সরাইতে গেলেই মইরা যামু।

কহনো না কহনো তুমি বুঝবা; কেউ একজন আ'ছিলো!
যে কোনো কারণ ছাড়া, বিনা-স্বার্থে তোমারে চাইছিলো।

08/10/2024

#প্রিয়_ডাক্তার_সাহেব_আমার

কিন্তু আয়ানা তো থামছে না। মেয়েটা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে। সকালে ইভার মসৃণ ঠোঁট গুলো কেটে র'ক্ত বের হওয়া স্থান থেকে আবার গলগল করে র'ক্ত বের হচ্ছে। এমন সময় ইভান শাহরিয়ার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বসার রুমে প্রবেশ করে।দরজা চাপানো ছিল তাই আর কলিং বেল বাজাতে হলো না। ড্রইং রুমে এমন অবস্থা দেখে ইভান সে দিকে তাকায়। তারপর গম্ভীর মুখশ্রী করে ওর মায়ের কাছে গিয়ে আয়ানার হাত ধরে ইভাকে আয়ানার থেকে ছাড়িয়ে সোফায় বসায় তারপর আয়ানার উদ্দেশ্য বলে।

-"মা কি হইছে এভাবে ইভাকে মারছো কেন? "

আয়ানা তেতে উঠে বলে।

-"এই হা'রা'মী চোর। মা বাবা শিক্ষা দিয়ে যেতে পারে নাই তাই এক লক্ষ টাকা চুরি করছে।"

আয়ানার কথা শুনে ইভান শাহরিয়ার অবাক হয়ে ইভার মুখের পানে তাকায়।মেয়েটা মেঝেতে বসে আছে। ফর্সা মসৃণ ঠোঁট গুলো কাঁপছে মেয়েটার।অসহায় দৃষ্টিতে আয়ানা আর ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব ক্লান্ত।তাই ইভান আয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে।

-"কি বলছো মা ইভা চুরি করছে।আমার বিশ্বাস ইভা কোন দিন কিছু চুরি করতে পারে না।"

-"তোর বিশ্বাস তুই পানি দিয়ে ধুয়ে খা।আমি তো এই মেয়েকে বিন্দু মাত্রও বিশ্বাস করি না।আর তুই এগুলোর মধ্যে না ডুকে যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।এটা আমি দেখে নিবো।"

-"মা ইভা এমন কিছু করে নাই আমার মনে হচ্ছে। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আর তুমি বলছো এগুলোর মধ্যে আমাকে ডুকতে না।কিন্তু অন্যায় ভাবে কাউকে দোষারোপ করলে মুসলিম হয়ে আমি কিভাবে সেটা মানবো বলো।নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া তুমি ওরে দোষারোপ করতে পারো না।"

ইভান কাঠকাঠ কন্ঠে কথাগুলো বলে।তা শুনে আয়ানা ইভার দিকে রক্তবর্ণ চোখে চেয়ে রেগে ইভানের উদ্দেশ্য বলে।

-"ইভান তুই এই মেয়ের হয়ে আমাকে কথা শুনাচ্ছিস।এখন এই রাস্তার মেয়ে তোর কাছে বড়ো হয়ে গেলো।"

নিলা ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে।

-"খালামনি বাদ দেও এসব থার্ড ক্লাস মেয়েদের কথা। নিজের রুপ দেখিয়ে ছেলেদের পাগল করা আর মানুষের অন্নবস্ত্র নষ্ট করা ছাড়া আর কোন কাজ নাই এদের।"

নিলার কথা শুনে ইভান শাহরিয়ার নিলার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। যার দারুন নিলা চুপ হয়ে যায়। আর আয়ানা রাগে গজগজ করতে করতে নিজের কক্ষে চলে যায়। আয়ানা জানে ইভান খুব সহজে রাগ দেখায় না কিন্তু যখন রাগ উঠে তখন তা খুব ভয়ংকর রুপ ধারন করে। আয়ানার ইভার উপর রাগ আরো বেশি বাড়লো কারণ ইভান শাহরিয়ার আয়ানার পক্ষ না নিয়ে ইভার হয়ে কথা বলছে।

(২৯)

ইভা শুয়ে আছে নিজ কক্ষে। তাঁর পাশে দাড়িয়ে আছে ইভান শাহরিয়ার আর ইরা, সোনালী ইভার মাথার কাছে বসে আছে।ইভানের বাবা আতিফ শাহরিয়ার এসে ইভাকে দেখে গেছে।

"তখন আয়ানা নিজের রুমে যাওয়ার পরে ইভান শাহরিয়ার ইভার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা সেন্সলেস হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তাই ইভান ইভার সামনে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে ইভাকে পাঁজা কোলে তুলে ইভার রুমে নিয়ে আসে। ইভানের পিছু পিছু ইরা আর সোনালীও আসে। কিন্তু ইভাকে ইভান কোলে তুলে নেওয়ায় নিলা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আর রক্তবর্ণ চোখে সে দিকে তাকিয়ে থাকে। সাথে ইভার উপরও আগের থেকে দ্বিগুন রাগ জর্ম্ময়।

"ইভান ইভাকে ইভার রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর ইভার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ইভার মসৃণ ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ইভানের চোখ জোরা আটকে যায়। ওর সাহস হয় না ইভার কাটা ঠোঁট পরিস্কার করে ড্রেসিং করার।হসপিটালে কতো বড়ো বড়ো রোগের রুগীকে ইভান চিকিৎসা করে। কতো মেয়েকে ইভান চিকিৎসা করে। কিন্তু এমন অনূভুতি হয় না।তবে ইভাকে দেখে ইভানের এমন মনে হচ্ছে কেন সে বুঝতে পারছে না।কেমন অদ্ভুত শিহরণ হৃদয়ের প্রতিটি কোণায় কোণায় দোল খেয়ে যাচ্ছে। ইভার বু'কের তিলটাও দৃশ্যমান হয়ে আছে। যা ইভানকে অবাধ্য পিছুটানের মতো টানছে।তাই ইভান ইভাকে চেকআপ করে প্রয়োজনীয় ঔষধ আনার জন্য উঠে দাড়িয়ে ইরাকে বলে ইভার ঠোঁটের কাটা অংশ ড্রেসিং করে দিতে।তারপর সে ঔষধ আনার জন্য বেড়িয়ে যায়।

(৩০)
ইভান শাহরিয়ার এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ইভার পানে তাকিয়ে থাকে। ইভার মুখে কেমন যেন অদ্ভুত এক মায়া আছে। যা ইভানকে অবাধ্য পিছুটানের মতো বারবার পিছু ডাকে। পুরো হৃদয়েকম্পন হয় কায়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেঁপে উঠে। পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত শিহরণ ভয়ে যায়। কই অন্য কোন মেয়ের আশেপাশে বা অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকালে তো ইভানের এমন হয় না। তাহলে ইভার দিকে তাকালে শরীরে এমন অদ্ভুত শিহরণ ভয়ে যায় কেন?

 #অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি নম্রতা আলমারি গোছাচ্ছে। সভ্যতা ঘরে ফেরামাত্র তাকে নম্রতার প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো। নম্রতা পার্সেল নি...
08/10/2024

#অনাকাঙ্ক্ষিত_অতিথি

নম্রতা আলমারি গোছাচ্ছে। সভ্যতা ঘরে ফেরামাত্র তাকে নম্রতার প্রশ্নের মুখে পড়তে হলো। নম্রতা পার্সেল নিয়ে নানা কথা বলার চেষ্টা করছে, খানিকটা রাগও দেখাচ্ছে। সভ্যতা সেসবের তোয়াক্কা না করে রাগান্বিত ভাব নিয়ে বলল,

'আমি কি যেচে গিয়ে প্যাকেট নিয়ে এসেছি? পার্সেল এসেছে, তাও বাড়িতে। আমি তো জানতাম-ও না কে পাঠিয়েছে। শুধু শুধু আমাকে বকছিস। বকতে হলে ওনাকে বক, বকা দিতে দিতে এমন হাল করে ফ্যাল যাতে এমন ছ্যাঁচড়ামি আর না করে। ভালোবেসে সব ছ্যাঁচড়া হয়ে গেছে। অসহ্য!'

নম্রতা চুপ হয়ে গেল। সভ্যতা সহজে রাগে না। বিশেষ করে নম্রতার সামনে। তাই নরমসুরে বলল,'ওনাকে কেন মানা করিস না?'

'আমি কেন মানা করবো? তোকে মানা করেছিলাম, আরীব ভাইকে ভালোবাসতে? তাহলে মাহিন ভাইকে কেন মানা করবো? যার যাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করবে, তাকে ভালোবাসবে। আমার কি? এসব ভালোবাসার চক্করে পড়ে তোর মতো কান্নাকাটি করার প্লান নেই আমার। তাই যার ঝামেলা সে মেটাও।'

বলতে বলতেই থ্রি-পিচ নিয়ে বাথরুমের দিকে অগ্রসর হলো সভ্যতা। কন্ঠে মিষ্টি গানের সুর,
"সখি ভাবনা কাহারে বলে,
সখি যাতনা কাহারে বলে,
তোমরা যে বলো দিবস রজনী,
ভালোবাসা, ভালোবাসা।
সখি ভালোবাসা কারে কয়.."

নম্রতা মুগ্ধ হয়ে সভ্যতার গান শোনে।মেয়েটার চমৎকার গলা। কিন্তু স্বভাবটা একটু তেতো হয়ে গেছে। বড় বোনকে মান্যই করেনা। এখন নম্রতার নিজেকেই ছোট মনে হয় সভ্যতার সামনে। কথায় কথায় ওর সেই ছোট্ট পিহু ওকে শাসন করতে চলে আসে। মেয়েটা এত বড় হয়ে গেল কবে?
বিছানার ওপর বালিশে হেলান দিয়ে বসে মাহিনের কথা ভাবছে নম্রতা। গত দু-বছর ধরে মানুষটা ভালোবাসা প্রকাশ করছে। বুঝতেই চাচ্ছে না নম্রতার এখন ভালোবাসতে ভয় করে। সে হয়তো ভয়টা কাটিয়ে তুলতে পারবে না, আবার হয়তো পারবে, কিন্তু সময় লাগবে।

নম্রতা কতবার মাহিনকে রিজেক্ট করেছে তারও কোনো হিসেব নেই। আস্তে আস্তে নম্রতা পুরোনো ভুলের পথে পা বাড়াবে আশঙ্কাটা নেহাত-ই তুচ্ছ নয়। একবারের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি। আবারও একই ভুল করলে নিজেকে সামলাবে কি করে? এসব ভেবেই বিয়ে, প্রেম, ভালোবাসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সে। কিন্তু মাহিন কিছুতেই পিঁছু ছাড়ছে না। সভ্যতা চাইলে মাহিনকে আটকাতে পারত কিন্তু সে এমন কিছু করবে না বুঝতে পারছে নম্রতা।
এর পরিণতি কি হবে শেষে? মাহিনের পাগলামিতে সায় দিতে হবে না তো? ভাবলেই শিউরে উঠছে। সে অপেক্ষা করতে থাকে সভ্যতার জন্য। সভ্যতা আসলে বিষয়টি নিয়ে গুরুতর আলাপ করতে হবে। সভ্যতা শাওয়ার নিয়ে ফিরে আসলে তাকে সামনে বসিয়ে নম্রতা কঠিনস্বরে প্রশ্ন করে,

'কি প্লান করছিস? একদম সত্যি কথা বলবি।'

সভ্যতা ফোনে চোখ রেখে বলল,'আমি ভালো মানুষ খুজছি। তোরা তো বিয়েশাদী করবি না। তোদের জন্য আমার আব্বু আম্মু নাতি-নাতনির সুখ থেকে বঞ্চিত হবে। এটা কি করে মেনে নেই? তাই তোদের জন্য, শুধুমাত্র তোদের জন্য স্যাক্রিফাইজ করার কথা ভাবছি। বাধ্য হয়ে একটা ছোকরাকে ধরে তার গলায় মুক্তোর মালা হয়ে ঝুলে পড়বো। আপাততো এটাই আমার প্লান।'

নম্রতা বিরক্ত চেহারায় বলল, 'মাহিনের কথা শুনতে চাচ্ছি।'

সভ্যতা অবাক হবার ভান করে,'কে মাহিন?কোন মাহিন? তুই ছেলেদের কথা আমার কাছ থেকে জানতে চাচ্ছিস? তোর মনে হয় আমি ছেলেদের খোঁজ রেখে বেড়াই? বিশেষ করে ওইসব ছ্যাঁচড়াদের।'

'আহ্ পিহু।উনি আমারও বড়।রেসপেক্ট দিয়ে কথা বল।'

'বড় বলে ছ্যাঁচড়াকে ছ্যাঁচড়া বলা যাবে না? আশ্চর্য! সত্য বলতে দ্বিধা কি? তোর মনে হয় না উনি ছ্যাঁচড়া? দুই বছর ধরে পেছনে পড়ে আছে, ভালো মানুষ হলে কেউ এমন করে? এসব ভালোবাসা নাকি ছ্যাঁচড়ামি? ভালোবাসার সংজ্ঞা কি বলতো। তোর ওই প্রতারিত হওয়া নাকি মাহিন ভাইয়ার রিজেকশন? আই মাস্ট সে আপু লাভ ইজ অ্যা ইরিটেটিং থিং। অ্যানোয়িং থট, নাথিং লেস অর মোর।'

সভ্যতা কথাগুলো বলে চলে গেল। নম্রতা বসে থেকেই বলল, 'ভালোবাসা সুন্দর পিহু। আমার জন্য তুই এমন হয়ে গেলি কেন?কতটা শক্ত হয়েছিস তা বুঝতে পারছিস? আমি তো চাইনি তুই এমন হ। পরিবারের সঙ্গে, বাইরের সবার সঙ্গে তোর এমন রুক্ষ আচরণ.. সব দো'ষ আমার। সবকিছু আমার জন্য হয়েছে। আ'ম সরি পিহু। আ'ম রিয়েলি সরি।'

সভ্যতা ফেরত আসে এয়ারফোন নিতে।নম্রতাকে চোখের পানি ছেড়ে, বিলাপ বকতে দেখে ভ্রুঁ কুচকে বলে, 'ইউ আর যাস্ট.. স্টপ ক্রাইং লাইক অ্যা বেবি আপু। সবসময় এমন ফ্যাচফ্যাচ করে কান্নাকাটি করিস কেন? আশ্চর্য!'

নম্রতা বলল, 'আমার পক্ষে আবার ভালোবাসা সম্ভব না পিহু। বোঝার চেষ্টা কর।'

সভ্যতা বিরক্তি নিয়ে বলল,'আমার বোঝা লাগবে কেন? আমি বুঝে কি করবো? যাকে বোঝানোর প্রয়োজন তাকে বোঝাও।'

'মাহিনকে তুই সামলাতে পারবি, আমি না। আমি বললে ও শুনবে না।'

'সামলাতে পারব? ওয়েট তোকে প্রমাণ দিচ্ছি যে আমি মাহিন ভাইকে তোর পেছনে লাগাইনি।'

সভ্যতা মাহিনকে ফোন করল। নম্রতা চুপচাপ বসে আছে। মাহিন ফোন রিসিভ করতেই সভ্যতা ঝটপট বলে ওঠে,

'আই লাভ ইউ মাহিন। ফরগেট দ্যাট অ্যানোয়িং কুহু অ্যান্ড ম্যারি মি। প্লিজ...'

মাহিন গম্ভীর গলায় বলল, 'কি বললি?'

'বাংলায় বলতে হবে? ইংরেজি বোঝেন না?'

'না। বাংলায় বল।'

'বিয়ে করুন আমাকে। কুহুর কথা ভুলে যান। এমনিতে ও বিয়েশাদী করবে না, করলেও সংসার করবে কিনা ঠিক নেই। ওর থেকে আমাকে বিয়ে করা বেশ লাভজনক। তাছাড়া আমি সংসার করতে বেশ আগ্রহী।'

'পরশু নদীর পারে আয়।দেখা করে, জানাচ্ছি।'

সভ্যতা নম্রতার চেহারায় দৃষ্টি বুলিয়ে বলল, 'দেখা করে কেন শুনবো? আমি এখন জানতে চাই। আমাকে তো ভালো করেই জানেন।উত্তর না শুনে ঘুমাতে পারবো না। দ্রুত বলুন, আমার প্রতি কোনো অনুভূতি কাজ করে না? একটুও না? আমি কি আপনার কুহুর মত শ্যামলা? লেখাপড়া খারাপ? নাকি এতিম?'

নম্রতা তড়িৎ তাঁকাল সভ্যতার পানে। সভ্যতা এভাবে তিক্ত সত্যগুলো বলে উঠবে ভাবেনি সে। টলমল করে উঠল চক্ষুদ্বয়। এই কারণগুলোই তো আরীবকেও দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। মাহিন গম্ভীরগলায় বলল,
'ভালো একজনকেই বাসা যায়।'

'আমাকে সেই একজন বানানো যায় না?' আবদারসূচক বাক্য সভ্যতার।

মাহিনের সরল স্বীকারক্তি, 'না।'

সভ্যটা কল কেটে দিয়ে দায়সারা ভাব নিয়ে বলল, 'সি? হি ডিডেন্ট এগ্রি ইট। এখন আমি আর কি করতে পারি? লাজলজ্জা ভুলে প্রপোজও করলাম, তোর জন্য আমার এই সম্মানহানি হলো।এখন আমি কিচ্ছু জানি না। পরশু নদীর পারে গিয়ে আমার ডুবে যাওয়া সম্মান তুলে না আনলে তোর সাথে সকল সম্পর্ক ডিসমিস অ্যান্ড আই মিন ইট ফর দ্য ফার্স্ট টাইম।'

নম্রতা ঠায় বসে শুনলো সব কথা। সভ্যতা চলে গেল। আজ প্রথমবার সভ্যতার থেকে এত তিক্ত কথা শোনার পর অসহায়বোধ করছে নম্রতা। ওর বোন এমন ছিল না। সম্পর্ক, অতিত নিয়ে ঘাটাঘাটি করত না। সবসময় নম্রতার পাশে থাকত, নম্রতাকে ডিফেন্স করে কথা বলত। যেই সভ্যতার জন্য নম্রতাকে কেউ আজেবাজে কথা বলতে পারত না সেই সভ্যতাই আজ এতগুলো কথা শোনাল।

ঘরের বাইরে চাচিজানের গলা শোনা যাচ্ছে। সভ্যতাকে তার অসংলগ্ন কথার জন্য ক্ষমা চাইতে বলছে। নম্রতার চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে আসে। পরিবারের বোঝা হয়ে যাচ্ছে সে। বয়স তো কম হয়নি। মানুষ তো ঠিক-ই বলে, আর কতদিন নম্রতা চাচা-চাচির ঘাড়ে বসে খাবে?
লেখিকাঃ Saira Sheikh
রাতে রেগে সভ্যতাকে চড় মা'রলেন ওর বাবা। জীবনে প্রথমবার! নম্রতা ঠেকাতে গেলে সভ্যতার মা নম্রতাকে আটকালেন। বললেন, 'যাস না। ওর স্পর্ধা অনেক বেড়েছে। আরীবকেও যা নয় তা বলেছে। আব্বুকে শাসন করতে দে।'

'কিন্তু আম্মু.. ও ছোট। '

'এজন্যই শাসনের প্রয়োজন।' নম্রতা কিছু বলতে পারল না। সভ্যতাও রাগ করে ছুটে গেল নিজের ঘরে।

সভ্যতা ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে। নম্রতা গিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে। ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ এলো না। নম্রতা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল,
'দরজা খোল না।'
সভ্যতা চেঁচাল, 'চলে যাও।'
'আমার ভুল, সব ভুল আমার। যা শা'স্তি দিবি দে। তাও দরজা খোল পিহু।'

সভ্যতা দরজা খুলল। একদম স্বাভাবিক চেহারা তার, যেন কিছু হয়নি। অথচ নম্রতার কাঁদতে কাঁদতে ম'রম'র দশা। সে ভেবেছিল সভ্যতাও ভেতরে বসে কাঁদছে কিন্তু তার সে চিন্তায় পানি ঢেলে সভ্যতা ল্যাপটপে সিনেমা দেখছিল। সভ্যতা পুনরায় বিছানায় শুয়ে সিনেমা দেখতে শুরু করে। নম্রতা ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সভ্যতা শক্ত গলায় বলে,

'এ-বাড়ি থেকে দ্রুত চলে যা আপু। তোর জন্য, শুধুমাত্র তোর জন্য আব্বু আমাকে মা'রল। এটা তো তোর বাড়ি না। তাও পড়ে আছিস কেন?'

নম্রতার ফোনে মাহিনের কল আসে। সভ্যতা সিনেমায় মনোযোগী। নম্রতা কল রিসিভ করতেই মাহিন বলল,
'কিছু জরুরি কথা বলার ছিল।পিহুর সঙ্গে তুমিও এসো। আর বিরক্ত করবো না। শেষবারের মত কথাগুলো শুনে যাও।'
'জ্বি, আসবো।'
'পিহুর কথা শুনেছ? ও তোমাকে কিছু বলেছে?'
'আপনাকে ভালোবাসে, এ ব্যাপারে?'
'হ্যাঁ।আজ কিসব বলছিল।বুঝতে পারিনি ঠিক কি বলতে চাইল। ও আগে কখনও এমন কিছু বলেনি।'
'দেখা করে সবটা বলি? এখন একটু ব্যস্ত আছি।'
'ওহ, ওকে।'

নম্রতা ফোন রাখতেই সভ্যতা বলল, 'ডিস্টার্ব করিস না। একা থাকতে দে। তোর উপস্থিতিও আমার সহ্য হচ্ছে না। প্লিজ লিভ মি অ্যালোন আপু। পরে কথা বলিস। এখন আমার মেজাজ ঠিক নেই।মুখ দিয়ে আরও উল্টোপাল্টা কথা বের হবে, তখন কষ্ট পাবি।'

'বল। যা ইচ্ছা বল। তবুও যাবো না। আজ এখানেই থাকবো।'

'ওকে ফাইন। আমিই চলে যাচ্ছি।'সভ্যতা সত্যি সত্যি-ই উঠে চলে গেল। নম্রতা অশ্রুসিক্ত নয়নে কেবল তাঁকিয়ে রইল।
গেস্টরুমে এসে মহা ফ্যাসাদে পড়ল সভ্যতা। ফ্যান নষ্ট, ঠিক করবে করবে করেও ঠিক করা হয়নি। বিছানায় মলিন চাদর, ফ্লোর ঝাড়ু দেওয়া হয়না ৩-৪দিন হয়ে গেছে। মশাদের গোপনবৈঠক চলছে। যখন তখন তারা ক্লান্ত হয়ে আসছে আর সভ্যতার তাজা র'ক্ত পান করে চাঙ্গা হচ্ছে। এমন জায়গায় আজ রাতে কিভাবে থাকবে সভ্যতা? মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রাগ উঠছে। রেগে মাহিনকে কল করল সে। রিসিভ করল মাহিনের খালাতো ভাই আরশান। সভ্যতা ঠান্ডা মেজাজে বলল, 'মাহিন ভাইকে ফোনটা দেওয়া যাবে?'

'আপনার মাহিন ভাই ওয়াশরুমে। সেখানে আপাততো ফোন পৌঁছানো যাবে না।'

'আসলে একটু বলবেন, আমি কল করেছিলাম।'

'আমি কে?'

'সভ্যতা। নাম বললেই চিনবে।'

'কিন্তু নাম্বার তো পিহু নামে সেভ করা।'

'ওটা আমার ডাকনাম।'

'দুঃখিত পিহু।এখন ফোন কাটলে আমি আপনার কথা মাহিনকে বলতে পারবো না। আমি পিয়নের কাজ করি না।'

'আচ্ছা। আমি পরে কল করে নিবো।'

সভ্যতা ফোন কেটে দিল। মাহিনের দিকে তাঁকিয়ে আরশান ভ্রুকুটি করে বলল, 'স্ট্রেঞ্জ! মাঝে একদিন তোর সঙ্গে ওর যেমন কথা বলার স্টাইল দেখেছিলাম আজ পুরোটাই চেঞ্জ। আমি তো ভেবেছিলাম ফোন দেব না বললে তর্ক জুড়ে বসবে। কিন্তু মেয়েটা ওর নামের মতই বেশ সভ্য।'

মাহিন হেসে বলে, 'আমার সঙ্গে ওমন করে কথা বলে। ওর ধারণা আমি গাধা, নয়তো ওর নরম বোনকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারিনি কেন? ২ বছর ধরে ঝুলছি কেন? ওর বোন কষ্ট পাচ্ছে এটা ওর পছন্দ না। তাই রেগে থাকে আমার ওপর। দ্রুত বিয়ে করলে ওর বোনটা সুখে থাকত, কিন্তু তা হচ্ছে না। আর এসবের সম্পূর্ণ দায়ভার নাকি আমার।'

'কুহু তো ওর আপন বোন না। রাইট?'

'চাচাতো বোন। কুহুর মা-বাবার মৃ'ত্যুর পর পিহুর বাবা কুহুকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। নিজের পরিচয়ে বড় করেন। ওরা কুহুকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।'

'আরীব কোন ফুফুর ছেলে? ফোনে কিসব বলেছিলিস মনে পড়ছে না।'

'সাইফুল আঙ্কেল মানে পিহুর বাবা-রা দুই ভাই। কুহুর বাবা বড়। আর সাইফুল আঙ্কেল ছোট। আরীবের মা ওদের আপন ফুফু না। এমনি আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে, কাছাকাছি বাড়ি তাই ঘনিষ্ঠতা একটু বেশি ছিল।'

'বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা আমি ঘুমাতে গেলাম। তুই জেগে থাক, তোর বউয়ের বোন কল করবে বোধ হয়।'

ঠিক ১০মিনিট পর সভ্যতা কল করল।মাহিন কল রিসিভ করতেই সভ্যতা রগড়াই গলায় বলল, 'অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি। প্রপোজালে যেন কোনো ভুল না হয়। আমি কিন্তু আর হেল্প করবো না মাহিন ভাই। এবারই লাস্ট..'

'অনেক রাত হয়েছে। জেগে না থেকে ঘুমা।'

'আর ঘুম.. তোমাদের এক করতে গিয়ে আমি সোজা গেস্টরুমে পৌঁছে গেছি। মশাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। ওরা বলছে আমি গল্প করার জন্য চমৎকার মানুষ তাই আমি যেন না ঘুমিয়ে ওদের সঙ্গ দেই। কি আর করবো? তুমি তো জানোই আমি কারোর কথা ফেলতে পারিনা। বাধ্য হয়ে ওদের কথাও শুনতে হচ্ছে।'

'আহা রে! কত কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টের বিনিময়ে আমি তোকে,আমাদের সঙ্গে হানিমুনে নিয়ে যাবো।রাঙামাটি, সিলেট, বান্দরবানের এক্সক্লুসিভ ট্যুর। ইজ ইট ওকে?'

সভ্যতা মিনমিনে গলায় বলল, 'অফার খারাপ না। তবে আমার বরটাকেও অ্যাড করো।সিঙ্গেল মানুষ তোমাদের হানিমুনে গিয়ে কি করবো? তার থেকে জোড়ায় যাবো। ইজ ইট ওকে উইথ ইউ?'

মাহিন হেসে বলল, 'ওকে।তাহলে এই কথা-ই ফাইনাল।'

08/10/2024

প্রেমেপড়া বারণ

" সুবহা আপনি হয়তো কখনোই আমাকে মনে করেন না, আজও হয়তো করবেন না।আজ আমার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ এই নতুন দিনে আমি নিজের অনুভূতি আপনাকে জানাতে চায়। আপনার কাছে হয়তো আমার ভালোবাসার ভাষা প্রকাশের উপায় নেই,আপনাকে শুধু মুখে ভালোবাসি বললে বড়ই অদ্ভুত লাগবে তবুও জানবে, আমার অন্তরের গহীনে আপনি চিরকালের জন্য একটা স্থান অধিকার করে বসে আছেন। আমার অন্তরে সবসময় আপনার অস্তিত্ব বিরাজমান
সুবহা, আপনার প্রতি আমার অনুভূতির কথা বলতে আমি কখনোই মুখ খুলতে পারি না। যদি আমার মেসেজটা দেখেন তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করেন। আমি যেনও সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হতে পারে এবং......। "
কথাটুকু লিখে নিবিড় সুবহার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিল ।
নিবিড় জানে ওপাশ থেকে তেমন কোনো রিপ্লাই আসবে না তবুও নিজের অনুভূতিকে আজ অল্প পরিমাণে সুবহার সামনে মুক্ত করে দিলো।

আজ নিবিড়ের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন।
বাহিরে ভোরের আলো উঁকি দিচ্ছে। নিবিড় গোসল সেরে বাহিরে বেরিয়ে এসেছে।আজ তাকে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনে বের হতে হবে। মিডিয়া, সংবাদপত্র, এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নির্বাচন কেন্দ্রের চারপাশে আঠার মতো লেগে থাকবে। সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনে উত্তেজনাকর প্রশ্নগুলো, ক্যামেরার ঝলকানি এবং ফটোগ্রাফারদের ক্লিক ক্লিক আওয়াজ এসব কিছুর মুখোমুখি হতে হবে আজ । সে জানি না বারো ঘন্টার মধ্যে তার জীবনে কেমন পরিবর্তন আসবে তবে তার ভাগ্যে যাই থাকুক না কেনও সে প্রস্তুত সব কিছু গ্রহণ করতে।
---

সকালবেলা সুবহা, বিছানায় বসে চোখের ভেতর অবশিষ্ট ঘুমের চাপ নিয়ে শায়লার মাথার কাছে বসে নিজের ভাবনার মধ্যে মগ্ন ছিলো।
তিন্নি এলোমেলো চুলে ঘুম থেকে উঠেই ঘুমু ঘুমু দৃষ্টিতে সুবহার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠলো,
' সুবহা আজ তাহাজ্জুদের নাম পড়লো। আল্লাহ তায়ালার কাছে হয়তো কারোর জন্য দোয়া করলো। আবার রোজাও রাখলো! এতো কিছু! কাহিনি কী সুবহা? '
ঘুমে আচ্ছন্ন তিন্নির কৌতুহলী দৃষ্টিতে সুবহার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তার মুখে যেন একটা রহস্যময় হাসির রেখা ফুটে উঠেছিলো। সুবহাকে চুপ থাকতে দেখে তিন্নি আবারও হালকা কৌতুহল মেশানো কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
' তুমি এত কিছু কেন করছো? নামাজ পড়ছো, দোয়া করছো, রোজাও রেখেছো? আজ কী বিশেষ কোনো দিন?’
তিন্নির কথাটা শুনে।সুবহা নিজের চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকালো।সুবহা কী বলবে তা একে একে মাথায় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গুছিয়ে নিলো।সুবহা তিন্নির দিকে তাকিয়ে নরম আর শান্তভাবে বললো,
'নামাজ, রোজা করতে কি কোনো নির্দিষ্ট দিন লাগে?’
সুবহার এই প্রশ্নের প্রতি তিন্নির নীরবতা প্রকাশ পেলো। তিন্নির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। তিন্নি সুবহা আর বিরক্ত না করে নিজের বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
সুবহা তার পাশেই শুয়ে থাকা শায়লাকে দেখছে। ছোট বাচ্চা মেয়েটার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। সেদিন গাজীপুর থেকে আসার পথে যে মেয়েটা এক্সিডেন্ট করেছিলো শায়লা সেই মেয়ে। নিবিড়ই সেদিন তাকে হসপিটালের নিয়ে আসে। হসপিটালে ট্রিটমেন্টের ১২ঘন্টা পরে শায়লার জ্ঞান আসে।
শায়লার জ্ঞান আসলে যখন তাকে তার পরিবার পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় তখন শায়লা ভীতু হয়ে তাদেরকে শুধু নিজের নাম বলে।
শায়লার অবস্থা এতোটাই খারাপ ছিলো যে নিবিড় নিজেই সুবহাকে শায়লাকে চাপ দিতে নিষেধ করে। সুবহা শায়লার কথা নীড়,তিন্নি আর মাহিমাকে বলে দেয়।
শায়লার এই অবস্থা কেন? সে শায়লাকে কোথায় পেয়েছে? নিবিড়ই বা তার সাথে কেন? তিন্নির ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তরে সুবহা তিন্নিকে তার আর নিবিড়ের বিয়ের কথা বলে দেয়। তিন্নি কথাগুলো শুনে অবাক হয়ে গেলেও পরে সে বেশ খুশি হয়।
শায়লা মেয়েটার বয়স ১৭ বছর। শায়লার অবস্থা দেখে সুবহার কষ্ট লাগে সে নিজ দায়িত্ব নিবিড়কে বুঝিয়ে শায়লা পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছে রাখতে চায়।
নিবিড় সুবহাকে রাখতে বলে আর নিজে পুলিশের কাছে শায়লার বিষয়টা নিয়ে একটা কেস করে।
সেদিনের পর থেকে অসুস্থ শায়লা তার আর তিন্নির কাছেই থাকে। শায়লার সব ধরনের খরচ নিবিড় দেয়। সুবহা প্রথমে নিতে না চায়লেও এই দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির বাজারে নিতে রাজি হয়।
সেই থেকে তিন্নিও তার আর নিবিড়ের মাঝের সম্পর্কে জেনে যায়।
সুবহা কথাগুলো বলে শায়লার দিকে তাকায়। শায়লাকে দেখতেই তার অন্তর কেঁপে উঠে। তার দিয়ার কথা খুব করে মনে পরে।
দিয়ার কথা মনে পরতেই সেদিন রাতের ঘটনাই চলে যায় সে,
দিয়া রুমে বসে আছে। সুবহা শুকনো ঢোক গিলে আস্তে করে দিয়ার রুমের দরজা খুলে যখনই রুমের মধ্যে পা বাড়ায়। দিয়া সুবহাকে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখে নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নেয় সে কিছু করতে যাবে তার আগে.....
' এই সুবহা! সুবহা! কই মরে গেলি? সুবহা। ' তিন্নির তীব্র কন্ঠে ডাকার ফলে সুবহা নিজের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসে।
সুবহা একবার আশেপাশে তাকিয়ে তিন্নির দিকে নজর দেয়।
তিন্নি তখন সুবহার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। সুবহা তিন্নির দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,
' কিছু বলছিলে আপু?'
' তোকে কতক্ষণ ধরে ডাকছি আমি?
' শোনতে পায় নি।'
' আচ্ছা থাক বাদ দে এসব কথা। শোন আমি কী বলি।'
' কী?'
' নিবিড়ের কাছে কল দিয়ে ওর একটু খোঁজ খবর নে।'
' ব্যস্থ আছে হয়তো বাদ দেও।'
' ব্যস্থ বলে কী হয়েছে? কথা বলতে কতক্ষণ লাগে?'
' না থাক আমি পরে নীড়ের কাছে কল দিয়ে কথা বলে নিবনে।'

এবারের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয় লাভ করেছে নিবিড় খবরটা বাতাসের গতিতে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।।নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয় লাভ করলেও, তার আজকের দিনটা ছিল কেবল বিজয়ের আনন্দময় না বরং বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি দ্বারা আবিষ্ট।
তাকে বেশ কিছু উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার পর নিবিড় যখন নিজের কেবিনে এসে ডিভানের উপর গা এলিয়ে বসে একটু শান্তিতে বিশ্রাম জন্য।
কিন্তু ভাগ্য যেন সহায় হলো না তার । নিবিড়ের শান্তির মুহূর্তটুকুও কিছুক্ষণের মধ্যে চুরি করে নিলো।
নিবিড় যখন ডিভানে গা এলিয়ে দিয়েছে ঠিক তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। নিবিড় পকেট থেকে ফোন বের করে তা কানে ধরতেই নিজের ভ্রু কুচকে ফেলে। ।
ফোনে আসা খবরটি ছিল একেবারে ভীতিকর। বিরোধী দলের লোকজন তাদের দলের সাথে বেশ কিছু কেন্দ্রে গন্ডগোল লাগিয়েছে। দলের বেশ কিছু সদস্য আহত হয়েছে, এবং তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তারদের রিপোর্ট অনুযায়ী, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। যদিও সারাদিনের ধকল ও ক্লান্তির কারণে সে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল তবুও এমন একটা সংবাদ শুনে নিবিড় নিজের ক্লান্তি ভুলে গিয়ে পাশের রুমে এখনো কাজ সামলাতে ব্যস্ত আরিয়ানসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়।

এদিকে, চৌধুরী বাড়িতে নিবিড়ের মা মল্লিকা বেগম তার ছেলের বিজয়ের খবর পেয়ে কিছুটা শান্ত হন। সারাদিনের টেনশন এবং উদ্বেগ তার উপর এক গুরুতর বোঝা হিসেবে বসে ছিলো। বিশেষ করে, গত রাতে তিনি দেখেছিলেন নিবিড় কেমন করে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে এই নির্বাচনের চিন্তা। প্রতিটি মুহূর্ত যে নিবিড়ের মনে উদ্বিগ্নতায় ভরা ছিল তা তিনি স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
খবরটা পেয়েই বাড়িতে উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। নিবিড়ের জয় লাভের আনন্দের সাথে সাথে বাড়ির সবাই অত্যন্ত খুশি। ঘরের প্রতিটি কোণে যেনও উৎসবের ছোঁয়া লেগে । পাড়াপ্রতিবেশি আর অতিথিরা আসছে নিবিড়কে শুভেচ্ছা জানাতে।
এনামুল চৌধুরীও আজ সারাদিন তার ছেলের সাথেই ছিলেন। পার্টি অফিসের ভিন্ন কাজ করছিলেন কিন্তু যখন ফলাফল দেয় তখন খুশি হয়েই বাড়িতে চলে আসেন।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে না নামতেই বাড়িতে অনেক লোকজনকে দেখতে পায়। তিনি তাদের সাথে কুশল বিনিময় করছিলেন ঠিক তখনই তার ফোনটা বেজে ওঠে। এনামুল চৌধুরী ফোনটা পকেট থেকে বের করে স্কিনে ভেসে ওঠা নম্বরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন। তারপর ফোনটা নিয়ে বাহিরে চলে আসেন।

সুবহা আজ সারাদিন পরে এখন ফোনটা হাতে নেয়। মেসেঞ্জারে ঢুকে নীড়ের সাথে কিছু কথা বলে। নীড় তাকে তার বাড়ির পরিবেশ সম্পর্কে বলে। নীড় ব্যস্থ বলে সুবহা বেশি কথা না বলে রেখে দেয়।
হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই নিবিড়ের নম্বর থেকে একটা মেসেজ দেওয়া দেখায়। সুবহা কৌতুহল নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে প্রবেশ করে।
সকালে নিবিড়ের করা মেসেজটা দেখে সুবহা কিছুটা অবাক হয়। সে কী রিয়াকশন দিবে বুঝে উঠতে পারে না। হয়তো কিছুটা লজ্জা বা বিরক্ত হয় যা তার মুখভঙ্গি দেখে বোঝার বিন্দু মাত্র উপায় নেই।
হঠাৎ তখনই মাহিমা তাকে মেসেঞ্জারে নক দেয়।
সুবহা মেসেঞ্জারে ঢুকে। মিনিট দুয়েক তারা দুইজনই চ্যাটে কথা বলে। তারপর হঠাৎই মাহিমা সুবহা কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করে ,
' আজ দেখা করতে পারবি?'
' কেন কী হয়েছে আপু?'
' আহা দেখা করতে পারবি কিনা বল? আমাদের দেখা করাটা আর্জেন্ট কিন্তু সুবহা। '
' আচ্ছা আসছি। '
' ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবি। '

 #তারপর_নামে_রাতকিন্তু চোখ খুলেই হঠাৎ দেখলাম আমার পাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে অপলার বোন জামাই। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আঁতকে ...
07/10/2024

#তারপর_নামে_রাত

কিন্তু চোখ খুলেই হঠাৎ দেখলাম আমার পাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে অপলার বোন জামাই। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম। আমি একটা মেয়ে মানুষ, এখানে শুয়ে ঘুমিয়েছি। এই লোক এখানে কেন? অপলা কোথায়?
'অপলা? এই অপলা?'
আমি গলা ছেড়ে ডাকলাম।
অপলার কোন সাড়া পেলাম না।অপলার বোন জামাই হাসলো। মুচকি হেসে বললো,' আপা, আমি বিরাট অভাবী লোক। আমার স্ত্রীর অপারেশন লাগে। অপারেশন করতে টাকা লাগে দেড় লাখ। আমার দেড় হাজারেরও মুরাদ নাই! এই যে দেখছেন না বিকেল বেলা বাজার সদাই করে আনলাম, এই টাকাও আমার না। এই টাকা কে দিছে জানেন? '
আমি কিছু বললাম না। বলার মতো অবস্থা নাই আমার। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে।আমি আমার মোবাইল ফোন খুঁজছি। কিন্তু এটাও এখানে নাই!পার্টস টাও নাই এখানে।পার্টসে অনেক গুলো টাকা ছিল।মেরে দিয়েছে নাকি?
অপলার বোন জামাই নিজ থেকেই বললো,' অপলা দিছে।অপলারে সম্ভবত আপনি বিরাট বিশ্বাস করেন। কিন্তু অপলা মাইয়া সুবিধার না।একটা সত্য কথা বলি আপনারে শুনেন আপা।অপলা বলে না তার সন্তান হয় না, এই জন্য তার জামাই তারে তালাক দিছে ‌।কথাটা মিথ্যা।অপলার কিন্তু সন্তান আছে। মেয়ে সন্তান আছে একটা।ওই মাইয়া রাইখাই সে ভিন্ন পুরুষের সাথে নোংরামি করার সময় ধরা পড়ছিলো তার জামাইর হাতে।জামাই তারে তখন তালাক দিছে ‌।মেয়েরে তার জামাই রাইখা দিছে। অপলা সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম এই কথা অপলা আপনার কাছে বলছে কেন জানেন? আপনি যেন তারে আপন করে নেন। আপনি যেন তারে আপনার নিজের মতো ভাবেন। এই জন্য এই মিথ্যা কাহিনী আপনারে সে বলছে! '
আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।সব বুদ্ধি হঠাৎ যেন লোপ পেয়েছে আমার।আমি বললাম,' অপলা এখন কোথায়?'
লোকটা বললো,' তার দায়িত্ব ছিল আপনারে এইখানে রাইখা যাওয়া। ঘুমের ওষুধ দিয়ে একটু ঘুম পাড়াইয়া দেওয়া। তার ডিউটি শেষ।সে চলে গেছে।'
আমি চমকে উঠলাম। বললাম,' কি সব বলছেন আপনি? আমায় যেতে দেন এক্ষুনি।'
বলে আমি বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে নয়, বাইরে থেকে আটকানো।আমি দরজা ধরে টানতে লাগলাম। কিভাবে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না!
এরপর দরজা কোন ভাবেই খুলতে না পেরে ঘরের এদিক ওদিক খুঁজে দেখলাম আর কোন দরজা পাই কি না। না আর একটা দরজাও নাই এই ঘরে। এরপর খুঁজে খুঁজে একটা জানলা
পেলাম শুধু। কিন্তু এই জানলা দিয়ে বের হবার কোন উপায় নাই! জানলায় শক্ত শিক দেয়া।
অবশেষে নিরূপায় হয়ে অপলার বোন জামাইয়ের কাছে এসে দু' হাত জোড় করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,' আপনি আমার ভাইয়ের মতো। আপনি আমার ভাই হোন। আল্লাহর দোহাই লাগে ভাই, আপনি আমারে বাঁচান! '
অপলার বোন জামাই মোটেও নরম হলো না। সে এমন ভাবে বসে আছে যেন কিছুই শুনতে পায়নি।
আমি সত্যি সত্যি উনার পায়ের কাছে পড়ে মিনতি করে বললাম,' ভাই, আপনি টাকা চাইলে আপনাকে আমি টাকা দিবো।দেড় লাখ না, তিন লাখ দিবো। আমার সব গহনা এনে দিবো। তবুও আমায় বাঁচান ভাই!'
অপলার বোন জামাই বললো,' পা ছাড়ুন বলছি।পা ছাড়ুন।'
ধমকের গলায় বললো।
আমি ভয়ে পা ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম। সে এবার বললো,' আমায় চেনেন আপনি? আমারে আপনার মোনাফেক মনে হয়? বাটপার মনে হয়?'
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,' ভাই, আপনাকে তো আমি এরকম কিছু বলিনি। আপনি ভালো মানুষ। আপনার মতো ভালো মানুষ হয় না!'
অপলার বোন জামাই শব্দ করে হাসলো। তারপর বললো,' তাইলে চুপচাপ থাকেন। কথা বললে ভেজাল হবে।খু*ন করে ফেলবো আপনাকে আমি। কিন্তু চুপচাপ থাকলে জীবন ভিক্ষা পাবেন।আর আমি এক কথার মানুষ। আমার চুক্তি হয়ছে আপনার বিপক্ষের লোকের সাথে। আপনার সাথে না।চুক্তিমতো আমি কাজ করবো। আপনার অনুরোধে বা টাকা পয়সা গয়না ঘাঁটি দেয়াতে আমার চুক্তি ভঙ্গ হইবো না বুঝলেন!'
ও কথা বলে শেষ করতেই দরজার কাছে দু' তিনজন মানুষের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল।এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওদের গলাও শোনা গেল। একটা গলা মেহেরের। মেহের বললো,' এইখানে নাকি? এই ঘরে?'
এরপর যে গলাটা শোনা গেল ওটা অপলার। অপলা বললো,' হ ভাইজান, এখানে।আমি তালা দিয়ে আটকিয়ে গেছি যেন এখান থেকে সরে যেতে না পারে! '
বলে বাইরে থেকে দরজা খুলে দিলো অপলা। দরজা খুলতেই ভেতরে এলো মেহের। সাথে অপলা।মতিনও আছে ওদের সঙ্গে।
মেহেরকে দেখেই আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,' আমি কিচ্ছু জানি না মেহের! ওরা নাটক সাজিয়েছে।আমায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে! আমি এসবের সঙ্গে যুক্ত না।'
মেহের আমার কাছে এসে আমার গালে জোরে একটা চ*ড় বসিয়ে দিলো। তারপর বিশ্রী ভাষায় একটা বকা দিয়ে বললো,' কতোদিন ধরে ওর সঙ্গে সম্পর্ক তোর? বাপের বাড়ি যাবার কথা বলে বলে এখানে আসিস তাই না?'
আমার এবার রাগ লাগলো।মাথা খারাপ হয়ে গেল আমার।আমি চিৎকার করে বললাম,' মেহের, মুখ সামলে কথা বলো তুমি। কাকে কী বলছো তুমি বুঝে শুনে বলছো? হিসেব করে কথা বলো বলছি! '
মেহের এবার আমার চুল টে*নে ধরলো। তারপর অপলাকে বললো,' অপলা, তুই সত্যটা বল।সব খুলে বল।'
অপলা এবার মুখ খুললো। সে বললো,' আপা বললো, আমি যেন মিথ্যা করে আমার মায়ের অসুখের কথা বলি। আপনার কাছে যেন বলি আমার মায়ের জবান বন্ধ।মারা যাবে। হাসপাতালে নিতে হবে তারে।আমি ছাড়া মায়ের আর কেউ নাই! এসব বলে আপনার কাছ থেকে বাড়িতে যাবার ছুটি নেই। এরপর আপা নাকি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যাবে। আমার তখন সন্দেহ লাগে আপারে। সন্দেহ কেন লাগে জানেন স্যার?'
মেহের বললো,' কেন?'
' কারণ, আপনি যখন অফিসে তখন আপা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।বলছে দুদিনের মধ্যে যেভাবেই হোক তার বাসায় এসে থাকবে।কেন থাকবে জানেন স্যার?'
মেহের বললো,' কেন? '
অপলা কেঁদে ফেললো। এই মেয়ে এতো ভয়াবহ খারাপ তা কখনোই আমি ভাবিনি।এতো নাটক সে করতে পারে।এতো মিথ্যে সে বানাতে পারে!
অপলা কাঁদতে কাঁদতে বললো,' ভাইজান, কিভাবে বলবো এই লজ্জার কথা! আপা এই লোকের সাথে চুক্তি করছে, এই লোকরে বলছে আপনি নাকি সন্তান দানে অক্ষম।পিতা হইতে পারবেন না কোনদিন। কিন্তু আপার সন্তান দরকার। এই লোকের সঙ্গে ----'
মেহের গর্জন করে উঠলো। বললো,' অপলা চুপ কর তুই।সব গুলারে খু*ন করে ফেলবো আমি! সব গুলারে!'
বলে আমার দিকে চোখ লাল করে তাকালো সে।আর দাঁত কটমট করে বললো,' এই দেখ হারামজাদি! কি বলে দেখ!'
তখনও মেহের আমার চুল টেনে ধরে আছে।
আমি ছুটতে চাচ্ছি তার কাছ থেকে। কিন্তু পারছি না।
অপলা এবার বললো,' ভাইজান, আমার কোন দোষ নাই। স্টেশন পর্যন্ত আইসা আপা আমারে দশ হাজার টাকা দিছে। এরপর বলছে, তুই বাড়ি চলে যা অপলা।আমি তোর সঙ্গে যোগাযোগ করবো ‌।আমি ফোনে যা যা বলবো তুই তাই করবি।
কিন্তু আমি আপনার সাথে বেঈমানি কিভাবে করবো ভাইজান? আপনার টাকায় বেতন হয় আমার। আপনার খাই, পরি।তাই আপার কথা না মাইনা আমি গোপনে তারে অনুসরণ করি। এরপর এই ঘরে আপা ঢুকলে দরজায় তালা দিয়ে আটকায় রাইখা তাড়াহুড়ো করে আপনার কাছে আসি। আইসা সব সত্য বলি। খবর দেই আপনারে।'
অপলার বানোয়াট কথা শুনে অবাক হলাম।আমার পার্টসে দশ হাজার টাকা ছিল। এই টাকাটাই নিয়েছে তাহলে সে!
আমি অপলার মুখের দিকে ঘৃণা ভরা চোখে তাকালাম। তারপর বললাম,' অপলা, তোমাকে না আমি নিজের বোনের মতো দেখতাম? নিজে যা খেতাম পরতাম তা তোমায় দিতাম! আজ তুমি আমার সঙ্গে এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করলে? এভাবে নোংরা অপবাদ দিলে আমার উপর তুমি! ছিঃ! '
চোখ থেকে টপটপ করে জল নামছে আমার।
কিন্তু অপলা পাল্টা কথা শুনালো আমায়। বললো,' আপা, আপনি সব সময় ভালো মানুষের রূপ ধরে ছিলেন। কিন্তু আসলে আপনি ভালো মানুষ না। আপনি একটা শয়তান। এমন সুখের সংসার ছাইড়া কেউ এরকম পাপ করে আপা? ভাইজান তো এখনও আপনারে কিছু করে নাই।অন্য পুরুষ হলে কচু কাঁটা দিতো আপা! '
মেহের অবশ্য এসবে মনোযোগ দিলো না। সে অপলার বোন জামাইয়ের দিকে তাকালো। তারপর বললো,' এই হা*রামির বাচ্চা, তোর নাম কী? পরিচয় কি তোর?'
অপলার বোন জামাই বললো,' বকেন ক্যান? আপনার খাই না আপনার ঘরে থাকি?'
মতিন ওখানেই ছিল। সে সঙ্গে সঙ্গে ওই লোকের ঘাড়ে চাপ দিয়ে ধরে বললো,' জানে মা*ইরা ফেলবো হা*রামজাদা! সামান্য পথের লোক হইয়া মেহের স্যারের স্ত্রীর সাথে ইটিস পিটিস করস! তোরে চৌদ্দ শিকে না ভরলে তোর শিক্ষা হবে না!'
অপলার বোন জামাই থরথর করে কেঁপে উঠলো।
মতিন এবার বললো,' স্যারের কাছে তোর নাম বল।'
সে এবার তার নাম বললো। বললো,' সুলতান। আমার নাম সুলতান মিয়া।'
মেহের এবার কথা বললো। বললো,' সুলতানা, অপলা যা যা বলেছে এসব কি সত্যি? কলির সঙ্গে তোর চুক্তি হয়ছে?'
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আল্লাহ আল্লাহ করছি যেন সে না বলে।বললে যেন সত্যিটাই বলে। কিন্তু সে আমায় আশাহত করে দিয়ে ওদের মতো করেই মিথ্যেটা বললো। বললো,' সব সত্যি।অপলা যা বলছে সব সত্যি।'
' কতো দিছে তোরে?'
' পঞ্চাশ হাজার।'
মেহের রাগে আমায় ধাক্কা দিয়ে এক পাশে ফেলে দিয়ে সুলতানের ঘাড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো। তারপর বললো,' টাকাটা দে।'
সুলতান বললো,' একজন পাইতো। দিয়ে দিছি। এখন নাই।'
মেহের রাগে ওর নাকে মুখে দু চারটা ঘু*ষি বসিয়ে দিলো। তারপর মতিনকে বললো, ' এরে নিয়ে গাড়িতে তুলো। অ্যাই অপলা যা গাড়িতে গিয়ে বস।'
তারপর মেহের আমায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গাড়িতে তুললো। গাড়ি ছাড়ার পর মেহের তার নিজের বাবা মাকে ফোন করে বললো আজকের মধ্যে ঢাকায় অর্থাৎ তার বাসায় আসতে। আর আমার বাবা মাকে ফোন করে বললো,' আপনাদের মেয়েরে যদি বাঁচাতে চান তাইলে আজকের মধ্যে ঢাকায় আমার বাসায় আসেন। দেরি করলে তারে পাবেন না আর! '

ছাত্রীকে পড়াতে এসে নিজের ছবি ছাত্রীর বাসার দেওয়ালে ঝুলতে দেখে আমি অনেকটাই ঘাবড়ে গেলাম। এই বাড়িতে আজ আমার প্রথম দিন। মনে ...
07/10/2024

ছাত্রীকে পড়াতে এসে নিজের ছবি ছাত্রীর বাসার দেওয়ালে ঝুলতে দেখে আমি অনেকটাই ঘাবড়ে গেলাম। এই বাড়িতে আজ আমার প্রথম দিন। মনে হয়না ওনারা এর আগে কখনও আমাকে দেখেছে। তাহলে আমার ছবি এই বাড়ির দেওয়ালে কীভাবে এসেছে? ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগছে খুব। অনেক্ক্ষণ হলো আমি এসে বসে আছি। কিন্তু আমার ছাত্রী অথবা বাসার কাওকে এখন পর্যন্ত দেখলাম না! আচ্ছা আমি কি ভুল ঠিকানায় চলে আসছি? মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

এই শহরে নতুন এসেছে আসিফ। শহরের তেমন কিছু ভালো ভাবে চীনেও না সে। একটা বন্ধুর মাধ্যমে একটা টিউশনের ব্যবস্থা করলো। যাতে করে নিজের পড়াশোনার খরচ অন্তত বহন করতে পারে। কিন্তু এখানে এসে তার সাথে ঘটে গেলো অবাক কান্ড। এই বাসায় প্রথম এসেছে সে। একজন ভদ্রমহিলার সাথে ফোনে কথা হয়েছিলো। ঠিকানা তো এটাই ছিলো। তাহলে সবাই কোথায় হারিয়ে গেলো?

আসিফ সোফায় বসে আছে প্রায় অনেক্ক্ষণ হয়েছে। এই বাড়িটাও খুব অদ্ভুত লাগছে। সব থেকে বেশি ভাবাচ্ছে তার ছবি এই বাড়িতে কীভাবে এসেছে? এটা আদোও তার ছবি নাকি তার মতো হুবহু দেখতে অন্য কেউ? এসব প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছে আসিফের মনে তখনই একজন মহিলার আগমন ঘটে আসিফের সামনে। আসিফ মহিলাকে লক্ষ্য করতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন। মহিলা সালাম গ্রহণ করে আসিফকে বসতে বলে।

-- তুমি কখন আসলে বাবা?

-- জি আন্টি অনেক্ক্ষণ হলো। বাসায় কাওকে দেখলাম না। আমি তো ভেবেছি আপনারা কেউ নেই।

-- আসলে আমি একটা কাজ করছিলাম। আচ্ছা তুমি বসো আমি গিয়ে নিঝুমকে নিয়ে আসছি।

এই কথা বলে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। অদ্ভুত লাগছে আসিফের কাছে। এই মহিলা আসিফকে দেখে তো তেমন কোনো রিয়াক্ট করেনি। অথচ এই বাড়িতে আসিফের ছবি! এখানে হচ্ছেটা কি? এর মধ্যে কি কোনো অজানা রহস্য লুকিয়ে আছ?

কিছুক্ষণ পরে ভদ্রমহিলা সাথে করে একটা মেয়েকে নিয়ে আসেন। মেয়েটাকে দেখে আসিফ দাঁড়িয়ে যায়। এতো সুন্দর মেয়ে! আসিফ যেনো কিছুতেই নিজের চোখ সরাতে পারছেনা।

-- বাবা ও আমার এক মাত্র মেয়ে নিঝুম। এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে। তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।

আসিফ বসে পড়ে। ভদ্রমহিলা আর নিঝুম ও বসে।

-- আরে তোমার সাথে সেই কখন থেকে কথা বলছি অথচ তোমার নাম জানা হলোনা। নাম কি তোমার?

-- জি আন্টি আমার নাম আসিফ।

আসিফ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটার মুখে একটা মুচকি হাসি লেগে আছে। এই হাসির জন্য মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।

-- তা বাবা আজকে কি পড়াবে নাকি?

-- না আন্টি আমি তো দেখতে এসেছি, আর ঠিকানা ঠিক আছে কিনা। আচ্ছা আন্টি আজ তাহলে উঠি আমি। কাল আসবো।

-- চা খেয়ে যাও!

-- আজ না। আজ আর আপনাদের কষ্ট দেবোনা। আজ তাহলে উঠি! কাল দেখা হবে।

-- ঠিক আছে সাবধানে যাও।

আসিফ এবার সামনে দিকে যখন পা বাড়াবে তখনই তাঁর মনে পড়ে সেই ছবিটার কথা। এতক্ষণ সে ছবিটির কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলেই গিয়েছে। যখন যে ছবির কথা জিজ্ঞেস করার জন্য পিছনে তাকায় তখন যে দেখতে পায় সেখানে কেউ নেই। ভাবুক হয়ে উঠে আসিফ। সামান্য সময়ের মধ্যে এরা নিজেদের রুমে চলে গেলো? মনে মনে ঠিক করে আগামীকাল এসে জিজ্ঞেস করবে। তাই সে ছবিটার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে রওয়ানা হয়। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে হঠাৎ করে একটা কান্নার শব্দ ভেসে আসে তার কানে। সে চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে নেয়। কিন্তু সে আশেপাশে তেমন কোনো কিছুই খেয়াল করেনা। তাই আবার সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ আসিফের ফোন বেজে উঠার শব্দ শুনে পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে। আর ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আসিফের বন্ধু নিলয় ফোন দিয়েছে।

-- হ্যাঁ নিলয় বল।

-- কিরে তোর ফোন এতক্ষণ বন্ধ ছিলো কেনো?

-- কই ফোন তো অফ ছিলনা। মনে হয় নেটওয়ার্ক প্রব্লেম ছিলো।

-- ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। তো ওখানে গিয়েছিস?

-- হ্যাঁ, এখন বাসায় ফিরছি। তুই তাড়াতাড়ি করে বাসায় আয় তোকে কিছু কথা বলার ছিলো জরুরী।

-- আমি বাসায় আছি, তুই চলে আয়।

তারপর আসিফ ফোন কেটে বাসার দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ বাসায় পৌছে যায়। আসিফ নিজের রুমে গিয়ে দেখে নিলয় বসে আছে। আসিফ গিয়ে নিলয়ের পাশে বসলো। এতক্ষণ হেঁটে আসার কারণে সে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আসিফের ক্লান্ত মুখ দেখে নিলয় আসিফের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে খেতে বলে। আসিফ কোনো কথা না বলে এক গ্লাস পানি একবারে খেয়ে শেষ করে।

-- কিরে আসিফ কি হইছে তোর? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

-- আসলে রোদের মধ্যে হেঁটে আসার কারণে অস্থির লাগছে। আচ্ছা শোন তোকে একটা কথা বলতে চাই।

-- হ্যাঁ বল।

এবার আসিফ ওখানে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো বলল। আসিফের কথা শুনে নিলয় কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে বলল,

-- শুনেছি পৃথিবীতে নাকি একি রকম চেহারার ৭ জন করে মানুষ থাকে। হয়তো সেটাই।

-- কিন্তু তার মধ্যে একটা জিনিস আমাকে খুব ভাবাচ্ছে। ওনারা আমাকে দেখে যেভাবে রিয়াক্ট করার কথা তেমন কিছুই আমি তাদের মধ্যে দেখেনি। আমি যেভাবে অবাক হয়েছি সেভাবে তো তাদের ও অবাক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তাদের মাঝে আমি তেমন কোনো কিছুই লক্ষ্য করলাম না। তাঁরা আমার সাথে খুব শান্ত ভাবেই কথা বলছিল। আর একটা জিনিস খেয়াল করলাম।

আসিফের বন্ধু খুব আগ্রহ নিয়ে কথা গুলো শুনছে। আসিফের কথা শুনে সে আগ্রহ নিয়ে বলল,

-- কি জিনিস?

-- আমি মেয়েটার মুখে একটা অদ্ভুত হাসি দেখলাম। কিন্তু মেয়েটা অদ্ভুত সুন্দরী। আমি প্রথম দেখাতেই কেমন যেনো হয়ে গেছিলাম।

-- আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। তুই কাল ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করিস তাদের এই ছবির কথা। তাহলেই হয়তো উত্তর খুঁজে পাবি।

--ঠিক আছে।

তারপর নিলয় উঠে চলে গেলো। আসিফ খাটের উপরে বসা থেকে শুয়ে পড়ে। তখনই বাড়ি থেকে কল আসে তার।

-- হ্যালো, মা কেমন আছো তুমি?

-- এই তো ভালো আছি বাবা, তুই কেমন আছিস?

-- আমিও ভালো আছি।

মা ছেলের মাঝে কিছুক্ষণ কথা হয়। কথা শেষ করে কল কেটে দেয় আসিফ। দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। আসিফ রাতের খাবার খেয়ে নিজের বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে আসিফ। হঠাৎ মাঝ রাতে বুকের উপরে ভারী কিছু অনুভব করতেই ঘুম ভেঙে যায় আসিফের। আসিফ চোখ খুলে দেখে পুরো বাসা ঘুটঘুটে অন্ধকার। সে চোখের সামনে কিছুই দেখতে পায়না। তখন সে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো কারণে সে উঠতে পারছেনা। আসিফ খুব ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ একটা চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে।

-- কিরে কি হইছে তোর?

আসিফ পাসে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু নিলয়। আসিফ বুঝতে পারে সে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। তার সাথে হঠাৎ করে এসব কেন ঘটছে কোনো উত্তর জানা নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আসিফ ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে। ভার্সিটি বেশি একটা দূরে না তাই সে হেঁটেই চলে যায়। ভার্সিটির গেট দিয়ে ভিতরে যাবে এমন সময় তার চোখ আঁটকে যায় একটা মেয়ের দিকে। মেয়েটা আর কেউ না, এটা নিঝুম। নিঝুমকে এখনে দেখে অবাক হয় আসিফ। আসিফ দেখে যে নিঝুম একা দাঁড়িয়ে আছে। তাই আসিফ নিঝুমের কাছে চলে যায়।

-- আরে নিঝুম আপনি এখানে?

-- আমার ও সেইম প্রশ্ন স্যার! আপনি এখনে?

-- আমি তো এই ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। কিন্তু তুমি কলেজে না গিয়ে এখনে কি করছ?

-- এখনে একটা কাজে এসেছি। আর স্যার আপনি আমাকে তুমি করে বলুন।

-- আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই।

হঠাৎ করে আসিফের কাঁধে কারোর হাতের স্পর্শ পড়তেই আসিফ পিছনে ফিরে তাকায়। আসিফ দেখতে পায় তার বন্ধু নিলয়। নিলয় আসিফকে বলল,

-- কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?

-- তোকে কাল বলছিলাম না আমার ছাত্রীর কথা? ওর সাথে কথা বলছি।

-- কিহ? তুই কি পাগল হয়ে গেলি?

-- পাগল হবো কেন? আয় পরিচয় করিয়ে দেই ওর না,,,

হঠাৎ করে এই মেয়েটা কোথায় চলে গেলো? এতক্ষণ তো এখানেই ছিলো? অদ্ভুত!

-- কিরে কি হইছে?

-- কিছুই বুঝতে পারছিনা, নিঝুম তো এতক্ষণ এখানেই ছিলো। হঠাৎ করে এই মেয়ে কোথায় উধাও হয়ে গেলো?

-- বুঝতে পেরেছি বন্ধু, তুমি তোমার ছাত্রীর প্রেমে পড়েছ। তাই তাকে যেখানে সেখানে দেখতে পাচ্ছো। এখন চল নাহলে ক্লাসে ঢুকতে দিবে না।

এই কথা বলে নিলয় আসিফকে নিয়ে যেতে থাকে। আসিফ তো বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। এতো বড় ভুল সে কীভাবে দেখে? নিঝুম তার সাথে কথা বলেছে। এটা কি আসলেই তার মনের ভুল! নাকি অন্য কিছু?

কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লাসে চলে যায় দু'জন। আজকের মতো ক্লাস শেষ করে আসিফ সেই বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বাসায় পৌছে যায়। বাসার ভিতরে গিয়েই আসিফ স্তব্ধ হয়ে যায়।

জীবনের ডাক বক্স

Address

Vill-kutubpur Post-shoilomary Bazar, Jhenaidah
Jessore
7300

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mita Parvez Blog posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share