অদৃশ্য গল্প

অদৃশ্য গল্প আসসালামু আলাইকুম "অদৃশ্য গল্প" সবাইকে। জীবন ছোট,হিংসা নয়,ভালোবাসা ছড়িয়ে দাও আর গরিব দুঃখী পাশে থাকো।
(15)

 #আমার_পূর্ণতাচৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্য বর্তমানে উপস্থিত আছে ছোট্ট একটি ঘরে। ঘরটা প্রাচুর্যের। মিসের শাহানা, মিসেস ফ...
02/12/2023

#আমার_পূর্ণতা

চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্য বর্তমানে উপস্থিত আছে ছোট্ট একটি ঘরে। ঘরটা প্রাচুর্যের। মিসের শাহানা, মিসেস ফারাহ অর্থাৎ তাফসিরের মা এবং সামি-সাদনানের মা মুমতাহিনা বেগম ও উপস্থিত আছেন সেখানে। তারা তিনজন প্রাচুর্যকে ঘিরে বসে আছেন। মিসেস শাহানা অনবরত প্রাচুর্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বার বার আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছচ্ছেন।
ইশতিয়াক চৌধুরী চিন্তিত মুখে পায়চারি করছেন। আর ইনসাফ চৌধুরী মাথা নিচু করে বসে আছে প্রাচুর্যের পড়ার টেবিলের চেয়ারে। তাফসির এখানে উপস্থিত নেই। সে এতক্ষণ এখানে থাকলেও কিছুক্ষণ আগে বের হয়েছে কাউকে ফোন করতে করতে।
বাইরে ভোরের আলো ফুটবে ফুটবে ভাব। আজান দিয়েছে মিনিট পাঁচেক হলো। সে মুহূর্তে ইকরামুল বলে উঠলেন—
" ভাইজান আজান দিয়েছে। চলুন নামাজ পরে আসি সবাই। আর তাছাড়া তাফসির সব জানে যখন তখন সে চুপ করে বসে থাকবে না। কোনো না কোনো ব্যবস্থা করবেই। ইনসাফ চল নামাজ পরে আসি। আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবি।"
ইকরামুল চৌধুরীর কথা শুনে পায়চারি থামিয়ে দিলেন ইশতিয়াক চৌধুরী। ইকারামের দিকে তাকিয়ে বললেন—
" হ্যাঁ যায় চলো। আমি ওজু করে আসছি। তোমরা ও এসো। "
ইশতিয়াক চৌধুরী চলে যেতেই মাথা তুলে তাকালেন ইনসাফ চৌধুরী। মেজো ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন—
" আমি বোধহয় দায়িত্ববান বাবা হতে পারলাম না ভাইজান। অফিস, কাজ সামলাতে সামলাতে মেয়েটার দিকে খেয়াল রাখতে পারলাম না ভাইজান। নিজের মেয়েটা কে নিরাপত্তা দিতে পারলাম না। বাবা হিসাবে নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে।"
" কিসব বলছিস ইনু। দেখ যা হয়েছে তা হঠাৎ করেই। মেয়েটা ও তো এতোদিন বলে নি কিছু আমাদের। আর না বললে আমরা বুঝবো কি করে বল। এখন এসব কথা থাক। যা ওঠ। বড় ভাইজান এখনি চলে আসবে।"
" হ্যাঁ চলো।"
ইকরাম ও ইনসাফ চৌধুরী সেখান থেকে চলে যেতেই পুনরায় কেঁদে উঠলেন শাহানা। ওনার কান্না দেখে এগিয়ে আসলেন ফারাহ। শাহানার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন—
" থাক কাঁদিস না ছোট। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এখন কান্না করে লাভ নেই কোনো। তার থেকে ভালো চল আমরাও নামাজ আদায় করে নি। ওনারা ও তো গেছেন। মেয়েটা ঘুমিয়েছে যখন ঘুমাক। আমরা কথা বললে ওর ঘুমে আরও ব্যাঘাত ঘটবে। "
" হ্যাঁ আপা চলো।"
প্রাচুর্যের ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে যেতেই ঘরে প্রবেশ করলো তাফসির। দরজা চাপিয়ে দিয়ে ধীরে সুস্থে গিয়ে বসলো প্রাচুর্যের মাথার পাশে। মেয়েটা এখন গভীর ঘুমে। তাফসির কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করলো। নাহ্ এক ফোঁটাও কমে নি জ্বর। সে আস্তে আস্তে প্রাচুর্যের মাথায় হাত বুলাতে থাকলো আর ভাবতে থাকলো তখনের কথা।
তখন তাফসির যখন কারোর ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনলো তখন বুঝতে পারছিলো না আসলে এতো রাতে কে কান্না করছে। পরে যখন দেখলো প্রাচুর্যের বেলকনির দরজা খোলা তখন সন্দেহ হলো তার। কারন অন্যদিন রাতে সে দরজা বন্ধ করে ঘুমাই তবে আজ খোলা কেনো। তাই সন্দেহবসত তাফসির প্রাচুর্যের রুমের সামনে গেলো। প্রথমে দরজা নক করলো কিন্তু খুললো না প্রাচুর্য। ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ ও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিলো। তখন সন্দেহ গাঢ় হলো তার। তাই সে আবার নিজের বেলকনিতে চলে আসলো। প্রাচুর্যের বেলকনি থেকে তার বেলকনির দুরত্ব বেশি নয় তাই সে অনায়াসেই লাফিয়ে যেতে পারলো। কিন্তু যখন ভেতরে ঢুকলো তখন স্তব্ধ হয়ে গেলো। প্রাচুর্য হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। চুল গুলো সব এলোমেলো। তাফসির তাড়াতাড়ি প্রাচুর্যের কাছে গেলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে মুখ উচু করে ধরলো প্রাচুর্যের। আর তখনই তাফসিরের বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কান্না করতে করতে মুখ লাল হয়ে গেছে প্রাচুর্যের। চোখ ফুলে উঠেছে যার দরুন তাকাতে পর্যন্ত পারছে না। আর তার মধ্যে গালে পাঁচ আঙুলের দাগ খয়েরী রঙ ধারন করেছে। যা দেখেই আঁতকে উঠলো তাফসির। প্রাচুর্যের মুখ দু'হাতের মধ্যে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকলো " কি হয়েছে " কিন্তু কান্নার দাপুটে কথা বলতে পারছিলো না সে। অনেক কষ্টে মুখ খুলালো প্রাচুর্যের আর সব শুনে তাফসিরের রাগে কপালের রগ ফুলে উঠলো। তৎক্ষনাৎ যেয়ে ডেকে আনলো সবাইকে। অনেক বকাঝকা ও করলো মেয়ের দিকে খেয়াল না রাখার কারনে। সব শুনে সবাই ও স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। মিসেস শাহানা তো দৌড়ে যেয়ে মেয়েকে ঝাপটে ধরলো। মা কে পেয়ে প্রাচুর্যও জড়িয়ে ধরলো। আর কান্না করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরলো সে।
সে সময়ের কথা মনে পরতেই হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠলো তাফসিরের। প্রাচুর্যের এ অবস্থা যে করেছে তাকে ছারবে না সে। এখন শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা। যদিও সকাল হতে আর বাকি নেই বেশি। এইতো মাত্র আর কিছুক্ষণ।
——————————
যখন সকাল হলো তখন তাফসিরকে খুঁজে পাওয়া গেলো না কোথাও। রোজকার দিনের মতো সকালের নাস্তা করে অফিসে চলে গেলেন সবাই। ইনসাফ চৌধুরী যাওয়ার আগে মেয়ের ঘর থেকে ঘুরে গেছেন একবার। এ অবস্থায় মেয়েকে একা রেখে মোটেও অফিসে যেতে ইচ্ছে করছিলো না তার। কিন্তু আজ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে বলে যেতে হলো।
শাহানা বেগম খাবার নিয়ে রুমে এলেন প্রাচুর্যের। মেয়েকে ঘুৃম থেকে তুলে জ্বর চেক করলেন। এখন যদিও বেশি জ্বর নেই তবে হালকা হালকা আছে। প্রাচুর্যকে উঠিয়ে ফ্রেশ করে নাস্তা করিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলেন। তারপর চুল আঁচড়িয়ে মাথায় তেল দিয়ে লম্বা বিনুনি করে দিলেন। পুরোটা সময় চুপ করে মাথা নুইয়ে ছিলো প্রাচুর্য। তার মুখ থেকে একটা কথাও বের হয় নি। যা দেখে মন ভার হলো শাহানার।
তার মেয়েটা বোকা। ছেলেটা যে এতো ডিস্টার্ব করছে তা যদি শুরুতে বলতো তাহলে জল এতো দুর গড়াতো না আজ। তখনই ব্যবস্থা নেওয়া যেতো কোনো। এর মধ্যেই দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে ফিরে তাকালেন মিসেস শাহানা।
তাফসির এসেছে। প্রাচুর্য এক পলক সেদিকে তাকিয়েই আবার মাথা নুইয়ে ফেললো। তাফসির গিয়ে সোজা বসলো শাহানার পাশে। মিসেস শাহানা তাফসিরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত মুখে বললেন—
" আব্বা ব্যবস্থা করেছিস কোনো? ছেলে টা কে? কোথায় থাকে খোঁজ নিয়েছিস?
তাফসির কিছু না বলে শুধু ইশারায় মাথা নাড়ালো। তারপর বলতে শুরু করলো—
" ছেলেটার নাম তানভির হাসান। প্রাচুর্যদের সাথে একই ক্লাসে পরতো। প্রাচুর্য যখন স্কুলে ছিলো তখন থেকেই ওর পেছনে ঘুরতো। তখন ওতো টাও ডিস্টার্ব করে নি যদিও। কিন্তু দিন যতো যেতে থাকলো ততো বেশি বিরক্ত করা শুরু করলো প্রাচুর্যকে।"
তাফসিরের কথায় শাহানা বললেন—
" আর কিছু জানতে পেরেছিস? এমনি এমনিই ছেড়ে দিলি? কিছু বলিস নি ওকে?"
তাফসির একবার প্রাচুর্যের দিক তাকালো তারপর শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বাইরে আসতে বলে সে বাইরে চলে গেলো। সাথে সাথে চলে গেলেন শাহানা ও। প্রাচুর্য এখন শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। তার এসব বিষয়ে মন নেই।
শাহানা বেগম বাইরে আসতেই দেখলেন তাফসির দাড়িয়ে আছে করিডরের শেষ প্রান্তে। শাহানা বেগম এগিয়ে গেলেন তাফসিরের দিকে। তাফসিরের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন—
" এইবার বল আব্বা।"
" ছেলেটার বয়স উনিশ বা বিশ হবে হয়তো। প্রাচুর্যদের সাথে পড়লেও এসএসসি তে ফেল করে থেকে গেলো আবার সেই টেনে। এইটুকু বয়সেই সে বিভিন্ন নেশাদ্রব্য সেবন করে। এমন কোনো মাদক নেই যা সে গ্রহণ করে নি। ওদের এলাকায় মাঝেমধ্যে রাস্তা ঘাটে পরে থাকতে দেখা যায় ওকে। সাথে আছে মেয়ে জনিত সমস্যা। শুধু প্রাচুর্য না, এমন অনেক মেয়ে আছে যাদের রাস্তাঘাটে ব্যাড সাউন্ড করে। বাবা নেই। মারা গেছে অনেক বছর আগেই। মা মানুষ করছে তবে মায়ের কোনো কথায় শোনে না। নেশার টাকা না পেলে মায়ের গায়ে হাত তুলতে দু'বার ও ভাবে না। প্রাচুর্যের পেছনে পরে ছিলো কারন প্রাচুর্যের সুন্দর চেহারা। আর চৌধুরী বাড়ির মেয়ের সাথে একবার রিলেশন হয়ে গেলে তখন বিভিন্ন উছিলায় প্রাচুর্য থেকে টাকা নিতো। তখন ওর নেশার টাকা ও হয়ে যেতো সাথে পাওয়ার ও। কিন্তু কাল প্রাচুর্য ওসব কথা বলায় রাগে এসব করেছে সাথে এতোদিনের রাগ টাও ঝেরেছে।"
" তুই কিছু বলিস নি আব্বা? এমনি এমনিই ছেড়ে দিলি?"
শাহানার কথায় মুচকি হাসলো তাফসির। সাথে বাম হাত উঁচু করলো যেখানে আপাতত ব্যান্ডেজে আবৃত।

 #মনুষ্যত্ব-- " মাছের মাথা'টা এই বাটিতে কেন?তোমায়তো বলেছিলাম আজ আব্বার বাটিতে মাছের মাথাটা দিতে? "প্রশ্নটা শুনে মনে হয় আ...
02/12/2023

#মনুষ্যত্ব

-- " মাছের মাথা'টা এই বাটিতে কেন?তোমায়তো বলেছিলাম আজ আব্বার বাটিতে মাছের মাথাটা দিতে? "
প্রশ্নটা শুনে মনে হয় আমার বউ এর খুব একটা ভালো লাগলোনা।সে আমতা আমতা করে বললো,
-- " না আসলে আমার মনে ছিলো না।আর আব্বাও মনে হয় এতক্ষণে খেয়ে উঠেছেন।ভাবী কে তো দেখলাম সেই কখন রান্না শেষ করে ঘরে গেছেন,তাই আর দিতে যায়নি। "
আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মাছের মাথা টার সাথে তিনটা বড় বড় মাছের পিছসহ তরকারির বাটি টা নিয়ে চলে গেলাম ভাইয়ার ঘরের দিকে।ঘরে ঢুকেই দেখলাম আব্বা মাত্রই ভাত খাওয়া শুরু করেছেন।
তরকারির বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-- " আব্বা আপনার পচ্ছন্দের রুই মাছ। "
আব্বা খানিক বাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-- " এতো পিছ আনতে গেলা কেন? "
আমি বললাম,
-- " আব্বা আপনারতো খুব পচ্ছন্দ তাই আজ হাটে রুই মাছটা দেখেই কিনে এনেছি। "
পাশেই মা বসেছিলো কিছু না বলে চুপচাপ আব্বাকে বাতাস করছিলো।আমার কথাটা শুনে আব্বা কে বললো,
-- " হায়াত আনছে যখন শখ করে মাছের মাথা টা খান না আপনি।সেইদিনও তো বলছিলেন মা..ছ.. "
কথাটুকু শেষ হওয়ার আগেই আব্বা মা'কে থামিয়ে দিয়ে খেতে শুরু করলেন।বুঝলাম আব্বাও হয়তো মা কে মাছের কথাই বলেছিলো।
বের হয়ে আসার সময় মা কে বললাম,
-- " মা একটা পিছ নিয়ে তুমিও ভাত খেয়ো। "
মা শুধু সম্মতিসূচক মাথাটা নেড়ে বললো,
-- " হায়াত বাবা তোরা খাইছিস? "
আমি কিছু না ভেবেই মিথ্যে বললাম,
-- " হ্যা মা খাইছি। "
ভাইয়াদের ঘর থেকে এসে কি যেন ভেবে রাতে আজ না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।কপালের উপর হাতটা রাখতেই অনেক ভাবনা মাথায় এসে ভর করলো।
ছোটোবেলায় মা কে দেখতাম একটা বড় মাছ অনেক পিছ করে রান্না করে আমাদের তিন ভাইবোন কে খাওয়াতো।আব্বা হাটবার এলেই আমাদের দুই ভাই কে নিয়ে ইয়া বড় একটা ব্যাগ সঙ্গে করে হাটে যেতো।বড় বড় মাছ অথবা মাংস কিনতো।আমরা তিন ভাইবোন'ই মাংস খুব পচ্ছন্দ করতাম।আব্বা হাট থেকে মাংস আনলে মা সেটা অনেক টুকরো করে কেটে রান্না করতো।দুই বেলার কাছে আমাদের তিনবেলা খাওয়াতো।তখন বুঝতামনা আব্বা-মা না খেয়ে কতবেলা সেই মাছ মাংস আমাদের খাওয়াইছে।
সেইদিন গুলো আজ শুধুই স্মৃতি।আপার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বাড়িটা একদম ফাঁকা হয়ে যায়।ভাইয়ারও বিয়ের বয়স হওয়াই আব্বা মা ও'কেও বিয়ে করায়।ভাইয়ার বিয়ের পর থেকেই বুঝলাম সংসারটা কি জিনিস।
ভাবী ছয়মাস একসাথে থাকতে না থাকতেই আলাদা হতে চাইলেন।আব্বাও আর কিছু না বলে বড় ভাইয়া কে অনুমতি দিলো আলাদা খাওয়ার।সেদিন দেখেছিলাম যখন এক পাটিতে ভাইয়ার জায়গাটা ফাঁকা ছিলো শুধু আব্বা আর আমি মিলে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম তখন আব্বা বুকের ব্যথা বলে খাবার ছেড়ে উঠে যান।মা ও আর সেই রাতে খেতে পারেনি।
ভাইয়ার দুই বছরের ছোট ছিলাম আমি।তাই ভাইয়ার বিয়ের বছর-দেরেক পর আমাকেও আব্বা-মা বিয়ে করায়।তখন থেকে শুরু হলো সংসারে আরেক অশান্তি।ভাইয়া আলাদা খায় বলে আমার বউ বললো, সেও আলাদা খাবে।আমি বললাম, তাহলে আব্বা মা'র কি হবে?তারা জা'রা মিলে ঠিক করলো, আব্বা মা দুই ঘরে এক সপ্তাহ এক সপ্তাহ করে খাবে।
এখনো মনে পড়ে এই ভাগবন্টনের কথাটা শুনে আব্বা মা ঘর থেকে বের হয়নি সারাদিন।হয়তো লজ্জায় নয়তো অকৃতজ্ঞ সন্তানদের জন্ম দেওয়ার অনুশোচনায়।
আব্বা মা'র মুখ থেকে খুশি নামক চিহ্ন আমি সেদিন থেকেই বিলীন হতে দেখেছি।বড় ভাই আমায় প্রায় বলতো,
-- " হায়াত রে আব্বা মনে হয় বেশিদিন বাঁচবে না।মুখটার দিকে একদম তাকানো যায় না কত কষ্ট বুঁকে নিয়ে যে ভাত খায় আমি রোজ দেখি। "
আব্বা-মা কোনোদিনো ভাবেনি তার ছেলেরা ভিন্ন হবে আর তাদের এভাবে বন্টণ করে খাওয়াতে হবে।কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই কখন যে আমার চোখ ভরে উঠেছে বুঝতেই পারিনি।
পরদিন সকালে একটু বাজারে গেলাম আলাদা করে ভাইয়ার সাথে এই ব্যপারে কথা বলতে।এভাবে সংসারটা ভিন্ন করে আব্বা মা কে ভাগ ভাগ করে নেওয়াটা আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না।
বাজারে যেতেই বউ কল করে জানালো তার বাবা মা আসবে তা কে নিতে।তাই মাছ মাংস সহ বাজার করে নিতে বললো।ফোনটা রেখে ভাইয়ার কাছে আর না গিয়ে সবজির বাজারে ঢুকলাম।প্রয়োজনীয় সবজিসহ মাছ,মাংস কিনে বাড়ি ফিরলাম।
বাড়িতে ফিরতেই দেখি শ্বশুর শাশুড়ি এসেছেন।বউ এতোবড় ব্যাগসহ বাজার দেখে হাসিমুখে ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো।রান্না শেষে দুপুরের খাবার খেতে দিলো তার বাবা মা কে।আমাকেও বসতে বললো আমি অন্য অযুহাতে বাইরে চলে এলাম।
পুকুর পাড়ে বসে বসে ভাবছিলাম,কাল থেকে তো আব্বা মা'র আমাদের ঘরে খাওয়ার সপ্তাহ।আর আজ আমার বউ বাবার বাড়ি চলে যাবে?মুহূর্তেই মেজাজটা বিগ্রে গেলো।বসা ছেড়ে উঠে সোজা ঘরের দিকে গেলাম।ঘরে ঢুকেই দেখি শ্বশুর শাশুড়ি আর আমার বউ গোল মিটিং হয়ে কথা বলছে।সবার মুখ দেখে এটাই মনে হলো যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা।
শাশুড়ি কে বললাম,
-- " আম্মা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি? "
শাশুড়ি অবাক হয়ে বললো,
-- " হ্যা বাবা বলো। "
বললাম,
-- " ও কে এই অসময়ে নিতে এসেছেন যে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? "
কথাটা শেষ না হতেই আমার বউ বলতে শুরু করলো,
-- " আরে সমস্যা কি বলছো অনেক বড় সমস্যা হইছে।জানো বাবা মা কে বড় ভাইয়া আর ভাবী বলছে এখন থেকে না কি মেজো আর সেজো ভাইয়ার সাথে ভাগ করে খেতে হবে।চিন্তা করছো আমরা বেঁচে আছি আর তারা এখনি আমার বাবা মা কে ঘরে ঘরে ফকিন্নির মতো খাবার খেতে বলে?তাই কাল গিয়ে ওদের সাথে কথা বলবো,দরকার পরলে ঝগড়া করবো তুমি কি বলো? "
আমি খানিক তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম,
-- " বাহ এই না হলে ঘরের মেয়ে,কিন্তু ঘরের বউ না। "
আমার বউ মনে হলো ঠিক বুঝলোনা কথাটা।সে ভ্রু-জুগল কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
-- " মানে? "
এবার আমি মনের সমস্ত রাগ ঝেড়ে বলতে শুরু করলাম,
-- " মনে পড়ে যেদিন তুমি এই বাড়িতে এসেছিলে একমাসও একত্রে ভাত খাওনি আব্বা মা'র সাথে? বন্টন করে দিয়েছিলে ভাইয়াদের সহ।আমার আব্বা কে মাছের মাথাটা দেওয়ার কথা ভুলে যাও অথচ নিজের বাবা মা আসবে বলে বড় বড় মাছ মাংস আনতে বলার কথা ভুলোনা। "
ঘরে এমন জোরে জোরে কথাবার্তার আওয়াজে আব্বা মা'র সাথে ভাইয়া ভাবীও চলে আসে।মা এসেই বললো,
-- " হায়াত তুই চুপকর কি হচ্ছে এসব?ঘরে মেহমান দেখছিস না? "
মা কে বললাম,
-- " চুপইতো ছিলাম এতোদিন।কখনো দেখেছো আমরা ভাইয়েরা এই বউ নামক প্রাণীদের সাথে ঝগড়া করেছি?করিনি কারণ আব্বা সবসময় পরিবারে শান্তি চেয়েছেন।তাই অশান্তির ভয়ে ওদের সব অন্যায়কেই আমরা প্রশ্রয় দিয়েছি মুখ বুজে। "
মা আর কিছু না বলে মুখে আঁচল চেপে দাঁড়িয়ে রইলেন।আমি আবার বলতে শুরু করলাম,
-- " মনে আছে আমার বড় আপা যেদিন এই বাড়িতে আসতো তোমাদের বউদের মুখ কালো কুচকুচে অন্ধকার হয়ে যেতো?কেন যখন তোমাদের মা,বাবা,বোন,ভাই আত্মীয়ের গুষ্ঠি আসে কই আমাদের ভাইদেরতো মুখ কালো হয়না?আমার আপা খাসির মাংস পচ্ছন্দ করে।একদিন আপা আসাতে আমি এক বাজার না পেয়ে অন্য বাজার থেকে খাসির মাংস কিনে আনি।আর তুমি ইচ্ছে করেই সেদিন মাংসে লবন বেশি দিয়েছিলে।কি ভেবেছিলে আমি বুঝিনি?আমার আপা লবনে তেতো মাংসের ঝোল দিয়ে ওমনি ভাত খেয়েছিলো,সেদিনও আমি কিছুই বলিনি।আর আজ যখন তোমার ভাইয়েরা তোমার বাবা মা কে ভিন্ন করে খাবার দিতে চাইলো তখন তোমার কাছে তা ফকিন্নির মতো লাগলো?আর আমার আব্বা মা কে যে এইভাবেই মাসের পর মাস খাবার দিচ্ছো তোমরা তখন আত্মসম্মানে বাধে না? "
সবশেষে শ্বশুর শাশুড়ি কে বললাম,
-- " কোনো মনুষ্যত্বহীণ প্রানীর সাথে সংসার করা আমার পক্ষে আর সম্ভব না।আজ আপনাদের সাথে ও'কে একেবারেই নিয়ে যাবেন। "
বিকেলের দিকে আপা কে কল করে আসতে বললাম।ভাইয়া আর আমি বাজার থেকে খাসির মাংস কিনে এনে মা কে বললাম,
-- " ভালো করে কষিয়ে রান্না করতে। "
রাতে আমি আব্বা ভাইয়া আর আপা মিলে খেতে বসলাম এক পাটিতে।মনে হচ্ছে যেন সেই ছোটোবেলায় ফিরে গেছি।পাশের পাটিতে ভাবী আর আমার বউ বসেছে খেতে।তারা তাদের ভূলের জন্য অনুতপ্ত আর আব্বা-মা বরাবরের মতোই এবারও ক্ষমা করে দিয়েছেন।
সবাইকে হাসিমুখে খাবার পরিবেশন করছে আমার মা।আজ সবার মুখে পরিপূর্ণ তৃপ্তির খুশি।
আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে আজ আমি সেই খুশিটা দেখছি যা গত দুই বছরে দেখিনি।
(আপনি নিজের বাবা মা কে যতটা ভালোবাসেন আপনার স্বামীও ঠিক ততোটাই বাসে।নিজের ভালো টা যদি বুঝতে পারেন তাহলে স্বামীর'টা কেন নয়?বাবার বাড়িতে থাকতে মনুষ্যত্ব থাকে অথচ শ্বশুর বাড়িতে গেলে অনেকেরই সেই মনুষ্যত্ব লোপ পায়।সবসময় একটা বিষয় মাথায় রাখবেন,আপনি পরের বাবা মা'র সাথে যা করবেন আপনার বাবা মা'র সাথেও পরের মেয়ে তাই করবে।)

~~~~~সমাপ্ত~~~~~

 # ডিভোর্সপ্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম।- স্যার আপনার সাথে কোন ডিভোর্স লইয়ারের পরিচয় আছে?বয়সে তরুণ জাহাজের সেকেন্ড অফিসার, মা...
02/12/2023

# ডিভোর্স

প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠলাম।
- স্যার আপনার সাথে কোন ডিভোর্স লইয়ারের পরিচয় আছে?
বয়সে তরুণ জাহাজের সেকেন্ড অফিসার, মাত্র ত্রিশের কোঠা পেরিয়েছে। বিয়ে করেছে সম্ভবত বছর তিনেক হবে। একটা ছোট মেয়েও আছে এক বছর বয়সী। একদিন গল্পে গল্পে বলেছিল প্রেমের বিয়ে, বউ এমবিএ করে একটা ফার্মে ইন্টার্নি করছে।
ছেলেটাকে বেশ কিছুদিন ধরেই উদ্ভ্রান্ত দেখছি। চোখ কিছুটা লালচে থাকে, হয়ত রাতে ভাল ঘুমও হচ্ছে না। সবসময় তো আর ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করা যায় না, যতক্ষণ নিজ হতে মুখ না খোলে। জাহাজ খুব ছোট জায়গা। মানসিক অবস্থা কলিগদের কাছ থেকে বেশীক্ষণ লুকিয়ে রাখা কঠিন। তবে জাহাজের একটা ইউনিক বৈশিষ্ট্য হল, এখানে সবাই খুব খোলামনে একে অপরের সাথে ব্যক্তিগত জীবনও শেয়ার করে। এর দুটো কারণ থাকে। প্রথমত পারিবারিক সম্পর্ক না থাকায় কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। দ্বিতীয়ত একটা নির্দিষ্ট সময় পরে সবাই যার যার গন্তব্যে চলে যায়, হয়ত এই জীবনেই আর দেখা হয় না৷ আজকাল খুব বেশী হলে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে একে অপরকে এড করে নেয়।
কাছে ডেকে বসালাম।
- কি সমস্যা বল তো?
- স্যার আমার ওয়াইফের সাথে আর সংসার করা সম্ভব না। এত সমস্যা নিয়ে কারো সাথে এক ছাদের নিচে থাকা যায় না।
- তোমাদের তো ছোট্ট একটা রাজকন্যা আছে...৷
- স্যার তাই বলে আমাদের নিজেদের জীবনও নষ্ট করব? আমার মেয়ে যে ভাগ্য নিয়ে এসেছে তাই হবে। এত যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না৷
- তোমার ওয়াইফের অপরাধগুলো কি কি বল তো।
- আমাদের বাসায় থাকতে চায় না। আমার মা আর ভাই বোনদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমাকে না বলে বাবার বাড়ি চলে যায়। বাচ্চাকে ওর মায়ের কাছ রেখে অফিস করে, আমার মায়ের কাছে দেয় না। একেকবার গেলে এক সপ্তাহ আর আসার নাম করে না।
- কিন্তু তুমি তো শিপে।
- হ্যাঁ, কিন্তু আমার বউ আমার বাসায় থাকবে না?
এখন মাথা গরম। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না বলাই ভাল। মাথা ঠান্ডা হোক আগে। ওকে আশ্বস্ত করলাম যে, একবার ল্যান্ডে নেমে নেই, ডিভোর্স নিশ্চিত।
বেশ কদিন বিভিন্ন অজুহাতে ওর সাথে গল্প করার পর কাহিনী ধীরে ধীরে পরিস্কার হল। সেকেন্ড অফিসারের নাম সৈকত।
- আচ্ছা সৈকত, আমার কিছু প্রশ্নের জবাব দিবে?
- জি স্যার বলেন।
- তোমার বিয়ের তিন বছর পেরিয়েছে, বউ আর বাচ্চার হাতখরচ মায়ের মাধ্যমে কেন দাও?
- বিয়ের আগে হতেই মায়ের সাথে জয়েন্ট একাউন্ট...
- বিয়ের পর তোমার বউকে একটা একাউন্ট খুলে দিতে কিংবা তোমার সাথে আরেকটা জয়েন্ট একাউন্ট খুলতে পারত। কোন বউয়ের তো শাশুড়ির কাছে বারবার হাত পাততে ভাল লাগবে না। আর তোমার বউ বাবার বাড়ি গেলে নাকি হাতখরচ আটকে রাখে।
- হ্যাঁ৷ স্যার। আমার বা আম্মার কথা না শুনলে কিসের হাতখরচ।
- আরে তোমার মেয়ে আর সংসারের খরচ আছে না। তোমার বউ কি টাকা নষ্ট করে কিংবা ঊড়ায়?
- তা উড়ায় না স্যার। কিন্তু কন্ট্রোলে তো রাখতে হবে।
- ভরণপোষণ তো ওদের অধিকার, কোন দয়াদাক্ষিণ্য না। আচ্ছা, তুমি আমাকে সবসময় বউয়ের বদনাম কর। ওর কি কোন গুণই নাই?
- সেটা আছে স্যার। এমনিতে অনেক গুণ, এজন্যই তো প্রেম হয়েছিল। মেধাবী, স্বভাব চরিত্র ভাল, বাচ্চার যত্ন নেয়, দেখতে সুন্দরী... লম্বা...
আমি হা হয়ে গেলাম। গুণে গুণে ৮ টা ভাল দিক উল্লেখ করল সৈকত।
- এত গুণী একটা মেয়েকে ডিভোর্স দিতে চাইছ?
- জি স্যার, গত ৩ মাস ধরে শুধুই ঝগড়া হচ্ছে। আর পারি না।
- আচ্ছা, আমি জিজ্ঞেস করার আগ পর্যন্ত বউয়ের যত বদনাম করেছ এগুলো তুমি কিভাবে জেনেছ। তুমি তো ৫ মাস ধরে শিপে।
- স্যার, আমার মা আর ভাই বোনেরা বলেছে।
- আচ্ছা, ওরা কি কখনো তোমার বউয়ের প্রশংসা করে কখনো কিছু বলেছে?
খুব চিন্তায় পড়ে গেল সৈকত।
- জি না স্যার, মনে পড়ছে না।
- তোমার এত গুণী বউ, কিন্তু তোমরা কেউ কোন প্লাস পয়েন্ট পাও না? তোমার ফ্যামিলি আদৌ কি চায় তোমার সংসার টিকুক? সারাক্ষণ তোমাকে নেগেটিভ কথা বলে কানভারি করতে থাকে। এখন হতে ওরা যখনই তোমার বউ সম্পর্কে কিছু বলতে যাবে, থামিয়ে দিবে। পারবে না?
মাথা নাড়ল সৈকত। দ্বিধায় আছে বুঝাই যাচ্ছে। তবে সুর নরম করল।
- জি স্যার।
- আচ্ছা, তুমি রোজার ঈদে নাম উল্লেখ করে টাকা পাঠিয়েছিলে। তবুও তোমার ফ্যামিলি তোমার শ্বশুর শাশুড়িকে কাপড় কিনে পাঠায়নি কেন? ওদের তো মন খারাপ হবার কথা। তোমার ওয়াইফেরও মন ছোট হবে।
- সময় পায়নি মনে হয়।
যদিও মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, ওর উত্তরটা নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না।
- তাহলে টাকাটা ওদের ভাবীকে দিয়ে দিত। তাও তো দেয়নি৷ বুঝাই যাচ্ছে, সংসারে খরচ করে ফেলেছে।
একটু থেমে আবার বললাম,
- তোমার বিয়ের গহনা তিন বছর হয়ে গেলেও এখনো তোমার ওয়াইফকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তোমার মা রেখে দিয়েছেন। এগুলা তো তোমার ওয়াইফের আমানত। ওকে তোমরা উপহার দিয়েছ কিংবা বিয়েতে পেয়েছে। এজন্য কাবিননামায় উসুলও কেটেছ। এখন এগুলা আটকে রাখার যৌক্তিকতা কি? গহনা নিয়ে পালিয়ে যাবে? তোমার বউকে তোমার ফ্যামিলি বিশ্বাস করে না?
- ঠিক তা না... আর কথা খুঁজে পেল না সৈকত।
- তুমি কেমন হাজবেন্ড? তোমার ওয়াইফের সাথে ব্যাংক একাউন্ট নেই, টাকা পয়সা কিংবা গহনা আটকে রাখ, তোমার বউয়ের জন্য উপহার নিয়ে গেলে অন্যরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে যায়, ফ্যামিলি হতে খুব আগ্রহ নিয়ে সারাক্ষণ বদনাম শুনে বিশ্বাস করে বউকে ফোন দিয়ে ঝগড়া কর, তোমার অবিবাহিত ছোট বোনের নামে তোমার পাঠানো টাকার গরুতে কুরবানির ভাগ দেয়া হয় কিন্তু তোমার বউয়ের নাম কুরবানির লিস্টে দাও না, এমনকি কুরবানির মাংস তুমি বলার পরও তোমার শ্বশুরবাড়িতে নানা অজুহাতে পাঠানো হয় না, ওদের কথায় তোমার মেয়ের মাকে ডিভোর্স দিতে রাজি হয়ে যাও, তোমার ফ্যামিলি একবার তোমার ওয়াইফকে বাসা হতে বের হয়ে যেতে বললেও তুমি ফ্যামিলির পক্ষ নাও...
মাথা নিচু করে রইল সৈকত। পিঠে হাত বুলিয়ে হালকা স্বরে বললাম,
- এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি৷ তোমার ওয়াইফকে ফোন করে সব ভুলগুলো উল্লেখ করে সরি বল। ওয়াইফের দিকে তুমি এক কদম আগালে মেয়েটা তোমার দিকে দশ কদম আগাবে।।মেয়েরা খুব বাধ্য না হলে ছোট বাচ্চা রেখে সংসার ভাঙ্গে না। আর তোমার ফ্যামিলির কেউ ফোন করলে ওদের ভাবীর প্রসঙ্গে একটা শব্দও শুনবে না। বলবে, অন্য কথা থাকলে বল। আলাদা বাসা নেয়াও একটা সমাধান তবে এই বুদ্ধি দিচ্ছি না। একা ছোট বাচ্চা নিয়ে চলাফেরাও কঠিন আর নিরাপদ না। সবাইকে চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে তোমাদের বাসায় তোমার ওয়াইফের সম্মান ফিরিয়ে দাও। যে ভুলগুলো হয়েছে, সব শুধরে নাও। তোমার ওয়াইফের আর্থিক স্বচ্ছলতা আর প্রাইভেসি যাতে বজায় থাকে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তোমার।
কয়েকদিন পর সৈকতের হাসিমুখ দেখেই বুঝলাম, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ছেলেটা পরের কদিনেই আমূল বদলে গেল।
একদিন কাছে এসে অশ্রুসজল চোখে লাজুক স্বরে বলল,
- স্যার আপনার বুদ্ধিতে কাজ হয়েছে। ভুল বুঝাবুঝি আর নেই। এখন হতে সতর্ক হয়ে চলব। পরের কথা শুনার মাশুল এভাবে দিতে হবে ভাবিনি। ওয়াইফকে সব খুলে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, এরকম ভুল আশা করি আর হবে না।
একটু থেমে যোগ করল,
আপনার পরিচিত ট্রাভেল এজেন্ট আছে? সাইন অফ করে মেয়ে আর ওয়াইফকে নিয়ে সপ্তাহখানেকের জন্য ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে ঘুরতে যাব। ওর মনের ভাঙ্গা অংশও জোড়া লাগাবার চেষ্টা করব। বিয়ের পর ফ্যামিলির চাপে দেশের বাইরে যাওয়া হয়নি।
আমি হেসে ফেললাম, স্বস্তির হাসি। ভাঙ্গনের মুখ হতে একটা পরিবার অন্তত বাঁচল।
সৈকতও হাসছে.....।
- এবার শক্ত করেই ওর হাত ধরেছি। ইনশাআল্লাহ ঝড়, বৃষ্টি কিংবা সাইক্লোনেও আর ছাড়ব না...!!

 ের_কথারুমের মধ্যে বাতি বন্ধ করে শুয়ে আছি। একটু পরে বড় ভাইয়া আমার রুমে এসে বললো, - কি করিস মিরাজ? - কিছু করি না ভাইয়া, ক...
02/12/2023

ের_কথা

রুমের মধ্যে বাতি বন্ধ করে শুয়ে আছি। একটু পরে বড় ভাইয়া আমার রুমে এসে বললো,
- কি করিস মিরাজ?
- কিছু করি না ভাইয়া, কিছু বলবা?
- তোর চাকরির কি অবস্থা? যেখানে ইন্টারভিউ দিলি সেখান থেকে কিছু জানায়নি?
- না ভাইয়া।
- তোকে একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
- বলো।
- আমার শাশুড়ী গ্রাম থেকে শহরে আসবেন কিছু দিনের জন্য বেড়াতে। সঙ্গে হয়তো আমার শশুড় ও আসতে পারে।
- আচ্ছা।
- তুই জানিস আমাদের এই একটা মাত্র ফ্ল্যাট। থাকার যে কি ব্যবস্থা করবো সেটা নিয়ে গতকাল রাত থেকে টেনশনে আছি।
- হুম, টেনশন করারই কথা।
- আমি একটা উপায় বের করতে পেরেছি।
- কি?
- তোর তো চাকরি হচ্ছে না। তাই বলছিলাম যে তুই যদি মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন ঘুরে আসিস তাহলে দুটো রুম ফাঁকা হয়ে যাবে।
আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে হয়তো পুরোপুরি চাইছে মাকে নিয়ে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। এর আগে ভাবির সঙ্গে এসব নিয়ে অনেক ঝগড়া করতে শুনেছি।
আমি বললাম,
- মা যদি রাজি হয় তাহলে আমার আপত্তি নেই।
- সেখানে তো সমস্যা, মা তো রাজি হচ্ছে না। সে গ্রামের বাড়িতে যেতে চায় না, বলে তার শরীর নাকি খুব অসুস্থ।
- হ্যাঁ এটা ঠিক, আমাকেও প্রতিদিন বলে তার শরীর ভালো নেই। বাবাকে নাকি প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখেন, বারবার মৃত্যুর কথা বলে।
- অসুস্থ হলে এরকম সবারই হয়। মৃত্যু যদি আসে সেটা তো শহর গ্রাম সবজায়গা আসবে তাই না? তাছাড়া শহরের দূষিত খাদ্য আর আবহাওয়ার চেয়ে গ্রামে গেলে শরীর ভালো হতে পারে।
আমি কিছু বললাম না। কারণ আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া যেভাবেই হোক মাকে বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে পাঠাবেই। আর সেই কাজটা সে আমাকে দিয়ে করতে চাইছে। কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়লে আমারই খারাপ লাগে। দিন দিন মা বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে, বিছানা থেকে এখন শুধু নামাজ পড়তে আর বাথরুমে যাবার জন্য ওঠে।
- বললাম, তুমি চিন্তা করো না। মাকে বুঝিয়ে বলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবার দায়িত্ব আমার।
- ধন্যবাদ ভাই, টাকাপয়সা যা লাগে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবি সমস্যা নেই। আর সেখানে গিয়ে টাকার দরকার হলে কল দিলেই হবে। মাত্র তো কয়েকটা দিন, তারপর আবার ফিরে আসবি।
- ঠিক আছে সমস্যা নেই।
ভাইয়া উঠে দরজা পর্যন্ত গেল। আমি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম,
- আমার কি মনে হয় জানো?
- ভাইয়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললো, কি?
- আমার মনে হয় মাকে আর কোনদিন তোমাকে এই বাসাতে আসতে হবে না। এটাই হয়তো শহর থেকে তার শেষ বিদায়।
- তুই ও মায়ের মতো কথা বলিস কেন?
- আচ্ছা যাও তুমি।
|
|
মা বিছানায় শুয়ে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে বিছানার পাশে বসলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মা বললো,
- কিরে মন খারাপ নাকি?
- না মা, একটা কথা বলতে এসেছি।
- কি কথা?
- ভাইয়া তোমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে জানো?
- হ্যাঁ আমাকেও বলেছিল। কিন্তু আজকাল শুধু মনে হয় যেকোনো সময় মারা যাবো। তাই মৃত্যুর সময় নিজের বড় সন্তান বৌমা নাতি নাতনী কেউ কাছে থাকবে না এটা হয় নাকি? সেজন্য আমি রাজি হইনি।
- কিন্তু ভাইয়া তো আমাকে গিয়ে অনুরোধ করেছে তোমাকে নিয়ে যাবার জন্য।
- তুই বলিসনি কিছু?
- হ্যাঁ বলেছি যে আমি তোমাকে নিয়ে আজই গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো।
- কেন বলেছিস?
- মা তুমি বোঝার চেষ্টা করো, ভাইয়া তোমাকে কিছুতেই রাখতে চাইছে না। হয়তো ভাবির সঙ্গে এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে তার। তোমার জন্য তোমার সন্তানের পরিবারে ঝামেলা হচ্ছে। তারা তোমাকে তাদের সংসারে বোঝা মনে করে।
- একটা কথা বলি মিরাজ?
- বলো মা।
- তোর ভাইয়া যখন বিয়ে করে তখন তো বললো বৌমা নাকি খুব ভালো মেয়ে। কিন্তু এখন সেই মেয়ে আমাকে সহ্য করতে পারে না কেন? আমার ছেলের বাসায় থাকি তাহলে সেখান থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে কেন?
- এসব নিয়ে কষ্ট পেও না মা। তুমি যদি এখানে থাকো তাহলে এদের ঝামেলা দিন দিন বাড়বে। ভাবি তার উদ্দেশ্যে সফল হতে না পেরে আরও ঝামেলা বাড়াবে৷ তখন তুমিও কষ্ট পাবে। তারচেয়ে বরং তুমি আমার সঙ্গে চলো, আমি তো আছি মা। গ্রামের বাড়িতে বাবার কতো স্মৃতি। সেখানে গেলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। বাবা একা একা আমাদের গ্রামের বাড়িতে কবরে ঘুমিয়ে আছে। তার কবরটা দেখতে পাবো।
- আমাকে কবে নিয়ে যাবি মিরাজ?
- আজকে বিকেলেই রওনা দেবো।
- ঠিক আছে তুই ব্যবস্থা কর।
|
|
গ্রামের বাড়িতে এসেছি বেশ কিছুদিন হলো। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা দিন দিন বাড়ছে। প্রথম প্রথম সপ্তাহ খানিক ভালো ছিল কিন্তু তারপর হঠাৎ করে একদিন জ্বর হলো। সেই থেকে মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না।
আজকে সকালে আমাকে ডেকে বললেন,
- আমি মনে হয় খুব শীঘ্রই মারা যাবো বাবা।
- চুপ করো তো মা, সবসময় এরকম করো কেন?
- তোর ভাইকে একটু খবর দে না। মৃত্যুর আগে সবাইকে একসঙ্গে দেখতাম, ওরা সবাই যেন গ্রামে আসে। বলে দেখ না।
মায়ের বলার আগেই আমি গতকাল ভাইয়ার কাছে কল দিয়েছিলাম। কারণ মায়ের শরীর সত্যি খুব খারাপ। কিন্তু ভাইয়া বললেন তার অফিসে কাজ আছে অনেক। তাছাড়া সামনের সপ্তাহে নাকি তাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই এরকম সময় ভাবি নাকি কিছুতেই রাজী হবে না।
কিন্তু এসব কথা মায়ের কাছে বলার কোনো মানে হয় না। অসুস্থ মানুষ মন খারাপ করে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।
- বললাম, ঠিক আছে মা আমি ভাইয়ার কাছে আজই কল দিয়ে জানাবো।
- ঠিক আছে, আর আমার সঙ্গে একটু মোবাইলে কথা বলিয়ে দিস তো।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভাইয়ার কাছে আবারও কল দিলাম। বারবার রিং বাজার পরও রিসিভ করছে না। আমি আবারও কল দিলাম,
- রিসিভ করে বিরক্ত গলায় বললো, বারবার কল দিচ্ছিস কেন? ব্যস্ত আছি তো।।
- ভাইয়া মায়ের অবস্থা ভালো না।
- হাসপাতালে নিয়ে যা, টাকা লাগলে সন্ধ্যা বেলা কল করিস৷
- মা হাসপাতালে যাবে না। তিনি তোমাকে সবাই কে বাড়িতে আসতে বলছেন।
- আমি গিয়ে কি করবো? আমি কি ডাক্তার?
- তুমি বড় সন্তান ভাইয়া, তোমার প্রতি মায়ের অনেক ভালোবাসা আছে। তোমাকে দেখে একটু শান্তি পেতে চায়।
- ঠিক আছে সময় নিয়ে আসবো, এখন রাখি।
আমি কল কেটে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। ভাইয়া আর আসবে বলে মনে হয় না। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম যে আর কোনদিন ভাইয়াকে কল দিয়ে বিরক্ত করবো না।
|
|
১৫ দিন পর।
ভাইয়া কাজ করেছে, আমি তার অফিসে এসে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন,
- গ্রাম থেকে কবে আসলি?
- আজই এসেছি।
- মা কোথায়?
- গ্রামের বাড়িতে।
- অসুস্থ মাকে রেখে চলে এলি? তোর তো দায়িত্ব বলতে কিছু নেই মনে হচ্ছে।
- হাহাহা, তুমি আমাকে মায়ের দায়িত্বের কথা বলছো ভাইয়া? তুমি কতটুকু পালন করছো?
- তো কি? আমি পালন করিনি? তার খাবার টাকা কাপড়ের টাকা সব আমি দেইনি?
- এগুলো দিলেই দায়িত্ব শেষ?
- একটু পরে আমার একটা মিটিং আছে। তোর সাথে বাসায় গিয়ে কথা বলবো।
- আমি থাকতে আসিনি, একটু পরেই ট্রেনে করে চলে যাবো গ্রামের বাড়িতে।
- ওহ্ আচ্ছা।
আমি আমার পকেট থেকে দুটো সোনার চুড়ি বের করে বললাম,
- মৃত্যুর সময় মা এগুলো তোমার জন্য দিয়ে গেছে ভাইয়া। তোমার মেয়ের জন্য মায়ের উপহার।
ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মা মারা গেছে এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না।
- কি বললি? মা মারা গেছে?
- হ্যাঁ মারা গেছে, তোমাকে শেষ যেদিন আমি কল দিলাম তার চারদিন পরে মা মারা গেছে। কিন্তু তুমি এমনই দায়িত্বশীল সন্তান, মায়ের অসুস্থতার কথা শুনেও আর খবর নিলে না।
- আসলে এতো ব্যস্ততা যাচ্ছে যে।
- মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের ব্যস্ততা থাকে ভাই। আমরা দুনিয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে মৃত্যুর দার প্রান্তে গিয়ে উপস্থিত হই। তবুও আমাদের ব্যস্ততা কমে না, কিন্তু জীবন ফুরিয়ে যায়।
ভাইয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম,
- গ্রামের বাড়িতে পাশের গ্রামের একটা স্কুলে ছোট্ট একটা চাকরি পেয়েছি। বাড়িতেই থাকবো আর সেখানে চাকরিটা করবো। অন্তত প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে পারবো।
ভাইয়া বসে আছে, আমি বের হবার জন্য পা বাড়ালাম। তারপর আব পিছনে ফিরে বললাম,
- তুমি কোনদিন গ্রামের বাড়িতে যেও না ভাই। গ্রামের বাড়িতে তোমার ভাগের যতটুকু জমি আছে সেই জমির দাম অনুযায়ী টাকা আমি তোমাকে দিয়ে দেবো। তবুও কোনদিন আমার মা-বাবার বাড়িতে যাবে না। কারণ তোমাকে যদি ওই গ্রামের মধ্যে দেখি তাহলে সেদিন হয় তুমি মরবে নাহয় আমি মরবো।
এ কথা বলে আমি বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় নেমে হাঁটতে লাগলাম। আমাকে এখনই গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হবে। মা-বাবার কাছে।
পৃথিবীতে আল্লাহ রাসূলের পরে মা-বাবার স্থান। ছোট্ট জীবনে আমরা নিজেদের সম্মানিত করতে গিয়ে মা-বাবাকে লাঞ্ছিত করি। অথচ একবারও চিন্তা করি না যে এই মা-বাবা একদিন আমাকে সম্মানিত করার জন্য নিজেদের সকল সুখ নষ্ট করেছেন।
----- সমাপ্ত -----

 ারী(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)18+এলার্ট সে**ক্স এর প্রথম স্পর্শ পেয়েছিলাম যখন আমার বয়স ৮ বছর৷ তাও আপন খালাতো ভাই এর। বেড়াতে এস...
02/12/2023

ারী

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
18+এলার্ট
সে**ক্স এর প্রথম স্পর্শ পেয়েছিলাম যখন আমার বয়স ৮ বছর৷ তাও আপন খালাতো ভাই এর। বেড়াতে এসেছিলো আমাদের বাড়িতে। সবাই ওকে খুব ভালোবাসতো, আদর করতো তাই কখনো কাউকে ওর বিপক্ষে বলার সাহস পাইনি। লুকোচুরি খেলার ছলে আমাকে আলাদা ঘরে নিয়ে যেতো। লুকিয়ে থাকার নামে আমার শরীরের এমন জায়গা নাই যেখানে সে স্পর্শ করেনি।
আমি জন্মের পর নাকি আমাকে নিয়ে সারা পরিবারে কান্নার মেলা বসে গিয়েছিলো, আমার মা ও নাকি আমাকে দুধ দিতেন না মেয়ে হয়েছি বলে। সবাই ভেবেছিলো আমি ছেলে হয়ে সবার মনের আশা পুরন করবো। আমার বাবা দেয়ালে মাথা ঠুকরে কেদেছিলেন অনেক। অথচ তারা কেউই ভাবে না তাদের সবারই জন্য কোনো না কোনো নারীর গর্ভ থেকে।
আমি রিতু, মা বলতো আমার গ্রোথ খুব অল্প অবয়সেই অনেক বেড়ে গিয়েছিলো৷ আমি সুন্দর কি না জানি না কিন্তু আমি ভেড়ে উঠার সাথে সাথে আমার বাবা মায়ের আর আমাকে নিয়ে কোনো আফসোস ছিলো না। গ্রামের সবাই আমাকে দেখলেই আড়চোখে শরীর দেখতো, জিহবা দিয়ে ঠোট ভেজাতো। নানা মানুষের নানা কথায় প্রাইমারি পার হতে না হতেই আমার পড়াশোনার ইতি ঘটে৷
আমার যখন বয়স ১৩। আমার বাবা মারা জান, এতিমকে সবাই শান্তনা দিতে এসেছিলো, সেই সাথে এসেছিলো এতিমের কাছে আরো কিছু চেতে৷ দূর দূর সম্পর্কের নানার বয়সী মানুষ এসে আদরের ছলে কতো যে বুকে হাত দিতে চেয়েছে তার আর হিসেব কে রাখে,
মা যেদিন আমাকে কাকার কাছে রেখে চলে গেলো অন্য কারো ঘরে সেদিন আমি বুঝেছিলাম আমার জীবনে আপন বলে আর কেউ রইলো না।
তখন আমার বয়স ১৪ বছর। এক রাতে কাকার ছোট ছেলে যে কি না আমারও ১ বছরেএ ছোট সে আমার ঘরে আসলো...
মাঝ রাতে কাকার ছোট ছেলে এসে চুপিচুপি আমার পাশে বসে আমাকে বলে
"রিতু আপু, তোমার কেউ নেই তো কি হয়েছে আমি তো আছি"।
ওর এমন কথা শুনে আমি চোখের পানি আটকে রাখতে না পেরে ওকে ধরেই কেঁদে ফেলেছিলাম। অন্তত কেউ তো বললো সে আমার পাশে আছে। বাবা মা চলে যাবার পর এটা তো শান্তনা ছাড়া মন থেকে কেউ বলেনাই।
যেহেতু লেখাপড়া করি না তাই সারাদিন কাকার ঘরের কাজই আমার প্রতিদিনের কাজ হিসেবে নির্ধারিত হয়ে গেলো। ঘর মুছা, থালাবাসন মাজা, সবার কাপড় ধোয়া, রান্নাটা কাকি করতো কিন্তু সব কাটাকাটি আমাকে দিয়েই করাতো। এই ছোট বয়সে এতো কিছু করতে হাপিয়ে উঠতাম তাও মনে হতো আপনের ঘরই তো । কিছুদিন যেতেই বুঝলাম কাকি আর কাকার বড় ছেলে আমাকে সহ্য করতে পারছে না। তারা কাকাকে বার-বার আমার বাবার ঐ অল্প একটু রেখে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে ফেলতে কাকাকে চাপ দিচ্ছিলো। আমি আর কি করবো সম্পদ দিয়ে, তাদের কাছেই তো থাকি। তাই আমিও মনে মনে ভেবেছিলাম এইসব দিয়ে কি লাভ। নিয়ে যাক।
এদিকে এলাকার ছেলেরা নাকি এ ঘরের সামনে সারাক্ষণ ঘুরাফেরা করে এ নিয়ে প্রতিদিন কাকা কাকির মাঝে ঝগড়া হতে থাকলো। আমি যথেষ্ট লোকচক্ষুর আড়ালে থাকি। যেনো আমার জন্য এ বাড়ির মানুষ বিরক্ত না হয়৷ তবু এমন কিছু হচ্ছে ভেবে নিজেকে খুব খারাপ মনে হতে থাকে। তাদের ঝগড়াঝাটি আমি চুপচাপ শুনে মাঝেমাঝে মা বাবার ছবি ধরে অনেক কাদতাম। কোথায় রাজকন্যার মতো ছিলাম আর কোথায় এলাম। মা বাবা ছাড়া পৃথিবীতে সবাই স্বার্থের জন্য ভালোবাসে। এই বয়সের একটা মেয়ের কিইবা বুদ্ধি থাকে। তাও আমি ঐ বয়সেই একজন প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ভাবতে শুরু করলাম।
ধীরেধীরে ১৫ তে পা দিলাম। গ্রোথ ভালো থাকায় দেখতেও বড় বড়ই লাগতো। শরীরেও কিছু পরিবর্তন আসছিলো। কিন্তু আমাকে এসব নিয়ে বুঝানোর কেউ ছিলো না তাই নিজে নিজেই সব বুঝেও চুপচাপ থাকতাম। এক সকালে কাকারা সবাই চলে গেলো ঢাকা। রয়ে গেলো শুধু তাদের বড় ছেলে। তার কলেজে পরীক্ষা দেখে যাবে না। আমার উপর দায়িত্ব তার খেয়াল রাখা৷ কলেজ থেকে আসলে ভাত দেয়া, চা লাগলে চা করে দেয়া, এইসব করেই ঠিকভাবে সারাদিন কাটালাম৷ রাতে ভাইয়া বললো তার রুমে যেনো থাকি। তার নাকি একা ভয় লাগে৷ কিন্তু আমার তো অন্য কারো ঘরে শুতে অভ্যাস নেই। তাও কি না ১৭-১৮ বছরের ছেলে। অনিচ্ছাকৃত বাধ্য হয়ে যেতেই হলো, সে খাটে আর আমি ফ্লোরে। বার বার কাপড় টেনে ঠিক করে শুয়ে আছি। প্রচন্ড গরম তাও গায়ে চাদর দিয়ে রেখেছিলাম৷ ঘুম আসছিলো না কারন এভাবে কখনো এক ঘরে কোনো ছেলে নিয়ে থাকি নাই আগে। অজানা এক ভয়ে কেপে উঠছিলাম একটু পর পর। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারি ভাইয়া খাট থেকে নেমেছে৷ টয়লেটে যাবে ভেবে আমি ঘুমের মতো করে পরেছিলাম৷ কিন্তু ঠিক একটু পরেই আমি আমার কোমড়ে কারো স্পর্শ পাই, হাতটা কোমড় থেকে অল্প অল্প করে উপরের দিকে উঠছিলো। ভয়ে সংশয়ে আমি পাথর হয়ে ছিলাম যেন কি হচ্ছে কিভাবে হচ্ছে জানি না। যখন হাতটা পুরোপুরি আমার বুকের উপর রাখা হলো তখন আমি মানুষটার দিকে ঘুরে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে একটা হাসি দিয়ে আরেক হাতও আমার আরেক বুকের উপর রাখলো। আমি অন্ধকারে অনুভব করলাম আমার কেউ নেই এই দুনিয়ায়...

 #একটি_নির্জন_প্রহর_চাইবাসর ঘরে নিজের বরের রূপে একাউন্টিং এর প্রফেসর রোশান সিদ্দিকী কে দেখে ভড়কে গেলাম আমি। না মানে এটাই...
02/12/2023

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই

বাসর ঘরে নিজের বরের রূপে একাউন্টিং এর প্রফেসর
রোশান সিদ্দিকী কে দেখে ভড়কে গেলাম আমি। না মানে এটাই কি হওয়ার ছিলো।জীবনে কি এমন পাপ করেছিলাম যে এই হিংস্র দা'ন'ব টার সাথে বিয়ে হলো আমার।তাও আবার আমার ই টিচার।ছিঃ ভাবতেই শরীর রিরি করে উঠছে। সারাজীবন স্কুল কলেজে যারা প্রাইভেট টিচার দের সাথে রিলেশন করে তাদের নিয়ে কটুক্তি করে এসেছি আর আজ আমার সাথেই তাই ঘটলো।ছিঃ ভাবা যায় যে ওনার সাথে আমার কোনদিন রোমান্স টোমান্স কিচ্ছু হবে।এটলিস্ট একটা চুমু সেটাও আশা করা যায় না।
কলেজের সব থেকে রাগী,গম্ভীর, থমথমে, হিংস্র স্যার ওনি।তবে খুব হ্যান্ডসাম,গায়ের রং কিছুটা চাপা, কালো ও নন তবে দেখতে ভয়ানক রকমের সুন্দর ওনার মুখের অদল।কলেজের প্রায় মেয়েরাই উনার প্রতি ফিদা, উনার মুড আর এটিটিউড এ নাকি মেয়েদের হার্টবিট বেড়ে যায়। উনি যখন ক্লাসে প্রবেশ করেন খুব গম্ভীর আর থমথমে মুডে প্রবেশ করেন।প্রয়োজনের বেশী কথা ও বলেন না।রুলস এর ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস উনি।একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এর রং বদলে গিয়েছে উনি কলেজে আসার পর থেকে।ডিপার্টমেন্ট হেড উনি।আগে টেস্ট বা ইনকোর্স পরীক্ষা না দিয়ে টাকা দিয়ে দিলেও হতো কিন্তু এখন সে সুযোগ আর নেই।ইনকোর্স পরীক্ষা না দিলে উনি ফেল করিয়ে দিচ্ছেন।এক প্রকার আতঙ্কের নাম রোশান সিদ্দিকী।আমার কুক্ষণে উনার সাথে পরিচয় হয়েছিলো।সেদিন থেকে উনি মানেই আমার কাছে এক আতঙ্কের নাম,তাও ভয়ানক আতঙ্ক।উনার সাথে অামার কলেজে খুব বাজে একটা ঘটনা ঘটেছিলো সেখান থেকেই ঘটনার শুরু আর উনি আমাকে আড় নজরে দ্যাখেন।দু'মাস আগের ঘটনা। রোশান স্যার কিছু ম্যাথ করতে দিয়েছিলেন।আমি ফোনে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম আর লাস্ট বেঞ্চে বসে ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে দেখে দেখে খাতায় তুলছিলাম।ক্লাসে উপস্হিত ১৫০ জনের মাঝে উনার চোখ আমার দিকেই পড়েছিলো। রোশান স্যারের পরণে ছিলো ফরমাল পোশাক।ব্ল্যাকবোর্ড এর সামনে থেকে সোজা উনার দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন।দৃষ্টি স্হির রেখে এগিয়ে এসছিলেন আমার দিকে।উনি কাছে আসাতেই আমি তড়িঘড়ি করে ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে খাতায় লেখায় মনোযোগ স্হির করলাম।স্যার আমার সামনে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুডে বলেছিলেন,
'ফোন দাও তোমার?'
কথাটা শুনেই হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল আমার।স্যার বুঝে গিয়েছেন আমার কাছে ফোন আছে।আমি ভ'য় ভ'য় চোখে স্যারের দিকে তাকালাম।স্যার এবার বললেন,
'স্ট্যান্ড আপ।'
স্যারের দিকে তাকিয়েই ভ'য়ে ভ'য়ে উঠে দাঁড়ালাম।স্যার তখন ও গম্ভীর মুডেই তাকিয়ে আছেন আর এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কথা না বলে বোঝাচ্ছেন যে ফোন দাও তোমার।উনি স্টীল তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।ফোন দিলে তো ধরা খেয়ে যাবো। ফোন ব্যাগ থেকে উঠিয়ে টিপাটিপি করে গ্যালারি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই স্যার আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ডেস্কের সামনে চলে গেলেন।স্যার যেতে যেতে ফোন আবার লক হয়ে গিয়েছে।ক্লাস শেষ হলে সবাই বেরিয়ে গেলে আমি স্যারের কাছে গেলাম ফোন আনতে।স্যার আমাকে বললেন,
'পিন টা বলো।'
খুব অস্বস্ত্বিতে পড়ে গেলাম।তাছাড়া যে পিন দেওয়া স্যার কে কিভাবে বলি।কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়।স্যার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এর মানে পিন টা কি?
আমি মিহি কন্ঠে বললাম, 'স্যার আমার কাছে দিন খুলে দিচ্ছি।'
'তুমি মুখে বলো আমি খুলে নিচ্ছি।'
''K'U'T'T'A'R B'A'S'S'A"
স্যার মুহুর্তের মাঝে অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে উচ্চারণ করলেণ,
'হোয়াট।'
'সরি স্যার এটা আপনাকে বলিনি।আমার ফোনের পাসওয়ার্ড।'
'আই নো তুমি আমাকে বলোনি,বাট এটা কোনো সুস্থ মানুষের ফোনের পাসওয়ার্ড।'
'ছোট বোন যেনো গেইস করতে না পারে তাই এই উপায় স্যার।'
স্যার আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফোনের পিন খুললেন।তখন ই আমার আরেক টেনশন ছিলো।কারণ ফোনের ওয়াল পেপারে স্যারের ছবি দেওয়া।এটা গতকাল ই বন্ধুরা ডেয়ার দিয়েছিলো।৪৮ ঘন্টা রাখতে হবে।স্যার ফোনের ওয়াল পেপার দেখে আড়চোখে তাকালেন আমার দিকে।লজ্জায় আমার কি অবস্থা হয়ে যাচ্ছে তা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা।এইদিকে ফোনের নেট ও অন করা ছিলো।বন্ধুদের নিয়ে করা আড্ডা প্যানেলে কত অসভ্য কথা বলাবলি করেছি, এখানে রোশান স্যার কে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে।ঠিক তখন ই আড্ডা প্যানেলে মেসেজ এসছে ছোঁয়া মেসেজ দিয়েছে,
' সারাহর সাথে কি স্যার প্রেম করছে ক্লাস রুমে দাঁড়িয়ে।'
তন্ময় মেসেজ করেছে,
' এমনি সারাহ স্যার কে দেখে ফিট হয় আজ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে শুভ দৃষ্টি বোধহয় হয়েই যাচ্ছে।'
দ্বীপ মেসেজ করেছে,' এমনিতেই সারাহ বলে রোশান স্যার মানেই হট,আর এই হট টমেটো সস এখন সারাহর সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছে। বাণীতে সারা।'
স্যার প্যানেলে প্রবেশ করলেন।যাবতীয় মেসেজ দেখে স্যার এর রাগ আকাশ এ উঠেছে।উপরেই আমার করা মেসেজ আছে 'রোশান হলো হট টমেটো সস।ওয়াও কি লুকিং, কি জোস,উনি শুধু আমার।একবার কলেজ থেকে বের হই স্যার এর সাথে ফেইক আইডি দিয়ে প্রেম করব,দেন বলব স্যার আমি।'
স্যার অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।তার জীবনে বোধহয় এমন অভিজ্ঞতা আগে হয় নি।এর আগে কোনো স্টুডেন্ট এর থেকে এমন কিছু হয়ত পায়নি।স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
'তোমার ফোনের ডিসপ্লেতে কার ছবি?'
'জি স্যার আপনার।'
স্যার ভ্রু কুচকালেন আর বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
'বাট হুয়াই?'
'স্যার ফ্রেন্ড রা ডেয়ার গেম দিয়েছিলো আর বলেছিলো আপনার ছবি ফোনের ডিস্পেলে তে দিয়ে স্ক্রিনশট দেওয়ার জন্য।'
'স্যার রা কি গেম খেলার পারসন।'
'না সার ভুল হয়ে গিয়েছে,আর হবেনা।'
'অন্যায় কয়েক ধাপে করেছো তুমি,এক ফোনে পিকচার তুলে এনে নকল করে ধরা খেয়েছো,দুই টিচার দের নিয়ে বন্ধুদের সাথে কটুক্তি করেছো।আমার পারমিশন ছাড়া আমার ফেসবুক প্রফাইল থেকে ছবি নিয়েছো ক্যানো?কলেজে কি এসব করতে আসো।আর আড্ডা প্যানেলে তোমরা যা বলাবলি করো আর যেসব ভিডিও আদান প্রদান করো, টিচার দের নিয়ে মিমস তৈরি করো তোমাদের কলেজ থেকে বহিঃষ্কার করা উচিত।'
'স্যার আর এমন হবেনা।'
'এসো অধ্যাক্ষ স্যারের রুমে এসো।'
রোশান স্যার অধ্যক্ষ স্যার কে কি বলেছেন জানিনা।অধ্যক্ষ স্যার বাড়িতে ফোন করে নালিশ দিলেন, সাথে আমাকে ওয়ার্নিং ও দিয়ে দিলেন।'
রোশান স্যার থমথমে মুডে আমাকে বললেন, 'তুমি আমার নজরে থাকবে এখন থেকে।'
আমার নাম সারা আনাম।মা-বাবার ছোট মেয়ে।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি বিবিএ অনার্স।আমার ফ্যামিলি আর পাঁচ টা ফ্যামিলির মতো নয়।আমার দাদু পুরণো রিতী আজ ও ধরে রেখেছেন।আর এ ব্যাপারে সে ভীষণ স্ট্রং।আগেকার দিনের মতো বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে দেখাশুনা তিনি পছন্দ করেন না।তাছাড়া আমার বাবার প্রতি আমার অগাধ আস্হা আছে।বাবা এসে আমাকে বললেন, 'ছেলে দেখতে শুনতে খুব ভালো মা।আমার পছন্দ হয়েছে।'
বাবার পছন্দ মানেই আমার পছন্দ।তাছাড়া বিয়ের দুই দিন আগে কথাবার্তা হয়ে হুট করেই বিয়ে তাই আর দেখার ও সুযোগ হয়নি।
আজ থেকে যে জীবন টা যে জা-হা-ন্না-মে পরিণত হতে চলেছে তার আর বুঝতে বাকি নেই আমার।
উনি ঘরে প্রবেশ করেই দরজার সিটকিনী লাগিয়ে দিলেন তাতে খট করে শব্দ হয়ে উঠল।সেই শব্দে কেঁপে উঠল আমার অন্তরআত্মা।ঘরে প্রবেশ করে আমার দিকে আড়চোখে একবার তাকালেন আর বললেন,
'আপনি শাড়িটা চেঞ্জ করে নিন
ওয়াশরুমে গিয়ে।আমি বুঝতে পারছি আপনার অস্বস্তি হচ্ছে।বিকজ এইভাবে অচেনা অজানা একটা মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে আপনার হঠাত করে।খারাপ লাগা বা অস্বস্তি ফিল হওয়াটাই স্বাভাবিক।কি করব আমার দাদুও আপনার দাদুর মতোই সেই সেকালের নিয়ম ধরে রেখেছেন।বাট আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে কি এইভাবে আমাকে মেনে নিতে পারবে।আপনার আপু জানিয়েছেন যে আপনার কোনো আপত্তি নেই।যায় হোক আমার দ্বারা আপনার কোনো অস্বস্তি ফিল হয় এমন কিছুই পাবেন না।'
ইয়া মাবুদ উনি তো আমার মুখ না দেখেই সুন্দর করে কথা বলছেন।মুখ দেখার পর কি বলবেন আল্লাহ ভাল জানেন।কতক্ষণ ই বা মুখ ঢেকে রাখতে পারব।সারা রে তুই ফেঁসে গেছিস।এ জন্মের মতো ফেঁসে গেছিস।রোশান স্যার যতক্ষণ না মুখ দেখেন ততক্ষণ ই শান্তি তোর।
এর ই মাঝে পাশের রুম থেকে মাগো মরলাম বলে কেউ চিৎকার দিয়ে উঠল।কন্ঠটা একটা মেয়ের।আমার কানে ভেষে আসছে পুরুষালি কন্ঠ দাঁত কিড়মিড় করে বলছে, 'বা' ন্দী'র বা-চ্চা আজ তোকে মে'রে'ই ফে'ল'ব।বেশী সাহস বেড়েছে তাইনা তোর।আমার সব কিছুতে তোর বাড়াবাড়ি।'
বলেই কারো গায়ে আঘাত করছে।আর সেই আঘাতে চিৎকার করে উঠছে মেয়েটি।
রোশান স্যার দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমিও বিছানা ছেড়ে দরজায় এসে উঁকি দিয়ে দেখলাম বারান্দায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।মেয়েটির নাম তরী।শুনেছি আমার জা হয়।রোশান স্যার এর ছোট ভাই এর বউ।উনার ছোট ভাই নাকি আগে বিয়ে করেছিলেন।যদিও ছোট ভাই কে আমি এখনো দেখিনি।এরই মাঝে রোশান স্যার এর ছোট ভাই বেরিয়ে এলেন রুম থেকে।উনার ছোট ভাইকে দেখে আমার মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো।ওহ নো! এটা তো ওশান।দ্যাটস মিনস ওশান ম্যারেড।

Address

Vill-kutubpur Post-shoilomary Bazar, Jhenaidah
Jessore
7300

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অদৃশ্য গল্প posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অদৃশ্য গল্প:

Videos

Share



You may also like