25-06-2015, Dhaka (জাতীয় ও মানবিক ঐক্যপ্রয়াসী মতামত বিশ্লেষণধর্মী প্রকাশনা)
= শুভেচ্ছা সম্পাদকীয় =
১. চিন্তা হচ্ছে মানবীয় সমস্ত কর্মকাণ্ডের প্রাণ। সুস্থ ও স্বচ্ছ চিন্তা যে কোনো ভালো কাজের ভিত্তি। এ চিন্তার জগতে আমাদের দৈন্য এখন স্পষ্ট। সমাজের সিংহভাগ মানুষের চিন্তার সময় নেই। এরা বেকারত্ব, হতাশা, প্রতিহিংসা, অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত। আর যে স্বল্পসংখ্যক মানুষের সময় আছে তাদের চিন্তা বিভ্রা
ন্ত হচ্ছে চারপাশের অনাকাঙ্ক্ষিত তর্ক-বিতর্কে; অস্পষ্ট ধ্যান-ধারণায়। এ পরিস্থিতিতে সমাজের সামগ্রিক চিন্তাজগতে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রয়াস চালানো অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই অপ্রস্তুত যাত্রা শুরু করেছে পাক্ষিক ‘দেশ দর্শন’। ভিন্নতা এতে সুস্পষ্ট, তবে প্রকৃত কল্যাণকামিতায় ভিন্নতাই যথেষ্ট নয়, আরো অনেক শর্ত আছে যার সব হয়তো আমরাও জানি না। তাই আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমালোচনা একান্ত কাম্য।
২. দৈনিক পত্রিকায়, সাপ্তাহিক-পাক্ষিক ম্যাগাজিনে, অন্যান্য নিয়মিত অনিয়মিত ছোট বড় কাগজে প্রতিদিন অসংখ্য কলাম, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মতামতধর্মী লেখা আসছে। প্রতিটি কাগজে লেখার ভিড়ে নির্দিষ্ট কোনো লেখা বা লেখকের নাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কেন এতসব লেখা? কী হচ্ছে এসব লেখায়? যারা লিখছেন, ছাপছেন, তাদের অর্থ, চিন্তা-চেতনা, কাগজ-কালির অপচয় হচ্ছে কি না ভেবে দেখার বিষয়। তার চেয়েও বড় কথা, লক্ষ লক্ষ পাঠকের মাথা কতটুকু ঠিক থাকছে চারপাশের এতসব তর্ক-বিতর্কে? এতে করে বিতর্ক কমছে না বাড়ছে, হানাহানি কমছে না বাড়ছে, সন্দেহ-সংশয় কমছে না বাড়ছে তা চিন্তাশীল লেখক-পাঠক-সম্পাদক-প্রকাশকের অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে। এমতাবস্থায় ক্লান্ত-বিরক্ত পাঠকের হাতে আরেকটি কাগজ ধরিয়ে দেয়া মারাত্মক জুলুম বৈ কিছুই নয়। তারপরও এ জুলুমটি না করে পারছি না চলতি ধারার বাইরে আমাদের কিছু মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে। সমাজকে, দেশকে, মানুষকে, আমাকে, আপনাকে, সঠিক পর্যালোচনার দাবি নিয়ে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত। দয়া করে আমাদের ক্ষমা করবেন। আমরা দায়সারা গোছের, পেশাগত চিন্তার, গতানুগতিক সংশয়-বিতর্কের, শাখাগত সমস্যার ফিরিস্তি বয়ানের এতসব লেখা আপনাদের সামনে হাজির করতে চাই না। প্রতিটি সংখ্যায় অল্প ক’টি লেখা যথার্থ পর্যালোচনা ও সমালোচনার দাবি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য, সমাজকে নাড়া দেয়ার জন্য, চিন্তার খোরাক দেয়ার জন্য ভালো মানের অল্প লেখাই যথেষ্ট। তবে যদি আমরা মানসম্পন্ন চিন্তাশীল ব্যাপকসংখ্যক পাঠক-লেখক তৈরি করতে পারি তাহলে তাদের মতামত প্রকাশে কলেবর বৃদ্ধি করার ইচ্ছে আছে।
৩. দেশ-বিদেশের প্রতি মুহূর্তের ‘ঘটনা’র সংবাদ এখন প্রায় প্রত্যেকের হাতের নাগালেই। চাইলেই পাচ্ছেন, না চাইলেও। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এসব সংবাদ আমাদের কতটুকু সচেতন বা আত্মসচেতন করছে? তর্ক তোলা যায় বিস্তর। কিন্তু না, তর্ক করার বা শোনার ইচ্ছে ও সময় কোনোটাই নেই। কারণ আজকাল তর্কের অভাব নেই। সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়া, চায়ের দোকানে, হাটে-ঘাটে-মাঠে তর্ক বিস্তর। তাহলে এগুলো কী? প্রশ্নটা আজকের মতো থাক।
৪. মাহে রমজান সমাগত। বিশ্ব মুসলিমের কাছে যার গুরুত্ব, মর্যাদা, দাবি অনেক। এ বছর অর্থাৎ ১৪৩৬ হিজরির (২০১৫) রমজানে আমরা নতুন কী লক্ষ্য দাঁড় করিয়েছি? আত্মসমালোচনা ও আত্মসংশোধনের (তাযকিয়ায়ে নফস্) প্রস্তুতি নিয়েছি কতটুকু? আমাদের, এ শতাব্দির বিশ্বমুসলমানের সাম্প্রদায়িক আচার-আচরণে, অমানবিক কর্মকাণ্ডে, লৌকিক প্রতিযোগিতামগ্নতায় অন্যরা আমাদের প্রতি কী ধারণা পোষণ করছে? এতে আমার, আপনার, একেবারে অন্তরের গভীর থেকে কান পাতলে কী শুনি?