21/12/2023
সাত মাসের প্রে'গ'নে'ন্ট অবস্থায় আজ স্বামীর সাথে শা'রী'রি'ক সম্পর্কে রাজি হয়নি বলে আমার স্বামী "ইমন" আমায় ধা*ক্কা মে*রে বললো,
"তোমার তো সব চলে আরোহী। আমি কিছু বললেই তোমার যতো বাহানা। স্বামীর চা'হি'দা মে'টা'তে না পারলে বিয়ে করার কি প্রয়োজন ছিলো?"
"এভাবে বলছো কেনো ইমন? সব আমাকে চালাতে হয় বলেই চালিয়ে নিচ্ছি। কষ্ট হলেও এই আমাকেই করতে হয়, তোমরা কেউ কি আর এগিয়ে আসো? তাছাড়া, তুমি তো জানো ডক্টর আমাদের কয়েক মাস ই'ন্টি'মে'ট হতে নিষেধ করেছে। এখন বাবা হতে চলছো তুমি, এবার তো একটু ধৈর্যশীল হও।"
"তোমার লেকচার বন্ধ করো আরোহী। জাস্ট অসহ্য! এমন ভাব করছো মনে হয় সারা দুনিয়ার সব কাজ তুমি একাই করো! অথচ সারাদিন বাসায় থাকো তুমি। বাসায় বসে কি এমন কাজ করো তুমি? সারাদিন তো সুয়ে বসেই দিন পা*ড় করো।"
আসলেই, বাসায় বসে আমি কি এমন কাজ করি! স্বামীর এহেন কথায় আর জবাব দিতে পারলাম না। মুচকি হেসে পাশ ফিরে সুয়ে পড়লাম। ভরা পেটটা নিয়ে ঘর মো'ছা অবধি শুরু করে যাবতীয় কাজ একা হাতে সামলাতে হয় আমাকে। এরপর ও শ্বশুর বাড়ির কারো মনের না'গা'ল পাওয়া যায় না। দিনশেষে শুনতে হয়, তুমি কি এমন করো সারাদিন? অথচ এই আমি বাবা'র ঘরে কত-না আহ্লাদী মেয়ে ছিলাম! যাকে মা কিছু করতে গেলেও বাঁধা দিয়ে বলতো, "তোর এসব করতে হবে না আরোহী। যা পড়তে বোস।"
বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে ইমন'কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম আমি। সময়ের সাথে সাথে আগের সেই ভালোবাসা তার ফুরিয়ে গিয়েছে। সে-ও সবার মতো কৈফিয়ত চাইছে। চা*পা কষ্টে চোখের কার্ণিশ দিয়ে গড়িয়ে পড়লো কিছু লোনাজল। কোমড় ব্যথায় সারারাত আশপাশ করছি আমি, ওপাশে স্বামী আমার নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।
সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙলো ইমনের চিৎকারে। ঘুমন্ত আমাকে আবারো কয়েকটা ধা*ক্কা মে*রে বললো,
"তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো আরোহী? অফিসে যাবো আমি, আমার নাস্তা কই? না-কি তাও তোমার ডক্টর দিতে নিষেধ করেছে।"
আমি তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বললাম,
"সরি! সারা রাত ঘুম হয়নি, শেষরাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম।ইশ! এতো বেলা হলো, খেয়াল করিনি। তুমি একটু অপেক্ষা করো ইমন, আমি কিছু একটা করে দিচ্ছি তোমাকে। "
"হয়েছে এখন আর দরকার নেই। ঘুমাও তুমি আর উঠতে হবে না।"
ইমন আর দাঁড়ালো না। রাগ দেখিয়ে চলে গেলো না খেয়ে। পাশ থেকে শ্বাশুড়িও কথা শুনিয়ে বললো,
"এ বাড়িতে সবকিছু এখন যার যার মন মতো চলছে।আজকাল আমার ছেলে টাকে খেতেও দিচ্ছে না ঠিক মতো। এই মেয়ে না খেয়ে মা'র'বে আমার ছেলেটাকে।"
আমি শুনেও কিচ্ছুটি বললাম না। এ-সব রোজকার দিনেই শুনতে হয়, এসব এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। টের পেলাম শরীরটা কাঁপছে, মাথা ঘুরছে। তবুও অসুস্থ শরীর নিয়ে সব কাজ আমাকেই করতে হবে।
সকালের নাস্তা তৈরী করে খায়িয়ে আবার সবকিছু গুছিয়ে নিতে নিতে দুপুর হয়ে গেছে। আমার আর এখন অবধি খাওয়া হলো না। এরিমধ্যে শ্বশুর গরুর পা এনে দিয়ে বললো, "এগুলো দিয়ে আজ একটু তেহারি করিও বউমা।"
আমার মাথাটা চ'ক্ক'র দিচ্ছে। সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আজ শ্বাশুড়ি মা'কে বললাম,
"আম্মা, আজ রান্নাটা একটু আপনি করে দিবেন? আমার গা গু'লি'য়ে আসছে।"
"বাচ্চা-কাচ্চা আমাদেরও হয়েছে বউমা। এতটুকুতে এতো ভে'ঙে পড়লে চলে! এতো কাজ ফাঁকি দেওয়ার বাহানা খুঁজো না তো সবসময়।
সারাদিন'তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পা'ড় করলে, এখন রান্নাটাও আমাকে দিয়ে করাতে চাও বউমা?"
শ্বাশুড়ির কথা শুনে চোখ মুছে রান্না ঘরে আসলাম আমি। আজ মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মিস ইউ মা! সত্যি তোমার মতো কেউ না, কেউ হয় না! সন্তানের মলিন মুখের মর্ম মা ছাড়া কেউ বুঝে না!
কিন্তু, আফসোস! ভালোবাসার মানুষটির জন্য এই মা-বাবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আজ কতগুলো দিন। আজকাল ভালোবাসা বলতে কিচ্ছুটি হয় না! সব দু'দিনের আবেগ মাএ! প্রিয় মানুষ বদলায়, কারণে অকারণে বদলায়।
জীবনে এমন একটা সময় এসেছে, যেখানে পাচ্ছি না প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা না পাচ্ছি বাবা-মা'কে পাশে। অথচ এই একটা মানুষের জন্য সব বিসর্জন দিয়েছি আমি।
(সমাপ্ত)
ছোটগল্প ঃ #প্রিয়_থেকে_অপ্রিয়
লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
(নোটঃ স্ত্রীকে কখনো কষ্ট দিবেন না, কেননা স্ত্রীদের দুনিয়া খুবই ছোট,সে দুনিয়া স্বামীকে দিয়েই শুরু আবার স্বামীকে দিয়েই শেষ, তাই সবার কষ্ট সহ্য করতে পারলেও স্বামীর দেওয়া কষ্ট সহ্য করতে পারে না। হয়তো সব সহ্য করে মানিয়ে নিতে পারে, কিন্তু ভিতরে যে ক্ষ*ত সৃষ্টি হয়, সে চাইলেও আর মন থেকে ভালবাসতে পারে না! তখন প্রয়োজনে সংসার করে যায় জীবন্ত লা'শে'র মতো করে!)