21/08/2024
একদিনের গল্প, কিন্তু সেই গল্পের শুরু পনেরো বছর আগে। শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হলেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন যে তিনি দেশকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবেন। তার প্রথম কয়েক বছর দেশের মানুষকে এক নতুন আশার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তার নেতৃত্বে দেশ উন্নতির পথে এগোতে শুরু করে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শাসনকালের প্রকৃত রূপ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করল।
শেখ হাসিনার শাসনকাল যে পনেরো বছর চলল, তাতে জনগণ প্রথম দিকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিল। নতুন সড়ক, শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, এবং আধুনিক অবকাঠামোর মধ্যে দেশ এগোচ্ছিল। কিন্তু সেই উন্নয়ন কেবলমাত্র প্রান্তিক শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকল, আর ক্ষমতার লোভ তার শাসনকে ধীরে ধীরে অত্যাচারে পরিণত করল।
সরকারের হাত শক্তিশালী করতে হাসিনা ক্ষমতাকে কেন্দ্রীভূত করতে লাগলেন। সংবাদ মাধ্যমগুলোকে কণ্ঠরোধ করা হলো, বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করা হলো, আর দেশজুড়ে চালানো হলো আতঙ্ক। সাধারণ মানুষ, যারা প্রথম দিকে তাকে সমর্থন করেছিল, এখন তার শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। নির্যাতন, নিপীড়ন, এবং স্বৈরশাসনের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিরোধীদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করার চেষ্টা চলল।
জনগণের মাঝে ক্ষোভ বাড়তে লাগল। কিন্তু শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য কঠোর হয়ে উঠলেন। নির্বাচনের নামে কারচুপি, এবং বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করে তিনি নিজেকে এক অনির্বাচিত নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। সাধারণ মানুষ কোনো সুরাহা পেল না, তাদের কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেল।
একদিন, পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালো। রাজধানী ঢাকার রাস্তাগুলো উত্তাল হয়ে উঠল। লক্ষাধিক মানুষ গণভবনের দিকে পদযাত্রা করল। তারা ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ, এবং তাদের মাঝে ছিল প্রতিহিংসার আগুন। তারা বিশ্বাস করেছিল যে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতেই তৈরি করতে হবে। তারা ভেবেছিল, এতদিনের শোষণ আর অত্যাচারের জবাব দিতে হবে।
গণভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ল। মানুষ ঢুকে পড়ল ভবনের অভ্যন্তরে। তাদের হাতে ছিল লাঠি, পাথর, আর কিছু মানুষের হাতে ছিল অস্ত্র। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই—শেখ হাসিনাকে খুঁজে বের করা এবং তার শাসনের সমাপ্তি ঘটানো।
শেখ হাসিনা তখন তার ঘরে ছিলেন। নিরাপত্তা বাহিনী তাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছিল, কিন্তু মানুষের প্রচণ্ড আক্রোশ তাদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিল। মানুষ তার ঘরের দরজায় আঘাত করছিল, ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল।
তখন, শেখ হাসিনা জানতেন যে তার সময় শেষ হয়ে এসেছে। তিনি জানতেন, যদি তিনি এখান থেকে পালাতে না পারেন, তাহলে তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। তার মনোভাব তখন এক পরিবর্তিত হলো। তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের সহায়তায় একটি গোপন পথ দিয়ে গণভবন থেকে পালিয়ে গেলেন।
হাসিনা বুঝতে পেরেছিলেন যে দেশের মানুষ তাকে আর সহ্য করতে পারছে না। তিনি একটি বিশেষ বিমানে করে দেশ ছাড়লেন। তার গন্তব্য ছিল একটি বিদেশি দেশ, যেখানে তিনি নিরাপত্তা পাবেন। সেই দেশে পৌঁছে তিনি ভেবেছিলেন, এখান থেকে হয়তো তিনি আবার ফিরে আসবেন, আবার ক্ষমতায় আসবেন।
কিন্তু দেশের মানুষ তাকে ভুলে গেল না। তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল যে তারা আর কখনও এমন একটি নেতাকে তাদের দেশে ফিরতে দেবে না। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার শাসনের স্মৃতি রয়ে গেল জনগণের মনে, এবং তারা সেই শাসনের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে থাকল।
শেখ হাসিনার শাসনকালের অবসান ঘটল, কিন্তু তার শাসনকালের ক্ষত দেশকে চিরকাল স্মরণ করিয়ে দেবে যে কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার একটি জাতির ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করতে পারে।
(বাস্তব কাহিনী সবাই টাইমলাইনে শেয়ার দিয়ে রাখুন।