অভিযাত্রী-Ovizatri

অভিযাত্রী-Ovizatri একটি সাহিত্য ম্যাগাজিন
(2)

• সুপ্ত প্রতিভা প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই বিরাজমান।আর এই প্রতিভা বিকাশে আপনাদের পাশে রয়েছে " অভিযাত্রী"।যেখানে আপনি আপনার মেধা,মনন দিয়ে সুস্থ সংস্কৃতির গণজোয়ারে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
ছন্দে,শব্দ আর বাক্যের গাঁথুনিতে প্রকাশ করতে পারবেন আপনার মনের পবিত্র কথা,অনুভূতি।
আসুন সাহিত্য জগতকে করি প্রতিভা দ্বারা সমৃদ্ধ।

"জোয়ার আসুক ছন্দে আজ
মনের কথা হোক বলা,
একতার হাত ধরে মিলেমিশে
সাহিত্যের জগতে হোক সবার পথচলা"

~ অভিযাত্রী

ইসলামী সাহিত্য ম্যাগাজিন 'হাদিকা' এর ২য় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। পিডিএফ কপিটি একদম ফ্রীতে পড়ুন৷ ম্যাগাজিনে...
06/03/2023

ইসলামী সাহিত্য ম্যাগাজিন 'হাদিকা' এর ২য় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। পিডিএফ কপিটি একদম ফ্রীতে পড়ুন৷

ম্যাগাজিনের ফ্রী পিডিএফ লিংক:-
https://drive.google.com/file/d/15hwlsFUWg5tG06RmSb07pGLvwQzyKoQY/view?usp=drivesdk

এবারের সংখ্যা প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখায় সমৃদ্ধ। ইসলামী আদর্শ মূল্যবোধকে বিশ্ব মাঝে লেখার মাধ্যমে পৌঁছে দিতে 'হাদিকা' দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ৷

ম্যাগাজিনে লেখা পাঠাতে বিস্তারিত জানুন:
পেইজ: www.facebook.com/hadika22
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: www.hadikamagazine.wordpress.com

#হাদিকা_শিক্ষা_সংস্কৃতির বাগান
#হাদিকা_ম্যাগাজিন

বহমানধারায় বয়ে যাচ্ছে সময়। এইতো আর কয়েক ঘন্টার পর সকল জীবিত প্রাণীর জীবন থেকে বিদায় নিবে আরেকটা বছর।যা এগিয়ে দিয়ে যাবে ম...
01/01/2022

বহমানধারায় বয়ে যাচ্ছে সময়। এইতো আর কয়েক ঘন্টার পর সকল জীবিত প্রাণীর জীবন থেকে বিদায় নিবে আরেকটা বছর।যা এগিয়ে দিয়ে যাবে মৃত্যুরসময়কে।কত দ্রুতই না পেরিয়ে গেলো সময়গুলো। কতটুকু কাজে লাগিয়েছি তার হিসাব তো সংরক্ষিত।কিন্তু আমরা মজে আছি এক ভিন্ন সংস্কৃতিকে নিয়ে। মনে হয় যেন মজ্জাগত করে পেলেছি আমার তাকে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট! নিউ ইয়ার উদযাপন! হয়তো কিছু বয়স্ক লোকজন ছাড়া বাকি সবাই এটা সম্পর্কে অবহিত। এমনকি কৈশরে পা দেয়া মানবসন্তানটাও গড়গড় করে বলে দিতে পারবে কি কি করতে হয় এ রাতে।কিভাবে শুভেচ্ছা(!) জানাতে হয় নতুন বছরকে। আকাশ সংস্কৃতি আর শিকড় ভুলে যাওয়া পাপের ফল হয়তো এসব। আমাদের তো আবার বিদেশী সংস্কৃতি না হলে চলেই না। বিদেশী সংস্কৃতি না হলে তথাকথিত স্মার্ট(!) হবো কিভাবে আমরা!
তবে আবার নিজেদের পরিচয় নিয়েও গর্ব আমাদের(!)।

নতুন বছরের আগমনে যখন মানুষ অপসংস্কুতির চর্চা করছে ঠিক তখনই ইসলাম আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাদের স্বকীয়তার কথা। আমাদের সংস্কৃতি,আমাদের পরিচয়ের কথা।আমরা মুসলমান।আমাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি।যেখানে নেই কোনো অশ্লীলতা,অন্যায়। সেখানে শুধু শান্তি,সম্প্রীতি আর সাম্য।

যে থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে কথা হচ্ছে তা হচ্ছে মূলত বিধর্মীয় সংস্কৃতি।যা বর্তমানে কৌশলে মুসলমানদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করানো হচ্ছে।মুসলমানরা কোনভাবেই অন্যধর্মের সংস্কৃতি পালন করতে পারে না।এবং ইসলামও একে বৈধতা দেয় না।
মহান আল্লাহ বলেন- যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সে আমল গ্রহণ করা হবে না।আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা আলে-ইমরান:৮৫)
হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা:) হতে বর্নিত, রাসুল (সা:) বলেন, " যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কৃষ্টি অনুসরন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তি সে সম্প্রদিয়কে মহব্বত করবে, তাদের সাথে তার হাশর হবে।" (সুনানে আবু দাউদ)।

অতএব কোনো মুসলিমেরই উচিত নয় অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতির চর্চা করা।কেননা,আল্লাহ বলেন," প্রত্যেক জাতির জন্য আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান ও সুস্পষ্ট পথ নির্ধারন করেছি।"(সুরা মায়েদা)

আসুন সবাই থার্টি ফার্স্ট নাইটকে না বলি,ইসলামি সংস্কৃতি বুকে ধারণ করি।

'থার্টি ফার্স্ট নাইটকে না বলুন'
• আয়েশা সিদ্দিকা মীম

#অভিযাত্রী_নবরূপে_সোনালি_দিনের

🔸কবি আল মাহমুদ   (১৯৩৬-২০১৯)
27/12/2021

🔸কবি আল মাহমুদ
(১৯৩৬-২০১৯)

25/12/2021

~| মন খারাপের দিনে |~

•লেখক:- মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম

আজ সকাল থেকে মনটা খুব খারাপ। কোন কাজেই মন বসছেনা। কিছুদিন আগে বাবার ব্যবসার লস তচনচ করে দিয়েছে সবকিছু। পারিবারিক চাপ, বাবার ব্যবসায় লস, বাবার ঋণের বোঝা সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে মানসিক অস্তিরতার দিন পার করছি। অস্বচ্ছল, আর্থিকভাবে নিদারুণ কষ্টে আছি। বাবার ব্যবসায় লস হওয়ায় নিয়মিত করা হচ্ছেনা ঘরের বাজার পত্র, কেনা হচ্ছেনা নিয়মিত মায়ের ঔষধপত্র, বড় অংকের ঋণের বোঝা মাথায়।

বাবাকে বলেছিলাম পার্টটাইম একটি জব করার জন্য। বাবা কিছুতেই রাজি ছিলো না। বাবা বলতেন, ‘আগে ভালোকরে পড়াশোনা করো। পড়াশোনা করে যোগ্যতা অর্জন করো। তখন না হয় ভালো কোন চাকরি করবে।

বাবার একার উপার্জনের উপর আমাদের ঘর চলে। আমাদের দিন সুখেই চলছিলো। হঠাৎ ব্যবসায় নামে ধস! সবকিছু কেমন যেন ওলট-পালট হয়ে গেলো। ঘরে অশান্তি থাকলে কী আর কিছু ভালো লাগে?

যোহরের নামায পড়লাম মসজিদে। নামায পড়েছিলাম ঠিকই; কী পড়ছি নিজেই জানিনা। ইমাম সাহেব তাকবির বলতেন, আমি শুনে শুধু ওঠা-বসা করেছি। এককথায় তন(শরীর) ছিলো মন ছিলোনা। যোহরের নামায পড়ে বের হলাম ডান পা দিয়ে। বের হয়ে জুতা পড়লাম বাম পা দিয়ে। কারো সাথে কোন কথা না বলে চলে যাচ্ছিলাম। প্রতিদিন আদিব আর আমি একসাথে মসজিদে যেতাম, একসাথে মসজিদ থেকে আসতাম। পিছন থেকে আদিব ডাক দিয়ে বলল, ‘বল, পার্থিব জীবনের কোন এমন জিনিস, যেটা আল্লাহর কথা ভুলিয়ে দিয়েছে, বিরত রেখেছে নবীর সুন্নাহ আদায়ে?

তার এই কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। আদিবকে বললাম, ‘বুঝলাম না ঠিক তোর কথা।

–তোর আজ কী হলো? তোর মতিগতিও সন্দেহজনক। কখন থেকে দেখছি তোর বিষন্ন মলিন চেহারা। কী হয়েছে আজ তোর? মসজিদ থেকে বের হলি ডান পা দিয়ে, জুতা পড়লি বাম পা দিয়ে। কবর জিয়ারত না করেই চলে যাচ্ছিস। অন্যমনস্ক হয়ে আছিস। কখনো তোকে আমি এরকম দেখিনি।

– না তেমন কিছু হয়নি।

– আজ তোকে এমন বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন? নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে! কী হয়েছে আমাকে বল। কোন একটা সমাধান বের হবে ইন শা আল্লাহ!

জোর করে নিয়ে মসজিদের পাশের পুকুরের ঘাটে নিয়ে বসালো। মসজিদের পাশে একটি বড় পুকুর আছে। পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আছে। মাছ বিক্রি করে মসজিদ কমিটি মসজিদের খাতে ব্যয় করে। একটি বড় পুকুর ঘাট আছে। মসজিদের মুসল্লিরা নামাযের পর কিছু সময় পুকুর ঘাটে বসে গল্পসল্প করে। যখন আদিব জোর করলো, তখন আমার আর কিছু করার নেই। অবুঝ শিশুর মতো আমাকে হুকুম তামিল করতেই হবে। কারণ, সেই আমার একমাত্র বেষ্টু, যে সুখে-দুঃখে সবসময় আমার পাশে থেকেছে। আদিবও আমার পাশে বসলো। বল এবার, তোর কী হয়েছে?

– জানিনা কী হয়েছে! আজ সকাল থেকে মন খারাপ। আমাদের পরিবারের কথা তো জানিস-ই। তার সাথে বাবার ব্যবসার লস । সবকিছু মিলিয়ে বলতে গেলে মানসিকভাবে বিপর্যয়গ্রস্ত।

– তো অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলি কই?

– জানিনা।

– গন্তব্যহীন পথচলাতো মু’মিনের আদত নয়! মু’মিনরা কখনো ভেঙে পড়েনা। কারণ, মু’মিনের সাথে রয়েছে আল্লাহ। মু’মিনের জন্য আল্লাহই যতেষ্ট। সুখে-দুঃখে একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা করবি। কেননা, যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যতেষ্ট। আল্লাহ তার কার্যকলাপ সহজ করে দিবেন।[১]

আমি কিছু বলছিনা। নিচের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। কিচ্ছু ভালো লাগছিলনা। হয়তো এই ব্যাপারটা খেয়াল করলো আদিব। কিন্তু, কিচ্ছু বলেনি। অন্যসময় হলে ধমকাতো। কারণ, আদিব কথা বলার সময় তার দিকেই চেয়ে থাকতে হয়।

- এই আমার দিকে তাকা। আচ্ছা, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন, আমাদের সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, আমাদের জন্ম ও মৃত্যু দিয়েছেন এগুলো কী এমনি এমনি? না এমনি এমনি না। আমাদেরকে পরিক্ষা করার জন্য। [২]

এই পরীক্ষা খাতা-কলমে নয়। পরীক্ষার হলে আসলাম, খাতায় লিখলাম, চলে গেলাম তেমন নয়। এই পরীক্ষা ভিন্ন ও কঠিনতর। এই পরীক্ষা যেমন কঠিন তার পুরুষ্কারও তেমন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান,
অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।[৩]

এটা তো তোর জন্য পরীক্ষা। ভেঙে পড়লে যে চলবেনা। কারণ, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে অকল্পনীয় কিছু পাবি— যা তুই কখনো কল্পনাও করিসনি। এই মুহুর্তে তোর কাজ হলো সবর করা, ধৈর্য ধরা। জানিস, ধৈর্যের বৃক্ষ কাঁটাযুক্ত হলেও তার ফল কিন্তু মিষ্ট হয়। আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান, হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।[৪] বল, ঐ ব্যাক্তির চেয়ে ভাগ্যবান আর কে হতে পারে যার সাথে রয়েছেন আল্লাহ?

– এখন কী করবো বল? কোন একটা পরামর্শ দে। আমি কী করবো বুঝতেছিনা।

– তুই এই সিচুয়েশনে কী করবি আমি বলবোনা স্বয়ং আল্লাহ বলে দিচ্ছেন। ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে।[৫] কারণ, আল্লাহ ব্যতীত তোর কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই।[৬]

আদিবের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করছিলাম। তাঁর কথাগুলো শুনে যেন আমি আমার মনোবল ফিরে পাচ্ছি। পাচ্ছি উঠে দাঁড়ানোর শক্তি। সত্যিইতো মু’মিনরাতো কখনো হতাশ হয়না। এই দুর্যোগ মুহূর্তে একমাত্র আদিবই আমার আশা জোগালো। এই জন্যই বলি, এই মুসাফির সফরে একজন প্রকৃত বন্ধু অতিব জরুরি। যে সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিবে। ছোটকালে আমরা কোন বিপদেআপদে পতিত হলে মা-বাবা ছিলো পাশে। কিন্তু বড় হলে কেউ থাকেনা একমাত্র প্রকৃত বন্ধু ছাড়া। চায়লে এই মুহূর্তে আদিব আমাকে নিয়ে ট্রল করতে পারতো, মজা উড়াতে পারত— এমনটা না করে দিয়েছে সান্ত্বনা, শুনিয়েছে সান্ত্বনার বানী, জুগিয়েছে আশা।

আমাদের আশেপাশে অনেক বন্ধু; কিন্তু প্রকৃত বন্ধু নয়। প্রত্যেকের কোন না কোন স্বার্থ আছে। সার্থসিদ্ধি হলে আর কোন খবর থাকেনা। কিন্তু একজন প্রকৃত বন্ধু হয় লিল্লাহ ( আল্লাহর ওয়াস্তে)। একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা। আর এমন সম্পর্ক নিছক কোন সম্পর্ক নয়; বরং একটি ইবাদত।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আদিব বলল, ‘আচ্ছা আমাদের সৃষ্টিকর্তা কে?

– আল্লাহ।

– রহমান, রহীম, রাজ্জাক, খালিক, ইত্যাদি কে?

– আল্লাহ।

– আমাদের প্রয়োজন, হাযত চাইবো কার কাছে।

– আল্লাহর কাছে।

– তাহলে আল্লাহর কাছে না চেয়ে চলে যাচ্ছিলি যে? ভান্ডার তো রবের কাছে। রব দিতে সর্বদা প্রস্তুত। শুধু আমাদের চেয়ে নিতে হচ্ছে। হুযায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন— রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন সালাতে রত হতেন।[৭] এখনি গিয়ে দুই রাকাত সালাতুল হাযত নামায পড়ে রবকে তোর মনে যত ক্ষোভ-আক্রোস, সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়া সব বলে মনকে হালকা কর। দেখবি রব তোর ডাকে সাড়া দিচ্ছে। তোর ও ভালো লাগবে। আমি বাইরে দাড়াচ্ছি।

আমি আদিবের কথামতো গিয়ে সালাতুল হাযত নামায পড়লাম। নামায শেষে দীর্ঘ মোনাজাতে নিজের সব কথা রবকে বললাম। চেয়ে নিলাম অনেককিছু। এখন কিছুটা ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে ঘাড় থেকে কয়েক মনের বোঝা নামানো হয়েছে। কিছুটা স্বস্তিবোধ করছি। দাঁড়িয়ে দীর্ঘ একটি শ্বাস ফেললাম। বের হয়ে দেখি আদিব বাইরে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে বললাম, ‘নামায পড়েছি, চল।

- কোথায়? কবর যিয়ারত করে তারপর যাবি। জানিস, এই অন্ধকার কবরে শায়িত আছে কারো না কারোর আদরের মাতা-পিতা, দাদা-দাদি। জানিনা কবরবাসীরা কে কোন অবস্থায় আছে? একসময় রাজপথ কাঁপানো ব্যক্তিটিও এই অন্ধকার কবরে শায়িত। যার ভয়ে মানুষ পালিয়ে বেড়াতো, তেমন ক্ষমতাধর ব্যক্তিটিও আজ অসহায়। অন্ততপক্ষে সূরা এখলাসটুকু পড়।

আদিব কখনো কবর জিয়ারত না করে যায় না। যার নিমিত্তে আজ আমারো আদত হয়ে গেলো। কোন একদিন বলেছিলো সূরা এখলাসের ফযীলতের কথা, আমার এখনো মনে আছে। সূরা এখলাসকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলা হয়।[৮]
( হে পাঠকগণ! যখনই কোন কবরের পাশ দিয়ে যাবেন করব যিয়ারত করতে ভুল করবেন না।)

দাড়িয়ে দুজনে কবর যিয়ারত করলাম। সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা ‘ওহে পথিক! যাচ্ছ যখন যাও। যাওয়ার সময় একটু নাহয় দাঁড়াও।’

আদিব বলল, ‘চল, কোথাও থেকে একটু হেঁটে আসি। ভালো লাগবে।

বাদাম ওয়ালা থেকে দু’জন বাদাম কিনে হাঁটতে লাগলাম। জানিস নূর, যখন আমরা কোন বিপদে পরি তখন আমরা আল্লাহকে বেমালুম ভুলে যায়। ছুটে চলি দিগ্বিদিক। যেখানে আসার সেখানে আসিনা। নামায, জিকির কোনকিছুই যেন তখন ভালো লাগেনা। অথচ আল্লাহ বলছেন, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো।[৯]আল্লাহ কতই-না দয়াবান!

আমি কিছু না বলে হাঁটছি আর আল্লাহর সৃজিত মনোরম প্রকৃতিকে উপভোগ করছি।

রেফারেন্স :

১. সূরা তালাক - ০৩

২. আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান — যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। সূরা মূলক - ০২

৩. সূরা বাকারাহ - ১৫৫

৪. সূরা বাকারাহ - ১৫৩

৫. সূরা বাকারাহ - ৪৫

৬. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এরশাদ ফরমান— তুমি কি জান না যে, আল্লাহর জন্যই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের আধিপত্য? আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই। সূরা বাকারাহ- ১০৭

৭. আবু দাউদঃ ১৩১৯

৮. সহিহুল বুখারি - ৬৬৪৩

৯. সূরা বাকারাহ- ১৫২

[ উক্ত গল্পটি ❝ অভিযাত্রী ❞ কর্তৃক প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করে পুরস্কৃত হয়]

প্রশ্নোত্তর পর্ব:-০২  মোবাইলে কুরআন মাজীদ রাখা বা পড়া এবং এটা সাথে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে কিনা?উত্তর:-মোবাইলে বা এর ...
20/12/2021

প্রশ্নোত্তর পর্ব:-০২
মোবাইলে কুরআন মাজীদ রাখা বা পড়া এবং এটা সাথে নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে কিনা?

উত্তর:-
মোবাইলে বা এর মেমোরিতে কুরআন মজীদ সংরক্ষণ করা এবং এখান থেকে দেখে তিলাওয়াত করা জায়েয। এতে অসুবিধা নেই।

আর মোবাইল স্ক্রীনে কুরআন মাজীদের আয়াত দৃশ্যমান না থাকলে তা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে। কিন্তু স্ক্রীণে কোনো আয়াত দৃশ্যমান থাকলে তা খোলা অবস্থায় টয়লেটে নিয়ে যাওয়া জায়েয হবে না।

(-আদ্দুররুল মুখতার ১/১৭৮)

এখন আবার কেউ বলতে পারেন মেবাইলের স্ক্রীনে দৃশ্যমান না হলেও ভিতরে তো আছে। এটা সাধারণ বিষয় মানুষের মধ্যেও তো কুরআন আছে। তাই সিদ্ধান্ত হবে এটাই যে,দৃশ্যমান কুরআন হাদীসের টুকরা নিয়ে টয়লেটে যাওয়া যাবে না। এতে কুরআন হাদীসের অসম্মান করা হয়।

এছাড়াও আরো কিছু জিনিস নেওয়া নিষিদ্ধ:-
•কুরআন সম্পূর্ণ বা কিছু অংশ
•হাদিস শরিফের কোন অংশ
•আল্লাহ রসূল বা ফেরেস্তার কোন নাম
•টয়লেটের মাঝে কোন কিছু পড়া

উত্তর প্রদানকারী:-
•এম আব্দুল মজিদ
অধ্যয়নরত,তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা

14/12/2021

প্রশ্নোত্তর পর্ব:-০১

প্রশ্নঃ- নামাজের মধ্যে দুনিয়াবী চিন্তা মনের মধ্যে স্বভাবতই এসে যায়!,এমতাবস্থায় করণীয় কী??

উত্তরঃ-নামাজের মধ্যে দুনিয়াবি চিন্তা এসে গেলে বুঝতে হবে আপনি নামাজে পরিপূর্ণ মনোযোগী নন। নামাজের প্রতি আপনার ধ্যন থাকতে হবে তাহলে অমনোযোগী হবেন না ।
নামাজে ধ্যান বাড়াবেন কেমন করে??
নামাজে ধ্যান বাড়ানোর অভিনব কিছু কৌশল রয়েছে।

•প্রথম কৌশল :-
প্রতি রোকনে তথা প্রতিটি সময়ে ৩টি কথা স্মরণ করবেনঃ-

১.আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখছেন।

২.আল্লাহ তায়ালা আমার সব কিছু শুনছেন।

৩.আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তরের খবরও জানেন।
এটি নামাজের বাইরেও করতে পারলে আল্লাহ পরিপূর্ণ হেদায়েত দানের মাধ্যমে ধন্য করবেন।

•দ্বিতীয় কৌশল :-
নামাজে আল্লাহু আকবার এর মর্যাদা দেওয়া। অর্থাৎ যখন অন্য কোন দিকে মন চলে যাবে তখন আপনাকে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে যে আমি তাকবীরে বলেছি আল্লাহ সবচেয়ে বড়। তাহলে এর অর্থ দাড়াবে আমি ব্যাবসার কথা কেন ভাবছি আমার ব্যাবসা হতে আল্লাহর দেওয়া নামাজ বড়।
আমি এখন বাইরে রেখে আাসা মালামাল নিয়ে কেনো ভাবছি তার চেয়ে তো আল্লাহ বড়।
এভাবে তাকবীরের যথাযথ মর্যাদা দিলে নামাজে অমনোযোগীতার রোগ দূর হয়ে যাবে।

•তৃতীয় কৌশল :-
সহকারে কিরাত(সূরা)পাঠ করা এবং নামাজের প্রতিটি স্থানে তেলাওয়াত করা আয়াত, তাসবীহ,দোয়া,দরূদ সকল কিছুর অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝা। এর ফলে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায়। এবং নামাজে প্রশান্তি লাভ করে।
আল্লাহ আমাদের পরিপূর্ণ মনোযোগী হয়ে নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন।।

উত্তর প্রদানকারী:-
•আব্দুল মজিদ মারুফ
অধ্যয়নরত, তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা

13/12/2021
|  'তুমি রবে নীরবে'  |কলেজে প্রথম যেদিন পা রেখেছিলাম সেদিন ছিল আমাদের অরিয়েন্টেশন ক্লাস। ছোটবেলা থেকে ঘরকুণো এই আমি সেদি...
13/12/2021

| 'তুমি রবে নীরবে' |

কলেজে প্রথম যেদিন পা রেখেছিলাম সেদিন ছিল আমাদের অরিয়েন্টেশন ক্লাস। ছোটবেলা থেকে ঘরকুণো এই আমি সেদিন বড্ড বেশি ভয় পেয়েছিলাম বাইরের জগতটাকে। এক অজানা জগত, অচেনা পরিবেশকে আলিঙ্গন করে নেয়ার চিন্তায় ছিলাম যারপারনাই উদ্বিগ্ন। তবুও কলেজের শিশিরসিক্ত ঘাস, পুষ্পের সমারোহ, আর আদিগন্ত মাঠ আমাকে অভিবাদন জানিয়েছিল এক নতুন জীবনের উপাখ্যানে।
হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে নতুন জীবনের সূচনালগ্নে আমার পরিচয় ঘটেছিল একটি প্রাণবন্ত আত্মার সাথে। সেদিন ক্লাসের এককোণে চুপচাপ বসে ছিলাম আমি। লাজুক ও স্বল্পভাষী স্বভাবের হওয়ায় চট করে কারো সাথে মিশে যেতে পারতাম না। স্বল্প পরিচয়ে কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া ছিলো আমার স্বভাববিরুদ্ধ। কেমন একটা অদ্ভুদ জড়তা কাজ করতো আমার মাঝে।
কিন্তু সেদিন আমার সমস্ত জড়তা এক লহমায় দূর করে দিয়েছিল তনিমা। উজ্জল শ্যামলা গায়ের রঙ, গোলগাল চেহারা, সাথে মানানসই একটি নাক আর কাজল কালো দুটো মায়াময়ী চোখের এই লাবণ্যময়ী মেয়েটি; যার সরু ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকা এক টুকরো হাসির মায়ায় পড়ে যাবে যে কেউ। মুহূর্তেই কাউকে আপন করে নেয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো তার।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা নিম্নবিত্ত পরিবারের খুবই সাধারণ মেয়ে ছিল তনিমা। দু'চোখ ভরা ছিল হাজারো স্বপ্ন। উজ্জল ভবিষ্যত গড়ার একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে লালন করতো অহর্নিশ। টানাটানির সংসারে বড় হলেও পড়ালেখায় তুখোড় মেধাবী হওয়ায় এক বুক আশা নিয়ে অজানা এই শহরে মেয়েকে রেখে গিয়েছিলেন তনিমার বাবা।
ছোটবেলা থেকেই আমার বেড়ে ওঠা শহরে। গ্রামীন জীবনের স্বাদ পাওয়া হয়নি কখনো। শহরের ইট পাথর পেরিয়ে কখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি কাদামাটির জীবন। কিন্তু তনিমার অনাড়ম্বর জীবণ ভীষণ টানতো আমায়। তনিমার মাঝে যেন আমি পেতাম গ্রামের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ। ওর দু'চোখের তারায় দেখতে পেতাম কাঁদাজলের মিশেলে গড়ে উঠা আকাবাকা মেঠোপথ। ওর দুরন্তপনার ডানায় ভর করে কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়াতাম হররোজ। হারিয়ে যেতাম যান্ত্রিকতায় ঘেরা জীবন ছেড়ে দূর, বহুদূর!
তনিমা এবং আমার লাইফস্টাইলে যদিও অনেকখানি বৈপরীত্য ছিল। আমি বড় হয়েছি ধর্মীয় অনুশাসনের মাঝে। বাবা মাদ্রাসার শিক্ষক। খুব অল্প বয়স থেকেই আপাদমস্তক পর্দা করে চলাফেরা করতাম। কিন্তু তনিমা ছিলো আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোন। দ্বীন নামক বসন্তের ছোঁয়া তখনও তার হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়নি। হয়তো ছোটবেলা থেকে তেমন কোন পরিবেশে বেড়ে উঠার সুযোগই পাইনি সে। আমি খুব করে চাইতাম তনিমার মাঝে দ্বীনের বুঝ আসুক। ওর হৃদয়টা যে ছিল একেবারে স্বচ্ছ আয়নার মতো। আল্লাহ তা'আলার কাছে দোয়া করতাম ওর হৃদয়ের সেই আয়নায় যেন ভেসে উঠে ইসলামের আদলে গড়ে উঠা এক অন্যরকম তনিমার প্রতিচ্ছবি।
খুব অল্প সময়ের মাঝে দারুণ শখ্যতা গড়ে উঠে আমাদের দু'জনার। ক্লাস টাইমে একই বেঞ্চে বসা, ক্যান্টিনে একসাথে খেতে যাওয়া, ক্লাস শেষে মাঠের সবুজ নরম ঘাসের কার্পেটে বসে আড্ডা দেয়া সবকিছু। তনিমার সাথে বন্ধুত্বের পর ও হয়ে গিয়েছিল আমার জীবনের একাংশ। আমরা যেন তখন দু'টি দেহ একটি প্রাণ। আমার সবকিছু শেয়ার করতাম ওর সাথে। কিভাবে আমরা তিন বোন বাবার অনুশাসনে বেড়ে উঠেছি, কিভাবে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরতে শিখেছি, সবকিছু বলতাম ওকে। তাছাড়া আমাদের বোনেদের মধ্যকার খুঁনসুটি, আদর ও ভালোবাসার গল্পগুলোও বাদ যেত না কখনো। তনিমাও গল্প করতো। ওর গ্রামের গল্প। ছবির মতো সুন্দর ওর গ্রাম। যে নাকি একবার সেখানে যাবে সে আর কখনো শহরে ফিরতে চাইবে না, এটাই ছিলো ওর বিশ্বাস। আরো বলতো ওর বাবার গল্প, মায়ের গল্প, ছোট ছোট ভাইবোনদের গল্প, গ্রামের সাদাসিধে মানুষদের জীবনের গল্প। আমি আগ্রহভরে সেসব শুনতাম আর ভীষণ মুগ্ধ হতাম।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিল আমাদের সময়। তনিমা হোস্টেলে আর আমি বাসায়। বাসা থেকে আমার কলেজ কিছুটা দূর হলেও বাবা রোজ বাইকে করে কলেজে নিয়ে যেতেন আমায়। হোস্টেলে উঠতে দেননি। বাড়ির ছোট মেয়ে হওয়ায় কিনা কে জানে, বাবা যেন আমাকে একটু বেশিই চোখে হারাতেন।
দেখতে দেখতে ইন্টারমেডিয়েটের দু'টো বছর কেটে গেল। টেস্ট পরীক্ষায় ভীষণ ভালো রেজাল্ট করল তনিমা। ক্লাসের সবাইকে ছাড়িয়ে একেবারে টপ পজিশন। শিক্ষক মহলের সবাই তখন ওর প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ। সবাই ধরেই নিয়েছিল তনিমা ফাইনালে খুব রেজাল্ট করবে। হয়তো বোর্ডে ফার্স্ট হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিবে। আর কলেজের খ্যাতিও বৃদ্ধি পাবে দেশময়। তবে তনিমার এই সাফল্যে সবথেকে বেশি খুশি হয়েছিলাম বোধহয় আমি। মন প্রাণ দিয়ে শুধু এটাই চেয়েছিলাম তনিমা যেন তার স্বপ্নের মঞ্জিলে পৌছে যায়। আল্লাহ তা'আলা যেন এই মেয়েটা ও তার পরিবারের সকল ইচ্ছে ও আশাগুলোকে কবুল করে নেয়।
তারপর একদিন! হঠাৎ করেই সিঁড়ি থেকে পরে গিয়ে পা ভেঙে যায় আমার। একমাস অব্দি কলেজ মুখো হতে পারিনি। সারাদিন কাটতো বিছানায় শুয়ে বসে। ফাইনাল পরীক্ষার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম বাসায় থেকেই। তনিমার সাথে অবশ্য ফোনে কথা হতো রোজ। তবে ধীরে ধীরে-ই আমাদের যোগাযোগে কেমন শিথিলতা চলে আসে। যদিও তনিমা-ই যোগাযোগ কমিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু এর কারণটা ছিল তখনও আমার অজানা!
দীর্ঘ একমাস পর কলেজে গিয়ে রীতিমতো বোকা বনে গিয়েছিলাম আমি। থ্রী স্টেপ কাট দেয়া চুল, প্লাক করা ভ্রু, গায়ে জড়ানো দামী পোশাক। আরেহ, এ কোন তনিমা! আমি ঠিক দেখছি তো।
সেদিন ভীষণ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আমি৷ সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে এতসব কিভাবে সম্ভব তার কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না৷ সবথেকে বেশি অবাক হয়েছিলাম তনিমার আচরণে৷ আমাকে দেখে খুশি হওয়ার বদলে কেমন একটা এড়িয়ে যেতে শুরু করল সে। তনিমা আমাকে এভয়ড করছে! আমাকে! সিরিয়াসলি! কিন্তু এই এক মাসে কি এমন হয়ে গেল! স্ট্রেঞ্জ!
দিন দুয়েকপর খবরটা শুনেছিলাম ক্লাসের ইরার কাছ থেকে। বড়লোক বাবার কোন এক বখে যাওয়া ছেলের সাথে প্রণয় চলছে তনিমার। ক্লাসে এখন আর আগের মতো পারফর্মেন্স নেই তার। বলা ভালো, পড়ালেখার প্রতি সিরিয়াসনেস এখন একেবারেই মিইয়ে গিয়েছে৷ ক্লাসে তার উপস্থিতিও ক্রমশ কমে আসছে৷ এখন নাকি পার্কে, শপিং মলে আর রেস্ট্রুরেন্টেই তাকে বেশি দেখা যায়।
কথাগুলো শুনে নিজের কানকেও সেদিন বিশ্বাস করতে পারিনি। একেবারে শকড হয়ে গিয়েছিলাম আমি। অথচ তনিমা আমাকে এসবের কিছুই বলেনি। কিন্তু কেন! আমি বাঁধা দিবো বলে! একি সেই তনিমা যে কিনা জীবনকে দেখতো বাস্তবতার চোখ দিয়ে! যার কাছে আবেগ বলতে ছিল শুধু মা বাবা আর পড়াশোনা! যে শয়নে স্বপনে, নিদ্রা জাগরণে শুধু একটি জিনিসই চাইতো কিভাবে বাবার স্বপ্নকে সত্যি করা যায়। গ্রামের মানুষের কাছে বাবা মায়ের মাথা উঁচু রাখা যায়! অথচ আজ! ভুলের চোরাবালিতে এভাবে আটকে গেল সে!
না, আমাকে কথা বলতেই হবে তনিমার সাথে। দিন দিন এমন হারামের মাঝে ওকে ডুবে যেতে দিতে পারি না আমি। ওর ইহকাল ও পরকাল দুটো এভাবে বরবাদ হয়ে যাবে এ আমি কখনো হতে দিতে পারি না।
আমি তনিমার সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলার নিয়ত করি। ওর মুখোমুখি হই। কিন্তু আমার কোন কথায় শুনতে রাজি ছিল না সে। প্রথমে তো অস্বীকার করে বসেছিল সবকিছু তারপর যখন চেপে ধরেছিলাম তখন সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু ওর মাঝে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বোধ ছিল না। বরং আমাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করেছিল সে। এমন অপমান কেউ কোনদিন আমায় করেনি। এত আঘাত কখনো আমায় পেতে হয়নি৷ হৃদয়টা ভেঙে চুড়ে গিয়েছিল একেবারে৷
সেদিন বাসায় ফিরে ডুকরে কেঁদেছিলাম আমি।
সহ্য করতে পারিনি ওর দেয়া আঘাত৷ ভীষণ ব্যথা হচ্ছিলো বুকে। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল আমার। তারপর সেই যে বিছানায় পড়লাম জ্বরে বেহুশ ছিলাম প্রায় দিন দশকের মতো৷ এর মাঝে কোথায় কি হচ্ছে, না হচ্ছে তার কিছুই জানতাম না আমি। খোঁজ খবর রাখার মতো অবস্থাতেও ছিলাম না। কিন্তু এই এক সপ্তাহে যে এতকিছু ঘটে যাবে তা কেই বা জানতো....
তনিমা তখন হসপিটালে ভর্তি। কলেজে ওকে নিয়ে চলছে নানান রকম গুঞ্জন। চারিদিকে শুধু একটাই নাম তনিমা তনিমা তনিমা! শারীরিক ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আমি তখন প্রচন্ড রকম একটা মানসিক ধাক্কা খেলাম যখন জানতে পারলাম তনিমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একেবারে গ্যাঙ্গ রেপড। মাথাটা ভীষণ রকম চক্কর দিচ্ছিল আমার। ঘটনার আদ্যোপন্ত জেনে যা বুঝতে পেরেছিলাম তাতে তনিমার সেই বয়ফ্রেন্ড-ই তার বন্ধু বান্ধব নিয়ে এই নোংরা কাজটি করেছে৷ তনিমাকে ভুলিয়ে রিসোর্টে নিয়ে গিয়ে ওর গায়ে কলংক লেপে দিয়েছে। তনিমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে কলেজে ওর স্টুডেন্টশিপ রাখলেও ঘটনার আসল সত্যতা জানার পর হোস্টেল থেকে সিট বাতিল করে দেয়া হয় ওর। রাগে, অভিমানে একবার ভেবেছিলাম হসপিটালে ওকে দেখতে যাবো না কিন্তু পরক্ষণেই নানান ভাবনায় থমকে দাঁড়াই আমি। সিদ্ধান্ত বদল করে ছুটে যাই হসপিটালে, তনিমার কাছে।
কিন্তু গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা কখনো ভাবিনি৷ হসপিটালের করিডোরে মাথা হেট করে বসে আছেন দু'জন মানব মানবী। সস্তা পাড়ের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে আঁচলে মুখ ঢেকে বসে আছে একটি নারীমূর্তি। একটি মমতাময়ী মুখ। আর পাশের জন, পরনে একটা খাটো করে পরা লুঙ্গি, অর্ধ ময়লা একটি হাফ হাতা শার্ট আর পায়ে একজোড়া স্যান্ডেল। এই দু'বছরে যাদের কথা এত শুনেছি যে না দেখেই তাদের ছবি আমার হৃদয়ে আঁকা হয়ে গিয়েছিল। যাদের কথা শুনলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আমার অন্তর বিনয়ী হয়ে আসতো৷ হ্যাঁ, ওনারাই ছিলেন তনিমার মা বাবা।
আমি কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতেই আমাকে চিনে নেন দু'জন। তনিমা তো বাড়ি গিয়ে আমার গল্পও বলতো ওনাদের৷ এটুকু পরিচয়ে আমাকে চিনতে পারাটা খুবই স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু সেদিন এই মানুষগুলোর সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার সাহস করতে পারিনি আমি। কিভাবে পারবো! একজোড়া চোখ দিয়ে যে ঝরঝর করে বেয়ে পড়ছিলো অশ্রুর বন্যা। মায়েরা তো তবুও চোখের তপ্ত নোনা জল ফেলে হৃদয়ের যন্ত্রণা খানিকটা কমাতে পারে কিন্তু বাবারা!
আমার দিকে তাকিয়ে যেন নীরব আর্তনাদে হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছিল তনিমার বাবার৷ আমি সহ্য করতে পারছিলাম না সেই দৃশ্য। কলিজাটা এফোড় ওফোড় হয়ে যাচ্ছিল কষ্টে। বন্ধু হয়ে এক বন্ধুকে ফেরাতে পারিনি ভুলের চোরাবালি থেকে৷ দিনের পর দিন তার অধঃপতন দেখে নীরবে দগ্ধ হলেও তাকে সঠিক পথে আনতে পারিনি আমি। তনিমার এই পরিণতি শুধু ওর লজ্জার প্রমাণই বহন করেনি। বহন করেছিলো একজন মুসলিম হিশেবে আমার পরাজয়। আমি ওকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারিনি এ ছিল একজন মুমিন হয়ে আমার চরম ব্যর্থতা।
খুব সাধারণ পরিবারের মেয়ে হওয়ায় তনিমার কেইসটা ধুপে টিকেনি। বড়লোক বাবার ছেলে বলে কথা। পুলিশের পকেটে কয়েক বান্ডেল টাকা ঢুকতেই সেটা ফাইলের অতল গহ্বরে হারিয়ে যায়। ধামা চাপা পড়ে যায় ওর কলংকের শেষ চিহ্নটুকু-ও। চাইলে সেদিন আমার পরিবারকে দিয়ে কেইসটা ঘাটাতে পারতাম কিন্তু তনিমার সম্মানের কথা ভেবে তা আর করিনি৷ কেননা একজন নারী ধর্ষক দ্বারা ধর্ষিত হয় একবার আর ডাক্তার, প্রশাসন ও মিডিয়া জগতের কাছে ধর্ষিত হয় বারবার। তবে সেদিন আরশে আজিমের অধিপতির কাছে বিচার দিয়েছিলাম আমি। তনিমার সরলতার সুযোগ নিয়ে যে পাপীরা ওর সাথে এমন জঘন্য খেলাটি খেলেছিল তাদের যেন আসমান জমিনের মালিক ন্যায্য বিচার করেন শুধু এটুকুই চাওয়া ছিলো আমার।
আর তনিমা! তাকে বোধকরি রব্ব দুনিয়াতেই ভুলের শাস্তিটুকু দিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়েটাতো তখনও হসপিটালের বেডে শুয়ে জীবন মৃত্যুর মাঝে ডাঙায় তোলা মাছের মতো তড়পাচ্ছিল।
তনিমার চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেছিলেন আমার বাবা। কেননা হসপিটালের এতগুলো টাকা পে করার মতো এবিলিটি ওর বাবা মায়ের ছিলো না৷ দিন কয়েক পর ওনাদের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে তনিমাকে হসপিটাল থেকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি।
আমার বাবা মায়ের কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট পাই আমি। একটি দ্বীনি পরিবার হিশেবে ওনারা ছিলেন তনিমার প্রতি যথেষ্ট যত্নবান। সবার কাছে তনিমার অবস্থান ছিলো পরিবারের একজন সদস্যের মতো৷ আল্লাহ'র কাছে তখন শুধু আমার একটাই চাওয়া ছিলো, তনিমাকে সম্পূর্ণ সুস্থ রূপে ফিরে পাওয়া। আমাদের বাসায় প্রতি বৃহস্পতিবার তালিম হয়। ছোটবেলা থেকে তেমনটাই দেখে এসেছি। দাদু, আম্মু, দুই ফুপি আর আমরা তিন বোনও থাকতাম সেই তালিমে। পরিচিত অনেক হাফেজা, আলেমা'রাও সেসময় আমাদের বাসায় উপস্থিত থাকতেন।

তার মাস খানেক পরের কথা.....

তনিমা ততদিনে অনেকখানি রিকভার করেছে। আমি সেদিন প্রথমবারের মতো ওকে নিয়ে সবার সাথে তালিমে বসি৷ তালিম করাচ্ছিলেন রাবেয়া আন্টি। ওনি ছিলেন একজন আলেমা এবং সবার থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ। ওনার প্রতিটি কথা-ই যেন প্রত্যেকের হৃদয়ের গভীর থেকে গভীরে গিয়ে প্রবেশ করছিল। অবাক করার মতো বিষয় হলো, সেদিন আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মেয়েদের পর্দা করা, লজ্জাস্থানের হেফাজত করা এবং হারাম সম্পর্কের দুনিয়া ও আখিরাতের পরিণতি। তনিমা কেমন একটা কুঁকড়ে ছিল পুরোটা সময়। তালিম শেষে রাবেয়া আন্টি হৃদয়গ্রাহী মুনাজাত করেছিলেন। সেই মুনাজাতে সবার চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পড়েছিল তনিমা। চোখের পানিতে যেন অন্তরে অনুশোচনার বাঁধ ভেঙে পড়ছিল তার। এই এতদিনে কখনো আমি ওকে এত কাঁদতে দেখিনি। জানিনা সেদিন কি হয়েছিলো। তারপর থেকে রোজ নিয়ম করে তালিমে বসতো তনিমা। নামাজেও নিয়মিত হতে শুরু করে ধীরে ধীরে। গ্রামে বাবা মায়ের সাথে ফোনে কথা বললেও আর কখনো গ্রামে ফিরতে চায়নি ও। হয়তোবা নিজের প্রতি লজ্জায় নতুবা ঘেন্নায়।
সারাক্ষণ কেমন একটা বিষন্ন হয়ে থাকতো তনিমা। ওর একাকিত্ব দূর করতে আমার পাশাপাশি বড় আপু, আম্মু দাদু সবাই মিলে সঙ্গ দিতো ওকে। কিন্তু তবুও মেয়েটা রোজ মুখ কালো করে আদিগন্ত আকাশের দিকে নিথর দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকতো। এই চাহনীতে যেন কতশত আকুতি আর মিনতি মিশে থাকতো ওর। যা আসমানের নীল ভেদ করে পৌঁছে যেত আসমানের মালিকের কাছে।
নিজের ভুলে ভরা জীবনের দিকে তাকিয়ে রোজ রাতে জায়নামাজে অনুশোচনার তপ্ত নোনা জল ফেলতো মেয়েটা। তাহাজ্জুদের দীর্ঘ সিজদায় পড়ে থাকতো রব্বের কুদরতি পায়ে। নতুন করে আরো একবার প্রেমে পড়েছিল তনিমা। তবে সে প্রেম ছিল সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলো ওর তনুমন। বাকি জীবনে শুধু একটাই স্বপ্ন ছিলো ওর। একটি সুন্দর মৃত্যু! তনিমা সব সময় বলতো, 'যদি আমার মৃত্যু হয় কোন এক নামাজের জায়নামাজে, পবিত্র ও উত্তম অবস্থায় তবেই বুঝবো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন। করুণা করে হলেও তিনি আমায় ভালোবেসেছেন।'

মাস ছয়েক পর...........

এক কাক ডাকা ভোরে ঘন কুয়াশা ভেদ করে গাড়ি নিয়ে আমরা পৌঁছে যাই পলাশপুর গ্রামে। তনিমাও ছিলো আমাদের সাথে। তাকে যে থাকতেই হতো৷ আজ এত আয়োজন সেতো ওর জন্যই৷ তনিমার সেই গ্রাম! যেখানে কেউ একবার গেলে আর কখনো শহরে ফিরতে চাইবে না বলে বিশ্বাস ছিলো ওর। মিথ্যে বলেনি মেয়ে'টা। আমিও যে সেদিন তনিমাকে রেখে গ্রাম ছেড়ে শহরে ফিরতে চাইনি। তবু ফিরতে হয়েছিলো আমায়। সমস্ত মায়া কাটিয়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে৷ কিন্তু তনিমাকে ফিরতে হয়নি আর কখনো ইট পাথরের এই নিষ্ঠুর শহরে৷ চিরদিনের জন্য গ্রামে থেকে গিয়েছিলো ও। কেবল পরিচয়টা বদলে গিয়েছিলো মেয়েটার। তখন শুধু একটাই পরিচয় ছিলো তনিমার। মৃত্তিকার বুকে শুয়ে থাকা একটি মৃত লাশ!
আবেগের তাড়নায় করা একটি ভুল ওর সুন্দর জীবনের সমস্ত রঙিন স্বপ্নকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো এক লহমায়। বিলীন হয়ে গিয়েছিলো গ্রামের সাধারণ একজন কৃষকের মেয়ের প্রতি সমস্ত আশা, ভরসা।
তবুও স্বান্ত্বনা এতটুকু, জীবনের যবনিকায় সে মহান রবের সন্ধান পেয়েছিল। রব তাকে ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। তাইতো সেই রাতে তাহাজ্জুদের সিজদাহ থেকে আর মাথা তোলেনি তনিমা। এক পবিত্র ও সুন্দর সমাপ্তি ঘটেছিল ওর জীবনের।
সন্ধ্যের ধূসরিত আকাশ। আদিত্যের অবারিত লালিমা আভা মিইয়ে গিয়েছে আঁধারের ভাঁজে ভাঁজে। মৃদুমন্দ দক্ষিণা সমীরণে প্রকৃতির মাঝে এক হিম শীতলতা বিরাজমান। বারান্দায় পাতানো বেতের চেয়ারটায় বসে সদ্য কলেজে পড়া জুয়াইরিয়াকে কথাগুলো বলছিলেন মিসেস নুসাইবা ইয়াসমিন। প্রায় কুড়ি বছর পর মেয়ের কাছে অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দু'চোখের কোণ আর্দ্র হয়ে এসেছে তার। এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে খানিকটা দম নিলেন তিনি৷ নীরবতায় পরিবেশ'টা কেমন থমথমে হয়ে এসেছে। টি টেবিলে রাখা চায়ের কাপ'টা হাতে তুলে নিলো জুয়াইরিয়া। মিনিট দু'য়েক পর নীরবতার মোহ ছেদ করে সে বলল,

"তুমি আজও তনিমা আন্টিকে ভীষণ মিস করো তাইনা মামণি? আচ্ছা, এতদিন কেন আমাকে তনিমা আন্টির গল্প বলোনি?"

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন নুসাইবা ইয়াসমিন। ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালেন বারান্দার এক কোণে। একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

"সময় হলে বলবো ভেবেছিলাম। বলতে পারো, আজকের এই দিনটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম আমি।"

"সেজন্যই বুঝি কিছুদিন পর পর পলাশপুর গ্রামে যাও তুমি?"

আকাশে রূপোলী চাঁদ জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে। সেই জ্যোৎস্না গাছের প্রতিটি পাতায় গলে গলে পড়ছে। গ্রীল ভেদ গেলে নুসাইবা ইয়াসমিন তাকালেন দূর আকাশের দিকে। শূন্যে দৃষ্টি মেলে মিহি স্বরে তিনি বললেন,

"তনিমাকে কখনো ভুলতে পারবো না আমি। ওর স্মৃতি আমৃত্যু আমার হৃদয়ে রয়ে যাবে। আমি যে ভীষণ ভালোবাসতাম মেয়েটা'কে!"

•লেখিকা:-
ফাতেমাতুল বুশরা

[ রচিত গল্পটি ❝ অভিযাত্রী ❞ কর্তৃক প্রতিযোগিতায় ২য় স্থান অধিকার করে পুরস্কৃত হয় ]

11/12/2021

'মানব জীবন ও ইস্তেগফার'


* ইস্তেগফার এর পরিচয়:-

ইস্তেগফার অর্থ হল ‘ক্ষমা প্রার্থনা করা’।
কোন ভুল করে ফেললে তার জন্য আমরা মহান রাব্বুল আল’আমীনের নিকট ক্ষমা চেয়ে থাকি।ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমরা সবাই বিশেষ করে أَسْتَغْفِرُالله ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ পড়ি।যা সবার নিকট সহজ ও সহজে উচ্চারিত।

**ইস্তেগফারের গুরুত্ব ও ফজিলত
বিশ্ব নবীর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য আল্লাহ পাক বলেন

فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَ اسْتَغْفِرْهُﳳ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا۠
তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো এবং তাঁর কাছে মাগফিরাত চাও। অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী।
(আন-নাসর,:আয়াত: ৩,)

আরবি : أَسْتَغْفِرُالله উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হ
অর্থ : আমি আল্লাহ্‌’র ক্ষমা প্রার্থনা করছি। প্রতি ফরজ স্বলাতের সালাম ফিরানোর পর রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার আস্তাগফিরুল্লা-হ পরতেন।[মিশকাত-৯৬১]

ইস্তিগফার সম্বন্ধে নূহ আঃ তার জাতিকে যা বলেছেন তার উল্লেখ করে আল্লাহ পাক আমাদের বলেন

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বারিধারা বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)
এই আয়াতের দ্বারা আমরা এস্তেগফার এর যেসব উপকারিতা জানতে পারলাম। তার মধ্যে দুটি হচ্ছে ১- রিজক বৃদ্ধি ২- সন্তান লাভ। যেহেতু সন্তান বিয়ের মাধ্যমেই হয়। সুতরাং এস্তেগফারের দ্বারা বিয়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দিবেন।

ইস্তেগফার মানুষের গোনাহখাতার কার্যকর প্রতিষেধক, ইস্তেগফারকারীর ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন। কারণ সে
নিজের গোনাহ ও অপরাধ স্বীকার করে সততার পরিচয় দিয়েছে। রাসূল (সা.) ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে বলেন অথচ তিনি মা’সুম-নিষ্পাপ, হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করো। কারণ
আমি নিজেও দৈনিক শতবার তাওবা-ইস্তেগফার করি।

অন্য হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন:- যার আমলনামায় ইস্তেগফার অধিক সংখ্যায় পাওয়া যাবে তার জন্য রইল সুসংবাদ।

وَ مَا كَانَ اللّٰهُ لِیُعَذِّبَهُمْ وَ اَنْتَ فِیْهِمْؕ وَ مَا كَانَ اللّٰهُ مُعَذِّبَهُمْ وَ هُمْ یَسْتَغْفِرُوْنَ

তুমিই যখন তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলে তখন আল্লাহ‌ তাদের ওপর আযাব নাযিল করতে চাচ্ছিলেন না। আর এটা আল্লাহর রীতিও নয় যে, লোকেরা ক্ষমা চাইতে থাকবে এবং তিনি তাদেরকে আযাব দেবেন।
আল-আনফাল,:আয়াত: ৩৩

লেখক:-
এম. আব্দুল মজিদ মারুফ
শিক্ষার্থী,তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা

Address

Gazipur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when অভিযাত্রী-Ovizatri posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to অভিযাত্রী-Ovizatri:

Share

Category