Bengal's WILD TALES

Bengal's WILD TALES Welcome to Bengal's WILD TALES: An explorer's guide to the wildlife. A source of facts, photos, video
(3)

এখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী নিয়ে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করছি- ড. মোস্তফা ফিরোজ, প্রফেসর, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত তিন দশকে বন্যপ্রাণী গবেষণায় আমার সম্পৃক্ততা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি সবার সাথে। এ পেইজে আমারই ধারণকৃত ভিডিওচিত্র বা আমার টিমের সদস্যদের ভিডিওচিত্র ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম থেকে কোন ভিডিও ব্যবহার করা হয়না। বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। বন্যপ্রাণী সংর

ক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধিই আমার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় জানতে বা দেখতে চাইলে সে বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।

I've just reached 120K followers! Thank you for continuing support. I could never have made it without each and every on...
07/12/2024

I've just reached 120K followers! Thank you for continuing support. I could never have made it without each and every one of you. 🙏🤗🎉

শেষ বেলায়
05/12/2024

শেষ বেলায়

অবশেষে যেতে পারলাম গাঙগুইরার চরে।গত ৬ বছর থেকে চেষ্টা করছিলাম গাঙগুইরার চরের লোকেশনটা ঠিক কোথায় আর কিভাবেই বা যাওয়া যায় ...
04/12/2024

অবশেষে যেতে পারলাম গাঙগুইরার চরে।
গত ৬ বছর থেকে চেষ্টা করছিলাম গাঙগুইরার চরের লোকেশনটা ঠিক কোথায় আর কিভাবেই বা যাওয়া যায় সেটা জানার। যারা গিয়েছেন এমন দুইজনের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছিলাম হাতিয়ার পূবে আর সন্দ্বীপের দক্ষিন-পশ্চিমে সমুদ্রের মাঝে কোথাও এর অবস্হান। ভরা জোয়ারে বেশীর ভাগ অংশ ডুবে যায় বলে গুগল ম্যাপেও খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। ২০১১ সালে এ চরটিকে আমাদের দেশের ৬ টি East Asian Australasian Flyway network site এর একটি হিসেবে ঘোষনা করা হয়। তাই চেষ্টা করছিলাম কিভাবে কয়েকটা দিন এখানে কাজ করা যায়।

নভেম্বরের শেষ সাপ্তাহে সন্দ্বীপের হারিশপুর থেকে ভোর পাচটায় ইন্জিনচালিত নৌকায় রওনা দিয়ে সাড়ে তিন ঘন্টায় গাঙগুইরার চরে পৌঁছলাম। এ চরের মাঝামাঝি বেশ ভালো কেওড়ার বন হয়েছে। জনবসতিহীন এ চরের দক্ষিণাংশে মহিষের বাথান পাহারা দেয়ার জন্য কয়েকটি ঘর করা হয়েছে। আসলে এভাবেই শুরু হয় মানুষের বসতি স্হাপন, ১০ বছর আগে দমার চরেও ঠিক এ ভাবেই শুরু হয়েছিলো বসতি স্হাপন।

এ চরটি উত্তর দক্ষিনে লম্বালম্বী ভাবে বিস্তৃত। চরের উত্তর পশ্চিমাংশে আর দক্ষিন পশ্চিমাংশে বিস্তীর্ণ কাদা ভুমি।। এখনো পলি জমছে, ভাটিতে ৩/৪ ফুট গভীর কাদামাটি। জোয়ারে ৭/৮ ফুট সমান পানিতে ডুবে যায় আর ভাটায় ভেসে উঠে। এই কাদায় পরিযায়ী পাখির সমাগম দেখার মত। ২০ হাজারেরও বেশী জিরিয়া বাটানের ঝাঁক দেখলাম এখানে, অন্য কোথাও এত বড় ঝাঁক আগে দেখিনি। ৯০টা মেটে রাজহাঁসের (Grey legged Goose) একটা বড় ঝাঁক আর ১১৭টা পাতি চখাচখির (Common Shelduck) বিশাল ঝাঁকও পেলাম গাঙগুইরার চরে। এর আগে এ হাঁস প্রজাতি গুলির এত বড় ঝাঁক কোথাও দেখিনি। এছাড়াও অন্যান্য পরিযায়ী প্রজাতি গুলিও দেখা যায় সহজেই।

তবে গল্প একই। বলছি গাংগুইরার চর ও এর আশেপাশের নদী গুলিতে মানুষের কর্মকান্ড নিয়ে। গাঙগুইরার চরের বর্তমান অবস্হা হচ্ছে আরো ১০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে সেই ২০১৫ সালের দমার চরের মত।

দশ বছর পরে দমার চরের বর্তমান যা অবস্হা সে দিকেই যাচ্ছে গাঙগুইরার ভবিষ্যত। চরপাটা জালের ব্যাপক বিস্তার পুরো এলাকা জুড়ে আছে। সন্দ্বীপ থেকে ভাসানচর হয়ে গাঙগুইরার চর পুরো এলাকাটিতে ২/৩ টি চ্যানেল ছাড়া সবটাই ৬/৭ ফুট পানিতে নিমজ্জিত কাদাভূমি। আর এ সুযোগে চরপাটা জাল, ফাইশ্যা জাল আর বেহুন্দি জালে ভরে গেছে পুরো এলাকা। Flyway site হিসেবে ঘোষনা দিয়েই মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব যেন শেষ, যেমনটা হয়েছে নিঝুম দ্বীপ বা টাংগুয়া হাওড়ের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের যে কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য পরিবেষ্টিত যে চরাঞ্চল বা বনাঞ্চল দেখা যায় তা খুব সহজেই কেন যেন জীবিকার নামে অথবা পর্যটনের নামে জনবসতিপূর্ণ জন্জালে পরিণত হয়ে যায়! সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, আইন প্রণয়ন করার পরেও এগুলোর যথাযথ ব্যবস্হাপনা আর প্রয়োগ হয় না, এছাড়াও প্রকৃতি সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের চরম অসচেতনতা আর দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ড এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যকে একেবারে বিপর্যয়ের মুখে নিয়ে যায় যা পুনরুদ্ধার করা সত্যিই দুরহ।

02/12/2024
02/12/2024

সুন্দর বনে চরপাটাজালের দৌড়াত্ব

19/11/2024

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের সুন্দরবন টিকে আছে হাজার বছর ধরে। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের অত্যাচার সহ্য করে আর কত দিন টিকে থাকবে আমাদের এই সুন্দরবন ?

সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ || Future of Sundarbans
চিত্রগ্রহণ, পরিচালনা ও প্রযোজনা: ড. মোস্তফা ফিরোজ
পাণ্ডুলিপি: ড. সাজেদা বেগম এবং ড. মোস্তফা ফিরোজ
ধারাবর্ণনা: ড. সাজেদা বেগম
সম্পাদনা: ড. মোস্তফা ফিরোজ
কৃতজ্ঞতা: ওয়াইল্ডলাইফ রেসকিউ সেন্টার, জা.বি.

ছায়া যখন কায়ার চাইতে  বড় হয় তখন বুঝে নিতে  হয় সূর্য ডুবন্ত, শেরপুরের হাতি গুলিও  বুঝি তাঁদের শেষ সময়ের কাছাকাছি
19/11/2024

ছায়া যখন কায়ার চাইতে বড় হয় তখন বুঝে নিতে হয় সূর্য ডুবন্ত, শেরপুরের হাতি গুলিও বুঝি তাঁদের শেষ সময়ের কাছাকাছি

সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবারের পর্বটি দেখুন -
12/11/2024

সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এবারের পর্বটি দেখুন -

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের সুন্দরবন টিকে আছে হাজার বছর ধরে। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের অত্যাচার সহ্য করে আ....

পাহাড় কেটে ধাপ চাষের ফলে উঁচুনিচু জমির কারনে বাচ্চাটি কোন ভাবেই দলের  সাথে যেতে পারছিলো না। বাচ্চাটিকে  সাথে নিতে মা হা...
05/11/2024

পাহাড় কেটে ধাপ চাষের ফলে উঁচুনিচু জমির কারনে বাচ্চাটি কোন ভাবেই দলের সাথে যেতে পারছিলো না। বাচ্চাটিকে সাথে নিতে মা হাতিটি কি করলো দেখতে চোখ রাখুন হাতি নিয়ে আমার পরবর্তী তথ্যচিত্রে - “দেশহীন হাতিরা || Elephants without Country”।

The calf could not go with the herd in any way because of the conversion of hilly landscape to step cultivation and farming. Stay tuned for my next documentary -“দেশহীন হাতিরা || Elephants without Country”- to watch what the mother elephant did to take the calf with her

অভাগা হাতিরা - এ বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে জানতে পারি চুনতি  অভয়ারণ্যে ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাচ্চা হাতি আহত হয় ও প...
25/10/2024

অভাগা হাতিরা -
এ বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে জানতে পারি চুনতি অভয়ারণ্যে ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাচ্চা হাতি আহত হয় ও পরে মারা যায়। পরবর্তীতে পত্র পত্রিকা থেকে জানলাম পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে হাতি সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে এবং মাননীয় উপদেষ্টা হাতি সংরক্ষণে বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা যারা বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ করি তাঁদের জন্য এটি একটি সুখবর কারণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ ধরনের বিষয় গুলিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে । বিগত এক দশক ধরে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণাংশে চট্টগ্রামের বনাঞ্চল এবং কক্সবাজার বনাঞ্চলে নির্বিচারে হাতি হত্যা নিয়ে অনেক খবর প্রচার হলেও কোন এক বিশেষ কারণে এ বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কখনো কখনো যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়নি অথবা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার বনাঞ্চলে ২০টি হাতি বৈদ্যুতিক তারে পেঁচিয়ে এবং গুলিতে মারা পরে। উখিয়াতে শেষ হাতিটি মারা পরে মাত্র দুই মাস আগে এ বছরের অগাস্ট মাসের ১৫ তারিখে (এ লেখাটি যখন লিখছি তখনো একটি বাচ্চা হাতি হত্যার খবর পেলাম, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হয়তো আরও বিস্তারিত কারণ জানা যাবে)। দেশে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এবং সার্বিক ভাবে হাতি সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে কিনা বিশেষ ভাবে ভেবে দেখা দরকার। কারণ আমাদের দেশে হাতি নিয়ে সমস্যা এলাকা ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন। দেশের উত্তরাঞ্চলের জামালপুর-শেরপুর-ময়মনসিংহ-নেত্রকোনার হাতিগুলির সমস্যা এক ধরণের। কর্নফুলি নদীর উত্তর পাড়ের চট্টগ্রামের আর পার্বত্য চট্রগ্রামের বনাঞ্চলের হাতির সমস্যা অন্য ধরণের। অপরদিকে সাঙ্গু নদীর দক্ষিণাংশে চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ও কক্সবাজার অঞ্চলের হাতির সমস্যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর আগে শেরপুর- জামালপুরের হাতিগুলির সমস্যা নিয়ে লিখেছিলাম (লিঙ্ক দিয়ে দিলাম কেউ আগ্রহী হলে পড়ে দেখতে পারেন)। আজ সাঙ্গু নদীর দক্ষিণাংশে চট্টগ্রামের বনাঞ্চল এবং কক্সবাজার বনাঞ্চলে হাতির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করব।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায় একটি পূর্ণ বয়স্ক হাতি দিনে প্রায় ১৫০ কেজি পর্যন্ত ঘাস জাতীয় ও গাছ গাছালি খাবার হিসাবে খেয়ে থাকে আর ১০০ থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত পানি পান করে থাকে। এই বিপুল পরিমাণ খাবারের জন্য হাতিকে পানির জলাশয় সহ বন পরিবেষ্টিত বিশাল এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। হাতিরা বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর একই পথ দিয়ে চলাচল করে। সারা বছর ব্যাপী এরা বিশাল এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। একটি নির্দিষ্ট এলাকাতে চড়ে বেড়ানোর সময় যেমন এরা ঐ নির্দিষ্ট পথে চলাচল করে (যে গুলিকে Route বলে) ঠিক তেমনি দুইটি এলাকার মধ্যে একটি থেকে অন্যটিতে যাওয়ার সময় এরা খুবই নির্দিষ্ট একটি পথে গিয়ে থাকে (যেটি Corridor হিসাবে পরিচিত)। হাতির করিডোর গুলি হাতির চলাচলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । চলাচলের পথ বা করিডোরের উপরে যদি কখনো কোন স্থাপনা তৈরি করা হয় তাহলে হাতিরা তা ভেঙ্গে ফেলবেই। আমাদের হাতির চলাচলের পথ ও করিডোরের অবস্থান নিয়ে প্রায় এক দশকের গবেষনা লব্ধ তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা IUCN-বাংলাদেশ অত্যন্ত বিশদ আকারে একটি এটলাস প্রকাশ করেছে । হাতির আবাসস্থল পরিবর্তন করে মানুষের জনবসতি তৈরি সহ জমির বহুমুখী ব্যবহারই এ এলাকাতে হাতি মানুষের দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে হাতি এ এলাকার যত যায়গায় মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙ্গেছে সেসব স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা গুলি হাতির দৈনন্দিন চলাচলের পথ বা করিডোরের উপরেই করা হয়েছিল। এই এলাকার কক্সবাজার অঞ্চলের রামু-উখিয়া কেন্দ্রিক হাতি গুলির সমস্যা এক ধরণের আর চুনতি-মেধাকচ্ছপিয়া কেন্দ্রিক হাতি গুলির সমস্যা অন্য ধরণের ।
২০০৭ সালে IUCN-এর হাতি গবেষণার অংশ হিসেবে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় আমরা দেখতে পাই মায়ানমার থেকে হাতি গুলি গুনধুম হয়ে উখিয়াতে প্রবেশ করে। হাতির এ চলাচলের পথের উপরে বালুখালি টিলায় একটি টিভি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয় সম্ভবত ২০০৫ সালে। টাওয়ার সহ বিশাল এ স্থাপনাটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তাই হাতি গুলি গুনধুমের পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে টেকনাফ-উখিয়ার রাস্তার যে যায়গায় টিভি উপকেন্দ্র টাওয়ারটি করা হয়েছে সেখানে এসে দক্ষিণ বা উত্তর পাশ দিয়ে বালুখালি টিলা থেকে নেমে আবার আগের পথে চলাচল করে। ২০০৪-২০০৬ সালে এই টিভি উপকেন্দ্রের পাশের পাহাড়ে কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসিত করা হয়। আর সেই থেকেই এ এলাকায় হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

২০১০-১১ সালে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আমরা টেকনাফ অভয়ারণ্যের জীববৈচিত্র্যের উপর একটি গবেষণা করি। এ কাজের অংশ হিসাবে টেকনাফ অভয়ারণ্য সহ এ অঞ্চলে হাতির চলাচলের উপর GPS নির্ভর একটি বিশদ জরীপ করা হয়। এতে দেখা যায় হাতির ছোট একটি দল সারা বছরই টেকনাফ অভয়ারণ্যেই থাকে। হাতির অপর একটি দল ইনানি অভয়ারণ্য থেকে মনখালি, শাপলাপুর হয়ে শিলখালি দিয়ে টেকনাফ অভয়ারণ্যে আসে, কিছুদিন থেকে আবার চলে যায়। আর অন্য একটি দল মায়ানমার সীমান্ত অতিক্রম করে গুনধুম দিয়ে উখিয়ার টিভি উপকেন্দ্রের পাশ দিয়ে হোয়াইকং হয়ে টেকনাফ অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে। এটি বেশ বড় দল এবং বছরে দুইবার ধান পাকার সময়ে অভয়ারণ্য সহ সম্পূর্ণ দক্ষিণ কক্সবাজার বনাঞ্চলে ঘুরে যায়। অপরদিকে হিমছড়িতে যে হাতির দল দেখা যায় সেগুলি রাজারকুল, রামু, নাইখংছড়ি, বাইশারি, ভোমারিঘোনা হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে বা মায়ানমারের দিকে আসা যাওয়া করে।

২০১৭ সালে মায়ানমার থেকে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরনার্থী টেকনাফে প্রবেশ করে। এদের সবাইকে উখিয়া টিভি উপকেন্দ্রের আশেপাশের আগের রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের সাথে রাখা হয়। এতে করে উখিয়া থেকে মধ্যহ্নিলা পর্যন্ত পুরো হাতির চলাচলের যায়গাটি পরিনত হয় রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে। ২০১৮ সালে মায়ানমার গুনধুম এলাকায় তাড়কাটা বেড়া দিয়ে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এতে করে হাতির দীর্ঘদিনের চলাচলের পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। মায়ানমার থেকে আসা হাতি গুলি শরনার্থী ক্যাম্পের দক্ষিণাংশে হোয়াইকং, হ্নিলা, মধ্যহ্নিলা আর টেকনাফ অভয়ারণ্যের বনাঞ্চলে আটকে যায়। অপর দিকে ২০১০ সাল থেকে রাজাপালং এবং জালিয়া পালংএ জনবসতি বাড়তে থাকে যা ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পর ভয়াবহ অবস্হা ধারন করে। এতে করে ইনানি অভয়ারণ্য থেকে হাতি গুলি যে পথে রেজু খাল পর্যন্ত যাতায়াত করতো তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। তাই ২০১৭ এর পর ইনানি- টেকনাফ কেন্দ্রিক বনাঞ্চলে হাতি গুলি আটকা পরে। আর তখন থেকেই শুরু হয় এ অঞ্চলে হাতি হত্যার মহোৎসব। এ এলাকায় যত হাতি মারা পরেছে তার বেশীর ভাগই বৈদ্যুতিক তারে পেঁচিয়ে। পরিকল্পিত ভাবে হাতির চলাচলের পথে আর পাহাড়ের কিনারায় বৈদ্যুতিক তার দিয়ে বেড়া তৈরি করে হাতি গুলিকে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকটি হত্যা করা হয়েছে গুলি করে। যদিও IUCN-বাংলাদেশ Elephant Response Team গঠনের মাধ্যমে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কিছুটা সফল হয়েছে কিন্তু তাতেও এ এলাকায় হাতি হত্যা বন্ধ হয়নি।

অপরদিকে হিমছড়ি, রামু আর নাইক্ষংছড়ি হয়ে আসা যাওয়া করা হাতি গুলির সমস্যা একটু ভিন্ন। এ হাতি গুলির জন্য রাজারকুল রিজার্ভ ফরেস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজারকুল হয়েই এরা মায়ানমার বা পার্বত্য চট্টগ্রামে আসা যাওয়া করে। অথচ রাজারকুল রিজার্ভ ফরেস্টের বিশাল একটি অংশে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে সেটি হাতির নিয়মিত চলাচলের পথের ঠিক উপরে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক সংস্থা IUCN বাংলাদেশ এবং স্হানিয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে Asian Elephant Specialist Group এর এক ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয় কক্সবাজারে। এ এলাকায় হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরশনে এ ওয়ার্কশপ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা উঠে আসে। এসবের মধ্যে একটি ছিলো হাতির আগমন আগে থেকে জানা ও স্হানিয়দের সতর্ককরনের জন্য হাতির গলায় রেডিওকলারের ব্যবহার, যে পদ্ধতির মাধ্যমে হাতির গতিবিধি বা অবস্থান জানা যায়। রেডিওকলার বিশ্বব্যাপি একটি প্রচলিত কার্যকরী পদ্ধতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে IUCN বাংলাদেশ, বন বিভাগ, UNHCR এবং স্হানিয় প্রশাসনের মিলিত প্রচেষ্টায় রাজারকুল এলাকায় বিচরনকারী একটি হাতিকে রেডিও কলারিংএর উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০২২ সালে IUCN বাংলাদেশ এ এলাকার হাতির চলাচলের বিশদ তথ্য সংগ্রহের জন্য অত্যন্ত অত্যাধুনিক এ গবেষনা প্রকল্প হাতে নেয়। ঐ গবেষনার অংশ হিসেবে এ এলাকার একটি হাতিকে রেডিও কলার পরানো হয়। বন্যহাতির গলায় রেডিওকলার পরিয়ে এবং রেডিও ট্রাকিং এর মাধ্যমে হাতির অবস্হান নিরুপনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য শ্রীলংকা থেকে Dr Prithiviraj Fernando এর নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি গবেষক দল বাংলাদেশে আসেন। তাঁরা শ্রীলংকা সহ এশিয়া ব্যাপী বিভিন্ন দেশে ১০০টিরও বেশী হাতিকে রেডিওকলার পরিয়েছেন। এ ব্যাপারে বন বিভাগের কর্মকর্তা এবং সাফারি পার্কের ভ্যাটেরিনারি বিশেষজ্ঞ সহ একটি ট্রেনিং কর্মসূচীর আয়োজন করা হয় এবং সকলের সমন্বয়ে বন্যহাতির গলায় রেডিওকলার পরানোর উদ্যোগটি নেয়া হয়।

২০২২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কুয়াশা মোড়া ভোরে রাজারকুল বিটের বনে প্রথম হাতিটিতে ডার্ট করার জন্য গিয়ে মারক্সম্যান (যিনি নির্ভুল ভাবে বিশেষ ভাবে তৈরি বন্দুক দিয়ে ডার্ট নিক্ষেপে দক্ষ) Mr. Chinthaka Pathirana ফিরে আসেন হাতিটিকে অজ্ঞান না করেই। কারণ তিনি দেখতে পান ঐ হাতিটির সামনের ডান পায়ে গুলির আঘাত থাকায় হাতিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল । তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানান যে এই হাতিটিতে যে ধরনের সংক্রমণ দেখেছেন তাতে তিন মাসের মধ্যে হাতিটি মারা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। তাই তিনি হাতিটিকে ট্রাঙ্কুলাইজ না করেই ফিরে আসেন। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত ছিল, কারন অসুস্হ হাতিটিকে ডার্ট করা হলে অনেক সময়ে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। প্রথম হাতি পাওয়ার তিন ঘন্টা পরে আরেকটি হাতি পাওয়া যায়। হাতির আকৃতি, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করেই বিশদ আলোচনার পরই হাতিটিকে রেডিও কলার পরানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই সবাই উদ্বিগ্ন, অনেক দিনের প্রস্তুতি, হাতির দলকে মাসের পর মাস পর্যবেক্ষণ আর গতিবিধি অনুসরণ করে দেখে রাখা। আর এর সব কিছুই করেছে IUCN এর একদল তরুন গবেষক। জনাব সুলতান আহমেদ IUCN এর পক্ষ থেকে গত এক যুগ ধরে এ অঞ্চলের হাতি সংরক্ষনে কাজ করে আসছেন। তার তত্ত্বাবধানেই পুরো দলটি হাতিকে রেডিও কলার পরানোর এ কাজটি করছে। পুরো প্রক্রিয়াটিতেই হাতির সার্বিক নিরাপত্তাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। অনেক আলোচনার পর Mr. Chinthaka Pathirana হাতিটিকে ডার্ট করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ডার্ট করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতিটি অবশ হয়ে পরলে প্রথমেই তার একটি পা গাছের সাথে বেঁধে ফেলা হয় নিরাপত্তার খাতিরে। তারপর একটি কালো কাপড় দিয়ে হাতির চোখ ঢেকে দিয়ে হাতির শারীরিক অবস্থা নিরূপণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে হাতির পায়ের পাতায় আঘাত জনিত ব্যাপক ক্ষত আছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতযুক্ত প্রাণীকে রেডিও কলারিং করা যায় না বিধায় এনটি ডট দিয়ে হাতিটিকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং পরক্ষনেই হাতিটি সুস্থ অবস্থায় বনে ফিরে যায়। এটির পায়ের পাতার সংক্রমণ ছিল গুলির কারণে। তৃতীয় একটি হাতিতে রেডিও কলারিং পরানো হয় এবং সফল ভাবে এ গবেষণা চলছে। রেডিও কলারিং সংক্রান্ত এত দীর্ঘ কাহিনীটি উল্লেখ করলাম একারণে যে এ এলাকার হাতি গুলির অবস্থা কিছুটা বুঝানোর জন্য। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ এলাকাতে যত হাতি মারা গিয়েছে তার সবই চোরা শিকারীদের গুলিতে মারা গিয়েছে। যে অল্প কয়েকটি হাতি এখনো এ এলাকায় আছে সেগুলিও চোরা শিকারীদের গুলিতে মারা যাচ্ছে বা আহত হয়ে আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রশ্নের কোন উত্তর পাইনি যে এত চোরা শিকারী কোথা থেকে আসছে? ২০১০ এর আগে তো এ এলাকায় গুলি করে হাতি মারার তেমন কোন খবর পাওয়া যেত না।

অপর দিকে চুনতি- মেধাকচ্ছপিয়ার হাতি গুলির সমস্যা প্রধানত রেললাইন কেন্দ্রিক। চুনতি অভয়ারণ্যটি এ এলাকার হাতির জন্য একটি hub বা সংযোগ স্থান হিসাবে কাজ করে। দুধপুকুরিয়া-ধোপাছড়ির কয়েকটি হাতির দল সাঙ্গু নদী অতিক্রম করে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের পশ্চিম দিয়ে টঙ্কাবতি হয়ে সাতগড় পর্যন্ত আসে। অপর দিকে লামা-আলিকদম থেকে আজিজ নগরের পূর্বের পাহাড়ি পথে কিছু হাতি সাতগড় আসে। সাতগড় থেকে এরা একটি নির্দিষ্ট পথে চুনতি অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে। বেশ কিছুদিন চুনতি-হারবাঙ্গ-পুইছড়ি-বাঁশখালি-আনোয়ারার পাহাড়গুলিতে থেকে আবার ফিরে যায়। চুনতি অভয়ারণ্যের ভিতরে এবং আশেপাশে প্রচুর ধান চাষ হয়। এই ধানই হাতির প্রধান আকর্ষণ। চুনতির আশেপাশে যেমন জনবসতি বেড়েছে তেমনি হাতির চলাচলের রাস্তায় সর্বত্রই বিক্ষিপ্ত ভাবে গড়ে উঠেছে জনবসতি।

সাঙ্গু নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত হাতির আবাস স্থল ও দৈনন্দিন চলাচলের পথে যে কয়টি বড় স্থাপনা হয়েছে তার সব কটিতেই হাতি সংক্রান্ত জটিলতা চলছেই। এই পুরো এলাকা জুড়ে দোহাজারি থেকে যে রেল লাইনটি গুনধুম পর্যন্ত গিয়েছে সেই রেল লাইনটি বহু যায়গাতেই হাতির চলাচলের পথ ও করিডোরের উপর দিয়ে গিয়েছে। অথচ এ এলাকার হাতির চলাচলের উপর প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এসব স্থাপনা তৈরি করার সময় সামান্য এদিক ওদিক করে করলেই হাতির সাথে সংঘাত অনেকাংশে এড়ানো যেতো। যেমন দোহাজারি -কক্সবাজার রেল লাইনটি লোহাগড়া উপজেলায় আসার পরে পশ্চিম দিকে ঘুরিয়ে চুনতি অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি যদি চট্টগ্রাম - কক্সবাজার পাকা রাস্তার পুব দিক দিয়ে সাতগড় দিয়ে নিয়ে যাওয়া হত তাহলে হাতির অন্তত ৪ টি চলার পথ ও ২ টি করিডোরকে পাশ কাটানো যেতো। একই ভাবে রেল লাইনটি মেধাকচ্ছপিয়া অভয়ারণ্যের ঠিক মাঝ বরাবর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অথচ মাত্র ৮০০ গজ পশ্চিমে চেপে গেলেই একটি গাছও কাটা পড়তো না বা হাতির চলাচলের পথ পাশ কাটানো যেতো। অথচ IUCN এর Asian Elephant Specialist Group এবং IUCN Connectivity Conservation Specialist Group এর বেশ কয়েকজন সদস্য এ দেশে থাকার পরও কাউকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কখনোই যুক্ত করা হয়েছে বা তাঁদের মতামত নেয়া হয়েছে বলে আমার জানা নাই। এ ছাড়াও ২০১৬ সালে IUCN-বাংলাদেশ ও বনবিভাগ হাতির চলাচলের পথের যে বিশদ এটলাস তৈরি করেছে অথবা ২০১৮ সালে হাতির জন্য যে ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করেছে সেগুলির কোন প্রতিফলনই দেখা যায় না এই রেল লাইন তৈরিতে। একই ভাবে রামুতে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে সেটি যদি বর্তমান অবস্থান থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে করা হতো তাহলে এখন যে সমস্যাটি হচ্ছে সেটি হয়তো হতো না। রাষ্ট্রীয় নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি বড় স্থাপনার তৈরির সিদ্ধান্তের পূর্বে ঐ স্থাপনার কারণে পরিবেশের উপর প্রভাবের সম্ভবতা (EIA) যাচাই করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে এসব স্থাপনা তৈরির আগে কি এই সম্ভবতা যাচাই করা হয়েছিল? যদি করা হয়ে থাকে তাহলে দায়িত্বে কারা ছিলেন ? কি ছিল ঐ রিপোর্ট গুলিতে? হাতির চলাচলের বিষয় গুলি কি সেখানে ছিল? যদি থেকে থাকে সে গুলি মানা হয়েছিলো কিনা? এগুলি দেখার দায়িত্ব কি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলি এড়াতে পারে? যে সব কোম্পানির মাধ্যমে এ সব স্থাপনার ফলে পরিবেশের উপর প্রভাবের সম্ভবতা (EIA) যাচাই করা হয়েছে তাদের যদি কোন গাফিলতি থাকে তবে পুনর্বিবেচনা করে আইনের আওতায় আনা হোক।

আশির দশকে ড. রেজা খান, ড. ফরিদ আহসান, ড. আনিসুজ্জামান খান এবং ড. এ.এস.এম রশীদের হাতি সংক্রান্ত গবেষণা গুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে কক্সবাজার বনাঞ্চলের হাতি সম্পর্কে বিশদ ভাবে জানা যায়। ২০০৪ সাল থেকে পরবর্তী দুই যুগে IUCN এর হাতি গবেষণা থেকে এ এলাকাতে হাতির সার্বিক পরিস্থিতি জানা যায়। আমার বন্যপ্রাণী ল্যাব থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্র/শিক্ষার্থী হাতি নিয়ে এমএসসি পর্যায়ে বিশদ গবেষণা কাজ করেন। ১৯৯২ সালে জনাব আবদুল্লাহ আল যাবেদ, ১৯৯৬ সালে জনাব তাপস রঞ্জন চক্রবর্তী, ২০০৩ সালে জনাব আব্দুল আজিজ এবং জনাব তারিকুল ইসলাম, ২০০৯ সালে সৈয়দ মাহমুদুর রাহমানের হাতি সংক্রান্ত গবেষণা গুলিতে বাংলাদেশের হাতি বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার হাতি সম্পর্কে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের তথ্যই পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০০৬ সালে ইতালির সিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের দেশের হাতি নিয়ে পিএইচ ডি গবেষণা সম্পন্ন করেন ড. মোঃ মহসিনুজ্জামান চৌধুরী এবং ২০১২ সালে নরওয়ের University of Science and technology (NTNU) থেকে ড. রায়হান সরকার তাঁর পিএইচ ডি গবেষণায় এ অঞ্চলের হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন । বন বিভাগের SRCWP প্রকল্পে হাতি নিয়ে গবেষণায় অনেক তথ্য উঠে আসে। ২০১৮ সালে বন অধিদপ্তর এবং IUCN-বাংলাদেশ যৌথ ভাবে বাংলাদেশের হাতির ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে। এ ছাড়াও দেশের বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠনে হাতি সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের হাতি সংক্রান্ত গবেষণা লব্ধ বিশদ তথ্য থাকার পরও রাষ্ট্রীয় ভাবে কখনোই এ তথ্য ব্যবহার করে এ এলাকার হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না আমার অন্তত জানা নেই।

প্রকৃতপক্ষে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে বা এ সংক্রান্ত যে কোন উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পর্যালোচনা ও দিকনির্দেশনা প্রদানের আইনগত অথরিটি হচ্ছে বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড এবং বিশেষ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক কমিটি। আমাদের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের ধারা-৩ এবং ধারা-৪ এ এই বোর্ড ও কমিটি তৈরি এবং এর কার্যপরিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে মন্ত্রণালয়ের সুবিধার্থে ২০১৭ সালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় যেভাবে এই দুটি কমিটি তৈরি করে তা আমাদের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন (এই দুইটি কমিটির গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে)। ২০১৭ পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ডের সভা বছরে এক বারের বেশী হয়েছে বলে আমার জানা নাই অথবা বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত কোন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ বোর্ডের কোন সভা হয়েছে বলেও আমার জানা নাই। অথচ বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্তের আগে এ সভায় আলোচনার বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট ভাবে বলা আছে।

গত তিন দশকে হাতির এই এলাকার আবাসস্থল গুলি যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি পুনরুদ্ধার প্রায় অসম্ভব। এই এলাকার বনের বিপুল অংশই অবৈধ ভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় হাতির চলাচলের পথ সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। বনের ভিতরে খাবারের স্বল্পতার চাইতেও বন লাগোয়া নিচু জমিতে ধান চাষের ফলে হাতি সহজপ্রাপ্য খাবারের জন্য ধান ক্ষেত গুলিতে নেমে আসছে, যা হাতি মানুষ দ্বন্দ্বের আরো একটি কারণ। আগামী মাসে (নভেম্বরে) ধান পাকা শুরু হবে। দেশের হাতির সব গুলি আবাসস্থলের আশেপাশের ধান ক্ষেতে হাতিরা ধান খাবারের জন্য আসবেই এবং এসময়ে অনেক হাতিই মারা পরবে স্থানীয়দের হাতে। গত কয়েক বছর থেকে এমনটাই হয়ে আসছে। এটি কিভাবে সমাধান হবে জানিনা, তবে বনের দখলকৃত যায়গা উদ্ধার করা গেলে এবং বনে লাগোয়া নিচু জমিতে চাষাবাদ বন্ধ করা গেলে এ সংঘাত হয়তো কিছুটা কমবে। রাজাপালং আর জালিয়াপালংএর হাতির চলাচলের রাস্তা এখন আর পুনরুদ্ধারের সুযোগ আছে বলে মনে হয়না। তবে উখিয়ার গুনধুমের হাতির চলাচলের পথটি যদি খুলে দেয়া যায়, মায়ানমার কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে হাতির আন্তদেশীয় চলাচল শুরু করা যায় এবং সে সাথে চলমান হাতি হত্যা থামানো যায় তাহলে হয়তো টেকনাফের বনাঞ্চলে টিকে থাকা হাতি গুলি কোন ভাবে বেঁচে যাবে। একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমরা হাতির আবাসস্থলে গিয়ে সব ধরনের স্থাপনা করেছি, হাতিরা আমাদের আবাসস্থলে আসেনি, যার কারণে হাতিরা আজ ভয়ানক ভাবে বিপর্যস্ত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে সার্বিক বিষয়টিকে দেখতে হবে নতুবা এ দশকের শেষে টেকনাফ অভয়ারণ্যে আর কোনও হাতি থাকবে বলে আমার মনে হয় না।

-ড মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ
-২৫ অক্টোবর ২০২৪

আমাদের WRC আজ থেকে ঠিক ২০ বছর  (৪-১০-২০০৪)  আগে এই দিনে  তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুস্তাহিদুর রহমান উদ্বোধন করেন জাহা...
04/10/2024

আমাদের WRC
আজ থেকে ঠিক ২০ বছর (৪-১০-২০০৪) আগে এই দিনে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুস্তাহিদুর রহমান উদ্বোধন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের Wildlife Rescue Center (WRC), বাংলাদেশে প্রথম এ ধরনের কোন সেন্টার। যদিও এর শুরুটা করেছিলাম আরও বেশ কয়েক বছর আগে।
১৯৯৯ সালে পিএইচডি শেষ করে যখন দেশে ফিরে বিভাগে যোগদান করি তখন বন্ধ হয়ে যাওয়া আমার বন্যপ্রাণী গবেষনাগারটি আবার শুরু করার চেষ্টা করি। ঐ সময়ে বিভাগের বন্যপ্রাণী শাখায় পাঠদান করতাম শুধুমাত্র আমি আর ড. সাজেদা বেগম নাতাশা (আমার সহধর্মিণী), বিভাগের অন্যান্য কোর্সে পাঠদানের সাথে সাথে বন্যপ্রাণী শাখার সবগুলি কোর্সও নিতে হতো আমাদের আর তার সাথে একটি ছোট রুমকে ল্যাবে পরিনত করে ছাত্রছাত্রী নিয়ে গবেষনা চালিয়ে যাওয়া। ঐ সময়ে বেশ কয়েকটি লিংক প্রোগ্রাম তৈরী করি বিদেশী কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আর ছাত্রদের গবেষনায় সম্পৃক্ত করার মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছিল সময় গুলি। সময়ের সাথে সাথে গতানুগতিক বন্যপ্রাণী গবেষণার বাহিরে গিয়ে পপুলেশন জেনেটিক্স, জুনোটিক ডিজিস এবং মাঠ পর্যায়ে বন্যপ্রাণীর বংশবিস্তার নিয়ে গবেষণা করার তাগিদও বোধ করতে থাকি। ঐ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশের লোকালয়ে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী গ্রামবাসীদের হাতে মারা পরতো বা আহত হতো। আহত বন্যপ্রাণী গুলিকে উদ্ধার করা আর ওদের নিয়ে গবেষনার সুযোগ থাকায় তখনই মাথায় আসে রেসকিউ সেন্টার করার আইডিয়াটি।
২০০৩ এর শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করি আমার বন্যপ্রাণী গবেষণাগারের জন্য কিছু যায়গা বরাদ্দের। বিশ্ববিদ্যালয় কোন ধরনের আর্থিক সহায়তা দেবে না এ শর্তে বন্যপ্রাণী গবেষনাগারের জন্য আমাকে ৫ একর যায়গা বরাদ্দ দেয়। যায়গাটি দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিনের শেষ প্রান্তে কয়েকটি গাছ সহ ধুধু মাঠ। ছিলো না কোন যাওয়ার রাস্তা বা গিয়ে ঠাঁই নেয়ার কোন ডেরা। জাহাঙ্গীরনগরের প্রধান রাস্তা থেকে তিন হাজার ফুট কাদা মাড়িয়ে যেতে হতো ঐ যায়গায়। কিন্তু তাতেও আমি বেজায় খুশি ছিলাম, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা গুলি করতে পারবো সে আশায়।
আমি তখন ক্যাম্পাসে থাকি। বিভাগে কাজ শেষ করে পুরোটা সময় আমি আর অধ্যাপক সাজেদা ঘুরে ঘুরে দেখতাম WRC এর পুরো জায়গা, প্ল্যান করতাম এই জায়গাটাতে কিভাবে গবেষণা কেন্দ্র করা যাবে, যদিও পুরোটাই করতে হবে নিজের টাকায়। নিজেদের জন্য বাড়ীঘরের চিন্তা বাদ দিয়ে যা কিছু সঞ্চয় ছিলো তা নিয়ে নেমে পড়লাম মাঠ পর্যায়ে ল্যাব তৈরীতে ।
প্রথমেই ঠিক করলাম পুরো যায়গাটি জাহাঙ্গীরনগরের আদি প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে রেখে দিবো। আমি প্রায় সময়েই বলতাম বনের যায়গায় গাছ না লাগিয়ে যদি রেখে দেওয়া যায় তাহলে প্রাকৃতিক ভাবেই বন তৈরী হবে, শুধু মানুষের কোন কর্মকান্ড না থাকলেই হলো। আর এটা প্রমানের সুযোগও পেয়ে গেলাম। তাই প্রায় এক একর যায়গা রেখে দিয়েছিলাম যেখানে কোন ধরনের গাছ লাগাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তী ৩ বছর দেশের যেখানেই গিয়েছি সেখান থেকেই দেশজ ফলদ ও বনজ গাছ এনে লাগিয়েছি WRC-র বাকি যায়গাতে। গত দুই দশকে ঐ এক একর যায়গায় প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠা গাছগাছালি আমার বিশ্বাসটাকেই প্রমাণ করেছে। এখন গেলে কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না যে এ যায়গাটি এক সময়ে সম্পূর্ণ ধুধু মাঠ ছিলো।
স্থানীয় মানুষের গরু চড়ানো বন্ধ করতে প্রথমেই বেড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঐ যায়গার একপাশে BPATC এর দেয়াল থাকায় অন্য পাশ গুলিতে কাটাতারের বেড়া দেয়া শুরু করি। বেড়ার পাশে খেজুর, তালের চারা আর ঘন করে বেত লাগিয়ে ছিলাম প্রাকৃতিক বেড়া তৈরীর জন্য।
২০০৪ সালের মে মাসে কনসালটেন্সির একটা চেক পেলাম (এখনকার তুলনায় হয়তো খুবই সামান্য টাকা কিন্তু তখনকার জন্য অনেক টাকা)। বউকে বললাম এ টাকাটা দিয়ে WRC-তে একটা ছোট ল্যাব করতে চাই যেখানে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ের কাজ গুলিতে সুবিধা হবে। শুরু হয়ে গেলো ছোটখাটো কিছু একটা করা। ভিটেমাটি পাকা করে দুই ফুট দেয়াল দিয়ে তার উপরে টিনের বেড়া আর লাল টালির একটি ঘর তৈরীর পরিকল্পনা করে ফেললাম। বিভাগের পিয়ন মামুন আজিজ স্হানিয় ভাবে কাঠের ঘর তৈরী করতো। ও দায়িত্ব নিলো ঘরে টালি লাগানো আর সার্বিক ভাবে দেখভালের। টালি দিয়ে বানাবো শুনে যাদুঘরের এথনোগ্রাফি বিভাগের তৎকালিন কীপার ও হেড ড. জিনাত মাহরুখ বানু (খুশবু ভাবী) জানালেন ধামরাইয়ের কুমার পাড়ায় তৈরী হয় বিশেষ ধরনের টালি। ব্যবস্হা করে ফেললাম টালির। টালির জন্য গিয়ে দেখি মাটি দিয়ে অনেক কিছুই তৈরী করে ওরা। তাই নিজে ডিজাইন করে আট ধরনের বন্যপ্রাণীর মুখ দিয়ে তৈরী করিয়ে নিলাম মাটির টেরাকোটা টাইলস। ল্যাবের দেয়ালে প্লাস্টারের পরিবর্তে লাগানোর জন্য।
সমস্যা দেখা দিলো ইট-বালি সহ সব নির্মান সামগ্রী যায়গা মত নেয়ার। ট্রাক এনে রেখে যেতো মীর মোশাররফ হোসেন হলের পাশে। সেখান থেকে ঠেলা গাড়ীতে তুলে নিয়ে আসতে হতো WRC-তে, সে এক ঝক্কি। তার উপর শুরু হয়ে গেলো বৃষ্টির মৌসুম। একবার সারা রাতে বৃষ্টির পর সকালে গিয়ে বসে আছি রাস্তার পাশে আর ভাবছি কিভাবে ইট গুলি নিয়ে যাবো। আমার ছাত্র হাসান (বর্তমানে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান) এসে বলল স্যার নৌকা দিয়ে নিয়ে গেলে সহজ হবে। হাসান তখন এম.এস-সির থিসিসের কাজ করছিলো আমার সাথে। পাশের জয়পাড়া গ্রাম থেকে একটা ডিংগি নৌকা যোগার করে নিয়ে এলো হাসান। শুরু হলো নৌকা দিয়ে সব কিছু পার করা, নিজেরাই ইট টেনেছি, নৌকা বেয়েছি খরচ কমানোর জন্য, আর হাসান মহা উৎসাহে লেগে থাকলো কাজে। সেই থেকে গত বিশ বছর ড. হাসানই দেখে রেখেছে WRC-কে।
২০০৪এর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে সবুজ বেড়ার লাল টালির ল্যাবটি তৈরী শেষ হলো। এর সাথে পাখির জন্য এভিয়ারি আর ভোঁদড়ের জন্য একটি স্হাপনাও শেষ করেছিলাম। এভিয়ারিটি যখন শুরু করি তখন একদিন আমার পিএইচডি ছাত্রী হোমায়রা তাসনিম খান এসে বলল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে যৎসামান্য স্কলারশিপের টাকা পেয়েছে সেটি তিনি এভিয়ারিতে ব্যয় করতে চান। খুব অভিভূত হয়েছিলাম। একই ভাবে পরবর্তিতে ২০০৭/৮ এ আমার এমফিলের ছাত্র আজিজ ও হাসান (এখন ওরা বিভাগের শিক্ষক-অধ্যাপক ডঃ আব্দুল আজিজ ও অধ্যাপক ডঃ কামরুল হাসান) দুজনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত স্কলারশিপের টাকা দিয়ে ল্যাবের বর্ধিতাংশটি করেছিলো। গত দুই দশকে বহুবার সুযোগ আসলেও কখনো WRC-কে দেখিয়ে কোন প্রকল্প তৈরী করিনি, কারন সবসময়ই মনে হয়েছে নিজেদের প্রচেষ্টায় তৈরি অন্তত একটি ল্যাব থাকুক, একান্তই ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি গর্বের যায়গা প্রতিষ্ঠিত হোক যেখানে আমার ছাত্রছাত্রীরা তাদের গবেষনা করে যেতে পারবে নিশ্চিন্তে।
WRC-টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এতটাই প্রত্যন্ত এলাকাতে যে উদ্বোধনের আগে ঐ এলাকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই যেতো না। এমনকি কারো ধারনাই ছিলনা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন একটি যায়গা আছে। সুযোগ হওয়ার পরও আমি কখনো চাইনি যে WRC-তে যাওয়ার রাস্তাটি পাকা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অংশ অন্তত আদি পরিবেশে থেকে যাক । আর তাই গত বিশ বছরে এ এলাকাটি তৈরি করতে পেরেছি তার আদি রূপে। দিনের বেলাতেও গন্ধগোকুল, বন বিড়াল বা শিয়ালের দল ঘুরে বেড়ায় এখানে। সাপ ব্যাঙতো আছেই। প্রায় একশ প্রজাতির পাখি বছরের বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় এখানে, এদের মধ্যে ২১ প্রজাতির পাখি বাসা করে WRC-তে। শীতে সরালি সহ দেশীয় জলচর পাখির সাথে পরিযায়ী পাখির মিলন মেলায় পরিনত হয় WRC-র লেক বা জলাশয়টি। ধুধু মাঠকে কিভাবে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে তুলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্হলে রূপান্তর করা যায় তার একটি উদাহরন এই WRC।
২০০৫ সালে জাপানের কিওটো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইমেট রিসার্চ ইন্সিটিটিউট আর ২০০৬ সালে University of Washington, USA এর সাথে যৌথ গবেষনার MOU করি। ঐ গবেষনা গুলির একটি অংশে রেখেছিলাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্হাপনা ও সংরক্ষনে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মাঠ পর্যায়ে টেনিং এর ব্যবস্হা। ঐ সময়ে প্রতিবছরে শীতে Dr. Randall C Kyes এবং Dr. Lisa Jones-Engel ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর Dr. Yoshi Kawamoto আসতেন কিওটো ইউনিভার্সিটি থেকে ছাত্রছাত্রীদের এ ট্রেনিং দিতে। ২০০৬ থেকে ২০১৩ এই আট বছরে ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রীকে এ ট্রেনিং দিতে পেরেছিলাম। আমার ছাত্র ও সহকর্মী এবং পরবর্তীতে USA-এর Delta State University র সহযোগী অধ্যাপক ড. এএইচএম আলী রেজা WRC-র সাথে লিঙ্ক প্রোগ্রাম করে ছাত্রছাত্রীদের ট্রেনিংএরও ব্যবস্থা করেছে একাধিক বার। এসব ট্রেনিং এ অংশ নেয়া অনেকেই আজ দেশে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সুনামের সাথে বন্যপ্রাণী গবেষণার কাজ করে যাচ্ছে। আসলে আমি খুবই ভাগ্যবান যে আমার সব ছাত্রছাত্রীই নিজেদের গবেষনা কাজ নিরলস ভাবে করে গিয়েছে, আমাদের বন্যপ্রাণী গবেষনাকে সমৃদ্ধ করেছে।
বিগত দুই দশকে দেশী বিদেশী মিলিয়ে বহু গবেষক ও বরেন্য ব্যক্তিত্ব সম্পৃক্ত হয়েছে WRC-তে, বেশীর ভাগই গবেষনার জন্য কিন্তু কেউ কেউ শুধু দেখে যাওয়ার জন্যও। নোবেল লরিয়েট স্যার বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল যখন আমাদের দেশে এসেছিলেন তখন তাঁর ঘুরে দেখার লিস্টে WRC-ও ছিলো, আর তিনি এসে লেকের পাড়ে চুপচাপ বসে সরালির কিচিরমিচির উপভোগ করেছিলেন। দেশে যত বিদেশী কুটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ পাখি পর্যবেক্ষন করেন তাঁরা প্রতি শীতে একবার হলেও ঘুরে যাবেন এখানে। দেশের বিভিন্ন যায়গার বার্ড ওয়াচার বা পাখি পর্যবেক্ষকরা তো আসেনই। নাট্যতত্ব বিভাগের অধ্যাপক সেলিম আল দিন স্যার প্রতিদিন বিকালে হাঁটতেন। মাঝে মাঝে চলে আসতেন WRC-তে, তখন মাত্র তৈরী করার পর্যায়ে। সাপ সম্পর্কে স্যারের খুব আগ্রহ ছিলো, WRC-র লেকের ঝোপে রোদ পোহানো সাপ দেখিয়ে অনেক কিছু জানতে চাইতেন। স্যারের সাথে সে সময়কার আলাপ গুলি, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্যারের দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো কখনোই জানা হতো না যদি WRC-তে স্যারকে না পেতাম।
আসলে ঢাকার এত কাছে এধরনের একটি পরিবেশ কেউ কল্পনাও করতে পারে না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-কর্মকর্তা আর আশেপাশের লোকালয়ে বসবাসকারী মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার লোকের দৈনন্দিন চলাচল, প্রায় সাতশ একরের ছোট এই যায়গায় এত মানুষের মাঝেও মাত্র ৫ একর যায়গা এবং একটি লেক নিয়ে WRC এখন এ এলাকার বন্যপ্রাণীর শেষ আশ্রয়স্হল।
তবে আজকের এ পর্যায়ে আসতে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে WRC-কে যা এখানে না বলাই থেকে যাক। আর্থিক সংকট একটি বিষয় কিন্তু তার চাইতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন উটকো ঝামেলাও ছিলো। তারপরও আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি কারন এ দীর্ঘ সময়ে দলমত, বিভাগ, সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে অনেকেরই অকুন্ঠ সহযোগীতা পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক বিশেষ করে অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান (তৎকালীন ভিসি), অধ্যাপক এম কবির (পরিসংখ্যান বিভাগ), অধ্যাপক ড. এনামুল হক (ইতিহাস বিভাগ) , অধ্যাপক ড. রফিকুন নবী (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান (ইতিহাস বিভাগ), অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক (প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ), অধ্যাপক ড. মফিজুল কবির (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ), অধ্যাপক ড. শামছুল আলম ( সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), অধ্যাপক ড. সীমা হক (প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ) সহ অগণিত সহকর্মীদের সমর্থন ও সহযোগীতা পেয়েছি পুরোটা সময়। আর এ সাথে আমার জীবনসঙ্গিনী অধ্যাপক ড. সাজেদা বেগমের সার্বক্ষণিক নীরব সক্রিয় সহযোগীতায় WRC প্রতিষ্ঠা করেছিলাম যা আজ বিশ বছর পূর্ণ করলো। আশা করি WRC-র ভবিষ্যৎ দেখে রাখবে আমাদেরই ছাত্রছাত্রীরা।
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের কাজের বাহিরেও WRC-তে সময় দিয়েছিল, সম্পৃক্ত হয়েছিল বিভিন্ন ভাবে WRCকে আজকের অবস্থায় নিয়ে আসায়। এ মুহূর্তে যাদের নাম মনে পড়ছে - মোঃ কামরুল হাসান দোলন, পদ্ম কুমার তনচংগা, মোঃ হাসিবুর রহমান, সেলিনা কাজী, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিভূতি ভুষণ মিত্র, সুবীর দত্ত, আম্মি, হুমায়ুন কবির, মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, রিপন, মোঃ আতিকুজ্জামান বাবু, অনির্বান সরকার, শেখ মোঃ রবিউল আলম, শারমীন আখতার, সাদিয়া আফরিন সেতু, আশরাফ আহমেদ অনু, সৈয়দ মাহমুদুর রহমান, সানজিনা আফরিন সুমি, মোঃ মুশফিকুর রহমান, রোলান্ড নাথান মন্ডল, দুররে মাখনুন নবনি, সাকিলা নার্গিস ইভা, মোঃ সারোয়ার আলম দিপু, কামরুন্নাহার আদিয়াত, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ নোমান, শায়লা আক্তার, মোঃ শামীম আহমেদ, মোমিনুল ইসলাম নাহিদ, ফারহানা আক্তার, দিলীপ কুমার দাস, মোঃ রোকনুজ্জামান, মোঃ সুলতান আহমেদ, সামিয়া ফারহানা সোমা, ঈশরাত জেবিন জাহান , সমীর সাহা, মিজানুর রহমান, জেরিন আজমীরী, বেলায়েত হোসেন বাদল, মোহর আলী, আশীষ কুমার দত্ত, অনিক সাহা, নোমান আল মোক্তাদির, খাদিজা রওশন, সাখাওয়াত হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং মোঃ জাহিদুর রহিম অর্ণব।

- অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ

Address

Fulbaria

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bengal's WILD TALES posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Bengal's WILD TALES:

Videos

Share

Category

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর গল্প

এখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী নিয়ে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করছি- ড. মোস্তফা ফিরোজ, প্রফেসর, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত তিন দশকে বন্যপ্রাণী গবেষণায় আমার সম্পৃক্ততা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি সবার সাথে। এ পেইজে আমারই ধারণকৃত ভিডিওচিত্র বা আমার টিমের সদস্যদের ভিডিওচিত্র ছাড়া অন্য কোন মাধ্যম থেকে কোন ভিডিও ব্যবহার করা হয়না। বন্যপ্রাণী আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধিই আমার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় জানতে বা দেখতে চাইলে সে বিষয়টি উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।