19/01/2022
#প্রতিচ্ছায়া
পর্ব ৬ ও ৭
এয়ারপোর্টের পাশেই একটা ক্যাফে তে বসে আছে নীল আর ইনু!উহু...ইনিশা.....কিংবা ইনু!
নীলঃ আয়না অনেক জেদ করছিলো আসতে...বাট!এতো টা রাস্তা, মেয়েটার শরীর ভালো না তেমন,হাঁপিয়ে যাবে...তাই রেখে এসেছি....
ইনিশাঃ আমি কিন্তু ওকে দেখবো বলেই টাইম করেছি...
নীল চুপ করে থাকে...'চুপ করে থাকলে চলবেনা...বলতে হবে' বলে নিজেকে...
নীলঃ ইনু!
ইনিশাঃ হু!
নীলঃ তুই থেকে যা না...
ইনিশা নীলের চোখের দিকে তাকায়....ও বুঝতে পারে,ও খুব সহজেই নীলের চোখে তাকাতে পারছে...কিন্তু দুটো কারনের মধ্যে কোনটার জন্যে....বুঝতে পারেনা...
ইনিশাঃ বুঝি নি!
নীলঃ থেকে যা....আমার কাছে...মানে আমাদের কাছে...আয়নার কাছে....
ইনিশাঃ এ কথা গুলো ১২বছর আগে ভ্যালিড ছিলো,এখন আর হয়না এটা....
নীলঃ চাইলে তো সবই হয়,ইনু....ইনু?
ইনিশাঃ আমি যে চাইনা....আমার বাচ্চাগুলোর জন্য আমাকে যেতে হবে.....
নীলঃ তোর ওখানে একটা সুন্দর সংসার আছে,না?
ইনিশাঃ হু!
দুজনের ই অনেক কথা থাকে...কিন্তু কেউ কিছু বলে না আর....
নীল একটা কার্ড বের করে ইনিশার দিকে বাড়িয়ে দেয়...
নীলঃএটা আয়না পাঠিয়েছে...তোর জন্যে!
ইনিশা কার্ড তা খুলে দেখে একটা আনাড়ি হাতে আঁকা একটা শাড়ি পরা মেয়ে,একটা ছেলে আর তাদের হাত ধরা একটা বাচ্চা!.... নীচে আবার মার্ক করে লিখা,মা আয়না বাবা....
ইনিশাঃ এটা তোর...নে!(ইনিশা ব্যাগ থেকে একটা ডায়রি বের করে নীলের সামনে দেয়)
নীল কে বিদায় দিয়ে প্রায় ৭/৮বছর পর ইনিশার এতো এতো কান্না পায়...যেন ভেতর থেকে জলোচ্ছ্বাস আঁচড়ে পরছে.....কিন্তু ইনিশা জানে,তার চোখে জল গড়াবে না....সে গড়াতে দেবে না....দুহাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রেখে নিজেকে সামলায়...
নীল কিছুক্ষণ চেয়ে চেয়ে প্লেন উড়ে যাওয়া দেখে....দ্যান ডায়েরি টা খোলে....
ডায়রিটা দেখতেই বোঝা যাচ্ছে বেশ পুরোনো... অনেকগুলো পেইজে পুরোনো কাগজের দাগ.....
এমন ডায়রি এখন আর দেখাই যায়না...আর এখানকার মানুষ ডায়রি ইউজ করতেও ভুলে গেছে মেইবি....
নীল ডায়রির প্রথম ক'টা পাতা উল্টায়... অনেকগুলো লেখা,কিন্তু সবই কলম দিয়ে খুব বাজে ভাবে কাটা!!এতোই বেশি যে,পড়া যাচ্ছে না...তবুও নীল চেষ্টা করলো....নাহ,,পারা যাচ্ছে না....ডেট খেয়াল করলো....আরেহ,,লেখাটা তো এখন থেকে প্রায় ১৯বছর আগের!!!!!
সে এভাবে উল্টে উল্টে প্রতিটা পেইজের কাটা লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করে...কিন্তু পারেনা....
হঠাৎ একটা লেখা দেখে,যেটা....কাটা থাকলেও লেখা বুঝা যাচ্ছে... লেখা টা এমন,,
' ভুবন মাঝি মুভি টা দেখতে দেখতেই যখন আমি বুঝি,আমি মুভি কম,তোমার চেহারা বেশি দেখছি স্ক্রিন এ,সম্ভবত তখনই বুঝি,তোমার জন্য আমার মনে অন্য একটা জায়গা হয়ে গেছে....ওইদিনের পর আমি মুভিটা দেখবো ভেবেছিলাম আবার,বাট আর দেখা হয়নি....তোমার কাছে......(মাঝের এ লেখাগুলা বোঝা যাচ্ছেনা আবার,কেটে দেওয়া অনেক বেশি করে)দ্যান শেষ লাইনটা আবার পড়া যাচ্ছে!
ওখানে একটা গান আছে,ওই গানটা তোমায় উৎসর্গ করলাম'
'কার জন্য লেখা এসব!!!' নীল ভাবতে থাকে...ভাবতে ভাবতে প্রতিটা পেইজ উল্টোয় ক্রমাগত....সব গুলো লিখা কাটা....একদম কিছুই বোঝা যাচ্ছে না....
এবার একটা লেখা পেলো.......যেটা কাটা হয়নি....মেইবি ইনু পেইজটা মিস করে গেছে...খেয়াল করেনি...ওখানে লেখা,,
'তুমি ডাকবে, তুমি বলবে আর আমি আসবোনা?এমনটা হয়???হয়না......'
এরপর আর কোনো লেখাই পড়া যাচ্ছে না....হুট করে খেয়াল করলো শেষ ক'টা পাতার লেখার প্যাটার্ন চেঞ্জ.... খুব সম্ভবত রিসেন্টলি লেখা হয়েছে!কারন এগুলো কাটা নেই!
'তার মানে ইনিশা এ ক'টা পাতা পড়ার জন্যেই আমাকে ডায়রিটা দিয়েছে!'....নীল পড়তে শুরু করে...
নিলেশ!!
তুমি আমার কাছে নীল আছো কিনা জানিনা...জিগ্যেস করিনি নিজেকে....অবাক হওয়ার কিছু নেই...আমি এই ডায়রিতে তোমাকে 'তুমি' করে ই লিখি....নিজের কিছু ব্যক্তিগত জিনিসের ক্ষেত্রে মানুষ সম্ভবত রিয়েল থাকে.....তাই আমিও এখানে তোমাকে তুমি বলেই স্বস্তি পাই....
আমার কোনো সংসার নেই নীল!আমি বিয়ে করিনি...বাচ্চাগুলো আমার অর্গানাইজেশনের....
ওইদিনের পর আমি বড্ড পাল্টে গেছি....কোনদিন??যেদিনের পর আমাদের আর দেখা হয়নি....যেদিন আমি তোমার সামনে এসে মাথা নত করে বলেছিলাম,' আমার জন্যে বিয়ের জন্য দেখছে.....তুমি বলেছিলে,'বাহ ভালো তো' অথচ আমি তোমার কাছে অন্যকিছু শুনতে চেয়েছিলাম....হ্যা,আমি মুখ ফুটে বলিনি....আমি আদৌ বলতে পারতাম ও না....আমার শুধু অপেক্ষা টা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না ওইদিনের আগে....তোমায় দোষ দিচ্ছিনা...তবে,তুমি আমাকে বুঝো বুঝো বলে, সবচেয়ে নিখুঁত ভাবে ভুল বুঝেছিলে...বললে তুমি আমার সাথে সহজ হতে পারতে না.....আমি কারো চলে যাওয়া দেখতে পারিনা....তাই তোমার আগে আমিই চলে গেলাম তোমার হাতের বাইরে...সবার থেকে দূরে....
এখন আর এসব আমায় নাড়া দেয়না....তবে অনেক দিন পর...আয়না'র মা ডাকটা আমাকে অনেক নেড়ে ফেলেছে....আমি এখানে থাকলে উইক হয়ে যাবো...আমি তা চাইনা....
এভাবে না থেকে একটা বিয়ে করো...তোমার নিজের জীবনটা গুছাও....আয়নার জন্য....
আয়নার থেকে পারলে আমার স্মৃতি গুলো মুছে দিও.....তুমি হয়তো আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে....আমি আসলে একবার এক দেশে থাকি.... সো ডোন্ট... যদি কখনো আমি আমার কাছে পরাজিত হই,আয়নার সাথে কথা বলতে নিজেই যোগাযোগ করবো....ব্যস এটাই.....প্রশ্ন করার স্বভাবটা চলে গেছে আমার!তাই হয়তো অনেক প্রশ্নই করা হয়নি...কিছু প্রশ্নের জবাব না জানাই বোধয় ভালো.....তুমি আমার দূরে পরে থাকা সবচেয়ে সুন্দর কিছু.......
ইতি ইনিশা (তবে ইনিশার নিচে একটা ু কার ছিলো কেটে দেওয়া,সম্ভবত ইনু কেটে ইনিশা লেখার চেষ্টা করা হয়েছে)
নীল এতোটাই থমকে যায় যে,চারপাশের পরিবেশ যে চাঞ্চল্যকর হয়ে আছে কোনো কারনে,খেয়াল করেনি....সবাই কি নিয়ে জানি বেশ বলাবলি করছে...