
14/02/2025
সংক্ষেপে শবে বরাতের সহীহ কথাগুলো—
১. শবে বরাত কি বিশেষ কিছু? এটি কি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
➤ জ্বী, এই রাতটি ফযিলতপূর্ণ; এর বিশেষত্ব আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবান (১৪ তারিখ দিবাগত রাত, অর্থাৎ শবে বরাত)-এর রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।' (সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, শায়খ আলবানি, আরনাউত্ব, আওয়ামাসহ মুহাদ্দিসগণ হাদিসটি সহিহ বা হাসান বলেছেন)
[ সুতরাং ক্ষমা পাওয়ার এত বড় একটা সুযোগকে ঘুমিয়ে থেকে হাতছাড়া করা উচিত নয়।]
২. এই রাতের কি বিশেষ কোনো আমল আছে?
➤ জ্বী না, সহীহ সনদে এই রাতের কোনো বিশেষ আমল নেই। যে কোন নফল আমল এই রাতে করা যেতে পারে।
৩. এই রাতে আমরা কী করব?
➤ যেহেতু সহিহ হাদিস অনুসারে এই রাতটি ফযিলতপূর্ণ সেহেতু এই রাতে আমরা
(১) নফল সালাত পড়তে পারি,
(২) সুন্নাহসম্মত বিভিন্ন যিকর করতে পারি,
(৩) দু'আ করতে পারি,
(৪) রাসূল (সা.) এর উপর দরুদ পড়তে পারি
(৫) তাওবাহ-ইস্তেগফার করতে পারি
(৬) দান-সাদাকাহ্ করতে পারি।
(৭) কাজা নামাযগুলো আদায় করতে পারি।
এসব নফল ইবাদত এই রাতে বৈধ ও মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে মুসলিম উম্মাহর প্রায় সকল আলেম একমত।
রাতটির বিশেষত্ব আছে বলেই এ রাতে যে কোনো নফল ইবাদত করা যায়। তবে এগুলো সুন্নাত মনে করা যাবে না বা যারা এসব ইবাদত করবে না তাদেরকে নিন্দা করা যাবে না।
৪. শবে বরাতের কোনো রোযা আছে?
➤ দুর্বল একটি হাদীসে এসেছে রোযার কথা। তবে যেহেতু নবীজি শাবান মাসে খুব বেশি পরিমাণে সিয়াম (রোযা) রাখতেন সেহেতু এই মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা উত্তম।
আর প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোযা রাখা তো সুন্নাত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে (নিয়তে) রোযা রাখলে কোনো সমস্যা নেই।
★ তাই যারা সিয়াম রাখতে চান তাঁরা (বৃহস্পতি , শুক্র ও শনিবার- মোট তিনটি সিয়াম রাখুন।
প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখা সুন্নাত, সেই হিসেবে চলমান শাবান মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ঈসায়ী হিসেবে ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ হয়।
৫. এই রাত কি ভাগ্যরজনী?
➤ এই রাত ভাগ্যরজনী নয়। ভাগ্যরজনী হলো, লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। প্রয়োজনে দেখুনঃ সূরা আল কদরের তাফসীর, যেকোনো তাফসীরগ্রন্থ থেকে।
[শব্দটি মূলত শবে "বরাত" না, শবে "বারাআত"। বারাআত মানে মুক্তি। যেহেতু এই রাতে গোনাহ থেকে মুক্তির সুসংবাদ এসেছে তাই এই নাম।
৬. এই রাতে কি হালুয়া-রুটি করা ভালো?
➤ জ্বী না। বরং এটি একটি নিকৃষ্ট প্রথা, যা আমাদের সমাজে চালু হয়েছে। তেমনি হৈ-হুল্লোড়, আতশবাজি ফুটানো -- এগুলো খুবই বাজে প্রথা। যা কোনো হাদীসেই নেই।
৭. এই রাতে গোসলের কোনো ফযিলত আছে?
➤ না, এটি একটি বাজে প্রথা। এই রাতে গোসলের কথা হাদিসে আসেনি। কেউ সুন্নাত মনে করে এই রাতে গোসল করলে সেটি হবে বিদ'আত (দ্বীনে নবআবিষ্কার)।
এই রাতের আমল হবে একাকী, সম্মিলিত নয়। এই রাতে বিশেষ সূরা বা বিশেষ বাক্য দিয়ে যেসব নামাযের কথা বলা হয় সেগুলো ভিত্তিহীন, বানোয়াট।