গল্পের শহর

গল্পের শহর ভালো লাগলে ফলো করে সাথেই থাকুন
(7)

24/11/2024

(04)
#তাসনিয়া_রহমান_স্নিগ্ধা

দুটোর দিকে বাসায় পৌঁছালাম।জ্বর বোধহয় বেড়েছে কিছুটা। বাসায় ফিরে দেখি মা মুন কে খাওয়ায় দিচ্ছে। আমাকে দেখে বললো,

' তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আয়।খাওয়ায় দিই।'
আমি কোনোরকমে হেসে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। ভীষণ রকমের অস্বস্তি লাগছে আমার।ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ক্লান্তি, অস্বস্তি সব একসাথে জেঁকে বসেছে যেন। প্রেসক্রিপশন টা আবার খুলে দেখলাম।সেই লেখা গুলো,

“ আমি ভুল করে ওইসব করিনি।নিজ ইচ্ছেতেই করেছি। শুধু তোমার জন্য ই। কিন্তু এত সমস্যা হবে জানলে করতে যেতাম না। আমার খারাপ লাগছে খুব সেদিন থেকে। সরাসরি বলার সাহস হচ্ছে না আর। যদি আবার রেগে যাও।018868623**! আমি জানি তুমি আমার উপর ভীষণ রেগে আছো ওই ঘটনা নিয়ে।যদি রাগ কমে তাহলে একটা টেক্সট দিয়ো। আমি অপেক্ষা করবো।”

মানুষটা কেন লিখলো এইসব। ফার্মেসির লোকটা আমাকে আর উনাকে নিয়ে কি ভাবছে কে জানে।হয়ত ভেবেই বসেছে আমরা কোনো সম্পর্কে আছি।মান ভাঙাতে এভাবে লিখেছে।ইশশশ! আমি রেগে আছি এটা উনাকে কে বলেছে?ক্লিয়ার করলাম যে আমার সবকিছুই ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাহলে?উনি আগ বাড়িয়ে এত বুঝে এসব লিখলেন।কখন লিখেছেন! তা-ও তো খেয়াল করিনি। আমার জন্য ই করেছে সব। কিন্তু আমার জন্য কি করবে।ফোন নাম্বার ও দিয়েছে।থাক দিক! আমি কল দিব না। টেক্সট ও দিব না।কোন ঠ্যাকা নেই আমার। বাবা জানলে এইবার মে'রে'ই ফেলবে আমাকে।সেধে সেধে আর মা'র খেতে চাই না।উনি‌ সুন্দর পরিবেশে বড় হওয়া মানুষ।এসবের ঝামেলা, যন্ত্রণা কিছু বুঝবেন না।তাই এত সহজেই এসব লিখে পাঠাতে পেরেছেন। কিন্তু আমি তো!

প্রেসক্রিপশন টা সাইডে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে রইলাম।জ্বরের জন্য ভালো লাগছে না। ফ্রেশ ও হইনি। এত্ত আনইজি লাগছে আমার। কেমন মানুষ! ডিরেক্টলি আপনি বললো আর লিখলো তুমি। সমস্যা কি উনার! এভাবে কেউ ফোন নাম্বার দেয়?মানে উনি তো একজন ডাক্তার।পার্সোনালিটি এত লেইম কেন।মুখে ক্ষমা চেয়েছে এটাই তো অনেক।আবার কানেক্ট হওয়ার কি দরকার!এসব ভাবতে ভাবতেই জ্বর নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

এক ঘন্টা ও হয়নি ঘুম ভাঙল।দরজা ধাক্কাধাক্কির আওয়াজেই ভাঙল।শরীরের ব্যথা,জ্বর দুটোই প্রচন্ড রকমের বেড়েছে মনে হচ্ছে। প্রেসক্রিপশন টা বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।মা দাঁড়িয়ে আছে।মুন,মা একযোগে দরজা ধাক্কাচ্ছিল এতক্ষণ ধরে। আমাকে দেখে মুন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

' ঘুমাইছিলি?হাত মুখ ধুইছস?'

মা কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠলো। বললো,

' তোর তো অনেক জ্বর রে মা।আয় মাথায় পানি দিয়ে দিই। এভাবে কেউ ঘুমায় বাইরে থেকে এসে? ডাক্তার ওষুধ দেয় নাই?আয় বাথরুমে আয় আমার সাথে।'

মা আমাকে ধরে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলেন। ফ্লোরে বসিয়ে দিয়ে মাথায় আস্তে আস্তে পানি ঢালতে লাগলেন। অনেক্ষণ ধরে।আধ ঘন্টা মত হবে পানি ঢালার পর তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিলো। এরপর কাপড় পাল্টিয়ে,হাত মুখ ধুয়ে বাইরে এলাম।ঠান্ডা লাগছে ভীষণ। রীতিমত কাঁপতে শুরু করেছি।মা আমাকে ধরে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মাথা, মুখ ভালোভাবে মুছে দিলো। এরপর চাদর গায়ে দিয়ে দেওয়ার পর ভাত আনতে গেল।মুন পাশ থেকে দাঁড়িয়ে সবকিছু খেয়াল করছে। বয়স তো খুব একটা বেশি না ওর। মাত্র সাত বছর। আমি ওকে ইশারায় কাছে ডাকলাম। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলে বললাম,

' মাথা টা টিপে দাও তো ভাইয়া!'

' তাহলে আমাকে চকলেট দিবি?'

আমি মাথা নেড়ে বললাম, ' দিবো নে। তুমি সুন্দর করে হাত বুলিয়ে দাও তো। তাহলে এক বক্স চকলেট দিবো।'

মুন খুশি হয়ে বলল আচ্ছা। বিছানায় উঠে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমার কাছে এলে ওর মুখে কথার খই ফুটে। এখনও ব্যতিক্রম নয়।নিজে নিজে বলতে লাগলো,
' মা না কালকে সকালে নানার বাড়িতে চলে যাবে। তোমাকে আর আমাকেও নিয়ে যাবে।আপু?'

' কি হইছে?'

' তুমি কই গেছিলা সকালে?'

' ডাক্তারের কাছে। ক্যান?'

' আমি না বাড়িতে আসে তোমাকে খুঁজছি।ছিলা না তুমি।'

আমি ক্লান্ত গলায় বললাম, ' ডাক্তারের কাছে গেছিলাম তো ভাইয়া। তুমি প্রাইভেট থেকে কখন আসছো?'

' কিছুক্ষণ পরে ই আসছি।'

আমাদের কথাবার্তার এ পর্যায়ে মা আসলো ভাত নিয়ে।এক হাতে প্লেট আর আরেক হাতে পানির গ্লাস।টেবিলের উপর গ্লাস টা রেখে আমার পাশে বসে ভাত মাখাতে লাগলেন।ডিম আর ডাল। মা'কে জিজ্ঞেস করলাম,

' খাইছো তুমি?'
মুন বলে উঠলো,
' নাপ। তুমি আসার পর খাবে বলছে।'
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।মা ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে ধরল।
______________________
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই মা তাড়াহুড়ো লাগিয়ে দিলো। কালকে সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই গেছে। ওষুধের পাওয়ার অনেক বেশি।তার উপর ব্যথার ওষুধ। সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমাইছি।রাতে একবার ঘুম ভাঙলে মা খাইয়ে দিয়েছিল। ওষুধ খেয়ে আবার ঘুম। পুরোপুরি রেস্ট নিয়ে আজ সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে একটু ভালো লাগছে। ভাবছিলাম আজকে ফোন কিনতে যাব বাবা স্কুলে চলে গেলে। কিন্তু মা তাড়াহুড়ো করতে লাগলো নানার বাসায় পাঠানোর জন্য।মা যাবে না। আমি আর মুন যাবো। মা বিয়ের আগের দিন যাবেন।বিয়ে হতে আরও এক সপ্তাহ দেরি আছে। আমাকে এত আগে পাঠানোর মানে বুঝলাম না। বারবার বললাম এত আগে কেন যাবো,মা প্রতিবারই উত্তর দিয়েছেন,

' বাসায় অনেক মেহমান আসবে। ওদের সাথে সময় কাটালে ভালো লাগবে আমার।'
অগত্যা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম।কাল রাতে আর দুপুরে ওষুধ খাওয়ায় কাজে দিয়েছে।জ্বর,শরীর ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে।শরীর ঝরঝরে লাগছে সকাল থেকে।রেডি হয়ে ব্যাগ আর মুন কে নিয়ে বের হলাম। প্রেসক্রিপশন টা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম। নাহলে মা আমার ঘরে গেলেই দেখতে পেতো।বাবার জন্য গরম পানি বসানো চুলায় তাই গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারলেন না মা।বাবা বসার ঘরে সোফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।বের হওয়ার সময় আস্তে করে বললাম,

' বাবা! যাচ্ছি।'

বাবা খবরের কাগজ উল্টাতে উল্টাতে বললেন,

' হ্যা যাও যাও। গিয়ে আবার নস্টামি করিয়ো না যেন।বড় বড় খালাতো মামাতো ভাই গুলো তো আছেই। সেগুলো সাথে যেন খবরদার কোনো ঢলাঢলি করা না হয়।হলে এই বাড়িতে পা রাখবা না আর।নস্টা মেয়ে থাকার চেয়ে কবর দিয়ে দেওয়া অতি উত্তম।'

বাসার বাইরে পা ফেলছিলাম,বাবার কথা শুনে পা থেমে গেল। আমাকে এত অবিশ্বাস করে বাবা? সরাসরি নস্টা মেয়ে বললো কিভাবে?চোখ দিয়ে আপনা থেকেই পানি গড়িয়ে পড়ছে।বাম হাতে ব্যাগ ধরা আমার।ডান হাতে চোখ মুছে মাথা নেড়ে বললাম,

' আচ্ছা।'

মা দরজার পাশে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি মায়ের দিকে তাকানোয় বললেন,
' সাবধানে যাইস। পৌঁছে আরিফিনের মোবাইল দিয়ে একটা কল দিস।'

আমি মাথা নেড়ে বের হয়ে এলাম।মুন আসছে পিছু পিছু। কান্না পাচ্ছে খুব। বাবা রাগী জানতাম।কিন্তু এতটা রাগ আর অবিশ্বাস আমার প্রতি! আমার হজম হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।চোখ মুছতে মুছতে গেটের বাইরে এলাম। সিএনজির খোঁজে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিতে আমার রাইট সাইডে রাস্তায় চোখ আটকে গেল। আমার থেকে পাঁচ -ছয় হাত দূরত্বে একটা বাইক দাঁড় করানো।বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন। আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।মানুষটাকে দেখে হার্টবিট বেড়ে গেল আমার।বাবা যদি এনাকে এখানে দেখে ফেলে!
মনে হতেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো আমার।মে'রে ফেলবে আমাকে।তা জানা সত্ত্বেও এই মানুষটা এখানে কেন এসেছে?
চলবে...............

আপনারা ভালোমন্দ কিছু বলেন না কেন গল্প টা নিয়ে?😮‍💨

24/11/2024

(03)
#তাসনিয়া_রহমান_স্নিগ্ধা

ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।তার চোখের ও পলক পরছে না। আমি উনাকে দেখে অবাক হলেও খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বললাম,

' স্যার!আসবো?'

ডাক্তার ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী নিজেকে একটু সামলে নিলেন। এরপর হালকা কেশে বললেন,

' হ্যা আসুন আসুন।'
আমি অনুমতি পেয়ে ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেনে বসলাম ঠিক উনার সামনে। মুখোমুখি দুজন বসা।মাঝখানে উনার ডেস্ক।আমি চেয়ারে বসে মাথা নিচু করে বসে আছি। মনে হচ্ছে ডাক্তার ও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরেছেন আমাকে দেখে।হবার কথাই তো।উনি কিছু বলছেন ও না।কতক্ষন এভাবে চুপচাপ কাটলো কে জানে।কারোর মুখে কোন কথা নেই। কিছুক্ষণ পর উনি ধীরে ধীরে বললেন,

' বাসায় আর কোন সমস্যা হয়েছিল?'

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। এরপর উনার দিকে তাকালাম।উনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। শান্ত দৃষ্টিতে তার চেয়েও শান্ত গলায় বললাম,

' গত পরশু দিনের জের ধরে কালকেও বাবার রাগ হজম করেছি। এখন পুরো শরীরে অসহ্য রকমের ব্যথা।ফেনাক প্লাস ছিলো বাসায়।দুটো খেয়েছি।কাজে দিচ্ছে না। আমাকে কিছু ওষুধ দিন।'

আমার কথা শুনে ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। কি বলবেন তা সাজিয়ে নিচ্ছেন হয়ত। মিনিট দুয়েক পর আস্তে আস্তে বললেন,

' আমার জন্য আপনাকে অনেক মা'র হজম করতে হলো!তাই না?'

আমি পূর্বের মত উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।মুখে কিছু বললাম না।উনি ' জ্বর আছে আপনার? একটু থার্মোমিটার টা মুখে দিন তো।দেখে নিই!' এইটুকু বলে থার্মোমিটার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটার বের করে বেসিন থেকে ধুয়ে এনে আমার হাতে দিয়ে বললেন,

' মুখে দিয়ে এক মিনিট মত রাখুন।'
আমি হাত বাড়িয়ে থার্মোমিটার নিলাম।মুখে নিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম এক মিনিট মত।দেয়াল ঘড়ি ধরে পাক্কা এক মিনিট পর মুখ থেকে বের করে দিলাম।উনি চেয়ারে বসে আমাকেই দেখছিলেন। থার্মোমিটার দেওয়ার পর চেক করলেন।পারদ স্কেল ১০৩° ফারেনহাইট।দেখে মুখে বললেন,

' আপনার জ্বর তো অনেক।নাপা খেয়েছিলেন কি?'

আমি মাথা নাড়ালাম।যার অর্থ না।খাইনি।উনি প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে খসখস শব্দে ওষুধ লিখতে শুরু করলেন।লেখা শেষ করে আমার দিকে তাকালেন।কি দেখলেন কে জানে! আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি দেখে বললেন,

' এখানে চারটা ওষুধের নাম লিখে দিয়েছি।একটা খাওয়ার আগে বাকি তিনটা খাওয়ার পর।তিন বেলাই খাবেন।'

' ঠিক আছে।'

' আর!একটু রেস্ট করবেন। বাসায় গিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে কপাল আর গা মুছে ওষুধ গুলো খেয়ে নিয়েন।যদি সম্ভব হয় ডাবের পানি খাওয়ার চেষ্টা করবেন একটু। জ্বরের জন্য ডিহাইড্রেশন না হয় যেন আবার।'

আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। প্রেসক্রিপশন বুক থেকে আমার জন্য লেখা প্রেসক্রিপশন টা খুলে ফাইলে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিলেন। আমি ফাইল টা নিয়ে ' আচ্ছা। আমি আসছি তাহলে। থ্যাংকস!' এই বলে উঠে যাচ্ছি উনি বলে উঠলেন,

' একটু বসুন না!'

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতে উনি অনুনয় করে বললেন,

' একটু বসুন।প্লিজ!'

আমি ফের বসে পড়লাম। ওষুধ নেওয়া শেষ।কি বলবে আর?মুখে বললাম,' কিছু বলবেন কি?'

ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী মাথা নাড়লেন। এরপর ধীরে ধীরে বললেন,

' আমার জন্য আপনি অযথাই কতগুলো মা'র খেয়েছেন। আমি কোন মুখে ক্ষমা চাইব বুঝতে পারছি না। সেদিন চাইলেও কিছু বলা বা করার সুযোগ হয়নি। আপনার বাবা যেভাবে রেগে ছিলেন। উপরন্তু আমার ও অনেক সম্মানহানি হয়েছে সবার সামনে। এভাবে একটা ভুল বুঝাবুঝি হবে জানলে আমি......!'

আমি কথার এ পর্যায়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম,

' বাদ দিন।যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। আমি সবার সামনে চরিত্রহীনা হয়ে গেছিই তো।এখন আর এসব বলে কোন লাভ আছে কি?'

' না নেই। জানি আমি। তারপরও বলছি।কারণ আমি খুব বেশি গিল্টি ফিল করছি এজন্য। আপনাদের বাসা থেকে ফেরার পর আমি এক মুহূর্ত ও শান্তি পাইনি। ডিউটিতে ও আসিনি কাল। আজকে হসপিটাল আর রোগীদের চাপের মুখে, অসংখ্যবার ফোনকলের জন্য শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করতে এসেছিলাম।অন্যের সেবা করতে পেরে আমি যেই আনন্দ পেতাম আজকে সেটা পাচ্ছিলাম না। আমি খুব বেশি অপরাধবোধে ভুগছি। ভেবেছিলাম আজকে ডিউটি শেষে আপনার বাসায় যাব। আপনার বাবার কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আসব। আপনার কাছেও। আমি আজকে মনের বিরুদ্ধেই ডিউটিতে এসেছি। এতক্ষণ খুব কষ্ট করে মনোযোগ দিতে হয়েছে রোগীদের কাছে।যদিও জোর করে এসে খুব ভালোই করেছি আজ। নাহলে আপনার দেখা পেতাম না আমি।'

আমি চুপ করে শুধু ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরীর কথা শুনে গেলাম।কি বলব বুঝে উঠতে পারছিনা। কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে উনি আবার বললেন,

' আপনি কি আমার বিরুদ্ধে মনে রাগ জমিয়ে রেখেছেন?'

আমি মাথা তুলে তাকালাম উনার দিকে।রাগ! আমার উনাকে নিয়ে ভাবার সময়ই হয়নি।যেই পরিমান যন্ত্রণা পেয়েছি সবটাই নিজের ভাগ্যের জোরে। উনাকে দোষ দেওয়ার অবকাশ ও পাইনি।মুখে বললাম,

' নাহ।'

' আমাকে নিয়ে রাগ জমাবেন না প্লিজ। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি এত বড় ঝামেলা হবে আমার জন্য।'

আমি হাসলাম। বললাম,

' রাগ নেই আপনার প্রতি। অকারণেই গিল্টি ফিল করবেন না।সবটাই আমার ভাগ্য। নাহলে নিজের জন্মদাতা পিতা কি এভাবে অবিশ্বাস করতো নিজ মেয়েকে? এতদিনের পরিচয় যাদের সাথে।তারাই ছিঃ ছিঃ করলো মিনিট মত একটা দৃশ্য দেখে।বাদ দিন এসব।গিল্টি ফ্রি হয়ে কাজ করুন। আমি ঠিক আছি। আচ্ছা, ওষুধ গুলো কাজ করবে তো?'

ফাইয়াজ মাহমুদ চৌধুরী আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। এরপর বললেন 'হ্যাঁ,কাজ করবে।'
আমি 'এবার আসি তাহলে!' বলে উঠে এলাম ফাইল টা নিয়ে। রুম থেকে বের হয়ে দেখি রোগীদের চোখমুখে বিরক্তির ছাপ।হয়ত বুঝে গেছে ওরা।আমি পরে এসে ভিতরে ঢুকেছি।এসবে পাত্তা না দিয়ে আমি বের হয়ে এলাম হসপিটাল থেকে। হসপিটালের সামনে রাস্তার অপজিটে ফার্মেসি। অনেকগুলো ই।এই এরিয়াটা হসপিটাল এরিয়া। অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি হসপিটাল, ক্লিনিক, প্রাইভেট চেম্বার।ওয়ান ওয়ে রোড।পার হয়ে অপজিটে একটা ফার্মেসির দোকানে গেলাম। প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বললাম ওষুধ দিতে। পাঁচ দিনের ডোজ দিয়েছে। ওষুধ নিতেই এক হাজার টাকা চলে গেল।ব্যাগে গুনে দেখি টাকা আছে আর ১৪ হাজার। ফোন নিব কি-না ভাবতে ভাবতে সিদ্ধান্ত নিলাম নিব না। বাসায় ফিরতে হবে। প্রেসক্রিপশন ফেরত নিতে ফার্মেসির লোকটা যিনি ওষুধ দিয়েছেন আমাকে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিভাবে যেন। আমি বললাম,

' কিছু বলবেন?'

লোকটা একটু ইতস্তত করে বললো,

' কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতাম আপা।'

' হ্যা করুন।'

' ফাইয়াজ স্যার কি আপনার কিছু হয়?'

আমি বিরক্ত হলাম কিছুটা।এ কেমন প্রশ্ন?উনি ডাক্তার আমি রোগী।দেখিয়েছি, ওষুধ দিয়েছেন। স্বাভাবিক ব্যাপার।এতে উনি আমার কিছু হওয়ার কি আছে? আমি বিপরীতে কিছু জিজ্ঞেস করব তার আগেই উনি প্রেসক্রিপশনের উল্টোদিকে একটা লেখা দেখিয়ে বললেন বললেন,

' এই যে এটার জন্য। আমি লেখার দাগ দেখে উল্টাতে গিয়ে দেখলাম তো।এটার জন্য কিছু মনে করবেন না।'

আমি কিছুটা অবাক হয়েই প্রেসক্রিপশন হাতে নিলাম।গোটা গোটা বাংলা অক্ষরে লেখা। ভীষণ অপ্রস্তুত লাগছে নিজেকে।লোকটাকে কিছু না বলে ওষুধ আর ফাইল নিয়ে যত দ্রুত পারলাম সিএনজি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

চলবে.......

24/11/2024

#ধরিয়া_রাখিও_সোহাগে_আদরে
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তিন
“আমি গর্ভবতী জানা স্বত্তেও আমার মুখের উপর ডিভোর্স পেপার ছুড়ে গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরে আমেরিকা চলে এসেছিলেন, মিস্টার আহিল। আমি বেঁচে আছি নাকি ম°রে গেছি একবারো জানার চেষ্টা করেননি। অথচ আপনি ছাড়া আমার তখন কেউ ছিলো না। আপনার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। সবকিছু ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই? ভুলে যাওয়ারেই কথা। পুরুষের নাকের যদি একবার পরনারীর ঘ্রাণ যায় তাহলে ঘরে বিশ্ব সুন্দরী থাকলে সে পরনারীর পেছনেই ছুটবে৷ এতকিছুর পরেও এখন আপনি নিজেকে আমার স্বামী বলে দাবী করছেন? পাশে গার্লফ্রেন্ড রেখে কিসের ভিত্তিতে এই দাবী করছেন, মিস্টার আহিল?”
মেহরিশ চেঁচিয়ে কথাগুলো বলতেই আহিল চোখ তুলে তাকাল মেহরিশের দিকে। সাথে সাথে উত্তর দিল,
“ডিভোর্স পেপার দিয়েছিলাম, ডিভোর্স না।”
সায়র এবার মুখ খুলল। কঠিন বাক্যে জিজ্ঞেস করল,
“ডিভোর্স, বিয়ে অথবা সম্পর্কে কোনো ফান করার বিষয় নয়, মিস্টার আহিল। আমার জানা মতে, আপনি শিক্ষিত। শিক্ষিত হয়ে অশিক্ষিতের মতো ডিভোর্সের মতো একটা বিষয় নিয়ে হেয়ালি পনা করছেন কিভাবে? আপনি ডিভোর্স পেপারে সাইন দিয়েই তো মেহরিশকে দিয়েছিলেন। হ্যাঁ, তখন মেহরিশ প্রেগন্যান্ট থাকায় ডিভোর্স হয়নি কিন্তু বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর তো ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যাবে। তাই নয় কী মেহরিশ?”
সায়রের মাথা থেকে এই বিষয়টা একদম বেরিয়ে গিয়েছিল। যখনি মনে পড়েছে তখনি মেহরিশের পিছু পিছু ছুটে এসেছিল। আর এসেই ঝামেলায় ফেঁসে গেল। তবে যাই হোক সায়র মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেই নিয়েছে মেহরিশকে কিছুতেই একা ছেড়ে যাবে না। আজ থেকে মেহরিশকে আর একা ছাড়বে না। ছায়া হয়ে মেহরিশ আর আনায়াকে আগলে রাখবে। সোহাগে, যত্নে বুকের ভেতর রাখবে। মেহরিশ ভালো না বাসুক, সায়র তো ভালোবাসে। তাতেই চলবে। সায়রের ভাবনার মাঝেই আহিল বলে উঠল,
“কিন্তু ডিভোর্স পেপারে যদি সাইন না করা হয় তাহলে কি ডিভোর্স হবে, মিস্টার সায়র?”
সায়র চমকে তাকাল আহিলের দিকে। আহিলের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে একবার নজর দিল মেহরিশের দিকে। মেহরিশ নিশ্চুপ দৃষ্টিতে একবার সায়রের দিকে তাকাল। সায়র সে চোখে স্পষ্ট অসহায়ত্ব দেখতে পেলো। তার মানে আহিল সত্যি বলছে! নাহ! এটা মানতে সায়রের বুক ফেটে যাচ্ছে। সায়র তবুও আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,
“সাইন করেননি মানে?”
আহিল এবার শান্ত বাক্যে শুধাল,
“আমি জানতাম মেহরিশ প্রেগন্যান্ট, সেই অবস্থায় আমাদের ডিভোর্স হবে না। তাই ডিভোর্স পেপার মেহরিশকে দিয়ে বলেছিলাম, বাচ্চা জন্মের পর সাইন করে কোর্টে জমা দিয়ে দিতে। যে কোনো এক পক্ষ সাইন দিলেই তো ডিভোর্স হয়ে যায়, তাই আমার সাইনের দরকার ছিল বলে মনে হয়নি। কিন্ত কিছুদিন আগে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মেহরিশ আমাদের ডিভোর্স লেটার জমা করেনি। এমনকি আমাদের লইয়ারের সাথেও কোনোরকম যোগাযোগ করেনি। তাহলে আমাদের ডিভোর্স হলো কি করে?”
সায়র যেন মাঝ সমুদ্রে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। তবুও শান্ত দৃষ্টিতে মেহরিশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“মেহরিশ।”
সায়রের করুন কণ্ঠের ডাক শুনে মেহরিশ ছলছল চোখে তাকাল সায়রের দিকে। সায়র পুনরায় জিজ্ঞেস করল,
“আপনি সাইন করেছিলেন, মেহরিশ? যদি করে থাকেন তাহলে কোর্টে জমা করেননি কেন? তারমানে কি আপনি সাইন করেননি? কেন করেননি, মেহরিশ?”
সায়রের কণ্ঠস্বর কাঁপছে। এক মুহূর্তের জন্য মেহরিশকে নিয়ে ভাবনাগুলো সব ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। মেহরিশ কী চায়? কি হয়েছিল অতীতে? মেহরিশ কাঠকাঠ গলায় উত্তর দিল,
“হ্যাঁ, আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করিনি।”
কথাটা সায়রের কুর্নকুহরে পৌঁছাতেই সায়র এক পা পিছিয়ে গেল। অবাক পানে তাকিয়ে রইল মেহরিশের দিকে। আনায়াকে বুকে ধরে রাখা হাতটা আলগা হয়ে এলো। পরক্ষণেই আবার আনায়াকে যত্ন করে বুকে ধরে রাখল। আহিলের মুখে হাসি ফুটল। হাস্যজ্বল বাক্যে বলা শুরু করল,
“আমি মাস দুই আগে বাংলাদেশেও গিয়েছিলাম কিন্তু মেহরিশের কোনো খোঁজ পাইনি। মেহরিশের বাবার বাড়ি গিয়ে জানতে পারি মেহরিশ ফ্যামিলি সহ আমেরিকা চলে এসেছে। এই দুই মাস এশহরেও কম খোঁজ করিনি। কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ হয়েছি। পাইনি।”
বলেই আহিল কথাগুলো বলে থামতেই মেহরিশ চোখ তুলে তাকাল আহিলের দিকে। ঠোঁটে কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে জিজ্ঞেস করল,
“হঠাৎ কেন খোঁজ করেছিলে? যার হাত ধরে চলে এসেছলে সে কোথায়? আমাকে কেন দরকার পড়ল হঠাৎ?”
আহিল ফিক করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলে উঠল,
“আমি কি বলেছি আমার তোমাকে দরকার? তোমাকে আমার কখনোই দরকার ছিলো না। দরকার ছিলো তোমার টাকা। কিন্তু বাল তুমি এমন এক আধ পাগল যে টাকা পয়সা বা গয়না কিছু না নিয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে। কিন্তু আমেরিকা চলে আসার পর চিন্তা করলাম, যতই হোক তোমার গর্ভের সন্তান তো আমারও সন্তান। এটা অস্বীকার করা যায় না। তোমাকে আমার দরকার নেই, কিন্তু আমার সন্তানকে আমার দরকার। ও আমার রক্ত। আমার রাজকন্যা। আমার রাজকন্যাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার তোমার নেই, মেহরিশ।”
আহিলের হাস্যজ্বল বাক্যের কথাগুলো মেহরিশের কানে পৌঁছাতেই মেহরিশের মনে হলো মেহরিশ জীবনে দ্বিতীয় বার ধাক্কা খেলো। এ ধাক্কাটা ছিল বড়সড় ধাক্কা৷ একটা ভুল মানুষকে ভালোবেসে, ভুলের উপর সংসার পেতেছিল, মেহরিশ? এতদিন ভাবতো যে আহিলের ভালোবাসা পরনারীর মোহে পড়ে পরিবর্তন হয়ে গেছে৷ অথচ আজ এতগুলো বছর পর জানলো মানুষটা কখনো মেহরিশকে ভালোই বাসেনি। মেহরিশ দুই পা পিছিয়ে পড়ে যেতে নিলেই সায়র ধরে ফেলল। বাহু আঁকড়ে শক্ত করে ধরে রাখল। ভরসা দিয়ে বলে উঠল,
“ভয় পাবেন না। আমি পাশে থাকতে আপনাকে পড়ে যেতে দিব না।”
আহিল বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলে উঠল,
“তোমাদের ড্রামা অন্য কোথাও গিয়ে করো। এমনিতেই অনেকক্ষণ যাবৎ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। আমার মেয়েকে আমাকে দিয়ে দাও, মেহরিশ।”
মেহরিশ আঁতকে উঠল। ভয়ে চিৎকার করে বলে উঠল,
“না। কোনোদিন না। আমি বেঁচে থাকতে আমার মেয়ের কাছ থেকে আমাকে কেউ দূরে সরাতে পারবে না।”
আহিল হেসে বলল,
“আইন বলে কিছু আছে জানো তো? সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে, আঙ্গুল বাঁকাতে হয়।”
সায়র বাঁকা হাসল। আহিলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আইন আমাকে শিখাতে আসবনে না, মিস্টার আহিল। কারণ আমি একজন লইয়ার। আপনি কিসের ভিত্তিতে এইটুকু মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন? আপনি কী জানেন না, ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরেও মেয়ে ‘এডোলেসেন্স ’ হওয়া অব্দি মায়ের জিম্মায় থাকবে। বাবা আইনগত গার্ডিয়ান হলেও সন্তানের জিম্মাদার একমাত্র মা। তাই আপনি পৃথিবীর যেকোনো আদালতে গেলেও রায় একই থাকবে। সো, এসব সস্তার হুমকি অন্য কোথাও গিয়ে দেখাবেন। যতদিন আমি মেহরিশ আর আনায়ার পাশে আছি ততদিন কেউ ওদের ছুঁয়েও দেখতে পারবে না। আর হ্যাঁ, যত শিঘ্রই সম্ভব আপনার আর মেহরিশের ডিভোর্সের ব্যাপারটা আমি কনফার্ম করব। গুড বায়, মিষ্টার আহিল। দেখা হবে খুব শিঘ্রই, হয়তো কোর্টে।”
বলেই মেহরিশের হাত ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মেহরিশ থেমে গেল। সায়রের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল আহিলের দিকে। আহিলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঁকা হেসে, সজোরে থা'প্পড় বসিয়ে দিল আহিলের গালে। আহিল গালে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠতেই, মেহরিশ হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এভাবে রাস্তার কুকুররা ঘেউ ঘেউ৷ মানুষ না।”
বলেই মেহরিশ পার্স থেকে কয়েকটা ডলার নোট বের করে আহিলের মুখে ছুড়ে মে°রে বলে উঠল,
“নে তোকে ভিক্ষা দিয়ে গেলাম। এই ভিক্ষার জন্যই তো আমাকে ব্যবহার করেছিলে। আরো লাগলে বলিস। আমি আবার খুব দয়ালু মানুষ কিনা? ছোটলোক, ভিখারিদের হেল্প করার জন্য আমার মন কাঁদে খুব। নেক্সট কখনো আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়ালে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না, মাইন্ড ইট। শালা কু°°ত্তার বা°চ্চা।”
বলেই মেহরিশ সায়র হাত শক্ত করে ধরে চলে আসল। সায়র শুধু তাকিয়ে মেহরিশের ভয়ংকর রুপটা দেখল। নারী যেমন প্রয়োজনে জল হতে পারে, তেমনি আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে আগুন হয়ে জ্বলে উঠতে পারে। মেহরিশের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ পানে তাকিয়ে সায়র হেসে ফেলল। মনে মনে বলে উঠল,
“এভাবে রাগবেন না, মেহরিশ। আমার বুকের বা পাশে থাকা যন্ত্রটা বেহায়া হয়ে উঠে।”

#চলবে

[ভুল হলে দেখিয়ে দিবেন প্লিজ, অনুরোধ। ]

পরের পর্ব গুলো আমাদের গ্রুপে পোস্ট করা হবে।
সবাই জইন করুন

24/11/2024

#ধরিয়া_রাখিও_সোহাগে_আদরে
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_দুই

নিজের বর মধ্যপান অবস্থায় অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে ঢলাঢলি করে হাসতে হাসতে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকছে। বিচ্ছেদের বছর দুই পর জীবন এমন এক দৃশ্য দেখার জন্য দাঁড় করাবে ভাবতে পারছে না, মেহরিশ। কোলে থাকা ছোট্ট আনায়াকে বুকে চেপে ধরে মেহরিশ সামনে থাকা মেয়েটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। মেয়েটার হাত আহিলের কোমরে আর আহিলের হাত মেয়েটার কোমরে। মেয়েটা যে ফরেনার তা বুঝতে বাকি রইল না মেহরিশের। আচমকা মেহরিশ সামনে পড়ায় আহিলের চোখে, মুখে বিস্ময় ফুটে উঠলেও, মেয়েটার চোখে মুখে কোনো রেসপন্স দেখা গেলো না। বছর দুই পর মেহরিশকে সামনে দেখে আহিলের নেশা যেন এক মুহূর্তেই কেটে গেল। মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে বার কয়েক চোখ ঝাপটালো। সত্যি দেখছে? নাকি বেশি নেশা হয়ে গেছে? কই আগেও তো আহিল কতবার ড্রিংকস করেছে তখন তো নেশায় বুদ হয়ে মেহরিশকে দেখেনি। তাহলে আজ কেন দেখছেন? মেহরিশ শূন্য চোখে আহিলের দিকে তাকিয়ে। মুখে অন্যরকম এক হাসি। যেন মনে হচ্ছে এই সন্ধিক্ষণের অপেক্ষায় ছিল এতগুলো দিন। আহিল হঠাৎ আচমকা এক প্রশ্ন ছুড়ে মা'রল মেহরিশের দিকে,
“হু আর ইউ?”
মেহরিশ হাসল। খুব শান্ত বাক্যে শুধাল,
“ইউর ওয়াইফ, মিস্টার আহিল মির্জা। চিনতে পারছেন না বুঝি?”
আহিল তব্ধা খেয়ে গেল। দুই পা সরে দাঁড়াল। মাথা দুই বার ঝাঁকিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাল। মেহরিশের পা থেকে মাথা অব্দি একবার চোখ বুলিয়ে নিতেই চোখ আটকাল কোলে থাকা বাচ্চা মেয়েটার দিকে। কী সুন্দর মেয়েটা! চোখ দুটো একদম আহিলের মতো। ব্রাউন রঙের। মেয়েটার হাসিটার মধ্যে আহিল নিজেকে খুঁজে পেল। কী আশ্চর্য! তার মানে এটা আহিল আর মেহরিশের মেয়ে? ভাবতেই আহিলের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। সব কিছু যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে। আহিল বিস্ময় ভরা বাক্যে পুনরায় বলে উঠল,
“মেহরিশ! তুমি মেহরিশ! আমার মেহরিশ?”
মেহরিশ শব্দ করে হেসে ফেলল। এবার আহিলের পাশে থাকা মেয়েটা মুখ খুলল। কিছু না বুঝার মতো করে প্রশ্ন করল,
“এই মেয়েটা কে, আহিল? কেন সে নিজেকে তোমার বউ বলে পরিচয় দিচ্ছে? বুঝতে পারছিনা কিছু। দয়া করে, পরিষ্কার করে বলো।” (ইংরেজি বাক্যে)
মেয়েটার কথা শুনে মেহরিশ এবার নিশ্চিত হলো মেয়েটা ফরেনার। আহিল পরিস্থিতি বুঝতে পারছে না। সবকিছু গোলমাল করে ফেলছে। মেহরিশ এখানে কী করে? কী বলে এখন ম্যানেজ করবে সবটা। মেহরিশ আহিলকে চুপ করে থাকতে দেখে শান্ত বাক্যে প্রশ্ন করল,
“কী ভাবছেন? আমি এখানে কী করে? আপনি বোধহয় আমাকে এখানে আশা করেননি তাইনা, মিস্টার আহিল?”
আহিল চোখে তুলে তাকাল। মেহরিশের চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে ফেলল। মেয়েটার মুখে আগের মতো শান্ত ভাবটা নেই। এখন আর কথার মধ্যে নমনীয়তা খুঁজে পাওয়া যায় না। কাঠকাঠ স্বরে কথা বলছে। আহিলের পাশে থাকা মেয়েটা পুনরায় প্রশ্ন করল,
“আহিল, তুমি কি বিবাহিত? উনি তোমার বউ?”
আহিল তড়িঘড়ি করে মত পাল্টে ফেলল। আমতা আমতা করে বলে উঠল,
“নো, এঞ্জেলা। আমি অবিবাহিত।”(ইংরেজি বাক্যে)
এঞ্জেলাকে প্রশ্নের উত্তর দিয়েই আহিল মেহরিশের উদ্দেশ্যে কঠিন বাক্যে বলে উঠল,
“এই যে, কে আপনি? কী বলছেন আবোলতাবোল? কে স্বামী? কার স্বামী? আমি তো আপনাকে চিনিই না। আর আপনি আমাকে স্বামী বলে দাবী করছেন? আর ইউ ম্যাড? রাস্তা আটকে দাঁড়িয়েছেন কেন? প্লিজ, সাইড।”
বলেই আহিল পুনরায় এঞ্জেলার কোমর প্যাঁচিয়ে ধরল। হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে নিতে মেহরিশের দিকে তাকালো বাঁকা চোখে। মুখে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি। যেন এসব মেহরিশকে দেখানোই এখন ওর এক মাত্র উদ্দেশ্য। মেহরিশ এক পলকে আহিলের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি। আহিল যখন পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকার জন্য পা বাড়াল, তখনি সায়র এসে উপস্থিত হলো সেখানে। সায়র আহিলের সামনে হঠাৎ পড়ে যাওয়ায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। মুখে হাসি টেনে সৌজন্যতার স্বরে বলে উঠল,
“স্যরি, স্যরি। প্লিজ, ডোন্ট মাইন্ড।”
বলেই আহিলকে পাশ কাটিয়ে মেহরিশকে নাম ধরে ডেকে উঠল। সায়র মেহরিশকে ডাকতেই আহিল থমকে দাঁড়াল। পেছন ঘুরে তাকিয়ে দেখল সায়র আর মেহরিশ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। মেহরিশ আড় চোখে আহিলের দিকে একবার তাকিয়ে আনায়াকে সায়রের কোলে দিতে, সায়রের বাহু প্যাঁচিয়ে ধরল। তা দেখা মাত্র আহিল এঞ্জেলাকে ছেড়ে দিল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল মেহরিশের দিকে। আচমকা এসে এক টানে সায়রকে সরিয়ে ফেলল। উচ্চবাক্যে প্রশ্ন করল,
“কে এই ছেলে? কেন তুমি ওর হাত ধরলে? কে হয় তোমার?”
সায়র অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কী হলো বুঝতে পারছে না। অবুঝের মতো প্রশ্ন করল,
“কে আপনি? এভাবে কথা বলছেন কেন?”
আহিল চোখ গরম করে তাকাল সায়রের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“স্টপ। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আপনি কথা না বললে খুশি হবো।”
‘স্বামী-স্ত্রী’ শব্দ দুটো যেন সায়রের কানে বোমা ফাটার মতো বিস্ফোরণের শব্দ করে বেজে উঠল। তার মানে এই ছেলেটা আহিল? এর মধ্যেই মেহরিশ শান্ত বাক্যে আহিলের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“সায়র কথা বলবে। একশো বার বলবে। কারণ, সায়র আমার বর্তমান স্বামী। আর একজন স্বামী হিসেবে সায়রের সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার বিষয় কথা বলার।”
এক ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে সায়র দ্বিতীয় ধাক্কা খেলো। মাথার দশ হাত উপর দিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। আহিল যেন আকাশ থেকে পড়ল। অবাক পানে প্রশ্ন করল,
“স্বামী মানে? কে তোমার স্বামী?”
মেহরিশ আহিলের দিকে চোখ গরম করে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
“আপনি কে, মিস্টার? কে আপনি? আমি তো আপনাকে চিনি না। তাহলে আপনাকে কেন প্রশ্নের জবাব দিব? লন্ডনের মতো একটা শহরে অচেনা একটা মেয়ের সাথে কীভাবে আচরণ করতে ভুলে গেছেন নিশ্চয়ই? মনে করিয়ে দিব? ভদ্রতা কী বাসায় রেখে এসেছেন নাকি? নাকি পরিবার থেকে ভদ্রতার শিক্ষাটুকু পাননি?”
আহিল মেহরিশের দিকে তর্জনী আঙ্গুল উঠিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“মুখ সামলে কথা বলো মেহরিশ। আ...।”
মেহরিশ এবার আহিলের থেকেও দ্বিতীয় চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“আঙ্গুল নিচে। নয়তো আমার হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের ছাপ আপনার গালে বসতে বেশি সময় লাগবে না।”
আহিল কটমট দৃষ্টিতে তাকাল মেহরিশের দিকে। নিজেকে কিছুটা সামলে শান্ত বাক্যে বলল,
“আমি তোমার স্বামী, মেহরিশ। আমাকে এভাবে রাস্তার মাঝে অপমান করার রাইট তোমার নেই।”
মেহরিশ হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলে উঠল,
“স্বামী! কে আমার, স্বামী? আপনি? স্বামী, মাই ফুট। আপনার মতো রাস্তার কুকুর আমার স্বামী হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা। রাস্তার কুকুরের সাথে তুলনা দিলেও কুকুর গুলোকে ছোট করা হবে। একটা রাস্তার কুকুরকেও যদি কয়েকদিন আদর, যত্ন করা হয় তাহলে সে তার মনিবকে ছেড়ে যায় না। আর আপনাকে তো আমি পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম। ঘর ছেড়েছিলাম। আদর, যত্নের কোনো কমতি রাখিনি। তবুও নিজের সন্তানকে অস্বীকার করে মুখের উপর ডিভোর্স লেটার ফেলে, প্রেমিকার হাত ধরে চলে এসেছিলেন। তাহলে কোন মুখে এখন নিজেকে আমার স্বামী হিসেবে দাবী করছেন?”
মেহরিশের চোখের কোনে অশ্রু কণা টলমল করছে। পুরনো সব ক্ষত জেগে উঠছে। সায়র অসহায় দৃষ্টিতে মেহরিশের দিকে তাকিয়ে আছে। আহিল নিস্তব্ধ হয়ে আছে। এঞ্জেলাও দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে সবটা। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ওরা বাংলায় কথা বলছে তাই বুঝছেনা। শুধু বুঝেছে ওদের মধ্যে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে। মেহরিশ নিজেকে সামলে সায়রের উদেশ্যে বলল,
“সায়র, চলুন এখান থেকে। আমার আনায়ার উপর কোনো কুকুরের নজর পড়ুক আমি চাই না।”
বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আহিল মেহরিশের হাত ধরে ফেলল। অধিকার খাটিয়ে বলে উঠল,
“তুমি এই ছেলেটার সাথে যাবে না৷ এই ছেলেটা তোমার স্বামী হতে পারে না।”
মেহরিশ ঝাড়ি মে'রে আহিলের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিলো। কিছু কড়া বাক্য শুনানোর জন্য মুখ খুলতেই, সায়র থামিয়ে দিল। এবার আহিলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল,
“কেন হতে পারি না? আপনি তো মেহরিশকে বছর দুই আগেই ডিভোর্স দিয়েছেন। তাহলে আমি কেন মেহরিশের স্বামী হতে পারিনা?”
আহিল বাঁকা হাসল। হাসতে হাসতে বলে উঠল,
“আপনি ভুল জানেন, মিস্টার সায়র। আমি তো মেহরিশকে ডিভোর্স দেইনি। তাহলে মেহরিশ কী করে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে? আইন নত এখনো আমি মেহরিশের স্বামী। মেহরিশের উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে।”
সায়রের বুকটা ধক করে উঠল। চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। হৃদযন্ত্রটা ভয়ে লাফানো শুরু করল। তবে পাওয়ার আগেই মেহরিশকে হারিয়ে ফেলবে? পথ আলাদা হয়ে যাবে? নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কি নিজের করে পাওয়ার স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে?

#চলবে

পরের পর্ব গুলো আমাদের গ্রুপে পোস্ট করা হবে।
সবাই জইন করুন।

24/11/2024

৪মাসের গর্ভবতী মেহরিশের মুখে ডিভোর্স পেপার ছুড়ে মেরে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আমেরিকা পাড়ি জমিয়েছিল, আহিল। যাকে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিল মেহরিশ। ভালোবাসা আর বিশ্বাসের মর্যাদা স্বরুপ বাজে ভাবে ঠকে যাওয়ার ঘটনাটা খুব হাস্যজ্বল স্বরে ব্যাখা করছে মেহরিশ। কোলে থাকা ছোট্ট আনায়া হাত পা নেড়ে খেলতে ব্যস্ত। সায়র আশ্চর্য হয়ে দেখছিল মেহরিশকে। কী কঠিন মনের জোর মেয়েটার! হয়তো মনকে শক্ত করেছে বলেই আজ মেয়েটা সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারছে। একা চলতে পারছে। যে সমাজে একজন নারী একা চলতে পারেনা, সেখানে মেহরিশ ডিভোর্সি সাথে সিঙ্গেল মাদার হয়ে বেশ প্রফুল্লচিত্তে বসবাস করছে। সায়র উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করল,
“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ক্যান আই আস্কিং অ্যা কুয়েশ্চন? ”
মেহরিশ হেসে জবাব দিল,
“অফকোর্স, ইউ ক্যান।”
সায়র একটু নড়েচড়ে বসল। শান্ত বাক্যে প্রশ্ন করল,
“আনায়াকে নিয়ে একা পথ চলতে কোনো প্রবলেম হচ্ছে না?”
মেহরিশ হাসল। স্নিগ্ধ সে হাসি। মেয়েটা ভাঙা মন নিয়ে এত সুন্দর করে হাসে কিভাবে? মেহরিশ হেসেই জবাবে বেশ প্রফুল্ল হয়ে বলা শুরু করল,
“নারীকে দূর্বল ভাববেন না, মিস্টার সায়র। নারী পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। নারী শখের পুরুষের জন্য নরম মাটির ন্যায় হতে পারে। আবার সেই নারী নিজের আত্মসম্মানে আঘাত লাগলে জলন্ত আগুনে পুড়ে নিজেকে শক্ত লোহার ন্যায় গড়তে পারে? আর রইল প্রবলেমের কথা? আচ্ছা বলুন তো, প্রবলেম কোন মানুষের জীবনে নেই? বিল গেটস থেকে শুরু করে প্রিন্সেস ডায়ানা অব্দি যেখানে ভালোবেসে ঠকেছে, সেখানে আমি মেহরিশ ঠকে যাওয়াটা কী খুব বিস্ময়কর কিছু? বিল গেটস, প্রিন্সেস ডায়ান এদের জীবন কি থেমে আছে? তাহলে আমার জীবন কেন থামবে? আমি শুধু এগিয়ে যাব। পেছনে ফিরে তাকালে মানুষ দূর্বল হয়ে যায়। তাই যখন থেকে বুঝেছি আর পেছনে তাকানো যাবেনা, তখন থেকে সামনে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেছি। আমি কেন একজন ব্যক্তিত্বহীন পুরুষের জন্য আফসোস করব? বরং নিজের ব্যক্তিত্ব এমনভাবে গড়ব যেন, যে আমাকে ছেড়ে গেছে সে আফসোস করবে। অল ওকে?”
সায়র হেসে ফেলল। মেয়েটার ব্যক্তিত্ব আসলেই খুব স্ট্রং। এত গুছিয়ে কথা বলে কিভাবে? কোনো আফসোস নেই, রাগ নেই, অভিমান নেই, অভিযোগ নেই আছে শুধু বুক ভরা অদম্য ইচ্ছাশক্তি। সায়র অন্যমনস্ক থাকতে দেখে মেহরিশ প্রশ্ন করল,
“ মিস্টার, সায়র? শুনছেন?”
সায়র নড়েচড়ে বসল। হেসে বলে উঠল,
“আই লাইক ইউর পারসোনালিটি, মেহরিশ।”
মেহরিশ হাসল। কোলে থাকা আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
“জানেন, আমি খুব দূর্বলচিত্তের মেয়ে ছিলাম। যাকে ধমক দেওয়ার আগেই তার চোখে পানি চলে আসত। আমার সাথে কেউ অন্যায় করছে যেনেও আমি প্রতিবাদ করতে পারতাম না। সবসময় একা থাকার চেষ্টা করতাম। কারোর সাথে প্রয়োজনের অধিক কথা বলার জন্য শব্দ খুঁজতাম। আর বেশি লোকসমাগম দেখলে তো আমার গায়ে জ্বর চলে আসতো...।”
এইটুকু বলে ফিক করে হেসে ফেলল। পুনরায় বলা শুরু করল,
“বাড়ির থেকে একা একা কোথাও যেতে পারতাম না। ইভেন কলেজ, ভার্সিটি অব্দি না। এতটাই ভীতু ছিলাম। কোনো ছেলে আমার পাশে দিয়ে গেলেও আমার আত্মা কেঁপে উঠত। অবশ্য, আমার এই ভীতু সত্তার পেছনে এক ভয়ংকর কারণ ছিল।”
সায়র প্রশ্ন করতে যেয়েও থেমে গেল। মনে মনে ভাবল,
“প্রশ্নটা ব্যক্তিগত হয়ে যাবে না তো? যদি মেহরিশ মাইন্ড করে?”
আকাশ কুসুম ভেবে দমে গেল। মেহরিশ তা খেয়াল করে বলে উঠল,
“অতীতের কথাটা না হয় আজ থাকুক। পরে কোনো এক সময় শেয়ার করব। অতীতের সেই নরম, ভীতু আমিটার জীবনে আহিলের আগমন ছিল বসন্তের মিষ্টি হাওয়ার মতো। ভার্সিটির প্রথম দিন আমাদের সবাইকে সিনিয়রা ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছিল। আমার জীবনের প্রথম ফুল নিয়েছিলাম আহিলের হাত থেকে। প্রথম দেখায় ছেলেটার প্রতি অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করল। যে আমি ছেলেদের ছায়াকেও ভয় পেতাম, সেই আমি হঠাৎ করে আহিলকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আহিলের হাসিটা আমার বার বার মুগ্ধ করে। হাসির প্রেমে পড়েই ফেঁসে গিয়েছিলাম।”
পুনরায় শব্দ করে হাসল মেহরিশ। সায়র অবাক পানে তাকিয়ে দেখছে শুধু। মেয়েটা কী দুর্দান্ত! বুকের ভেতর কষ্ট চেপে ঠোঁটের কোনে কী মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে রেখেছে! সায়র হুট করেই প্রশ্ন করল,
“মেহরিশ, একটা প্রশ্ন মনে পড়ল। করব?”
“অবশ্যই। প্লিজ, করুন।”
সায়র একটু থেমে কাঁপা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি বললেন, আপনি যখন চার মাসের ছিলেন তখন আপনাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে আহিল আমেরিকা চলে আসে। কিন্ত প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তো ডিভোর্স হয় না। তাহলে কী আপনি এখনো আহিলের স্ত্রী?”
মেহরিশের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হয়ে জবাবে বলল,
“হ্যাঁ।”
সায়রের বুকটা ধক করে উঠল। গলা শুকিয়ে আসতে লাগল। চোখ দুটোয় অসহায়ত্ব ভেসে উঠল। পুনরায় কম্পিত বাক্যে জিজ্ঞেস করল,
“এখন যদি আহিল ফিরে আসে তাহলে আপনি তাকে মেনে নিবেন?”
মেহরিশ এক নজর তাকাল সায়রের দিকে। পরক্ষণেই হেসে জবাবে বলল,
“মিষ্টার সায়র, আমি জীবন্ত গোলাপ ফুল। আমার কাছে ঘেষলেও কাটার আঘাতে রক্তাক্ত হতে হবে। আমি যেমন দেখতে সুন্দর, ঠিক তেমনি ভয়ংকর। ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত পারি৷ আবার ঘৃণার প্রতীকও বয়ে বেড়াতে পারি। জীবনকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া অবশ্যই উচিত। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের দ্বিতীয় বার সুযোগ দেওয়া কখনোই উচিত না। বুঝলেন?”
সায়রের মুখে হুট করে হাসি ফুটল। মুচকি হাসতে হাসতে বলল,
“আপনি খুব শক্ত মনের অধিকারী, মেহরিশ। দ্বিতীয় বার জীবন সঙ্গীকে চুজ করতে ভুল করবেন না, আশা করি।”
মেহরিশ হেসে বলল,
“মানুষ পঁচা শামুকে একবার পা কা*টে, মিষ্টার সায়র। আর হ্যাঁ, দ্বিতীয় বার আমার জীবনে কেউ আসবে না। কেউ না। পুরুষ জাতিকে ঘৃণা করিনা, আমি জানি সবাই এক না। তবে পুরুষ শব্দটা আমার কাছে এখন অতীতের মতো আতঙ্কের।”
বলেই উঠে দাঁড়াল। আনায়াকে বুকে আগলে নিয়ে বলল,
“আজ আসি, মিস্টার সায়র। ভালো লাগছে না। একদিন বাসায় চলে আসবেন সব গল্প হবে। দাওয়াত রইল। আসবেন কিন্তু।”
সায়র আমতা আমতা করে বলল,
“আমি পৌঁছে দেই?”
মেহরিশ বাঁধা দিয়ে বলে উঠল,
“ধন্যবাদ। তবে আমি একা একা চলতে পারি।”
“না, মানে। আনায়াকে নিয়ে ড্রাইভ করতে প্রবলেম হবে না?”
মেহরিশ হাসল। দৃঢ় বাক্যে শুধাল,
“আমি অভ্যস্ত।”
বলেই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য হাঁটা শুরু করল। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই বহু পরিচিত মুখখানা দেখে মেহরিশের পা থেমে গেল। চোখ দুটো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। এতদিন পর মানুষটাকে দেখে মেহরিশের বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। কেন আসল মানুষটা? কেন? জীবনের সব সুখ তো নিয়ে চলে এসেছিল। তাহলে আজ আবার কোন সুখ কেড়ে নিতে এসেছে? কথাগুলো ভেবে আনায়াকে আরো শক্ত করে বুকের ভেতর আগলে রাখল। শেষ সুখটা মেহরিশ কিছুতেই হাত ছাড়া করবে না। কিছুতেই না...

#চলবে

#ধরিয়া_রাখিও_সোহাগে_আদরে
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#সূচনা_পর্ব

Address

Dhamoirhat

Telephone

+8801820906075

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when গল্পের শহর posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to গল্পের শহর:

Videos

Share

Nearby media companies