24/11/2024
(04)
#তাসনিয়া_রহমান_স্নিগ্ধা
দুটোর দিকে বাসায় পৌঁছালাম।জ্বর বোধহয় বেড়েছে কিছুটা। বাসায় ফিরে দেখি মা মুন কে খাওয়ায় দিচ্ছে। আমাকে দেখে বললো,
' তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আয়।খাওয়ায় দিই।'
আমি কোনোরকমে হেসে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। ভীষণ রকমের অস্বস্তি লাগছে আমার।ঘরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ক্লান্তি, অস্বস্তি সব একসাথে জেঁকে বসেছে যেন। প্রেসক্রিপশন টা আবার খুলে দেখলাম।সেই লেখা গুলো,
“ আমি ভুল করে ওইসব করিনি।নিজ ইচ্ছেতেই করেছি। শুধু তোমার জন্য ই। কিন্তু এত সমস্যা হবে জানলে করতে যেতাম না। আমার খারাপ লাগছে খুব সেদিন থেকে। সরাসরি বলার সাহস হচ্ছে না আর। যদি আবার রেগে যাও।018868623**! আমি জানি তুমি আমার উপর ভীষণ রেগে আছো ওই ঘটনা নিয়ে।যদি রাগ কমে তাহলে একটা টেক্সট দিয়ো। আমি অপেক্ষা করবো।”
মানুষটা কেন লিখলো এইসব। ফার্মেসির লোকটা আমাকে আর উনাকে নিয়ে কি ভাবছে কে জানে।হয়ত ভেবেই বসেছে আমরা কোনো সম্পর্কে আছি।মান ভাঙাতে এভাবে লিখেছে।ইশশশ! আমি রেগে আছি এটা উনাকে কে বলেছে?ক্লিয়ার করলাম যে আমার সবকিছুই ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাহলে?উনি আগ বাড়িয়ে এত বুঝে এসব লিখলেন।কখন লিখেছেন! তা-ও তো খেয়াল করিনি। আমার জন্য ই করেছে সব। কিন্তু আমার জন্য কি করবে।ফোন নাম্বার ও দিয়েছে।থাক দিক! আমি কল দিব না। টেক্সট ও দিব না।কোন ঠ্যাকা নেই আমার। বাবা জানলে এইবার মে'রে'ই ফেলবে আমাকে।সেধে সেধে আর মা'র খেতে চাই না।উনি সুন্দর পরিবেশে বড় হওয়া মানুষ।এসবের ঝামেলা, যন্ত্রণা কিছু বুঝবেন না।তাই এত সহজেই এসব লিখে পাঠাতে পেরেছেন। কিন্তু আমি তো!
প্রেসক্রিপশন টা সাইডে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে রইলাম।জ্বরের জন্য ভালো লাগছে না। ফ্রেশ ও হইনি। এত্ত আনইজি লাগছে আমার। কেমন মানুষ! ডিরেক্টলি আপনি বললো আর লিখলো তুমি। সমস্যা কি উনার! এভাবে কেউ ফোন নাম্বার দেয়?মানে উনি তো একজন ডাক্তার।পার্সোনালিটি এত লেইম কেন।মুখে ক্ষমা চেয়েছে এটাই তো অনেক।আবার কানেক্ট হওয়ার কি দরকার!এসব ভাবতে ভাবতেই জ্বর নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
এক ঘন্টা ও হয়নি ঘুম ভাঙল।দরজা ধাক্কাধাক্কির আওয়াজেই ভাঙল।শরীরের ব্যথা,জ্বর দুটোই প্রচন্ড রকমের বেড়েছে মনে হচ্ছে। প্রেসক্রিপশন টা বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।মা দাঁড়িয়ে আছে।মুন,মা একযোগে দরজা ধাক্কাচ্ছিল এতক্ষণ ধরে। আমাকে দেখে মুন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
' ঘুমাইছিলি?হাত মুখ ধুইছস?'
মা কপালে হাত দিয়ে চমকে উঠলো। বললো,
' তোর তো অনেক জ্বর রে মা।আয় মাথায় পানি দিয়ে দিই। এভাবে কেউ ঘুমায় বাইরে থেকে এসে? ডাক্তার ওষুধ দেয় নাই?আয় বাথরুমে আয় আমার সাথে।'
মা আমাকে ধরে ধরে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলেন। ফ্লোরে বসিয়ে দিয়ে মাথায় আস্তে আস্তে পানি ঢালতে লাগলেন। অনেক্ষণ ধরে।আধ ঘন্টা মত হবে পানি ঢালার পর তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিলো। এরপর কাপড় পাল্টিয়ে,হাত মুখ ধুয়ে বাইরে এলাম।ঠান্ডা লাগছে ভীষণ। রীতিমত কাঁপতে শুরু করেছি।মা আমাকে ধরে এনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মাথা, মুখ ভালোভাবে মুছে দিলো। এরপর চাদর গায়ে দিয়ে দেওয়ার পর ভাত আনতে গেল।মুন পাশ থেকে দাঁড়িয়ে সবকিছু খেয়াল করছে। বয়স তো খুব একটা বেশি না ওর। মাত্র সাত বছর। আমি ওকে ইশারায় কাছে ডাকলাম। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলে বললাম,
' মাথা টা টিপে দাও তো ভাইয়া!'
' তাহলে আমাকে চকলেট দিবি?'
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ' দিবো নে। তুমি সুন্দর করে হাত বুলিয়ে দাও তো। তাহলে এক বক্স চকলেট দিবো।'
মুন খুশি হয়ে বলল আচ্ছা। বিছানায় উঠে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আমার কাছে এলে ওর মুখে কথার খই ফুটে। এখনও ব্যতিক্রম নয়।নিজে নিজে বলতে লাগলো,
' মা না কালকে সকালে নানার বাড়িতে চলে যাবে। তোমাকে আর আমাকেও নিয়ে যাবে।আপু?'
' কি হইছে?'
' তুমি কই গেছিলা সকালে?'
' ডাক্তারের কাছে। ক্যান?'
' আমি না বাড়িতে আসে তোমাকে খুঁজছি।ছিলা না তুমি।'
আমি ক্লান্ত গলায় বললাম, ' ডাক্তারের কাছে গেছিলাম তো ভাইয়া। তুমি প্রাইভেট থেকে কখন আসছো?'
' কিছুক্ষণ পরে ই আসছি।'
আমাদের কথাবার্তার এ পর্যায়ে মা আসলো ভাত নিয়ে।এক হাতে প্লেট আর আরেক হাতে পানির গ্লাস।টেবিলের উপর গ্লাস টা রেখে আমার পাশে বসে ভাত মাখাতে লাগলেন।ডিম আর ডাল। মা'কে জিজ্ঞেস করলাম,
' খাইছো তুমি?'
মুন বলে উঠলো,
' নাপ। তুমি আসার পর খাবে বলছে।'
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।মা ভাত মাখিয়ে আমার মুখের সামনে ধরল।
______________________
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরই মা তাড়াহুড়ো লাগিয়ে দিলো। কালকে সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই গেছে। ওষুধের পাওয়ার অনেক বেশি।তার উপর ব্যথার ওষুধ। সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমাইছি।রাতে একবার ঘুম ভাঙলে মা খাইয়ে দিয়েছিল। ওষুধ খেয়ে আবার ঘুম। পুরোপুরি রেস্ট নিয়ে আজ সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে একটু ভালো লাগছে। ভাবছিলাম আজকে ফোন কিনতে যাব বাবা স্কুলে চলে গেলে। কিন্তু মা তাড়াহুড়ো করতে লাগলো নানার বাসায় পাঠানোর জন্য।মা যাবে না। আমি আর মুন যাবো। মা বিয়ের আগের দিন যাবেন।বিয়ে হতে আরও এক সপ্তাহ দেরি আছে। আমাকে এত আগে পাঠানোর মানে বুঝলাম না। বারবার বললাম এত আগে কেন যাবো,মা প্রতিবারই উত্তর দিয়েছেন,
' বাসায় অনেক মেহমান আসবে। ওদের সাথে সময় কাটালে ভালো লাগবে আমার।'
অগত্যা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম।কাল রাতে আর দুপুরে ওষুধ খাওয়ায় কাজে দিয়েছে।জ্বর,শরীর ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে।শরীর ঝরঝরে লাগছে সকাল থেকে।রেডি হয়ে ব্যাগ আর মুন কে নিয়ে বের হলাম। প্রেসক্রিপশন টা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছিলাম। নাহলে মা আমার ঘরে গেলেই দেখতে পেতো।বাবার জন্য গরম পানি বসানো চুলায় তাই গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারলেন না মা।বাবা বসার ঘরে সোফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।বের হওয়ার সময় আস্তে করে বললাম,
' বাবা! যাচ্ছি।'
বাবা খবরের কাগজ উল্টাতে উল্টাতে বললেন,
' হ্যা যাও যাও। গিয়ে আবার নস্টামি করিয়ো না যেন।বড় বড় খালাতো মামাতো ভাই গুলো তো আছেই। সেগুলো সাথে যেন খবরদার কোনো ঢলাঢলি করা না হয়।হলে এই বাড়িতে পা রাখবা না আর।নস্টা মেয়ে থাকার চেয়ে কবর দিয়ে দেওয়া অতি উত্তম।'
বাসার বাইরে পা ফেলছিলাম,বাবার কথা শুনে পা থেমে গেল। আমাকে এত অবিশ্বাস করে বাবা? সরাসরি নস্টা মেয়ে বললো কিভাবে?চোখ দিয়ে আপনা থেকেই পানি গড়িয়ে পড়ছে।বাম হাতে ব্যাগ ধরা আমার।ডান হাতে চোখ মুছে মাথা নেড়ে বললাম,
' আচ্ছা।'
মা দরজার পাশে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি মায়ের দিকে তাকানোয় বললেন,
' সাবধানে যাইস। পৌঁছে আরিফিনের মোবাইল দিয়ে একটা কল দিস।'
আমি মাথা নেড়ে বের হয়ে এলাম।মুন আসছে পিছু পিছু। কান্না পাচ্ছে খুব। বাবা রাগী জানতাম।কিন্তু এতটা রাগ আর অবিশ্বাস আমার প্রতি! আমার হজম হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।চোখ মুছতে মুছতে গেটের বাইরে এলাম। সিএনজির খোঁজে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিতে আমার রাইট সাইডে রাস্তায় চোখ আটকে গেল। আমার থেকে পাঁচ -ছয় হাত দূরত্বে একটা বাইক দাঁড় করানো।বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন। আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।মানুষটাকে দেখে হার্টবিট বেড়ে গেল আমার।বাবা যদি এনাকে এখানে দেখে ফেলে!
মনে হতেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো আমার।মে'রে ফেলবে আমাকে।তা জানা সত্ত্বেও এই মানুষটা এখানে কেন এসেছে?
চলবে...............
আপনারা ভালোমন্দ কিছু বলেন না কেন গল্প টা নিয়ে?😮💨