18/02/2021
নামাজ আদায় করার পর আল্লাহ তাআলার জিকির-আজকারের প্রতি মনোযোগী হতে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি। প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর গুরুত্বপূর্ণ জিকির-দোয়া ও কিছু আমল তুলে ধরা হলো-
ফজরের নামাযের পরঃ
(১) হাদিস শরীফের মধ্যে আছে, যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ার পর ঐ অবস্থায় বসিয়া, আল্লহর ধ্যানে মগ্ন থাকিয়া কাহারো সহিত কথা না বলিয়া নিম্নের দুয়া দশ বার ( ১০ বার ) পাঠ করিবে তাহার আমল নামায় দশটি নেকী হইবে, দশটি গোনাহ মাফ হইবে এবং বেহেস্থের মধ্যে দশটি দরজা বৃদ্ধি পাইবে এবং সমস্ত দিন শয়তান থেকে এবং খারাপ কাজ থেকে হেফাজত থাকিবে। দুয়াটি হলঃ-
‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া ইয়ুমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদির।”
(২) যে ব্যক্তি ফজর নামাযের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত আল্লাহর ধ্যানে লিপ্ত থেকে এবং সূর্য উঠার পর দুই রাকাত এশরাক নফল নামায পড়ে, সে ব্যক্তি এই রকম ছওয়াব পাইবে যেমন- হজ্ব ও ওমরাহ হজ্বের ছওয়াব মেলে।
(৩) রুযী বৃদ্ধির জন্য প্রত্যহ ফজরের নামাযের পর “ইয়া রাজ্জাকু” তিনশত আট বার পড়িতে হইবে।
(৪) ফজরের পরঃ
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” [ ১০০ বার ]
“ছোবাহানাল্লাহ” [ ১০০ বার ]
“আলহামদুলিল্লাহ্” [ ১০০ বার ]
“আল্লাহু আকবর” [ ১০০ বার ]
“আসতাগ ফিরুল্লাহা রব্বি মিনকুল্লি জামবিও ওয়াতুবু ইলায়হি” [ ১০০ বার]
“ছুবাহান আল্লহি ওয়া বিহামদিহি ছুবাহান আল্লহিল আজিম” [ ১০০ বার ]
ফজর এবং মাগরিব নামাযের পরঃ
(১) যে ব্যাক্তি সকাল সন্ধায় ( ফজর ও মাগরিবের পর ) তিনবার করে “আউজু বিল্লাহিস সামিউল আলিম মিমিনাস শাইতনির রজীম” পড়ার পর “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পড়ে “সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত” পড়িবে, তাহার হেফাজতের জন্য ৭০হাজার ফেরেস্তা দিনে এবং ৭০হাজার ফেরেস্তা রাত্রে দুয়া করিবে এবং মৃত্যুর পর সে শহীদের দরজা প্রাপ্ত হইবে।
(২) যে কেহ প্রত্যহ ফজরের ফরজ ও মাগরিবের ফরজ নামাযের পর নিম্নের দুয়া সাত বার করিয়া পড়িবে সে দোযখের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করিবে। দুয়াটি হলঃ- “আল্লাহুম্মা আ-জিরনা মিনান নার।”
(৩) ভীষণ বিপদ ও মোকদ্দমা হইতে মুক্তি পাইবার জন্য ফজর ও মাগরিব নামাযের পর হাজার বার অথবা পাঁচশত বার “হাছবি আল্লাহু ওয়া নি’য়মাল ওয়াকীল” পাঠ করিলে সকল প্রকার বিপদ হইতে উদ্ধার পাওয়া যায়। [ইহা পরিক্ষিত]
জোহরের নামাযের পরঃ
(১) জোহরের নামাযের পর “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মোহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মোহাম্মাদিন ওয়া বারিক ওয়া ছাল্লাম।” এই দরূদ ১০০ বার পড়িলে (১) উক্ত ব্যক্তি দেনাদার হইবে না, যদিও হয় তবে আল্পদিনে পরিশোধ করিতে পারিবে। (২) হালাল রুযী দ্বারা তার রিজিক বরকত হইবে। (৩) সাধারণ বিপদ মুছিবত হইতে আল্লাহ তাহাকে নিরাপদে রাখিবেন। (৪) রাতদিন তাহার দ্বারা কোন গুনাহের কাজ হইবে না।
মাগরিব নামাযের পরঃ
(১) মাগরিবের পর ১০০ বার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুল্লুল্লাহ” পড়িলে (১) দুনিয়ার কোন প্রয়োজনীয় কাজে অপরাগ হইবে না। (২) দৈনিক পাঁচবার আল্লাহ পাক রহমতের দৃষ্টি করিবেন। (৩) কেয়ামতের দিন বিপদকালে আল্লাহ তাহার প্রতি রাজী থাকিবেন। (৪) কবরের আজাব হইতে নিরাপদে থাকিবেন। (৫) মনকার নাকিরের সওয়ালের জাবাব আছান হইবে।
এশার নামাযের পরঃ
(১) এশার নামাযের পর ১০০ বার “ছোবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিইল আজিম।” পড়িলে (১) ৭০ জন নবীর ছাওয়াব তাহার আমল নামায় লেখা হইবে। (২) বেহেস্তে তাহাকে স্বর্ণের ৭০টি মহল দেওয়া হইবে। (৩) নবীজির উম্মতের মধ্যে ৭০ হাজার পাপীকে সুপারিশ করিবে। (৪) কেয়ামতে নবীজির সুপারিশ পাইবে। (৫) আল্লাহর দিদার লাভ হইবে।
অজু করার আগে ও পরেঃ
(১)হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বানী প্রদান করেছেন যে, যে ব্যক্তি অজু করার সময় একবার “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাহার চল্লিশ হাজার বছরের গুনাহ মাফ করবেন এবং সে ঈমানের সাথে পৃথিবী হতে বিদায় নিবে। [“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” এর ফজিলত প্রসঙ্গে একটি হাদিসঃ- হযরত আলী মরতুজা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বানী প্রদান করেছেন যে, যে ব্যক্তি একশত বার আদবের সাথে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পাঠ করিবে, আল্লাহ তায়ালা তার এক লক্ষ বছরের গুনাহ মাফ করবেন এবং বিদ্যুৎ এর ন্যায় পুলছুরাত পার করে দিবেন।]
(২) রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অজুর ফরজ, সুন্নত এবং আদব রক্ষা করিয়া ভাল ভাবে অজু করিয়া আজুর শেষে কালেমা শাহাদত পড়িবে তাহার জন্য বেহেস্থের ৮টি দরজা খুলিয়া যাইবে। সে যে দরজা দিয়া বেহেস্থে প্রবেশ করিতে চাইবে তাহাই পারিবে। কালেমা শাহাদতঃ-
“আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।”
রাত্রি শয়নের আমলঃ
(১) রাসুল (সাঃ) এক সময় হযরত আলী (রাঃ) কে বলিলেন যে, প্রত্যেক রাত্রিতে পাঁচটি কাজ করিয়া শুইয়া থাকিবা । (১) চার হাজার দিনার ছদকা করিবে। (২) এক খতম কোরান শরীফ পড়িবে। (৩) জান্নাতের মূল্য আদায় করিয়া শুইবে। (৪) উভয় পক্ষের ঝগড়া মীমাংসা করিয়া ঘুমাইবে। (৫) এক হজ্ব আদায় করিয়া শুইবে। তখন হযরত আলী (রাঃ) আরজ করিলেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এ কাজ খুব মুস্কিল জনক, আমার দ্বারা ইহা করা সম্ভব নয়। তখন রাসুল (সাঃ) পুনরায় বলিলেনঃ- (১) ৪বার সূরা ফাতেহা পড়িয়া শুইবে তাহলে ঐ চার হাজার দেনার ছদকা সমতুল্য ছওয়াব পাইবে। (২) তিনবার সূরা এখলাছ পড়িয়া শুইবে তাহলে ঐ এক খতম কুরান শরীফ পড়ার ছওয়াব পাইবে। (৩) তিনবার দরূদ শরীফ পড়িয়া শুইবে তাহলে জান্নাতের মূল্য আদায় হইবে। দরূদ শরীফঃ- “আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদিও ওয়া বারিক ওয়া ছাল্লাম।” (৪) দশ বার এস্তেগফার পড়িয়া শুইবে তাহলে উভয়ের ঝগড়া মীমাংসা করার সমতুল্য ছওয়াব পাইবে। এস্তেগফারঃ- “আস্তাগ ফিরুল্লাহা রব্বি মিন কুল্লি জামবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি।” (৫)চারবার তৃতীয় কালেমা পড়িয়া শুইবে তাহাতে এক হজ্ব আদায়ের ছওয়াব পাইবে। তৃতীয় কালেমাঃ- “ছুবাহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবর। ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়িল আজিম।” তখন আলী (রাঃ) বলিলেন আমি প্রতি রাত্রিতে এই আমল করিতে থাকিব।
আরও কিছু আমলঃ
(১) কোন ব্যাক্তি হযরত নবী করিম (সাঃ) এর নিকট আরজ করিলেন আমার ক্ষতি হয়ে গেছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন সকাল সন্ধায় আপনি নিম্নের দুয়া তিনবার করিয়া পাঠ করিবেন আপনার কোন ক্ষতি হইবে না। ঐ বাক্তি এই ভাবে পাঠ করিতেন তাহার কোন ক্ষতি হয় নাই। দুয়াটি হলঃ- “বিসমিল্লাহি আলা নাফছি ওয়া মালি।”
(২) যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধায় নিম্নের দুয়াটি তিনবার পড়িবে কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাহাকে খুশি (সন্তুষ্ট) করিবার জিম্মদার। [তিরমিজি] দুয়াটি হলঃ- “রাদিতু বিল্লাহি রব-বাও ওয়া বিল ইসলামি দিনাও ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যাও ওয়া রাসুলা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম”।
(৩) এক সময়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছাহাবাদেরকে উদ্দেশ্য করিয়া এরশাদ করিয়াছিলেন যে, ইহা কি হইতে পারে না যে তোমরা ওহুদ পাহাড়ের সমতুল্য নেক আমল কর। তখন ছাহাবারা আরজ করিলেন ইহা কেমন করে হইতে পারে? ছাহাবাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন “ছুবহানাল্লাহ” ওহুদ পাহাড় থেকে বড়। কমপক্ষে দৈনিক সকাল সন্ধায় ১০০বার ছুবহানাল্লাহ, আল-হামদুল্লিহ, আল্লাহু আকবর পড়িবে।
(৪) স্বপ্ন দোষ বন্ধের জন্য এশার নামায পড়িয়া ওজুর সহিত বুকে হাত রাখিয়া “আচ্ছামীউল মুমীতু“ ১৫ বার পড়িয়া কথা না বলিয়া ঘুমাইয়া যাবে। ইনশাআল্লাহ ঐ রাতে আর স্বপ্ন দোষ হবে না। আর এই দুয়া পড়ার পর কথা বলিলে পুনরায় পড়িতে হইবে।
(৫) “আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহাদিকা ওয়া অয়াদিকা মাছতাতুয়াতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সা’নাত ওয়া আবয়ু লাকা বি-নিয়ামাতিকা আলাইয়া ওয়াবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ইন্নাহু লা-ইয়াগ ফিরুজজুনুবা ইল্লা আনতা।” হাদিছ শরিফে আছে, যদি কেহ এই দুয়া সকালে পড়ে ঐ দিন তাহার মৃত্যু হইলে সে ব্যক্তি বেহেস্তি হইবে, আর যদি রাত্রে পড়ে ঐ রাত্রে মৃত্যু হইলে সে বেহেস্তি হইবে। [ বোখারী শরীফ ]
(৬) মেধা শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক নামাযের পর মাথায় হাত রাখিয়া “ইয়া কাবিউ, ইয়া মতিনু” ১৫ বার পড়তে হবে।
(৭) কাজ সহজ ও সফরে নিরাপদের জন্য “আল-মুমিনু” ৩৬ বার এবং “ইয়া-আজিজু” ৪০ বার পড়ে কাজে রওনা করতে হবে।
(৮) প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর আয়াতুল কুরছি পাঠকারীর বেহেস্তে যাইতে মউত ব্যতীত কোন বাধা নাই।
দরূদ শরীফ এর আমলঃ
(১) “মুফাখিরুল ইসলাম” কিতাবের মধ্যে হাদিসে বর্ণিত হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি জুম্মার রাত্রে আমার উপরে একশত বার দরূদ পাঠ করিবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দরূদ পাঠ কারীর দুনিয়া ও আখেরাতে একশত উদ্দেশ্য পুরা করিবেন। তার মধ্যে ৭০টি দুনিয়ার আর ৩০টি আখেরাতে। দ্বিতীয় হাদিছে বর্ণিত হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন এই নিম্নের দরূদ এক হাজার বার পড়িবে, সে ব্যক্তি তাহার নিজের থাকার ও বসার জায়গা জান্নাতুল ফেরদাউসের মধ্যে যতক্ষণ না দেখিবে ততক্ষণ সে দুনিয়া থেকে বিদায় হইবে না অর্থাৎ মরিবে না। দরুদটি হলঃ-
“আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া-আলিহি আলফা আলফা মারহ।”
(২) নিম্নের দরূদ শরীফ একবার পাঠ করিলে এক লক্ষ নেকী লাভ করা যায়। দরুল শরীফটি হলঃ- “আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা ছাইয়িদিনা মুহাম্মাদিন আল-ফা আল-ফা মারহ”।
(৩) হযরত খিজির (রাঃ) থেকে বর্ণিত হইয়াছে যে, যে ব্যক্তি নিম্নের দরূদ পড়িবে তাহার দিল নিফাক থেকে এমন পরিস্কার হইবে যেমন পানিও শাবানের দ্বারা কাপড় পরিস্কার করা হয়। দরূদ শরীফটি হলঃ- “ছল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লিম।“