29/02/2024
👁️🗨️ লিপ ইয়ার কেন হয়, না থাকলে কী হতো❓❓
চার বছর পর ২০২৪ সাল এসেছে ফেব্রুয়ারিতে একটা অতিরিক্ত দিন নিয়ে। ৩৬৫ দিনের বদলে এ বছরের ক্যালেন্ডারে রয়েছে ৩৬৬ দিন। এ অতিরিক্ত দিনকেই আমরা ‘লিপ ডে’ বলি। সাধারণত প্রতি চার বছরে একটি লিপ ইয়ার হয়। প্রশ্ন হলো, কী এই লিপ ইয়ার? কেন এর প্রয়োজন? প্রতি চতুর্থ বছরই কি একটি লিপ ইয়ার?
বছরে সাধারণত ৩৬৫ দিন থাকে। কিন্তু একটি লিপ ইয়ারে ৩৬৬ দিন থাকে। লিপ ইয়ার ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয় ২৮ দিনে। আর লিপ ইয়ার বছরে ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হয় ২৯ দিনে। কিন্তু তারপরও ফেব্রুয়ারি মাস বছরের সবচেয়ে ছোট মাস।
লিপ ইয়ার কবে চালু হয়?
যিশু খ্রিষ্টের জন্মের ৪৬ বছর আগে জুলিয়াস সিজার লিপ ইয়ার চালু করেছিলেন, যা পরে ১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে চালু হয়। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে একটি বছরের সময়সীমা ছিল ৩৬৫ দিন। প্রতি চার বছর অন্তর সেটাই হয়ে ওঠে ৩৬৬ দিন। রয়াল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের ওয়েবসাইট অনুসারে, ইসলামিক ক্যালেন্ডার আল-হিজরাতে লিপ ইয়ারে ১২তম মাসে জুল হিজ্জাতে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়েছে। তবে এ পদ্ধতিটি ত্রুটিমুক্ত নয়। কারণ গণনার জন্য ব্যবহৃত ছয় ঘণ্টা আর প্রকৃত ৫ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট এবং ৪৬ সেকেন্ডের মধ্যে পার্থক্য আছে।
কেন প্রতি চার বছর অন্তর লিপ ইয়ার হয়?
সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর একবার ঘুরতে ৩৬৫.২৫ দিনের একটু কম সময় লাগে। তাই চার বছর পর পর লিপ ইয়ার ধরলে প্রতি ৪০০ বছরে ৩ দিন অতিরিক্ত দিন ধরা হয়ে যায়। এ সমস্যার সমাধানে প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়, যেসব বছরে ০০ থাকবে সেসব বছর লিপ ইয়ার থেকে বাদ যাবে। কিন্তু এতেও সমাধান না হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব বছরে ০০ থাকবে এবং ৪০০ দ্বারা বিভাজ্য নয়, তাদের লিপ ইয়ারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। যেমন- ১৯০০ সাল লিপ ইয়ার নয়, কিন্তু ২০০০ সাল লিপ ইয়ার।
লিপইয়ার কেন প্রয়োজনীয়?
একটি সৌর ক্যালেন্ডারের এক বছরে পৃথিবী সূর্যের চারপাশের বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে সময় নেয় ৩৬৫ দিন, ৫ ঘণ্টা, ৪৮ মিনিট এবং ৪৬ সেকেন্ড। একটি সাধারণ বছর এভাবেই ৩৬৫ দিনে শেষ হয়। অতিরিক্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা চার বছরে ২৪ ঘণ্টা হয়। এই ২৪ ঘণ্টা হলো পৃথিবীর একবার নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘোরার সময়। সেই হিসাবে অতিরিক্ত সময় বা ২৪ ঘণ্টা চতুর্থ বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত দিন হিসেবে যুক্ত হয়। এটি করা না হলে ফসলের চক্র এবং ঋতু পরিবর্তনের সময় ধীরে ধীরে বদলে যাবে। যা মানুষের সময় নির্ধারণের কৌশলকে বিভ্রান্তির দিকে পরিচালিত করবে।
যদি ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছর অন্তর সময়ের সেই ছোট সংশোধন না করা হয় তবে ধীরে ধীরে ঋতুগুলোর সঙ্গে তারিখের আর সামঞ্জস্য থাকবে না। ক্যালেন্ডারে দেখানো গ্রীষ্মকালে প্রকৃতপক্ষে শীতকাল পড়বে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে কৃষিতে। কৃষকেরা ক্যালেন্ডার দেখলে ফসলের মৌসুম নিয়ে বিভ্রান্ত হবেন।
বিশ্বের অন্যান্য ক্যালেন্ডারে সময় গণনা ঠিক রাখার নিজস্ব উপায় রয়েছে। ইহুদি ক্যালেন্ডার চাঁদ ও সূর্য উভয়কে বিবেচনায় রেখে করা হয়। এই ক্যালেন্ডারে প্রতি ১৯ বছরের মধ্যে সাতবার একটি করে পুরো মাস যোগ করা হয়। বিশেষ পার্বণ যেন প্রতি বছর একই সময় আসে তা নিশ্চিত করতে মাঝে মধ্যে এই ক্যালেন্ডারে একটি লিপ মাস যোগ করা হয়।
ইসলাম ক্যালেন্ডার আরও অনন্য। এটি চাঁদের পর্যায়গুলো অনুসরণ করে ও কোনো অতিরিক্ত দিন যোগ করে না। যেহেতু একটি চন্দ্র বছর মাত্র ৩৫৫ দিন দীর্ঘ, তাই ইসলামি ক্যালেন্ডারের তারিখগুলো প্রতি বছর সৌর ক্যালেন্ডারের তুলনায় ১০ থেকে ১১ দিন এগিয়ে আসে।
উদাহরণস্বরূপ, রমজান মাস ইসলামিক বা হিজরি ক্যালেন্ডারের নবম মাস। চলতি ২০২৪ সালে রমজান ১১ মার্চ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে গত বছর রমজান ছিল ২৪ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল। একই ভাবে ২০২৫ সালে ১ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত এবং ২০২৬ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ রমজান মাস পড়তে পারে।
সূত্রঃ RTV