19/06/2015
তারাবীহ নামায ২০ রাক‘আত ।। ৮ রাক‘আত নয়
*********************************
� সুওয়াল : সহীহ বর্ণনানুযায়ী তারাবীহ নামায কত
রাক‘আত? অনেকে বলছেন, তারাবীহ নামায নাকি ৮
রাক‘আত। তারা আরো বলছেন, ২০ রাক‘আত তারাবীহের পক্ষে
নাকি কোন সহীহ হাদীস নেই। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাই।
▶▶ জাওয়াব : সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহের
বর্ণনানুযায়ী তারাবীহ নামায ২০ রাক‘আত। যারা বলেন,
তারাবীহ ৮ রাকাআত, তাদের বক্তব্য সঠিক নয় ।
যারা বলেন, তারাবীহ ৮ রাক‘আত, তাদের ভুল শুধানোর জন্য
তাদের প্রদত্ত এ সংক্রান্ত বুখারী ও মুসলিম শরীফে বণিত হাদীস ও তার সঠিক মর্ম নিম্নে তুলে ধরা হল--
প্রথম হাদীস :
হযরত আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রা.) হতে থেকে
বর্ণিত, তিনি হযরত আয়িশা (রাঃ)কে জিজ্ঞেস করলেন,
রামাজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামায কেমন ছিল?
উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রামাজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাক‘আতের বেশী পড়তেন
না।
(বুখারী শরীফ, হাদীস নং ১১৪৭)
দ্বিতীয় হাদীস :
হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আবু সালামা (র.) বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাত্রী কালীন নামায সম্পর্কে হযরত আয়িশা (রা.)কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেন,
রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত্রে তের রাক‘আত নামায আদায় করতেন
। প্রথমে আট রাকাত পড়তেন, এর পর বিতির পড়তেন, তার পর
দুই রাক‘আত নামায বসে আদায় করতেন ।
( মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ১৭২৪)
এ জাতীয় হাদীস দ্বারা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীগণ তারাবীহ ৮ রাক‘আত বলে প্রচার করে থাকেন। অথচ এ
হাদীসসমূহ দ্বারা ৮ রাক‘আত তারাবীহ প্রমাণিত হয় না।
কারণ--
উল্লিখিত হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীস দু’টি
যেমনি ভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, ঠিক তেমনি
মুসলিম শরীফেই আয়েশা (রাঃ) থেকে দশ রাকাতের হাদীসও বর্ণিত আছে। যেমন,
হযরত কাসেম ইবনে মুহাম্মদ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন , আমি হযরত আয়িশা (রা.)কে বলতে শুনেছি যে,
রাসুুলুল্লাহ (সা.) রাত্রিতে দশ রাকাত নামায, এক রাকাত
বিতর এবং ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সহ মোট ১৩ রাক‘আত
পড়তেন। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ১৭২৭)
এভাবে হযরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসসমূহের
প্রতি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়--রাসুলুল্লাহ (সা.)
রাত্রিকালীন নামায কোন রাত্রিতে ১১ রাক‘আত, কখনো ১৩
রাক‘আত, কখনো ৯ রাক‘আত, আবার কখনো ৭ রাক‘আতও আদায়
করতেন । সুতরাং বুঝা গেলো, এক্ষেত্রে হযরত আয়িশা (রা.)- এর হাদীস দ্বারা ৮ রাক‘আত নির্দিষ্ট করা সম্পুর্ণ ভুল।
দ্বিতীয়তঃ এ রাত্রিকালিন নামায তারাবীহ নয়, বরং
তাহাজ্জুদ ছিলো এবং এ তাহাজ্জুদ নামাযের ব্যাপারেই
প্রশ্ন করা হয়েছিলো। যদ্দরুণ হযরত আয়িশা (রা.)
“রামাজানে ও রামাজানের বাইরে” শব্দ যোগ করেছেন।
সুতরাং বুঝা গেলো--আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত সেই হাদীসগুলো তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত, তারাবীহ সম্পর্কিত নয় ।
আর একারণেই হাদীস গ্রন্থাকারগণ এ সকল হাদীসকে
তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন, তারাবীর অধ্যায়ে
নয়।
অার যদি বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীগণ বলেন, সেই হাদীসগুলো
তারাবীহ সম্পর্কে, তাহলে বলবো, সে অনুযায়ী তারা নিজেরাই তো আমল করেন না। কেননা, সে হাদীসে
রামাজান ও অন্যান্য মাসের কথাও উল্লেখ রয়েছে, অথচ
তারা তাদের বক্তব্য অনুযায়ী অন্যান্য মাসে তারাবীহ
পড়েন না।
বলা বাহুল্য, তারাবীহ কখনো ৮ রাক‘আত নয়। ৮ রাক‘আত
বর্ণনার হাদীসগুলো তারাবীহ সম্পর্কিত নয়, সেগুলোতে তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে।
বরং তারাবীহ সম্পর্কিত সকল হাদীসে ২০ রাক‘আতের কথা
বলা হয়েছে। কোথাও ৮ রাক‘আতের কথা বলা হয়নি এবং
রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কিরাম (রা.), তাবেয়ীন ও
তাবে তাবেয়ীন সকলের যুগে ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়া
হয়েছে, কোথাও ৮ রাক‘আত তারাবীহ পড়া হয়নি। নিম্নে সেই ২০ রাক‘আত তারাবীহ নামায সংক্রান্ত সহীহ
হাদীসের দলীল পেশ করা হলো :
১ নং হাদীস :
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
রামাজান মাসে বিতর ব্যতীত বিশ রাক’আত তারাবীহ আদায় করতেন।”
(মুসান্নাফে আবী শাইবাহ, হাদীস নং ৭৬৯২)
২ নং হাদীস :
হযরত সায়ের ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, সাহাবীগণ উমর (রা.)-এর খেলাফত কালে রামাজান
মাসে ২০ রাক‘আত তারাবীহ পড়তেন । (বাইহাকী শরীফ, ২য় খণ্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ৪৬১৭)
৩ নং হাদীস :
হযরত ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, “হযরত উমর (রা.)-এর যুগে সাহাবীগণ তারাবীহ
বিতির সহ তেইশ রাক‘আত পড়তেন ।”
(মুয়াত্তা মালেক, ১ম খণ্ড, ১১৫ পৃষ্ঠা) ৪ নং হাদীস :
হযরত আতা ইবনে আবী রাবাহ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন, “আমি সাহাবীগণকে বিতির সহ তেইশ রাকাত
তারাবীহ পড়তে দেখেছি।”
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৫ম খণ্ড, ২২৪ পৃষ্ঠা)
উল্লেখিত সবগুলো হাদীস সহীহ ও নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়াও এ ব্যাপারে আরো বহু দলীল হয়েছে। মাসিক আদর্শ নারীর
গত ২০১৩ সনের রামাজান সংখ্যায় ২০ রাক‘আত তারাবীহর
২০টি নির্ভরযোগ্য দলীল বর্ণনা করা হয়েছে। এ সকল
দলীল দ্বারা একথা সুস্পষ্ট রুপে প্রমানিত হয় যে,
তারাবীহ নামায ২০ রাক‘আত যার উপর খুলাফায়ে
রাশেদীন, সমস্ত সাহাবা (রা.), তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও সালফে সালেহীনগণ (র.) ঐক্যমতে আমল করেছেন এবং চার
মাজহাবের ইমামগণও এ ব্যাপারে ঐক্যমত পোষন করেছেন।
সৃতরাং এ ব্যাপারে ভিন্নমতের কোন অবকাশ নেই।
*****************************************
দ্বীনী এ পোস্টকে শেয়ার করে ইসলামের আলো পৌঁছে দিন
প্রিয়জনদের কাছে। দ্বীনের হিদায়াতের সমূজ্জ্বল আলোকরশ্নিতে আলোকিত হোক মুমিনদের হৃদয়।
*****************************************
>> নিয়মিত এ “সুওয়াল-জাওয়াব :: মাসিক আদর্শ নারী”
পেজের পোস্টসমূহের আপডেট পেতে এ পেজে লাইক দিন এবং
বন্ধু-বান্ধবগণকে এর সহীহ দ্বীনী শিক্ষার আলো দেয়ার
জন্য তাদেরকে এ পেজের দাওয়াত দিন। পেজটির লিঙ্ক -- https://www.facebook.com/Adarsha.Jawab
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইসলামী মাসিক পত্রিকা
Most Popular Islamic magazine of BD
The Monthly Adarsha Nari