Azhar Mahmood

Azhar Mahmood Journalist & Columnist lives in Dhaka, Bangladesh.

Columnist lives in Dhaka, Bangladesh

Editor in Chief at Campuslive24.com
Former Correspondent at Bangladesh Television-Employee
Former Special Correspondent at Boishakhi Media Ltd (Boishakhi Television)
Former Senior Reporter at Daily Manabzamin
Former News Monitor at Voice of America - VOA
Former General Secretary Bangladesh Crime Reporters Association (Crab)

‘এরশাদ স্যার বলছেন সেলিম তুমি ছাত্র সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক হইবা? আমি বলছি স্যার আপনি যা বলেন। এমতেই সমাজসেবা সম্পাদক হই...
15/02/2023

‘এরশাদ স্যার বলছেন সেলিম তুমি ছাত্র সংসদের সমাজসেবা সম্পাদক হইবা? আমি বলছি স্যার আপনি যা বলেন। এমতেই সমাজসেবা সম্পাদক হইয়া গেছি।’

প্রিয় মানুষ মতি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জয়েন করলাম। ফারাবী ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনি। আমাকে সঙ্গে করে নিয়.....

“আমি কিন্তু জানি! তোর সার্টিফিকেটে ও আইডি কার্ড এর মধ্য বয়স কম দেয়া আছে। সবাইকে বলে দেবো নাকি তোর আসল বয়স! থাক! গোপন থাক...
01/02/2023

“আমি কিন্তু জানি! তোর সার্টিফিকেটে ও আইডি কার্ড এর মধ্য বয়স কম দেয়া আছে। সবাইকে বলে দেবো নাকি তোর আসল বয়স! থাক! গোপন থাক। সময়মতো কাজে লাগবো। এই কথা গুলো আমাদের সমাজের প্রায় সকলের। আসল বয়সটা ডাকা পড়ে আছে। কেন জানি সেটা গোপন করে রাখতে সকলেই একটু ভিন্নভাবেই পছন্দ করেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। এটাই আমাদের সমাজের কালচার! আমাদের লালিত-যাপিত জীবনের সঙ্গী। সৃষ্টিকর্তা মঙ্গল করুক সকলের। যেহেতু এই মাসেই আমার জন্ম তাই এই ফেব্রুয়ারীর গল্পটা বললে অত্যুক্তি হবে না। তাহলে চলুন এবার গল্পের দিকে মন দেয়া যাক।

মীম দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ভাষা আন্দোলনের কথা সে বইয়ে পড়েছে। সে জানে এই দিনটি শুধু শহীদ দিবস নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও সারা বিশ্বে পালন করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। এই দিন খুব সকালে সব বয়সের লোকেরা শহীদমিনারে যায় ফুল দিতে। খুব ছোটবেলায় সে তার বাবার সাথে একবার শহীদমিনারে গিয়েছিল ফুল দিতে। তারা দুই বোন। মীমের অপর বোনের নাম আনিকা। সে পড়াশুনা করে ক্লাস ফোর এ।তাছাড়া প্রতিবছর তারা একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে টেলিভিশনে নানা অনুষ্ঠান দেখে থাকে। শহীদমিনারে ফুল দেওয়ার দৃশ্যও সে খুব মজা করে দেখে। বাবা এবার মীম ও আনিকাকে শহীদমিনারে নিয়ে যাবেন ফুল দিতে। তাই তারা মনে মনে ভীষণ খুশি। সে অপেক্ষা করছে, কবে সেই শহীদদিবস আসবে তার জন্য।

একুশে ফেব্রুয়ারির আগের রাতে মীমের বাবা বেশকিছু ফুল কিনে এনেছেন। তার মা সেই ফুল দিয়ে একটি মালা তৈরি করেছেন। আগামীকাল খুব সকালে তারা এই মালাটি নিয়ে শহীদমিনারে যাবে। মীম তার বাবা-মায়ের সঙ্গে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ল। বাবার সঙ্গে সে ফুলের মালা নিয়ে যাচ্ছে শহীদমিনারে। মীমদের মতো অনেকেই ফুল এবং ফুলের মালা হাতে নিয়ে শহীদমিনারে যাচ্ছে। শহীদমিনারে ফুল দিতে পেরে আনিকা ভীষণ খুশি। কিন্তু তার মনে হাজারো প্রশ্ন! ফুল দিলেই কি মূল দায়িত্ব শেষ? নাকি আরো কিছু আছে?

একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে মীমের অনেক কিছু জানার কৌতূহল। সে তার বাবার কাছে এ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে চায়। সে জানতে চায় ভাষা আন্দোলন কেন হয়েছিল, কীভাবে আন্দোলন হয়েছিল, আন্দোলনে কতজন শহিদ হয়েছিল, তাদের পরিচয় কী ছিল ইত্যাদি। তার বাবা একে একে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন।

মীমের বাবা তাকে বললেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা ছিল তাদের বেশিরভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের অধিবাসী। নানান অপকৌশলে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করত। তারা এই শোষণের কাজকে দীর্ঘ করার জন্য বেশকিছু পথ বেছে নেয়। তার মধ্যে একটি হলো উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা।

অথচ পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা আর মাত্র ৬ ভাগ মানুষের মাতৃভাষা ছিল উর্দু। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে যে আন্দোলন হয় সেটাই ছিল ভাষা আন্দোলন। একুশের চেতনাই বাঙালি জাতিকে দিয়েছে অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার খুন, গুম, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের প্রেরণা।

বাংলা ভাষা আমাদের মুখের ভাষা, আমাদের প্রাণের ভাষা। এই ভাষাকে রক্ষা করার জন্য সেই সময় ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, সাধারণ মানুষসহ পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের অনেকের লাশ গুম করে ফেলার কারণে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে মাত্র ৫-৬ জনের পরিচয় পাওয়া যায়। তারা হলেন আবদুস সালাম, রফিক উদ্দিন আহমদ, আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, শফিউর রহমান।

শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ বাবার সঙ্গে প্রেস পরিচালনায় যোগ দেন। তার গ্রামের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার পারিল (বতর্মানে যার নামকরণ হয়েছে রফিকনগর) গ্রামে। শহীদ আবুল বরকত ভারতীয় উপমহাদেশের (অবিভক্ত) মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র।

ক্যানসারে আক্রান্ত শাশুড়িকে চিকিৎসা করানোর জন্য ময়মনসিংহ হতে ঢাকাতে আসেন শহিদ আবদুল জব্বার। গ্রামে তিনি দৈনন্দিন জিনিসপত্রের ছোটখাটো একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন। শহীদ শফিউর রহমান ঢাকায় হাইকোর্টে করনিক পদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি ছিল অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের হুগলি জেলার কোন্নগর গ্রামে। শহিদ আবদুস সালাম ৮৫ দিলকুশাস্থ ‘ডাইরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ’-এ করনিক পদে চাকরি করতেন। তার বাড়ি ছিল ফেনী জেলার দাগনভূঁইয়া উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামে।

একুশে ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছে গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে তিনি ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের তালিকায় রয়েছে একজন নয় বছরের বালক, যার নাম অহিউল্লাহ এবং আবদুল আউয়াল নামে একজন রিকশাচালক। ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পুলিশ গুলিতে তারা নিহত হন।

মীমের বাবা আরো বললেন, সারা বিশ্বের মাতৃভাষাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখন চেষ্টা করা হচ্ছে। মাতৃভাষার গুরুত্বকে তুলে ধরার জন্য বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আমাদের উচিত মাতৃভাষাকে সম্মান করা। মাতৃভাষাকে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যাতে বাংলাভাষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা সবসময় চেষ্টা করব সর্বত্র বাংলাভাষা ব্যবহার করতে।

ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে মীমের বাবার মুখ থেকে অনেক কিছু শুনেছে। এসব কথা শুনে ভাষাশহীদদের প্রতি তার মন শ্রদ্ধায় ভরে যায়। মীম তার বাবাকে অজান্তেই প্রশ্ন করে বসল। বাবা, তুমি কেন আমাকে ইংরাজি ভাষা ভালোভাবে শেখার জন্য বকাবকি কর? আমি তো এখনো বাংলাভাষা ভালোভাবে শিখতে পারিনি। আর তুমি তো কথা বলার সময় শুধু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার কর। মীমের বাবা এ রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন তা সে ভাবতেও পারেননি। মেয়ের এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বাবা চুপ থাকলেন। আর কোন কিছু বললেন না। কিন্তু ফুল দেয়ার কালচারের ব্যাপারে তার হাজারো প্রশ্ন। জানতে চায় এভাবেই কি সেই গুনিজনদের দায়িত্ব পালন করা যায়????

ভর্তিতে আনন্দ আপ্লুত, বিদায়ে চোখ ছিল অশ্রুপূর্ণআজহার মাহমুদ: সেদিন আর ফিরে পাব না। ম্লান হয়ে গেছে পৃথিবীর প্রবাহে। যদি ফ...
28/01/2023

ভর্তিতে আনন্দ আপ্লুত, বিদায়ে চোখ ছিল অশ্রুপূর্ণ

আজহার মাহমুদ: সেদিন আর ফিরে পাব না। ম্লান হয়ে গেছে পৃথিবীর প্রবাহে। যদি ফিরে পাওয়া যেত হারানো দিনগুলোকে; তাহলে কতই না ভাল হতো। সময়ের নদীতে বহমান জীবনের স্মৃতি হয়তো তলিয়ে যায় কিন্তু হারিয়ে যায় না। মনের মনিকোঠায় রক্ষিত থাকে ফেলে আসা সময়ের লীলা পদ্ম; ভাসতে থাকে মন যমুনায়, মন পদ্মায় অমূল্য সম্পদ হয়ে। আর তা রয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে।

কালোত্তীর্ণ ও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ঐতিহ্যে লালিত এ অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার প্রাচীন বিদ্যাপিঠ আমাদের স্মৃতি ও গৌরবের ধারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহাসিক বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ব বঙ্গের মানুষের পরম প্রবোধ ও প্রাপ্তি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মনন-মানসিকতা, শিক্ষা-দিক্ষা, চিন্তা-চেতনায় পূর্ব বাংলার পশ্চাৎপদ মানুষ যে আলোর সন্ধান পেয়েছিল প্রকৃতপক্ষে সেই আলোর একমাত্র দিশারী এই বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় বলতেই আমরা বুঝি, এ স্থানের সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রের শিক্ষিত সমাজ ও এর শিক্ষার্থীদের একটা আদর্শিক সম্পর্ক, যা একটা জাতির ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি’র মান ও মর্যাদা তুলে ধরে। সে অর্থে রাষ্ট্র বা সমাজের শিক্ষক এবং সমাজকেও অনেকটাই চেনা যায়।

শিক্ষক শুধু শিক্ষার্থীর শিক্ষক নয়, তিনি সমাজ ও জাতির শিক্ষক। কারণ শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা সমাজ এবং জাতির কান্ডারি হিসেবে তার ঝান্ডা বহন করে। শিক্ষার্থীরাই আগামীকালের দেশ ও সমাজ নির্মাতা। রাষ্ট্রের কর্ণধার ও দেশের পরিচালক। এছাড়া সমাজের অনেক মানুষ অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে সৎ এবং উপযুক্ত পরামর্শের জন্য শিক্ষকদের শরণাপন্ন হয়। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব অপরিসীম।

ঘূর্নায়মান পৃথিবীর সময়কালের গণনায় ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৯৮৯ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে পরিচিতি লাভের সৌভাগ্য অর্জন করি। সেই থেকে শুরু হলো আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় বছরের ছাত্রজীবন। আমার মেধা ক্রমিক নং ছিল ৫৬২। সেদিন ৪৯২ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কালের গর্ভে ভেসে যাওয়া সময় এখনো আমাকে আপ্লুত করে। ঝলমলে আভা ছড়ায়। মনে দোল খায়। ভাবতে ভালো লাগে সেই সব অতীতের কথা। সময় থেমে নেই। নিজস্ব গতিতে বেগমান জীবনধারা সামনে এগুতে থাকে। তবুও নষ্টালজিক অনুভব আমাকে সুখানুভবে আচ্ছন্ন করে। জীবন ও জীবিকার ফাঁকে ও বাঁকে হারানো দিন চুপিসারে বর্তমানের বাস্তবতায় উঁকি মারে। মাঝখানে মস্ত ফারাক, অনেকগুলো বছর সময়ের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। কিন্তু ভাবনার ডানায় উড়তে থাকা অনুভব ফিরে আসে চেতনার আকাশে। চেতনার আম্রকাননে।

কলা ভবনে ভর্তির জন্যে যাই। আমার মাথার চুল বরাবরই বড় ছিল। বেশ অনেক বড়। ভাইভা রুমে ঢুকে বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত। কলা অনুষদের তখন ডীন ছিলেন সৈয়দ মকসুদ আলী স্যার। এক পর্যায়ে সৈয়দ মকসুদ আলী স্যার আমার বিষয়ে সরদার ফজলুল করিম স্যার বললেন, মকসুদ আলী এই ছেলেটা রাজনীতি করবে, ওর চুল দেখ কত লম্বা! ওকে মুহসীন হলে দিও না। তার পর সলিমুল্লাহ হলে দেখলেন কোন সিট নেই। পরে আমাকে মুহসীন হলেই দিলেন।

এবার সাবজেক্ট চয়েজের বিষয়। আমাকে তারা জানতে চাইলেন কোন বিষয়ে পড়তে আগ্রহী? কারণ আমার মেধাক্রম ছিল ৫৬২। আমি অবলীলায় বললাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান। সরদার স্যার ও মকসুদ আলী স্যার আমাকে বললেন তোমার স্কোর তো বেশ ভাল। তুমি চাইলে আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, লোক প্রশাসন কিংবা ইংরেজী ও অর্থনীতি নিতে পার। এখান থেকেই চয়েজ কর। আমি আবারো বললাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এবার দু'জনই একটু মৃদু রেগে বললেন তুমি একটু চিন্তা করো। বাইরে যাও। পনের মিনিট পরে এসো। এখন ভাবতেও অবাক লাগে উনারা কত উন্নত মন ও মানসিকতার মানুষ ছিলেন।

পনের মিনিট পরে আবার ভেতরে গেলে তারা জানতে চান আমার সিদ্ধান্ত। এবারও আমি অপকটে বললাম স্যার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানই পড়বো। আবারো সরদার ফজলুল করিম স্যার মকসুদ আলী স্যারকে বললেন, ছেলেটা রাজনীতি করবে......। টিক সালাম দিয়ে বের হবার আগে স্যারেরা বললেন সাবধানে চলবে। পরে জানতে পারলাম ওই শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর। তারা দু'জনই খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম পূরণের সময় আবাসিক ছাত্র হিসাবে আমাকে আরেকটি ফরম পূরণ করতে হয়েছিল। আর সেটা হলো হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে থাকবার অনুমতি চেয়ে হল প্রভোষ্ট বরাবর আবেদন। যদিও আমি হলে তেমন ছিলাম না। আমার ব্যাংকার বড় ভাই আলী আহসান ভাইয়ের বাসাতেই থাকতাম। সেসময় তখন প্রাধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর আবুল হাসেম স্যার। তিনি কোন ডিপার্টমেন্টের ছিলেন তা ভুলে গেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র -ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত যে কোন একটা হলের অঃঃধপযবফ.... স্টুডেন্ট হিসাবে ভর্তি হতে হয়। যারা অনাবাসিক ছাত্র তারা ও হলের পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করে।

প্রথমদিন মুহসিন হলের ভিতরে প্রবেশ করে তখনকার লিফট এর সৌন্দর্য আমাকে অভিভূত করেছিল। সময়টা ছিলো জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ। হলে আশে পাশে ও ক্যাম্পাসে অজ¯্র রকমারি ফুলের সমাহার দেখে মুগ্ধতায় আপ্লুত মন ভালো লাগায় টইটুম্বুর হলো।
সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে হাঁটতে শুরু করা সেই নরম মনের ছেলেটি যখন ক্যাম্পাসের চারপাশে ফুটে থাকা বাগানের মধ্যখানে পায়ে চলার পথ ধরে এগোতে থাকলো তখনকার আবেগকে ভাষায় প্রকাশ আজ আর সম্ভব হবেনা।

চারিদিকের বড়বড় গাছগাছালির ছায়াঘন পরিবেশ, ফুলে ছেয়ে থাকা বাগান, সবুজ ঘাসের গালিচা-পাতা মসৃন আর বিশাল মাঠ পেরিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে একসময় হলের অফিস ঘরে পৌঁছে গেলাম। একজন হাউজ টিউটর স্যার আমাকে প্রভোষ্ট স্যারের রুমে নিয়ে এলেন; খুব সহজেই একজন বড় ভাইয়ের বদৌলতে অন্যজনের সাথে থাকবার অনুমতি পেয়ে গেলাম।

হলের নিয়ম-নীতির ব্যাপারে যেমন কঠিন তেমনি কড়া মেজাজে ছাত্রদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতেন প্রভোষ্ট স্যার। হলে লিফট দেখে আরো একদফা মনটা ভরে উঠলো। তখন ঢাকার হাতে গোনা কয়টা বিল্ডিং এ ছিলো লিফট। ছয়তলা ভবনটি খোলামেলা ও আলো বাতাসে ও ব্যবহারে সকল সুযোগ- সুবিধায় আরামদায়ক। লিফট, সিঁড়ি ও নীচ তালার এককোনায় একটি কেন্টিন বাকি পুরো অংশের অফিস ও অডিটোরিয়াম।

আমাদের সময় মুহসীন হল ও সূর্যসেন হলে ছিল দু'টি লিফট। ছেলেদের এই দুটি হল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন সব সময় আলাদা টেনশনে থাকতেন। কারণ এই দুই হলে রাজনৈতিক কর্মকাÐ বেশী চলতো। আমার খুব কাছের মানুষ ও বন্ধু ক'জন থাকতো মুজিব হলে। একারণে মাঝে মধ্যেই আমি রাতে সেই হলে থাকতাম। অনেক দিন হলের ছাদে গল্প আর আড্ডায় কখন যে রাত পোহাত তা টেরই পেতাম না। ওই হলে সেই আড্ডার সাথীরা এখন পুলিশ ও সরকারের বড় মাপের আমলা। স্ব স্ব মহিমায় তারা উৎসারিত।

পাশেই নির্মাণাধীন স্যার এফ রহমান হল ছিল টিনসেট। সেখানেও আমার অনেক রাত কেটেছে। কখনও পড়া আবার কখনও কখনও আড্ডার ছলে সেই হলেই রাত্রী যাপন হতো। তখনও নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি। সিটের স্বল্পতার কারণে এক-ই সিটে দুজন করে থাকার ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য ছিলেন মুহসিন হল প্রশাসন। একই রুমে দুই জনের সিটে হয়ত ৪ কিংবা ৫ জনকে একসাথে থাকতে হতো। সিঙ্গেল রুমে দুইজন। তবে রাজনৈতিক ক্যাডারদের সুযোগ সুবিধা তখনও ছিল এখনও তেমনই আছে।

তৃতীয় বর্ষের এক বড় ভাইয়ের বদৌলতে আমি বেশ ক'বার বিভিন্ন কক্ষে থাকবার অনুমতি পেয়ে যেতাম খুব সহজে। ডাবলিং থাকার ব্যাপারটা ছিলো ভীষণ ভাবে পরাধীন একটা ব্যাপার। নিজস্ব একটা টেবিল নেই, লকারে জামাকাপড় রাখার উপায় কিংবা অনুমতি নেই; এতছোট খাটে অন্যের সাথে শেয়ার করা সত্যি অসহনীয় ছিলো।

অন্যদিকে সিনিয়র জুনিয়ররা মিলে রাত ১০টা পর্যন্ত টিভি রুমে সময় কাটাতাম। সেই একত্রিত হয়ে টিভি দেখার উল্লাস। মাঝে মধ্যে সিনিয়র ভাইয়েরা এসে খবরদারী করতেন। প্রতিবাদ করার উপায় ছিলো না। তখন একমাত্র টিভি চ্যানেলের নাম ছিলো 'বাংলাদেশ টেলিভিশন'। তবে যেদিন ক্যাডাররা টিভি দেখতে আসতো সেদিন অনেক নিরিহ শিক্ষার্থী আর টিভি দেখতো না। বিভিন্ন ছুতাধরে চলে যেতো। প্রথম বর্ষের ছেলেরা আবার কারো কাছে এটা শেয়ার করতে ভয় পেত। সিরিয়াল খুব জনপ্রিয় ছিলো দর্শকদের কাছে। সিরিয়ালের মধ্যে একটির নায়ক শক্তিশালী অতি মানব। সবকিছুতে বিজয়ী হবার প্রবণতা দেখিয়ে মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখতো তরুণ প্রজন্মকে। আরেকটি সিরিয়ালের এক তরুণীর অসাধারণ কর্মকান্ড ছিলো উপভোগ্য।

খুব সিরিয়াস কোন মূহুর্তে উপরের ক্লাসের কোন এক ভাই এসে হঠাৎ সুইচ অফ করে আমাদের বিরক্ত করতেন কখনো কখনো। জানতে চাইলে বলতেন আগামীকাল ওনার টিউটরিয়াল ক্লাসে পরীক্ষায় বসতে হবে। টিভি থেকে জোড়ালো শব্দের আওয়াজ মনোযোগে বাঁধা দিচ্ছে। প্রথম বর্ষের ছাত্র তারউপর ডাব্লিং করছি, চুপচাপ হজম করা ছাড়া উপায় ছিলো না।

আমি সিনিয়র রুমমেটদের অনেক আদর পেয়েছি বটে কিন্তু ফরমাশ খাটা থেকে রেহাই পাইনি। এখনও মনে আছে একজন ক্যাডার যিনি বিশেষ একটি জিনিষ কেরী করতেন সব সময়। তিনি বরিশাল অঞ্চলের। তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। বলতেন তুই করে। উনার ভাষা মাঝে মধ্যে বুঝতাম না। কারণ বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন। আমাকে মনু বলতেন। আমি ভাবতাম মনে হয় আমাকে আদর করে মনু নাম দিয়েছে। বলতাম ভাই আমি তো মনু নই। উনি বলতেন ''এইয়া তুই বুঝবি না''। আরো অনেক........কিছু।

তিনি কিন্তু মুহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন না। তিনি তার বিশেষ জিনিষটা আমাকে বিশ্বাস করে রুমে রেখে যেতেন। বর্তমানে তিনি একটি মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এখনও দেখলে মজা করে বলেন ''মনু, কিরে মনু এইয়া বুঝ''। মাত্র ক'দিনেই অপরিচিত হল ও ক্যাম্পাসের পরিবেশে খাপখাইয়ে নিয়ে একমাস পর সহজ মনে হলো জীবনধারার গতিপ্রকৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করার পর স্বাধীন ভাবে চলাফেরার সুযোগটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠে। ইচ্ছে হলে ক্লাস করবো ইচ্ছে না হলো লাইব্রেরীতে বসে বই পড়বো অথবা লাইব্রেরীর বারান্দায় বসে গল্পে মসগুল হবো, তা নাহলে টিএসির সবুজ মাঠের আকর্ষণে দলবেঁধে কত কথার ফুলঝুরিতে মেতে উঠবো। ঘরে ফেরার বাধ্য বাধকতা অনেকটাই ছিল শিথিল।

আমি বিশ্ববিদ্যালয় ও মুহসিন হলের কথা ভুলতে পারি না। আমার স্মৃতিতে অ¤øান হয়ে আছে। যেদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই সেদিন ছিলাম আনন্দ আপ্লুত, গৌরবে মন ও বুক ভরে গিয়েছিল। আর যেদিন স্মৃতিময় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ত্যাগ করি সেদিন আমি ছিলাম বেদনা বিধূর। চোখ ছিল অশ্রুপূর্ণ।

লেখক: আজহার মাহমুদ, সাংবাদিক ও সংগঠক
প্রধান সম্পাদক, ক্যাম্পাসলাইভ২৪ডটকম।

17/01/2023

ভর্তিতে আনন্দ আপ্লুত, বিদায়ে চোখ ছিল অশ্রুপূর্ণ
888888888888888888888888888888888888888

সেদিন আর ফিরে পাব না। ম্লান হয়ে গেছে পৃথিবীর প্রবাহে। যদি ফিরে পাওয়া যেত হারানো দিনগুলোকে; তাহলে কতই না ভাল হতো। সময়ের নদীতে বহমান জীবনের স্মৃতি হয়ত তলিয়ে যায় কিন্তু হারিয়ে যায় না। মনের মনিকোঠায় রক্ষিত থাকে ফেলে আসা সময়ের লীলা পদ্ম; ভাসতে থাকে মন যমুনায়, মন পদ্মায় অমূল্য সম্পদ হয়ে। আর তা রয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে।

কালোত্তীর্ণ ও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ঐতিহ্যে লালিত এ অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার প্রাচীন বিদ্যাপিঠ আমাদের স্মৃতি ও গৌরবের ধারক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহাসিক বঙ্গভঙ্গ রদের পর পূর্ব বঙ্গের মানুষের পরম প্রবোধ ও প্রাপ্তি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মনন-মানসিকতা, শিক্ষা-দিক্ষা, চিন্তা-চেতনায় পূর্ব বাংলার পশ্চাৎপদ মানুষ যে আলোর সন্ধান পেয়েছিল প্রকৃতপক্ষে সেই আলোর একমাত্র দিশারী এই বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় বলতেই আমরা বুঝি, এ স্থানের সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রের শিক্ষিত সমাজ ও এর শিক্ষার্থীদের একটা আদর্শিক সম্পর্ক, যা একটা জাতির ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি’র মান ও মর্যাদা তুলে ধরে। সে অর্থে রাষ্ট্র বা সমাজের শিক্ষক এবং সমাজকেও অনেকটাই চেনা যায়।

শিক্ষক শুধু শিক্ষার্থীর শিক্ষক নয়, তিনি সমাজ ও জাতির শিক্ষক। কারণ শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা সমাজ এবং জাতির কাণ্ডারি হিসেবে তার ঝাণ্ডা বহন করে। শিক্ষার্থীরাই আগামীকালের দেশ ও সমাজ নির্মাতা। রাষ্ট্রের কর্ণধার ও দেশের পরিচালক। এছাড়া সমাজের অনেক মানুষ অনেক সময় বিভিন্ন বিষয়ে সৎ এবং উপযুক্ত পরামর্শের জন্য শিক্ষকদের শরণাপন্ন হয়। এসব দিক থেকে বিবেচনা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব অপরিসীম।

ঘূর্নায়মান পৃথিবীর সময়কালের গণনায় ইংরেজি কেলেন্ডারের পাতায় ১৯৮৯ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে পরিচিতি লাভের সৌভাগ্য অর্জন করি। সেই থেকে শুরু হলো আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছয় বছরের ছাত্রজীবন। আমার মেধা ক্রমিক নং ছিল ৫৬২। সেদিন ৪৯২ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কালের গর্ভে ভেসে যাওয়া সময় এখনো আমাকে আপ্লূত করে। ঝলমলে আভা ছড়ায়। মনে দোল খায়। ভাবতে ভালো লাগে সে-ই সব অতীতের কথা। সময় থেমে নেই। নিজস্ব গতিতে বেগমান জীবনধারা সামনে এগুতে থাকে। তবুও নষ্টালজিক অনুভব আমাকে সুখানুভবে আচ্ছন্ন করে। জীবন ও জীবিকার ফাঁকে ও বাঁকে হারানো দিন চুপিসারে বর্তমানের বাস্তবতায় উঁকি মারে। মাঝখানে মস্ত ফারাক, অনেকগুলো বছর সময়ের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। কিন্তু ভাবনার ডানায় উড়তে থাকা অনুভব ফিরে আসে চেতনার আকাশে। চেতনার আম্রকাননে।

কলা ভবনে ভর্তির জন্যে যাই। আমার মাথার চুল বরাবরই বড় ছিল। বেশ অনেক বড়। ভাইভা রুমে ঢুকে বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত। কলা অনুষদের তখন ডীন ছিলেন সৈয়দ মকসুদ আলী স্যার। এক পর্যায়ে সৈয়দ মকসুদ আলী স্যার আমার বিষয়ে সরদার ফজলুল করিম স্যার বললেন, মকসুদ আলী এই ছেলেটা রাজনীতি করবে, ওর চুল দেখ কত লম্বা! ওকে মুহসীন হলে দিও না। তার পর সলিমুল্লাহ হলে দেখলেন কোন সিট নেই। পরে আমাকে মুহসীন হলেই দিলেন।

এবার সাবজেক্ট চয়েজের বিষয়। আমাকে তারা জানতে চাইলেন কোন বিষয়ে পড়তে আগ্রহী? কারণ আমার মেধাক্রম ছিল ৫৬২। আমি অবলীলায় বললাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান। সরদার স্যার ও মকসুদ আলী স্যার আমাকে বললেন তোমার স্কোর তো বেশ ভাল। তুমি চাইলে আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, লোক প্রশাসন কিংবা ইংরেজী ও অর্থনীতি নিতে পার। এখান থেকেই চয়েজ কর। আমি আবারো বললাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান। এবার দু'জনই একটু মৃদু রেগে বললেন তুমি একটু চিন্তা করো। বাইরে যাও। পনের মিনিট পরে এসো। এখন ভাবতেও অবাক লাগে উনারা কত উন্নত মন ও মানসিকতার মানুষ ছিলেন।

পনের মিনিট পরে আবার ভেতরে গেলে তারা জানতে চান আমার সিদ্ধান্ত। এবারও আমি অপকটে বললাম স্যার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানই পড়বো। আবারো সরদার ফজলুল করিম স্যার মকসুদ আলী স্যারকে বললেন, ছেলেটা রাজনীতি করবে......। টিক সালাম দিয়ে বের হবার আগে স্যারেরা বললেন সাবধানে চলবে। পরে জানতে পারলাম ওই শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর। তারা দু'জনই খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম পূরণের সময় আবাসিক ছাত্র হিসাবে আমাকে আরেকটি ফরম পূরণ করতে হয়েছিল। আর সেটা হলো হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে থাকবার অনুমতি চেয়ে হল প্রভোষ্ট বরাবর আবেদন। যদিও আমি হলে তেমন ছিলাম না। আমার ব্যাংকার বড় ভাই আলী আহসান ভাইয়ের বাসাতেই থাকতাম। সেসময় তখন প্রাধ্যক্ষ ছিলেন প্রফেসর আবুল হাসেম স্যার। তিনি কোন ডিপার্টমেন্টের ছিলেন তা ভুলে গেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র -ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত যে কোন একটা হলের Attached ....স্টুডেন্ট হিসাবে ভর্তি হতে হয়। যারা অনাবাসিক ছাত্র তারা ও হলের পরিচয়ে পরিচিতি লাভ করে।

প্রথমদিন মুহসিন হলের ভিতরে প্রবেশ করে তখনকার লিফট এর সৌন্দর্য আমাকে অভিভূত করেছিল। সময়টা ছিলো জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহ। হলে আশে পাশে ও ক্যাম্পাসে অজস্র রকমারি ফুলের সমাহার দেখে মুগ্ধতায় আপ্লূত মন ভালো লাগায় টইটুম্বুর হলো।
সদ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে হাঁটতে শুরু করা সেই নরম মনের ছেলেটি যখন ক্যাম্পাসের চারপাশে ফুটে থাকা বাগানের মধ্যখানে পায়ে চলার পথ ধরে এগোতে থাকলো তখনকার আবেগকে ভাষায় প্রকাশ আজ আর সম্ভব হবেনা।

চারিদিকের বড়বড় গাছগাছালির ছায়াঘন পরিবেশ, ফুলে ছেয়ে থাকা বাগান, সবুজ ঘাসের গালিচা-পাতা মসৃন আর বিশাল মাঠ পেরিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে একসময় হলের অফিস ঘরে পৌঁছে গেলাম। একজন হাউজ টিউটর স্যার আমাকে প্রভোষ্ট স্যারের রুমে নিয়ে এলেন; খুব সহজেই একজন বড় ভাইয়ের বদৌলতে অন্যজনের সাথে থাকবার অনুমতি পেয়ে গেলাম।

হলের নিয়ম-নীতির ব্যাপারে যেমন কঠিন তেমনি কড়া মেজাজে ছাত্রদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতেন প্রভোষ্ট স্যার। হলে লিফট দেখে আরো একদফা মনটা ভরে উঠলো। তখন ঢাকার হাতে গোনা কয়টা বিল্ডিং এ ছিলো লিফট। ছয়তলা ভবনটি খোলামেলা ও আলো বাতাসে ও ব্যবহারে সকল সুযোগ- সুবিধায় আরামদায়ক। লিফট, সিড়ি ও নীচ তালার এককোনায় একটি কেন্টিন বাকি পুরো অংশের অফিস ও অডিটোরিয়াম।

আমাদের সময় মুহসীন হল ও সূর্যসেন হলে ছিল দু'টি লিফট। ছেলেদের এই দুটি হল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় আলাদা টেনশনে থাকতেন। কারণ এই দুই হলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশী চলতো। আমার খুব কাছের মানুষ ও বন্ধু ক'জন থাকতো মুজিব হলে। একারণে মাঝে মধ্যেই আমি রাতে সেই হলে থাকতাম। অনেক দিন হলের ছাদে গল্প আর আড্ডায় কখন যে রাত পোহাত তা টেরই পেতাম না। ওই হলে সেই আড্ডার সাথীরা এখন পুলিশ ও সরকারের বড় মাপের আমলা। স্ব স্ব মহিমায় তারা উৎসারিত।

পাশেই নির্মাণাধীন স্যার এফ রহমান হল ছিল টিনসেট। সেখানেও আমার অনেক রাত কেটেছে। কখনও পড়া আবার কখনও কখনও আড্ডার ছলে সেই হলেই রাত্রী যাপন হতো। তখনও নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি। সিটের স্বল্পতার কারণে এক-ই সিটে দুজন করে থাকার ব্যবস্থা চালু করতে বাধ্য ছিলেন মুহসিন হল প্রশাসন। একই রুমে দুই জনের সিটে হয়ত ৪ কিংবা ৫ জনকে একসাথে থাকতে হতো। সিঙ্গেল রুমে দুইজন। তবে রাজনৈতিক ক্যাডারদের সুযোগ সুবিধা তখনও ছিল এখনও তেমনই আছে।

তৃতীয় বর্ষের এক বড় ভাইয়ের বদৌলতে আমি বেশ ক'বার বিভিন্ন কক্ষে থাকবার অনুমতি পেয়ে যেতাম খুব সহজে। ডাবলিং থাকার ব্যাপারটা ছিলো ভীষণ ভাবে পরাধীন একটা ব্যাপার। নিজস্ব একটা টেবিল নেই, লকারে জামাকাপড় রাখার উপায় কিংবা অনুমতি নেই; এতছোট খাটে অন্যের সাথে শেয়ার করা সত্যি অসহনীয় ছিলো।

অন্যদিকে সিনিয়র জুনিয়ররা মিলে রাত ১০টা পর্যন্ত টিভি রুমে সময় কাটাতাম। সেই একত্রিত হয়ে টিভি দেখার উল্লাস। মাঝে মধ্যে সিনিয়র ভাইয়েরা এসে খবরদারী করতেন। প্রতিবাদ করার উপায় ছিলো না। তখন একমাত্র টিভি চ্যানেলের নাম ছিলো 'বাংলাদেশ টেলিভিশন'। তবে যেদিন ক্যাডাররা টিভি দেখতে আসতো সেদিন অনেক নিরিহ শিক্ষার্থী আর টিভি দেখতো না। বিভিন্ন ছুতাধরে চলে যেতো। প্রথম বর্ষের ছেলেরা আবার কারো কাছে এটা শেয়ার করতে ভয় পেত। সিরিয়াল খুব জনপ্রিয় ছিলো দর্শকদের কাছে। সিরিয়ালের মধ্যে একটির নায়ক শক্তিশালী অতি মানব। সবকিছুতে বিজয়ী হবার প্রবণতা দেখিয়ে মুগ্ধতায় ডুবিয়ে রাখতো তরুণ প্রজন্মকে। আরেকটি সিরিয়ালের এক তরুণীর অসাধারণ কর্মকান্ড ছিলো উপভোগ্য।

খুব সিরিয়াস কোন মূহুর্তে উপরের ক্লাসের কোন এক ভাই এসে হঠাৎ সুইচ অফ করে আমাদের বিরক্ত করতেন কখনো কখনো। জানতে চাইলে বলতেন আগামীকাল ওনার টিউটরিয়াল ক্লাসে পরীক্ষায় বসতে হবে। টিভি থেকে জোড়ালো শব্দের আওয়াজ মনোযোগে বাঁধা দিচ্ছে। প্রথম বর্ষের ছাত্র তারউপর ডাব্লিং করছি, চুপচাপ হজম করা ছাড়া উপায় ছিলো না।

আমি সিনিয়র রুমমেটদের অনেক আদর পেয়েছি বটে কিন্তু ফরমাশ খাটা থেকে রেহাই পাইনি। এখনও মনে আছে একজন ক্যাডার যিনি বিশেষ একটি জিনিষ কেরী করতেন সব সময়। তিনি বরিশাল অঞ্চলের। তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। বলতেন তুই করে। উনার ভাষা মাঝে মধ্যে বুঝতাম না। কারণ বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন। আমাকে মনু বলতেন। আমি ভাবতাম মনে হয় আমাকে আদর করে মনু নাম দিয়েছে। বলতাম ভাই আমি তো মনু নই। উনি বলতেন ''এইয়া তুই বুঝবি না''। আরো অনেক........কিছু। তিনি কিন্তু মুহসিন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন না। তিনি তার বিশেষ জিনিষটা আমাকে বিশ্বাস করে রুমে রেখে যেতেন। বর্তমানে তিনি একটি মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী। এখনও দেখলে মজা করে বলেন ''মনু, কিরে মনু এইয়া বুঝ''। মাত্র ক'দিনেই অপরিচিত হল ও ক্যাম্পাসের পরিবেশে খাপখাইয়ে নিয়ে একমাস পর সহজ মনে হলো জীবনধারার গতিপ্রকৃতি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করার পর স্বাধীন ভাবে চলাফেরার সুযোগটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠে। ইচ্ছে হলে ক্লাস করবো ইচ্ছে না হলো লাইব্রেরীতে বসে বই পড়বো অথবা লাইব্রেরীর বারান্দায় বসে গল্পে মসগুল হবো, তা নাহলে টিএসির সবুজ মাঠের আকর্ষণে দলবেঁধে কত কথার ফুলঝুরিতে মেতে উঠবো। ঘরে ফেরার বাধ্য বাধকতা অনেকটাই ছিল শিথিল।

আমি বিশ্ববিদ্যালয় ও মুহসিন হলের কথা ভুলতে পারি না। আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। যেদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই সেদিন ছিলাম আনন্দ আপ্লোত, গৌরবে মন ও বুক ভরে গিয়েছিল। আর যেদিন স্মৃতিময় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ত্যাগ করি সেদিন আমি ছিলাম বেদনা বিধূর। চোখ ছিল অশ্রুপূর্ণ।

বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন। তিনি চলে গলেন। আর ফিরবেননা। ফুটবল সম্রাট পেলের এই বিদায় বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। দীর্ঘ অস...
30/12/2022

বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন। তিনি চলে গলেন। আর ফিরবেননা। ফুটবল সম্রাট পেলের এই বিদায় বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেলেন বিশ্ব ফুটবলের সবথেকে বড় সুপারস্টার পেলে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮২। ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবলের সম্রাট। তার পরিবারের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এর আগে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন পেলে। অনেক বারই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ার পরেও শেষ পর্যন্ত ভক্তদের মাঝে ফিরে এসেছেন তিনি।
কাতার বিশ্বকাপ চলাকালীন যখন পেলে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তার আরোগ্য কামনা করতে থাকেন বিশ্বজুড়ে ফুটবল তারকা ও সমর্থকরা। তারইমধ্যে নজর কেড়েছিল কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের সমর্থকদের আনা ফুটবল সম্রাটের একটি ব্যানার। ওই ব্যানারে ছিলো, গালের পাশে একটি ফুটবল ধরে আছেন পেলে। মুখে পরিশ্রান্তির হাসি। ব্যানারের ঠিক সামনে বিশ্বকাপ ট্রফির রেপ্লিকা ধরেছিলেন এক ব্রাজিলিয়ান। তবে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হলো তাকে।
ইতিহাসের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পেলে। ১৯৫৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারে জয় করেছেন মোট তিনটি বিশ্বকাপ। বিশ্বের আর কোনও খেলোয়াড়ের এমন রেকর্ড নেই। ১৯৫৮ সাল এবং ১৯৭০ সালের ফাইনালে গোলও করেছিলেন পেলে। ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেন পেলে। ১৯৫৮ সালে যখন ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করে, তখন পেলের বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। তিনি ২০০০ সালে ফিফার শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ইতিহাসে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। তার একুশ বছরের ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৩৬৩টি ম্যাচে ১ হাজার ২৮১টি গোল করেছেন। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯১ ম্যাচে করেন ৭৭টি গোল। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ফিফা গোল্ডেন বল পুরস্কারও জেতেন তিনি। তবে বেশ কয়েকবছর ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছিলো না পেলের। ২০১৫ সালে স্নায়ুর সমস্যায় মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচারও করা হয় তার। কিডনি ও প্রস্টেটের সমস্যা নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফুটবলের কিংবদন্তি।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মস্কোয় রাশিয়া বিশ্বকাপের এক অনুষ্ঠানে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থাতেই দেখা গিয়েছিল তাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল ভর্তি হন পেলে। সেখানে তার একটি টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। রুটিন পরীক্ষায় তার টিউমার ধরা পড়ে। চলতি বছর ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠান, সর্বকালের সেরা’: ম্যারাডোনা
পেলের মৃত্যু: ব্রাজিলে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক:
কোলন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। পেলের মৃত্যু শোকে ব্রাজিলে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ফুটবলার ম্যারাডোনার চোখে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলে সবার ওপরে। পেলের সঙ্গে তুলনায় সবসময় তিনি ছিলেন নতজানু্। বিশ্বকাপের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন পেলে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সেখানেই ব্রাজিলের বিশ্বকাপ ম্যাচ দেখেছেন। মেসির আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখেছেন।
অন্যদিকে মেসির জন্য শুভেচ্ছা বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। তবে তার শরীরে ক্যান্সারের চিকিৎসা কার্যকর না হওয়ায় শেষ পরিচর্যায় ছিলেন তিনি। ক্রিসমাসও কাটিয়েছেন হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত হার মানলেন জীবনের কাছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এক বার্তায় পেলের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, ‘আমি পেলেকে খেলতে দেখেছি, যা আমার জীবনের বড় পাওয়া।
মাঠে তিনি বল পেলেই উল্লাস শুরু হতো। কারণ বল পেলে তিনি সবসময়ই বিশেষ কিছু করতেন।’ তার ওই বার্তায় কিছুক্ষণ পরেই ব্রাজিলের সরকার তার মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এক বিবৃতি দেয়। পেলে ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে চাপান। ২১ বছরের ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি।
‘পেলে সর্বকালের সেরা’: ম্যারাডোনা
‘তর্কসাপেক্ষে’ সর্বকালের সেরা। কিংবদন্তি পেলেকে নিয়েও কথাটা বলা হয়। কারণ সর্বকালের সেরা পেলে নাকি ডিয়াগো ম্যারাডোনা, নাকি লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এই প্রশ্নে তর্ক জমে। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞ ভিন্ন ভিন্ন মত দেন, ভক্তরা নিজের প্রিয় খেলোয়াড়রাকে এগিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। মেসি এবং রোনালদো অবশ্যই সর্বকালের সেরাদের একজন।
তবে সবর্কালের সেরার প্রশ্নটা পেলে এবং ম্যারাডোনার মধ্যেই বেশি। যদিও ওই প্রশ্নের উত্তর বহু আগেই দিয়ে রেখেছেন একজন ম্যারাডোনা। এক পায়ে একক নেতৃত্বে আর্জেন্টিনাকে একটা বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত ম্যারাডোনা। তবু কিংবদন্তি ফুটবলার ম্যারাডোনার চোখে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলে সবার ওপরে। পেলের সঙ্গে তুলনায় সবসময় তিনি ছিলেন নতজানু, ‘না না, ম্যারাডোনা হচ্ছে ম্যারাডোনা। পেলে সেরাদের সেরা। আমি কেবল একজন সাধারণ ফুটবলার।
সকলেই জানেন তিনি (পেলে) সর্বকালের সেরা, আমি তার সমতুল্য হওয়ার কথা ভাবিও না।’ পেলের প্রতি ম্যারাডোনার যেমন সম্মান ছিল তেমনি দু’বছর আগে মারা যাওয়া ম্যারাডোনাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন পেলে। আর্জেন্টাইন তারকার মৃত্যুতে পেলে বলেছিলেন, ‘আশা করছি, স্বর্গে আমরা একসঙ্গে ফুটবল খেলবো। গোল না করেও আমি মুষ্টিবদ্ধ হাত উচিয়ে উদযাপন করবো। কারণ তোমাকে যে আলিঙ্গন করবো।’
পেলে এবং ম্যারাডোনার জন্ম ভিন্ন সময়ে। ভিন্ন ক্লাব এবং দেশের জার্সিতে খেলেছেন তারা। তবে তাদের মধ্যে মিল ছিল বেশ কিছু। দু’জন নাম্বার টেন পরে খেলতেন। দু’জন জাতীয় দলের হয়ে সমান (পেলে ৯০, ম্যারাডোনা ৯১) ম্যাচ খেলেছেন। সব মিলিয়ে দু’জনের শিরোপাও সমান। তাদের দু’জনকে নিয়ে মেসুত অজিল তাই লিখেছেন, ‘আপনার অবদান চিরঅম্লান থাকবে পেলে। আমি নিশ্চিত পেলে এবং ম্যারাডোনাকে নিয়ে গড়া হেভেন এফসি (স্বর্গের ফুটবল ক্লাব) হবে অপ্রতিরোধ্য।’
শেষকৃত্য কখন, কোথায় ও কীভাবে:
পেলে জানতেন তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। প্রায় এক মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ক্যান্সারের চিকিৎসা শরীরে কার্যকর হচ্ছিল না। শারীরিকভাবে স্থিতিশীল ছিলেন। ব্রাজিলের আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি তার শেষ হচ্ছের কথাও বলে গেছেন। দীর্ঘ সময় যে মাঠ তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, যে মাঠে গোলের পর গোল করেছেন, সেখান থেকে তার খ্যাতির শুরু সেই সান্তোসের মাঠে যেতে চান। চাওয়া মতো, সান্তোস ফুটবল ক্লাব প্রাঙ্গনে নেওয়া হবে পেলেকে।
হাসপাতালেই তার দেহ শেষকৃত্যের জন্য প্রস্তুত করা হবে। এরপর আনা হবে সাও পাওলোর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। যা সান্তোসের হোম গ্রাউন্ড নামে পরিচিত। সেখানে ২ জানুয়ারি থেকে ৩ জানুয়ারি সকাল ১০টা পর্যন্ত রাখা হবে পেলের মরদেহ। তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাধারণ ভক্ত এবং রাজনৈতিক ও বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে।
সান্তোস কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পেলেকে ২৪ ঘণ্টা সান্তোস প্রাঙ্গনে রাখা হবে। সমাহিত করার আগে ৩ জানুয়ারি সান্তোসের রাস্তায় পেলেকে নিয়ে প্যারেড হবে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হবে বাড়িতে। তার মা ডোনা সেলেস্তের কাছে। শতবর্ষী পেলের মা এখনও বেঁচে আছেন। তবে শয্যাশয়ী।
ছেলেকে শেষবার দেখবেন তিনি। এরপর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী সর্বকালের সেরা ফুটবলার খ্যাত পেলেকে সমাহিত করা হবে। সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, মেমোরিয়াল নেক্রোপোল ইকুমেনিকায় তাকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সমাহিত করা হবে। ওই জায়গায় জনসাধারণের প্রবেশ সীমাবদ্ধ থাকবে।

যে জীবন কেবলই সফলতায় ভরাএকটি নাম। একটি বিপ্লব। একটি আবেগ আর উচ্ছাসার প্রতিক। বিশ্বব্যাপি তার সুনাম আর স্তব স্তুুতি। যেন ...
20/12/2022

যে জীবন কেবলই সফলতায় ভরা

একটি নাম। একটি বিপ্লব। একটি আবেগ আর উচ্ছাসার প্রতিক। বিশ্বব্যাপি তার সুনাম আর স্তব স্তুুতি। যেন কোন কিছুতেই কমতি নেই। তিনি মাতিয়েছেন কাতার। মাতিয়েছেন সারা বিশ্ব। ঝড় তুলেছেন কোটি কোটি খেলা প্রেমিদের। সেই সাধারণ পরিবারে বেড়ে উঠা ছোট্র শিশুটি আজ দুনিয়া ব্যাপি কোটি কোটি খেলা প্রেমিদের কাছে প্রবাদ পুরুষ। তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

গল্পটা হলো ছেলে বল নিয়ে ড্রিবলিং-ডজের খেলায় মেতে ওঠে আর বাবা তা দেখে মুগ্ধ হন। কেউ একজন তাকে ভর্তি করিয়ে দিল রোজারিওরই ক্লাব নিউয়েল ওল্ড বয়েজে। কিন্তু এরপরই হঠাৎ আসে সেই দুঃসংবাদ- ‘গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম’ রোগে আক্রান্ত শিশুটি। সেই রোগের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই দরিদ্র বাবার।
হাজার হাজার কাঁচের টুকরোয় লুকিয়ে ছিল মহামূল্যবান এই হীরা! তাকে খুঁজে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু রোজারিও সেন্তা ফে’র ছোট্ট এক মাঠে ধুলোবালির মধ্যে খেলতে থাকা ছোট্ট সেই হীরের টুকরোকে ঠিকই চিনে নিয়েছিলেন বার্সেলোনার এক স্কাউট।

ধুলো মাখা পোশাকের ছোট্ট আদুরে চেহারার শিশুটির ফুটবল নিয়ে কারিকুরি মুগ্ধ করে দেয় তাকে। ব্যস, ভাগ্য খুলে যায় হোর্হে হোসারিওর। যিনি সেই শিশুটির বাবা! হঠাৎই আচমকা এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু! আদরের সন্তানটির গায়ের রং ফিকে হয়ে আসতে থাকে। চিন্তায় পড়ে যান বাবা। পরে জানা যায়, হরমোনজনিত এক সমস্যায় ভুগছে সন্তান। এটাই লিওনেল মেসির শিশুবেলার গল্প, বয়স তখন ১৩। এই রোগ থেকে সেরে উঠতে তার চিকিৎসায় প্রতিমাসে প্রয়োজন ৯০০ ডলার।
খরচের কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে বাবার। যাকে নিয়ে দারিদ্র্য কাটানোর স্বপ্ন দেখছিলেন সেই অবলম্বনটিই কি না দিনে দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে! ঠিক তখনই হোসারিওর কাছে স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসেন সেই ফুটবল স্কাউট। সেই ফুটবল স্কাউটদের হাত ধরেই বার্সেলোনায় পা রাখে ১৩ বছরের সেই শিশুটি।

পুঁচকে ওই ফুটবলারটির বল নিয়ে ক্যারিশমা দেখে তো মুগ্ধ সবাই। চটজলদি তাকে দলে নিতে টিস্যু পেপারেই চুক্তি হয়ে যায়! এরপর বার্সার একাডেমিতে হয়েছে ছোট্ট সেই শিশুটির পরিচর্যা সঙ্গে চলেছে ব্যয়বহুল চিকিৎসা। কার্লোস রেক্সাস, যিনি বার্সেলোনার তখনকার ক্রীড়া পরিচালক। ছোট্ট লিওনেল মেসিকে বার্সেলোনায় জায়গা করে দেন তিনিই। হাঁফছেড়ে বাঁচেন হোর্হে হোসারিও মেসি।

যিনি ফ্যাক্টরিতে ছোটখাটো চাকরি করেন। মা পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ইতালি থেকে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন আর্জেন্টিনায়। পরিবারের চতুর্থ ছেলের হাত ধরেই যে একদিন এই আর্জেন্টাইন দম্পতির জীবনটা পাল্টে যাবে কে জানতো? এরপরের গল্পটা তো সবারই জানা। ন্যু ক্যাম্পের ক্লাবটিতেই প্রতিভার যত্ন-আত্তি হয়েছে মেসির। সময়ের পথ ধরে তার অর্জনগুলোও জানা হয়ে গেছে ভক্তদের।

দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা মেসি আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আয় করা ১০ অ্যাথলিটের একজন। সাতবারের ফিফার বর্ষসেরাকে কি এই খ্যাতি আর অর্থ বদলে দিয়েছে? মোটেও না। এখনও সেই আগের মেসিই আছেন তিনি। পা মাটিতেই আছে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্ম নেওয়া এ ক্ষুদে ফুটবল জাদুকরের। সংসার পেতেছেন শৈশবের প্রেমিকা রোজারিওর মেয়ে আন্তেনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে। দু'জন ছিলেন পারিবারিক বন্ধু।

মেসি রোজারিও ছেড়ে বার্সেলোনায় চলে গেলেও যোগাযোগটা ঠিকই ছিল। ছুটি পেলেই সেখানে ছুটে যেতেন বার্সা তারকা। এভাবেই ভালোবাসা শুরু। ২০০৮ সালের ক্রিসমাসের ছুটিতে রোজারিওতে বেড়াতে গেলেন মেসি। বার্সেলোনা থেকে বিমানে ওঠার আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন-যা হওয়ার হোক, এবার মনের কথাটা বলেই আসবেন। আর এমন একটা দিনের অপেক্ষাতেই যেন ছিলেন আন্তেনেল্লা। ব্যস, শুরু হয়ে গেল তাদের প্রেমের গল্প।

মেসির মতোই সাদামাটা আন্তেনেল্লা। অন্যসব সেলিব্রেটির সঙ্গীদের মতো ‘পেজ থ্রি’ পার্টির ধার ধারেন না। এরই মধ্যে তাদের সংসারে এসেছে তিন সন্তান। মাঠের জানা গল্পটাতেও চোখ বুলিয়ে নেই চলুন-২০০৩ সালের পোর্তোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে বার্সেলোনা সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেক। তখন বয়স ১৬ বছর ১৪৫ দিন। তারপর দু পায়ের ম্যাজিকে শুধুই লিখেছেন এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

ক্ষুদে জাদুকর থেকে সাত ছয়বারের বর্ষসেরা। ক্লাব ফুটবলে সব ট্রফিই মিলেছে। ১০টি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি ফিফা ক্লাব কাপ ট্রফি! আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে রানার্স আপ, কোপা আমেরিকার শিরোপা। জাতীয় দলের হয়ে আসল কাজটাই তো করা হচ্ছিল না। ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক। হাঙ্গেরির বিপক্ষে সেই অভিষেক ম্যাচটিকে অবশ্য মেসি নিজেও আর স্বীকৃতি দেন না।

বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ৬৩ মিনিটে মাঠে নামার ২ মিনিট পরই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। সেই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর মেসির পুরোদস্তুর অভিষেক হয় প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। তারপর ক্যারিয়ারে শেষ বেলাতে এসে হাতে ধরা দিয়েছে কোপা। তবে তাতেও কী স্বস্তি মিলছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চির মেসির? ৩৫ পেরিয়ে এসে লড়েছেন প্রাণপন। ২০১৪ সালে এমন কী তার সতীর্থরাও ভাবতো সব করে দেবে মেসি। এবার একেবারেই আলাদা দৃশ্যপট।

নিজে সত্যিকারের নেতার মতো খেলিয়েছেন পুরো দলটাকে। তার পথ ধরেই তো মিলে গেল স্বপ্নের শিরোপা। বিশ্বকাপ ট্রফি। ম্যাচে নিজে করলেন দুটি গোল। করালেন আরেকটি। এরপর টাইব্রেকারের রোমাঞ্চে লুইসাল স্টেডিয়ামে রাতের কৃত্রিম আলোয় উড়ল আর্জেন্টিনার জয়ের ফানুস। ৪-২ গোলে জয়! ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ। ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর মেসি!

ফুটবল তার আভিজাত্য ধরে রাখার স্বার্থেই কাজটা করে যাচ্ছে যুগের পর যুগ! গ্রেট আর সর্বকালের সেরাদের ওই সোনার ট্রফি থেকে বঞ্চিত করে না ‘ফুটবল ইশ্বর!’ কিংবদন্তিদের প্রায় সবাই মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতি সঙ্গী করেই বিদায় বলেছেন।

পেলে জিতেছিলেন, একবার নয়, তিন তিন বার! বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে উঠেছে গারিঞ্চা, জর্জিনহো, রিভেলিনো, ফ্রাঞ্চ বেকেনবাওয়ার, ববি চার্লটন, গার্ড মুলারের। বঞ্চিত হননি আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বর ডিয়েগো ম্যারাডোনাও। বিশ্বকাপ ট্রফি মাথার ওপরে তুলে দাড়িয়েছেন রোমারিও, রোনালদো আর জিনেদিন জিদানও। এবার চক্র পূরণ হলো। লিওনেল মেসির হাতেও উঠল ৬.১৭৫ কিলোগ্রামসের ১৮ ক্যারেট সোনায় তৈরি ট্রফিটি। কাছে গিয়েও আক্ষেপ, হতাশায় চুপসে যাওয়া, কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াবেন সেই নিস্তরঙ্গ দৃশ্যেরও সমাপ্তি।

দেবশিশু আরও একবার যদিও কাঁদলেন। হাসিমুখে সুখের কান্না! আহা, জীবনের শেষ ম্যাচটার পান্ডুলিপি নিজেই হয়তো লিখেছেন তিনি। না, হলে রোজারিও সেন্তা ফে’র গলির পথে যে শিশু হারিয়ে যেতে পারতেন অবহেলায়; তিনি কী করে আজ বনে গেলেন বাজিকর, ফুটবল ইশ্বর! লুসাইলে আলো ঝলমলে রাতে রোববার ফুটবলটাও সমৃদ্ধ হলো মেসির বাঁ পায়ের মুগ্ধতায়! সে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

তোমাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি! তুমি বিশ্ববাসীর পথ প্রদর্শক হও...

Address

Dhaka
1215

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Azhar Mahmood posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Azhar Mahmood:

Share

Nearby media companies


Other Dhaka media companies

Show All