14/08/2024
শেখ হাসিনার পতনের পর যে সকল বিষয়গুলো নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে তার মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে আয়নাঘর এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ছবির এই ব্যক্তিটি।
নাম বাবর। পুরো নাম লুৎফুজ্জামান বাবর। কেনো তাকে নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে? বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমানের সাথে তার কিসের সম্পর্ক? ভারতের সেভেন সিস্টার্সে তিনি কেন দশ ট্রাক অ/স্ত্র পাঠাতে চেয়েছিলেন?
১৯৫৮ সালের ১০শে অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন লুৎফুজ্জামান বাবর। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এইচএসসি পর্যন্ত।
তিনি ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো নেত্রকোনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৯৬ সাল এবং সর্বশেষ ২০০১ সালে নেত্রকোনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট, বাংলাদেশে সরকার গঠন করার পর যে কয়েকজন ব্যক্তি প্রবলভাবে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন, তাদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন অন্যতম।
অনেকেই মনে করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে। তার ক্ষমতা ছিল চোখে পড়ার মত।
ক্ষমতার শুরুর দিকে বাবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, আর মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসাবে ছিলেন বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী।
তবে মন্ত্রণালয়ে বাবরকেই সবচেয়ে ক্ষমতাবান বলে মনে করা হতো।
এবং একটা সময়, মন্ত্রিপরিষদে রদবদলের মাধ্যমে কিছুদিন পরে আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আর এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আর কোন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নিয়োগ দেয়নি তৎকালীন বিএনপি সরকার, এর ফলে বাবর এককভাবেই মন্ত্রণালয় চালাতেন।
অনেকেই মনে করেন, লুৎফুজ্জামান বাবর ভারত সরকারের কাছে একটা আতঙ্কের নাম। কারণ তিনি ভারতের সেভেন সিস্টার্সে বিদ্রোহী দল বানিয়ে দিয়ে ভারতে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।
মূলত সেভেন সিস্টারস হলো, ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের রহস্যে ঘেরা ৭টি রাজ্য। যাদের একত্রে বলা হয় সেভেন সিস্টার্স।
এ ঘটনার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। সে বছর ত্রিপুরার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, জ্যোতি প্রকাশ সাইকিয়া একটি রেডিও টক-শোতে ভারতের অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স নাম দেন।
এই সাতটি রাজ্যের উপরে তিনি একটি বইও লেখেন যার নাম 'ল্যান্ড অফ সেভেন সিস্টারস'। মূলত এরপরই এই নামটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এ সাত রাজ্যের আয়তন প্রায় ২,৫৫,৫১১ বর্গকিলোমিটার, যা ভারতের মোট এলাকার প্রায় ৭ শতাংশ।
এসব রাজ্যগুলো একে অপরের ওপর নির্ভরশীল হলেও সংস্কৃতি ও পরিবেশের দিক থেকে তারা স্বতন্ত্র।
তাদের মধ্যে জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্য বিদ্যমান থাকলেও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মিল রয়েছে।
এসব রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই আদিবাসী এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের।
মূলত আসামের মাধ্যমে রাজ্যগুলো ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে আগে এসব রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। স্থানীয় আদিবাসী রাজারা দীর্ঘদিন এসব অঞ্চল শাসন করেন। যার ফলে গারো, খাসিয়া, ত্রিপুরা, বোরো এবং মিজো আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল, মিজোরাম ও আসাম রাজ্য নিয়ে স্বাধীন ভূমি গড়ার প্রেক্ষিতে আন্দোলন করে আসছে।
আর ২০০৪ সালে, সেখানের আন্দোলনকারীদের ১০ ট্রাক অ/স্ত্র সরবরাহ করতে চেয়েছিলেন এই লুৎফুজ্জামান বাবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি।
এ ঘটনার পর অনেকেই মনে করেন, বাবরের উদ্দেশ্য ছিল সেভেন সিস্টারসকে বাংলাদেশের সাথে একত্রিকরণ।
আর এই অ/স্ত্র সরবরাহের ঘটনায়, ২০০৭ সালের ২৮শে মে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আ/টক হন লুৎফুজ্জামান বাবর।
এবং ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর অ/স্ত্র মামলায় তাকে ১৭ বছরের কা/রাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়াও এখান থেকে পায় ২০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ সালে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে গ্রে/নেড হামলার সাথে সংযুক্ত থাকার কারণে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাব/জ্জীবন কা/রাদণ্ড এবং এই লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃ/ত্যুদণ্ডের রায় দেয় নিম্ন আদালত।
এর পাশাপাশি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি রমনা থানায় মাম/লা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সোর্স: BBC Bangla, The daily star, সমকাল, Bangla vision, দেশ রুপান্তর, ভোরের কাগজ