![আমাদের আব্বাজান ও চাচাজানদের মতে, পৃথিবীর সকল বাবাই সংসারের কলুর বলদ।কেন কলুর বলদ! একটু বুঝিয়ে বলি?পৃথিবীর সব মা’ই ভালো ...](https://img4.medioq.com/472/202/215922234722020.jpg)
18/06/2023
আমাদের আব্বাজান ও চাচাজানদের মতে, পৃথিবীর সকল বাবাই সংসারের কলুর বলদ।কেন কলুর বলদ! একটু বুঝিয়ে বলি?
পৃথিবীর সব মা’ই ভালো মা। কিন্তু পৃথিবীর সব বাবা’ই ভালো বাবা নন। মা কেন ভালো মা? তিনি আদর করেন বলে? ভালো রাঁধেন বলে? কাপড় ধুয়ে দেন, ঘরবাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন, পড়াশোনার খোঁজ খবর করেন– এই জন্য?… সম্ভবত মা হলেন একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর ভালো হবার পেছনে কারণ লাগে না, যাঁকে ভালোবাসার জন্য শর্ত প্রযোজ্য হয় না।
কিন্তু বাবার ক্ষেত্রে হয়। শর্ত প্রযোজ্য হয়। বাবা যদি যথেষ্ট আয়-রোজগার করতে না পারেন, চাহিদামতো কাপড়-চোপড়, কম্পিউটার-ঘড়ি-মোবাইল, কসমেটিক্স ইত্যাদি কিনে দিতে না পারেন, ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে না পারেন, এদেশ-বিদেশ ঘোরাতে না পারেন, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য খেয়ে না খেয়ে আগাম সঞ্চয় করে রাখতে না পারেন, সর্বোপরি, সহ্য করতে পারুন বা না পারুন– মা’র সাথে মানিয়ে চলতে না পারেন – তিনি কোনোমতেই ভালো বাবা নন। অতএব, বাবা সম্পর্কটার সাথে “শর্ত প্রযোজ্য”। শুধু শর্তই নয়, কড়াকড়ি শর্ত প্রযোজ্য। তাই পৃথিবীতে একটাও মন্দ মা না থাকলেও লাখ লাখ কোটি কোটি মন্দ বাবা গিজগিজ করছেন!
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, বাবা হলেন একটা পরিবারের খুব কম পারিশ্রমিকের বা প্রায় বিনা পারিশ্রমিকের মজুর খাটা কাজের লোক। দায়িত্বের গুরুভার মাথায় নিয়ে এক নিঃসঙ্গ সারথী, যাঁর কাজ সন্তানদের সবাইকে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে একাকী পরপারে যাবার জন্য অলসভাবে অপেক্ষা করা। আমরা একটা মানুষের প্রতি প্রতিনিয়ত “এটা দাও, ওটা আনো, সেটা নাই কেন?” ইত্যকার দাবী-দাওয়া ছুঁড়ে দিতে থাকি, সেই মানুষটা এত এত দাও, আনো, নাই-এর মোকাবেলা একা হাতে কী করে করবেন– একবারও ভেবে দেখি না। আবার যুগের অসুখ এই বাড়তি চাহিদার পাগলা ঘোড়াকে বশে আনতে গিয়ে তিনি যেভাবেই হোক আর যে পথেই হোক উপার্জনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন– তা হবে না। বাবা যতক্ষণ উপার্জন করছেন, দু’হাতে উপার্জন করছেন, ততক্ষণ বাবা আদর্শ বাবা। কিন্তু যে মুহূর্তে প্রকাশ পেয়ে গেল, বাবার আয় বাবা উপার্জনক্ষমতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে– অর্থাৎ বাবা অসৎ পথে উপার্জন করছেন, এই সন্তান কিন্তু বাবার পাশে দাঁড়াবে না, উল্টো সস্তা সিনেমার ডায়লোগ দিয়ে দেবে মুখের উপর– আই হেইট ইউ বাবা, তুমি আমাদের মাথা হেঁট করে দিয়েছো!
বাবা সন্তানকে শাসনে রাখতে গেলে ডিক্টেটর, জেলাস, স্যাডিস্ট, জালিম; প্রশ্রয় দিতে গেলে শাসন না জানা মূর্খ, যে সন্তানকে উচ্ছন্নে ঠেলে দিচ্ছে। বাবা তাদের অবাধ স্বাধীনতা না দিলে ব্যাকডেটেড, দিয়ে ফেললে ব্যর্থ অভিভাবক। বাবা তাদের সব কাজে সমর্থন করলে, “বাবা তো কিছুই বুঝে না, খালি হ্যাঁ-এর সাথে হ্যাঁ মিলিয়ে যায়!“; সমর্থন না করলে, “বাবা তো কিছুই বুঝে না, খামাখা সবটাতে বাগড়া দেয়!” বাবা হলেন সেই ব্যক্তি – যাঁকে সবচে সহজে ভুল বোঝা যায়, যাঁকে খুব সহজেই ধরে নেয়া হয়, সবচে’ ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায় – অন্যের কাছে তো বটেই, এমনকি নিজের কাছেও। বাবা হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ চরিত্র, যাঁকে সঙ্গ দেয়াটা আদিক্ষেতা, অথচ তাঁর সঙ্গ না পাওয়াটা নাকি তাঁরই কর্মফল!
মায়ের প্রতি সন্তানের আচরণ হলো ভালোবাসা। কিন্তু বাবার প্রতি সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কর্তব্য, শ্রদ্ধা, ভয়, প্রতিদান, পুরস্কার… এবং কখনো কখনো শুধুই দায়শোধ! আর এজন্যই মনে হয়, বছরে একটা দিন বাবা দিবস থাকা খুব জরুরী, যেদিন সংসারের এই কলুর বলদটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয় – আরে, তুমি তো আমাদেরই একজন, এত মন ছোট করে থাকো কেন?
এ যে কি নির্মম এক বাস্তবতা তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য না। কিন্তু আরেক বাস্তবতা হলো : এই সত্যটা সারা জীবন সবার অনুভব বা উপলব্ধির বাহিরেই রয়ে যায়, এমনকি কোন বাবা নিজেও এটা উপলব্ধি করেন না।তাই 2023এই বাবা দিবসে সকাল বাবা জাতীর প্রতি অফুরান ভালোবাসা ও সম্মান জানাই।