13/03/2024
একবার মূসা (আ.)-এর জাতির ওপর দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করা হলো। মূসা (আ.), যিনি আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, তাঁর জাতির ওপর নেমে এলো ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষ! জাতির প্রত্যেকে কষ্ট ভোগ করছে। পানি নেই, খাবার নেই, পশু মরছে, মানুষ মরছে। অথচ তাদের মাঝে একজন নবি রয়েছেন। মানুষ তাঁর কাছে এসে জানতে চাইল, হে মূসা! এসব কী হচ্ছে? মূসা (আ.) তাঁর জাতির লোকদের নিয়ে খোলা ময়দানে গেলেন। দুআ করলেন, এ আল্লাহ্! আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমার জাতির কী অবস্থা। আমরা বৃষ্টির জন্য অনুনয় করছি।
একজন নবি দুআ করলে স্বভাবতই আল্লাহর উত্তর কী হয়? তিনি তা কবুল করেন। সবাই অপেক্ষা করছে এই বুঝি বৃষ্টি আসলো, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না! আল্লাহর একজন নবি, অনুনয় বিনয় করে সবাইকে নিয়ে দুআ করছেন, কিন্তু দুআর কোনো উত্তর নেই! ভাবতে পারেন! মূসা (আ.) ভাবছেন, ইয়া আল্লাহ! এ কী হলো? আমি বৃষ্টির জন্য দুআ করলাম, অথচ কোনো বৃষ্টি নেই! আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব এলো, হে মূসা! তোমার জাতির মধ্যে একজন গুনাহগার আছে।
মূসা (আ.) লোকদের দিকে ঘুরে বললেন, তোমাদের মধ্যে একজন গুনাহগার আছে। সে সামনে বেরিয়ে এসো। ওই ব্যক্তি মনে মনে অনুতপ্ত হলো, তাওবা করল। কিন্তু মূসা (আ.)-এর সামনে বেরিয়ে এসে পরিচয় দিল না। মূসা (আ.) অপেক্ষা করছেন, কেউ আসে না। তিনি ফিরে গিয়ে আবার আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দুআ করলেন। এবার তাঁকে অবাক করে দিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো! মূসা (আ.) খুশি, কিন্তু সেই সাথে অবাক। ইয়া আল্লাহ্! এটার ব্যাখ্যা কী? প্রথমবার বৃষ্টি চাইলাম, বলা হলো একজন গুনাহগার আছে। গুনাহগারকে ডাকলাম, কেউ এলো না। আবার দুআ করলাম, বৃষ্টি চলে এলো! ব্যাপারটা কী?
আল্লাহ্ জানালেন, ওই এক ব্যক্তির কারণে আমি বৃষ্টি আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু সে তাওবা করেছে, আমার কাছে মাফ চেয়েছে। আমি তার তাওবা কবুল করেছি। এবং সেই একজন ব্যক্তির তাওবার কারণেই এখন আমি বৃষ্টি দান করলাম। মূসা (আ.)-এর খুব আগ্রহবোধ হলো। হে আল্লাহ্! এই লোকটি কে? আমাকে তার পরিচয় জানিয়ে দিন। আল্লাহ্ বললেন, হে মূসা! সে যখন গুনাহগার ছিল, তখনই আমি তাকে প্রকাশ করে দেইনি। আর এখন যখন সে আমার কাছে খালেসভাবে তাওবা করেছে, এমন কী করে আমি তাকে প্রকাশ করে দেই?
এই গল্পের শিক্ষা একটাই, আল্লাহ্ যখন আমাদের প্রতি কোনো আচরণ করেন, উম্মাহ হিসেবে আচরণ করেন, আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে নয়। আল্লাহর বরকত যখন আসে, সবার ওপর আসে। তদ্রূপ যখন আযাব আসে, সেটাও সবার ওপর আসে। এই অসাধারণ গল্পে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বৃষ্টি নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, সেই লোকটি নিজের গুনাহ স্বীকার করার মতো যথেষ্ট সাহসী ছিল, তাওবাহ করার হিম্মত তার ছিল। যে গুণ আজ আমাদের বেশিভাগ মানুষের মধ্যে নেই।
গল্পটি পড়ে আপনি হয়ত এখনও ভাবছেন, নিজের পাশে বসা লোকটির কী কী পরিবর্তন হওয়া দরকার। এখনও নিজের কথা ভাবছেন না। সত্য কথা হচ্ছে, আপনি যত গুনাহ করেন, তার সরাসরি প্রভাব খালি উম্মাহর ওপরেই পড়ে না, আপনার ওপরও পড়ে। আপনার দ্বীনের অভাব, আপনার বুঝের অভাব, আপনার সালাত ত্যাগ, আপনার করা প্রতিটা হারামের প্রভাব আপনার সন্তানের ওপর পড়ে, আপনার বাবা-মায়ের ওপর পড়ে, পুরো উম্মতের ওপর পড়ে। এটা উল্টোদিক থেকেও সত্য। আপনি যখন কোনো নেক আমল করেন, এতে একা আপনারই উপকার হয় না। পুরো উম্মতের উপকার হয়। আল্লাহ্ আমাদের বোঝার তাওফীক দিক।
---------------------------
বই:- এপিটাফ
সাজিদ ইসলাম
#ঈমানদীপ্ত_জীবন_কথা
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য