07/03/2022
কার জন্য কোন স্কিল? কার জন্য না?
(চরিত্র, পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী)
সব স্কিল সবার জন্য না। মিউট্যান্ট সুপারহিরোদের মতো আমাদের প্রত্যেকের পাওয়ার আলাদা। এক এক জনের আগ্রহের উপর একেক প্রতিভা প্রকাশ পায়, বিকাশ হয়।
পরিবার, অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা এসবের উপর ভিত্তি করে আবার আমাদের আগ্রহ উদ্যোমের তারতম্য হয়।
তবে একবার খুজে বের করে ফেলতে পারলে নিজের পছন্দের স্কিলটা, এরপর কাজ অনেক সহজ।
আমার অধিকাংশ স্টুডেন্টদের মধ্যে স্কিল খোজা নিয়ে সমস্যাটাই বেশি দেখেছি। ইনডিসিশন, সিদ্ধান্তহীনতাই বেশি দেখেছি। তাই আমার কাছে স্কিলটা খুজে পাওয়া মানে হলো ৭০ ভাগ এগিয়ে যাওয়া।
একবার যদি ডিসাইড করতে পারি যে, কক্সবাজার যাবো, না কুয়াকাটা যাবো, নাকি রাঙামাটি যাবো এরপর প্রতিটি স্টেপে একটু একটু করে কিন্তু এগিয়ে যাবো। বাধা যত থাকুক, বাস বন্ধ থাকুক আর লঞ্চ বন্ধ থাকুক চেষ্টা করলে পৌছাতে পারবোই ইনশা আল্লাহ।
এমনকি যদি গাড়ি পিছন থেকে ধাক্কাও দেয়, তাও খানিকটা এগিয়ে যাওয়া হবে সামনের দিকে।
তাই আজকে আমরা চরিত্র, পরিবেশ অনুযায়ী স্কিল কোন সহজ কোনটা কঠিন হবে বুঝে দেখি।
বি:দ্র: যাদের আগে থেকে কোন স্কিল চয়েজ আছে, ভিতর থেকে কোন স্কিলের প্রতি ভালবাসা আছে, কাজ করার প্রচন্ড পিপাসা আছে... আয় হোক বা না হোক ঐ কাজ তাকে করতেই হবে... এমন টান আছে তারা এই পোস্ট এড়িয়ে যেতে পারেন। যেটা পছন্দ হয়েছে মাশাআল্লাহ, সেটাই শুরু করে দিন।
/// স্থির গম্ভীর মানুষের জন্য ভালো:
১. যে স্কিলের জন্য বেশি বেশি পড়তে হয়:
যেমন। কন্টেন্ট রাইটিং, কপি রাইটিং, গল্প-সাহিত্য, সম্পাদনা, প্রুফ রিডিং, ট্রান্সলেশন, রিপোর্ট রাইটিং,
২. যে স্কিল নিয়ে খুব বেশি ভাবার সুযোগ আছে:
কনসাল্টিং, ইউ আই ডিজাইন, ইউএক্স ডিজাইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সফটওয়্যার-অ্যাপ-ওয়েব-গেমস ডেভেলমেন্ট, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট, ডাটা অ্যানালাইসিস, ব্লক চেইন-ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রোগ্রামিং, এসইও প্ল্যানিং, সিকিউরিটি- ইথিক্যাল হ্যাকিং, ইউজার টেস্টিং ইত্যাদি
৩. যে কাজে মূলত স্লো হতে হয়: উপরের কিছু এবং অ্যাকাউন্টিং এন্ড বুক কিপিং,
/// স্থির গম্ভীর মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জিং:
১. যেখানে হাতের দক্ষতা ম্যাটার করে:
যেমন: গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল আর্ট, ইলাস্ট্রেশন,
২. যেখানে খুব বেশি বাইরে ঘোরাঘুরি, মেলামেশার দরকার পড়ে। ডিজিটাল মার্কেটিং, সেলস, নিউজ কালেকশন,
৩. যেখানে খুব বেশি কথা বলার দরকার পড়ে। সেলস, ম্যানেজিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার,
৪. শিক্ষা। যদিও মানুষ মনে করে উল্টো, কিন্তু ডিপ লেভেল চিন্তাশীলদের জন্য মূলত শিক্ষা দেওয়াটা খুব কঠিন।
৫. অল্প ডেডলাইন, তাড়াতাড়ি কাজ জমা দিতে হবে: সেলস, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, সার্ভে
/// চটপটে মানুষের জন্য ভালো:
যেগুলো গম্ভীর স্লো চিন্তাশীল মানুষদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।
/// চটপটে মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জিং:
যেগুলো গম্ভীর স্লো চিন্তাশীল মানুষদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।
/// চটপটে কিন্তু ভাবতেও পারে বেশ তাদের জন্য ভালো:
ইউ আই ডিজাইন, ইউএক্স ডিজাইন, গেমস ডেভেলমেন্ট, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট, ব্লক চেইন-ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রোগ্রামিং, এসইও,
ভিডিওগ্রাফি, ফটোগ্রাফি, নেটওয়ার্কিং, সিকিউরিটি- ইথিক্যাল হ্যাকিং,
ম্যানেজিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট,
/// চিন্তাশীল কিন্তু মিশতেও পারে বেশ মানুষের সাথে তাদের জন্য ভালো:
টিচিং, ট্রেনিং, মেন্টরিং, ক্যারিয়ার কোচিং,
ডিজিটাল মার্কেটিং,ব্রান্ড ডিজাইন (মূলত লোগো ইত্যাদি)ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট,
/// চটপটে ইন্ট্রোভার্টের জন্য:
ভালো হয় আর্ট ও ডিজাইনের নিখুঁত কাজগুলো।
যে কাজগুলোতে মেলামেশার দরকার হয় না। আবার খুব বেশি ভাবতেও হয় না। ক্লায়েন্টের মাতব্বরী না গুণলেও চলে। শুধু সুন্দর করে করে যেতে হয়। সাজিয়ে যেতে হয়।
/// চিন্তাশীল এক্সট্রোভার্টের জন্য:
ভালো হয় শিক্ষকতা জাতীয় কাজে। যে কাজে বেশি সময় পাওয়া যাবে, ডেডলাইন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
ভিতর থেকে টান না থাকলে আর্ট ও ডিজাইন এড়িয়ে চললে ভালো হয়।
যে কাজগুলোতে মেলামেশার দরকার হয়। আবার ভাবাভাবির দরকার আছে।
//// পারিবারিক আর্থিক কেমন থাকলে কোন কোন স্কিলগুলো শেখা শুরু করলে সুবিধা আছে?
ধনী, মধ্যবিত্ত, নিম্মমধ্যবিত্ত, গরীব এই ব্যাখ্যা এখন দিতে গেলে ঝামেলা। পিচ্চি কালে অর্থনীতি সাবজেক্টটা আমার খুব একটা পছন্দের ছিলো না।তাই নিয়ে আয় অনুযায়ী একটা চার্ট দিলাম। এটা হলো বাসার সদস্যদের গড় আয়। বাসার মোট আয়কে পরিবারের সদস্য দিয়ে ভাগ করলে যেটা হবে সেটা গড় আয়।
/// গড় আয় মাসে আয় ২০ হাজার থেকে কম:
--- কোন ভাবেই স্কিল শেখা শুরু করবো না। আগে পছন্দের স্কিল ক্যাটাগরীর কোন বিজনেসের অধিনে চাকরি নিবো।
/// গড় আয় মাসে আয় ২৫ - ৪০ হাজার:
--- লেখালেখি জাতীয় কাজ, এডিটিং, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট, ফাইন্যান্স- এক্সেল হিসাবনিকাশ ইত্যাদি।
/// গড় আয় মাসে আয় ৪৫ - ৮০ হাজার:
--- গ্রাফিক ডিজাইন, ইলাস্ট্রেশন সংক্রান্ত যা আছে, এডিটিং, বেসিক সাধারণ অ্যাপ ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এনালাইসিস, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।
/// গড় আয় মাসে আয় ১ লক্ষ থেকে বেশি:
--- ভিডিও এডিটিং, ভিডিও গ্রাফি, ভিডিও মার্কেটিং, ভিডিও প্রোডাকশন,
সফটওয়্যার-ওয়েব-অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, গেমস ডেভেলপমেন্ট,
ইনভেস্টিং, ব্লক চেইন,ভিআর স্কিলস,
ডাটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, অটোমেশন ইত্যাদি।
যদি গরীবদের পছন্দ হয়ে যায় ধনীদের স্কিল সেট? তারা কি শুরু করলে পারবে না?
--- যদি পছন্দ হয়ে যায়, অবশ্যই পারবে। এক্সট্রা গুরুত্ব দিতে হবে। আলাদা কেয়ার, বাড়তি যত্ন নিতে হবে।
(পছন্দ হয়ে গেলে ভালবাসা হয়ে গেলে তো কথাই নাই। আমার এই পুরো পোস্ট ইতোমধ্যে যারা স্কিলের প্রেমে পড়ে গেছে তাদের জন্য না)
/// মানুষের খারাপ ব্যবহারে ধৈর্য খুব বেশি:
-- যেকোন স্কিল এদের জন্য ভালো। তবে বেশি ভালো হয় ডিজাইন, মার্কেটিং, টিচিং, কোচিং, কনসাল্টিং, ম্যানেজিং ইত্যাদি।
/// মানুষের খারাপ ব্যবহারে ধৈর্য খুব কম:
-- গ্রাফিক ডিজাইন ভুলেও না।
আঁকাআঁকি ভালো লাগলে ডিজিটাল আর্ট করা যেতে পারে। গ্রাফিক ডিজাইন না। নেভার।
ইউআই, ইউএক্স ডিজাইন একদমই না।
অ্যাপ বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে যাওয়া যেতে পারে।
এক্সেলের কাজ, ভিডিও এডিটিং, ফটোএডিটিং, গেমস ডেভেলপমেন্ট, ইনভেস্টিং এড়িয়ে গেলে ভালো হয়।
/// ভালো কম্পিউটার যাদের আছে বা নাই তাদের করনীয় কি সেটাও নিশ্চয়ই বোঝা হয়ে গেছে আমাদের।
/// বড় ফ্যামিলি, ছোট ফ্যামিলি:
এটাও অনেক ম্যাটার করে। কিন্তু লিখতে বসে দেখলাম প্রচুর ব্যাখ্যা লাগছে। তার থেকে শর্টকাটে যাই।
/// যার আলাদা রুম আছে:
সব কাজই করতে পারবে। বিশেষ করে ডেভেলপমেন্ট জাতীয় কাজ করা খুব সহজ। তবে যার অল্পতে মনোযোগ ছুটে যায় তাদেরকে কিছুক্ষণ পর পর গাইডেন্স দেয়ার জন্য স্বজনদের বলে রাখা দরকার।
/// আলাদা রুম নাই:
ভুলেও প্রোগ্রামিং- ডেভেলপমেন্ট জাতীয় কাজ শুরু করা উচিত হবে না। খবরদার! আগে চাকরী নিতে হবে, নতুন বাসা নিতে হবে, তারপর।
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট হতে গেলেও জ্বালা আছে।
লেখালেখি, বিশেষ করে সম্পাদনার কাজ ভালো করা যাবে। গ্রাফিক ডিজাইনও করা যাবে হয়তো।
কিন্তু ভিডিও এডিটিং এর কাজ শেখা শুরু না করাই ভালো।
/// এক কাজ বার বার করতে পছন্দ করে:
লেখালেখি, ডিজাইন সংশ্লিষ্ট কাজে খুব ভালো করবে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টেও খুব ভালো করবে।
/// প্রতিটি কাজ খুব সময় নিয়ে কাজ করে, কিন্তু আর দ্বিতীয়বার করতে চায় না:
ডিজিটাল আর্ট, গল্প কবিতা, কন্সালটিং, পাবলিক স্পিকিং, ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি এই জাতীয় কাজে তুলনামূলক ভালো করবে। কপিরাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন আর সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট জাতীয় কাজ এড়িয়ে চললে খুব ভালো হয়।
দিন শেষে আপনার ইচ্ছা আর আগ্রহটাই হলো মূল ব্যাপার।
গরমের দিন এসে পড়েছে। প্রচুর পানি খেতে হবে। এবং ফ্যান থেকে খুব সাবধান! বিশেষ করে ঘুমের সময়।
ফ্যানের বেড সুইচ বিছানার কাছে রাখলে অসুখের স্বম্ভাবনা অনেক কমে যায়।