03/02/2025
জোয়াকিম লো একজন বিশ্বকাপ উইনিং জার্মান কোচ - এইটাই সবাই জানে।
তবে আমি তাকে জার্মান ফুটবলের একজন চেঞ্জমেকার বলবো, যেই চেঞ্জ অর ভ্যারিয়েশনটা জার্মান ফুটবলে লাগতো।
ইংল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড - ইউরোপের এই জিওগ্রাফিক্যাল এরিয়াটা পাওয়ার ফুটবলের লিগ্যাসীর জন্যে বিখ্যাত। টোটাল ফুটবলের ইভোলিউশনে নেদারল্যান্ডসে সেভেন্টিজ থেকে কিছুটা ভ্যারিয়েশন আসে, তবে তারা গতি আর ফিজিক্যালিটি বেসড ফুটবলেই ছিলো টোটাল ফুটবলের কিছু কন্সেপ্ট এড করে। ফুটবলের জায়ান্টদের মধ্যে ইংল্যান্ড, জার্মানিই বলতে গেলে সেই আদি পাওয়ার ফুটবলের লিগ্যাসী ক্যারি করে আসছে এই মডার্ন টাইমে।
এই পাওয়ার ফুটবল কালচার ফলো করায় ইংল্যান্ড, জার্মানিতে ফিজিক্যালি স্ট্রং আর ফাস্ট ফুটবলাররা প্রায়োরিটি পায় আর টিমের ট্যাক্টিক্স ও সেরকম থাকে। অফ দ্যা বলে দল হয় লো ব্লকে খেলবে অথবা হার্ডপ্রেস করবে, কিন্তু অন দ্যা বলে বেশি বেশি লং বল খেলবে, উইং ধরেই উপরে উঠবে আর ক্রস এন্ড হেড ট্যাক্টিক্স বেশি ইউজ হবে, আর বক্সের বাইরে থেকে ধুমধাম গোলার মতোন শট নিবে - এই হচ্ছে পাওয়ার ফুটবলের ফিলোসফি।
জার্মানি ন্যাশনাল টিমে এই ফিলোসফির চেঞ্জমেকারটা হচ্ছেন জোয়াকিম লো।
,
লাস্ট কয়দিনে জার্মানির ২০১০-১৪ টাইমলাইনের বেশকিছু ম্যাচ রিপিট দেখে লো'র ইনফ্লুয়েন্সটা নতুন করে ধরতে পারলাম। টিপিক্যাল পাওয়ার ফুটবল ফিলোসফি থেকে জার্মানি কিভাবে মডার্ন ফুটবলে এডজাস্ট করে নিলো সেটা বুঝতে ২০১০ আর ২০১৪ তে জার্মানির খেলা ভালো করে দেখতে হবে।
২০১০ এ জার্মান টিমটা ন্যুয়ার, ওজিল, খেদিরা, মুলার, ক্রুস, বোয়েটাং দের মতোন ইয়ংস্টারদের নিয়ে ছিলো যেখানে এক্সপেরিয়েন্সড প্লেয়ার কম। জার্মানি সেবার ৭ ম্যাচে ১৬ গোল করে, যা চ্যাম্পিয়ন স্পেনের ও ডাবল ছিলো! মজার বেপার হচ্ছে লো'র এপ্রোচ কিন্তু আল্ট্রা এটাকিং ছিলোনা, ২০১৪'র তুলনায় প্রেসিং ইন্টেন্সিটিও কম ছিলো - তারপরেও জার্মানি এতোগুলা গোল করে মূলত ইয়ংস্টারদের স্পিড আর লো'র ট্যাক্টিক্যাল মডিফিকেশনে। ফ্রন্টের পোডোলস্কি, মুলার, ওজিলদের তখন ভালো গতি ছিলো কিন্তু লো এই ইয়ংস্টারদের অফ দ্যা বল মুভমেন্টে টোটাল ফুটবল কন্সেপ্ট ঢুকিয়ে এই একটা রুথলেস কাউন্টার এটাকিং টিমে পরিনত করেন। স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসা অল্ড ফ্যাশনড নাম্বার নাইন হলেও এই টিমে তার কাজ শুধু গোল করা না, স্পেস ক্রিয়েট করাও ছিলো। ক্লোসা সিবিদের ড্র্যাগ করে আউট অফ পজিশন করে দিতো, আর সেটাকে কাজে লাগাতো মুলার-অজিল-খেদিরার মুভমেন্ট। মুলার রাইটে আর অজিল সেন্টারে খেলা শুরু করলেও এরা কখন কোন জোন দিয়ে রানমেইক করবে সেইটা পুরোপুরি কনফিউজিং ছিলো। লেফটে পোডোলস্কির পজিশনটারই বলতে গেলে কোনো চেঞ্জ আসতোনা। লো ব্লকে শুরু করলেও কুইক কাউন্টারে এই ফ্রন্টফোরের অফ দ্যা বল মুভমেন্ট আর কুইক কম্বিনেশনাল প্লে অপোনেন্ট ডিফেন্ডারদের জন্যে অনেক কঠিন হয়ে যেতো।
ইংল্যান্ড আর আর্জেন্টিনা মূলত বিদ্ধস্থ হয় জার্মানদের গতির পাশাপাশি লো'র এই ট্যাক্টিক্সের জন্যেই। সেমিতে স্পেনের সামনে এই রুথলেস জার্মানিকে দেখা যায়নাই, এর বড় কারন ছিলো স্পেন তখন মডার্ন ফুটবলের অনেক ফিলোসফি করতো।জার্মান ফ্রন্টফোরের অফ দ্যা বল মুভমেন্ট আটকাতে যেই ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশন দরকার সেটা স্প্যানিশদের ছিলো। স্পেন কাউন্টার এটাকের জন্যে ন্যাচারালিই প্রিপেয়ার্ড ছিলো, জার্মানরা আটকে যায় কাউন্টার এটাক বাদে আর কোনো ট্যাক্টিক্স নিজদের হাতে না থাকায়।
,
২০১০ র পর জার্মান ফুটবলে একটা গোল্ডেন জেনারেশন চলে আসে। ন্যুয়ার, ওজিল, মুলার, খেদিরা, বোয়েটাং, ক্রুসদের সাথে রিউস, বাডস্টুবার, হুমেলস, শুর্লে, গোতজে, গুন্ডোগানের মতোন কিছু প্লেয়ার উঠে আসে। জোয়াকিম লো ২০১০'র এক্সপেরিয়েন্স কাজে লাগিয়ে টিমের ফিলোসফিতে আরোও একবার চেঞ্জ আনেন, কাউন্টার এটাক কিংবা অল্ড ফ্যাশনড পাওয়ার ফুটবলে ভরসা না রেখে গ্রাউন্ড পাসিং ফুটবলেও ফোকাস করেন। লো'র জন্যে এই ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ডে এডভান্টেজ হিসেবে ছিলো টনি ক্রুস আর মেসুত ওজিল, এই দুইটা ভালো বল প্লেয়ার একিসাথে তার জার্মানি টিমে ছিলো - যারা কিনা কাউন্টার এটাক ছাড়াও নিজদের বল প্লেয়িং এবিলিটি দিয়ে গ্রাউন্ড দিয়েই চান্স ক্রিয়েশন করতে পারতো। ২০১৩ তে পেপ গার্দিওলা বায়ার্নে আসার পর তার পাসিং ফুটবল ফিলোসফি ট্রাই করা শুরু করেন, বিল্ডাপ ফ্রম ব্যাকে টিমকে ডেভেলাপ করেন। আর সেই বায়ার্নে জার্মানি ন্যাশনাল টিমের প্লেয়ার ছিলো সবচেয়ে বেশি।
এই দুইয়ে মিলে ২০১৪ তে এক ডিফারেন্ট জার্মানিকে দেখা যায়। এরা বল পায়ে রেখেও সমানভাবে থ্রেট ক্রিয়েট করতে পারতো, আগের মতোন কাউন্টার এটাক নির্ভর ছিলোনা। ২০১৪ তে খেলা সবগুলা বিগম্যাচেই জার্মানি এই পাসিং বেসড ফুটবল খেলে, পজেশনেও এগিয়ে ছিলো। জাস্ট সেমিফাইনালে ব্রাজিল নিজদের পায়ে বল রেখে এটাকিং ফুটবল খেলতে চেয়েছিলো, সেখানেই জার্মানি তাদের রক্তে মিশে থাকা প্রেসিং আর পাওয়ার ফুটবলের ভয়ংকর রুপটা দেখায়। সেইদিনের কাউন্টার এটাকগুলাও আগেকার তুলনায় অনেক অর্গানাইজড ছিলো জার্মানির।
,
ন্যাশনাল টিমে চাইলেই প্লেয়ার কিনে আনা যায়না, প্লেয়ার উঠে আসতে হয়। তাই দেখা যায় কোচেরা তার দীর্ঘদিনের চেনা প্লেয়ারদেরকে দিয়ে এক সিস্টেমেই খেলানো চালিয়ে যান। যেটা ২০১৮ তে এসে লো'র জন্যে ব্যাকফায়ার করে। অন্যান্য টিমগুলি যেখানে আপগ্রেড হয়ে গিয়েছিলো, লো সেখানে আপগ্রেড হতে পারেন নাই - ফ্যানরাও ফেডাপ হয়ে যাচ্ছিলো। শেষটা তাই লো এর জন্যে সুখকর ছিলোনা।
তবে ট্রেডমার্ক পাওয়ার ফুটবলের সাথে টোটাল ফুটবল আর পাসিং ফুটবলের কন্সেপ্ট মিক্সচার ঘটিয়ে জার্মানি ন্যাশনাল টিমের প্লেয়িং স্টাইলে ভ্যারিয়েশন আনার জন্যে জোয়াকিম লো একজন চেঞ্জমেকার হয়ে থাকবেন। ওয়ার্ল্ডকাপ উইনিং কোচ ট্যাগটা তাই শুধু যথেষ্ট না এই স্টাইলিশ জার্মানের জন্যে . . . .
📍 Jawad Abdullah,From Football Tong House of Bangladesh