01/09/2022
রিভিউ লেখিকা: #সাবরিন_জাহান
আমাদের পবিত্র সালতানাতের ধ্বংস স্তুপের উপর জন্ম নিয়েছে গণতন্ত্র নামক ধর্ম।খিল।ফত ব্যাবস্থার পতনের একশ বছরে উম্মাহর উপর নেমে এসেছে একের পর এক দুর্যোগ।আক্রান্ত হতে থাকা মুসলিম ভূমির সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধিই পাচ্ছে।
বিপরীতে আমরা ঐতিহ্য ফিরে পেতে চেষ্টা যে করিনি তা না।মুসলিম দেশ গুলোতে রাজনীতির চর্চা হয়ে আসছে,তবে সেটা পশ্চিমাদের শিখিয়ে দেওয়া নোংরা পদ্ধতিতে।
ক্রুসে-ডাররাও ভালো করে বুঝেছিল এই উম্মাহকে ময়দানে পরাজিত করতে হলে আক্বিদায় পরাজিত করতে হবে।গণতন্ত্রের ধোকা সেই বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনেরই অংশ।স্রেফ সরকার নির্ধারনের পদ্ধতির আড়ালে গণতন্ত্র আসলে কি?সত্যিই সরকার নির্ধারনের পদ্ধতি নাকি এটি একটি আলাদা ধর্ম?
পশ্চিমারা আমাদের ইমারাহ ধ্বংস করতে 'পশ্চিমা খিল।ফহ' শব্দ ব্যাবহার করেনি।বরং তারা নিজেদের পরিভাষা ব্যাবহার করেছে।আমরা আদর্শিক ভাবে এতোটাই বিড়াল জাতিতে পরিণত হয়েছি যে, নববী রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নাপাক গণতন্ত্র দিয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার চোরাবালিতে ডুবে গিয়েছি।ইসলামী গণতন্ত্রের ফাঁকিতে প্রায় এক শতাব্দী পড়ে থেকেও উম্মাহর বৃহত্তর অংশ এখনো বুঝে উঠতে পারেনি সিস্টেমের ভেতর ঢুকে সিস্টেম পরিবর্তন করতে গেলে সিস্টেম বরং শক্তিশালী ই হয়।
'ইসলাম ও বহুজাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থা' বই এর মূল আলোচ্য বিষয় এটিই।
বইটিতে গণতন্ত্র কেন কুফরী তা নিয়ে লম্বা আলোচনা করা হয়েছে,কথিত ইসলামিক গণতান্ত্রিক দলগুলোর স্বরূপ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট করা হয়েছে,ইসলামের সাথে বহুজাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বৈপরীত্য শারীয়াহর আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। রয়েছে ইসলামী শূরার সাথে গণতন্ত্রকে মেলানো বাতিলের দাসদের জন্য দাঁত ভাঙা জবাব।জন সাধারণের জন্য নববী আদর্শের প্রতি আহবান।শুধু কুফরী রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন ই নয় বরং এই বই এ আপনি পাবেন দ্বীন ইসলামের রাষ্ট্রনীতির ধারণাও।
অত্যন্ত চমকপ্রদ ব্যাপার হলো লেখক শাইখ আব্দুল মুনইম মুস্তাফা হাফিজাহুল্লাহর নিজের মতই নয় বরং হকপন্থী, বাতিলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অটল থাকা অনেক আলিমদের ফতোয়া গুরত্বের সাথে স্থান পেয়েছে।মনের অলতে গলিতে ওদের ঢুকিয়ে দেওয়া নানা সংশয়ের নিরসন হবে ইন শা আল্লাহ।
গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
এ কথা অস্বীকারের ও উপায় নেই যে একশত বছর পরে হলেও আমরা ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছি।হোক অল্প সংখ্যক কিন্তু কেউ তো জেগে আছেই।এই সংকটময়,সম্ভবনাময় পরিস্থিতিতে এরকম একটা বই এর প্রয়োজনীয়তা বলাই বাহুল্য।ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে গড়ে উঠা বহু দল দেখে বিভ্রান্ত হওয়া তরুণ প্রজন্মের জন্য এরকম একটা দিক নির্দেশনাপূর্ণ বই অত্যাবশক ছিল।
ফিক্বহে আমরা নাপাক পানির বিধান পড়লেও এটা বুঝে উঠতে পারিনা যে কুফর দিয়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার আশা শুভঙকরের ফাঁকি বৈ কিছুই নয়।আমরা হ্বকপন্থী কাফেলার অংশ হতে চাই ঠিকই কিন্তু কাফেলা খুজে পেতে বারবার হোচট খাচ্ছি।এরকম নাজুক পরিস্থিতিতে আত তায়েফা মানসুরার অংশ হতে হলে সমস্ত বাতিল তন্ত্রমন্ত্রের কবর রচনা করা আগে জরুরী। সে কবরের উপরই রচিত হবে নতুন গল্প।
শুধুমাত্র ইখলাস নিয়ে ভুল পদ্ধতিতে জান কুরবানী করলেই দ্বীন বিজয়ে হবে না।বরং নবিজি সাঃ এর দেখানো পদ্ধতিই বিজয়ের পূর্বশর্ত। এমতাবস্থায় কু'ফরী সমাজব্যবস্থায় ব্যাবস্থায় বেড়ে উঠা যে কারোর জন্য আগে সংশয় নিরসন জরুরী। যখন এ সংশয়ের জন্ম দরবারি আলিমরাই সবার আগে দিচ্ছেন তখন এর প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিক্রি হয়ে যাওয়া অধিকাংশ 'আলিম' যখন আগুনে কেরোসিন ঢালছেন তখন আশা করি বইটি পানির ভূমিকা কিছুটা হলেও রাখবে।
মাজলুমের দীর্ঘশ্বাসকে প্রশান্তির নিশ্বাসে পরিণত করতে হলে আল্লাহর দেখিয়ে দেওয়া পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।দুঃখজনকভাবে কল্পিত ইসলামী গণতান্ত্রিক দলগুলো শ্রম,সময়,অর্থ ব্যায় করে শুধু সদিচ্ছা দিয়ে উম্মাহর উপকারের বদলে অপকারই করছে।আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে 'ইসলামী গণতন্ত্রের' রসালো গল্পে মজে যাওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য বইটি চিন্তার খোরাক হবে।
গণতন্ত্র কুফরী,গণতন্ত্রকে কুফরী মনে না করাও কুফরি!
ইন্নাল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ্।
বই পরিচিতিঃ
বইয়ের নাম : ইসলাম ও বহুজাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থা
লেখক : আবদুল মুনইম মুস্তফা হালীমাহ হাফি.
অনুবাদক : আম্মারুল হক
প্রকাশনায় : Notes Publications
পৃষ্টা সংখ্যা : ৪৯৬
মুদ্রিত মূল্য : ৭২০ টাকা