Crush & Confession by COBS

Crush & Confession by COBS প্রিয়জনকে চিঠি দিতে আমাদের পেজে মেসেজ দিন। পেজটি ফলো দিয়ে পাশে থাকার অনুরোধ।

Page by City Of Bangla Story
(2)

22/01/2025

কাজিন রিলেটেড গল্পে.....

21/01/2025

আজকেও রাত জাগা মানুষের হাজিরা শুরু হচ্ছে🤗
রাত 11:00
উপস্থিত থাকলে হাজিরা দিয়ে যান।😁🤭

21/01/2025

#ফিগার_ইউ_আউট
#পর্ব_১০
#ইনায়া_রোজ

( কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)

**************

ইতালির তুসকানির এক প্রাচীন শহরে অবস্থিত অর্ণবের পেইন্ট হাউজ। ১২ তলা বিশিষ্ট বহুতল এই ভবনের চারপাশে বিস্তৃত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। পেন্ট হাউজের একপাশে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে দেখা যায় শহরের এক ঝলক। আবার অন্য পাশে দাঁড়ালে দেখা যায় তুসকানি এর পাহাড়ি অঞ্চল, উপত্যকা এবং গাছপালার অপরূপ সৌন্দর্যের এক মহাকাব্য।

তুসকানি শহরের এক নতুন সকাল। ভোরের আলো ধীরে ধীরে জানালার মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করছে। আকাশে সূর্যের প্রথম সোনালী কিরণ রোমাঞ্চিত করে তুলছে চারদিক। মেঝের উপর রাখা কালো মার্বেলের টাইলস উজ্জ্বলভাবে প্রতিফলিত করছে আলো। সেই আলোর কিরণ অর্নবের চোখে মুখে পড়তেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় অর্ণব।

অর্ণবের সকাল শুরু হয় এক অদ্ভুত নীরবতা দিয়ে। যে শহরে রাত পেরোতে গো*লাগু*লি চো*রাগু*প্ত হা*মলা আর বিশ্বা*স ঘা*ত*কতার ছায়া ঘুরে বেড়ায় সেখানে অর্ণবের সকাল যেন এক মুহূর্তের জন্য শ্বাস ফেলার সুযোগ। ক্লান্ত রাতের রেশ মুছে ফেলে ধীর পায়ে উঠে দাঁড়ায় অর্ণব। ফ্রেশ হয়ে চলে যায় নিজের জিম ঘরটিতে।

প্রশস্ত এবং সুশৃংখল কক্ষে স্বচ্ছ কাঁচের প্রবেশদ্বার ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে অর্ণব। সু বিশাল কক্ষে ঢুকতেই চোখে পড়ে এক সারী অত্যাধুনিক জিম সরঞ্জাম আর এক দেয়াল জুড়ে লাগানো বিশাল বড় আয়না। পুরো কক্ষের মেঝেতে বিছানো কালো রঙ্গের রাবার প্যাড।

কক্ষের চারিপাশ জুড়ে রাখা ট্রেডমিল, এলিপটিকাল মেশিন, স্টেশনারি বাইক, ডাম্বেল, বার্বেল ক্যাটলবেল,স্কোয়ার্ট যার্ক, মাল্টি জিম মেশিন সাথে আরো অনেক কিছু। কক্ষের এক পাশের কর্নারে রাখা ওয়াটার স্টেশন আর রেস্ট এরিয়া।

অর্ণব জিম শুরু করে মৃদু স্ট্রেচিং দিয়ে। তার মাংস পেশীর প্রতিটি সঞ্চালন যেন নৈপুণ্যের এক প্রদর্শন। সূক্ষ্মভাবে গড়া তার শরীর যেন পারতে পারতে এক কঠোর পরিশ্রমের গল্প বলে। হাত বাড়িয়ে যখন অর্ণব স্ট্রেচ করে তার শরীরের প্রতিটি শিরা যেনো আলোয় চকচক করে ওঠে। স্ট্রেচিং শেষে অর্ণব চলে যায় ট্রেড মিলে দৌড়ে।

ট্রেড মিলের উপর তার প্রতিটা পদক্ষেপ এতই দৃঢ় আর ছন্দময় যেন মাফিয়া জগতের প্রতিটি পদক্ষেপে তার অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতির প্রতীক। এক অদম্য দৃষ্টিতে ফোকাস হয়ে অর্ণব তাকিয়ে আছে। কেননা সে শুধু শরীর নয় মন কেও শানিত করছে। এরপর প্রতিটি ডাম্বেল উছিয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার।

পেশী গুলো টানটান হয়ে গভীর নিঃশ্বাসে তার বুক উঠানামা করে। তার হাতের শিরা গুলো ফুলে উঠতেই মনে হয় তার শরীরের প্রতিটি রক্তের কণা তার সাফল্যর সাক্ষ্য বহন করছে। প্রায় দেড় ঘন্টা শরীরচর্চা শেষে অর্ণব উঠে গিয়ে জিম কক্ষের জানালার পাশে দাঁড়ায়।

তুসকানির স্নিগ্ধ বাতাসে অর্ণবের চোখে পড়ে সূর্যের আলোয় ঝলমল করা তৃণভূমি। সেই মুহূর্তে অর্ণব অনুভব করে শক্তি আর শান্তি কেবল শরীরে নয় আত্মায় ও থাকতে হয়। এরপর বড় দুটি শ্বাস নিয়ে পেছনে ফিরতেই কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে যায় অর্ণব।

আরুশির যেন এক অনভিপ্রেত আবির্ভাব, দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। তার মুখে এক অদ্ভুত শান্ত অভিব্যক্তি, আর চোখে সেই দীপ্তি, যা কেবল আত্মবিশ্বাসী এবং স্বাধীন মানুষদেরই থাকে।

অর্ণব এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে যায়। তার দেহের সমস্ত ক্লান্তি যেন মুহুর্তেই মিলিয়ে গিয়েছে , আর তার মন যেন কোনো অজানা সুরে ধ্বনিত হচ্ছে। আরুশিকে দেখে তার মনে হচ্ছে , যেন এই মুহূর্তে পুরো ঘরের বাতাস বদলে গেছে। ঘামের গন্ধ, ভারী শ্বাস, এবং মেশিনের শব্দের মধ্যেও সে এক হালকা সুবাস অনুভব করছে। মনে হয়, এক বুনো গোলাপের ঘ্রাণ যেন আচমকা এসে ঢুকেছে তার রুক্ষ জগতে।

আরুশি জিম ঘরের দরজার ফ্রেমে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত রহস্যময় হাসি। অর্ণব সেই হাসিতে অদ্ভুত কিছু খুঁজে পাচ্ছে। আরুশির এই হাসি যেন মৃদু ব্যঙ্গ নয়, বরং এক প্রচ্ছন্ন আমন্ত্রণ।

অর্ণবের হৃদপিণ্ড হঠাৎ করেই জোরে ধুকপুক করতে শুরু করে, যা অর্ণবের মতো লোকের পক্ষে অস্বাভাবিক। এত যুদ্ধ, এত রক্ত আর দুঃসাহসিক কাজের মাঝেও এমন অনুভূতি তার জন্য একেবারেই বিরল। তবে হটাৎই এই অনুভূতি অর্নবের পছন্দ হয়। কিছুটা অস্বস্তিকর, কিন্তু গভীরভাবে আরামদায়ক।

অর্ণব আরুশির দিকে তাকিয়ে আছে তার মুখে কোনো কথা নেই, কিন্তু চোখ যেন বারংবার বলে উঠছে,

- তুমি আসলে কে, যে আমার মতো কঠিন মানুষকেও থমকে দিচ্ছ বারংবার?

আরুশি অর্ণবের এই স্তব্ধতাকে বুঝতে পেরে কপালে একটুখানি ভ্রূকুটি তোলে, যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। এরপর নীরবতা ভেঙ্গে আরুশি বলে ওঠে,

- মিস্টার অর্ণব এক ধাপ হয়ে যাক তাহলে?

অর্ণব স্পষ্ট বুঝতে পারছে আরুশির কথা। সে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আরুশির হাতের দিকে। ব্যান্ডেজ ইতিমধ্যে গায়েব। শান্ত কণ্ঠে অর্ণব বলে উঠে,

- হাতের ব্যান্ডেজ কই?

কিছুটা হেসে আরুসি বলে ওঠে,

- খুলে ফেলেছি, এতদিন রাখতে হয় না।

- দশ দিনও হয়নি।

অর্ণবের কথায় তাচ্ছিল্য হেসে আরুশি বলে ওঠে,

- এটাই প্রথমবার নয় তাই আঘাতটা যৎসামান্য।

চোখ দুটো কিঞ্চি ছোট করে ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে অর্ণব বলে ওঠে,

- আর ইউ শিওর দ্যাট ইউ ওয়ান্ট টু ডু ইট?

অর্নবের কথায় আলতো হেসে আরুশি একটা চোখ টিপ মারে।

আরুশির এই অঙ্গভঙ্গি অর্ণবের ঠোঁটের কোণে এক মৃদু হাসি এনে দেয়। অর্ণব হঠাৎ অনুভব করে , এই মেয়ে শুধুমাত্র তার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়—বরং এই মেয়ে তার জীবনে এমন এক রহস্য, যা অর্ণব সমাধান করতে চায়।

জিমের ভারী পরিবেশ হালকা হয়ে যায়, আরুশির উপস্থিতি যেন সেখানে এক নতুন গল্পের সূচনা করেছে । অর্ণব হটাৎই অনুভব করে, এই মেয়ে কেবল তার শক্তিরই পরীক্ষা নেবে না, তার মনের গভীর কোণেও আলো ফেলবে।

জিম ঘরের বাতাস কিছুটা উত্তেজনায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুই হাতে বক্সিং গ্লাভস পড়ে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। চোখে অটুট আত্মবিশ্বাস আর শরীরের প্রতিটি শিরা তার শক্তির সাক্ষ্য দিচ্ছে। তার সামনে সবে মাত্র বক্সিং গ্লাভস পড়া শেষ করে দাঁড়ায় আরুশি। আরুশি যেনো তুষার শীতল বাতাসের মতোই শীতল এবং স্থির। তার চোখে সেই আগুন যা কোন প্রতিদ্বন্দ্বীর সামনে স্নান হয় না।

অর্ণব এবার শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,

- এই পোশাকে পারবে তো ভেবে দেখো?

আরুশির পরনে একটি কালো ফুল স্লিভস স্কিনি টপ সাথে ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট। অর্ণবের এমন কথায় নিজের দিকে একপলক তাকায় আরুশি। এরপর আলতো হেসে এক হাত উঁচিয়ে অর্ণবকে প্রথম আক্রমণের ইশারা দেয় আরুশি।

বাঁকা হেসে প্রথম মুষ্টি তুলে অর্ণব, বজ্রের মতো দ্রুতগতিতে। তার প্রতিটি আঘাতের ওজন নিয়ন্ত্রিত যেন আরুশিকে এক মুহূর্তেই হারিয়ে দিতে চায় । কিন্তু আরুশি মোটেও পিছিয়ে যায়নি। তার মুভমেন্ট এতটাই ফ্লুইড যেন এক নিত্য প্রদর্শন করছে সে। আঁকাবাঁকা হয়ে প্রতিটি আঘাত এড়িয়ে গিয়ে পাল্টা আঘাত করছে তীক্ষ্ণ এবং নিখুঁতভাবে।

এ যেনো এক বাঘ আর বাঘিনীর লড়াই। এবার আরো কিছুটা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে আরুশি। তার প্রতিটি ঘুসি যেন অর্ণবের প্রতীক্ষার দেয়াল ভেদ করতে চায়। আচমকা আরুশির ডান হাতের ঘুসি অর্নবের চোয়ালে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে একধাপ পিছিয়ে যায় অর্ণব। তৎক্ষণাৎ তার মুখে ফুটে উঠে এক মৃদু হাসি। যেন শিকারি তার শিকারের শক্তি ইতিমধ্যেই পরখ করে নিয়েছে।

এবার কিছুটা অগ্রাসী হয়ে ওঠে অর্ণব। দুজনে কিছুটা ক্লান্ত তবে কেউই হার মানতে রাজি নয়। আরুশি এবার তার সমস্ত শক্তি দিয়ে এক মারাত্মক আঘাত হানে অর্ণবের পাজরে। কিন্তু অর্ণব সেই আঘাত সামলে তুলে পাল্টা আঘাত হানে সরাসরি আরশির কাধ বরাবর। অজান্তেই আরুশির ব্যথাযুক্ত বাহুতে লাগে সেই আঘাত।

কিছুটা মৃদু আওয়াজ করে অর্ণবের চোয়াল বরাবর আরও একটা ঘুষি হাকায় আরুশি। এবারেও কিছুটা দূরে সরে যায় অর্ণব। অর্ণব আবারও তেড়ে আঘাত করতে নিলে নিজের হাত উঁচিয়ে তাকে থামিয়ে দেয় আরুশি। এরপরে নিজের বাহু ধরে চোখ মুখ খিচে এক মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে। আরুশির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে একেবারে মৃদু কন্ঠে অর্ণব বলে উঠে,

- শীট্! হাউ কুড আই ডু দিস?

কিছু মুহূর্ত পর নিজের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করে অর্ণবের দিকে তাকায় আরুশি। দুজনেই কিছুটা হাঁপিয়ে গিয়েছে। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে অর্ণবের চোখে তাকাতেই এক মৃদু হাসি দিয়ে উঠে আরুশি। দুজনের মধ্যে কোন বিজয়ী নেই, তবে তারা দুজনেই একে অপরের প্রতি মুগ্ধ। যেন কোন কথা ছাড়াই দুজনের মধ্যে এক গভীর শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছে।

অর্ণব যেন ভুলে যাচ্ছে আরুশি তার শত্রু আর অর্ণব তাকে নিজ স্বার্থের জন্য ব্যবহার করতে চায়। আরুশির ঘর্মাক্ত ক্লান্ত চেহারার দিকে নিষ্ফলক তাকিয়ে আছে অর্ণব। দুজনের মাঝে কোন শব্দ নেই শুধু চলছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টির আদান-প্রদান। অর্ণবের চোখে কঠোরতা কিন্তু মুখাবয়বে কেমন যেন এক অস্বস্তি।

আরুশির এই নিকষ কালো চোখ যেন এক জলন্ত স্পর্শ, সাহস আর মায়ার এক অদ্ভুত মিশ্রণ। সে মাফিয়ার কাছে বন্দী জেনেও যেন কোন ভয় নেই তার মধ্যে। বরং তার নিকষ কালো চোখের দৃষ্টি যেন বারংবার অর্নবের আত্মা চিরে দেখতে চায়। অর্ণবের সারা শরীর শক্ত হয়ে আছে তবুও তার অন্তরে কিছু একটা যেন পুড়ছে।

অর্ণব যেন কিছুতেই আরুশির থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না। নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অর্ণব মনে মনে আওড়ায়,

- কি করছিস তুই অর্ণব? এসব তোর স্বভাবের বিপরীত।

কিন্তু তার অন্তর যেন মস্তিষ্কের কোন কথাই পাত্তা দিচ্ছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীর পায়ে অর্ণবের দিকে কিছুটা এগিয়ে আসে আরুশি। তার চোখে এতটাই শীতলতা যেন সে পুরোপুরি জানে তার দৃষ্টি এই মুহূর্তে কতটা তীক্ষ্ণ আর শক্তিশালী। আরুশির এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টির চাপ সহ্য করা ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে অর্ণবের পক্ষে।

অর্নবের কিছুটা নিকটে এসে দাঁড়িয়ে একেবারে মৃদু কন্ঠে আরুশি বলে ওঠে,

- দুর্বল জায়গায় আঘাত করা কাপুরুষদের লক্ষণ মিস্টার অর্ণব, এটাই শেষ নয়!

এক দিকে আরুশির নির্লিপ্ত আচরণ আর অপরদিকে তার আচমকা গভীর দৃষ্টি, আরুশির এই দ্বৈত আচরণের দোলাচল অর্ণবকে আরুশির দিকে আরো ক্রমাগত টেনে চলেছে। আরুশির এমন সুক্ষ্ম আচরণ অর্ণব কে ভাবতে বাধ্য করছে, সে দুর্বল হয়ে পড়ছে!

মুহূর্তেই অর্ণবের মস্তিষ্ক স্বকচিত হয়ে উঠে। এতক্ষণের সকল অযাচিত অনুভূতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করে অর্ণব বলে ওঠে,

- সেটা সময় হলেই দেখা যাবে মিস কায়নাত। কক্ষ থেকে বের হওয়ার অনুমতি পেয়েছ দেখে ভাববে না সকল স্বাধীনতা পেয়ে গেছো। তুমি এখনো অর্ণব ওয়াসিমের কাছে বন্দী। আর খুব শীঘ্রই তোমার দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে।

শেষের কথাটা কিছুটা তিরস্কারের স্বরে বলে ওঠে অর্ণব। অর্নবের কথায় ধীরে ধীরে কিছুটা সাহসী অবজ্ঞা সূচক আর একটু তাচ্ছিল্যর ছোঁয়ায় রঙিন এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে আরুশির ওষ্ঠে। শান্ত ভঙ্গিতে আরুশি বলে ওঠে,

- এসব ভয় দেখানোর কৌশল বেশ পুরনো হয়ে গেছে মিস্টার অর্ণব।

এরপর অর্ণবের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিরেট কণ্ঠে বলে ওঠে,

- আপনি হয়তো অনেককেই ভয় দেখিয়ে নিজের শাসনের মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন কিন্তু আমি আমি সেই ধরনের মানুষ নই। আমাকে ভয় দেখাতে চাইলে আরো ভালো কিছু চেষ্টা করুন।

অর্ণবের দৃষ্টি এবার আরো কিছুটা পখর হলো। এই এক রত্তি মেয়ে এত সাহস কোথা থেকে পায় বুজে পায় না অর্ণব। যেখানে তার অভ্যস্ত শিকার গুলো তার এক শীতল হুমকিতেই ভেঙ্গে পড়ে, সেখানে এই চুনোপুটি ন্যায় একরত্তি মেয়ে যেন তার দিকে এগিয়ে এসে তাকে ছিন্ন ভিন্ন করার শক্তি রাখে। অর্ণব গম্ভীর কন্ঠে আবারো বলে ওঠে,

- আমি কি করতে পারি সেই সম্পর্কে তোমার কোন ধারনা নেই মিস কায়নাত।

নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারো কিছুটা হেসে ওঠে আরুশি। এরপর বলে ওঠে,

- আমি আপনার মত অনেককেই দেখেছি যারা ভাবে তারা অপরাজেও। কিন্তু ভেতরে তারা নিজেরাই ভাঙা কাচ।

অর্ণবের চোখ জোড়া এক মুহূর্তের জন্য সংকুচিত হয়। আরুশির এমন দৃঢ়তা তাকে কিছুটা বিভ্রান্ত করে তোলে। পরমুহূর্তেই আবার শান্ত কণ্ঠে অর্ণব বলে ওঠে,

- সবাইকে কি নিজের বাবার মত মনে করো তুমি মিস কায়নাত?

অর্ণবের মুখে আকস্মিক এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় আরুশি। তার বাবার সম্পর্কে অর্ণব কিভাবে জানল? আরুশিকে থমকাতে দেখে বাঁকা হাসে অর্ণব। আরুশি কম্পিত গলায় বলে উঠে,

- মানে?

- এতকিছু তোমাকে জানতে হবে না মিস কায়নাত। বরং তুমি ভাবো তুমি নিজে কতটা প্রস্তুত এই খেলায় শেষ হতে।

নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নতুন উদ্যমে আরুশি বলে ওঠে,

- খেলার গুটি আমাকে কখনোই বানাতে পারবেন না মিস্টার অর্ণব বরং আপনি নিজে প্রস্তুতি নিন কারণ আমি জানি আপনি এমন একজন যার জিতার খুশির চেয়েও হারতে বেশি ভয়।

- আমি হারতে জানি না মিস কায়নাত, কারণ আমি কখনো প্রতিযোগিতার নিয়ম মেনে খেলি না।

নিরেট কন্ঠে আরুশি বলে উঠে,

- মেরে ফেলার থাকলে এক্ষুনি মেরে ফেলুন বাঁচিয়ে রাখলে আপনাকেই দুঃখ পোহাতে হবে।

আরুশির কথায় তাচ্ছিল্য হেসে অর্ণব বলে ওঠে,

- প্রতিশোধ কখনো তাড়াহুড়ো করে নিতে নেই মিস কায়নাত। প্রতিটি আঘাতকে সময় দিয়ে ধারালো করতে হয়, যেন এক কো*পেই সব নিঃশেষ করা যায়। ততদিন তুমি এটাকে নিজের বাড়ি মনে করে থাকতে পারো।

বলেই এক ক্রুর হাসে অর্ণব। ভ্রু কুচকে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আরুশি মনে মনে আওড়ায়,

- এখন এই মুহূর্ত পর থেকে আমি তোমার সামনে দাঁড়াবো শুধুমাত্র তোমার পৃথিবীকে নড়বড়ে করতে মিস্টার অর্ণব। আর তুমি সেটা বোঝার আগেই তোমার এই অট্টালিকা ভেঙ্গে পড়বে। ধ্বংস হবে তোমার এই প্রাচুর্য, আর সেটা খুব শীঘ্রই!

**********

ধীরপায়ে অর্ণবের পিছু পিছু এসে পেন্টহাউসের ড্রয়িং রুমে দাড়ায় আরুশি। এই প্রথমবারের মতো এখানে এসেছে সে। ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই কিছু মুহূর্তের জন্য নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। এক পলকেই যেন তার চোখে মুগ্ধতা এবং অবিশ্বাসের মিশ্রণ ছড়িয়ে যায়।

বিশাল সিলিং থেকে ঝুলে থাকা জটিল ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি, সূক্ষ্ম মার্বেলের মেঝে, বিশাল কাচের জানালার বাইরে থেকে ঝলমলে তুসকানির সৌন্দর্য যেন একই সঙ্গে তার শ্বাস আটকে দিয়েছে।

আরুশির চোখ ধীরে ধীরে ঘরের প্রতিটি কোণে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। ঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হলো সিলিং থেকে ঝুলে থাকা বিশাল আকারের ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি। যা অসংখ্য সূক্ষ্ম ক্রিস্টালের মালার সমন্বয়ে তৈরি। ঝাড়বাতির আলো বিশাল ড্রয়িং রুমে একটি উষ্ণ আর সোনালী আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

ড্রয়িং রুমের কেন্দ্রে আধুনিক ধাচের কালো লেদারের একটি বৃহৎ এল আকৃতির সোফা রাখা। সোফার সামনে রাখা দুটি গাঢ় রঙের গোলাকার টেবিল। পুরো মেজেটি গাঢ় কাঠের তৈরি, যার উপর আধুনিক ধাচের গ্রে এবং সাদা প্যাটান যুক্ত কার্পেট বিছানো। ড্রয়িং রুমের এক কোণে একটি কালো ধাতব এবং কাচের সমন্বয়ে সর্পিলাকার একটি সিঁড়ি রয়েছে।

ফ্লোর টু সিলিং কাঁচের জানালা ঘরটির আরও একটি দৃষ্টিনন্দন বৈশিষ্ট্য। যা দিয়ে তুসকানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একেবারে স্পষ্টভাবে উপভোগ করা যায়। জানালার সাথে লাগানো ভারী পর্দা যা প্রাইভেসি নিশ্চিত করে আবার প্রয়োজন অনুসারে আলো নিয়ন্ত্রণ করে।

ঘরের প্রতিটি জিনিস এত নিখুঁতভাবে সাজানো যে আরুশির মনে হচ্ছিল এই স্থানে বিন্দুমাত্র কোনো ত্রুটি থাকার সুযোগ নেই। এত কিছুর মাঝে আরুশির কেমন যেন একটা অস্বস্তি কাজ করছিল। এই অভিজাত্যের মাঝেও সে অনুভব করল চারদিকে যেন কেমন রহস্য ঘেরা। এখানের প্রতিটি কোণে অজানা কোন গল্প লুকিয়ে আছে।

অর্ণবের এই অট্টালিকা শুধু সৌন্দর্য নয় বরং অদৃশ্য ক্ষমতা ও বিপদেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। আরুশি গভীর শ্বাস নিয়ে মনে মনে আওড়ায়,

- এই জায়গা শুধু চমৎকার নয়, এটা ভয়ংকর! সে যতটা সহজ ভেবেছে ততটাও সহজ হবে না কিছুই।

অর্ণব আরো আগে গিয়েই টেবিলে বসে পড়েছে। আরুশিকে এইভাবে স্তব্ধ হয়ে সবকিছু পরখ করতে দেখে মনে মনে হাসলো অর্ণব। তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে ডাক দিল,

- ম্যাম ইউর ফুড ইজ রেডি।

মহিলা সার্ভেন্টের কথায় সম্মিত ফিরে আরুশির। এরপরই সার্ভেন্টের দেখানো পথে এগিয়ে যায় বিশাল ডাইনিং রুমের দিকে। একটি বিশাল কালো মার্বেলের উপর সোনালী কারুকাজের একটি টেবিল যা চকচকে এবং নিখুঁতভাবে পলিশ করা। ছাদ থেকে ঝুলছে একটি ক্রিস্টাল চ্যান্ডেলিয়ার যা আলো ছড়িয়ে পুরো জায়গাটিকে উজ্জ্বল করে তুলছে।

আরুশি এগিয়ে গিয়ে একটি চেয়ারে বসে পড়ে। তার সামনে মুখোমুখি বসে অর্ণব একটি অ্যাভোকাডো টোস্ট খেয়ে চলেছে। আরুশি বসতেই সার্ভেন্ট এসে তার সামনে একটি স্ক্যামলভ এগ এবং একটি ফ্রুট প্লেটার রাখে। যেখানে ব্লুবেরি,রাস্পবেরি, কিউই, পাপায়া এবং ড্রাগন ফুট রাখা। আর সাথে ফ্রেশ অরেঞ্জ স্কুইজড জুস।

অর্ণবের সাথে লড়াই করে কিছুটা ক্ষুধার্ত এবং ক্লান্ত থাকায় আগ পিচ না ভেবেই আরুশি খেতে শুরু করে দেয়। তখনই সেখানে উপস্থিত হয় আদি। এক প্রফুল্ল হেসে অর্নবের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,

- গুড মর্নিং ভাই।

- ভাই!

আদির মুখ থেকে ভাই কথাটা শুনে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ সংকুচিত হয় আরুশির। কাল পর্যন্ত অর্ণবকে বস ডাকা আদি আজকে হঠাৎ ভাই বলে সম্বোধন করছে, কিছুই বোধগম্য হলো না আরুশির। তখনই আরুশিকে টেবিলে বসে খেতে দেখে এক মোহিত হাসি দিয়ে আদি বলে ওঠে,

- হ্যালো মিস গ্রাম্পি গুজ!

আদির এরূপ সম্বোধনে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করে আরুশি। সবাই তার সাথে এমন নরমাল বিহেভ করছে কেন? যেন তারা সকলেই তার পূর্ব পরিচিত। আরুশি কে চুপ থাকতে দেখে আদি হেসে আরুশির পাশে বসে পড়ে।

- যতদিন না ভাই রেগে যায় ততদিন এটাকে নিজের বাড়ি মনে করে থাকতে পারো। তুমি যদি নির্দোষ হয়ে থাকো তাহলে কোন ভয় নেই তোমার।

আদির এমন ইঙ্গিত পূর্ণ কথা কিছুই বোধগম্য হলো না আরুশির। বরং আরুশি একবার আড় চোখে তাকালো খাবার নিয়ে মগ্ন থাকা অর্ণবের নিকট। তখনই হঠাৎ আরুশি নিজের কণ্ঠনালী থেকে এমন এক বাক্য বের করল যা মুহূর্তে অর্ণবকে নাড়িয়ে তুলল। অর্ণবের চোখ মুখ রক্তিম আভায় ছেয়ে গেল। হাতের কাটা চামচ সজরে থালায় রেখে এক কঠোর অভিব্যক্তি নিয়ে অর্ণব তাকালো আরুশির পানে।

চলবে......

#ইনায়া_রোজ

[ আপনাদের অপেক্ষা না করিয়ে গল্প দিয়েই দিলাম। আশা করি আপনারা চুপি চুপি পড়ে চলে না গিয়ে লাইক কমেন্ট করবেন। আসলে আপনাদের জন্য এত কষ্ট করে লিখে আমার কোন লাভই হয় না। মাঝে মাঝে আপনারা শুধু কিছু মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দেন ব্যাস এতটুকুই। কিন্তু সেটাও দিতে যেন আপনাদের অনেক কষ্ট হয়। যথাযথ মন্তব্য না করলে আমি গল্প দেওয়া বন্ধ করে দিব।]

21/01/2025

#তোর_প্রেমে_উন্মাদ_আমি
#পর্ব৫


আজ কে আর আরু ভার্সিটি যায় নি। আরাধ্য বলেছে আজ সে মামনি কে পাঠাবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে। তো আজ দুপুর অব্দি আরু বিয়ে ভাঙার জন্য প্ল্যান করেছে। খুশি মনে অপেক্ষা করলো তার মামনির আসার। কিন্তু অবাক করা কান্ড তারা আসলো না। আরু বিশ্ব জয়ীর একটা হাসি দিলো। বিছানা থেকে ফোন টা নিয়ে আরাধ কে ফোন করলো। এদিকে আরাধ্য নিজের রুমে বিরক্ত হয়ে বসে আছে। বসার ঘরেরই নীরা আর তার মা এসেছে। সেই থেকে তার নিজের মা গল্প করছে। আরাধ্য তার মাকে না দেখলে জানতেই পারতো না একটা মানুষ এভাবে এক্সের বউ বাচ্চা কে আপ্যায়ন করতে পারে। আর ওদেরও বলি হারি..আসার আর সময় পেলো না? আসার আগে ফোন করে তো আসবে যে আমরা ফ্রী আছি কি না। তা না করে দুম করে চলে আসে ম্যানারলেস মানুষ কথাকার। হটাৎ টেবিলে থাকা ফোন টা বেজে উঠায় আরাধ্য ফোনের দিকে তাকালো। আরুর নম্বর দেখে ভ্রু কুঁচকালো। ফোন রা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে আরুর হাসির শব্দ পাওয়া গেলো। আরাধ্য বিরক্ত হয়ে বলল-
-” পাগলের মতন হাসছিস কেনো?
-“ আজকে যেনো কি ছিলো?
-“ কি ছিলো?
-“ কাল তো খুব বড় বড় কথা বলেছিলেন আজ মামনি কে পাঠাবেন। বিয়ের তারিখ ঠিক করবেন। আমি তো বিয়ে ভাঙার সব প্ল্যান রেডি করে বসে ছিলাম। আফসোস আপনি আসলেন না।
-“ কেনো না আসাতে কি তুই গলা আঁটকে ম'রে যাচ্ছিস?
-“ বালাই শাট। আমি কেনো মরতে যাব।
-“ আমাকে বিয়ে করতে না পারার আফসোসে।
-“ নাইস জোক্স। আমি নিজেই ম'রে যাব ছাঁ'দ থেকে লাফ দিয়ে তবুও আপনাকে বিয়ে করার জন্য ম'রবো না।
-“ ভেবে বলছিস তো?
-“ হ্যাঁ।

আরাধ্য দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো তার মা এগিয়ে আসছে। আরাধ ভলিউম টা এবার লাউড স্পিকারে দিলো। তারপর বলল-
-“ কি যেনো বললি সেটা আবার রিপিট কর তো।
-” বলেছি আপনাকে বিয়ে করার চেয়ে নিজে ম'রে যাওয়া অনেক ভালো।
আরাধ্য স্পিকারের ভলিউম কমালো। তারপর বলল-
-” দেখ আরু প্লিজ এমন টা করিস না। মানলাম আজ আম্মুকে পাঠাতে পারি নি বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা বলার জন্য। তাই বলে এভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা বলবি! নিজের কথা ভাব। আত্মহ'ত্যা করলে এ জীবনে তো আমাকে বিয়ে করতে পারবিই না উল্টা পরকালে কনফার্ম জাহান্নাম তোর কপালে।

আরু ভ্রু কুঁচকালো। হঠাৎ করে আরাধ্যর কথার টোন বদলে গেলো কেনো?
-“ ও হ্যালো মিস্টার আপনাকে বিয়ে করার জন্য আমি মনে হয় বসে আছি।
-“ হ্যাঁ জানি এখন আর বসে থাকবি না। একটা সমস্যা হওয়ায় মাকে পাঠাতে পারি নি। প্লিজ নিজের কোনো ক্ষতি করিস না। তাহলে সারাজীবন আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। মা তুমি একটু আরুকে বুঝাও। মেয়েটার মাথার সব তার ছিঁড়ে গেছে। আত্মহ'ত্যা করার হুমকি দিচ্ছে। আমি এখন কোন দিকে যাব তুমিই বলো। ওর মৃ'ত্যুর জন্য তো পুলিশ আমাকে জেলে নিবে।তারপর আমার ডক্টর হওয়া স্বপ্ন স্বপ্ন ই থেকে যাবে। প্লিজ কিছু বলো এই বেয়াদব কে। ভাইয়ের মতই হয়েছে বেয়াদব টা।

কথাটা বলে আরাধ্য ফোন এগিয়ে দেওয়ার সময় সন্ধ্যার অগোচরে নিজেই ফোন কেটে দিয়ে বলল-
-“ যাক বাবা ফোন কেটে দিলো এই মেয়ে। এখন কি হবে?

সন্ধ্যা এগিয়ে আসলো।
-“ ফোন দে।
আরাধ্য ফোন টা সাইলেন্ট মুডে অন করে আরু কে ফোন দেওয়ার নাটক করে ফোন টা কানে নেয়। অথচ আরাধ্য আরুকে ফোনই দেয় নি। এদিকে আরু ফোন দিচ্ছে বারবার আরাধ্য কে আর আরাধ্য কেটে দিয়ে সন্ধ্যা কে বলছে আরু ফোন ধরছে না। সন্ধ্যা নিজের রুমে গিয়ে কনাকে ফোন করলো। জিজ্ঞেস করলো আরু কি করছে। কনা বলল আরু সোফায় বসে ফোন টিপছে। শুনে স্বস্তি পেলো। তারপর কাল আসবে বিয়ে নিয়ে কথা বলতে সেটা জানিয়ে ফোন কেটে দিলো।

মাগরিবের আজান ভেসে আসছে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে থাকা মসজিদের মাইক থেকে। আরশি ড্রয়িং রুমে বসে মনোযোগ সহকারে স্কুলের পড়া কমপ্লিট করছে। পাশেই সন্ধ্যা পুরো টা মনোযোগ দিয়ে দিয়ে মেয়েটাকে দেখছে। মেয়েটার তার হাসে না তেমন। লাস্ট কবে প্রাণ খুলে হাসতে দেখেছে সেটাও বোধহয় সন্ধ্যা ভুলে গেছে। গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শোনা গেলো। আরশি বই থেকে মুখ সরিয়ে সদর দরজার দিকে তাকালো। মূহুর্তে দেখতে পেলো বাবা কে। ক্লান্ত শরীরে.. হাতে এপ্রন আর গলায় স্টেথোস্কোপ টা গলায় ঝুলিয়ে হেঁটে আসছে। আরশি চেয়ে থাকলো বাবার দিকে। আষাঢ়ের সারা দিনের ক্লান্ত যেনো এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো বউ আর মেয়েটাকে দেখে। এগিয়ে এসে পাশে বসলো মেয়ের। মেয়েকে সোফা থেকে উঠিয়ে নিজের কোলে বসালো৷ গালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ কি করে আমার বাচ্চা টা?
আরশি টেবিল থেকে বই তুলে নিয়ে বলল-
-“ অ্যা'ম স্টাডিং বাবা।
-“ খেয়েছো?
-“ না।
-“ হাঁটতে বের হবে?
আরশি উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে ছোট্ট করে হুমম বললো। সন্ধ্যার রাগ হলো। কেবলই তো এলো লোকটা হসপিটাল থেকে। এখনই কেনো মেয়েকে নিয়ে বাহিরে যেতে হবে।
-“ কেবলই তো আসলেন আপনি। ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ফ্রেশ হন। রেস্ট নিন কিছুক্ষণ।
-“ সব ক্লান্তি বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে শেষ সন্ধ্যা। এখন সময় আমার মেয়েকে সময় দেবার।
-“ হ্যাঁ শুধু মেয়েকে সময় দিলে কি হবে বাবা? ছেলেকেও একটু পাত্তা দাও।

কথাটা বলতে বলতে আরাধ্য রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আষাঢ় ছেলের পানে তাকায়।
-“ তুই আরশির মতন বাচ্চা নাকি যে সময় দিব?
-“ আরশির মতন বয়স না আমার তাতে কি? বয়স টা না হয় বউ নিয়ে হাঁটার। কিন্তু আমার তো বউ নেই। বাবার সাথে তো হেঁটে মন কে স্বান্তনা দিতেই পারি।

কথাটা বলেই আরাধ্য বাবা মায়ের দিকে তাকালো। আষাঢ় ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ বিয়ে করবি তুই?
-“ বিয়ে তো আমি করতে চাই নি বাবা। কিন্তু আমার মাইন্ড টা হেট করে দিয়েছে তোমার ভাইয়ের মেয়ে। সে আজকাল রাস্তা ঘাটে জড়িয়ে ধরে জামাই জামাই বলে লোকজনকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমাকে ডাকে। আমার তো একটা মানসম্মান আছে। অবিবাহিত হয়েও বিবাহিত দের মতন ফিলিংস নিতে হয় তোমার ভাইয়ের মেয়ের জন্য। আবার আমাকে থ্রেট ও দিছে।
-“ কিসের থ্রেট?
-“ কাল যদি তোমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে না যাও তাহলে নাকি রনির সাথে ভেগে যাবে। আর তা না হলে সুইসাইড করবে।
-“ রনি টা কে?
-“ মা তুমিই বোঝাও বাবা কে রনি টা কে। আমার পড়াশোনা নষ্ট হচ্ছে তোমাদের আরুর জন্য। প্লিজ ওকে আমার ঘাড়ে ঝুলিয়ে এই টর্চার থেকে মুক্ত করো।

আরাধ্য চলে গেলো। সন্ধ্যা বুঝালো কাল ও আজ বিকেলে আরাধ্য তাকে যা বুঝিয়েছে তাই। আষাঢ় তপ্ত শ্বাস ফেলে রাজি হলো কাল যাওয়ার জন্য। মেয়ের দিকে তাকিয়ে স্টেথোস্কোপ আর এপ্রন টা সোফায় রেখে মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে গেলো।

পড়ার টেবিলে বসে ঝিমাচ্ছে আয়ুশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর অসহ্যকর স্থান হচ্ছে এই পড়ার টেবিল। কোন বেয়াদব এই পড়াশোনা বের করেছে তাকে সামনে পেলে আয়ুশ থাপ'ড়িয়ে থা'পড়িয়ে পড়াশোনা টা পৃথিবী থেকে উঠিয়ে দিত। এত কষ্ট এত স্ট্রাগল করে পড়াশোনা করে কি লাভ? সে কি চাকরি করবে নাকি? সে তো শুধু আরশি কে নিয়ে সংসার করবে। অথচ সংসার করতে যে প্রতি মূহুর্তে টাকার প্রয়োজন হয় তা এই গর্দভ আয়ুশের মাথায় নেই। সে তার বাবা চাচার টাকায় চলবে৷ ক'দিন এ বাড়ি তো ক'দিন তার মামনির বাড়িতে গিয়ে থাকবে।

চোখটা টান টান করে মেললো আয়ুশ। সামনেই রয়েছে ইংলিশ রচনা। পহেলা বৈশাখ। একবার রিভিশন দিলো। নাহ্ কঠিন শব্দ। তাই খাতা বের করে লিখতে শুরু করলো-

-“ দ্যা পহেলা বৈশাখ ইজ এ্যা ভেরি ইম্পরট্যান্ট ফেস্টিভ্যাল ইন আওয়ার কান্ট্রি। এভ্রি ইয়ার উই আর সেলিব্রেট দিস ওকেশন। আওয়ার ফাস্ট ডে স্টার্ট উইথ নিউ ড্রেস। ইন দ্য মর্নিং, আই ওয়েক আপ আর্লি, দেন উই আর ইটিং ওয়াটার রাইস উইথ হিলশা ফ্রাই। মাই মাদার প্রিপেয়ার দিস ফুড এভরি ইয়ার। আই রিয়েলি লাভ দিস।

আফ্টারনুন টাইম মাই কাজিন আরশি এন্ড হার ব্রাদার কামস টু মাই হাউজ। আরশি লুকস ভেরি বিউটিফুল ইন এভ্রি টাইম। বাট দ্যিস ডে সি ইজ মোর বিউটিফুল ফর রেড শাড়ি। হার মমস অলওয়েজ ব্রিংস সাম মিষ্টি ফ্রম হার হাউজ। দিস ইয়ার উই ওয়াচড পহেলা বৈশাখ প্রোগ্রাম অন টিভি টুগেদার। এন্ড আফ্টার দ্যা ইভনিং উই আর গোয়িং টু মেলা। আরশি নেভার স্মাইল ইনফ্রন্ট মাই। শি অলওয়েজ ইগনোর মি৷ এন্ড শি গিভ পাত্তা সিদ্দিক। মাই হার্ট গোয়িং টু ব্রোকেন। আই লাইক আরশি, বাট শি ডিড নট লাইক মি।
এরজন্য আই ডিড নট মন খারাপ। আই ফিল ভেরি হ্যাপি স্টে উইথ হার। আই টেক সাম টাকা নেয়ার মাই ফাদার। এন্ড আই বায়েড সাম চুড়ি এন্ড সাম আইসক্রিম ফর আরশি। আরশি ইটিং এন্ড কিপিং। আই স্মাইল। এন্ড ফর দিস ডে ওয়াজ রিয়েলি হ্যাপি ফর মি।

প্যারাগ্রাফ টা আর একবার রিভিশন দিয়ে আয়ুশ বিছানায় চলে আসলো। এখন সে ঘুম দিবে। তারপর সকালে স্কুলে গিয়ে প্যারাগ্রাফ টা স্যার ধরলে বলবে।

সকালে আয়ুশ একাই চলে গেছে স্কুলে। কনা আজ আরু কে যেতে মানা করেছে ভার্সিটি। কেনো সেটা বলে নি। শুধু বলেছে কাজ আছে। বাসায় কোনো কাজও নেই৷ ওয়াইফাই তে নেট ও নেই। সেজন্য টেবিল থেকে ছুরিটা হাতে নিয়েছে আপেল কাটবে বলে।

সবেই সন্ধ্যা আর আরাধ্য আরুদের বাড়িতে ঢুকেছে। আর ওমনেই চোখ চলে যায় ডাইনিং টেবিলে। আরুর হাতে ছুরি। আরাধ্য গতকাল মাকে পই পই করে বলেছে চলো ও বাড়ি তে। বিয়ে নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু না তার এক্সের মেয়ে আসায় আর আসতে পারলো। এখন যে মেয়েটা সুইসাইড করতে যাচ্ছে এর দায়ভার কে নিবে?
আরাধ্য দৌড়ে আসলো আরুর কাছে ছুটে। আরুর হাত থেকে ছুরি টা ফেলে দিয়ে অস্থির কন্ঠে বলল-
-“ পাগল হয়ে গেছিস? গতকাল আসি নি সেজন্য সোজা ছুরি নিয়ে সুইসাইড করবি?
আরু হতবিহ্বল হয়ে গেলো আরাধ্যর কথা শুনে। ও সুইসাইড করবে কেনো? ও তো ছুরি হাতে নিয়েছিলো ফল কাটতে। সন্ধ্যাও এগিয়ে আসলো।
-“ এভাবে কেউ ছুরি নেয় সুইসাইড করারা জন্য? তাও এই সামান্য বিষয় নিয়ে।
-” মামনি তোমাদের কোথাও ভুল...
-“ হ্যাঁ আমাদের ভুল হয়েছে আরু। আমার কালই মাকে নিয়ে আসা উচিত ছিলো। বুঝতে পারি নি ফোনে বলা কথাটা তুই সত্যি সত্যি করে বসবি। মা প্লিজ আমি আর আরুর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিব না। প্লিজ তুমি আজই ডেট ফিক্সড করবে। আজ না হয় আমরা সময় মতন এসেছি বলে আরুকে বাঁচাতে পেরেছি। সবসময় তো আর টাইম মতো আসতে পারবো না।

ভেতর থেকে সন্ধ্যা আর আরাধ্যর কন্ঠ শুনে কনা বাহিরে আসলো। আরাধ্যর হাতে ছুরি দেখে বলল-
-” কি হয়েছে?

আষাঢ় মেয়েকো নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবাইকে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-
-“ কি হচ্ছে?
আরাধ্য কনার হাতে ছুরি টা দিয়ে বলল-
-“ চাচা আছে বাসায়?
-“ হ্যাঁ রুমে।
-“ ডাকো। তোমার মেয়ে ছু'রি নিয়েছে সুইসাইড করার জন্য।
আরু মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
-” মিথ্যা কথা বলছে আরাধ্য ভাই।
আরাধ্য রেগে গেলো।
-“ আমি মিথ্যা বলছি? মা তুমি দেখেছো না আরুর হাতে ছুরি ছিলো বলো?
-“ হ্যাঁ..
-“ তাহলে আর কি শুনলে তো কাকিয়া।

রাত বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। ভাইকে দেখে হাসি মুখে ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
-“ কি হয়েছে?
কনা মেয়ের হাত চেপে ধরে বলল-
-“ আপনার মেয়ে সুইসাইড করতে গিয়েছিল।
-“ কেনো?
-“ আমি বলছি চাচা। গতকাল আসার কথা ছিলো মায়ের৷ কোনো এক কারন বসত মা আসতে পারে নি। আপনার মেয়ে রাতে আমাকে ফোন করে ম'রার হুমকি দিচ্ছে। বলছে আমি নাকি ইচ্ছে করে তাকে বিয়ে করবো না বলে মা কে পাঠাই নি। মানুষের সমস্যা তো থাকতেই পারে। আপনার মেয়ে যে এমন বিয়ে পাগল তা আমি সত্যি ভাবতে পারি নি চাচা। সেজন্য দেখুন আমি স্টুডেন্ট হওয়া স্বত্বেও আরুকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।

রাত রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকালো। তার মেয়ে বিয়ে করার জন্য এত উতলা ছি! কনা টেনে নিয়ে গেলো মেয়েকে। যেতে যেতে বলল-
-“ বেয়াদব মেয়ে একটা। এতই বিয়ে পাগল যখন তখন সেদিন ঢং করে বারবার বিয়ে করবি না বলে আমার মাথা খেলি কেনো? অসভ্য মেয়ে একটা। তোকে তো দিব বিয়ে। তারপর এমন বেহায়াপনা ছি।

আরুর মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। আরাধ্য টা তাকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিলো! কি দরকার ছিলো ধূর ছু'রি দিয়ে ঢং করে ফল কাটার। এখন তো সব ঘেঁটে ঘ হয়ে গেলো।

[ আয়ুশের রচনা কেমন লাগলো? এমন রচনা জীবনে পড়েছো তোমরা? এনি ওয়ে সবাই আরাধ্য আরু কে নিয়ে পরে থাকলেও আমি ভাবছি আয়ুশ কে নিয়ে৷ বেচারা স্কুলে গিয়ে যখন জানলো আরশি আজ যায় নি স্কুলে। বেচার কি অবস্থা হচ্ছে ঐ স্কুলে ভেবেই কান্না পাচ্ছে😭]

#চলবে?

পেজটা ফলো দিবেন

21/01/2025

#তোর_প্রেমে_উন্মাদ_আমি
#পর্ব৪


পড়ন্ত দুপুরের দিকে মেডিক্যালের সকল ক্লাস শেষ করে বাড়ির পথে হাঁটা ধরে আরাধ্য। ক্লান্ত দেহ তবুও সে হেঁটে বাড়ি ফিরবে এই আশায় এই টাইমে আরুর ও ভার্সিটি ছুটি হয়। আর আরুর সাথে হেঁটে ফিরবে। ভার্সিটির সামনে এসে আরাধ্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। এখনও ছুটি হয় নি। মিনিট পাঁচেক পর ছুটি হলো। আরু বের হলো। তবে আজ একা না। পাশে একটা ছেলেকে দেখতে পেলো। ছেলেটার সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আরু। আরাধ্যর হিংসা হলো খুব। কই তার সাথে তো এভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলে না। আরু কথা বলার সময় হুট করে সামনে তাকাতেই আরাধ্য কে দেখে বিরক্ত হলো। হাস্যজ্বল চেহারায় এসে হানা দিলো একরাশ বিরক্ত। ক্লাস ফ্রেন্ড রনি কে বিদায় দিয়ে রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটতে লাগলো আরু। আরাধ্য দ্রুত পায়ে হেঁটে আরুর পাশে আসলো। ঠোঁট টাকে বেঁকিয়ে বলল-
-“ ছেলেটা কে রে?
আরু দৃষ্টি সামনে রেখেই বলল-
-“ কোন ছেলে?
-“ একটু আগেই যার সাথে হা হি করে কথা বলতে বলতে বের হলি।
-“ ওর নাম রনি। ভীষণ ভালো একটা ছেলে।
আরাধ্য ধমকে বলল-
-“ তোরে কি জিজ্ঞেস করছি আমি ও কেমন ছেলে? বেশি কথা কেনো বলিস?
-“ এই একদম ধমকাবেন না আমায় বলে রাখলাম।
-“ তাহলে কি থেরাপি দিব রাস্তাঘাটে?
আরু দু গালে হাত দিলো নিজের।
-“ একদম না। রাস্তা ঘাটে থেরাপি দিলে কসম আমি এই ড্রেনে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।
-“ আচ্ছা তাহলে বাসায় গিয়ে দিব। এখন বল তোর কি লজ্জা নেই বেহায়া মেয়ে?
-“ কেনো কি করছি আমি।
-“ তোর হবু স্বামী আমি। কই তুই তো আমার সাথে এভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলিস না। ঐ টনি না কি..
-“ ওর নাম টনি না রনি।
-“ ঐ হলো। বাব্বাহ টনি বলায় কথা কেঁড়ে নিলি কেনো?
-“ আমি নাম টা জাস্ট সঠিক বলে দিলাম।
-“ সে যাই হোক। তুই ওর সাথে ওভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলিস কেনো?
-“ ও আমার ফ্রেন্ড।
-“ আর আমি তর হবু স্বামী। স্বামীর থেকে ফ্রেন্ড কখনই বড় হতে পারে না।
-“ কে হবু স্বামী?
-“ কেনো আমাকে তোর চোখে পরে না?
-“ আপনার সাথে আমার বিয়ে হলে তো।
-“ কেনো তুই কি বিয়ের দিন ভেগে যাবি নাকি?
-“ বিয়ে দিন আসলে তো ভাগবো। এমন অভিনয় করবো যে বিয়ে নিয়ে ভাবা বন্ধ হয়ে যাবে।
-“ ওহ্ রিয়েলি? আর আমি বসে বসে তোর অভিনয় দেখবো বুঝি? কালই মা কে পাঠাবো বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে। তুই পারলে আটকিয়ে দেখা।

ত্বরিত গতিতে আরু আরাধ্যর দিকে তাকালো। সত্যি সত্যি এই ছেলে মামনি কে পাটাবে!
-” আপনার মাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করবো।
-“ কর না করছে কে। আমার বাসা চলে এসেছে। তুই ভাবতে ভাবতে বাড়ি যা কি ব্ল্যাকমেইল করবি সেটা।
আরু মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো। আরাধ্য বাসায় এসে বসার রুমে ঢুকতেই দেখলো তার মা আরশি কে খাওয়াচ্ছে। আরাধ্য কাঁধের ব্যাগ টা মন খারাপ করে টি-টেবিলে রেখে সামনে বসলো। সন্ধ্যা তাকালো ছেলের দিকে। মুখ টা চুপসানো দেখে বলল-
-“ কি হয়েছে?
-“ কি হয় নি তাই বলো।
-“ বলবি তো কি হয়েছে।
-“ আরু আমার জীবন টা ত্যানা ত্যানা করে ফেললো মা।
-“ কেনো আরু কি করেছে?
-“ তোমাকে সেদিন বললাম পইপই করে যে আরুর বাসায় গিয়ে বিয়ের ডেট টা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিক্সড করে আসো। জানো আজ আরু কি করেছে?
-“ আশ্চর্য তুই না বললে আমি জানবো কি করে?
-“ ও আজ আমাকে থ্রেট দিয়েছে। বলেছে কালকের মধ্যে বিয়ের ডেট ফিক্সড না করলে ও ভেগে যাবে রনির সাথে।
-“ রনি টা কে?
-“ ওর ভার্সিটির একজন। আজ দেখলাম হেলেদুলে কথা বলছে। আমি কে জিজ্ঞেস করার উত্তরে বলল তার ব্যাকআপ ওটা। ও পড়াশোনা থেকে মুক্তি পাবার জন্য যাকে তাকে বিয়ে করতে চাইছে ভাবা যায়? আমি মোটেও চাই না অপরিচিত কোনো ছেলের সাথে আমার চাচার মেয়ে টা ভেগে যাক। মানসম্মান কি থাকবে বলো?
সন্ধ্যা চিন্তায় পরে গেলো। সত্যি সত্যি যদি আরু ভেগে যায়। আর তাছাড়া আরু তো পড়াশোনা করতে চায় না। রাতের ভয়ে করে শুধু। এখন যদি ভেগে যায় তাহলে তো রাত মে'রেই ফেলবে আরু কে।

-“ আচ্ছা তোর বাবা ফিরুক হসপিটাল থেকে। কথা বলে কাল যাব।
আরাধ্যর মুখে হাসি ফুটলো। টেবিল থেকে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে আরু কে মনে করে বিরবির করে বলল— তুই চলবি ডালে ডালে। আর আমি চলবো তোর শিরা উপশিরা দিয়ে। বিয়ে তো তোর আমার সাথেই হবে। দরকার পরলে তোকে লুকিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে তোকে ফাঁসায় দিব হু। বলবো তুই বাধ্য করেছিস আমায়।

স্কুল থেকে ফিরেই আয়ুশ সেই যে সোফায় বসে ভাবছে তো ভাবছেই কিছু একটা। আর একটু পরপর কনা কে জিজ্ঞেস করছে আব্বু কখন আসবে। কনা উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গেলো। সন্ধ্যার দিকে রাত আসলো বাসায়। আরু হবার বছর পাঁচেক পরই আমেনা বেগম হার্ট অ্যাটাক করে ঘুমের ঘোরেই মা-রা যান। তার কয়েক মাস পরই নতুন বিজন স্টার্ট করে। বিজনেস টা পুরোপুরি দাঁড়িয়ে গেলে রাত নিজের একটা বাড়ি করে আষাঢ়ের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। আষাঢ় প্রথমে দ্বিমত করলেও পরে রাজি হয়। রাতের নিজের সংসার ছেলেপেলে আছে। সে যেহেতু নিজের বাড়িতে থাকতে চাইছে সেখানে আষাঢ় আর বাঁধা দিয়ে কি করবে।
আজ অফিসে অনেক কাজের ব্যস্ততা ছিলো। নতুন ক্লায়েন্ট তার কাজের ধরনও আলাদা। সেসব নিয়েই প্যারাতে দিন কেটেছে। এখন বাসায় আসতে না আসতেই আয়ুশ দৌড়ে সামনে দাঁড়ালো। রাতের হাত পকেটে চলে গেলো। রোজ মজা নিয়ে আসে। আজ আর আনতে মনে নেই।
-“ সরি আয়ুশ। বাবা আজ মজা আনে নি। পাক্কা কাল নিয়ে আসবো।
আয়ুশ মিষ্টি এক হাসি উপহার দিলো। রাত কে টেনে সোফায় বসিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল-
-“ পানিটা খাও আব্বু। আমি জানি ইউ আর সো টায়ার্ড। ইফ ইউ ইটিং ওয়াটার। ইউ ফিল গুড।
রাত স্মিত হেঁসে পানিটা খেলো। আয়ুশ পাশে আয়েশ করে বসলো।
-“ নাউ ইউ ফিল বেটার?
রাত ছোট্ট করে জবাব দিলো-
-“ হুম।
-“ আই ওয়ান্ট টু সাম টক উইথ ইউ।
-“ বাংলায় বল।
-“ ওক্কে। আই নিড মেডিসিন।
-“ কিসের মেডিসিন?
-“ বড় হবার। মামনি আমাকে বড় হতে বলেছে। তাহলে আমাকে সে আরশি গিফট করবে।
রাতের মুখের রং মূহুর্তে বদলে। সে এতক্ষণ মনে মনে ভাবছিলো তার ছেলের বোধহয় বোধবুদ্ধি একটু উদয় হয়েছে। সেজন্য এত কেয়ার করলো রাতের। কিন্তু এ তো মনে মনে অন্য কিছু ভেবে রেখেছিল।
-“ বড় হবার মেডিসিন তোর পিঠের উপর দিব বেয়াদব। কে বলেছে তোকে বড় হবার মেডিসিন পাওয়া যায়?
-“ আমার ব্রেন।
-“ তোর মাথায় ব্রেন বলতে কিছু আছে নাকি? সব তো ছেঁড়া তার।
-“ আমার আরশি লাগবে আব্বু।
-“ আরশি কে কেনো গিফট করবে ওরা?
-“ বিকজ আই লাইক আরশি আব্বু।
-“ এই তোর বয়স কত হারা'মজাদা বল? এই বয়সে আই লাইক আরশি বলছিস কেনো? এই বয়স টা কি তোর লাইক করার মতন?
-“ ভালোবাসা বয়স মানে না আব্বু। হয়ে যায়। যেভাবে ভালোবাসো তুমি আম্মুকে। ঠিক সেভাবে ভালোবাসি আমি আরশি কে।
-“ আমার চোখের সামনে থেকে দূর হ গাধার বাচ্চা
আরশি তোর মতন গাধা কে পছন্দ করবে না জীবনেি।
-“ কি করলে আরশি আমাকে পছন্দ করবে? গিভ মি সাম এডভাইস।
-“ আরশির মতন ভালো স্টুডেন্ট হতে পারবি?
-“ না। এটা ছাড়া যা বলবে সব করতে পারবো।
-“ তাহলে আরশির পা ধুয়ে পানি খা গিয়ে হতচ্ছাড়া। তাহলে যদি একটু ব্রিলিয়ান্ট হতে পারিস।
কথাটা বলে রাত চলে গেলো। অবুঝ আয়ুশ সত্যি সত্যি ভেবে বসলো আরশির পা ধুয়ে পানি খেলে বোধহয় আরশি তাকে পছন্দ করবে। কথাটা ভেবেই তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। আর আরাধ্য কে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসতে বলল।

আয়ুশ ব্যাগপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে এই মাঝ রাতে। সে তার ব্রো কে বলেছে গাড়ি নিয়ে তার বাসায় আসতে। সে চলে যাবে আজকেই আরশির কাছে। সোফায় বসে আরু আপেল খাচ্ছে। আকস্মিক আয়ুশ কে সেজেগুজে বের হতে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ এই ড্রামাবাজ কোথায় যাচ্ছিস এই সময় ব্যাগপত্র নিয়ে?
আয়ুশ বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে বলল-
-“ তোর আমার শ্বশুর বাড়ি।
-“ আমার তোর শ্বশুর বাড়ি মানে?
-“ মানে আই গো টু মাই মাদার ইন লো হাউস। ইউর ফাদার নট বাইং মি লম্বা হওয়ার ঔষধ। বরং হি গিভ জ্ঞান মি । হি সেইড আরশির ফুট ধুয়ে পানি খেতে। তাই আই লিভ মাই হাউস।
-“ তো ও বাড়িতে গিয়ে কি করবি?
-“ আরশির ফুট ধুয়ে ওয়াটার খাব।
-“ তারপর?
-“ তারপর আরশির মত আমিও বিলিপয়েন্ট হয়ে যাব।
আরু হাসতে হাসতে বলল-
-“ হ্যাঁ তুই বিলিপয়েন্টই হতে পারবি। ব্রিলিয়ান্ট আর হতে পারবি না।
আয়ুশ রেগে তাকালো বোনের দিকে।
-“ তা একা একাই যাবি নাকি? তুই বললে আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো।
-“ আই ডোন্ট নিড ইউ। আই কল মি মাই ব্রো। হি কামিং এন্ড পিকআপ মি হিস হাউস।
-“ আচ্ছা তোর ব্রো আসবে তোকে নিতে?
কথাটা বলতেই বাহির থেকে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শোনা গেলো। আয়ুশ পকেট থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে পড়ে নায়কের মতন ভাব নিয়ে বলল-
-” ব্রো এসে গেছে। বাই। দেখা হবে আরেক দিন।
আয়ুশ চলে গেলো। আরু কিছু একটা ভেবে সরদ দরজা পেরিয়ে বাহিরে এসে দেখলো আরাধ্য গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ুশ গিয়ে দাঁড়ালো আরাধ্যর পাশে। ব্যাগটা আরাধ্যর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ লেটস গো ব্রো। উই আর সো লেইট।
আরাধ্য আরুর দিকে তাকালো। হাত উঁচু করে বলল-
-” আরু এদিকে আয় তো।
আরু এগিয়ে গেলো।
-“ তোর ভাইয়ের ব্যাগে কি আছে রে এত ভারি কেনো?
-“ ওকেই জিজ্ঞেস করুন।
-“ এই তোর ব্যাগে কি আছে রে?
-“ তোমাকে না বললাম আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তো তার জন্য নিয়েছি মাই ক্লোথ..বুক..ওয়াটার বোতল। ইউর সিস্টার ফটো। মাই মোবাইল ইটিছি..।
-“ এসব নিয়ে কি করবি?
-“ বাহ্ রে আমি থাকবো..পানি কালেক্ট করবো। তো লাগবে না এসব?
-“ কিসের পানি কালেক্ট করবি? তোদের পানির মটর নষ্ট হয়ে গেছে নাকি?
-“ উঁহু। আমি তোমার বোনের পানি কালেক্ট করবো।
আরাধ্যর সটান কপাল টা কুঁচকে গেলো। তার বোনের পানি মানে কি ইঙ্গিত করলো এই আয়ুশ টা।
-“ আমার বোনের পানি মানে?
-“ ইউর চাচা সেইড মি ইউর সিস্টার ফুট ধুয়ে পানি পান করতে। তাহলে আমি বিলিপয়েন্ট হবো সাথে আরশি আমাকে লাইক করবে।
আরাধ্যর মুখ হা হয়ে আসলো। এই ছেলে কিসের তৈরি? এ তো তাদের পরিবারের কারো আচারণ পায় নি। এটাকে তো মহাকাশে ছুঁড়ে ফেলে আসা উচিত।
-” এই তুই আমার গাড়ি থেকে নাম। তোকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাব না। এই আরু তোর ভাই কে নাম তে বল আমার গাড়ি থেকে।
-“ এই ব্রো আমাকে নামতে বলছো কেনো.। হোয়াই? তোমার গাড়ি কি পঁচে যাবে আমি বসে থাকলে? আই গো টু ইউর নো নো মাই মাদার ইন লো হাউস। ইউ নিয়ে যাও আমাকে। তা না হলে আই কল চাচা কে।
-“ আরে নিয়ে যান আয়ুশ কে। কটাদিন আমি অন্তত রাতে শান্তি মত ঘুমাতে পারবো। প্লিজ এই উপকার টা করুন।
-“ পাগল নাকি। তোর ভাইকে আমাদের বাসায় নিয়ে আমাদের ঘুমের ১২ টা বাজাবো।
-“ তাহলে এসেছেন কেনো?
-“ তোকে দেখতে এসেছি। তোর ভাইকে কি নিতে এসেছি নাকি আমি। এই আয়ুশ নাম আমার গাড়ি থেকো।
আয়ুশ সিট বেল্ট চেপে ধরে বলল-
-“ নো.. আমি নামবো না। আমি আরশির কাছে যাব। আমি তোমাদের ঘুমের ১২ টা বাজাবো না যাও।
-“ আচ্ছা নাম..আমি আরশি কে ফোন দেই। তুই কথা বল আগে দেখ ও কি বলে।
-“ ইউর সিস্টার কখনই নট টকিং উইথ মি। সি অলওয়েজ হাঁসে সিদ্দিকের সাথে।
-“ আমি বললে বলবে কথা আয়।
-“ সত্যি?
-“ হুম।

আয়ুশ নেমে আসলো। আরাধ্য গাড়িতে উঠে আয়ুশ কে জানালার পাশে আসতে বলে গাড়ি ভেতর থেকে লক করে দেয়। আয়ুশ জানালার কাছে আসলে আরাধ্য গাড়িতে থাকা আরশির চকলেট টা আয়ুশের হাতে দিয়ে বলল-
-“ এটা আরশির চকলেট। যেদিন এই ৫০০ টাকার চকলেট আরশি কে কিনে দেওয়ার সামর্থ্য হবে তোর সেদিন আরশি কে পাবি। এখন চললাম আমি।

আয়ুশ চকলেট টার দিকে তাকিয়ে রইলো। ৫০০ টাকার চকলেট? এটা কেনা কোনো ব্যপার নাকি?
চকলেট টা নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো। এখন সে মিশনে নামবে চকলেট কেনার।

#চলবে?

পেজটা ফলো দিয়ে রাখবেন।

Address

17/2
Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Crush & Confession by COBS posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share