04/02/2025
একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, 2020 সালের কোভিড -19 এর পর থেকে 2025 সাল এই সময়টার ব্যবধান ৫ বছর হলেও মনে হচ্ছে সেদিনই তো লকডাউন সবাই ঘরে বন্ধি ছিলাম। মনে হচ্ছে সময়টা খুবই দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখন ঘন্টার পর ঘন্টা ইনস্টাগ্রামে রিলস্ স্ক্রল করতে পারলেও ধৈর্য ধরে ২ ঘন্টার সিনেমা দেখা অনেক কষ্টকর ব্যাপার। একসময় তরুণ রা ৯০ মিনিট ধরে ফুটবল খেলায় মেতে থাকতো। WPP, যা বিশ্বের অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন সংস্থা, এর প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন যে নতুন প্রজন্মের (Gen Z) দর্শকদের আকর্ষণ করতে হলে ইভেন্টগুলোর ধরণ বদলাতে হবে, কারণ GenZ এখন পুরো একটি ফুটবল ম্যাচ বা গলফ টুর্নামেন্ট দেখতে চায় না। তাদের মতে GenZ পুরো ম্যাচ দেখার পরিবর্তে তারা হাইলাইটস দেখে, এমনকি হাইলাইটস দেখার সময় তারা মাল্টিটাস্কিং করে । যেখানে ৯০ মিনিটের ফুটবল খেলা ধৈর্য ধরে দেখা সম্ভব হচ্ছে না সেখানে টেস্ট ক্রিকেট এর কথা আনা উচিৎ না। অথচ একসময় ক্রিকেট বিশ্বে টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ছিলো তুঙ্গে। এসবের পিছনে সবচেয়ে দায়ী হচ্ছে মনযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা(Attention Span)হ্রাস।
সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারই GenZ মনোযোগ কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। এর ফলে, অনেক শিক্ষার্থী কাজে মনোযোগ দিতে এবং টাস্ক শেষ করতে সমস্যা অনুভব করে। যেমন, আপনি যখন আমার ডেস্কে বসে আগামীকালের জন্য একটি অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করার চেষ্টা করছেন, তখন আপনার ফোন এ নোটিফিকেশন আসতে শুরু করে। আপনি হয়তো ভাববেন শুধু এক মিনিটের জন্য চেক করবেন, কিন্তু এক ঘণ্টা পরে আপনি দেখবেন আপনি Snapchat, TikTok, Instagram-এ সময় নষ্ট করে ফেলেছেন।
ফোন এবং ছোট ফর্মের মিডিয়া (যেমন TikTok, Instagram reels, YouTube shorts) আমাদের মস্তিষ্ককে ছোট এবং দ্রুত কন্টেন্ট গ্রহণে অভ্যস্ত করে তোলে। এই ধরনের কন্টেন্ট সাধারণত কয়েক সেকেন্ড হতে কয়েক মিনিট হয় । সমস্যা হলো, এই ধরনের মিডিয়া খুবই আসক্তিজনক। যখন আমি লম্বা, জটিল টেক্সট বা লেকচারের মুখোমুখি হই, তখন এই রিল্স আসক্তির কারণে আমার মস্তিষ্ক সেগুলো প্রসেস করতে পারে না।
সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম আমাদের রিসেন্ট ইনফর্মেশন এর উপর ভিত্তি করে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট সামনে আনে, যা আমাদের স্ক্রিনে অনেকক্ষণ ধরে আটকিয়ে রাখে। Pew Research Center-এর একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১% টিনএজার ক্লাসে ফোকাস হারায় ফোন চেক করার কারণে, এবং ৪৯% বলেছে যে ক্লাসের বাইরে টেকনোলজি ব্যবহার তাদের বিভ্রান্ত করে। Microsoft-এর গবেষণা অনুযায়ী, এখন একটি গোল্ডফিশের চেয়েও কম, যা মাত্র ৮ সেকেন্ড। ২০০০ সালে যা ছিল ১২ সেকেন্ড।
Dennis Buttimera, একজন লাইফ এবং ওয়েলনেস কোচ, বলেছেন যে ফোনের নোটিফিকেশন আমাদের শরীরে অ্যাড্রেনালিন রাশ তৈরি করে, যা কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) নিঃসরণ করে। তবে, স্বল্পমেয়াদে নোটিফিকেশন ডোপামিন (একটি "রিওয়ার্ড" নিউরোট্রান্সমিটার) নিঃসরণ করে, যা আমাদের খুশি বোধ করায়। এই কারণেই আমরা সবসময় পরবর্তী নোটিফিকেশনের জন্য অপেক্ষা করি, যা আমাদের আরও বেশি ডিজিটাল স্ক্রিনে আটকে রাখে।
কিন্তু বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে GenX যাদের শৈশব কেটেছে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে, টেলিভিশনের সামনে বসে পুরো একটা নাটক/সিনেমা শেষ করে, কিংবা দীর্ঘ সন্ধ্যায় গল্পের আসরে। তাদের এটেনশন স্প্যান এখনো ১২ সেকেন্ডের ঊর্ধ্বে, যেন সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা এক প্রজন্ম। তবুও, GenZ কে অক্ষম বললে ভুল হবে। কারণ GenZ ইতোমধ্যে অভিযোজন করে ফেলছে।মাল্টিটাস্কিং, কুইক ডিসিশন মেকিং, আর ডিজিটাল টেকনোলজির সঙ্গে নাচতে জানা তাদের সুপারপাওয়ার। কিন্তু সমস্যা বাধে তখনই, যখন ডিপ ওয়ার্ক বা ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর প্রয়োজন হয়—যেখানে মস্তিষ্ককে জোর করে স্লো মোড এ নিতে হয়। গবেষকদের পরামর্শ ডিজিটাল ডিটক্স। অর্থাৎ, স্ক্রিন থেকে দূরে থাকার সময়ে ব্রেইনের ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক-কে সক্রিয় করা, যেন চিন্তার স্রোত স্বাভাবিক গতিতে ফেরে।
🖋️Sumita Basu
Team Science&Experiment