31/10/2024
সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১৩ বছরের গৃহকর্মী কল্পনার সাথে ঘটে যাওয়া পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত শিশু নির্যাতনের এরকম অনেক ঘটনা হয়ে থাকে যা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায় কিংবা কার্যকর আইনি কাঠামো ও প্রয়োগের অভাবে অপরাধীরা রেহাই পেয়ে যায়। আধুনিক যুগে যেখানে সারা বিশ্বে শিশুদের সুরক্ষা ও সুস্থ্য পরিবেশে বিকাশ নিশ্চিত করা হয়েছে সেখানে শিশুদের প্রতি এধরণের বর্বরতা মোটেও কাম্য নয়।
চলুন বাংলাদেশে প্রচলিত শিশু নির্যাতন প্রতিরোধমূলক আইন অনুযায়ী শিশুদের প্রতি শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের শাস্তি কী তা জেনে নেই :
১। শিশু নির্যাতন আইন ২০১৩
এই আইন মোতাবেক ১৮ বছরের নিচে সকলকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
শিশু নির্যাতন, শোষণ ও অবহেলার অপরাধে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারাদন্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
২. নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ( সংশোধিত ২০০৩)
এই আইনের ধারা ৯(১) অনুযায়ী শিশু ধর্ষণের শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড অথবা যাবৎজীবন কারাদণ্ড
এছাড়া ধারা ৯(৪) (ক) মোতাবেক ১৬ বছরের কোন শিশুকে ধর্ষণ করলে এবং সেই ঘটনায় শিশুটির মৃত্যু হলে অপরাধীকে মৃত্যদন্ড বা যাবৎজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে।
৩.দন্ডবিধি ধারা ১৮৬০
#ধারা ৩২৩ - সাধারণ আঘাত
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন শিশুকে আঘাত করে, তবে তাকে ১ বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি দেওয়া হতে পারে।
# ধারা ৩২৪ - বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে আঘাত
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিপজ্জনক অস্ত্র বা মাধ্যম ব্যবহার করে কোন শিশুকে আঘাত করে, তবে তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।
#ধারা ৩২৫ - গুরুতর আঘাত
যদি কেউ কোন শিশুকে গুরুতর আঘাত করে, তবে তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হতে পারে।
#ধারা ৩২৬ - গুরুতর আঘাতজনিত বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার
যদি কেউ কোন শিশুকে গুরুতর আঘাত করে এবং বিপজ্জনক অস্ত্র ব্যবহার করে, তবে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা দেওয়া যেতে পারে।
৪.গৃহস্থলির নির্যাতন আইন ২০১০
এই আইনের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, যৌন ও আর্থিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া আদালতের মাধ্যমে শিশুকে সুরক্ষা, আশ্রয়, আর্থিক সহায়তা ইত্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা আছে
৫.শ্রম আইন ২০০৬
#এই আইনের মাধ্যমে ১৪ বছরের নিচে শিশুদের কাজে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই বিধান লঙ্ঘন করলে রয়েছে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা
#১৪-১৮ বছর বয়সী শিশুদের কাজ করার বিধান রয়েছে তবে বিপজ্জনক কাজে নিয়োগ করা হলে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
#শিশুদের কর্মস্থলে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধান লঙ্ঘন করা হলে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা কারাদণ্ড দেয়া হবে।
এছাড়াও জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ তে শিশুদের নির্যাতন থেকে সুরক্ষা ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি অধিকার নিশ্চিতের কথা বলা আছে।
কিন্তু বাংলাদেশের এসকল আইন থাকার পরও সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাব ও বিভিন্ন ঘাটতির কারণে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এসকল সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে সকল শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ গঠন করার আশা ব্যক্ত করছি।