09/05/2023
আজ ০৯ মে,সোভিয়েত ইউনিয়নের মহান বিজয় দিবস। ১৯৪৫ সালের আজকের এই দিনে কমরেড স্তালিনের নেতৃত্বে মানবজাতির বিজয় হয় সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদী নাৎসী বাহিনীর বিরুদ্ধে।
পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতি ব্যবস্থা বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে কার্যকরী নয় বলে পুঁজিবাদের কারনে বিশ্বে নানান সংকটের সৃষ্টি ঘটে,যার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হিসেবে সশস্ত্র সংঘাত হিসেবে বাঁধে যুদ্ধ। মানব ইতিহাসে ঘটে যাওয়া দুটি বিশ্বযুদ্ধই এই পুঁজিবাদী বিশ্ব অর্থনীতির গভীর সংকটের প্রমাণ। তা সত্ত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছুটা পার্থক্য ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল পুঁজিবাদের অসম ভাগের কারণে একটি সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, যেখানে প্রধান সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির সমস্তগুলিই বিশ্বকে পুনরায় ভাগের জন্য এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে তাদের আধিপত্যে অধস্তন করার জন্য লড়াই করেছিল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সব ধরণের মাত্রাকেই অতিক্রম করে। এর কারণ এটি শুধুমাত্র বাজার দখল, সাম্রাজ্য বৃদ্ধির যুদ্ধ ছিলনা, বরং এটি ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদী শ্রেষ্ঠত্ববাদ, বর্ণবাদী আদর্শের বিরুদ্ধে,ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের যুদ্ধ। সেই লক্ষ্যে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে মধ্যযুগের বর্বরতা একত্রিত করে ১৯৪১ সালের ২২শে জুন, জার্মান সামরিক বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল। সব ধরণের নির্মম বর্বরতা চালানোর হুকুম পেয়েই প্রায় ৩০ লক্ষ্য জার্মান সৈন্য, ৬০০,০০০ সাঁজোয়া যানবাহন, ৩,৫০০ ট্যাঙ্ক, ৭,০০০ টী আর্টিলারি এবং ৩,৯০০ বিমান নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভোর তিনটার দিকে আক্রমণ করেছিল।
প্রথম দিকে সোভিয়েত ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মস্কো দখলের পর যুদ্ধে কিছুটা এগিয়ে যায় জার্মান বাহিনী। এমন অবস্থায় নাৎসী বাহিনীকে রুখে দেয় স্তালিনগ্রাদের ব্যারিকেড। সোভিয়েতের লালফৌজের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রাণপনে যুদ্ধ করে রাশিয়ানরা। স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধই দুই বছর স্থায়ী হয়। এবং সোভিয়েতের লাল ফৌয জয়ী হয়ে ক্রমান্বয়ে সব অঞ্চল জয় করতে থাকে।পোল্যন্ড জয় করে ১৯৪৫ সালের ৯ মে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের সংসদ ভবনের উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের কাস্তে হাঁতুড়ির পতাকা। আনুষ্ঠানিকভাবে সেদিন মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে কমরেড স্তালিনের কাছে আত্মসমর্পন করে জার্মান সামরিক বাহিনী। এরই মাধ্যমে কমরেড স্তালিনের নেতৃত্বে মানবজাতির বিজয় হয় সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদী নাৎসী বাহিনীর বিষাক্ত আক্রমন থেকে। সেই থেকে প্রতিবছর ৯ই মে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়।
এই ধ্বংসযুদ্ধের খতিয়ান ছিল ভয়াবহ। মোট ০২ কোটি ৭০ লক্ষ (২৭ মিলিয়ন) সোভিয়েত নাগরিক যুদ্ধের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। সোভিয়েত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এবং রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস আয়োজিত একটি কমিশন, ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সালে পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে, এই সংখ্যাটি ০৩ কোটি ৭০ লক্ষ্য হিসেবে (৩৭ মিলিয়নে) দাবি করে। এর মধ্যে মাত্র ৮.৬ মিলিয়ন সৈনিক এবং ২৭ মিলিয়ন থেকে ২৮ মিলিয়ন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে অনেকে ক্ষুধা ও অসহনীয় জীবনযাপনের কারণে প্রাণ হারান। লেনিনগ্রাদ শহরটির ২৮ মাসের অবরোধ, যা ওয়েহর্ম্যাট ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রেখেছিল, যার ফলে শূধু এখানেই ৪৭০,০০০ মানুষের জীবন শেষ হয়। শুধু সোভিয়েতেরই প্রায় ৩০ মিলিয়ন সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী হত্যার শিকার হয় জার্মান বাহিনীর হাতে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে চীনের প্রায় ০২ কোটি (২০ মিলিয়ন)এর অধিক লোক প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ৩.৭৫ মিলিয়ন সামরিক ও ১৮.১৯ মিলিয়ন বেসামরিক লোক প্রাণ হারায়।
যার দায় বর্তায় যুক্তরাষ্ট্র,জাপান,ইউরোপের ফ্রান্স,জার্মান,ইতালি,স্পেনসহ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর উপর। এদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির কারণে যুদ্ধ বাঁধলেও তা থেকে রক্ষার্থে চীন ও সোভিয়েতের প্রায় ৫৭ মিলিয়ন বিপুল জনসংখ্যা প্রাণ হারায়। সেই বিশ্বযুদ্ধের পর বর্তমানে এই সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর সবাই ন্যাটো সামরিক জোটের মাধ্যমে সোভিয়েতের পতন নিশ্চিত করে ক্ষান্ত হয়নি, লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছে তাদের স্বার্থবিরোধী, পুঁজিবাদবিরোধী রাষ্ট্রগুলোকে। যার কারণে, বিশ্বে শোষিত মানু্ষের সামগ্রিক মুক্তি এখনো সম্ভব হয়নি।
শোষনের এমন দিনে সোভিয়েতের লাল ফৌজ আমাদের মুক্তির দিশা দেয়।
সোভিয়েত লাল ফৌজ, লাল সালাম।
কমরেড স্তালিন,লাল সালাম।
[ শ্রমিক পড়েন, শ্রমিককে মানুষের কাছে পৌঁছে দিন।]