16/10/2024
সেই দিন টা ছিলো কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো
সালটা ১৯৪৬, অক্টোবরের ১০ তারিখ‼️
অন্যান্য আর পাঁচটা বছরের লক্ষ্মী পুজোর মত সেদিনও বাংলার বধুরা নিজগৃহে প্রদীপ জ্বেলে, আলপনা একে,শাঁখ আর উলুধ্বনিতে মা লক্ষ্মীকে বরণের তোড়জোড় করছিলো।
কিন্তু‼️
নোয়াখালীতে সেদিন নেমে আসে এক ভয়াল রাত যার কারণে ভরা কোজাগরী পূর্ণিমার আলোতেও অমাবস্যা নেমে আসে। (তৎকালীন অবিভক্ত নোয়াখালী ছিল বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী নিয়ে ত্রিপুরা জেলা ছিল বর্তমান কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া অঞ্চল নিয়ে গঠিত।)
সেদিনের নোয়া-/-খালীর পরিবারগুলোও হয়তো তেমনি ভেবেছিলো, সুরবালা দেবী(ছদ্মনাম) এক গৃহবধু প্রতিবারের ন্যায় সেবারও সারাবাড়িতে লক্ষ্মীর পায়ের আল্পনা একে,ধুপ-ধুনো নৈবিদ্দ আর শাঁখ-উলুধ্বনিতে মাকে বরণ করার আয়োজন করেছিলো,কিন্তু তখনও সে কিংবা তার প্রতিবেশীরা জানতো না আজ কি হতে চলেছে,
সেদিন ধা //রালো অ স্ত্র নিয়ে মুসলিম লীগের গু/ন্ডারা আক্র/মন করে সুরবালার গৃহে, প্রথমে তারা অলংকার ও অর্থ লুঠ ও গৃহে অগ্নি/সংযোগ করে, সুরবালার পরিবার হয়তো ভেবেছিলো এবার তারা চলে যাবে কিন্তু না, অরাজকতা আরো বাকি ছিলো।
তারা সুরবালাকে মাটিতে নিক্ষেপ করে এবং পা দিয়ে মোছা হয় এয়োস্ত্রীর সিঁথির সিঁদুর, ভাঙ্গা হয় শাঁখা পলা।
স্বামী পুত্রের সামনে, মায়ের সাথে ধর্ষণ করা হয় তার ১০ বছর বয়সী অবুঝ কন্যাকে।
তার স্বামী ও পুত্র ধ--র্মা--ন্তরিত না হতে চাওয়ায় তার স্বামী পুত্রকে হত্যা করা হয় এবং তাদেরকে জো/র/পূর্ব/ক ধর্মা/ন্তরিত করে সেই রাতেই নতুন করে মু/z+লি+ms ধর্মাবল্ম্বী দলের লোকের সাথে নিকাহ্ করানো হয়। এরকম ঘটনার সাক্ষী ও ভিক্টিম রয়েছে নাম না জানা আরো অনেক সুরবালা।
এটি নোয়াখালী রা+য়/ট(rআওট)বা নোয়াখালী গ*হত্যা বা নো/য়াখা/লী হ-/ত্যা/যজ্ঞ নামেও পরিচিত। এটি ছিল স্থানীয় মুsলি ms দের দ্বারা সংঘটিত এক ধারাবাহিক হতtta-যজ্ঞ,হিন্দু নারী ধ-র্ষ/ণ,নারী ও অল্প বয়স্ক মেয়েদের অ-পহরণ,
হিন্দুদেরকে জোরপূর্বক মু/স -লি/মকরন,
হিন্ /দু সম্পদ লুট-ধ্বংস-অগ্নিসংযোগ।এটি ঘটেছিল ১৯৪৬ সালের অক্টোবর-নভেম্বর এ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বঙ্গে আর বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায়।
এই হtta যজ্ঞ সংঘটিত হয় ব্রিটিশদের কবল থেকে ভারতবর্ষের মুক্তির ঠিক এক বছর আগে।
⛔আক্রান্ত এলাকা ছিল প্রায় দুইহাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে।এই এলাকার মধ্যে রামগঞ্জ,বেগমগঞ্জ,রাইপুর,লক্ষীপুর,ছাগলনাইয়া,নোয়াখালী জেলার সন্দ্বীপ পুলিশ স্টেশন এবং হাজিগঞ্জ,ফরিদ্গঞ্জ,
ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর,লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম পুলিশ স্টেশন এবং আরও অন্যান্য এলাকা।
⛔এ বর্বোরোচিত গণহত্যায় প্রায় ৫,০০০ এরও বেশি হিন্দুদের কচুকাটা করা হয় (যদিও সরকারী হিসাব মতে তা মাত্র ২৮৫)[শান্তনু সিংহ]। হাজার হাজার হিন্দু নারীদের ধর্ষন, জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করণ ছিল সাধারণ ব্যাপার। প্রায় ৫০,০০০-৭৫,০০০ বেঁচে থাকা আক্রান্ত হিন্দুদের কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় দেয়া হয়। এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ হিন্দু আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী এর মতে, শুধুমাত্র ত্রিপুরা জেলাতে ৯,৮৯৫ টি ধর্মান্তরিতকরনের ঘটনা ঘটেছে। এডওয়ার্ড স্কিনার সিম্পসন তার রিপোর্টে, কেবলমাত্র ত্রিপুরা জেলার তিনটি পুলিশ স্টেশন যথা ফরিদগঞ্জ,চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত এলাকাতেই ২২,৫৫০ টি ধর্মান্তকরনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন। ডঃ তাজ-উল-ইসলাম হাশমী মনে করেন,নোয়াখালী গণ হত্যায় ⛔যে পরিমান হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে তার কয়েকগুন বেশি হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ এবং ধর্মান্তকরন করা হয়েছে।এম.এ.খান এর মতে, নোয়াখালীর ৯৫ ভাগ হিন্দুদেরই জোরপূর্বক ইসলামে ধর্মান্তকরন করেছিল মুসলিমরা। বিচারপতি জি.ডি. খোসলা মনে করেন, নোয়াখালীর সমগ্র হিন্দু জনগোষ্ঠীর সর্বস্ব লুট করে নেয়া হয়েছিল এবং তাদের কে জোরপূর্বক মুসলমান বানানো হয়েছিল। এভাবে নোয়াখালী ও ত্রিপুরা এলাকার হিন্দুদের খুন, ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ, জোরপূর্বক গোমাংস খাওয়ানো চলতে থাকলো দিনের পর দিন। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান (জেগে ঘুমানো) করলো, কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি।
মজার বিষয় কি জানেন তখন প্রাণ বাঁচাতে হি ndu. কে জিজিয়া করও দিতে হত "মoslim lig কে"‼️
⛔এখন কয়েকটি ঘটনায় আলোকপাত করি,
⇒ঘটনা-১ঃ সেপ্টেম্বর মাস থেকে নোয়াখালিতে শুরু হয়েছিল লাগাতার হিন্দু-বিদ্বেষী প্রচার। হিন্দুদের দোকান বয়কট করবার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল মুসলমানদের কাছে। মুসলীম ন্যাশনাল গার্ড-এর ভলান্টিয়াররা হিন্দু দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত যেন কোন মুসলমান সেখান থেকে জিনিস না কেনে। শত প্রয়োজনেও কোন মুসলমান হিন্দুর দোকান থেকে জিনিস কিনলে তাকে প্রকাশ্যে কান ধরে উঠবস করতে হতো। নোয়াখালিতে বড় বড় পানের মৌজা ছিল। হাটের দিন লীগের কর্মীরা হিন্দুদের পানের আড়তগুলির সামনে পিকেটিং করে থাকত যেন কোনভাবেই হিন্দুরা পান বিক্রি করতে না পারে।
⇒ঘটনা-২ঃ "আমাদের পাশেই একটা ব্রাহ্মণ পরিবার ছিল। ওরা ছিল চার ভাই। কুরবানির দিন ওদের ঠাকুর মন্দিরের সামনে গরু কাটা হল, তারপর ঝুড়ি করে ওদের চার ভাইয়ের ঘরেই মাংস পাঠিয়ে দেওয়া হল। ওরা তো এসব দেখে একেবারে আঁৎকে উঠেছে আর কী! অনেকে ঘৃণায় বমি করতে শুরু করল। ব্যাস, আর যায় কোথায়। গ্রামের সমস্ত মুসলমান ওদের বাড়ি ঘিরে ধরল। বলল, 'শালা মালাউন, হারামজাদা, আমাদের খোদার প্রসাদ অপমান করলি!' বিচার বসল, ওদের শাস্তি হল। বাড়ির সব পুরুষকে নাকে খৎ দিতে হল, জরিমানা ধার্য্য হল ২৫০ টাকা", বেগমগঞ্জ থানার পাচগাও এর মানুষ।
⇒ ঘটনা-৩ঃ এমনই একটি দল স্থানীয় জমিদার সুরেন্দ্র কুমার বোসের বাড়ি আক্রমণ করে। তাঁকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এরপর জনতা সুরেন্দ্রবাবুর কাছারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই সময় বিভিন্ন
জায়গা থেকে পালিয়ে আসা অনেক হিন্দুনারী ও শিশু ঐ কাছারি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অনেকেই আগুনে জ্যান্ত দগ্ধ হয়ে মারা যায়। যারা কোনোক্রমে এই জতুগৃহ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল, তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
⇒ঘটনা-৪ঃ নোয়াখালিকে 'দার-উল-ইসলামে' পরিণত করবার জন্য সেখানে একদিকে যেমন খুন- লুঠ-সন্ত্রাসের বল্লাহীন রাজত্ব কায়েম করা হল, অন্যদিকে তেমনি বারো থেকে বিয়াল্লিশ অসংখ্য হিন্দু নারী ধর্ষণ বা অপহরণের শিকার হল। ভাগ্যবতী যে ক'জন পালিয়ে আসতে পেরেছিল তাদের চোখেও ছিল মৃত্যুর বিভীষিকা। 'হয় কোরাণ নয় মৃত্যু' নীতি অবলম্বন করে হিন্দুদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হল। এমনকি, তাদের দিয়ে গো-হত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং সেই গোমাংস তাদের খাওয়ানো হল। হিন্দুদের সমস্ত ধর্মীয় স্থানগুলি অপবিত্র করা হল।[ The Statement)]
⇒ ঘটনা-৫ঃ "কানে আঙুল দিয়ে মাথায় রুমাল বা গামছা দিয়ে আমরা কলমা পরতাম- "কলমা তোয়ুব লাহে লাল্লা ইল্লালাহ মহম্মদের রসুরইল্লা।"
কিন্তু এত করেও খাঁটি মুসলমান হওয়া সম্পূর্ণ হত না যতক্ষণ না ধর্মান্তরিত হিন্দুদের বাড়ির মেয়েকে মুসলমানরা বিয়ে করত। "আমাদের পাশের গ্রামে এক ভদ্রলোকের ছয় বছরের একটি মেয়েকে 'কলমা' পড়িয়ে একটি মুসলমান ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল", দাঙ্গা থেকে বেচে পালিয়ে আসা এক লোক।
⇒ঘটনা-৬ঃ হাজিগঞ্জ থেকে উদ্ধার পাওয়া জনৈক ভুক্তভোগী তাঁর করুণ অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, "ওরা বলল আমাদের বাড়ির মেয়েদের ওদের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। আমার মামাতো বোন দেখতে খুব সুন্দরী ছিল। দেখলাম অনেকেরই চোখ ওর দিকে। গ্রামের লীগের প্রেসিডেন্ট মামার কাছে ওকে বিয়ে করবার প্রস্তাব দিল। মামারও না বলার কোন উপায় ছিল না। ঐ মুসলমান লোকটি তখন ষাটের ঘরে। আমার মামাতো বোন মাত্র পনের। আমরা সবাই মিলে অনেক পরামর্শ করবার পর ঠিক হল যে আমিই আমার মামাতো বোনকে বিয়ে করব। সেইমতো মৌলভীকে জানালাম যে ইসলাম ধর্মে মামাতো বোনকে বিয়ে করার বিধান আছে, এবং আমরা সবাই মুসলমান হয়ে গেছি। ভাগ্যগুণে উনি রাজী হয়ে গেলেন। সাতদিন আমরা স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করলাম। পরে মিলিটারি গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে।"
নােয়াখালির দাঙ্গায় চিত্ত দত্তরায়ের আত্মাহুতি :
শায়েস্তানগরের চিত্ত দত্তরায়ের বাড়ি কয়েক হাজার মুসলমানের দ্বারা আক্রান্ত হলে তিনি তাঁর বৃদ্ধ মা ও সন্তানদের নিজের বন্দুকের গুলিতে হত্যা করে নিজেও গুলিতে আত্মহত্যা করেন। গুলি না থাকায় তার স্ত্রী ও একটি শিশু সন্তান রক্ষা পায়।
সুরেন্দ্র কুমার বোসের বাড়ি আক্রমন :
“এমনই একটি দল স্থানীয় জমিদার সুরেন্দ্র কুমার বোসের বাড়ি আক্রমণ করে। তাঁকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এরপর জনতা সুরেন্দ্রবাবুর কাছারি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে পালিয়ে আসা অনেক হিন্দুনারী ও শিশু ঐ কাছারি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অনেকেই আগুনে জ্যান্ত দগ্ধ হয়ে মারা যায়। যারা কোনোক্রমে এই জতুগৃহ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল, তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
রাজেন্দ্রলাল রায়ের বাড়ি আক্রমন-
“অপর একটি দল নোয়াখালির District Bar-এর সভাপতি রাজেন্দ্রলাল রায়ের বাড়ি (করপাড়া গ্রাম) আক্রমণ করে। কিন্তু সেখানে স্থানীয় হিন্দুরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করলে দাঙ্গাকারীরা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বাধা পেয়ে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আশেপাশের হিন্দুগ্রামগুলিতে আক্রমণ চালায়। হিন্দুদের দেবস্থানগুলির পবিত্রতা নষ্ট করে। ইতিমধ্যে রাজেন্দ্রলাল রায় বেগমগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ জানান এবং দ্রুত পুলিশী নিরাপত্তা দাবী করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ প্রশাসনিক কোন সাহায্যই তিনি পাননি।”
“পরদিন সকাল আটটায় এক বিরাট জনতা মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাজেন্দ্রলাল রায়ের বাড়ি আক্রমণ করে। কিন্তু রাজেন্দ্রবাবু গুলি চালিয়ে আক্রমণকারীদের হটিয়ে দেন। এভাবে পর পর তিনবার দাঙ্গাকারীরা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়ে চতুর্থব সফল হয়। মুসলীম লীগের প্রাক্তন এম. এল. এ. গোলাম সরোয়ারের নির্দেশে আক্রমণকারীরা প্রথমেই রাজেন্দ্রলাল রায়কে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। এরপর তাঁর পরিবারের সবাইকে এবং সবশেষে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের হত্যা করা হয়।
(৫০) Amrita Bazar Patrika. 22-10-46
রাজেন্দ্রলাল রায়ের কাটা মাথা একটি রূপার থালায় সাজিয়ে গোলাম সরোয়ারকে উপহার দেওয়া হয়। গোলাম সরোয়ারের নির্দেশে তাঁরই দুই সেনাপতি রাজেন্দ্রলাল রায়ের দুই সুন্দরী মেয়েকে বিজয়ের পুরস্কার হিসাবে গ্রহণ করে।”
রাজেন্দ্রলাল রায় বা সুরেন্দ্র কুমার বোসকে এভাবে হত্যা করার পিছনে মুসলীম লীগ নেতাদের যে পরিকল্পনা ছিল তা সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন,
রাজেন্দ্রবাবুর ছোট ভাই অধ্যাপক এম. এল. রায়। ইনি কলকাতার একটি কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তিনি জানিয়েছিলেন,
“মুসলমানরা সমস্ত নোয়াখালিকেই ইসলামে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিল। তাই ওরা বেছে বেছে এমন লোকদেরই প্রথম আক্রমণ করেছিল যাঁরা ওদের বাধা দিতে পারতেন। আমাদের পরিবারের সকলের মৃত্যুর এটাই একমাত্র কারণ।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল রহস্যজনকভাবে নির্লিপ্ত। পুলিশ কখনোই আক্রান্ত মানুষকে রক্ষা করতে যায়নি, বরং তাদের ‘রক্ষাকর্তা’র ভূমিকা পালন করতে অস্বীকার করেছিল।
সুভাষচন্দ্র বোসের দাদা শরৎচন্দ্র বোস নোয়াখালি ঘুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,
"No Police help was given to the persons and families attacked though timely appeals for help were made."
গােপাইবাগের দাসদের বাড়ি :
কয়েক হাজার মুসলমান এই বাড়ি আক্রমণ করে ১৯ জন পুরুষকে নির্মভাবে হত্যা করে। অর্ধমৃত পুরুষদের দেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। মহিলাদের ওপর চলে পাশবিক অত্যাচার।
গান্ধীর স্বেচ্ছাচারিতা
নোয়াখালিতে হিন্দুদের এই মুসলমান বর্বরতা থেকে রক্ষা করবার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য গান্ধীজীকে আবেদন জানানো হল। কিন্তু মহাত্মা নোয়াখালি আসতে সম্মত হলেন না। কারণ নোয়াখালি গিয়ে তাঁর 'কর্তব্য' কী হবে 'ঈশ্বর' তাঁকে নির্দেশ দেননি। তাই দাঙ্গ পীড়িত মানবাত্মার প্রতি সমবেদনা এবং দুঃখ জানিয়েই তিনি তাঁর কর্তব্য শেষ করলেন।
দিল্লীতে বসে গান্ধীজী যে বিবৃতিটি দিয়েছিলেন তা এখানে তুলে দেওয়া হল : "Ever since I have heard the news of Noakhali, indeed, ever since the blood bath in Calcutta, I have been wandering what my duty is God shall show me the way."
গান্ধীজী নোয়াখালির হিন্দুদের মুসলমান অত্যাচারের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার এক অসাধারণ 'অহিংস' পথের সন্ধান দিয়েছিলেন। তিনি হিন্দুদের আহ্বান জানালেন “তারা যেন কখনোই অহসায়ভাবে মৃত্যু বরণ না করে। বরং, তাদের উচিত একটিও শব্দ না করে হত্যাকারীর তরোবারির দিকে মাথা এগিয়ে দেওয়া। তাহলেই দাঙ্গা থেমে যাবে।” ধর্ষিতা বা অপহৃতা মেয়েদের কাছে গান্ধীজী আহ্বান জানালেন, তারা যেন তাদের অত্যাচারীদের বাধা না দেয়। কারণ, “মেয়েদের জানা উচিত কিভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়। সুতরাং খুব সাহসের সঙ্গে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে এবং এর জন্য একটুও শোক করা উচিত নয়। কেবলমাত্র তাহলেই তাদের উপর এই অত্যাচার (ধর্ষণ ও অপহরণ) বন্ধ হবে।" (women must know how to die... women (should) face death bravely and without a murmur. Then only would the terrible killing now going on, stop)**
গান্ধীজীর অহিংসার এই উদ্ভট ব্যাখ্যার তীব্র প্রতিবাদ জানালেন কংগ্রেস সভাপতি আচাৰ্য্য কৃপালনী। তিনি তখন নোয়াখালির দাঙ্গা কবলিত অঞ্চলগুলি পরিদর্শন করছিলেন। তিনি আহ্বান জানালেন, “গত কয়েকদিন ধরে আমি যা দেখেছি তার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু এইটুকুই বলতে পারি, কেন্দ্রীয় বা রাজ্যসরকার কিছু করুক বা না করুক, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক বাঙ্গালীর (হিন্দু) আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।” (from what I have seen and heard the day before and yesterday. I am clearly of the opinion that whatever the Government's, provincial or central, may or may not do, every Bengali, male or female, has to defend himself or herself.)**
আচার্য্য কৃপালনী আরও বললেন, “আমি যদিও সম্পূর্ণ অহিংসার বিশ্বাসী, তা সত্ত্বেও রাজেন্দ্রলাল রায়ের প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। প্রত্যেক বাঙালীর সামনে আমি রাজেন্দ্রলাল রায় এবং তাঁর পরিবারের কথা উদাহরণ স্বরূপ তুলে ধরতে চাই যাঁরা দুদিন ধরে লড়াই করে আক্রমণকারী উন্মত্ত জনতাকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। ১
রেফারেন্স
Kripalani: Gandhi-His Life and Thought.
বিনয়ভূষণ ঘোষ : দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও বাঙালী
V. V Nagarkar-Genesis
Amrita Bazar Patrika.(1946)
The Statesman (1946)
Pirzada Foundation of Pakistan
R. C. Majumdar: History of the Freedom Movement. Vol-3
Mcinery Papers. 1976
G. D. Khosla: Stern Reckoning: A Survey of the Events before and following the Partition of India
Bengal Press Advisory Committee Report, 1946 (Oct.)
V. P. Menon Transfer of Power
মূল বই - নোয়াখালি নোয়াখালি, শান্তনু সিংহ
ইতিহাসের দিকে ফিরে ছেচল্লিশের দাঙ্গা, সন্দীপ বন্দোপাধ্যায়।