15/01/2024
বর্তমান যুগ, ফেসবুক কমার্স এবং ফেসবুক মার্কেটিং (পর্ব-২)ঃ
আমরা গতকাল একটা খেলনার ব্যবসা নিয়ে কথা বলছিলাম। সেখানে প্রথম পর্বে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি আসলে কিভাবে আপনি ঠিক করবেন যে, কাদের আসলে আপনার ব্যবসার Ads দেখাবেন। আমাদের "কাল্পনিক ব্যবসায়িক উদাহরণ" এর ক্ষেত্রে আমাদের প্রতি পিস খেলনার দাম ছিলো ৫০-৭০ টাকা, আর আমাদের টার্গেট এরিয়া ছিলো আমাদের দেশের রাজধানী "ঢাকা"। তো, গতকাল আমাদের ফাইন্ডিং ছিলো হচ্ছে, ২৫-৪৫ বছর বয়স্ক মানুষ (পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই) হচ্ছে আমাদের ব্যবসার Ads দেখার জন্য পারফেক্ট ম্যাচ, কারণ এই বয়সে সাধারণত মানুষের ছোট বাচ্চা থাকে। তাহলে উনারা ই হলেন আমাদের এই ব্যবসার প্রাইম কাস্টোমার। ✅
আজকে আমরা কথা বলবো Targeted Area নিয়ে। মানে আসলে আপনার এই কাস্টোমার রা কোথায় থাকতে পারে এবং কোথায় কোথায় যেতে পারে, সেগুলো নিয়ে।
এই পয়েন্টটা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম যেটা মাথায় রাখতে হচ্ছে, সেটা হলো আপনার প্রোডাক্ট এর কোয়ালিটি এবং দাম। আচ্ছা, আসেন একটু চিন্তা করি ঠান্ডা মাথায়। ধরে নেন, একজন মানুষ যিনি ঢাকায় থাকেন এবং যার মাসিক বেতন ৮০ হাজার টাকার উপরে। উনার পরিবারের বাসা ভাড়া ২৫ হাজার টাকা, খাবার খরচ ১৭ হাজার টাকা, যাতায়াত খরচ ৫ হাজার টাকা, ঔষধ খরচ ৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ আরো ১০ হাজার টাকা। তাহলে উনার মান্থলি খরচ হচ্ছে ৬২ হাজার টাকা। তার মানে উনার প্রতি মাসে সেভিং ১৮ হাজার টাকার বেশি। আপনার কি মনে হয়, যেই মানুষের হাতে প্রতি মাসে ১৮ হাজার টাকার বেশি "সেভিংস" হিসেবে আসতেছে, সেই মানুষটা তার বাচ্চার জন্য ৫০-৭০ টাকা দামের খেলনা সাধারণ ভাবে কিনবে? নাকি উনি উনার বাচ্চার জন্য একটু দাম দিয়ে ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে পশ টাইপের কিছু খেলনা কিনবে যাতে কিনা বাচ্চাও খুশি, উনার ফ্যামিলিও খুশি আর সাথে উনার স্ট্যাটাসও মেইনটেইন করা হয়ে গেল? আমার ধারণা উনি "দামী" অপশন এই যাবেন এই ক্ষেত্রে, কারণ সব কিছুর পরে স্ট্যাটাস মেইন্টেইন কিন্তু এখন একটা বড় ব্যাপার। তাহলে উনি আপনার আদর্শ কাস্টোমার না, উনাকে আপনি যতই ৫০-৭০ টাকার খেলনা দেন বা মাঝে মধ্যে ২০% ডিস্কাউন্ট দিয়ে ৪০-৫৫ টাকায় খেলনা অফার করেন না কেন, কোন লাভ নাই! এই মানুষকে ফেসবুকে আপনি এড দেখাইলেই এই লোক বিরক্ত হয়ে আপনাকে এভয়েড করবে। ❎⛔️
তাহলে এবার আসেন, চিন্তা করে দেখি, যেই মানুষের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা উনার অবস্থা টা কি। উনার বাসা ভাড়া হতে পারে ১২ হাজার টাকা, খাবার খরচ হতে পারে ১২ হাজার টাকা, ঔষধ ৫ হাজার টাকা, যাতায়াত ৩ হাজার টাকা, আর আনুষাঙ্গিক খরচ ৩ হাজার টাকা। দেখেন, উনার কিন্তু ৩৫ হাজার টাকা অলরেডি শেষ, রইলো বাকী ৫ হাজার। আপনার কি মনে হয়, উনি উনার বাচ্চার জন্য ইচ্ছা থাকলেও ৫০০-১০০০ টাকা পশ খেলনা কিনবেন? নাকি কম দামি খেলনা যেগুলো ৫০-৭০ টাকা দামের, সেগুলো খুজে বের করার চেষ্টা করবেন? আমার মনে হয় উনি কম দামি খেলনা ই খুজে বের করবেন! দ্যাট মিনস, এই ধরণের লোক হলো আপনার আদর্শ কাস্টোমার! ✅
তো কেন আমরা হুদাই এতোক্ষণ এই টাকা পয়সা নিয়ে প্যাচাল পারলাম বলেন তো? এইটা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, যাদের ইনকাম ৪০ হাজার টাকার চেয়ে কম, তারা আমাদের আইডিয়াল কাস্টোমার। এইটা বুঝে আমাদের কি লাভ হল? লাভ হলো এটা যে, এখন আমরা খুঁজে বের করবো এই যে মানুষ গুলা যাদের ইনকাম মাসে ৪০ হাজার টাকার চেয়ে কম, এরা আসলে ঢাকা শহরের কোথায় কোথায় থাকে। আর সেই এলাকাগুলো তে আমরা Meta Ads চালাইলেই আমরা আমাদের প্রাইম কাস্টমারদের কাছে পৌছতে পারবো!
ঠান্ডা মাথায় ঢাকার ডেমোগ্রাফি নিয়ে চিন্তা করলে আপনি আবিষ্কার করবেন, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, উত্তরা, মতিঝিল, এই ধরণের এলাকা গুলোতে আপনার টার্গেটেড কাস্টোমাররা থাকে না। কারণ এই এলাকা গুলোতে বাসা ভাড়া ২৫ হাজার টাকার বেশি। যারা বাসা ২৫ হাজার টাকার বেশি দিচ্ছে, তার মাসিক আয় অবশ্যই ৭৫-৮০ হাজার টাকা হবেই। আর আমরা আগেই বের করেছি, এই বেতনের মানুষ আমাদের আইডিয়াল কাস্টোমার না। ❎
তাহলে আমাদের আইডিয়াল কাস্টমাররা কই থাকে? আবারো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে পেয়ে যাবেন, রামপুরা, বাড্ডা, গোড়ান, বাসাবো, মুগদা, মান্ডা, সবুজবাগ, মাদারটেক, ডেমরা, শনির আখড়া, ভাটারা, এই এলাকা গুলোতে বাসা ভাড়া খানিকটা কম। অতএব, এই এলাকা গুলোতেই আমাদের আইডিয়াল কাস্টোমাররা বসবাস করেন! ব্যস, এবার তো তাহলে হয়েই গেলো! ✅
আপনি জানেন, আপনার কাস্টোমারদের বয়স কত, তারা কোথায় থাকে, তাদের জেন্ডার কি, তাদের বেতন কত। এখান থেকে আপনি এটাও বের করতে পারবেন, তারা কোথায় ঘুরতে যায়, কোথায় শপিং করতে যায়, কোন ডিভাইস ইউজ করে ইত্যাদি ইত্যাদি... এই সব কিছু মিলায়ে আপনার কাস্টোমার প্রোফাইল টা কিন্তু দাড়ায়ে গেলো। ✅
এবার আপনি নিজেই চাইলে Meta Ads সেটাপ করতে পারবেন অথবা চাইলে এসব কাজে অভিজ্ঞ কারো সাথে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে আপনার কাজ টা করায়ে নিতে পারবেন।
আর আপনি যদি খুব টিপিক্যাল Boost করতে পারে, এমন মানুষ দিয়ে পেইজ বুস্ট করান, তাহলে কি হবে জানেন? আপনার পেইজ এর Ads ভুল মানুষের সামনে যাবে, যাদের এই প্রোডাক্ট দেখার দরকার নাই। তারা আপনার পেইজ এভয়েড করবে, তারা এভয়েড করতে থাকলে আপনার Impression প্রথমে বাড়লেও Engagement বাড়বে না। ফেসবুক এলগরিদম দেখবে আপনার Engagement Ratio ভালো না, তখন ওরা আপনার সাথে মজা নেওয়া শুরু করবে আপনার এড কে আস্তে আস্তে সরায়ে দেওয়ার মাধ্যমে! এতে আপনার টাকাও খরচ হবে আর কাজের কাজ কিছুই হবে না। এখন ভেবে দেখেন আপনি আসলে কি চান। আফটার অল, বিজনেস আপনার! সিদ্ধান্তও আপনার!
এই যে আমি এতো কিছু লিখলাম, এইগুলো কেন লিখলাম জানেন? Boosting আর Meta Ads, এই দুইটা জিনিসের পার্থক্য বুঝানোর জন্য আর আপনাকে সচেতন করার জন্য! জানিনা বুঝাইতে পারছি কিনা, কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হলো কোন নির্দিষ্ট চিন্তা ছাড়া হুট করেই Boosting করে "সেলস" বাড়ায়ে ফেলার আশা করবেন না। বরং আসলে নিজে চিন্তা করতে চেষ্টা করুন ব্যাপারটা নিয়ে নইলে অভিজ্ঞ কারো কাছে যান এই কাজ করে দেওয়ার জন্য!
আমার লেখায় ভুল থাকতে পারে, আমার জ্ঞানের স্বল্পতা থাকতে পারে। কোন ভুল চোখে পড়লে আমাকে ধরায়ে দিয়ে বাধিত করবেন।
[[ লেখা টা পড়ে আপনার ভালো বা খারাপ যেমনই লাগুক, আমাকে জানাবেন। তাহলে আমি পরবর্তীতে কখনো কিছু লিখলে সেভাবে প্রেজেন্ট করতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আর লেখা টা উপকারী মনে হলে আপনার আশেপাশের উদ্যোক্তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন। হয়তো এভাবে আপনার কারণে তাদেরও কিছু উপকার হতে পারে। আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন, এতো কষ্ট করে এই পর্যন্ত পড়ার জন্য। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।]]