05/01/2025
কিছু কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর দের ভ্লগ সামনে এলে একটা অস্বস্তিতে পড়ে যাই আমরা। তাদের বাসা সাদা ধবধবে। পর্দা সাদা। খাট সাদা। বিছানার চাদর আরো সাদা। খাটের পাশের আলমিরা, ড্রেসিং টেবিল, ফুলদানি সব সব সাদা। তাদের বিছানায় ফুলতোলা কুশন। দেখলে মনে হয় এসব ছোঁয়া বারণ। তাদের বারান্দায় অজানা ফুল, দেখলে মনে হয় নিশ্চয় বিদেশি ফুল। তাদের কফির পেয়ালার কারুকাজ যেন কোনো শিল্পীর মাস্টারপিস। তাদের রান্নাঘর আমাদের বেডরূমের চেয়েও ঝকমকে। সকালে মাখনে ডিম পোচ করে। ওটস আর চিয়া সিড পুডিং। একটা সবুজ ড্রিঙ্ক। দেখে গেস করতে লাগি, এটা কি করোলার জুস!
সকাল, দুপুর, রাত তাদের বিছানা একইরকম। একটা ভাঁজ নেই। ফ্লোর একইরকম তকতকে, একটাও খেলনা পড়ে নেই। ফুলদানির ফুল একই তাজা, কোথাও হলদে মনমরা নেই। দেখে হয়রান হই। মন খারাপ হয়। ফোন থেকে চোখ তুলে মেয়ে খেলতে থাকা রূমের দিকে তাকাই। এখানে সেখানে ওখানে খেলনা ছিটিয়ে মেয়ে খিলখিল করে হাসছে। দেয়ালে এঁকে রেখেছে কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং। সকালে না গুছিয়ে রাখলাম, আবার যেই সেই করে ফেলেছে। আবার গুছাব? কিন্তু কেন? মেয়েকে খেলতে না করব? কিন্তু কেন?
আবার মন দিই ফোনে। স্ক্রল করি। রিপন মিয়া ভেসে উঠে। জাম্বুরার ভর্তা বানাচ্ছে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে। এক গাল হাসি। পড়ার টেবিলে বসে উল্টাপাল্টা বকছে। মুখে এক গাল হাসি। মনগড়া কবিতা বলছে। এক গাল হাসি। মুখটা চকচক করে রিপন মিয়ার। সর্ষের তেল মেখেছে বোধয়। পরনের জামা ফিটফাট না। উঠানের দড়ি থেকেই বোধয় পরে নিয়েছে। রিপন মিয়া পান খায় খুব। কালচে দাঁত। হাসি দিলে সব বেরিয়ে পড়ে। আমি হলে মুখ টিপে হাসতাম। যাতে কেউ না দেখে। রিপন মিয়ার ওসবের বালাই নাই। রিপন মিয়া কানে ফুল গুঁজে নেই। সাদা পর্দা নেই। বেতের ঝুড়িতে বাহারি কাপে কফি নেই। কুকিজ নেই। রিপন মিয়া তার মত। দুনিয়াকে দেখানোর হাউস নেই। রিপন মিয়া তার মত। সর্ষের তেল মাখানো। মাটি মাখানো। জাম্বুরা খেতে গেলে চামচ লাগে না রিপন মিয়ার।
লোকে হা হা দিতে দিতে একসময় রিপন মিয়াকে ভালবেসে ফেলে।
কেন জানেন? সরলতা। দুনিয়াকে দেখানোর তাড়া নেই ওঁর। প্রতিযোগিতা নেই পাশের বাসার ভাবীর সাথে। আরো উঁচু, আরো উঁচুতে উঠার লোভ নেই। আমি যা, আমি তাই। প্রলেপ নেই। কাভার নেই। কৃত্রিমতা নেই। যা, তাই। যেটুকু, সেটুকুই।
হা হা দিতে দিতে আমাদের অলক্ষ্যে আমরা ভাবি, কেন পারি না রিপন মিয়ার হতে? কেন লজ্জায় মরে যাই একটা খুঁতের শাড়ি নেই বলে? কেন ভিডিয়োতে এলোমেলো ঘর দেখা গেলে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই?
হা হা দিতে দিতে আমরা ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, মনে মনে বলি, কেন হতে পারি না রিপন মিয়ার মত এমন সত্য?
ভাবতে ভাবতে একদিন আমরা এই সত্য লোকটাকে ভালবেসে ফেলি।