15/07/2022
#কারিন_জ্বীন
খলিফা আল-মাহদী'র (৭৭৫-৭৮৫ ইং) দরবারে এসে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে নবী দাবি করলো। তার কাছে নাকি ওহী আসে! তখন লোকটির কাছে এর প্রমাণ চাওয়া হলো। সে বললো, আমি বলে দিতে পারবো তোমাদের কার হাতে কী আছে। অর্থাৎ তোমরা সবাই হাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু জিনিস রাখো। একটু পর এসে আমি বলে দিব তোমাদের হাতে কী আছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে আমার কাছে ওহী আসে। কেননা ওহী ছাড়া এমন খবর জানা সম্ভব নয়।
দরবারে উপস্থিত লোকেরা তাই করলো। একটু পর লোকটি এসে বলে দিলো কার হাতে কী আছে এবং কতো পরিমাণ আছে। সবাই আশ্চর্য হয়ে গেলো। এমন সময় দরবারে একজন আলিম এলেন। তিনি বললেন, এই লোকটি মিথ্যাবাদী।
তিনি আরো বললেন, এই লোকটি একজন যাদুকর। সবাই বললো, আপনি কীভাবে বুঝলেন?
তখন আলিম বললেন, আমি তোমাদের সামনে হাতে কলমে প্রমাণ দিচ্ছি। যদি এই লোক বলতে পারে আমার হাতে কী আছে, তাহলে আমিও মেনে নেব সে একজন সত্যিকারের নবী!
এরপর তিনি লোকটিকে দরবারের বাইরে যেতে বললেন। এদিকে ঐ আলিম কিছু সংখ্যক দিরহাম নিয়ে তার হাতে রাখলেন। কিছুক্ষণ পর লোকটি দরবারে ফিরে এলো। আলিম বললেন, এবার বলো আমার কাছে কী আছে?
লোকটি প্রশ্ন শুনে কয়েক মুহুর্তের জন্য মাথা নিচু করে রইলো। এরপর মাথা তুলে বললো, তিরিশ!
এবার আলিম তার হাত খুলে সবাইকে দেখালেন।
লোকেরা দেখলো সেখানে একশ'র বেশী দিরহাম আছে। সবাই জানতে চাইলো, এই মিথ্যাবাদী লোকটি একটু আগে কিভাবে বলে দিচ্ছিল?
সেই আলিম জবাব দিলেন, যখন তোমরা মুদ্রা গণনা করেছো, তখন তোমাদের সাথে থাকা কারিন জিনও গণনা করেছে। এরপর কারিন জ্বীন ঐ মিথ্যাবাদী লোকটির কারিন দ্বীনের কাছে গিয়ে এই খবর জানিয়ে দিয়েছে।
এজন্য ঐ আলিম নিজে গণনা না করেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা নিজের কাছে রেখেছিলেন। ফলে ঐ আলিমের সাথে থাকা কারিন জ্বীন সেগুলো গণনা করাতে পারেনি। তাই দরবারে আসা লোকটিও জানতে পারেনি ঐ আলিমের হাতে কতোগুলো মুদ্রা আছে।
এরপর মিথ্যাবাদী লোকটিকে গ্রেফতার করা হলো এবং তাকে প্রহার করা হলো। তখন লোকটি স্বীকার করলো সে ছিল একজন ভণ্ড ও যাদুকর।
পাঠক! প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন জিন নিযুক্ত থাকে। তার নাম কারিন। এই কারিন জ্বীন অন্য জ্বীনের কাছে গিয়ে আপনার ব্যাপারে সমস্ত তথ্য জানিয়ে দিতে পারে। যেমন- জ্যোতিষী, গণক কিংবা যাদুকরের সাথে থাকা দ্বীনের কাছে গিয়ে তারা আপনার ব্যাপারে তথ্য জানিয়ে দেয়। তখন মনে হয় যেন ঐ লোক গায়েব জানে!
আজকাল আরেকটি বিষয়ের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। এর নাম 'মিডিয়ামশিপ' (আল-ওয়াসাত) বা মধ্যস্থতা। এরা দাবি করে তারা বিভিন্ন আত্মার সঙ্গে আধ্যাত্মিক যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারে। এগুলো মিথ্যাচার ও যাদুটোনা। যদি কেউ বলে কিন্তু আমি তো আমার মৃত পিতার কণ্ঠ শুনলাম! তখন এর সঠিক উত্তর হচ্ছে, নাহ! আপনি আপনার পিতার সাথে থাকা কারিন জ্বীনের কণ্ঠ শুনেছেন!
একজন মানুষের মৃত্যু হলেও তার সাথে থাকা কারিন জ্বীনের মৃত্যু নাও হতে পারে। সে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারে। তাই যদি আপনার মৃত পিতার সাথে থাকা কারিন জ্বীন আশেপাশে থাকে, তাহলে সে আপনার পিতার কণ্ঠ নকল করে কথা বলতে পারে। যেভাবে কোন জীবিত ব্যক্তির উপরে ভর করা জ্বীনও ঐ ব্যক্তির কন্ঠ ব্যবহার করে কথা বলতে পারে। তখন আক্রান্ত ব্যক্তির কণ্ঠ থেকে জ্বীনের কণ্ঠ পৃথক করার কোনো সুযোগ থাকে না। ভণ্ড ওঝা বা যাদুকরের সাথে যোগাযোগ করে কারিন জ্বীন আপনার মৃত পিতার ব্যাপারে এমন সব তথ্য জানিয়ে দিতে পারে যা ঐ জ্বীন জানে। কারণ সে ছিল আপনার পিতার সহচর। এই ঘটনাকেই অজ্ঞ লোকেরা মনে করে, এসব ওঝারা মৃত আত্মার সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম! কিন্তু এটা অসম্ভব। কারণ কুরআন ও সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, কোন মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ফিরে আসতে পারে না।
বই : হালাল হরর স্টোরিজ পৃ.৬৫-৬৬
সংকলন, অনুবাদ : সিফাত-ঈ-মুহাম্মদ
প্রকাশনায় : Bookmark Publication
মুদ্রিত মূল্য : ৩০০টাকা
পৃ. ২৩৮টি
--courtesy: Muhammad ashraful