01/07/2025
ফুলপ্রুফ পলিটিক্যাল সিস্টেম
অপব্যবহারের সুযোগ শূন্য আপত্তিমুক্ত কোন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ।
গণমানসিক পরিবেশ-পরিস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে গণ্যমান্য রাজনীতিবিদগণ একেক দেশে একেক পদ্ধতিতে জনমত সংগ্রহ করে সরকার গঠন, পরিবর্তন ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি প্রবর্তন করে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে সেগুলোতে সংযোজন বিয়োজন হতে থাকে। ফাঁকফোকর বের হয়, কখনো সেগুলো বন্ধ করা সম্ভব হয়, কখনো বা তার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীনরা গণবিরোধী আচরণ শুরু করে। তখন ক্ষমতার পালাবদলে সংঘাত সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে হিন্দু এবং বিশেষ দলের পিছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইনফ্লুয়েন্স কাজ করে, পাহাড়িদের পিছনে বহুজাতিক ষড়যন্ত্র সক্রিয়। এর কারণ হলো আমরা আর্থিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী স্থিতিশীল নই, কোন একটি জাতীয় চেতনায় মজবুতভাবে ঐক্যবদ্ধ নই। আর ইসলামপন্থী ও লিবারেলদের অনেকের মধ্যে বোঝাপাড়া সন্তোষজনক নয়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে মারমুখী ও শত্রু ভাবাপন্ন। এমত অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ঐক্য ঠিক রাখার জন্য শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন।
১৯৪৭ সালে বর্তমান বাংলাদেশের এই ভূখণ্ড ও মানচিত্র বরাদ্দ হয়েছে মুসলমানদের জন্য। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। মুসলমান ও বাংলাদেশের অখন্ডতা বিরোধী কোন পক্ষকে এখানে সংগঠিত হতে দেয়া যায় না। এমনিতেই তাদের পিছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইন্ধন থাকে, আবার যদি তাদেরকে সংগঠিত হতে দেওয়া হয়, তাহলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির সামনে সমূহ বিপদ দেখা দেবে।
ব্রিটিশ আমলে নির্বাচনের সেপারেট সিস্টেম ছিল-- সংসদে হিন্দু মুসলমানের জন্য ঘোষিত সংরক্ষিত সিটগুলোতে হিন্দুরা হিন্দু প্রার্থীদেরকে ভোট দিবে, মুসলমানরা মুসলমানদেরকে। ফলে নির্বাচনের মাঠে বিভিন্ন জাতি ধর্ম ও দর্শনের মাঝে কোন সমঝোতা হয়নি। এভাবে হিন্দু-মুসলমানের বিভাজনটা প্রকট আকার ধারণ করে এবং দেশভাগে রূপ নেয়। বিভক্তি ঠেকাতে বর্তমান ভারতও পিআর পদ্ধতির চালু করেনি।
প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং জনগণের মাঝে সাংঘর্ষিক মতবাদ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে যদি পিআর পদ্ধতি চালু করা হয়, তাহলে যেমনিভাবে ইসলাম পন্থীদের মাঝে নির্বাচনী জোটবদ্ধতার দায় কমে আসবে, তেমনি হিন্দু সম্প্রদায়, পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বৌদ্ধ খ্রিস্টান কাদিয়ানী, পরাজিত ফ্যাসিবাদ ইত্যাদি পক্ষ বিভাজন মূলক এজেন্ডা নিয়ে সংগঠিত হয়ে যাবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এই পক্ষগুলো এখনো সংসদে আসন পায়, কিন্তু তারা বাংলাদেশী বড় দলগুলোর অধীনে সিট পায়। আলাদা মোর্চা গড়ে তুলতে পারে না।
এটা ঠিক-- পিআর পদ্ধতিতে ছোট দলগুলো উপকৃত হবে এবং ভোটের অপচয় রোধ হবে, কিন্তু বর্তমান অবস্থায় উপরোক্ত ক্ষতিগুলো রোধ করা যাবে না, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও প্রতিশোধকামীরা এই পদ্ধতির সুযোগ নেবে। তাই ছোট লাভের জন্য বড় ক্ষতি ডেকে আনা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
এমত অবস্থায় দীন দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদেরকে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার হতে হবে ইনক্লুসিভ, নির্বাচনের আগে পরে সব ধর্ম দর্শনের মানুষকে কাছে টানার কাছে যাওয়ার পলিসি নিতে হবে। এর বিপরীত পলিসি হবে আত্মঘাতী।
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রশাসন দুর্বল। নির্বাচন কমিশন সহ রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই কাঙ্খিত মাত্রায় শক্তিশালী নয়। এখন এই অপরিচিত জটিল পিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করার সামর্থ্য আমাদের নেই। পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করতে অন্তত ১০-২০ বছর সময় লাগবে। তাই যদি পিআর প্রয়োগ করতেই হয়, তবে অতি সীমিত ও ক্ষতিমুক্ত পরিসরে প্রয়োগ শুরু করা যেতে পারে।
গতকাল জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী দামাত বারাকাতুহুম অত্যন্ত সুন্দর ও দালিলিকভাবে পিআর পদ্ধতি এবং ইসলামপন্থীদের জোট সম্পর্কে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন। লাভ যাই হোক, দীন দেশ ও জাতির ক্ষতি যেন না হয়, ক্ষতি যেন কমানো যায়, জোটের ক্ষেত্রে এবং পিআর পদ্ধতির ক্ষেত্রে এটাই জমিয়তের মূলনীতি।
তাই পদ্ধতিগত জটিলতা, পরিনামে দুর্বল সরকার গঠিত হওয়া, ভোটার ও সাংসদদের মাঝে যোগাযোগ কমে যাওয়া, স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা এবং দীন দেশ ও জাতিবিরোধী পক্ষগুলোর উত্থানের আশঙ্কার কারণে আমরা পিআর নয়, বিদ্যমান এফপিটিএফ পদ্ধতির পক্ষে মত ব্যক্ত করছি।
اللهم الهمنا مراشد امورنا واعذنا من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا، واهدنا الى سواء السبيل. وصلى الله وسلم على سيدنا ونبينا محمد وعلى اله واصحابه واتباعه الى يوم الدين. امين واخر دعوانا الحمد لله رب العالمين.
মাওলানা মাহমুদ মাসরুর
প্রশিক্ষণ সম্পাদক
যুব জমিয়ত বাংলাদেশ