09/06/2023
প্রেমিক-প্রেমিকা হওয়া যতটা সহজ, স্বামী-স্ত্রী হওয়া ততটাই কঠিন। প্রথমটা ফ্যান্টাসির সম্পর্ক আর পরেরটা বাস্তবতার।
কারও প্রেমে পড়ার জন্য বেশি কিছু ভাবতে হয় না, জানতে হয় না; বরং চোখের একটি পলকই যথেষ্ট। কিন্তু কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করার জন্য তার ব্যাপারে খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানতে হয়, অনেক ‘যদি-তবে-কিন্তু’র হিসাব মেলাতে হয়।
আপনি যখন ‘প্রেমিকা’ চুজ করছেন, তখন আপনার চোখ আর মনের ভালো লাগাটাই বিশেষভাবে বিবেচ্য, কিন্তু আপনি যখন ‘স্ত্রী’ বাছাই করছেন, তখন আপনি একাধারে একজন জীবনসঙ্গী, আদর্শ গৃহবধূ, সন্তানের মা এবং সুখ-দুঃখের সাথী বাছাই করছেন। একইভাবে কোনো ছেলের সৌন্দর্য কিংবা তার বিশেষ কোনো প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলা খুব সহজ। কিন্তু একজন দায়িত্ববান স্বামী, দৃঢ়চিত্ত পুরুষ, ছাতার মতো আশ্রয় কিংবা আপনার সন্তানের বাবা হিসেবে যখন আপনি কাউকে বাছাই করবেন, তখন অনেক ভাবতে হবে।
সমস্যা হলো, আমরা আবেগের ফাঁদে পড়ে যাকে-তাকে প্রেমিক-প্রেমিকা বানিয়ে ফেলি, এরপর যখন বিয়ের প্রসঙ্গ আসে, তখন হিসাব মেলাতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি, হিমশিম খেতে থাকি। কারণ যে ছেলেটা প্রেমিক হিসেবে নাম্বার ওয়ান, সে যে স্বামী হিসেবেও নাম্বার ওয়ান হবে, এটুকু ভরসা রাখতে পারি না। প্রেমিকার দুষ্টু-মিষ্টি আবদার পূর্ণ করা আর কোনো মেয়ের আজীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করা আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কোনো মেয়ের ‘বাবু খাইসো?’-টাইপ কেয়ার করা আর একটা সংসারের সুখ-দুঃখের ভার বহন করা কখনই এক নয়। এজন্য প্রায়ই দেখা যায়, প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে ফুল মার্কস পাওয়া ছেলে-মেয়েরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পাশ নম্বরটাও পাচ্ছে না। কারণ ফ্যান্টাসির জগৎ আর বাস্তবতার জগৎ এক নয়।
আপনার প্রেমিকার সাথে আপনি ২৪ ঘণ্টা জমে থাকেন না। মাঝেমধ্যে দেখা করেন। যখন দুজনের দেখা হয়, তখন পরিপাটি হয়ে থাকেন। দুজনের মাঝে যখন কথা হয়, তখন কেউ নিজের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো শেয়ার করেন না। অলটাইম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন, তাকে উৎফুল্ল ও সন্তুষ্ট রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। ফলে একজন আরেকজনের জন্য ফিদা হয়ে থাকেন। কিন্তু বিবাহিত জীবনটা এমন না। ২৪ ঘণ্টা একসাথে থাকতে হয়, ভালো-মন্দ সকল বৈশিষ্ট্য, আচার-অভ্যাস জানাজানি হয়, সংকটময় মুহূর্তগুলোর সন্মুখীন হতে হয় এবং রাগ-ক্ষোভ ও জিদের সময়গুলোতে বিশেষভাবে চেনা-জানা হয়।
যার সামনে গেলে আপনার চোখের নীচের কালো দাগ ও পায়ের ফাটাগুলো ঢেকে রাখতে হয়, যার সামনে আপনি ঘর্মাক্ত শরীরে যেতে ইতঃস্ততবোধ করেন, শূন্য পকেট দেখে যার আচরণ বদলে যায়, যার মুখোমুখী হওয়ার আগে আয়নার সামনে সময় দিতে হয়, যার সাথে কথা বলার সময় তার রূক্ষ মেজাজের কারণে অনেক ভেবে-চিন্তে কথা বলতে হয়, তার সাথে—আর যাই হোক—হৃদয়ের লেনদেন চলতে পারে না, তার সাথে জীবনের খেয়া পার হওয়া যায় না। খেয়াল করে দেখুন, প্রেমিক-প্রেমিকারা ঠিক এই বিষয়গুলো নিয়ে কতোটা কনসার্ন থাকে! এজন্য বলি, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে অকৃত্রিম ভালোবাসার সৌন্দর্য থাকে না। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কমিটমেন্টগুলোতে প্রাণ থাকে না। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কগুলো শো-অফে ভরপুর থাকে। এক ইউটোপিয়ান জগৎ!
আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা, আপনারা এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে না পারলে জীবনে অনেক পস্তাবেন এবং হতাশার আগুনে দগ্ধ হবেন।
ইসলাম বিবাহবহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসা নিষিদ্ধ করে অন্যায় করেনি, বরং আমাদের অদূরদর্শী আবেগে লাগাম পরিয়ে আমাদের উপকার করেছে। কাউকে দেখে ভালো লাগা মোটেও খারাপ কিছু নয়। খারাপ হলো, বিবাহবহির্ভূতভাবে এই অনুভূতিকে গ্লোরিফাই করে হৃদয়াবেগ আদান-প্রদান করা, কথা-বার্তা চালিয়ে যাওয়া, দেখা-সাক্ষাৎ করা, নির্জনে মিলিত হওয়া ইত্যাদি। অতএব, কাউকে ভালো লাগলে বা পছন্দ হলে প্রথমে তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ভালো-মন্দ বিচার-বিশ্লেষণ করুন। এরপর মনোভাব ইতিবাচক হলে পরিবারকে অবহিত করুন। বিয়ের প্রস্তাব দিন; বিয়ে করে ফেলুন।