23/09/2022
বিস্তারিত পোস্টঃ
ধর্ষণ শুধু পর্দাহীনতার কারণেই হয় না; ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের সামগ্রিক অনুশাসন মেনে চলাতেই মৌলিক সমাধান ।
ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামঃ
লজ্জাষ্কর এই বিষয়টি নিয়ে লিখতে হবে এটা চিন্তা করিনি। ধর্ষণ! আহ! শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি নিষ্পাপ আত্মার আকুল রোদনচিত্র! প্রাণে বেঁচে থাকার করুন আকুতি! অসহায় নারী কিংবা শিশু কন্যার বুকফাটা আর্তনাদ! আহ, বিষাদে ছেয়ে যাওয়া একটি জীবন! ছিন্ন ভিন্ন বিপন্ন একটি পরিবার! ভেঙ্গে চূড়ে দুমরে মুচরে যাওয়া একটি পৃথিবী! যে পৃথিবীর আলো বাতাস বিষাক্ত! যে পৃথিবীর নদী নালা বিশুষ্ক! যে পৃথিবীতে কোনো মানুষ বসবাস করে না কেবল বিষযুক্ত নখরের হিংস্র দু'পায়ী পশু ছাড়া! বিষাক্ত সে পৃথিবী নামক নরকখন্ডের জলরাশিও! বিষে বিষে নীল হয়ে ওঠে হতভাগা, অসহায় আর দুর্বল ধর্ষিতার দু’চোখ! বিষে বিষে বিষাক্ত হয়ে ওঠে তার নির্মল ছোট্ট জীবনটাও! অতঃপর! শেষ পর্যন্ত! অবশেষে এই বিষেভরা জীবন থেকেই সে মুক্তি খোঁজে! মুক্তির সন্ধান পেতে সে খুঁজে নেয় আরও কয়েক ফোটা বিষ! আরেকটি বিষের কৌটা! কিংবা ওড়না গামছায় খুঁজে নেয় তার মুক্তির ভিন্ন পথ! সে হয়তো মুক্তি পায়! হয়তো পায় না! হয়তো জীবন যন্ত্রণার অবসান লাভ করে! কিন্তু বিপন্ন পৃথিবী দেখা পায় আরেকটি তাজা লাশের! মৃত মানবতার ঝুলন্ত তাজা লাশ! দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে এ লাশের মিছিল! এ মিছিল থামবে কবে?
পরিসংখ্যান বলছে, অভিশপ্ত এই লাশের তালিকার অগ্রভাগে রয়েছে আমেরিকা’র মতো উন্নত দেশগুলো! উন্নত রাষ্ট্র বলে কথা! যে রাষ্ট্রটিতে প্রতি দু’মিনিটে ধর্ষিত হতে হয় একজন নারীকে! আর ধর্ষনের বার্ষিক পরিসংখ্যান? তা শুনলে তো চক্ষু চড়ক গাছ! কম বেশি সেখানে বছরে ধর্ষিত হতে হয় ২০৭,৭৫৪ জন নারী শিশুকে! লজ্জা এবং পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ধর্ষণজনিত এসব ন্যাক্কারজনক অপকর্ম প্রায় ৫৪% ঘটনার ক্ষেত্রেই পুলিশকে রিপোর্ট করা হয় না! এটা করা হয় না প্রচন্ড প্রতাপশালী ধর্ষকের ক্ষমতা, দর্প আর লোকলজ্জার ভয়েই! অন্যদিকে অদম্য সাহসী যেসব ধর্ষিতা পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন, তারাও তেমন কোনো সুরাহা পান বলে জানা যায় না! ফলাফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে! ধর্ষকেরা সাহসী হয়ে উঠছেন দিন দিন! তাদের হিংস্রতার পরিসংখ্যান বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্যামিতিক হারে! ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে ক্রমেই মানবতা!
অন্য দেশের কথা বলে আর লাভ কী? আমরাও কি কম এগিয়ে? আমরাও কি মোটেই পিছিয়ে ন্যাক্কারজনক এই অপকর্মে? আমাদের এই ছোট্ট দেশটাও যে জাহিলিয়াতের দিকে কতোটা ক্ষিপ্র গতিতে এগুচ্ছে তাও কি 'গা' শিউরে ওঠার মত নয়? ‘আমার দেশ’ অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লিখা হয় ‘শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই আমাদের বাংলাদেশে ৭২৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়’। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৩৭ জনকে হত্যা করা হয় ও ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেন ৮ জন। অথচ এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে মাত্র তিনটি।
হায় হায়! এতটা জঘন্য হওয়ার পরেও আমরা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করি! আমরা আজ কেতাদুরস্ত! সভ্যতার সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে অসভ্যতার নরকে সাতার কাটি! গোটা পৃথিবীর দিকে তাকালে শিউরে উঠি! মুষরে পড়ি! লজ্জায় হতবাক হই! হায় হায়, সভ্যতারই যেন আজ মৃত্যুঘন্টা বেজে উঠেছে! মাত্র ২ বছরের শিশুরও তো রেহাই মিলছে না আপাদমস্তক মানুষরূপী এসব নরপশুদের হাত থেকে! ৭০ বছরের বৃদ্ধাও তো মুক্তি পাচ্ছে না এদের বিষাক্ত ছোবল থেকে! আচ্ছা, ফুলের মত নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে এমন পৈশাচিক নৃশংসতার চিন্তা আসে কীভাবে? এও কি কোনো সভ্যতা? এর নামও কি উন্নয়ন? একেও কি বলতে হবে অগ্রগতি? ধিক এমন উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সভ্যতায়! সভ্যতা নামের যে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে মানবতা বিধ্বংসী এমন ভয়ঙ্কর হিংস্র দানবীয় আচরন, ধিক! সে সভ্যতায়! শত ধিক! হে অধূনা পৃথিবীর তথাকথিত লজ্জাহীন সভ্যতা! তোমার বিষাক্ত ছোবল থেকে মানুষ মুক্তি চায়! তুমি স্থির হও! তোমার প্রলম্বিত লিকলিকে কৃষ্ণ নখরযুক্ত রক্তখেকো বাহুকে সংযত কর! তোমার কারণে আজ মায়েদের চোখে নিদ্রা নেই! বাবাদের স্বপ্ন ধুলিস্যাত! ফুল থেকে কলি হয়ে ফোটার আগেই দুধের শিশুদের ঝড়ে পড়ে যেতে হচ্ছে বৃন্তচ্যুত হয়ে! হে সভ্যতার মোড়কাবৃত ধর্ষণ নামীয় দূরন্ত দানব! আজ তোমার কারণে আমাদের মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়! স্কুল-কলেজ-শিক্ষালয়ের পবিত্র প্রাঙ্গনে নয়! পথে-গাড়িতে-ঘরে কোথাও নয়! শিক্ষার্থী-গৃহবধূ-গৃহিনী কেউ নয়! অবুঝ শিশুও নয়! সর্বত্র, সবখানে পাশবিক ধর্ষণের শিকার আজ মায়ের জাতি! কিন্তু কেন? কেন আজ এই চারিত্রিক অধ:পতন? মানবতার অপমৃত্যু? কেন আমাদের এই দুরবস্থা?
এই প্রশ্নের উত্তর কি? কঠিন এই প্রশ্নের উত্তর তো আমাদের কারোই অজানা নেই। কিন্তু মুখে কি এর উত্তর বলা যায়? সত্য কথা বলার, সত্য কথা শোনার অনুভূতিটুকুও কি অবশিষ্ট আছে আমাদের? সত্যোচ্চারন করলেই তো সেকেলে, মধ্যযুগীয়, কূপমন্ডুকতাসহ কত কথার তীর এসে বিদ্ধ করে আমাদের! যাক, সত্য তবু বলতেই হবে। বলেই যাবো ইনশাআল্লাহ! কেউ শুনুন অথবা না শুনুন!
আজকের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের এই চরম অবস্থার জন্য যে কারণগুলো দায়ী তার ভেতরে রয়েছে- তাকওয়াহীনতা, পরিবারের দ্বায়িত্বহীনতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, ইন্টারনেটে অশ্লীলতার সহজলভ্যতা। এছাড়া টিভি সিরিয়াল ও ফিল্মে প্রচারিত ধর্ষণের নানাবিধ কৌশল এবং ক্রাইম অনুষ্ঠানসমূহের কমবেশি দায় থেকে যায়। এইসব অনুষ্ঠানে সচেতনতার নামে ধর্ষনকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, দেখলে মনে হতেই পারে, যেন ধর্ষককে হাতে কলমে ধর্ষণ শেখানো হচ্ছে! বলতে দ্বিধা নেই, এসব অনুষ্ঠান নারীদের যতটা না উপকার করছে, তার চেয়ে ক্ষতি করছে ঢের বেশি। কেননা, প্রায়শ দেখা যায়, এ সকল অনুষ্ঠানের সমাপ্তির প্রান্তে এসে দেখানো হয়, হয় নায়ক এসে ধর্ষকের হাত থেকে নায়িকাকে উদ্ধার করে, নতুবা পুলিশ ধর্ষককে গ্রেফতার করে। উঠতি বয়সের যুবকরা এসব ফিল্ম দেখে কৌশল রপ্ত করে যখন প্রাকটিসে অবতীর্ন হয়, তখন দেখা যায়, বাস্তবে এর কিছুই হয় না। না নায়ক টায়কের কেউ আসে, আর না পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে লিপ্ত হয়। মাঝখান থেকে ধর্ষকরা প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়ে যায়! হাতে খড়ি হয়ে যায় তাদের ধর্ষনের মত জঘন্যতম অপরাধের!
তাই বিষয়টি নিয়ে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি। অনেকের নিকট শুনতে ভালো না লাগলেও একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ইসলামের অনুশাসন না মানাই ধর্ষণ প্রবনতার অন্যতম কারণ। ইসলাম ধর্মের অন্যতম একটি শাশ্বত বিধান হলো পর্দা। যা নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই আবশ্যকীয়। কিন্তু তা আজ মানতে নারাজ এই সমাজেরই কিছু লোক। অনেকে আবার পর্দাপালনকে শুধু নারীর জন্যই নির্ধারিত মনে করে ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছেন। তাই ঢালাওভাবে যথেচ্ছ উক্তি করে বেড়ান ‘ধর্ষণের জন্য বেপর্দা নারীরাই দায়ী’। এদের এসব দায়িত্বহীন কথার কারণে ইসলাম বিদ্বেষীগনও সুযোগ পান ইচ্ছেমত অপপ্রচারের।
মূলত: শুধুমাত্র পর্দা লঙ্ঘনের কারনেই যদি ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটে থাকতো, তাহলে দুই বছরের দুধের শিশুটিকে কেন ধর্ষিত হতে হচ্ছে? তাকে কেন ধর্ষন করে পাষন্ডরা বহুতল ভবন থেকে ফেলে দেয়? তাই সত্যটাকে উপলব্ধি করতে হবে। সঠিক কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আসলে এখানে যেই বিষয়টির অভাব তা হচ্ছে ইসলামের অনুশাসনকে না মানা। ধর্মীয় অনুশাসনকে অবজ্ঞা করা। কারণ, প্রতিটি ধর্মেই ধর্ষনের মত জঘন্য বিষয়ে নিরুতসাহিত করেছে। আজকে আমাদের সমাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের এই অনুশাসন যেমন বেপর্দা নারীরা মানছে না, তেমনি মানছে না পুরুষেরাও। অথচ আল্লাহ তায়ালা পর্দার নির্দেশদানের ক্ষেত্রে প্রথমে উল্লেখ করেছেন পুরুষদের, এরপরে বলেছেন নারীদের কথা। তিনি ইরশাদ করেন-
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
‘হে রাসূল! আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জস্থানের হেফাজত করে; এটিই তাদের জন্য পবিত্রতর (ব্যবস্থা)। তারা যা করে আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ে ভালোভাবেই অবগত আছেন।’ (সূরা নূর : ৩০)
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاء بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاء وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
'ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।' (সূরা নূর : ৩১)
রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী স্থান (মুখ/জবান) ও দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান (যৌনাঙ্গ) হেফাজত করবে, আমি নিজে তার জান্নাতের জিম্মাদারি নেব।’ (বুখারী- মুসলিম)
এখানে কুরআন ও হাদিসে যা বলা হয়েছে তা কিন্তু নারী-পুরুষ উভয়কেই বলা হয়েছে। তাহলে বেপর্দার জন্য শুধুমাত্র নারীকেই কেন দোষারোপ করা হবে? কেন নারীকে একা পেলেই হামলে পরবে ধর্ষকের দল। ছিন্নভিন্ন করবে তার পবিত্র ভূষণ। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলে দিয়েছেন
وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ تُلْقُواْ بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوَاْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
'আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।' (সূরা বাকারা : ১৯৫)
ধর্ষণ প্রবনতার আরেকটি কারণ হলো ইসলামের নির্ধারিত শাস্তিকে বাস্তবায়ন না করা। ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ। ইসলামে এই অপরাধ নিকৃষ্ট কাজ ও হারাম হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটি প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও অত্যন্ত মন্দ পথ’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৩২)।
ধর্ষণের মতো হীন কর্মকে ইসলাম শুধুমাত্র নিষেধ করেই চুপ থাকেনি, বরং ধর্ষকের জন্য ব্যবস্থা করেছে কঠিন শাস্তির।
হজরত আলকামা (রা) তাঁর পিতা ওয়াযেল (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে জনৈক মহিলা সালাত আদায়ের জন্য গমনকালে পথিমধ্যে তার সাথে একজন পুরুষের দেখা হলে, সে ব্যক্তি জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে। সে মহিলা চিৎকার দিলে, তার পাশ দিয়ে গমনকালে জনৈক ব্যক্তি এর কারণ জানতে চায়। তখন সে মহিলা বলে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ অপকর্ম করেছে’। পরে তার পাশ দিয়ে মুহাজিরদের একটি দল গমনকালে সে মহিলা তাদেরকেও বলে, ‘অমুক ব্যক্তি আমার সাথে এরূপ কাজ করেছে’। তারপর তারা গিয়ে এক ব্যক্তিকে ধরে আনেন, যার সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল যে, সে-ই এরূপ করেছে।
এরপর তারা সে ব্যক্তিকে উক্ত মহিলার কাছে উপস্থিত করলেন, সে মহিলা বলে, 'হ্যাঁ। এই ব্যক্তিই এ অপকর্ম করেছে।'
তখন তাঁরা সে ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে যায়। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সে ব্যক্তির উপর ইসলামের বিধান জারি করার মনস্থ করলেন, তখন মহিলার সাথে অপকর্মকারী মূল ব্যক্তি এসে উপস্থিত হন এবং দাঁড়িয়ে বলেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি নন, বরং অপরাধ আমি করেছি। আমি-ই এই অপকর্ম করেছি। আমাকে শাস্তি দিন।'
তখন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মহিলাকে বলেন, ‘তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমার অপরাধ মাফ করে দিয়েছেন’।
এরপর হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভুলভাবে ধরে আনা লোকটির সাথে উত্তম ব্যবহার করেন এবং ধর্ষক ব্যক্তিটিকে শাস্তিদানের জন্য পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। নবী পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘লোকটি এমন তাওবা করেছে যে, সমস্ত মদীনাবাসী এরূপ তাওবা করলে, তা কবূল হতো।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৩৮, ৪৩৬৬)
Narrated Wa'il ibn Hujr: When a woman went out in the time of the Prophet (peace_be_upon_him) for prayer, a man attacked her and overpowered (r***d) her. She shouted and he went off, and when a man came by, she said: That (man) did such and such to me. And when a company of the Emigrants came by, she said: That man did such and such to me. They went and seized the man whom they thought had had in*******se with her and brought him to her. She said: Yes, this is he. Then they brought him to the Apostle of Allah (peace be upon him). When he (the Prophet) was about to pass sentence, the man who (actually) had assaulted her stood up and said: Apostle of Allah, I am the man who did it to her. He (the Prophet) said to her: Go away, for Allah has forgiven you. But he told the man some good words (AbuDawud said: meaning the man who was seized), and of the man who had had in*******se with her, he said: Stone him to death. He also said: He has repented to such an extent that if the people of Medina had repented similarly, it would have been accepted from them. Sunan Abu-Dawud #38, Hadith #4366
প্রসঙ্গত: এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা দরকার মনে করছি। অনেকেই বলে থাকেন যে, ইসলামে ধর্ষনের শাস্তির ব্যাপারে কোনো কথা বলা হয়নি। যা বলা হয়েছে তা কেবল ব্যভিচারের। হ্যাঁ, যদিওবা ইসলামে ধর্ষন শব্দটিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করেনি, কিন্তু ধর্ষকের শাস্তিটা যে ব্যভিচারের চেয়ে আলাদা তা এই হাদিসেই স্পষ্টত রয়েছে। কেননা ব্যভিচারের শাস্তি হয় উভয়ের। আর ধর্ষনের শাস্তি হয় শুধুই ধর্ষকের, ধর্ষিতার নয়। কিন্তু আমাদের সমাজ চলছে উল্টো নিয়মে। এখানে ধর্ষকের বদলে শাস্তি পেতে হয় ধর্ষিতাকে। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।
আজকের সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কি লজ্জার কথা, লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় সমাজের উল্টোসব কান্ড কারখানা দর্শনে! মাথা ন্যাড়া, একঘরে করে রাখা, চলতে ফিরতে টিটকারি করা, হেয় প্রতিপন্ন করা সব কিছুই অর্পিত হয় কেবল নির্যাতিতার ওপর। আর বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় ধর্ষকের দল। যদিও দু’চারজন ধর্ষকের বিচার হয়, কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় না। আর যা হয় তাও বলা চলে নামকাওয়াস্তে। ইসলাম যে শাস্তি নির্ধারণ করেছে তার ছিটেফোঁটাও থাকে না ওইসব বিচারের মজলিশে। ফলে এই লঘু শাস্তির কারণে সমাজে ধর্ষনের মতো এই অভিশাপের ছায়া গাঢ়ো থেকে আরো গাঢ়ো হচ্ছে। যদি ইসলাম নির্ধারিত শাস্তির বাস্তবায়ন হতো, অন্ততো দু’একটা ধর্ষককে প্রকাশ্য ময়দানে স্পষ্ট দিবালোকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতো তাহলে সমাজ থেকে এই অভিশাপ মুছে যেতো অনেক পূর্বেই। তাই ইসলাম বিদ্বেষ বাদ দিয়ে, তথাকথিত নারীবাদী না সেজে বরং আসুন! ইসলামকে নারীবিদ্ধেষী হিসেবে উপস্থাপন না করে, বরং নারীদের ইজ্জতের লড়াইয়ে ইসলামের বিধানকে বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। তবেই সমাজদেহ থেকে বিদূরিত হবে ধর্ষনের কালো ছায়া। ধর্ষকের বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্তি পাবে আমাদের নারী শিশুগন।
আল-কোরআনের বিধান মতে ধর্ষণের মত বিপর্যয় সৃষ্টিকারী অপরাধের শাস্তি-
ব্যভিচারের শাস্তি সম্পর্কে আল কুরআনের নির্দেশনা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অক্ষমতা হেতু ভুল-ভ্রান্তি হয়ে গেলে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী।
অনেকের কাছেই এ প্রশ্ন ক্লিয়ার নয় যে, আল কুরআনে ধর্ষকদের শাস্তি সম্পর্কে কোন নির্দেশনা আছে কি না। ধর্ষণসহ বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টিকারী এসব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে, আল কুরআনের বিধান অনুসারে তারা নিম্নোক্ত আয়াতের আলোকে শাস্তিযোগ্য-
إِنَّمَا جَزَاء الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الأَرْضِ فَسَادًا أَن يُقَتَّلُواْ أَوْ يُصَلَّبُواْ أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُم مِّنْ خِلافٍ أَوْ يُنفَوْاْ مِنَ الأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
'যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং ভূপৃষ্ঠে সন্ত্রাস বা বিপর্যয় সৃষ্টির অপচেষ্টা করে, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।' (সূরা মায়েদা- আয়াত, ৩৩)
উপরে উল্লেখিত হাদিছ থেকে এ সম্পর্কে আমরা আরও পরিষ্কার ধারনা পাই। আল কুরআনের ৫ নং সূরা মায়েদার- ৩৩ নং আয়াতে এই ধরনের অপরাধের সর্বোচ্য শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান দেয়া হয়েছে। উপরে বর্ণিত হাদিছটিতে সেই নির্দেশেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রকৃত ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। যদি কদাচিত ঘটেই যায়, তাহলে অবশ্যই ধর্ষককে শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে হাদিছে বর্ণিত প্রেক্ষাপট অনুসারে ধর্ষক ও ধর্ষিতা সম্পর্কে সার্বিকভাবে যে ধরনের ইংগিত পাওয়া যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। ঘটনার সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যদি মোটামুটি একই রকমের সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়, তাহলে বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতেও আল কুরআনের নির্দেশ এবং রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত মেনে এই শাস্তি দিতে হবে।
আর এই শাস্তি হলো ‘রজম’ অর্থাৎ জনসম্মুখে বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে পাথর মেরেই ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে।
যেহেতু আল কুরআনের বিধানে এই ধরনের অপরাধের শাস্তির ক্ষেত্রে কয়েকটি অপশন (দেশ থেকে নির্বাসন, বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কর্তন ও হত্যা/শূলীতে চড়ানো) দেয়া হয়েছে। তাই সবার ক্ষেত্রে একই শাস্তি নয়, বরং ক্ষেত্র ও পাত্র ভেদে শাস্তিরও তারতম্য হতে পারে। ধর্ষকের নিজস্ব স্বীকারোক্তি সাপেক্ষে তার শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড, তাতে কোন সন্দেহ নাই। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ধর্ষিতার পূর্ব এবং বর্তমান স্বভাব চারিত্র খতিয়ে দেখার মাধ্যমে ধর্ষকের শাস্তির পরিমান নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনা করার অবকাশ রয়েছে। ধর্ষনের শাস্তি প্রমানের জন্য চারজন সাক্ষীর আবশ্যক নয়। এটি একটি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী নিষ্ঠুর প্রকৃতির অপরাধ। তাই ধর্ষন প্রমান ও এর শাস্তি প্রয়োগের স্বার্থে ধর্ষিতার অভিযোগ, তার শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে দেখতে হবে। শুধু তাই নয়, তদন্ত পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত সকল উন্নত ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির সাহায্য নিতে কোনই বাধা নেই। অবশ্যই অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এই শাস্তি প্রদানের এখতিয়ার কোন আনপড় অবিবেচক মোল্লা বা স্থানীয় কোন ধর্মগুরুর নেই। কেবল মাত্র ইসলামি আদালতের বিজ্ঞ বিচারকই এই শাস্তির রায় দেবার অধিকার রাখে।
ইসলামে সর্ব প্রথমে মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালার উপর ইমান আনার সাথে সাথে সকল প্রকার অসৎ, অশ্লীল ও মন্দ কর্ম পরিহার ও সৎ পথে চলার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়া হয়। তাই ইসলামী সমাজের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি যদি এরপরও এ ধরনের পাশবিক কর্মে জড়িয়ে পরে, তাহলে তাকে শাস্তি দেয়া ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই।
আল্লাহ পাক গোটা মানবজাতিকে হেফাজত করুন। তাদের ভেতরে নৈতিকতার সঠিক উপলব্ধি জাগিয়ে দিন। অন্যায় অপরাধ থেকে মুক্ত থেকে সচ্চরিত্রবান হওয়ার তাওফিক দান করুন।