01/05/2025
ফেনীর জামিয়া রশিদিয়া মাদ্রাসায় গেলে দেখবেন সেখানে রুমের ভিতরে রাতে সিট করে থাকার মতো জায়গা নেই। শুবার জন্য বারান্দায় বিছানা করতে হয় ।
উম্মুল মাদারিস খ্যাত হাটহাজারী মাদ্রাসার বোর্ডিং এর ডালের একটা আলাদা পরিচিতি আছে । সেটা হলো এই ডাল দেখলে বুঝার উপায় নাই এটা ডাল নাকি অজুর পানি । খাবার খেতে গিয়ে ভাত আর তরকারির মধ্যে পোকা পাওয়ার ঘটনা তো হরহামেশাই ঘটে থাকে ।
বাংলাদেশে এমন মাদ্রাসার অভাব নেই যেখানে বোর্ডিংয়ে মাসের পর মাস ডাল আর আলু ভর্তা ছাড়া অন্য কিছু রান্না হয়না বলেই চলে । কোন ছাত্রাবাস নাই অথচ সেটা মাস্টার্স সমমানের দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত মাদ্রাসা ।
এই যে বারান্দায় বিছানা করে ঘুমানো......
অথবা পানির থেকেও পাতলা ডাল খাওয়া .....
কিংবা মাদ্রাসার এমদাদী খানার উপর ইকতেফা .....
এগুলোর ফলাফল কি ?????
এগুলোর ফলাফল হলো কিছু অসাধারন রিজাল পাওয়া । ফিকাহ্ বলেন , হাদিস বলেন , খেতাবাত বলেন, ওয়ায়েজ বলেন অথবা অন্য কোন পেশা । খবর নিয়ে দেখুন এরা প্রায় সবাই পানির মতো ডাল আর লাবড়া খেয়ে মানুষ হওয়া ছেলে ।
কোরবানিরে ঈদের দিনে চামড়া টানতে কেমন লাগে সেটা যে টেনেছে শুধু সেই জানে । পরিবার-পরিজন রেখে ঈদ করার অনুভূতি টা সে ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বলা সম্ভব না ৷
বসুন্ধরা মাদ্রাসায় ভর্তি ফরমে অনুমোদন সাক্ষর আনতে কয়কঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । মাথার ঘাম পায়ে পড়ার বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন৷ ক্লাসের সামনের দিকের টেবিলে সিট পেতে সারারাত নির্ঘুম কাটাতে হয় ।
জামিয়া রাহমানিয়ার মরহুম নোমান সাহেব কম্পিউটারের সামনে বসেই দরসে তিরমীযির অনুবাদ করেছিলেন । হাদিস বিশেষজ্ঞ আব্দুল মালেক সাহেবকে মরহুম আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ সাহেব পাকিস্তান থেকে সৌদি আরবে ঢেকে নিয়ে গিয়েছিলেন নিজের খাস শিষ্য বানানোর জন্য । উনারা কেমন মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে ?? জ্বি ...হ্যা উনারাও পানির মতো ডাল আর লাবড়া খাওয়া কওমি ছাত্র ।
মারকাযুদ্দাওয়া কিংবা আকবর কমপ্লেক্সের মতো জায়গায় ইফতা পড়তে কি পরিমান মেধাবী হতে হয় জানা আছে ? ঢালকানগঢ়ে হাদিস পড়ুয়া, মালিবাগ কিংবা রাহমানিয়ায় তাইসির থেকে দাওরা পর্যন্ত পড়ুয়া ছেলেদের সাথে একটু মিশে দেখবেন । মেধার লেভেলটা বুঝতে পারবেন ।
বেফাক কিংবা হাইআতের পর্রীক্ষার মেধা তালিকা কোনদিন মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন ? খেয়াল করলে দেখবেন কতো অল্প নাম্বারের ব্যাবধানে একটা ছাত্র পেছনে পড়ে যায় । যারা টিকে যায় তারা পানির মতো ডাল আর লাবড়া খেয়ে সারারাত মুতাআলা করতে পারবে বলেই টিকে থাকে । নইলে কার ঠেকা পড়েছে কষ্ট করে গিয়ে নিজের জীবনের সব স্বাদ-আস্বাদন বলিদান করতে ? কারো ঠেকা নাই ।
আসলে এই ছাত্রাবাস ছাড়া ক্লাসরুমে ঘুমানো, পানির মতো ডাল, লাবড়া আর আলু ভর্তা আমাদের জন্য আশীর্বাদ । এইটুকু কষ্ট না করলে আমরা উপরে উঠতে পারবো না ।
ধন্যবাদ আমাদেরকে কষ্টের কথাটা স্মরন করিয়ে দেয়ার জন্য :-)
সবাই কষ্ট করতে পারে না । এটা সবার কাজ না । এটা আমাদের কাজ । এই কারণেই আমরা আজ পর্যন্ত স্ব গৌরবে টিকে আছি। এতোদিন পর্যন্ত আমরা নিজেদের অবস্থান নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছি । ভবিষ্যতেও করবো ইনশাআল্লাহ। :-)