ফকির লালন শাহ(জন্ম ১৭৭৪- মৃত্যু অক্টোবর ১৭,১৮৯০ মতান্ত রে ১৭৭৩-১৮৯০)ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক সাধকদেরমধ্যে অন্যতম। তিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ ইত্যাদি নামে সচরাচর অভিহিত। তিনি একাধারে ফকির (মুসলমান সাধক), দার্শনিক, অসংখ্য অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক।গান্ধীরও ২৫ বছর আগে, ভারত উপমহাদেশে সর্বপ্রথম, লালন ফকির কে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেয়া হয়েছিল।লালনের বেশ কিছ
ু রচনাবলী থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে তিনি ধর্ম-গোত্র-বর্ণ-সম্প্রদায় সম্পর্কে অতীব সংবেদনশীল ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে যখন হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে জাতিগত বিভেদ-সংঘাত বাড়ছিল তখন লালন সাহ্ ছিলেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি মানুষে-মানুষে কোনও ভেদাভেদে বিশ্বাস করতেন না। লালন সাহ্ এর প্রতিটি গানে তিনি নিজেকে ফকির ( আরবি "সাধু") হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী।।একটি গানে তিনি বলেছেন: ''সব লোকে কয়লালন কী জাত সংসারে,লালন বলে জাতির কীরূপদেখলাম না এ নজরে।।সুন্নত দিলে হয় মুসলমাননারী লোকের কী হয় বিধান,বামন চিনি পৈতেয় প্রমাণবামনি চিনি কিসে রে।।কেউ মালা কেউ তসবি গলেতাইতে কি জাত ভিন্ন বলে,আসা কিংবা যাওয়ার কালেজাতির চিহ্ন রয় কি রে।।জগৎ বেড়ে জাতির কথাগৌরব করি যথাতথা,লালন বলে জাতির ফাৎনাবিকাইছি সাধ-বাজারে''।।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন: "লালন ফকির নামে একজন বাউল সাধক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের সব মানুষকে সমন্বয় করে কী যেন একটা বলতে চেয়েছেন - আমাদের সবারই সেদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিৎ।যদিও তিনি একবার লালন 'ফকির' বলেছেন,এরপরই তাকে আবার 'বাউল' বলেছেন, যেখানে বাউল এবং ফকিরের অর্থ পারস্পরিক সংঘর্ষ-প্রবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লালন সাহ্ এর গানে প্রভাবিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাঁর প্রায় সহস্রাধিক গান সংগৃহীত হয়েছে।বাউলদের জন্য তিনি যেসব গান রচনা করেন, লালন ফকির মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, এধরনের ধর্মভেদ লালন করতেন না।একটি গানে তিনি বলেছেন:''এমন সমাজ,কবে গো সৃজন হবে,যেদিন হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ খৃষ্টান, জাতি নাহি রবে''।মহাত্মা ফকির লালন শাহ সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতার পথে ডাক দিয়ে ছিলেন। মহাত্মা ফকির লালন সাহ্ আর একটি উক্তি বা গানে বলেছেনসত্য বল সুপথে চলওরে আমার মন।সত্য সুপথ না চিনিলেপাবিনে মানুষের দরশন।।