13/06/2024
ফ্যালাসি। "ইহুদি" হওয়ার কারণে কেউ কোক বয়কটের ডাক দেয় নাই। সেটা ভালো ইহুদিই হোক, আর খারাপ ইহুদিই হোক। "ইহুদি" আর "ইসরায়েল" এক জিনিস না। কোক বয়কট করা শুরু হয়েছিল অবৈধ, দখলদার, গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কের কারণে।
অন্য অনেক পণ্যেরও ইসরায়েলের সাথে কানেকশন আছে। যেমন গুগল এবং মাইক্রোসফটের। অথবা ফেসবুকেরও। কিন্তু তারপরেও বয়কটের ডাক দেওয়া বিশ্বের লীডিং অর্গানাইজেশনগুলো কোক, এইচপি, পুমা বয়কট করতে বললেও গুগল-মাইক্রোসফট বা ফেসবুক বয়কট করতে কেন বলে না?
কারণ তারা বলদ না। দুনিয়া বর্তমানে এত বেশি ইন্টারকানেক্টেড, ম্যাক্সিমাম পণ্যের সাথেই কোনো না কোনোভাবে লতায় পাতায় ইসরায়েল, বা ইসরায়েলকে সাপোর্ট করা বা ডোনেশন দেওয়া কোনো ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির কানেকশন পাওয়া যাবে। তাই বলে কি এখন আমাদেরকে সব বয়কট করতে হবে?
না। বয়কট করার সাথে এমন কেনো শর্ত জড়িত নাই যে একটা পণ্য বয়কট করলে আপনাকে দুনিয়ার সব পণ্যই বয়কট করতে হবে। এই যুক্তি যারা তোলে, তারা তাদের আদর্শিক পিতাদেরকে বাঁচানোর জন্যই করে।
বয়কট করা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। আপনার যদি মনে হয় আপনার পকেটের টাকার একটা অংশ গণহত্যায় ব্যবহৃত হচ্ছে, তাহলে সেই পণ্য বয়কট করাটা আপনার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু গণহত্যার সাথে লতায়পাতায় জড়িত সব পণ্য আপনার পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না। কাজেই আপনার যেটা ইচ্ছা, আপনার সাধ্যের মধ্যে যেটা সম্ভব, শুধু সেটাই বয়কট করবেন।
অথবা আপনি যদি বয়কটকে স্ট্র্যাটেজিক মুভমেন্ট হিসেবে দেখেন, তাহলে কিছু হিসেব-নিকেশও করতে পারেন। কোন পণ্যের দায় গণহত্যায় বেশি? কোন পণ্য ব্যবহার না করলেও আপনার দিন চলে যাবে? এবং কোন পণ্য বয়কট করলে সেই পণ্যের ক্ষতি করা সম্ভব হবে এবং তাদেরকে একটা ম্যাসেজ দেওয়া সম্ভব হবে।
এগুলো বিবেচনা করলে আপনি দেখবেন, স্ট্র্যাটেজিক্যালি গুগল, মাইক্রোসফট বা ফেসবুক বয়কট করে আপনি তেমন কিছু অর্জন করতে পারবেন না। অন্তত এখনই না। এগুলো এত জায়ান্ট কোম্পানি, বয়কট করে এদের ক্ষতি করা কঠিন। উল্টো এগুলো ব্যবহার না করলে আপনি নিজেই বঞ্চিত হবেন। পিছিয়ে পড়বেন।
গুগল বা ফেসবুক সাধারণ কোম্পানী না। এগুলো একই সাথে ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ারের ময়দান। যুদ্ধের টুল। পশ্চিমের একচেটিয়া প্রপাগান্ডাগুলোর বিরুদ্ধে যেটুকু আওয়াজ আসছে, সেটা এই ফেসবুক, টুইটার, টিকটক, ইউটিউবের মধ্য দিয়েই আসছে। কাজেই যতদিন পর্যন্ত না আপনি নিজেই বিকল্প অস্ত্র তৈরি করতে না পারছেন, ততদিন পর্যন্ত এই অস্ত্র বয়কট করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
সেই তুলনায় কোকাকোলার কোনো উপযোগিতা নাই। এটা এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটা খাওয়ার মধ্যে আপনার কোনোই উপকারিতা নাই। সেজন্য এটা বয়কট করলেও আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।
এই দুইটাকে যারা এক করে এ ধরনের মিম তৈরি করে, তারা নিজেদের সেই সাইডটাই প্রকাশ করে, যেটাকে মোর্শেদ মিশু বলেছেন জেনো সাইড।
ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল-সহ প্রতিটা টেক জায়ান্ট গণহত্যায় সহযোগী। ভালো বিকল্প পেলে প্রতিটাই বর্জন করা উচিত হবে। ইনফ্যাক্ট কোকের চেয়েও সেগুলো বর্জন করার দায়টা আরও বেশি হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিকল্প না আসা পর্যন্ত সেগুলো বর্জন করাটা হচ্ছে অনেকটা এরকম: প্রতিটা সামরিক অস্ত্রই যেহেতু কোনো না কোনো গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের থেকে কিনতে হবে, তাই আমরা কিছুই কিনব না। সব বয়কট করব। এরপর যুদ্ধ লাগলে মারা খাবো। দ্য ওয়ার্ল্ড ডাজন্ট ওয়ার্ক দ্যাট ওয়ে।