21/11/2023
অরক্ষিত ক্যাম্প থেকে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা !
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিন দিন অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রিত শিবিরে তদারকি কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা নানান কৌশল অবলম্বন করে ক্যাম্প থেকে পালানোর উৎসবে মেতে উঠেছে। কেউ দালালের মাধ্যমে, আবার কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত পূর্বের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।
রোহিঙ্গাদের আকৃতি, ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ স্থানীয়দের সঙ্গে অনেক মিল। যার কারণেই রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা সহজেই স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে পারছে। ক্যাম্প ছেড়ে তাদের পালানোর বিষয়টি এখন উদ্বেগজনক। অনেক রোহিঙ্গা গত ৬ বছরের মধ্যে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আলোচিত সমালোচিত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদকসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।
এভাবে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শত চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত দেরি হচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুঁকি।
সব শেষ গতকাল মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শতাধিক রোহিঙ্গাকে উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়ক থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ গেট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে সোমবার ৫৫ জন, রোববার ২৯ জন এবং শনিবার ২৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উখিয়া থানার ওসি জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসা ঠেকাতে পুলিশ কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। অনেকে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে আসে। এটা ঠেকাতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।
ওসি বলেন, আটক রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে। কেউ আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে, কেউ কাজের সন্ধানে, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বের হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের নিজ নিজ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে রোহিঙ্গাদের এভাবে ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরাই এখন আতঙ্কে থাকি। রোহিঙ্গারা আসার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত। এলাকার অনেক মানুষকে তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আপাতত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, বার্মাপাড়া, হালিমাপাড়া, ইসলামপুর, বাদশাঘোনা, খাজামঞ্জিল, বৈদ্যঘোনা, সমিতিপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড় অধু্যষিত বহু এলাকায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এসে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। তাদের চলাচলে কোনো বাধা নেই।
শুধু তাই নয়, স্থানীয় অনেক ছেলে ক্যাম্পে এসে বিয়ে করছে। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের অনেকে কাজের সন্ধানে ক্যাম্প থেকে বের হন। সন্ধ্যা বা রাতে কেউ ফেরেন, কেউ ফেরেন না। এভাবে পালিয়ে খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক রোহিঙ্গা। কম মজুরিতে পাওয়ায় রোহিঙ্গাদের অনেকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালী এবং কৃষি, ইটভাটায় স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। আবার অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্য টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাইরে যেতে দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোনো ধরনের বৈধতা নেই রোহিঙ্গাদের। কারণ, তারা প্রতি সপ্তাহে রেশনসামগ্রী পাচ্ছেন। ক্যাম্পের বাইরে এসে কাজ করলে স্থানীয়দের শ্রমবাজারের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে।’ ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেটা মানছেন না।’